#ভালোবাসি_হয়নি_বলা
#পর্ব_৯
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
সকাল সকাল এতো বড় সারপ্রাইজ পাবে হয়তো কেউ ভাবতে পারেনি।
নূর থম মেরে বসে আছে। ওর পাশেই শাড়ি হাতে দাঁড়িয়ে আছে কুলসুম আক্তার।
নূর একবার মামির দিকে তাকিয়ে আবার হাতের শাড়ীর দিকে তাকালো।
কুলসুম আক্তার মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে নূরকে বললো রেডি হয়ে নিতে।
নূর ভদ্র মেয়ের মতো মাথা নেড়ে শাড়ী হাতে নিলো।
কুলসুম আক্তার খুশিতে গদোগদো হয়ে নিচে নেমে গেলেন।
ইভা এসে নূরের হাত থেকে শাড়ি নিয়ে দূরে সরিয়ে বলে উঠলো, ‘ এই মেঝো আম্মুর মাথায় কি ঘুরছে কে জানে… ভাই ও ঘরে নাই।’
নূরঃ শাড়িটা এদিকে দে ইভা।
ইভাঃ বিয়ে করার এতো সখ কেনো তোর!
নূর তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,’ আর কতো তোদের উপর বুজা হয়ে থাকবো..?
ইভাঃ নূর তুই এই বাড়ির আরেক মেয়ে।
নূরঃ হুম বুঝলাম। এই বাড়ির মেয়েদের কি বিয়ে হয় না..?
ইভাঃ হয় কিন্তু.. যা তোর যা ইচ্ছে তাই কর।
নূর খুব সুন্দর করে শাড়ি পড়ে সেজে নিলো।
সালমা বেগম, আয়েশা বেগম কিছুই বলছেন না তারা সবাই আনোয়ার চৌধুরীর উপর সিদ্ধান্ত ছেড়ে দিয়েছেন।
নূর সেজে গুজে পেছন ফিরতেই দেখে ইভা চিন্তিত হয়ে নূরের পাশে বসলো।
নূরঃ কি হয়েছে..?
ইভা নূরের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তোকে দেখতে কে এসেছে জানিস..?
নূরঃ না ঠিক জানিনা তবে মেঝো মামি বললে উনার দূরসম্পর্কের কোনো এক বোনের ছেলে।
ইভাঃ একদম মিথ্যাবাদী আমাদের মেঝো মামি। তোকে দেখতে ফায়াজ স্যার এসেছে সাথে উনার আম্মু।
নূরঃ কিইইই!!
ইভাঃ জ্বি।
নীলা দৌড়ে নূরের রুমে এসে বললো,’ আপু জিজু তো হেব্বি সুন্দর, হ্যান্ডসাম। আমি তো প্রথম দেখায় ফিদা।
নূর রেগে বলে উঠলো, ‘ তাহলে নিজেই বিয়ে করে নাও।’
নীলাঃ ছিঃ না আপু আমার বিয়ে ঠিক করা আছে।
নূরের মন মেজাজ এমনি তেই খারাপ হয়ে আছে তাই কথা না বাড়িয়ে পা বাড়ালো নিচে যাওয়ার জন্য।
ইভা নূরের হাত আঁকড়ে ধরে বলে উঠলো, ‘ এখন কিছু করার ধরকার নেই নূর যা হচ্ছে হতে দে। তুই পড়ে না হয় স্যারের সাথে একা কথা বলে নিবি। এখন কিছু বলতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
নূর ইভার কথা শুনে বসে পরলো।
ফায়াজ আর ওর আম্মুর সামনে বসে আছে নূর। নূরের পেছনে কুলসুম আক্তার দাঁড়িয়ে আছেন।
আনোয়ার চৌধুরী ফায়াজের দিকে তাকিয়ে আছেন। উনার যতো টুকু জানার উনি জেনে নিয়েছেন।
ফায়াজের আম্মু নূরকে দেখে খুব খুশি হলেন। উনার নূরকে পছন্দ হয়েছে।
ব্যাগ থেকে আংটি বের করে আনোয়ার চৌধুরী কে বললো,’ মাশাল্লাহ আমার বউ মা পছন্দ হয়েছে আমি আংটিটা পড়িয়ে দিতে চাই।
নূরের বুক কেঁপে উঠলো। সে যেনে শুনে কোনো মেয়ের সংসার ভাঙতে চায় না৷
এ কেমন মা! ছেলের ঘরে বউ থাকার শর্তেও আরেক বিয়ে করাতে নিয়ে আসে। উনি নিজেও তো একটা মেয়ে। একটা মেয়ে হয়ে অন্য একটা মেয়ের সংসার কিভাবে ভাঙতে পারে..!
আনোয়ার চৌধুরীঃ আপনাদের পছন্দ হয়েছে ভালো কথা। আমার নাতনি এমন যে কেউ পছন্দ করবে। কিন্তু আমাদের ওতো দেখার জানার আছে। আমার তিন ছেলে নাতি বাড়ি আসুক তারপর আমি আপনাদের সাথে যোগাযোগ করবো।
ফায়াজের আম্মুর মুখটা ভয়ে চুপসে গেলো।
ভেবে ছিলো নয় ছয় বলে বুঝিয়ে বিয়ে টা যেভাবে হোক করাতে পারলেই হবে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে অতো টাও সহজ হবে না।
আনোয়ার চৌধুরী নূরের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তুমি রুমে যাও…
নূরঃ নানাভাই আমার কিছু কথা ছিলো।
আনোয়ার চৌধুরীঃ হুম বলো।
নূরঃ উনার সাথে..
আনোয়ার চৌধুরী ফায়াজের দিকে তাকিয়ে বললো,’ ঠিক আছে যাও।
ফায়াজ বসে আছে নূরের রুমে।
নূর বুকে দুই হাত বাজ করে দাঁড়িয়ে আছে।
নিরবতা ভেঙে ফায়াজ বললো,’ কিছু বলবে..?
নূরঃ হুম বলার তো অনেক কথায় ছিলো কিন্তু এখন বেশি কিছু বলতে চাই না। এখানে এভাবে আসার কারন টা জানতে চাই…?
ফায়াজঃ আমি তোমাকে বিয়ে করে নিয়ে যেতে চাই। আমি আশা করি তুমি না করবে না।
নূরঃ আর আপনার বউ! আপনার বউ এর কি হবে..?
ফায়াজঃ ব….বউ!
নূর মুচকি হাসি দিয়ে ফায়াজের দিকে তাকিয়ে বললো,’ লুকানোর জিনিস নয় এটা স্যার। সব কিছু চাইলেই লুকানো যায় না। আপনি বিয়ে করেছেন ভালো কথা। বউ থেকে আবার আমাকে বিয়ে করার বিষয় টা বুঝলাম না।
ফায়াজ নিচের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি বিয়ে করতে বাধ্য হয়ে ছিলাম নূর। আমি ওকে এখনো ভালো করে দেখি ও নি। আমি তোমাকে সেই পাঁচ বছর আগে থেকে ভালোবাসি।কিন্তু কখনো ধরা দেইনি দূর থেকে তোমার পাগলামো গুলো দেখে গেছি আমি ভয় পেতাম যদি ধরা দেওয়ার পর তুমি আর এমন পাগলামো না কর। তাই ইচ্ছে করেই কখনো ধরা দেইনি সঠিক সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম।
নূর তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো, ‘ তা এখন বুঝি আপনার সময়টা হয়েছে স্যার..? but সরি স্যার এখনো আমার ভেতর মানুষত্ব্য বলে কিছু একটা আছে। এতটাও নিকৃষ্ট মেয়ে হতে পারিনি যে একটা মেয়ের সাজানো সংসার ভেঙে দিবো।
ফায়াজঃ যেখানে সংসার সাজানো হয়নি সেখানে ভেঙে দেওয়ার কথা আসছে কোথায় থেকে।
নূরঃ সাজানো শুরু করুন। একটা মেয়ে তার পরিবার ছেড়ে, মা, বাবা, ভাই, বোন সবাই কে ছেড়ে শুধু মাত্র আপনার জন্য, আপনার নামে কবুল বলে, নিজের প্রিয় জনদের ছেড়ে আপনার হাত ধরে সারাজীবন কাটানোর জন্য আপনার বাড়িতে এসেছে আর আপনি তাকে ধোঁকা দিচ্ছেন! ফিরে যান তার কাছে। মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন সুখ, শান্তি দুইটাই পাবেন।
ফায়াজ অবাক দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমার সুখ, শান্তি তোমার কাছে নূর..!
নূর ফায়াজ এর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।
নূরঃ আমি আপনাকে এখন আর ভালোবাসি না। আপনি ফিরে যান আপনার বউ এর কাছে।
ফায়াজের চোখে জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পরছে।
নূর দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে কান্না আঁটকে রাখছে।
ফায়াজ বসা থেকে দাঁড়িয়ে নূরের সামনে এসে বললো,’ আমি কি একবার তোমাকে জড়িয়ে ধরতে পারি নূর। শুধু একবার… আর কখনো এমন আবদার করবো না।
নূরের চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি পরলো ফায়াজের পায়ে।
প্রেমিক পুরুষ এর থেকে এমন আবদার ফিরিয়ে দেওয়া যে কতোটা কষ্টের তা আজ হারে হারে টের পাচ্ছে নূর। কিন্তু যতই কষ্ট হোক মায়া বাড়ানো যাবে না।
নূর ফায়াজের থেকে দূরে সরে গেলো।
ফায়াজঃ বুঝতে পেরেছি মুখে বলতে হবে না। আমি ব্যর্থ প্রেমিক নূর। যে তার প্রেমিকার এতোটা কাছে থেকেও কখনো বলতে পারেনি ভালোবাসি৷ কখনো ভালোবেসে আগলে নিতে পারেনি।
নূরঃ আপনি যদি আমাকে ভালোবেসে থাকেন সেই ভালোবাসার কসম দিয়ে বলছি নিজের বউ এর কাছে যান। সব ঠিক করে সংসার শুরু করুন। একজন দায়িত্ব বান স্বামী, ভালো বাবা, হয়ে দেখান। আমি তাতেই অনেক ভালো থাকবো। ভালোবাসা মানে পেতে হবে এমন কোনো কথা নেই সে ভালো আছে তাতেই আনন্দ, সুখ খুঁজে পাওয়া যায়। প্রথম ভালোবাসার থেকে শেষ ভালোবাসার অনেক দামী।আপনি আপনার শেষ ভালোবাসা বানিয়ে নেন আপনার বউ কে। দ্বিতীয় বার আপনাকে এখানে না দেখলে খুশি হবো।
ফায়াজ কিছু না বলে চুপচাপ নূরের রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
নূর সাথে সাথে দরজা বন্ধ করে নিচে বসে পরে।
ফায়াজ নিচে গিয়ে ওর আম্মুকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।
যাওয়ার আগে আনোয়ার চৌধুরী কে বলে,’ নূরের জন্য একজন যোগ্য, ভালো ছেলে দেখে নিন। আর ওর জীবনে যেনো কষ্টের ছোঁয়া না লাগে। ওকে বুঝবে, আগলে রাখবে এমন কারো সাথে ওর বিয়ে দিবেন।’
আনোয়ার চৌধুরী কিছুটা অবাক হয় সাথে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে ফায়াজের দিকে তাকিয়ে আছে।
চোখ গুলো অসম্ভব লাল হয়ে আছে, গলা টাও ভার কি হয়েছে রুমে!!
ফায়াজ যাওয়ার পর আর নূরকে কেউ দেখেনি।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে নূর দরজা বন্ধ করে রুমে বসে আছে।
রুদ্র বাড়িতে এসে শুনে নূর সারাদিন কিছু খায়নি দরজা ও খোলেনি।
আনোয়ার চৌধুরী সবটা রুদ্র কে বললো। রুদ্র কাউকে কিছু না বলে নিজের রুম থেকে নকল চাবি দিয়ে নূরের রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো।
নূর এলো-মেলো হয়ে ঘুমিয়ে আছে।
রুদ্র ওর পাশে গিয়ে ওর মুখে পানি ঢেলে দিলো।
চোখে পানি পড়ার সাথে সাথে নূর লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলো।
চোখের সামনে রুদ্র কে দেখে ভয়ে দরজার দিকে তাকালো। দরজা খুলা কিন্তু কিভাবে…!?
রুদ্র নূরের মুখের রিয়াকশন দেখে বুঝলো নূর কি ভাবছে।
রুদ্রঃ বেশি কিছু না ভেবে ফ্রেশ হয়ে আসো।
নূরঃ দরজা…
রুদ্র কিছুটা রেগে বলে উঠলো, ‘ বললাম তো বেশি কিছু বলবে না..!
নূর ভয় পেলো রুদ্রের দমকে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে রুদ্র রেগে আছে কিন্তু কেনো…??
চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।