#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ৩০
#Tanisha Sultana
এলোমেলো পায়ে তানহা দরজা ওবদি এসে দাঁড়িয়ে যায়। মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
“কেনো যাবো আমি? সেদিন আমাকে অনেক কাঁদিয়েছে। আমি যাবোই না। দরজা বন্ধ করে দেবো। দুইদিন পরে ওর সাথে কথা বলবো কনফার্ম।
তানহা ধরাম করে দরজা বন্ধ করে দিয়ে দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়।
কান পেতে অভির কথা শোনার চেষ্টা করছে।
” কেমন দেখতে হয়েছে অভি?
খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। মন বলছে তানহা ছুঁটে গিয়ে অভিকে জড়িয়ে ধর। মন ভরে দেখে নে অভির মুখটা। আবার মন বলছে একদম ওই বাজে লোকটার কাছে যাবি না। ওই লেকটা তোকে অনেক কাঁদিয়েছে। সুধে আসলে তার শোধ নিবি তুই।
মন মস্তিষ্কের সাথে যুদ্ধ করে তানহা দাঁতে দাঁত চিপে দাঁড়িয়ে থাকে।
অভি তানহার বাবার বরাবর বসে পড়ে। উনি রকিং চেয়ারে বসে রাগে গজগজ করছে। তানহার মা পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে তানহার বাবাকে হাজারটা গালি দিচ্ছে। বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুচকাচ্ছে।
“আরে শশুড় মশাই এতোদিন পরে আসলাম কোথায়,একটু আদর যত্ন করবেন তা না আমার বউয়ের কাছেই যেতে দিচ্ছেন না। ইটস নট ফেয়ার।
অভি পায়ের ওপর পা তুলে বসে বলে।
” আদব কায়দা শিখো নি? গুরুজনদের সাথে কিভাবে বিহেব করতে হয় সেটাও জানো না। এসেছে আমার মেয়েকে নিয়ে যেতে৷ আমার মেয়ে যাবে না তোমার সাথে।
দাঁত কটমট করে বলে তুহিন।
“আপনার মেয়েকে তো আমি নিয়ে যাবোই। আমার মা বলেছে নিয়ে যেতে। কিন্তু সমস্যা হলো মা বলেছে আপনাকে মানিয়ে নিয়ে যেতে।
” আমি কখনোই মানবো না তোমাকে। বের হও আমার বাড়ি থেকে।
দরজা দিকে আঙুল তুলে বলেন উনি।
“আজিব তো৷ দুই বছর পরে বউয়ের কাছে আসলাম আর আপনি আমাকে বউয়ের কাছে যেতেই দিচ্ছেন না।
আফসোসের সুরে বলে অভি।
” ডিভোর্স পেপার তো আমি পাঠিয়ে দিয়েছিলাম
“সেখানে আপনার মেয়ের সাইন ছিলো না
” তুমি যাবে এখান থেকে?
যাবোই তো। থাকতে আসি নি। কিন্তু আমার বউ।
“হেনা ওকে চলে যেতে বলো
বলে তানহার বাবা উঠে গটগট করে চলে যায়। তানহার মা অভির কাছে গিয়ে বলে
” তুই জোর করে নিয়ে যা ওকে
“তা হয় না খালামনি। আমি এখন যাচ্ছি রাতে আসলো
অভিও চলে যায়।
এখন আর অভির গলার সুর পাওয়া যাচ্ছে না। বাবারও চিৎকার শোনা যাচ্ছে না। তাহলে কি অভি চলে গেলো। একবারও আমার সাথে দেখা করলো না? আসলোও না আমার কাছে। আপনি পাল্টে গেছেন অভি। সত্যিই কি আমাকে ফেলে দিলেন। আর কুড়িয়ে নেবেন না।
তানহা কেঁদে ফেলে৷ অভি এমন কেনো? দরজার কাছেই হাঁটু মুরে বসে কাঁদতে থাকে।
” তানহা দরজা খুলো। দরজা বন্ধ কেনো করেছো?
বাবা দরজা ধাক্কা দিয়ে বলে। তানহা তারাহুরো করে চোখ মুছে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়৷ কোনোরকমে দাঁত ব্রাশ করে মুখ না মুছেই দরজা খুলে দেয়।
“এতোখন লাগলো? ভালো করে তানহার দিকে তাকিয়ে বলে তুহিন
” আসলে ওয়াশরুমে ছিলাম
ইনিয়ে বিনিয়ে বলে তানহা।
“খেতে এসো
বলেই বাবা চলে যায়।
তানহা একদম ভার্সিটির জন্য তৈরি হয়ে খেতে যায়। একদম খেতে ইচ্ছে করছে না তবুও বাবার পাশে বসে পড়ে। তানহার মা তানহার বাবাকে খাবার বেড়ে দিয়ে রুটি ছিঁড়ে তরকারি দিয়ে তানহার মুখের সামনে ধরে।
“মা আমি একা খেতে পারবো।
” জানি খেতে পারবি তবুও খাইয়ে দেবো
তানহা মুখে নেয়। আস্তে আস্তে চিবোচ্ছে। অভি দেখা না করেই চলে গেছে বেপারটা মনে পড়তেই চোখে পানি এসে জড়ো হচ্ছে। তানহা চোখ বন্ধ করে পানি আটকানোর চেষ্টা করছে।
“অভি এসেছে জানিস?
মুখে রুটি পুরে দিয়ে বলে বলে হেনা। তানহা ফট করে চোখ খুলে। এদিক সেদিক চোখ ঘোরায়।
” ও কেনো জানবে? ওর জানার দরকার নেই। তোমাকেও আগ বাড়িয়ে বলতে হবে না। ফট করে বাবা বলে ফেলে।
“তুমি বেশি কথা বলবে না একদম। রাগ দেখিয়ে বলে হেনা।
” তুমি অভিকে নিয়ে আমার মেয়ের সামনে কথা বলবে না।
“বলবোই
শুরু হয়ে যায় বাবা মায়ের ঝগড়া। তানহা একটু পানি খেয়ে চলে যায়। ঝগড়া শুনতে ইচ্ছে করছে না।
নীল একটা থ্রি পিছ পড়েছে তানহা। গোছল করার জন্য চুল গুলো ভেজা।
অনমনে রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে তানহা। তানহার বাবা তানহার ভার্সিটির পাশেই বাসা নিয়েছে। মেয়ের সুবিধার জন্য।
ভার্সিটি বেশি দুরে না হওয়াতে প্রতিদিন হেঁটে হেঁটেই তানহা ভার্সিটিতে যায়।
অভির কথা ভাবতে ভাবতেই ভার্সিটিতে পৌঁছে যায়। বড় গেইট পেরিয়ে ক্লাসে যাওয়ার আগে পুকুর পাড়ে সেই মেহগনির গাছ গুলোর দিকে তাকায়। এটা তানহার প্রতিদিনকার রুটিন। ওইদিকে না তাকালে মন ভালো হয় না। অভি থাকুক না থাকুক তানহার মনে হয় অভি ওখানে আছে। পায়েল ইভা ওদের সাথে হাসছে। কিছুখন তাকিয়ে থাকার পরেই উপলব্ধি করতে পারে ওখানে কেউ নেই। জায়গাটা ফাঁকা। পাতা পড়ে বিছিয়ে আছে।
আজকে তাকিয়ে তানহা অন্য কিছু দেখে। আজ সত্যি সত্যিই দুইটা ছেলে আর একটা মেয়ে বসে গল্প করছে। ছেলেটা নীল জ্যাকেট পড়ে আছে। তানহার মন বলছে ওই টাই অভি। এগিয়ে যায় তানহা। একটু দুরে একটা মেহগনি গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে যায় তানহা। বুকের ভেতর ঢক করে ওঠে। ঠোঁট কাঁপতে থাকে।
হ্যাঁ ওইটাই অভি। গালের চাপ দাঁড়ি গুলো একটু বড় চুল গুলো বেশ বড়বড়। গলার পা সাইডে ট্যাটু করা। কিছুটা রোগা আর কালো হয়ে গেছে। কিন্তু এতেই যেনো অভির সৌন্দর্য আরও বেড়ে গেছে।
এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তানহা অভির দিকে। চোখের পলকই পড়ছে না।
“এতো ভালো কবে বেসে ফেললাম আমি? নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে তানহা।
অভি পায়েলের এক হাত জড়িয়ে ধরে আছে। অভিও বেশ হেসে হেসে কথা বলছে। সেই মুচকি হাসি।
তানহার বুকের বা পাশে চিনচিন করতে থাকে। চোখ দিয়ে আপনাআপনি পানি গড়িয়ে পরে।
অভি তানহার দিকে তাকাতেই তানহা আড়ালে চলে যায়। এক দৌড়ে ছুটে চলে যায়। অভি দেখতে পায় নীল ড্রেস পড়া একটা মেয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছে। ভ্রু কুচকে ফেলে অভি।
আজ আর ক্লাস করে না তানহা। ছুঁটতে ছুঁটতে বাড়ি চলে যায়। সোজা নিজের রুমে গিয়ে রজা বন্ধ করে দেয়। ওয়াশরুমে গিয়ে সাওয়ার অন করে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।
” অভি কি তাহলে সকালে ডিভোর্স পেপার দিতে এসেছিলো? তার জন্যই বাবা চিৎকার করছিলো?
আর ভাবতে পারছে না তানহা। মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।
এক ঘন্টা সাওয়ার নিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে। ওইভাবেই ঘুমিয়ে পড়ে।
রাত দশটার দিকে ঘুম ভেঙে যায়। জ্বর এসে গেছে। সেই জনই এতোখন ঘুমিয়েছিলো। হয়ত বাবা মা অনেক ডেকেছে। চিন্তা করছে। তানহা ছুটে বেড়তে যায়। কেউ একজন হাত টেনে ধরে।
“আমাকে না দেখেই চলে যাচ্ছো?
কন্ঠটা শুনে তানহা ঢোক গিলে। খুশি হওয়ার বদলে ভীষণ রেগে যায়।
” কি গো বউ ভুলে গেছো না কি আমাকে?
চলবে
#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ৩১
#Tanisha Sultana
“আমার হাতটা ছেড়ে দিন। সাহস হয় কি করে আমাকে টাচ করার? চোখ মুখ শক্ত করে বলে তানহা ।
অভি ভ্রু কুচকে তাকায় তানহার দিকে। এই মেয়েটাএখনো সেই ঘাড় ত্যাড়াই আছে।
” ওহহ তানহা কাম অন
সব সময় তুমি এটাই কেনো প্রুফ করো তুমি তোমার বাবার মতোই
বিরক্তি নিয়ে বলে অভি।
তানহা দুই হাত দিয়ে সজোরে ধাক্কা মারে অভিকে। অভি তাল সামলাতে না পেরে সোফায় গিয়ে পড়ে। রাগে তানহার শরীর কাঁপাছে৷ অভি হতোবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
“কেনো এসেছেন আপনি এখানে? দেখতে কেমন আছি? না কি আপনাকে দেখে কেমন রিয়েক্ট করি সেটা দেখতে এসেছেন? আপনি ভীষণ খারাপ একটা মানুষ। ভীষণ বাজে আপনি
বলতে বলতে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে তানহা। অভি হকচকিয়ে যায়। এভাবে কাঁদার কি আছে বুঝতে পারছে না।
” কাঁদছো কেনো? তানহার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে অভি।
“আপনি এখানে এসেছেন কেনো? চোখ মুছে বলে তানহা।
” তোমাকে দেখতে এসেছি।
“আমার রুপ উপচে পড়ে নি যে আমায় দেখতে আসতে হবে। দাঁতে দাঁত চিপে বলে তানহা।
অভি এবার ভীষণ রেগে যায়। তানহার দুই কাঁধ শক্ত করে ধরে।
” এই মেয়ে তোমার পবলেম কি? সব সময় এমন বিহেব কেনো করো? মানুষ মনে হয় না আমাকে? না কি অবহেলা করো তাড়িয়ে দাও তাও বারবার ফিরে আসি বলে বেশি ভাব দেখাও।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে অভি।
তানহা মাথা নিচু করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে।
“তোমার বাবা কুকুরের মতো তাড়িয়ে দিচ্ছে তুমি তাড়িয়ে দিচ্ছো। এতোটাই কি জঘন্য আমি?
তানহা মাথাটা অভির বুকে রাখে। খানিকটা চমকে ওঠে অভি।
” আপনি কখনোই আমাকে বুঝতে পারেন না। কেনো বলেন তো?
রিনরিনিয়ে বলে তানহা। অভির কান ওবদি পৌছায় না তানহার কথা।
“আর ইউ ওকে তানহা। বিচলিত হয়ে তানহার মাথা বুক থেকে তুলে বলে অভি।
তানহা অভির হাত কাঁধ থেকে ছাড়িয়ে অভির চুল টেনে ধরে।
” আহহ মারছো কেনো?
“গার্লফ্রেন্ড রেখে মাঝ রাতে পরো নারীর ঘরে এসেছেন। গার্লফ্রেন্ড জানতে পারলে এভাবেই মারবে।
চুল ছেড়ে দিয়ে মুখ বাঁকিয়ে বলে তানহা।
অভি হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে দুই সেকেন্ড ভাবে গার্লফ্রেন্ড কে? তারপর সকালে পায়েলের সাথে বসে গল্প করছিলো সেই কথা মাথায় আসে। মুহুর্তেই ভ্রু কুচকে যায় অভির। চুল থেকেহাত সরিয়ে তানহার দিকে তাকায়
” ওহহ হ্যাঁ তো পায়েল তো আমার গার্লফ্রেন্ড ই। তুমি ভোলো নি তাহলে।
এক গাল হেসে বলে অভি।
মুহুর্তেই তানহার মুখটা কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়। চোখে পানি গুলো বাঁধ ভেঙে চলে আসে।
“ভাবতেছি তুমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করলেই পায়েলকে বউ করে ঘরে তুলবো।
খাটের ওপর পা ঝুলিয়ে বসে বলে অভি।
তানহার চোখ থেকে টুপটাপ পানি পড়ছে।
” পেপার পাঠিয়ে দেবেন আমি সাইন করে দেবো।
থেমে থেমে বলে তানহা।
“একবার না পাঠিয়েছিলাম। কথার পৃষ্ঠেই বলে দেয় অভি।
” ছিঁড়ে ফেলেছিলাম। কান্না করে দেয় এবার তানহা। শুধু নাক টানছে আর চোখ দিয়ে পানি গড়াচ্ছে।
“কেনো ছিঁড়ে ফেলছো? আর কান্নাই বা কেনো করছো? ভালোটালো বেসে ফেললে না কি?
বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে বলে অভি।
” বয়েই গেছে আপনার মতো করলাকে ভালোবাসতে। বাসি না ভালো।
চোখ মুছে বলে তানহা।
অভি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
“ওহহহহ
” খুব খিদে পেয়েছে। পেটে হাত দিয়ে বলে অভি।
“যান পায়েলের কাছে। কর্কশ গলায় বলে তানহা।
” পায়েলের কাছে তো রেমাঞ্চ করতে যাবো। খাওয়াবে তো তুমি।
মিটমিটে হেসে বলে অভি।
“পারবো না।
” তাহলে আর কি সারা রাত না খেয়েই থাকতে হবে। অসহায় ফেস করে বলে অভি।
তানহা ফট করে দরজা খুলে বেড়িয়ে যায়।
“আমার অভিমানী
মুচকি হেসে বলে অভি।
কিচেনে খাওয়ার মতো কিছুই নেই। ফ্রিজেও নেই।
আমি আজ খায় নি তাও কোনো খারাপ রাখে নি মা। আজিব।
বাড়িতে নুডলস ডিম আর করলা ছাড়া কিছুই নেই। ফ্রিজে মাছও নেই। চালের হাড়িটাও উধাও।
আজিব গেলো কই সব
মনে মনে মাকে হাজারটা বকা দিয়ে নুডলস আর করলা সিদ্ধ দেয়। আজকের রেসিপি হবে করলা দিয়ে নুডলস চরচরি।
পাক্কা আধঘন্টা পরে করলার নুডলস রান্না শেষ হয়। বাটিতে নুডলস বেড়ে রুমের দিকে যায়।
অভি সারা রুম জুড়ে পায়চারি করছিলো। সারারুমে তানহার গন্ধ মম করছে। এতোদিন এই স্মেইলটা বড্ড মিস করতো।
দরজা খোলার আওয়াজে খাটে গিয়ে বসে। তানহা ভালো করে দরজা আটকিয়ে অভির সামনে নুডলসের বাটি রাখে।
” নিন খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন।
তানহার ফর্সা মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। এলোমেলো ছোট চুল গুলো মুখের মধ্যে লেপ্টে গেছে। সাদা টিশার্ট ঘামে ভিজে গেছে। ওড়না না থাকার কারণে সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। হাতের নখ খুলো বেশ বড়বড়। নায়িকাদের মতো। তাতে আবার গোলাপি নেলপলিশ লাগানো। পায়ের নখেও নেলপলিশ৷ থুতনির ঠিক মাঝখানে একটা তিল। যা আগে খেয়াল করে নি অভি। আগে হয়ত স্পষ্ট বোঝা যেতো না। এখন বেশ খানিকটা ফর্সা হওয়াতে বোঝা যাচ্ছে।
“মনে হয় মোটামুটি একটা যুদ্ধ করে এলে? চামচ দিয়ে নুডলস মুখে দিতে দিতে বলে অভি।
” হ্যাঁ বাবা দেখলে লঙ্কা কান্ড বাঁধিয়ে দিতো। হাতের উল্টো পিঠে ঘাম মুছে অভির পাশে বসতে বসতে বলে তানহা।
“রাবনের মতো শশুড় মশাই পেয়েছি যে। বিরবির করে বলে অভি।
“স্বামী বিদেশ গেলে বউরা রেগা হয়ে যায়। আর তুমি এমন তবলা হয়েছো কেনো?
” আমি তবলা? রেগে গাল ফুলিয়ে বলে তানহা।
“তাই তো দেখছি। আশি কেজি হবে মেবি। টিটকারি মেরে বলে অভি।
“কি বললেন আপনি? জ
তেড়ে এসে বলে তানহা
” বললাম তবলা গোলুমলু হয়ে গেছো।
তানহা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অভি তানহার দৃষ্টি দেখে হালকা কেশে ওঠে।
“এই ভাবেই তোমাকে বেশি কিউট লাগে। মনে হয় গাল দুটো টেনে দেই। গাল টেনে দিয়ে বলে
“পায়েল খুব স্লিম।
” হুমমম। কি দেখতে দেখছো? একবার তাকালে তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করে। তানহাকে চটানোর জন্য বলে অভি।
অভির শার্টের কলার ধরে টান টেনে অভির মুখটাকে একটু ঝুঁকিয়ে দেয়।
“আমাদের ডিভোর্স না হওয়ার পর্যন্ত একদম পায়েলের নাম মুখে আনবি না। দাঁতে দাঁত চিপে বলে তানহা।
” তাহলে তুমি আমাকে ডিভোর্স দেবেই।
থেমে যায় তানহা। কলার ছেড়ে দেয়। গুটিশুটি মেরে বসে।
“মনের মধ্যে যেটা আছে সেটা বলে দিতে হয় রে পাগলি। শুধু শুধু দুরে দুরে থেকে লাভ আছে?
মুখে নুডলস পুরে বলে অভি
তানহা এবার চোখ বন্ধ করে দম নেয়। সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় যাই হয়ে যাক আজ অভিকে প্রপোজ করেই দেবে। পায়েল না নুপুর ওকে ঝাটু পেটা করে তাড়াবে৷ কিন্তু এখন কথা হলো শুধু কি লাভ ইউ বলবে না কি সাথে মসলাপাতি মেশাতে হবে? শুধু লাভ ইউ বললে অভি যদি অনরোমান্টিক ভাবে। না না অভিকে দেখাতেই হবে তানহা ভীষণ রোমান্টিক। এবার মনে মনে কথা সাজাচ্ছে তানহা। লজ্জায় একা একাই লাল নীল হচ্ছে। কি আবার ভুলে যাচ্ছে। এবার খাতা কলম নিয়ে বসে তানহা৷ প্রথমে লিখবে তারপর মুখস্থ করবে টেন অভিকে গড়গড় করে প্রপোজ করবে।
অভি তানহার কান্ড দেখছে। এই কাঁদছিলো এই রেগে বম হয়েছিলো এখনই আবার লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে। কাহিনি কি? খাতায় কি লিখছে?
” তানহা তুমি ঠিক আছো?
নুডলসটা শেষ করে বলে অভি।
“ডোন্ট ডিস্টার্ব। আমি কথা সাজাচ্ছি।
কলম তুলে বলে তানহা।
কথাও আবার সাজাতে হয়৷ মনে মনে ভাবে অভি। এই মেয়ের মাথা ঠিক নেই।
আয়েশ করে শুয়ে পড়ে তানহার খাটে।
তানহার লেখা পড়া শেষ হলেই তানহা অভির হাত ধরে টেনে তোলে।
” কি হলো? চোখ মুখ কুঁচকে বলে অভি।
“এখানটাই দাঁড়ান।
রুমের মাঝ বরাবর দাঁড় করিয়ে দেয় অভিকে।
তারপর আয়নার সামনে গিয়ে ঠোঁটে লিপস্টিক আর চোখে কাজল নিয়ে চুলটা পরিপাটি করে এসে অভির সামনে দাঁড়ায়।
চলবে।