#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ১৫
#Tanisha Sultana
“এখানে কেনো এসেছো? পেছন না ঘুরেই কাঠকাঠ গলায় বলে অভি।
তানহা অভির কাঁধেও ঠিক ওপরে হাতটা রেখেছিলো। অভির কথা শুনে হাতটা নামিয়ে নেম। হাসিমুখটা ফ্যাকাশে করে ফেলে। একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
” কেনো এসেছো এখানে? অভি আবার জিজ্ঞেস করে।
“এমনিতেই। গোধূলি দেখতে। ছাঁদের রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে তানহা। তানহার পাশে এসে রিক দাঁড়ায়। অভি রিককে খেয়াল করে কপালে ভাজ ফেলে বলে
” তুইইইই
রিক কিছু বলতে যাবে তার আগেই তানহা বলে।
“আমার সাথে এসেছে।
অভি এক নজর তানহার দিকে তাকায়। তারপর গিটার কোল থেকে নামিয়ে উঠে দাঁড়ায়। রিকের দিকে তাকিয়ে বলে
” এখন এখান থেকে যেতে পারিস।
রিক হাবলার মতো তাকিয়ে আছে। অভির কথা ঠিক বুঝতে পারলো না। ওকে যেতে কেনো বলছে?
অভি রিকের অবস্থা বুঝতে পেরে বলে
“তোকে আশিক খুঁজছিলো। বেয়ার আনবে মেবি। তো তুই চট করে গিয়ে শুনে আয়।
বেয়ারের কথা শুনলে রিকের হিশ থাকে না। অভির দিকে দাঁত কেলিয়ে এক দৌড়ে চলে যায়। তানহা হা করে তাকিয়ে আছে রিকের দিকে। কেমন ছেলেরে বাবা? সাথে করে নিয়ে এসেছে অথচ যাওয়ার সময় একবার বললোও না।
তানহা যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই অভি বলে ওঠে
” তোমাকে যেতে বলি নি।
তানহা ভ্রু কুচকে অভির দিকে তাকায়
“আমার ওপর খবরদারী আবার কবে থেকে করছেন?
” আমার মুখে মুখে একদম তর্ক করবা না। আঙুল নাচিয়ে বলে অভি। তানহা হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে থাকে অন্য দিকে মুখ করে।
অভি টুল টেনে বসে।
“আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি তোমাকে বিয়ে করবো। বাড়িতেও জানিয়ে দিয়েছি আর সবাই তোরজোর ও শুরু করে দিয়েছে।
এক নাগারে কথা গুলো বলে অভি।
তানহা কপালে ভাজ ফেলে তাকিয়ে আছে অভির দিকে। আসলে অভি কি বললো বোঝার চেষ্টা করছে।
” ঠিক বুঝলাম না?
“সোজা কথা তুমি বুঝতে পারো কবে? বাঁকা করে বললে ঠিকি বুঝতা। আমি আবার রিপিট করছি। ঠিক দুদিন পরে আমাদের বিয়ে হচ্ছে। বিরক্তি নিয়ে বলে অভি।
“ড্রামা হচ্ছে? আমি কোনো স্টার জলসা জী বাংলায় অভিনয় করছি? বিয়ে আসছে কোথা থেকে? আর আপনি ভাবলেন কি করে আপনাকে আমি বিয়ে করবো? তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলে তানহা।
জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে তানহা। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।
অভি ধারাম করে উঠে দাঁড়ায়। টুলটাকে লাথি মারে। ভেঙে গুড়িয়ে যায় টুলটা। তানহা ভয় পেয়ে যায়। অভির চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। ফর্সা মুখটাও লাল হয়ে গেছে। তানহার দুই বাহু চেপে ধরে বলে
” সী
নিচের দিকে ইশারা করে বলে। তানহা তাকিয়ে দেখে আবির দাঁড়িয়ে আছে তানহার দিকে তাকিয়ে। তানহা চোখ ফিরিয়ে নেয়। বুকের ভেতর ধক করে ওঠে।
“এবার তুমি বলো? ড্রামা হচ্ছে? খুব ভালোবাসা ছিলো না?? একদম পিছু ছাড়ছে না। ফিরে যেতে মন চাইছে।
তানহা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। অভি ধাক্কা দিয়ে তানহাকে সরিয়ে দেয়।
” মায়া খুব ভালো একটা মেয়ে। আমি ওর লাইফটা কখনোই শেষ হতে দেবো না। এর জন্য যদি তোমার মতো বাঁদরকে বিয়ে করতে হয় আমি সেটাই করবো।
তানহা কর্কশ গলায় বলে দেয়
“আমি এই বিয়ে করবো না। দরকার হলে পালিয়ে যাবো।
অভি চোখ বন্ধ করে নেয়। দাঁতে দাঁত চিপে।
” ভেবেছিলাম বড়দের জানিয়ে ইনফেক্ট জানিয়েও ছিলাম। কিন্তু হলো না। তাই আমরা এখানেই বিয়ে করবো।
তানহার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় অভি। তানহা বারবার বলছে বিয়ে করবো না। কিন্তু অভি শোনার পাএ না। একদম নিজের রুমে এনে হাত পা বেঁধে ফেলে রাখে তানহাকে। একে দিয়ে বিশ্বাস নেই পালিয়েও যেতে পারে।
চোখে মুখে পানি দিয়ে মাথা ঠান্ডা করে অভি। তারপর রুমে থেকে বেরিয়ে যায় কাউকে ফোন করতে করতে।
আবির এখনো ওখানে দাঁড়িয়ে আছে যদি আরেকবার তানহাকে দেখা যায়।
“হেই আবির
আবির চমকে পেছনে তাকায়। অভিকে দেখে ভরকে যায়।
” তানহাকে দেখতে এসেছো?
“আসলে না,মানে
আমতাআমতা করে বলে আবির। অভি একটু ঠোঁটটা,মেলে দিয়ে বলে
” ইয়ার এতো তোতলানোর কি আছে। দেখতে এসেছো স্বীকার করলেই পারো। এনিওয়েজ তানহা এখন আমার রুমেই আছে। বিয়ে করে নিয়েছি আমরা।
আবিরের বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। তানহা বিয়ে করে নিয়েছে। চোখের কোনে পানি চলে আসে।
“তুমি ভেতরে চলো না।
আবির একটু হাসির রেখা টেনে বলে
” আমাকে যেতে হবে।
“তাড়া থাকলে জোর করবো না।
আবির আর এক সেকেন্ড দেরি না করে চলে যায়। অভি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
মাগরিবের আজানের শব্দে তানহা পিটপিট করে চোখ খুলে। সেই তখন থেকে এভাবে পড়ে আছে। অভির ওপর রাগটা তরতর করে বাড়ছে। এরই মধ্যে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে অভি। হাতে শপিং ব্যাগ। তানহা অভির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
হাতের ব্যাগ গুলো খাটের ওপর রেখে গায়ের জ্যাকেটটা খুলে টেবিলের ওপর থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নেয়। তারপর তানহার পাশে বসে তানহার মুখের বাঁধন খুলে দেয়।
এতোখন পরে মুখ খোলা পেয়ে তানহা জোরে জোরে দুটো শ্বাস নেয়।
” ইডিয়েট আমি না আপনি। ননসেন্স স্টুপিট। মানুষত্ববোধ নেই আপনার। আপনি কি ভেবেছেন? এভাবে বেঁধে রেখে বিয়ে করে নেবেন আমায়? কখনো না। মায়ার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে? তো যান না মায়াকে বিয়ে করে নেন। শান্তি পায় আমরা। এইভাবে
তানহা আর কিছু বলার আগেই অভি তানহার ঠোঁট মুখে পুরে নেয়। আপনাআপনি তানহার কথা বন্ধ হয়ে যায়। চোখ বড়বড় করে ফেলে। হাত বাঁধ থাকায় বাঁধাও দিতে পারছে না।
মিনিট পাঁচেক পরে অভি তানহাকে ছেড়ে দেয়। দুজনই জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।
“তোমাকে চুপ করানোর এটাই একমাএ রাস্তা।
তানহার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে অভি। তানহা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে পানি টলমল করছে।
” দেখো আমি যা করছি সেটা আম্মু আর তোমার মায়ের কথায় করছি। ট্রাস্ট মি এতে তোমার ভালো হবে। আমার বিন্দু মাএ ইন্টারেস্ট নেই তোমার প্রতি। কি বিশ্রি ঠোঁট তোমার। ইয়াক
নাক মুখ ছিঁটজে বলে অভি। রাগে গিজগিজ করছে তানহা।
অভি সরে আসে তানহার থেকে। হাত পা খুলে দেয়। তানহা সোজা হয়ে বসে। অভি শপিং ব্যাগ গুলো তানহার দিকে এগিয়ে দেয়।
“চট করে রেডি হয়ে নাও। এখনই সবাই চলে আসবে। দেখো আমার গার্লফ্রেন্ড আছে তবুও তোমার বিয়ে করছি পরিবারের কথা ভেবে। একদম কিন্তু বাইরের সবার কাছে বলে বেড়াবে না তুমি আমার বউ। তাহলে মেরে গুম করে দেবো।
তানহা দাঁতে দাঁত চেপে অভির কথা হজম করে।
” তারাতাড়ি রেডি হতে হবে। ওরা ফুলসজ্জার খাট সাজাতে আসবে আবার।
বলেই অভি উঠে রুম গোছানো শুরু করে।
“দেখুন
” পরে দেখবো সারা রাত পড়ে আছে। ভালো করে দেখবো।
সোজাসাপ্টা বলে অভি। তানহা ড্রেসিং টেবিলের ওপর থেকে চিরুনি স্প্রে সব ফেলে দেয়।
“বিয়ে করবো না আপনাকে। আই হেট ইউ। কখনো বিয়ে করবো না। কেনো করছেন এরকম। ঘৃণা হচ্ছে আপনার ওপর।
চিৎকার করে বলে তানহা।
অভি তানহার কোমল জড়িয়ে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে
” আমার রুমের একটা জিনিস এলোমেলো হলে তোমাকে এলোমেলো করে দেবো। আর কেনো এসব করছি? দুটো কারণে
১.আবিরের বিয়ে হয়ে গেছে। মায়াকে আমি কথা দিয়েছি সবটা ঠিক করে দেবো
আর
২. আমার আর তোমার বিয়ে হয়ে গেছে। এজ এ ক্লিয়ার
তানহার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। বিয়ে হয়ে গেছে মানে কি?
অভি তানহাকে ছেড়ে দেয়।
“পাঁচ মিনিটের মধ্যে রেডি না হলে আমি নিজ হাতে রেডি করিয়ে দেবো।
হাতের ঘড়ি তানহার দিকে এগিয়ে দিয়ে টাইম দেখায়।
তানহা ওইভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে।
” থ্রী টু ওয়ান টাইম শেষ। এবার আমি তোমার শাড়ি পড়াবো।
শাড়ি নিয়ে এগিয়ে আসতে আসতে বলে অভি।
“আআমাকে দিন
থেমে থেমে বলে তানহা।
” দিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি টাইম অনুসারে করতে পারি নি। এবার আমার পালা
চোখ টিপে বলে অভি। তানহা ঢোক গিলে।
চলবে।