ভালোবাসি তাই পর্ব-১৩

0
1297

#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ১৩
#Tanisha Sultana

অভি কানে হাত দেয়। মনে হচ্ছে কান নষ্ট হয়ে গেছে। তানহা চোখ খুলে দেখে ও ছাঁদের ফ্লোরে বসে আছে। কোমরে আর পায়ে বেশ ভালোই ব্যাথা পেয়েছে।
“স্টুপিট ইডিয়েট। আমার কানটা খেয়ে ফেলছে
কান মালিশ করতে করতে বলে অভি। তানহা দাঁড়াতে গিয়ে আবার আআআআআআআআ করে ওঠে। অভি এক টান দিয়ে তানহাকে দাঁড় করায়।
” উমা গো কোমরটা ভেঙে গেলো গো। এখন আর কেউ আমাকে বিয়ে করবে না। আমি প্রতিবন্ধি হয়ে গেলাম। আল্লাহ আমাকে তুইলা নাও
তানহা কাঁদতে কাঁদতে এসব বকছে। অভি হাত ভাজ করে কপাল কুচকে তাকিয়ে আছে তানহার দিকে।

“এই খাচ্চর ব্যাটা আমার লাইফ টা শেষ করে দিলো৷ কতো স্বপ্ন দেখছিলাম ছোটো ছোট এগারোটা জুনিয়র নেইমার হইবো আমার। তারপর ২০৫০ সালে আমার নেইমাররা ফুটবল খেলে কোপা আমেরিকা, বিশ্ব কাপ আরও যত প্রকার কাপ আছে সব নিয়ে আসবো।

” কিহহহহ
কপালে দুটো ভাজ ভেলে বোঝার চেষ্টা করে বলে অভি। তারপর বুঝতে পেরে কপাল মেলে দেয়। একটু হেসে বলে
“তোমার সিনিয়র নেইমারই পারলো না

তানহা হাত উঠিয়ে বলে

” একদম আজে বাজে কিছু বললে এখান থেকে ফেলে দেবো। আপনার জন্য আমার বিয়ে হবে না। জুনিয়র নেইমাররাও আমার কোলে আসবে না।
নাক টেনে বলে তানহা।

“ঠিক আছে কেউ বিয়ে না করলে আমি বিয়ে করবো নি

বলে সামনে তাকিয়ে দেখে তানহা নাই।
” গেলো কই
আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সামনের বিল্ডিং এর ছাড়ে দুই বয়াম আচার রাখা। আমের আচার। তানহা বয়াম দুটো নিয়ে হাত পা মেলে বসে আচার খাচ্ছে। অভি মাথায় হাত দেয়।
“কার আচার খাচ্ছে? এবার হবে কি?

অভি তানহার কাছে যায়।
” না বলে কারো জিনিস খাওয়া ঠিক না জানো না

“হুমম জানি না
বলে খেতে থাকে। অভি একটু দুরে দাঁড়িয়ে তানহার খাওয়া দেখছে।
” লেজ ছাড়া বাঁদর।
চেটে পুটে খেয়ে যেখানে আচার ছিলো বয়াম সেখানে রেখে তানহা এক দৌড়ে বেরিয়ে যায়। অভিও পেছন পেছন যায়। একদম ক্লাসের সামনে এসে তানহা হাঁপাতে থাকে৷

“শুনেন আমি যে ওখান থেকে আচার খাইছি এটা যদি আপনি সবাই কে বলে দেন তাহলে আমিও বলে দিবো
হাঁপাতে হাঁপাতে বলে তানহা।
” কি বলে দিবা?

“বলো দেবো আপনি আমাকে বউ বলে জড়িয়ে ধরছিলেন
বলেই আবার দৌড় দেয়।
” তানহা আস্তে পড়ে যাবা
কে শোনে কার কথা।
দৌড়াতে দৌড়াতে রিকের সাথে ধাক্কা খায়। পায়ে একটু ব্যাথা ছিলো এখন আরও একটু পায়।

“আর ইউ ওকে তানহা
তানহার হাত ধরে বলে রিক।

” হুমম ঠিক আছি
হাত ছাড়িয়ে একটু হেসে বলে তানহা।

“এভাবে দৌড়াচ্ছিলা কেনো?

তানহা রিকের কানের কাছে গিয়ে বলে
” পেছনে বাঘ আছে

“বাঘ

” হুমমম মানুষের মতো বাঘ

“কি বলছো

তানহা অভির কন্ঠ শুনে চমকে ওঠে আবার দৌড় দেয়।
” তুই চিনিস ওকে (রিক)

“খালাতো বোন

বলে অভিও চলে যায়।
গেটের সামনে যেতেই অভি তানহার হাত ধরে ফেলে। বাঁদরের মতো লাফাও কেন?

” আপনি জোকের মতো খালি চিপকান কেন? কথায় কথায় হাত ধরেন আবার কাল রাতে আমার ড্রেস চেঞ্জ
অভি বড়বড় চোখ করে তাকায় তানহার দিকে। তানহা কথাটা বেশ জোরেই বলে। চারপাশের পোলাপানরা ওদের দিকে তাকায়। তানহা দাঁত দিয়ে জিভ কেটে অভিকে টেনে সাইডে নিয়ে যায়।

“ইডিয়েটের মতো কথা বলো কেনো তুমি? মানে তোমাকে সব সময় প্রুফ করতেই হবে তুমি আসলেই ননসেন্স।

” আরে রাখেন আপনার ননসেন্স ইডিয়েট আগে কাজের কথায় আসেন। কাল আমার ড্রেস কেনো চেঞ্জ করিয়েছেন?

অভি বাঁকা হেসে বলে
“তুমিই তো বললা।

” আমি কখন বললাম
অবাক হয়ে বলে তানহা।

“ও মা মনে নেই? ড্রেস চেঞ্জ করাতে বললা তারপর চুমু দিতে বললা।আর অনেক কিছু বলছো যোগুলো আমি এখন বলতে পারবো না। আমার লজ্জা লাগছে।

তানহা হা হয়ে ভাবছে। ও এসব বলছে।
” এক মিনিট
অভি পকেট থেকে ফোনটা বের করে তানহার পানি পানি ড্যান্স দেখায়। তানহা হা হয়ে গেছে

“সারা রাত কতো জ্বালিয়েছো আমায়।

” আপনি আমার সব দেখে ফেল

অভি তানহার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে
“হুমম দেখলাম। বিউটিফুল
দাঁত কেলিয়ে বলে

“আপনাকে তো আমি
অভির দিকে তেড়ে এসে বলে তানহা।

” কিছুই করবা না। কিন্তু আমি করবো। ভাবছি তোমার এই পানি পানি হোগায়া ডান্সটা আমার ইউটিউব চ্যানেলে ছাড়বো। ফেসবুকেও তোমার ট্যাগ করে দেবো। কেমন হবে?

“এমনটা করবেন না?
কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে তানহা।

” ঠিক আছে করবো না যদি তুমি আমার কথা শুনো

“কি করতে হবে?

” আমি যা যা বলবো তাই করতে হবে।

“ঠিক আছে করবো।

” গুড গার্ল

“করলা

” তোমারই

“আমারই কি?

” আমার মাথা
পেছন পেছন আসো
রাগ দেখিয়ে বলে অভি।

অভি আগে আগে যায় তানহা পেছন পেছন। বাইকে উঠে তানহাকে পেছনে বসতে বলে। তানহা বসে।

“আমার ধরে বসো

” আমি ঠিক আছি

“তুমি ঠিক আছো কি বেঠিক আছো সেটা বলি নি। বলছি আমাকে ধরে বসো।

” লাটসাহেব
তানহা অভির কাঁধে হাত দিয়ে বসে।

“আমার কাঁধে এলার্জি আছে। হাত সরাও

” তাহলে কোথায় ধরবো

“বুকের ওপর হাত রেখে বসো

” পারবো না
ঠোঁট উল্টে বলে তানহা।

“জাস্ট ফোনটা বের করবো

” ধরতেছি

তানহা অভিকে মনে মনে হাজারটা গালি দিয়ে বুকের ওপর হাত দিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বসে। অভি চোখ বন্ধ করে ঠোঁট মেলে হাসে। তৃপ্তির হাসি।
খুব করে গলা ছেড়ে গান গাইতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এটা গান গাওয়ার জায়গা না।

“আমার তোমার মতো কাউকে না শুরু তোমাকে চাই। সারাজীবনের জন্য। এর জন্য যদি আমাকে খুন করতে হয় আমি তাই করবো। যদি বিশাল সমুদ্র পাড়ি দিতে হয় তাই দেবো। কিন্তু তোমাকে ছাড়বো না।

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে লম্বা একটা ঘুম দেয় তানহা। বিকেল সাড়ে চারটেয় ঘুম ভাঙে। গায়ে ওড়না টা জড়িয়ে জানালার পাশে থাকা ছোট একটা দরজা খুলে ফেলে। এই মাএ দরজাটা চোখে পড়লো তানহা। এক পা দুই পা এগিয়ে গেলো। সামনে একটা গোলাপ বাগান। চারপাশে বাস দিয়ে দেয়াল দেওয়া বাগানটায়। বাশের গেটের কাছে লেখা এই বাগানে প্রবেশ নিষেধ। তানহা টান দিয়ে কাজগটা ছিড়ে ফেলে। বাগানে না ঢুকে হাত বাড়ি দুটো গোলাপ ফুল ছিঁড়ে খোপায় গুঁজে নেয়। অভি বেলকনি থেকে দেখছিলো। তারপর ঢং করে হেটে রুমে চলে যায়। রুমে এসে চমকে ওঠে তানহা।

চলবে।