#ভালোবাসি
#পর্বঃ১৬
#Tanisha Sultana (Writer)
খুব সকালে তুলির ঘুম ভাঙে। ফোনটা হাতে নিয়ে কয়টা বাজে দেখার জন্য। ৫ঃ৩৯ বাজে। ৩১ তারিখ।
“ওহহ কাল তো Happy new year সায়ানকে তো একটা সারপ্রাইজ দিতে হয়। কিন্তু ও তো আমাকে আজকে সারপ্রাইজ দেবে। আমি কখন দেবো। আমি না হয় ঠিক রাত বারোটায় দেবো।
পাশে তাকিয়ে দেখে সায়ান নেই
” এতো সকালে কোথায় গেলো
তুলি সায়ানকে ফোন দেয়
“হেলো
” বল
“এতো সকালে কোথায় গেছেন
ওয়াশরুমে
তুলি দাঁত দিয়ে জিভ করে ফোনটা কেটে দেয়। সায়ান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে বলে
” ইদানীং একটু বেশিই মিছ করছিস মনে হয়
“না মানে ফোন নিয়ে গেছেন তো তাই ভাবলাম কোথাও গেছেন হয়তো
” আমি যদি কোথাও যায়ও তাহলে তোর কি
“কিছুই না।
” তাহলে কল দিলি কেন
“সরি আমার ভুল হয়ে গেছে। মাফ করে দেন
হাত জোর করে বলে তুলি
” সব সময়,এরকমই কেয়ার করবি। একটা মাএ বর তোর। আর শোন আমি এখন বেরোবো আর রাতে ফিরবো
“খেয়ে জাবেন না
” নাহহ। বাইরে খেয়ে নেবো
সায়ান জামা পারতে পারতে বলে। তুলি উঠে সায়ানের বুতাম লাগিয়ে দেয়
“বা বা এতো ভালোবাসা
” ভালোবাসা কই দেখলেন। এটা তো জাস্ট হেল্প করলাম
“ঠিক আছে। সন্ধায় রেডি থাকিস
সায়ান তুলিকে টাটা দিয়ে চলে যায়। তুলিও বেরিয়ে পরে একটু হাটতে। মায়ার রুমের সামনে এসে থমকে যায় তুলি। কারণ রুম থেকে একটা ছেলের কন্ঠ ভেসে আসছে। কিন্তু দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করা। কি কথা বলছে তুলি স্পষ্ট বুঝতে পারছে না। কিছু শুনতে না পেয়ে তুলি হতাশ হয়ে রুমে ফিরে আসে।
নিউ ইয়ারে সায়ানকে একটু চমকে দিতে চায় তুলি
” ওনাকে প্রপোজ করলে কেমন হয়? দারুণ আইডিয়া। রুমটা ভালো করে সাজিয়ে ওনাকে প্রপোজ করবো।
তুলি গায়ে ওড়না ঝুলিয়ে বেরিয়ে পরে। সারা বাজার ঘুরে ঘুরে অনেক ফুল কিনে বাসায় আসে।
ফুল দিয়ে রুমটা সুন্দর করে সাজায়। সায়ানের জন্য একটা ঘড়ি কিনে আর একটা শার্ট। তুলি সায়ানকে এই প্রথম কিছু দেবে। শার্ট আর ঘড়িটা বিছানার এক পাশে রাখে।
রুম সাজাতে সাজাতে বিকেল চারটা বেজে যায়। তুলি তারাতাড়ি গোছল করে চুল শুকায়। তারপর সায়ানের দেওয়া প্যাকেটটা খুলে দেখে নীল একটা শাড়ি। সাথে ম্যাচিং করা জুয়েলারিও আছে। তুলি চক করে শাড়িটা পরে ফেলে।
নীল শাড়ি। সাথে দুইহাত ভর্তি নীল চুরি। কানে নীল কানের দুল। চোখে মোটা করে কাজল আর ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তুলি নিজের ওপর নিজেই ক্রাশ খাচ্ছে।
তুলির ফোন বেজে ওঠে।
“হেলো
” কয়টা বাজে
তুলি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১০ঃ৪৫ বাজে
“সরি। আসলে সাজুগুজু করতে করতে আর টাইম দেখা হয় নি
” ঠিক আছে ছাঁদে আয়
“আপনি কোথায়
” যা বলছি কর
সায়ান ফোন কেটে দেয়। তুলি জুতো পরে ছাঁদে দিকে দৌড় দেয়। ছাঁদের দরজা বন্ধ। তুলি দুই তিন বার নক করে কোনো রেসপন্স নেই। তুলির মাথাটা গরম হয়ে যায়। দরজায় লাথি মারে
“ওই সায়ানের বাচ্চা। দরজা বন্ধ করে নিশ্চিয় তোর গার্লফ্রেন্ডের সাথে রোমান্স করছিস তাই না। একবার দরজা খোল দেখ তোর কি অবস্থা করি।
সায়ান দরজা খুলে দেয়।
” আয়
তুলি সায়ানকে পাত্তা না দিয়ে নিজে নিজেই ঢুকে পরে। অন্ধকার ছাঁদ। কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না
“আপনি কি আমাকে এই অন্ধকার দেখানোর জন্য এখানে এনেছেন? দেখুন আমি অনেক অন্ধকার দেখেছি এখন আর দেখতে চায় না
” অন্ধকারই তো ভালো তুইও আমাকে দেখতে পাচ্ছিস না আমিও তোকে দেখতে পাচ্ছি না। শুরু অনুভব করতে পারছি
“আমি আপনাকে অনুভব করতে পারছি না
” কিন্তু আমি পারছি। এখন তুই আমার থেকে ঠিক তিন হাত দুরে আছিস
“ধপ মারা বন্ধ করুন
” বিশ্বাস হচ্ছে না
“প্রশ্নই ওঠে না
” ওকে ওয়েট
৩.২.১ লাইট জ্বলে ওঠে। তুলি দেখে সায়ান ঠিক তুলির থেকে দুই হাত দুরে আছে।
“আমাকে পরে দেখিস আগে চারপাশ টা দেখ
তুলি চারপাশে তাকায়। চারপাশে বেলুনে হ্যাপি নিউ ইয়ার হ্যাপি বার্থডে আর আই লাভ ইউ লেখা। পুরো ছাঁদটা সুন্দর করে সাজানো। তুলিতো দেখে হা। সায়ান তুলির সামনে হাটু মুরে বসে বলে
” আমি তোর থেকে অনেক বড়। তোর সাথে আমাকে মানায় না। কিন্তু তবুও আমি তোকে #ভালোবাসি। বড্ড বেশি ভালোবাসি। তোকে ছাড়া আমার এক মুহূর্ত কাটে না। আমি আমার জীবনের বাকি পথটুকু তোর সাথে হাঁটতে চায়। আই প্রমিজ আমি কখনো তোকে রাগাবো না। কষ্ট দেবো না। বকবো না। শুধু ভালোবাসবো। লোকে তোকে বলবে তোর বরটা বুরো। তুই লোকের কথা উপেক্ষা করে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখবি তো
সায়ান তুলির সামনে হাত বাড়িয়ে দেয়। তুলি সায়ানের হাতটা ধরে সায়ানকে দাঁড় করিয়ে বলে
“লোকে কি বললো না বললো তাতে আমার কিচ্ছু আসে যায় না। আপনি আমার স্বামী। যে যাই বলুক আমি আপনার সাথে থাকবো। তবে হ্যাঁ যদি বকেন তো চলে যাবো
সায়ান তুলিকে জড়িয়ে ধরে
” তুমি করে না বললে এখুনি বকবো
“তুমি
” তুমি
“ভালোবাসি
” আমিও
তুলি এবার সায়ানকে ছাড়িয়ে বলে
“খালি মুখে ভালোবাসি শুনতে আমার বোরিং লাগে। গিফট বের করুন
” গিফট
“হ্যাঁ। তিনটা গিফট লাগবে
” তিনটা কিসের
“হ্যাপি বার্থডে, লাভ ইউ, আর নিউ ইয়ারের
” কিন্তু গিফট তো
“নেই তাই তো। ঠিক আছে একটারও রিপ্লাই দেবো না
” না দিলে নাই
“আপনি শুধু বুরো না সাথে কিপটাও
” আমি কিপটা
“তা নয়ত কি। একটা মাএ বউ তার জন্য গিফট আনেন নাই
” হুম একটা মাএ বউ। ভাবতেছি আরও একটা বিয়ে করবো
“তোরে আমি খুন করমু
তুলি সায়ানকে মারতে থাকে
” কোথাও পোরা পোরা গন্ধ পাচ্ছি
“হ আমার বুকের ভেতর দাও দাও করে আগুন জ্বলছে
সায়ান দোলনায় বসে বলে
” শুনেই আগুন জ্বলছে যদি বিয়ে করে নিয়ে আসি তাহলে তো পুরে ভর্স হয়ে যাবি
তুলি কোনো কথা বলে না।
ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে ফেলে। সায়ান তুলির কান্নায় ভরকে যায়। তুলির কাছে এসে বলে
“আই এম সরি। আমি তো মজা করছিলাম
” আপনি একটা লুচু। আমি তো চিনি আপনাকে
তুলি কান্নার বেগ বাড়িয়ে দেয়।
“প্লিজ কান্না অফ কর। সবাই জেগে যাবে আর আমাকে গনোধলাই দেবে
” থামবো
সায়ান তিনটা গিফট বক্স তুলির সামনে দেয়। মুহুর্তেই তুলির কান্না উধাও গিফট গুলো খুলে দেখতে ব্যস্ত
“এই তো কাঁদছিলি। এখনি কান্না শেষ
” তো আমি কি সারা রাত কাঁদবো না কি
“তাও ঠিক।
তুলি গিফট গুলো রেখে সায়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে
” লাভ ইউ সো মাচ
“গিফট গুলোকে এতো ভালোবাসিস
” হুরর
তুলি টেবিলে রাখা জুস খেতে থাকে। সায়ান তুলির পাশে বসে আছে।
সায়ান তুলিকে প্রতিনিয়ত ফলো করছে দুজন মানুষ। একটু সুযোগ পেলেই তারা তাদের কাজ শুরু করে দেবে। কিন্তু সেই চান্সটা পাচ্ছে না।
চলবে