ভালোবাসা_কেবল_শুরু
পর্ব -১৭
#লিখা -নীলকন্ঠী
.
বেলা ১০ টা বাজে। তারপর ও কিছু পাখি কিচিরমিচির করেই যাচ্ছে। আদি কখন এসে সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়াল নেই। ঘুম ভেঙ্গেই রুহির কথা মনে পড়লো। মনে পড়লো গতকাল রাতে রুহি হয়ত তাকে কাছে পেতে চেয়েছিল। এভাবে ফিরিয়ে দিয়ে নিজেও ভিতরে ভিতরে দগ্ধ হচ্ছে তা ঠিক ই টের পাচ্ছে এখন। ফ্রেস হয়ে নাস্তার টেবিলে বসে ঠান্ডা রুটি চাবাচ্ছে।
—-মা রুটি গুলো তো গরম করে দিলেই পারতে। না হয় পরেই ভাজতে।
—-পারবো না। বউ থাকতে আমাকে বলিস কেন? কই ভাবলাম আমি বসে বসে আরাম করবো আর ছেলে আর ছেলের বউ আমাকে সেবা করবে না তা হবে কেন?
চুপ চাপ কথা গিলছে আদি। অনড়্গল বলেই যাচ্ছে আদির মা,
—–আমার কি আর সেই কপাল আছে বলেই আসমা বেগম আদির দিকে তাকালো আড়চোখে। আজ তার ছেলে আর তার বউ এর মেরিজ এনিভার্সেরি অথচ বদের হাড্ডি দুই টার অভিমান ই শেষ হয়না ।
—-তোমরা খেয়েছো?
—-তোমরা মানে কারা? আমি বাপু খেয়ে নিয়েছি বাদ বাকি কারো খবর রাখিনা।
—ও । ইয়ে মানে রুহি কোথায়? খায়নি?
—–আমি কি জানি? তোর বউ এর মন মর্জি বুঝি না ।কি হলো আল্লাহ ই জানে। সক্কাল সক্কাল বাবার বাড়ি যাবে বলে বায়না ধরলো।
—-মানে? আমাকে তো কিছু জানায় নি।
—-তুই ওকে বউ মানিস? নাকি ও তোকে বর মানে যে জানাবে। মেয়েটা এত দিন তোর মন রক্ষা করতে কত কিছু করলো অথচ তুই? কি করেছিস!
—-কি করলাম আমি? মেরেছি? বকেছি? আমি শুধু সময় চেয়েছি মা।
—নে নে সময় নে। আর ওই দিকে পরে যদি রাফানের হাত ধরে চলে যায় তখন বসে বসে ভাবিস ও তোর বউ ছিলো কিনা।
আদি কিছুক্ষন চুপ থেকে উঠে পরলো। সারা বাড়ি খুঁজে রুহি কে পেলো না। মা কে জিজ্ঞাসা করতেই উল্টো ঝাড়ি দিয়ে তাড়িয়ে দিলো।
দুপুরে খাওয়ার সময় ও রুহি কে পাওয়া গেলো না। খাবার আর গলা দিয়ে নামে নি। মা কে ও আর জিজ্ঞাসা করার সাহস পেলো না। বের হয়ে গেলো বাসা থেকে। রুহির সব বান্ধবী দের কাছে খোজ নিয়ে ও রুহির খোজ পাওয়া গেলো না। টেনশনে হাত পা বরফ হওয়ার দশা। ফোন টা বের করেই রুহির আম্মু কে ফোন দিলো
—আসসালামু আলাইকুম আম্মু। আম্মু কেমন আছেন?
—এই তো ভালো আছি। তোমরা কেমন আছো? তোমার আম্মু কেমন আছে?
—-জি সবাই ভালো আছে। আমতা আমতা করে আদি কি বলবে আর ভেবে পাচ্ছে না।
—আদি বাবা শোন!
—জি আম্মু বলুন।
—-রুহি কি আবার কিছু করেছে? মেয়ে টা বড় অবুঝ। এই দেখো না আজ তোমাদের বিয়ের এক বছর পূর্ণ হলো। আমি বল্লাম জামাই কে নিয়ে আয়। না সে নাকি একা ই আসবে। আমি ও রাগ হয়ে বল্লাম তোমারা এক সাথে না আসলে একা আসার প্রয়োজন নেই। তাই ও বোধহয় রাগ করেছে।
কি বলছে রুহির আম্মু আদির সব মাথার উপর দিয়ে গেলো। রুহি তাহলে সেখানে ও নেই। তাহলে মেয়ে টা গেলো কোথায়?
—-আদি হ্যালো আদি। বাবা শুনছো?
—জি আম্মু বলুন।
—আজ তো নিশ্চয়ই তোমরা বিজি। কাল ওকে নিয়ে একবার এসো। বড্ড অভিমানী আমার মেয়ে টা।
আদি আর কিছুই যেন শুনতে পেলো না। এখন কোথায় খোঁজ নিবে সে। মা ঠিক ই বলে সময় দিতে দিতে হয়ত আর সময় ই মিলবে না দুইজনের এক হওয়ার।
বুকের ভীতরে উথাল পাথাল ঝড় বইতে লাগলো। বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত নয় টা। মন বলছে নিশ্চয়ই বাসায় ফিরেছে সে। নিশ্চয়ই বাসায় গিয়ে তার মুখ টা দেখতে পাবে। বাসায় ঢুকেই বুক টা ধক করে উঠলো। আদির আম্মু টেনশনে প্রেশার বাড়িয়ে খারাপ অবস্থা। বাসার কাজের মেয়ে টা পানি ঢালছে মাথায়।
এতো টা কমন সেন্স কম কেন মেয়েটার! সবাই কে টেনশনে রেখে সে এখন কোথায় আছে। আসমা বেগম কে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পারিয়ে দিলো আদি। এত রাতে এখন কোথায় খুজবে বুঝে উঠতে পারছে না। আদির শান্তির জায়গা সেই ছাদের চিলেকোঠা। এক রাশ হতাশা আর ক্ষোভ নিয়ে ছাদের দিকে পা বাড়ালো আদি।
ছাদে পা পড়তেই থ বনে গেলো সে। পুরো ছাদের এক্টা পাশ লাইট আর বেলুন দিয়ে সাজানো। এলোখোঁপায় কাঠগোলাপ গুঁজে আদির কেনা নীল জামদানি পড়ে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে রুহি। আবছা আলোয় রুহি কে অনিন্দ্য সুন্দর লাগছে। আদি কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুহি এসে হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলো। একটা টেবিলে চকলেট কেক রাখা সেটাতে আবার লিখা “অভিমানী তুমি আমি ”
রুহি খিল খিল করে হাসতে লাগলো। আদির নিজেকে বোকা লাগছে। এই শাড়ি টা ও পেলো কোথায়। রাগে মাথায় আগুন জ্বলছে, সারা দিন সে বাসায় ছিলো তার মানে আম্মু ও জানতো। সবাই মিলে বোকা বানালো আর সে কিনা টেনশনে পাগল হয়ে যাচ্ছিলো।
রুহি কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদি কষিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। ফর্সা টকটকে গালে পাচ আঙ্গুলের দাগ পড়তে সময় লাগেনি।
—সারা দিন আমার কেমন অবস্থা হয়েছে ভেবেছো? আর এখানে সবাই আমাকে বোকা বানানোর প্ল্যান করেছো। আমার পাগল হওয়া বাকি ছিলো রুহি। আমি পাগলের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছি। আর এত বেশি অপরাধ বোধ হয়েছিলো। ভেবেছিলাম তুমি যথেষ্ট বুঝদার মেয়ে। নাহ তুমি মোটেও একজন ভালো বউ হতে পারবে না। না কখনো আমায় বুঝলে না বোঝার চেষ্টা করেছো।
সামনের কিছু সাজানো ফুল টেনে ছিড়ে আদি বের হয়ে আসে ছাদ থেকে। রুমে এসে রাগে ফুসতে থাকে। ভেবেছে কি? এসব ভালোবাসা! এসব ঢংয়ের মানে কি? আর মা, মা ও সামিল ছিলো এসবে।
রাগে রুমে কতক্ষন পায়চারি করতে থাকে। কখনো বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে থাকে। কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না সে।
রুহি এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে। কি থেকে কি হয়ে গেলো। ভেবেছিলো আদি কে সার্প্রাইজ দিবে, গত রাতের পর সকালে ও ভেবেছিলো আর না। কিন্তু হঠাৎ ই মনে হলো এভাবে হাল ছাড়লে হবে না। কিছু একটা করতে হবে। শাশুড়ি কে তার প্ল্যান এর কথা বলতেই রাজি হয়ে গিয়েছিলো।
কত্তো কষ্ট করে আজ এসব আয়োজন করেছে। আদির জন্য তার কেনা নীল শাড়ি পড়েছে। সব আয়োজন বৃথা। এত কষ্ট লাগছে কেন? ঠিক এই গালে না, বুকের ভেতরে, এত ব্যথা কেনো।
ঝুম ঝুম বৃষ্টির সাথে রুহির কষ্ট গুলো ও ভিজে যাচ্ছে।
চুপচাপ দাঁড়িয়ে বৃষ্টির জলে নিজের সব কষ্ট দুঃখ বিসর্জন দিচ্ছে রুহি। মানুষ টা কেন তাকে বোঝেনা?
ঝড় শুরু হচ্ছে। মায়ের রুমের জানালা লাগানো কিনা চেক করতে গেলেই কাজের মেয়ে টা জানায় রুহি ছাদ থেকে নামেনি। এত রাতে এখনো একাই রয়ে গেছে ছাদে। আদি আর দেরি করে নি। দৌঁড়ে ছাদে গিয়ে স্তব্ধ হয়ে যায় সে। রুহি ভিজে কাঠ হয়ে গেছে। আদি গিয়ে তাকে কিছু বলার সাহস খুজে পেলো না। কাজের মেয়েটা নাকি সুরে বলছিলো আজ সারাদিন রুহি কত পাগলামি করেছে।
—রুহি প্লিজ চলো! জ্বর চলে আসবে তোমার।
রুহি ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো। আদির কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে এমন অবস্থা দেখে। রুহি কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতেই রুহি কেঁপে উঠলো।
—-বউ সরি! চলো প্লিজ নিচে চলো।
হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো রুহি। আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। কান্নার জন্য কথাই বলতে পারছে না সে। আদি আঙ্গুল দিয়ে ঠোঁটে চাপ দিয়ে বললো কিছু বলতে হবে না। আমি সব জানি। অভিমানের পাহাড় যেন
গলে গলে পড়ছে।
–এমন কেন করলে! আমার কস্ট হয়না বুঝি। কত টা টেনশনে ছিলাম জানো?
কানের কাছে ফিঁস ফিঁসিয়ে আদি মুগ্ধ গলায় বলে উঠলো, হ্যাপি এনিভার্সেরী বউ। তোমার দেয়া সার্প্রাইজ প্ল্যান টাও মাটি হলো।
রুহি ও হু উত্তর দিয়ে আদির বুকের শব্দ গুনতে লাগলো।
—অনেক ক্ষন ভিজেছো এখন নিচে চলো।
রুহি মাথা নাড়িয়ে বলল আরেক টু থাকি। এভাবেই ভাল লাগছে।
আদি পাঁজা কোলে তুলে হাঁটতে লাগলো,
—-না এই বৃষ্টি তে আর ভিঁজতে হবে না। এখন তো ভালবাসার বৃষ্টি তে ভেঁজার সময়। কেবল তো আমাদের ভালোবাসা শুরু।
রুহি আর কিছু বলতে পারলো না।আদির গলা জড়িয়ে বুকে মাথা গুঁজে ভালোবাসার প্রহর গুনতে লাগলো।
সমাপ্তি।
বিঃদ্রঃ পর্ব নিয়ে লিখা গল্পে অনেক পেইন 🙁 অনেক চিন্তা করে লিখতে হয়। কেমন হয়েছে জানিনা, তবে আমি আমার মতো চেষ্টা করেছি। 🙂 ধন্য যোগ পাশে থাকার জন্য।