ভালোবাসা_কেবল_শুরু
পর্ব -১৪
#লিখা – নীলকন্ঠী
.
রুহি ফ্লোরে বসে কেঁদেই চলছে। তাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে তার আম্মু দৌঁড়ে আসে।
–কি রে কি হয়েছে? আর আদি এমন চলে গেলো কেন?
রাফান রুহি কে উঠানোর চেষ্টা করতে সজোরে ধাক্কা মারে রাফান কে।
–এই তুমি! তুমি সব নষ্টের মুল। তুমি কেন এসেছো। তুমি ইচ্ছা করে এমন করেছো। আদি আমাকে ভুল বুঝেছে। আমি মরে যাবো। মা! আমি এক মুহুর্ত ও বাঁচতে চাইনা। এত ঘৃণা নিয়ে বাঁচা যায় না মা। আমার ভীষণ কস্ট হচ্ছে। হাঁও মাঁও করে কাদতেই লাগলো রুহি। আরো কি কি এলোমেলো কথা বললো তা কারোরই বোধগম্য হয়নি।
–আমি তো তোকে ধরতে চাইলাম। আর ওই মুহুর্তে ই আদি আসলো। তুই তো সিক হয়ে পড়েছিলি। আদি বুঝতে ভুল করেছে তাহলে আমার কি দোষ। আসলে আদি তোকে ভালোই বাসে না। তাই এতো অবিশ্বাস করেছে।
–প্লিজ আর কথা বলিস না। তোকে নিজের ছেলের মতো দেখেছি। এত টুকু পার্থক্য করিনি তোদের মাঝে।আমার মেয়ের জীবনে তুই অভিশাপ হয়ে এসেছিস রাফান। যদি আমাকে নিজের মায়ের মতো ভেবে থাকিস তাহলে এক্টা কথা রাখ, আমাদের কাছে আর কখনো আসিস না। কখনো না ।
রাফান মুষ্টিবদ্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলো। নিজের উপর রাগ হচ্ছে। হয়ত এবার ও সে ব্যর্থ হয়েছে। তারপর ও আবার বলল,
–খালামনি রুহি কে আমার সাথে বিদেশে নিয়ে যাই।সেখানেই স্টাডি করবে। আই প্রমিজ আমি ওকে কোন কষ্ট দিবো না।
রুহি চিৎকার করে উঠলো।
— মা ওকে চলে যেতে বলো। আমি মরে যাবো কিন্তু ওর কাছে যাবো না। এক্ষুনি চলে যেতে বলো।
রুহি সেই তখন থেকেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে বিছানায়। আদি চলে যাওয়ার আগে বলা কথা গুলো অনড়্গল মাথায় রেডিও ওর মতো বেজেই চলছে ।
এতো টা অবিশ্বাস নিয়ে ভালোবাসা যায়! ভালোবাসায় সন্দেহ আর ঘৃণা ঢুকলে সেই ভালোবাসা আর ভালোবাসা থাকে না। সেই ঘৃণা হৃদয় কে পুড়িয়ে দেয় ছাই করে দেয়। কস্ট পেতে পেতে মন কে পাথর বানিয়ে দেয়। যে কটা দিন রুহি আদির সাথে ছিলো সেই স্মৃতি গুলো র কথা মনে করলেও তো আদি সেখানে আদি কেই পাবে।
রুহির হৃদয়ে অন্য কারো অস্তিত্ত্ব নেই তা কি আদি বোঝে না। সে যে শুধু আদির হয়েই থাকতে চায়।
কাক ডাকা ভোরে ঘুম ভেঙ্গে এক মুহুর্তের জন্য মনে হচ্ছিলো সব স্বপ্ন। এই ভালো রেসাল্ট ভালো কিছুতে চান্স পাওয়ার আকাঙ্খা সব বৃথা যদি আদি ই না থাকে জীবনে।
আদি এখন গৃহবন্দী ই থাকতে ভালোবাসে। উস্ক খুস্কো চুল চেহারাতে বিষন্নতা নিয়েই রাত দিন পার করে। রুহির জন্য কেনা নীল জামদানি টা নিয়ে প্রায়ই ইজি চেয়ারে বসে থাকে। কত সময় বয়ে যায় পার হয়ে যায় টের পাওয়া যায় না।
এক মাত্র ছেলেকে এমন জীবন যাপনে দেখে আসমা বেগম বান্ধবী কে ফোন দিলো। রুহি তার ছেলের জীবনে আসার পর থেকেই তার ছেলের জীবন এলোমেলো হয়ে গেলো। রাহেলা বেগম সব টা খুলে বললেন। মেয়ের পক্ষ নিয়ে না যা সত্যি তাই বল্লেন।
সেদিন সকাল থেকেই রুহি খুব সিক ছিলো। তার উপর রেসাল্ট দিবে এই টেনশন ও ছিলো। রাফান কখন এসেছে তা রাহেলা বেগম টের পায় নি। রাফান রুহিকে রেসাল্টের কথা বলতেই গিয়েছিলো। সেখানে সে আবার ও পাগলামো করছিল। বার বার মরে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছিলো। রুহি এই চাপ সহ্য করতে পারছিলো না। লো প্রেশার আর অসহ্য মানসিক টেনশন এ পড়ে যাচ্ছিলো আর তখন ই রাফান সুযোগ পেয়ে আরো জোর করে যাচ্ছিলো। আদি ঠিক সেই মুহুর্তে ই আসে। তার রাগ হউয়া টা অস্বাভাবিক ছিলো না।
রাহেলা বেগম নিজেই ভাগিনার কর্মকাণ্ডে শুধু অনুতপ্ত ই নয় বরং টেনশন এ ও আছেন। এর মাঝে রুহির ভবিষ্যৎ এর প্রশ্ন। আজ কাল তো রুহি পড়াশোনা ই করেনা । খাওয়া দাওয়া গোসলের কোন ঠিক ঠিকানা নেই। রাহেলা বেগম মেয়ের অবস্থা জানিয়ে কান্না করে দিলেন।
আসমা বেগম সব শুনে কি বলবে ভেবে পেলো না । পরের দিন রুহির ঘুম ভাংলো কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে। এলোমেলো চুল আর অগোছালো রুহি কে দেখে বুকের ভিতর টা ধুক করে উঠলো। আসমা বেগম পরম আবেশে জরিয়ে ধরে বলল,
–উঠে পড়, আমি নাস্তা খাইনি। আজ তোদের সাথে নাস্তা করবো।
রুহি চোখ মুছে বাধ্য মেয়ের মতো ফ্রেশ হতে চলে গেলো। খাবার প্লেটে তুলে দিতেই আদির মা বলে বসলো খেয়ে গোছ গাছ করে নে। আমি নিতে এসেছি তোকে।
চলবে ….