#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ১৬
#Tanisha Sultana
পিছাতে পিছাতে তানহা ওয়াশরুমের দরজায় গিয়ে ধাক্কা খায়। আর পেছানোর জায়গা নেই। অভি শাড়ি নিয়ে এগিয়ে আসে।
“এএকদম আমার কাছে ঘেসবেন না। বলে দিলাম
ভয় পেয়ে থেমে থেমে বলে তানহা।
” কেনো ঘেসবো না? ভ্রু কুচকে বলে অভি।
হাজবেন্ড আমি তোমার। একটু পরেই আমাদের ফুলসজ্জা।
পকেটে হাত গুজে বলে অভি।
“আপনি আমার কেউ না। আই হেট ইউ। কিসের বিয়ে এটা? এটাকে বিয়ে বলে?
রাগে গজগজ করতে করতে বলে তানহা।
“কখন বিয়ে হয়েছে আমি জানি না।
অনেক কষ্টে কান্না চেপে রেখেছে তানহা।
” এক মিনিট
অভি আলমারি থেকে রেজিস্ট্রি পেপার নিয়ে আসে। তানহার সামনে ধরে বলে
“এই যে তুমি সাইন করেছো
তানহা পেপারটা ধরে দেখতে চায়। অভি দেয় না। স্বযত্নে আবার আলমারিতে রেখে আসে।
” এবার বিশ্বাস হলো?
তানহার কাছে আসতে আসতে বলে অভি।
“মানি না আমি
” মানতে হবে না। জাস্ট থাকতে হবে আমার সাথে।
অভি তানহার খুব কাছে চলে আসে।
” প্লিজ দুরে যান। টাচ করবেন না আমায়
চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে বলে তানহা।
“টাচ তো করি নি। ইনোসেন্ট ফেস করে বলে অভি।
তানহা চোখ খুলে দেখে সত্যিই টাচ করে নি। কিন্তু খুব কাছে চলে এসেছে।
” বদ লোক একটা
বিরবির করে বলে তানহা।
“দুরে যান না
বিরক্তি নিয়ে বলে তানহা।
” কেনো যাবো? তানহার মুখে ফু দিয়ে বলে।
“দেখুন। চোখ বন্ধ করে
ঠান্ডা গলায় বলে তানহা।
” একটু পরেই ভালো করে দেখবো
তানহার দিকে আরও একটু ঝুঁকে বলে অভি।
” তানহা
তানহার মা আর অভির মা তানহা বলে রুমে ঢুকে যায়।
“এখন কি রোমাঞ্চ করার সময়?
মুখ ঘুরিয়ে বলে অভির মা।
ছিটকে দুরে সরে যায় অভি। ইস কি লজ্জা জনক বেপার। ওনারা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। তানহা পেছন ঘুরে শ্বাস নেয়। কি ভাবলো ওনারা? লজ্জায় তানহার মাথা কাটা যাচ্ছে। দৌড়ে এখানে থেকে চলে যেতে মন চাইছে আর অভির মাথা ফাটাতে।
“তোমরা
অভি মাথা চুলকে বলে।
অভির মা অভির কান টেনে বলে
” খুব বড় হয়ে গেছো না? এতো করে বললাম বিয়ে করে নে করলি না আর এখানে এসে লুকিয়ে বিয়ে করে নিলি
অভিমানের সুরে বলে আনিকা (অভির মা)
অভি কান ছাড়িয়ে নেয়। কান ডলতে থাকে।
“আরে আম্মু জোর করে বিয়ে করে নিয়েছি। এই মেয়ে হলো চম্বুক। আবিরের পেছনে আঠার মতো পড়ে ছিলো। তাই এমনটা করলাম।
অভির কথায় তানহার রাগ আকাশে চড়ে যায়।
” অভি এভাবে কেনো বলছো? রাগী সুরে বলে আনিকা।
তানহা মায়ের দিকে তাকিয়ে রাগী সুরে বলে
“এখানে ড্রামা দেখতে এসেছো?
হেনা (তানহার মা) এক গাল হেসে বলে
” এমা ড্রামা দেখতে আসবো কেনো? মেয়ে জামাইকে দোয়া করতে এসেছি।
“মানি না আমি এ বিয়ে
কিছুটা চিৎকার করে বলে তানহা।
” তুমি মানো না বলে মহাভারত অসুদ্ধ হয়ে গেলো। কথার পিষ্টে বলে অভি।
“আপনাকে আমি পুলিশে দেবো। আঙুল তুলে বলে তানহা।
“অপরাধ? কপালে ভাজ ফেলে বলে অভি।
” আমায় জোর করে বিয়ে করেছেন। তারপর যখন তখন কাছে চলে আসেন। যেখানে সেখানে কিস করে বসেন
তানহার কথায় অভির কাশি উঠে যায়। হেনা আর আনিকা হাত দিয়ে কান চেপে ধরে।
তানহা আবার শুরু করে
“এখনই এই অবস্থা। যখন আমি একা বাড়ি থাকবো
আর কিছু বলার আগেই তানহা মা আর খালামনির দিকে নজর যায়। অভি দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে আছে।
তানহা অভির হাত থেকে জামাকাপড় ছো মেরে নিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়৷ কি বলে ফেললো ছি। দরজা বন্ধ করে দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়।
অভি কোনো দিকে না তাকিয়ে দৌড়ে বেড়িয়ে যায়। হেনা আর আনিকা হাসতে থাকে এদের কান্ড দেখে।
একটু পরেই তানহা শাড়িটা কোনোরকম পেচিয়ে ওয়াশরুমের দরজা খুলে উঁকি দেয়। কেউ আছে না কি? কেউ নেই মনে হচ্ছে। হাঁটতেই পারছে না। এমনিতে শাড়ি কখনো পড়ে নি। আজকেই প্রথম। রুমে এসে দেখে রুমটা অন্ধকার। একটু ভরকে যায় তানহা। বাইরে থেকে চেচামেচির শব্দ আসছে। অনেক মানুষ এসেছে তাই।
তানহা সুইস খুঁজছে। একেতে শাড়ি পড়তেই পারে না তারওপর অন্ধকার। সুইজ খুঁজে না পেয়ে হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।বেলকনির দরজা খুলে দেয়। পাশের ফ্লাট থেকে হালকা আলো এসে পড়ে। ওই আলোতেই তানহা শাড়ি পড়ার চেষ্টা করে।
চোখের সামনে চুল পড়ে যাচ্ছে, নাহলে আচল পড়ে যাচ্ছে, কুচি খুলে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে ভীষণ বিরক্ত লাগছে তানহার। এমনিতেই অভি তানহাকে বলছে না কি করে ওদের বিয়ে হলে তারওপর আবার খবরদারী করছে। জাস্ট ডিজগাস্টিং।
হঠাৎ এক জোড়া হাত এসে তানহার কুচি ধরে। চমকে ওঠে তানহা। চিৎকার দিতে যায়। অভি মুখ চেপে ধরে
“হুসসসসস আমি
তানহা তাকায় অভির দিকে। হালকা আলো থাকলেও অভির মুখটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। তানহার পুরো শাড়িটাই পড়ে গেছে।
অভি তানহাকে ছেড়ে দেয়। তানহা নিজের অবস্থা বুঝতে পেরে বেলকনির দরজা আটকে দেয়। এখন পুরো অন্ধকার হয়ে গেছে
” দরজা আটকে দিলে কেনো? এখন তো কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। ওয়েট লাইট জ্বালাই
অভি যেতে নিলে তানহা হাত টেনে ধরে। অভি অন্ধকারেও তানহার দিকে তাকায়।
“আলোর দরকার নেই
আমতাআমতা করে বলে তানহা। অভির সন্দেহ হয়। নিজে ইচ্ছেই তানহার ওর হাত ধরেছে নিশ্চয় কিছু আছে। হাত বাড়িয়ে সুইচ অন করে দেয়। তানহা চমকে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। অভি তানহার দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে। চোখ বড় বড় করে ফেলে। তরতর করে ঘামছে অভি।
তানহা শাড়ি উঠিয়ে পেচানোর চেষ্টা করে। তারাহুরোর জন্য এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।শাড়ির আলই খুঁজে পাচ্ছে। অভি চোখ বন্ধ করে লাইট অফ করে দেয়। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।
তানহা হাফ ছেড়ে শাড়ি পড়ার চেষ্টা করে। অভি তানহার হাত থেকে শাড়ি নিয়ে নেয়।
” আআআমি পাড়বো
থেমে থেমে বলে তানহা।
“সাটআপ। ধমক দিয়ে বলে অভি। তানহা থেমে না থেকে আবার অভির হাত থেকে শাড়ি নিতে যায়
” তোমাকে থামানোর টেকনিক কিন্তু আমি জানি। তুমি যদি বলো তো….
তানহা শাড়ি ছেড়ে দেয়। অভি বাঁকা হেসে শাড়ি পড়িয়ে দিতে থাকে।
“বদের হাড্ডি, করলা, হনুমান, শা* তএই বউ পাবি না
মনে মনে অভিকে গালি দিতে থাকে তানহা।
” বউ আলরেডি পেয়ে গেছি
কুচি ঠিক করতে করতে বলে অভি। তানহা থমকে যায়। এই লোকটা মনের কথা কি করে শুনতে পায়।
“নাও গুঁজো
তানহা অভির কথা বুঝতে পারে না।
” কিহহহ
অভি উওর না দিয়ে গুঁজে দেয়। শিওরে ওঠে তানহা। ছিটকে দুরে সরে যায়। অভিও কারেন্টের শক খায়। অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।
“যখন তখন আমাকে টাচ করবেন না আপনি?
রাগী গলায় বলে তানহা। অভি সুইস অন করে দিয়ে পকেটে হাত গুজে বলে
” তাহলে কি তোমাকে টাচ করার সময় গুলো তুমি লিস্ট করে দেবে?
চোখ বড়বড় করে তাকায় তানহা অভির দিকে। অভি উওরের আশায় ভ্রু কুচকে আছে।
“ভালোবাসি না আপনাকে আমি।
ঝাঁঝালো গলায় বলে তানহা।
” আমিও তোমায় ভাললবাসি না। ইনফেক্ট তোমায় আমার সয্যও হয় না। কিন্তু কি করবো তবুও তোমার সাথে ফুলসজ্জা করতে হবে। সোজাসাপ্টা বলে দেয় অভি।
“লজ্জা করে না আপনার?
নাক মুখ কুঁচকে বলে তানহা।
” লজ্জা তো তোমার করা উচিৎ একটা বিবাহিত ছেলের সংসারে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছো নিজের স্বামী ছেড়ে।
“স্বামী মাই ফুট
” ঝগড়া করার ইচ্ছে নেই। এমনিতেই দশটা বেজে গেছে। এবার চলো ওরা আমাদের জন্য খাট সাজাচ্ছে।
চুল ঠিক করতে করতে বলে অভি।
“আসছি। একটু পরে দেখা হবে। রেডি থেকো
বলে অভি বেরিয়ে যায়। অভির মাথা ফাটাতে ইচ্ছে হচ্ছে তানহার। এতো
বেয়াদব ছেলে হয়।
অভি বেরিয়ে যেতেই দুটো মেয়ে রুমে ঢুকে। জোর করে তানহাকে সাজাতে থাকে।
বাসা থেকে বেরিয়ে অভি সিগারেট ধরায়। একটু বেশি বেশি হয়ে গেলো। কিন্তু এছাড়া উপায়ও নেই। মায়া বড্ড বেশি ভালোবাসে আবিরকে।অভির কাকাতো বোন মায়া। আপন বোনের মতোই ভালোবাসে মায়াকে। তাছাড়াও আবিরের বিয়ে হয়ে গেছে। এখন আবিরের তানহাকে ভুলতে হবে।
অভিকে যে তানহাকে খুব ভালোবাসে তা না। নিজের বাবা মা আর তানহার বাবা মায়ের কথাই বিয়ে করে নিলো। তাছাড়া তানহার এখন একজন মানুষ প্রয়োজন যে ওকে আগলে রাখবে।
একটু আগেই তানহাকে সাজিয়ে গুছিয়ে ফুলসাজানো ঘরে রেখে গেছে দুটো মেয়ে। ভীষন বিরক্ত লাগছে তানহার। ওই বদ লোকটা না জানি কি করবে। এসব ভেবে পায়চারি করছে। হঠাৎ চোখ যায় ড্রেসিং টেবিলের ওপরের মোবাইলের দিকে। খুশিতে মনটা নেচে ওঠে তানহার। ফোনটা হাতে নিয়ে আবিরের নাম্বারে ডায়াল করে। দুইবার রিং হওয়ার পরে আবির ফোন তোলে। একটা নদীর ধারে বসে ছিলো আবির।
” হেলো আবির?
তানহার কন্ঠ শুনে আবির চমকে উঠে। মনের মধ্যে প্রশান্তির হওয়া বয়।
“কেমন আছো তানহা?
আহত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে আবির।
“ভালোই। তুমি? দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে তানহা।
” ভীষণ ভালো। তাচ্ছিল্য করে বলে আবির।
“একটা কথা বলি রাখবে?
” বলো
“মায়াকে মেনে নাও
আবির উওর না দিয়ে ফোন কেটে দেয়। তানহা ফোনটা ছুঁড়ে মারে।
অভির সাথে কিছুতেই এক রুমে থাকবে না তানহা। গহনা খুলে রেখে দেয়। বেলকনিতে গিয়ে দরজা বন্ধ করতে গিয়ে দেখে দরজা ভাঙা।
” এটাতো একটু আগেও ঠিক। ধুর
বেলকনির একটা টুক নিয়ে বসে পড়ে তানহা।
“ওই লোকটা এতো ইডিয়েট। লাইফ শেষ।
আশিক অভির পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
” কি রে বউকে রুমে বসিয়ে রেখে এখানে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিস?
আশিকের দিকে এক পলক তাকায় অভি। তারপর সিগারেটে টান দিয়ে ধোঁয়া আকাশে উড়িয়ে বলে
“কেমন যেনো লাগছে।
” কিচ্ছু হবে না রুমে যা। তানহা তোর বউ।
“বলছিস?
” হুমম বলছি
অভি আশিকের কাছে বাকি সিগারেট দিয়ে রুমের উদ্দেশ্য পা বাড়ায়।
রুমে ঢুকে অভি দরজা বন্ধ করে দেয়। তানহা কাচুমাচু হয়ে বসে।
চলবে