#ভালোবাসার_রঙে_রাঙাবো💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ২৮
বসার ঘরে সবার মুখ থমথমে হয়ে আছে।এমন অপ্রতাশিত ঘটনা কেউ আশা করেনি।সত্যিই আশ্চর্যকর একটা ঘটনা।মানে কিভাবে কি হয়ে গেলো কেউ কিছুই বুজলো না। মিম আর মেরাজ বিয়ে করে নিয়েছে এমন একটা মিমের মুখ থেকে শোনার পরেই আলিফা আর নিবিড় চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় তুলে নিয়েছে।তারপরেই সবাই এমন গম্ভীর মুখ করে বসে আছে।
এদিকে সবার এমন থমথমে পরিবেশের মাজে।সাদু নূর,আলিশা আর আলিফাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–” চিপায় আসো ভাভুউউরা কথা আছে।”
সবাই মাথা ঝাকিয়ে সাদুর পিছনে পিছনে চলে যায়।গেস্টরুমে ডুকেয় দরজা আটকাতে দেরি।সাদু কোমড়ে উড়না পেচিয়ে ড্যান্স দিতে দেরি নেই।ওরা দেখা দেখি বাকিগুলোও ড্যান্স করছে।সাদু বলছে,
–” ওয়াও ওয়াও! আমার বেস্টুগুলো আমার ভাইয়ের বেস্টুগুলোর সাথে সেটিংস হয়েছে।এখন আমরা সবগুলো একসাথে থাকতে পারবো।আমাদের কেউ আলাদা করতে পারবে না।আ’ম সো হ্যাপি!”
এদিকে সাদুর কথায় নূর ভ্রু-কুচকে বলে,
–” এই এক মিনিট তোর সব বেস্টু মানে?আমি যে সিংগেল ভূলে গেছিস।”
আলিশা নিজের কোমড় দিয়ে নূরকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো।নূর অসহায় চোখে তাকাতেই আলিশা মুখ ভেংচি দিয়ে বলে,
–” চিপায় চাপায় গিয়ে যে আফরান ভাইয়ার সাথে চিপকে থাকো তা বুজি আমাদের চোখে পড়ে না?”
নূর দ্রুত উঠে বলে,
–” কোথায়?কে..কে বলেছে? তাকে আমার ফ্লাইং জুতা ফিক্কা মারমু।”
সাদু রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
–” কে বলেছে মানে?আমাদের বুজি চোখ নাই।”
নূর তেজি গলায় বললো,
–” আফ্রিকান পান্ডাটা আমার সাথে চিপকে থাকলে তো আই কিত্তাম?”
আলিফা পিঞ্জ করে বলে,
–” ও হো তোমার বুজি ভালো লাগে না?”
–” একদমই না।”
নূরের কথায় সাদু ভাব দেখিয়ে বলে,
–” ওকা নো প্রোবলেম।আমার ভাইকে তাহলে আমি অন্য মেয়ের সাথে বিয়ে দিবো। ”
নূর ঘাবড়ে গিয়ে বললো,
–” অন্য মেয়ে মানে?”
আলিশা চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বললো,
–” এহহহহ! এখন বুজে না।তোর আফরান ভাইকে যদি ভালোই না লাগে তাহলে।অন্য কোন মেয়ের সাথে তো তার সেটিং করিয়ে দেওয়া তো লাগবে না-কি।”
আলিফা গিয়ে আলিশার কাধে হাত রাখলো।সামনের চুল গুলো কানের পিছে গুজে দিয়ে বললো,
–” সাদু! আফরান ভাইয়ার ক্লাসমেট একটা সুন্দরী আপু ছিলো না।কি যেন নাম?”
সাদু হেসে দিয়ে বললো,
–” সেহরা আপু!”
–” হ্যা! হ্যা! আপুটা সেই সুন্দর।দারুণ দেখতে।আফরান ভাইয়ার সাথে মানাবে।”
আলিশা আড়চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে মৃদ্যু হেসে বললো,
–” আর স্মৃতি আপুও কিন্তু অনেক সুন্দর।উনার সাথেও মানাবে।”
সাদু,আলিশা,আলিফা বিভিন্নভাবে একেকটা কথা বলে যাচ্ছে। যাতে নূর রেগে যায়।আর হলোও তাই নূর রাগে ফুসফুস করছে।উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
–” চুপ কর! তোর ভাই দেখতে এক্কেরে উগান্ডার প্রেসিডেন্টের মতো লাগে।ওর কপালে এই আমি নূর ছাড়া আর কেউ জুটবে না।আমিই ওর কপালে লিখা।”
সাদু লাফ দিয়ে নূরকে জড়িয়ে ধরে খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,
–” তার মানে তুই মানছিস! যে তুই আর আমার ভাই এক সুতোতে গাথা।”
নূর মাথা নিচু করে আছে।কি বলবে ও?এটাতো সত্যিই যে ও আফরানকে ভালোবাসে।আফরানের সাথে অন্য মেয়ে তো দূরে থাক।আফরানের পাশে অন্য কোন মেয়ের নামও সয্য করতে পারি না।
আলিফা ধাক্কা দিয়ে বলে,
–” কিরে বলছিস না যে?”
নূর কাচুমাচু করে তাকিয়ে থাকে।এরই মাজে ওরা বাহির থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ পাচ্ছে।ওরা আর দেরি না করে দ্রুত সেদিকে ছুটলো।
মিমের মা বলছে,
–” এই দিন দেখার জন্যে তোকে এতো বড় করেছি আমি।আমাদের মুখে চুনকালি মেখে তুই এমনটা করতে পারলি?”
মিম রাগে চোখমুখ লাল করে বললো,
–” এটাতে এমন কি খারাপ মা?আমি তো আর বিয়ের আগে বাচ্চা পয়দা করে ফেলিনি যে তুমি এটাকে এমন ত্যানাপেঁচা করছো! আমি বিয়ে করেছি।আমি মেরাজ একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে।এতে খারাপ কি?”
মিমের মা মেয়েকে থাপ্পর মারতে নিলেই মিমের বাবা এসে উনাকে আটকে দেন।মিমের মা রাগি চোখে তাকাতেই উনি স্ত্রীকে চোখ রাঙিয়ে বললেন,
–” অনেক হয়েছে অনেক সয্য করেছি আর না।এতোদিন তোমার সব কিছু আমি মুখ বুজে দেখে গিয়েছি শুধু।কিন্তু আর না।তুমি বেশি বার বেড়েছো।একমাত্র তোমার হার্টে সমস্যা তাই তোমার সমস্ত অন্যায়গুলো আমি মুখ বুজে সয্য করে গিয়েছি।বেশ করেছে আমার মেয়ে যা করেছে।ওই চোর ছেচ্চোরের সাথে বিয়ে তো আমি কখনোই দিতাম না আমার মেয়েকে।আমার মেয়ের চয়েজ বেষ্ট চয়েজ।মেরাজ বাবা অনেক শান্ত, শিষ্ঠ, ভদ্র, বুজদার একটা ছেলে।আমি ওদের সম্পর্ক মন থেকে মেনে নিয়েছি।আলহামদুলিল্লাহ সব কিছুর জন্যে।”
মিমের বাবা গিয়ে মিমের মাথা হাত বুলিয়ে দিয়ে।দুহাতে মেরাজ আর মিমকে জড়িয়ে ধরে।
ওদের দুজনেকে ছাড়তেই।মেরাজ আর মিম ধীর পায়ে মেরাজের বাবা আর মার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।ওরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।মেরাজ আমতা আমতা করে বললো,
–” বাবা, মা আসলে! হয়েছে কি?”
মেরাজের বাবা ধমকে উঠলেন,
–” চুপ কোন কথা না।একদম কথা বলবি না।”
শশুড়ের ধমকে মিম কেঁপে উঠলো।ওর চোখজোড়া জলে ভরে উঠে।মিমকে ভয়ে পেতে দেখে মেরাজ মিমের হাতটা আরো জোড়ে আকড়ে ধরলো।
হঠাৎ মেরাজের বাবা ওদের দুজনকে বুকে আগলিয়ে নিলেন।মেরাজ মুচঁকি হাসলো।আর মিম এখনো হা হয়ে আছে।মেরাজ ভ্রু নাচিয়ে বললো ‘ কি?’। মেরাজের বাবা দুজনকে ছেড়ে দিয়ে বলে,
–” সুখী হও দুজন দোয়া করি। আমি তো এমনি দুজনকে ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম।”
তারপর মিমের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,
–” মা এই বুড়ো বাবার কথায় মন খারাপ করিস না।”
মিম চোখ জল নিয়েই মুচকি হাসলো।মেরাজের মা মিমের কপালে চুমু খেলেন।পরম যত্নে ছেলের বউয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে।নিজের গলার স্বর্নের চেইনটা খুলে পড়িয়ে দিলেন।
–” আমার ছেলে হীরের টুকরো এনেছে আমার ঘরে।”
মিম মাথা নিচু করে নিলো লজ্জায়।
আলম সিকদার এইবার বললেন,
–” অনেক হয়েছে।এইবার সবাই বিশ্রাম নেও।আমি খাবারের দিকটা দেখছি।আর এইযে জুনিয়রটা তোমাদের ফ্রেন্ড্সদের বাসর রাতের আয়োজন করো।”
মুরব্বিরা চলে গেলেন।এদিকে ওরা হৈহৈ করছে।মিম লজ্জায় পারে না মাটি খুরে তার ভীতর ডুকে যেতে।মেরাজ আড়চোখে তাকালো মিমের দিকে।কে বলবে?একটু আগে মেয়েটা তাকে এবাবে হুমকি ধমকি দিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে।আর এখন কেমন লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাচ্ছে।মেরাজ মুচকি হাসলো।না আর অপেক্ষা করবে না।আজ ওদের জীবনের শ্রেষ্ঠরাত।আর আজকেই মেরাজ মিমকে ওর মনের কথা বলে দিবে।
—————
মেরাজ আর মিমকে আলাদা আলাদা রুমে রেখে ওরা গেলো বাসর সাজাতে।অবশ্য মেরাজ চেঁচামেচি করেছিলো যে এখন তো ওরা স্বামি স্ত্রী তাও কেন ওদের আলাদা রাখা হচ্ছে।তাও কেউ ওর কথা না শুনে ওকে আটকে রেখে চলে গেছে।
বাগানে যা ফুল ফুটেছিলো আর আশেপাশের বাড়ি থেকে যা ফুল পেয়েছে তাই মালিকে দিয়ে আনানো হয়েছে।আসলে সাদুদের এই বাড়ির বাগানটা অনেক বড় আর অনেকধরনের ফুলের বিস্তার চাষ আছে তাই কোন সমস্যা হয়নি।
সাদু একমনে বেলিফুল আর গোলাপফুলের মালা গাধঁছে।ফ্যানের বাতাসে ওর খোলা চুলগুলো এলোমেলোভাবে উড়ছে।মায়াবী মুখটায় অদ্ভূত সুন্দর আর চমৎকার এক হাসি।ইসস! এই হাসির জন্যে মনির দুনিয়া এফোড় ওফোড় করে দিতে পারে।প্রিয়তমার ঠোঁটের হাসি থেকে আর কোন চমৎকার দৃশ্য আছে বুজি এই দুনিয়ায়?উহু! না একদমি না।
মনির কাজ ফেলে দিয়ে হা করে তাকিয়ে আছে সাদুর দিকে।এদিকে সাদু ফুল গাঁথতে গিয়ে ওর হাত গিয়ে লাগে মনিরের বাহুতে।সাদু ভ্রু-কুচকে তাকায় মনিরের দিকে। বলে,
–” এখানে কি করছেন?”
মনির হাত দিয়ে আলতো করে সাদুর কপালে পড়া চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বলে,
–” নিজের অর্ধাঙ্গিনিকে।”
সাদু লাজুক হাসি দিলো।মনির ওর বুকের বা-পাশে হাত দিয়ে বলে,
–” ইস! এভাবে হেসো না জানেমান বুকটা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়!”
সাদু ফিক করে হেসে দিলো মনিরের এক্সপ্রেশন দেখে।মনির গাল ফুলিয়ে বলে,
–” হাসার কি আছে এখানে?”
সাদু হাসতে হাসতেই মনিরের গাল টেনে দিয়ে বলে,
–” ওলে আমার কিউট বরটা।”
মনির ভাব নিয়ে বলে,,
–” আমি জানি আমি অনেক কিউট,হ্যান্ডসাম,ড্যাসিং একজন ব্যাক্তি।”
–” আচ্ছা তাই না-কি?”
–” হ্যা! সাথে পাওয়ারফুল ও অনেক।”
–” দেখে তো মনে হয় না।”
মনির দুষ্টু হেসে সাদুর কানে কানে বলে,
–” বিয়েটা একবার হতে দেও।বাসর রাতে সব বুঝিয়ে দিবো।”
সাদুর লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে ফুলে উঠেছে।ইসস! লোকটা কি বেহায়া।এতুটুও লজ্জা নেই।কিসব অসভ্য কথাবার্তা বলে।সাদু ধাক্কিয়ে মনিরকে উঠিয়ে দিতে দিতে বলে,
–” অসভ্য কোথাকার। যান কাজে যান।যত্তোসব লজ্জাবিহীন কথাবার্তা বলে!”
মনির টুপ করে সাদুর গালে কিসসি দিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেলো।এদিকে সাদু গালে হাত দিয়ে চোখ বুজে আছে।লোকটার হুটহাট কার্যকালাপ যে ওর নিশ্বাস থামিয়ে দেয় তা কি লোকটা জানে?ইসস! কি করে গেলো এটা!”
#চলবে______________
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।