ভালোবাসি হয়নি বলা পর্ব-১৪ এবং শেষ পর্ব

0
722

#ভালোবাসি_হয়নি_বলা
#পর্ব_১৪(শেষ পর্ব)

লেখিকা #Sabihatul_Sabha

দেখতে দেখতে কেটে গেলো এক বছর।

এখন আর নূর বিরক্ত হয়না রুদ্রকে দেখলে। রুদ্রের সাথে থাকতে ভালো লাগে। রুদ্র পাশে থাকলে নূর অন্য জগতে চলে যায়।

আজ নূর শহরে যাবে নিজের আগের বাসায়। সব পুরনো স্মৃতি, ভালো লাগা, ভালোবাসা সব যেই ঘরে বন্ধি আজ সেই ঘরে সে ফিরে যাবে ।

কয়েকদিন মায়ের ঘ্রান নেওয়ার চেষ্টা মাত্র।

নূর দাঁড়িয়ে আছে ওর আম্মুর কবরের পাশে।
মায়ের মৃত্যুর পর সবার সামনে ঠিক থাকলেও সে লুকিয়ে লুকিয়ে এখানে এসে বসে সব সময় কাঁদেছে।

নূরের চোখ ছলছল করছে জলে। মায়ের কথা মনে পড়তেই মনটা বিষিয়ে যায়।

নূরের পাশে এসে দাঁড়ালো ইভা।

ইভাঃ নূর আম্মু বলছিলো…
নূরঃ প্লিজ ইভা তুই অন্তত বুঝা আম্মু কে।
ইভাঃ আম্মুর টেনশন হচ্ছে।
নূরঃ আগে তো ছিলাম আর বেশি তো না মাস থাকবো শুধু।

পেছন থেকে রুদ্র বলে উঠলো,’ এখানে তোমার কি সমস্যা হচ্ছে..?
নূর থমথমে মুখে বললো,’ কোনো সমস্যা হচ্ছে না আমি শুধু কয়েকদিন আমার মায়ের স্মৃতির কাছে থাকতে চাই।
রুদ্রঃ তাহলে সাথে ইভা কে নিয়ে যাও।
ইভা খুশিতে নূরকে জড়িয়ে ধরে বললো,’ এবার ঠিক আছে ‘
নূর ভ্রু কুঁচকে ইভার দিকে তাকালো এই মেয়ে এতো খুশি কেনো হচ্ছে..?’

বাসায় এসে ইভা ওর আম্মুকে রাজি করিয়ে নিলো। আয়েশা বেগম মেয়ের কথায় রাজি হলেন নূরকে শহরে থাকতে দিতে।

সালমা বেগম নূরের পছন্দের সব কিছু গুছিয়ে দিলেন।

কুলসুম আক্তার দূর থেকে দাঁড়িয়ে সব দেখছেন।

আনোয়ার চৌধুরীর শরীর অতোটা ভালো না। নূর নানাভাই এর রুমে গেলো।

ইভা ফোন করে অভিক কে জানিয়ে দিলো সে নূরের সাথে শহরে আসছে।

নূর আর ইভা সবাই কে বলে গাড়িতে উঠলো। রুদ্র ওদের দিয়ে আবার বাড়িতে চলে আসলো।

নূর এতো দিন পর বাড়িতে এসে দেখে সব কিছু কেমন হয়ে গেছে। মাকড়শার জাল, ঘরের জিনিস পত্রে ধুলোবালি ভরে আছে। দুইজন মিলে সব কিছু পরিস্কার করলো।

ব্যাগ থেকে খাবার বের করে গরম করে নিলো। আয়েশা বেগম ওদের রান্না করে বক্সে বক্সে খাবার দিয়ে দিয়েছেন।

সারাদিন সব কিছু গুছিয়ে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পরলো ইভা। নূর ফ্রেশ হয়ে ওর আম্মুর রুমে গিয়ে মায়ের বিছানায় নাক ডুবিয়ে শুয়ে পরলো। কতো দিন পর নিজের বাড়িতে শুয়েছে।

পরের দিন বাসায় অভিক এসে হাজির।

নূর প্রথমে অবাক হলেও নিজেকে সামলে বলে উঠলো, ‘ অভিক ভাইয়া কেমন আছেন..?’
ইভা রেগে তাকিয়ে আছে অভিক এর দিকে।
অভিক জোর পূর্বক হেসে বললো, ‘ আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো নূর..?
নূরঃ জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। বসেন ভাইয়া আমি আপনার জন্য চা নিয়ে আসি৷

অভিক নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মাথা নাড়লো।

নূর একবার আড়চোখে ইভার দিকে তাকালো সাথে সাথে ইভা মাছি তারানোর মতো হাত উপরে তুলে এদিক ওদিকে তাকালো।
নূর রান্নাঘরে প্রবেশ করতেই ইভা কোমরে হাত দিয়ে অভিক এর সামনে দাঁড়ালো।
অভিক ভ্রু কুঁচকে ইভার দিকে তাকাতে ইভা বলে উঠলো, ‘ আপনি এখন এখানে কেনো..?’
অভিকঃ নূরকে দেখতে আসলাম। অনেক দিন হলো দেখি না।
ইভাঃ একদম মিথ্যা কথা বলবেন না।
অভিকঃ তাহলে সত্যি টা কি..?
ইভাঃ সত্যি টা এই যে আপনি আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন।
অভিকঃ গুড গার্ল। এখন বলো বিকেলে আসবে কি না..?
ইভাঃ এখন তো দেখা হয়ে গেছে আর বিকেলে কেনো..?
অভিকঃ সেটা বলেছি সেটার উত্তর দাও..?
ইভাঃ নূরকে কি বলবো..?
অভিকঃ এটা তোমার ইচ্ছে যা ইচ্ছে বলো।
ইভাঃ নূর আমাকে একা ছাড়বে না।
অভিকঃ নূরকে বলবে তোমার মনের অসুখ হয়েছে তা সারাতে যাচ্ছো।
ইভাঃ আমার কোনো অসুখ হয়নি।
অভিকঃ আমি কিন্তু ডাক্তার চোখ দেখলে মন পড়তে পারি।
ইভা সাথে সাথে লজ্জায় অন্য দিকে ফিরে গেলো।
অভিকঃ তুমিকি জানো লজ্জা পেলে তোমাকে একদম বাজে লাগে।
ইভা এবার একটু মন খারাপ করে অভিক এর দিকে তাকালো।
অভিক তা দেখে মুচকি হেঁসে রান্নাঘরের দিকে তাকালো।

নূর আসছে চা নিয়ে।

নূর এতোক্ষন ওদের সব কথায় শুনেছে। কথা বলার সময় হয়তো ওদের এটা খেয়াল নেই যে ফিসফিস করে বলা প্রয়োজন।

নূর অভিক কে চা দিয়ে ইভার দিকে তাকালো।

ইভা মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে।

নূর টুকটাক অনেক কথা বললো অভিক এর সাথে নাস্তা করে যেতে বললো কিন্তু অভিক কাজের বাহানা দিয়ে চলে গেলো।

অভিক চলে যেতেই নূর কড়া চোখে ইভার দিকে তাকিয়ে বললো,’ কয়দিন ধরে চলছে এইসব। ‘
ইভাঃ ক….কি..?
নূরঃ ভুলা বালা মেয়ে সাজতে হবে না। কয়দিন ধরে এইসব চলছে..?
ইভাঃ তুই যেমনটা ভাবছিস তেমন কিছু না।
নূরঃ তাহলে কেমন কিছু শুনি..?
ইভাঃ অভিক আমার ফ্রেন্ড।
নূরঃ বাহ্, তারপর।
ইভাঃ তারপর কি..?
নূরঃ আমাকে একবার বলা যেতো না। আমি কি এতোটাই পর ছিলাম।
ইভাঃ ভয়ে বলিনি। আর হুট করে হয়ে গেলো।
নূরঃ কতো দিন হলো..?
ইভা আমতাআমতা করে বললো,’ এক বছর’
নূরঃ বাহ্ একবছর হুট করে হয়ে গেলো।
ইভাঃ সরি নূর।
নূরঃ সরি কেনো..?
ইভাঃ এমনি।
নূরঃ ওহ্হ।

বিকেলে ইভাকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য নূর ইভাকে বলে বেরিয়ে গেলো কাজ আছে বলে।

নূর বেরিয়ে যেতেই ইভা সুন্দর করে রেডি হয়ে নিজেও বেরিয়ে পরলো।

অনেক দিন পর নিজের শহরে এসে ফ্রেন্ডদের ডাকলো নূর। সব ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করে আড্ডায় মেতে উঠলো।

ইভা অভিক এর বলা ঠিকানায় চলে গেলো।

খুব সুন্দর একটা জায়গা। বড় একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ। গাছে ফুল ফুটে আছে। ইভা একবার চারপাশে তাকালো অভিকের হাতে কতোগুলো লাল কৃষ্ণচূড়া ফুল, সে এগিয়ে আসলো ইভার কাছে৷ ইভা তাকিয়ে আছে অভিক এর দিকে আসলে কি করতে চাচ্ছে অভিক..!?

নূর আড্ডা শেষ করে ভার্সিটির থেকে বের হতেই মুখোমুখি হলো ফারাজের।

ফারাজ নূরকে দেখে বেশ অবাক হলো।
নূর ফারাজকে দেখেও না দেখার মতো হাঁটা ধরলো।
ফারাজ ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মলিন একটা হাসি দিয়ে তাকিয়ে রইলো।

নূর আজ পেছন ফিরেনি সে একদম হেঁটে একটা রিক্সায় উঠে গেলো। দেখতে দেখতে রিক্সা চোখের আড়াল হয়ে গেলো।
ফারাজ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেলো। এমনটা তো হওয়ারি ছিলো।

নূর ফারাজের বিষয় সব জেনে গেছে। ফারাজের বউ খুব ভালো আর সুন্দরী মেয়ে। ফারাজকে খুব ভালোবাসে। ফারাজও আসতে আসতে তার বউকে পছন্দ করতে শুরু করেছে। হয়তো আরও সময় লাগবে কিন্তু সে চেষ্টা করছে নূরের শেষ কথাটা রাখার। একদিন হয়তো নূরকে ভুলেও যাবে নূরের জায়গায় তার বউকে বসাবে।

নূর বাড়িতে এসে দেখে ইভা থম মেরে বসে আছে।

নূর আড় চোখে একবার ইভার দিকে তাকিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

নূর আসতেই ইভার ওর সামনে গিয়ে বসলো।
নূরঃ কি হয়েছে..?
ইভাঃ আজ আমি অভিক এর সাথে দেখা করতে গিয়ে ছিলাম।
নূরঃ ওহ..
ইভাঃ শুধু ওহ..
নূরঃ আর কি বলবো..?
ইভাঃ জিজ্ঞেস করবি না কেনো গিয়েছি..?
নূরঃ এতো কিছু হয়ে গেছে এখন এটা জিজ্ঞেস করলে কি হবে।
ইভাঃ এভাবে বলিস না নূর কিছুই হয়নি। আজ অভিক আমাকে প্রপোজ করেছে।
নূরঃ ভালোতো….
ইভাঃ নূর সিরিয়াস কথা বলছি আমি। বিয়ের জন্য প্রপোজ করেছে।
নূরঃ ওহ আচ্ছা তুই কি বললি।
ইভাঃ আমি কিছু না বলে ফুলটা হাতে নিয়ে চলে এসেছি।
নূরঃ ফুল নিতে পেরেছিস মুখে কি ক্লুপ এটে রেখেছিলি নাকি।
ইভাঃ কি বলবো বুজে পাচ্ছি লাম না।
নূরঃ অভিক ভালো ছেলে। সেই ছোটো থেকে চিনি আমি। বাকিটা তোর ইচ্ছে।
ইভাঃ সবাই কি মেনে নিবে..?
নূরঃ কেনো নিবে না। কোন দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে অভিক ভাই।
নূরের কথা শুনে খুশিতে নূরকে জড়িয়ে ধরলো ইভা। ফোন নিয়ে কল দিলো অভিক কে। হয়তো এখান থেকেই শুরু হবে নতুন একটি সম্পর্ক।

নূর রান্না শেষ করে গোসল করে নিলো। ওয়াশরুম থেকে বের হতেই বিছানায় রুদ্র কে দেখে বেশ অবাক হলো।
নূরঃ রুদ্র আপনি..?
রুদ্র বিরক্ত হয়ে বললো,’ তোমার এই আপনি ডাকটা শুনলে না আমার ভালো মুড খারাপ হয়ে যায়।
নূর বুকে হাত গুঁজে বলে উঠলো, ‘ তুমি এখানে কেনো..?’
রুদ্রঃ তোমাকে মিস করতে ছিলাম তাই আম্মু বললো চলে আসতে।
নূরঃ আম্মু!!
রুদ্রঃ সে সব ছাড়ো খুব খিদে পেয়েছে।
নূরঃ ডাইনিং এ চলো।
ইভা রুদ্র কে দেখে মুচকি হেঁসে নূরের দিকে তাকালো। নূর রাগী দৃষ্টিতে ইভার দিকে তাকাতে ইভা মুখ ভেংচি কেটে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বললো,’ ভাই ভালো করেছো এসে। নূর সারাদিন তোমার কথা বলেছে তোমাকে অনেক মিস করেছে।
নূরঃ ইভা ভালো হচ্ছে না।
রুদ্রঃ নূর তুমি ওকে কেনো ধমকাচ্ছো। নিজে তো সত্যি কথা বলবে না অন্তত আমার বোন টা কে বলতে দাও।
নূরঃ সত্যি কথা! এটা আপনার কাছে সত্যি মনে হচ্ছে..?
রুদ্রঃ অবশ্যই। তোমার তাকানো দেখে আমি বুঝতে পারছি।
ইভা প্লেট হাতে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
নূর রাগী দৃষ্টিতে তাকালো ইভার যাওয়ার দিকে ওকে ফাঁসিয়ে দিয়ে নিজে কেমন কেটে পরলো!

রুদ্রঃ মিস করে ছিলে আমাকে..?
নূরঃ একদম না।
রুদ্র মুচকি হেসে বললো,’ তোমর এই না এর মাঝে আমি হ্যাঁ খুঁজে পাই। ‘
নূর কিছু বললো না।

জোছনা তাঁরা ভরা রাত পাশাপাশি বসে আছে নূর আর রুদ্র।

রুদ্র হঠাৎ নূরকে কাছে টেনে নিলো। নূরের মাথাটা নিজের বুকে চেপে বললো,’ শুনতে পাচ্ছো কিছু..? ‘
নূর থম মেরে আছে। কথা বলার ভাষা নেই। কেমন জমে গেছে সে।

রুদ্র আবার বললো,’ শুনতে পাচ্ছো আমার বুকের ধুকপুক। তোমার কাছে আসলেই বেড়ে যায়। প্রতিটা শব্দে বুঝিয়ে দেয় তোমাকে কতোটা চায়।

নূর মাথা তুললো না। রুদ্রের বুকে গুটিশুটি মেরে বসে রইলো।
রুদ্র নূরকে আবার বললো, ‘ নূর আমাকে কি একটু ভালোবাসা যায় না.. ‘
নূর কিছু না বলে রুদ্রের আরও কাছে গেলো। ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘ ডাক্তার সাহেব মানুষের রুগ ধরতে পারে কই আমার রুগ তো ধরতে পারলো না। ‘
রুদ্রঃ তোমার কি রুগ হয়েছে নূর..?
নূরঃ আপনাকে ডাক্তার কে বানিয়েছে..?
রুদ্র চুপ করে রইলো। কিছু হলেই নূর এই প্রশ্ন করে ডাক্তার কে বানিয়েছে..?
নূর আবার বললো, ‘ এখনো নিজের বউ এর রুগ ধরতে পারে না সে নাকি ডাক্তার ‘
রুদ্রঃ বউ এর তো প্রেম রুগ হয়েছে। আমি তো প্রেম রুগের ডাক্তার না তাই বউ নিজ থেকে না বলা অব্দি কিভাবে বুঝবো..?
নূর লজ্জায় মিইয়ে গেলো।
রুদ্র নূরকে লজ্জা পেতে দেখে বলে উঠলো, ‘ আকাশের ওই চাঁদ টা সুন্দর নাকি আমার সামনে বসে লজ্জায় মিইয়ে যাওয়া চাঁদ টা বেশি সুন্দর..? ‘

রুদ্র আবার বললো,’ আমি কি তোমাকে জড়িয়ে ধরবো একবার নূর। ‘
নূর কিছু না বলে নিজেই রুদ্রকে জড়িয়ে ধরলো।
নূরঃ সব সময় অনুমতি নিতে হয়না কিছু সময় অধিকার খাঁটিয়ে আপন করে নিতে হয়। ‘তুমি আমার’ এই কথাটার অধিকার অনেক।

রুদ্র আজ অনেক খুশি। এইদিন টার জন্য কতো অপেক্ষা করেছে।
রুদ্রঃ নূর তুমি কিন্তু এখনো বলোনো আমাকে ভালোবাসো।
নূরঃ মুখে বলা কি খুব বেশি প্রয়োজন..?
রুদ্রঃ নাহ মুখে বলতে হবে না কাজে বুঝিয়ে দাও।
নূরঃ কাজে…!?
রুদ্রঃ একটা কিস করো প্লিজ…
আহ্ কি মিষ্টি একটা আবদার ফিরিয়ে দিবে কিভাবে নূর। লজ্জায় চোখ বন্ধ করে মুখ গুঁজে দিলো রুদ্রের বুকে।

সমাপ্ত

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।