ভালোবাসি তাই পর্ব-৪৬

0
1286

#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ৪৬
#Tanisha Sultana

বিয়ের তোরজোর শেষ। রিসেপশনের দিনই সব মেহমানরা চলে গেছে।
পড়ন্ত বিকেলে ছাঁদের রেলিং ঘেসে বসে আছে তানহা। হালকা বাতাসে নীল শাড়িটা উড়ছে। খোলা লম্বা চুল গুলোও উড়ছে। একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে তানহা। কিছুই ভালো লাগছে না। চারপাশ বিসন্নতায় ছেয়ে গেছে। অনেক মানুষের ভিরেও নিজেকে একা একা লাগছে। মনের আকাশে মেঘ জমেছে। যখন তখন বৃষ্টি নামবে ঝমঝম করে।
অভি যতখন আশেপাশে থাকে খুব ভালো লাগে। অভি চলে গেলেই ফাঁকা ফাঁকা লাগে।
ইদানীং অভিও প্রচন্ড ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সেই সকালে বাসা থেকে বেড়িয়ে যায় অনেক রাতে বাসায় ফেরে। তানহার সাথে কথাও হয় না তেমন একটা। তানহা ঘুমে থাকতেই বেড়িয়ে যায়।
খুব খারাপ লাগে তানহা। এতো বিজি কেনো? একটুও কি সময় বের করা যায় না বউয়ের জন্য? তুই যদি এতোই বিজি থাকবি তাহলে তোর বিয়ে কেনো করতে হবে?
চাপা একটা অভিমান জমা হয়েছে অভির প্রতি। মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে আর অভির সাথে কথা বলবে না। ভাববেও না ওকে নিয়ে যা খুশি করুক।

প্রায় সন্ধা হয়ে গেছে। একটু পরেই মাগরিবের আজান পড়বে। তানহা উঠে দাঁড়ায়। মাথায় ঘোমটা টেনে ছাঁদ থেকে নেমে আসে।
বাসায় পা রাখতে না রাখতেই মাগরিবের আজান পরে যায়। তানহা অজু করে নামাজ পড়ে নেয়।

শাশুড়ী রাতের রান্না করছে। অনিক টিভি দেখতে। তানহা শাশুড়ির সাথে রান্নায় সাহায্য করে। রান্না শেষ হলে রুমে এসে হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বসে।

রাত এগারোটা পর্যন্ত বই পড়ে। এখনো অভি আসার নাম নেই৷ বই টেবিলে গুছিয়ে রেখে খেতে যাবে তখন দেখে অভি ট্রাই খুলতে খুলতে বের হচ্ছে। তানহা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রুম থেকে বেরতে নেয়।
তানহা
অভির ডাকে থেমে যায়।
“ফ্রিজের পানির দিয়ে একটা স্যালাইন গুলিয়ে নিয়ে এসো।
ড্রেস চেন্জ না করেই বিছানায় গা এলিয়ে দেয় অভি। চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভীষণ ক্লান্ত। তানহা ভেবেছিলো রিয়াক্ট করবে কিন্তু অভির চেহারা দেখে থেমে যায়। নিরবে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
স্যালাইন গুলিয়ে নিয়ে আসে রুমে। টেবিলের ওপর গ্লাস রাখে।
” রাখলাম

“ভীষণ মাথা ব্যাথা করছে একটু চুল টেনে দেবে প্লিজ?
কপালে হাত রেখে বলে অভি। তানহার ভীষণ মায়া হয়।

খাটের ওপর উঠে গোল হয়ে বসে। অভি তানহার কোলে মাথাটা রাখে তানহার কোমর জড়িয়ে।
তানহা চমকে ওঠে।
” স্যালাইন খাবেন না?
থেমে থেমে বলে তানহা।
“হুমমম
অভি চোখ বন্ধ করে বলে।
তানহা অভির চুল টানতে থাকে।
বেশ কিছুখন চুপ থেকে অভি বলে ওঠে।
” আজ কোনো পবলেম আছে কি?
তানহা থমকে যায়। হাত নামিয়ে নেয় মাথা থেকে। অভি মাথা উঁচু করে ভ্রু কুচকে তাকায়।
“খাবেন না
এদিক সেদিক চোখ ফিরিয়ে বলে তানহা। অভি তানহার হাত দুটো মুঠো করে ধরে।
” বলো
তানহার হাতে চুমু দিয়ে বলে
“হুমম
বলেই তানহা দৌড় দেয়। অভি জামার এক অংশ ধরে ফেলে।
” এর জন্যই কি এতোদিন এমন করছেন?
অভি ফট করে উঠে বসে। তানহার দিকে ঝুঁকে তাকায়।
“সিরিয়াসলি তোমার এটাই মনে হয়?
তানহা কি বলবে বুঝতে পারছে না।
অভি তাহাকে কোলে শুয়িয়ে দেয়। তানহার চুলে বিলি কেটে বলে
” রেকর্ডিং করে ফিউচার ব্রাইট করা পসিবল না। তাই নতুন কাজের সন্ধানে ছুটছিলাম আজ পেয়ে গেছি। এখন আর আমি একা নেই। দুজন হয়েছি। আর তোমার যে বাইনা বারোটা বেবি নেবে। এতো গুলোকে তো খাওয়াতে হবে। তাই আর কি?
মুচকি হেসে বলে অভি। তানহাও ফিক করে হেসে ফেলে।
“চলুন খেয়ে আসি খিদে পেয়েছে
” দুই মিনিট ফ্রেশ হয়ে আসি।

স্যালাইন ঢক ঢক করে গিলে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। তানহা বিছানার ওপর পা ঝুলিয়ে বসে মিটমিট করে হাসছে।
“অভির ওর জন্য এতো কিছু করছে আর ও অভিমান করে আছে।

তানহা মুচকি হেসে অভির অফিসের ব্যগটা জায়গা মতো রাখে। ট্রাই আলমারিতে রাখে।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আচড়াতে থাকে। তখন অভি টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হয়। তানহার দিকে চোখ পড়তেই মুচকি হাসে। তানহা এগিয়ে এসে অভির হাত থেকে টাওয়াল নিয়ে চুল মুছিয়ে দিতে নেয় কিন্তু অভির মাথার নাগাল পায় না। মুখটা কালো করে ফেলে। অভি তানহার কোমর ধরে তানহাকে উঁচু করে নেয়। মুখটা একদম অভির মুখের কাছে চলে আসে।তানহা ভরকে যায়।
” এবার মুছিয়ে দাও জুনিয়র নেইমারের মামনি।
ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে বলে অভি।
তানহা মাথাটা আর একটু উঁচু করে অভির চুল গুলো সুন্দর করে মুছিয়ে দিতে থাকে।
“আই লাভ ইউ
অভি হুট করে বলে ফেলে। তানহা থেমে যায়। অভির চোখের দিকে তাকায়।
” আআমি নামবো
তানহা মোচরামুচরি করে বলে।
“স্টাচু
তানহা থেমে যায়। অভি তানহার কপালে চুমু দিয়ে নামিয়ে দেয়। তানহা এক দৌড়ে দরজার কাছে চলে যায়। একটু থেমে অভির দিকে তাকায়।
” আই লাভ ইউ ডু ইউ লাভ মি এসবের দিন শেষ। ভালোবাসি বলতে শেখো প্রিয়
বলেই তানহা চলে যায়।
অভি চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে হেসে ফেলে
“ওরে বাটপার

খাবার টেবিলে অনিক বাবা বসে আছে প্লেট নিয়ে। খালামনি আর তানহা খাবার বারছে। একটু পরেই অভি চলে আসে। সবাই মিলে খেতে বসে। অভির সামনাসামনি বসেছে তানহা। অভি মুখে ভাত দিয়ে তানহার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে। তানহার ভীষণ অসস্তি হচ্ছে। বাবা মায়ের সামনে কি একটা লজ্জা জনক বেপার।
অভি এবার পা এগিয়ে তানহার পায়ে খোচা মারে। অভির বাবা কাশি দিয়ে ওঠে।
” এই তুমি পা দিয়ে আমার পা খোঁচাচ্ছো কেনো? অভির মাকে উদ্দেশ্য করে বলে।
অভির মা হা হয়ে গেছে। অভি দাঁত দিয়ে জীভ কাটে।
“আমি?
” নয়ত তো কি অভি?
অভি বেষম খায়। তানহা আর অনিক মিটমিট করে হাসছে।
“আমি তোমার পায়ে খোঁচা মারি নি।
” মিথ্যুক, তুমি আমার পায়ে খোঁচা মেরেছো।
“বললাম তো না। ইহহহহ এমন ভাব করছে যেনো শাহরুখ খান। ওনার পায়ে কি না আমি খোঁচা দেবো। ভেংচি কেটে বলে অভির মা।
অভির বাবা কিছু বলতে যাবে তার আগেই অনিক বলে
” আরে বাবা হয়েছে। বাবা তুমি মনে করো যে বিড়ালে খোঁচা মেরেছে।
তানহা এবার ফিক করে হেসে ফেলে। অভির বাবাও হাসে।
“আমি বিড়াল? চোখ বড়বড় করে বলে অভির মা।
শুরু হয়ে গেলো তিন জনেট ঝগড়া। অভি হাত ধুয়ে তানহার হাত ধরে চুপিচুপি রুমে চলে আসে। তানহার মুখ চেপে ধরে নিয়ে আসে।
রুমে এসে মুখটা ছেড়ে দেয়। তানহা জোরে জোরে শ্বাস নেয়।
” এভাবে আনলেন কেনো? কতো সুন্দর ঝগড়া দেখছিলাম।
তানহা বিরক্তি নিয়ে বলে।
অভি তানহার কোমর জড়িয়ে ধরে বলে
“ওরা ঝগড়া করুক। আমরা জুনিয়র নেইমার আনার ব্যবস্থা করি। ইন ফিউচার আমরাও এমন ঝগড়া করবো। আর ২০৫০ সাল তো এসে পড়লো। এখনই যা করার করতে হবে। এতোগুলো ছেলে বড় করা ফুটবল খেলা শেখাতে হবে। তো

তানহা হা করে অভির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
” তো?
“তো কাছে এসো কাছে এসো কাছে এসো না
” এটা আমার ডাইলোক
তানহা বলে।
“ডাইলোক তোমার কিন্তু এপ্লাই করবো আমি
” ধ্যাত
অভির বুকে মুখ লুকিয়ে বলে তানহা।
“আমার মিষ্টি বউ
” আমার করলা জামাই

চলবে