ভালোবেসে ফেলেছি পর্ব-০৭

0
2472

#ভালোবেসে_ফেলেছি
part : 7
writer : Mohona

.

মনি : ইশ … যদি তুমি আমার ভাবি হতে তাহলে খুব ভালো হতো… সবসময় তুমি আমার সাথে থাকতে…
মনির কথাটা শুনেই বহ্নি বিষম খেলো। কোকাকোলা নাকে মুখে উঠে গেলো। কাশি দিতে দিতে শেষ। কিছুক্ষন পর স্বাভাবিক হলো ।
মনি : আর ইউ ওকে নাউ ?
বহ্নি : হামমম।
মনি : থ্যাংকস গড।
বহ্নি : আপু মনি ১টা কথা বলি?
মনি : হামমম বলি।
বহ্নি : অমন অশুভ কথা আর কখনো বলোনা প্লিজ…
মনি : কোন কথা…
বহ্নি : তোমার ভাবি হবার…
মনি : কেন এটা অশুভ কেন ?
বহ্নি মনে মনে : ওই ভয়ংকর দহনের বউ হওয়ার থেকে অশুভ কিছুই নেই …
মনি : বলোনা আপু।
বহ্নি : কককারন তোমার ভাইয়া তো অন্য কাউকে ভালোবাসে তাইনা…
মনি : হামমম। এন্ড দ্যাটস মাই ব্যাড লাক।
বহ্নি : সে কি বলছো?
মনি : হামমম। ওই কাকন না কাকড়া আছেনা।। ও ১টা ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ান।
বহ্নি : কি বলছো কি?
মনি : হামমম। সবার ওপর কালো জাদু করেছে। ভাইয়া , বাপী মামনি … সবার ওপর কালো জাদু করেছে । আমাকে করতে পারেনি। ২চোকককখে দেখতে মনে চায়না।
এতোক্ষনে বহ্নি বুঝলো যে মনি কাকনকে অপছন্দ করে। তাই এগুল বলছে।
বহ্নি : মনি… বড়দের সম্পর্কে অমন করে বলতে নেই। আর ভেবে দেখেছো তোমার ভাইয়া কাকন আপুকে কতোটা ভালোবাসে?
মনি : সেটাই তো সমস্যা । তানা হলে তো কবেই ভাইয়াকে দিয়ে ওকে উরিয়ে দিতাম। অপেক্ষায় আছি ওদের আলাদা হওয়ার। আচ্ছা আপু ১টা আইডিয়া দাওনা যেটা দিয়ে আমি কাকন ভাইয়ার থেকে দূরে সরে যায়। অথবা ভাইয়া নিজেই দূরে সরে যায়…
বহ্নি : আপুমনি ১টা কথা বলি…
মনি : বলো…
বহ্নি : তুমিই তো বলো যে তোমার ভাইয়া তোমাকে অনেক ভালোবাসে। তুমি যেটা বলো সেটা করে। তোমার খুশির জন্য সবকিছু করতে পারে…
মনি : হামমম….
বহ্নি : তুমি জানো তোমার ভাইয়ার খুশি তুমি ছারা আর কার মধ্যে ?
মনি : কারমধ্যে?
বহ্নি : কাকন আপুর মধ্যে। তোমার ভাইয়া তাকে অস্বাভাবিকভাবে ভালোবাসে।
মনি : …
বহ্নি : যে ভাইয়া তোমার খুশির জন্য এতোকিছু করে… তুমি সেই ভাইয়ার খুশির জন্য কাকন আপুকে মেনে নিতে পারবেনা ?
মনি : …
বহ্নি : কি হলো…
মনি : বুঝতে পারছিনা..
বহ্নি মুচকি ১টা হাসি দিয়ে
বলল : বুঝে যাবে গো নয়নমনি…
মনি : আপু জানো ভাইয়াও না আমাকে নয়নমনি ডাকে…

.

৭দিনপর…
আজকে অর্নব কানাডা ফিরে যাচ্ছে। বহ্নি এয়ারপোর্টে ওকে বাই বলতে এসেছে।
বহ্নি : আর কটাদিন থেকে যেতি…
অর্নব : কিভাবে থাকবো? তোর মতো তো আমিও ফাইনাল ইয়ারে উঠে গিয়েছি… ক্লাস স্টার্ট হয়ে গিয়েছে…
বহ্নি : হামমম।
অর্নব : হায়রে ডিমের ভীতুরে…
বহ্নি : বাদর কোথাকার…
অর্নব : বহ্নি… তুই আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলি না যে আমি কাউকে ভালোবাসি কিনা?
বহ্নি : হামমম। দেখেছিস আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। তুই না বলেছিলি আমাকে বলবি…?
অর্নব : হামম বলবো…
বহ্নি : বল…
অর্নব : তারআগে অন্য ১টা কথা বলে নেই…
বহ্নি : বল…
অর্নব : সারা জীবন সব পরিস্থিতিতে তুই আমার বেস্টফ্রেন্ডই থাকবি… আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড থাকবে। কোনো অবস্থাতেই আমাদের বন্ধুত্ব যেন না ভাঙে…
বহ্নি : কেন ভাঙবে শুনি…
অর্নব : হামম। ভাঙতে দিবোও না।
বহ্নি : হামমম।
অর্নব : এখন বলছি কাকে ভালোবাসি…
বহ্নি : কাকে?
অর্নব : তোকে…. তোকে ভালোবাসি। ভীষন ভালোবাসি। ছোটথেকে ভালোবাসি…
বলেই অর্নব চলে গেলো। বহ্নি অর্নবের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো । বহ্নি কখনো ভাবতেই পারেনি যে অর্নবের কাছে এ ধরনের কিছু শুনবে। বহ্নি বাসায় চলে গেলো ।

.

এই ৭দিন ধরে মনি বহ্নির বলা কথাগুলো ভেবেছে । ভেবে দেখলো যে বহ্নি তো ঠিকই বলেছে । যে ভাইয়া ওকে হ্যাপী রাখার জন্য এতোকিছু করে সেই ভাইয়ার জন্য ও এতোটুকু করতে পারবেনা?

মনি : ভাইয়া আসি?
দহন : আরে আসো আসো আসো…

মনি : কোথাও যাচ্ছো বুঝি?
দহন : হামমম।
মনি : কাকন ভাবির সাথে বুঝি…
দহন : হ…
দহন থেমে গেলো। অবাক হয়ে মনির দিকে তাকালো। মনি কখনোই কাকনকে ভাবি বলে ডাকেনা ।
মনি : এতো অবাক হওয়ার কি আছে? ভাবিকেই তো ভাবি ডেকেছি। অন্য কাউকে তো আর না। তাইনা? 😒।
দহন খুশির চোটে মনিকে কোলে নিয়ে লাফাতে লাগলো।
মনি : ভাইয়ারে মাথা ঘুরছে তো…
দহন : ঘুরুক… লাভ ইউ মাই সুইট সিস…
মনি : লাভ ইউ টু ভাইয়া

.

কাকন : কি বলছো কি দহন??
দহন : ঠিকই বলেছি…
কাকন : আই কান্ট বিলিভ দ্যাট … ওহ মাই গড… মনি আমাকে ভাবি বলে ডেকেছে…
দহন : আই অ্যাম অলসো শকড জান…
কাকন : তাহলে তো আমাদের বিয়ে সময়ের ব্যাপার মাত্র…
দহন : আমার তো ইচ্ছা করছে এখনই বিয়ে করে ফেলি… 😍…
কাকন : ইশ নেক্সট মান্থ আমাদের ফাইনাল এক্সাম। এখন বিয়ের কথা বললে মাম্মি না না মাম্মি না… পাপা ক্ষেপে যাবে।
দহন : তোমার পাপা তো জাস্ট ক্ষেপে যাবে। আর আমার বাপী… দ্যা গ্রেট জল্লাদ বাপ আমাকে বাসা থেকেই বের করে দি…
দহন দেখে দীপন দারিয়ে আছে। দহনের তো মরে মরে যাই যাই অবস্থা।
দীপন : আমি জল্লাদ বাপ?
দহন : হ্যা… মানে না বাপী…
দীপন : মিথ্যা কথা বলা আমার পছন্দ নয় দহন।
দহন : ….
দীপন : আর বাহিরের মানুষের সামনে তুমি আমাকে জল্লাদ বাপ জল্লাদ বাপ বলছো… লজ্জা করছে না?
দহন : বাপী বাহিরের মানুষনা। ইটস কাকন…
দীপন : মেয়েটার মনে আমাকে নিয়ে আতঙ্ক না ঢুকালেও পারতে… 😒…
দহন : সরি বাপী…
দীপন : এক্সামে যদি এবার টপ না করতে পারো তবে কিন্তু বিয়ে পিছিয়ে ৫বছর পর করাবো বলে দিলাম। ৫বছরের জন্য উগান্ডা পাঠিয়ে দিবো। আর এমন ব্যাবস্থা করবো যে কাকনের সাথে দেখাও করতে পারবেনা।
দহন : বাপী কখনও কি সেকেন্ড হয়েছি?
দীপন : হওনি বলেইতো বলছি হলে খবর আছে।
দহন : হামমম।
দীপন রুমে চলে গেলো।
দহন : যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়…
কাকন : হাহাহাহাহা।
দহন : তুমি হাসছো!!!
কাকন : হাসি পেলে কি করবো শুনি?
দহন : নট ডান। 😤।।
কাকন : ডান ডান সুপার ডান।

.

বহ্নির শেষ ক্লাস…
সবার কাছে থেকে বিদায় নিচ্ছে। সবার মন খারাপ। আর সবথেকে বেশি খারাপ মনির।
বহ্নি : হেই আপুরা কেন এতো মন খারাপ হামমম? এমন তো আমি কোথাও হারিয়ে যাচ্ছি। তোমরা তো চাইলেই আমার সাথে দেখা করতে পারবে। আমিও মাঝে মাঝে এসে দেখা করে যাবো। তাহলে কেন মুখ এতো ভারি হামম?

ইমা : আপু তুমি পার্মানেন্টলি আমাদের টিচার হয়ে যাওনা প্লিজ।
বহ্নি : আই কান্ট ডিয়ার। পারলে তো হতামই। আমি তোমাদের আপু ছিলাম আছি আর থাকবো।

বহ্নি এক এক করে সবার কাছে গেলো। সবার শেষে গেলো মনির কাছে।
বহ্নি : মনি… নয়ন মনি… তাকাও তো দেখি আমার দিকে…
মনি মাথা নিচু করে রইলো। বহ্নি মনির কপালে চুমু দিলো।
বহ্নি : আপুকে বুঝি এমন কাদো কাদো মুখে বিদায় দিবে হামম?
মনি বহ্নিকে জরিয়ে ধরলো।
মনি : খুব খুব খুব মিস করবো তোমাকে। আমার যখনই তোমার কথা মনে পরবে আমি কিন্তু তোমার কাছে চলে যাবো…
বহ্নি : ওকে যেও। ওয়েট করবো তোমার জন্য । লাভ ইউ অল গাইস। সবাই ভালো থেকো সুস্থ থেকো। আমি তোমাদের সবাইকে অনেক মিস করবো। আসছি ম্যাম।
চন্দনা : এসো। লাভ ইউ বাচ্চা।
বহ্নি : লাভ ইউ টু ম্যাম…

.

২দিনপর…
দহন : মনি … নয়ন মনি… মামনি মনি কোথায়?
নিশা : আর কোথায় ? রুমে… গত ২দিনের মতো আজকেও রুমে বসে শোক দিবস পালন করছে।
দহন : আজকে ওর মনটা ভালো করে দিবো।। মনি…
মনি মনি মনি…
দহন মনির রুমে গেলো।
দহন : নয়ন মনি…
মনি তবুও মুখ ভারী করে বসে আছে।
দহন : বাবা… ২দিনের ওই আপুর জন্য এতো মন খারাপ? তাও ওই ভীতু আপুর জন্য ?
মনি : একদম আমার বহ্নি আপুকে বাজে কথা বলবেনা।
দহন : বাজে কথা কখন বললাম।
মনি : এখনই তাে বললা। 😒।
দহন : হাহাহা
মনি : হুহ…
দহন : এখন চলেন আমার নয়ন মনি…
মনি : কোথায়?
দহন : সারপ্রাইজের কাছে।
মনি : লাগবেনা আমার কোন সারপ্রাইজ। যাবোনা কোথাও।
দহন : চলোনা…
মনি : উহু…
দহন : আরে বুদ্ধু… তোমার বহ্নি আপুর কাছেই নিয়ে যাচ্ছি। তার ভার্সিটিতে…
মনি : সত্যি?
দহন : তিন সত্যি…
মনি : চলো চলো চলো।
দহন : চেঞ্জ তো করে নাও।
মনি : নট নিডেড…
দহন : হায়রে পাগলিরে…

.

কিছুদিন পর…
নিশা : এখান দিয়ে যখন এলাম তখন কাকনদের বাসায় দেখা করেই যাই। একটু কাজও ছিলো। ওর রুম ডেকোরেট , বিয়ের ড্রেস ডিজাইনের জন্য কোন ডিজাইনার… যাই ওদে বাসায় যাই।

রিমা : কি করছো বেবি?
কাকন : মাম্মি জব অফার দেখছি ।
রিমা : জব? দহনের বাবার এতোবড় বিজনেস। তাহলে তুমি কেন জব অফার দেখছো। দেশে জব পাওয়া কিন্তু খুব মুশকিল ।
কাকন : মাম্মি … তোমাকে কে বলল যে আমি এদেশের কোনো কোথাও জব করবো? আমি অ্যাবরোডের কোথাও ভালো অফার আছে কিনা দেখছি।
রিমা : হুয়াট?
কাকন : হামম।
রিমা : ২মাসপর তোমার বিয়ে আর এখন তুমি জব দেখছো। তাও বিদেশে। হ্যাভ ইউ লস্ট ইট…
কাকন : নো মাম্মি । বিয়ের পর থেকে জয়েন করবো। শিফ্ট হবো।
রিমা : বিয়ের পর মানে? দহন বা দহনের ফ্যামিলি পারমিশন দিবে?
কাকন : দহন তো আমারই। ওর কাছে পারমিশনের কি আছে? আর দহনও তো আমার সাথে যাবে। ও মন চাইলে ওখানেই ওর বাবার বিজনেস সামলাবে।
রিমা : ১মিনিট… তুমি কি চাইছো দহন কে বাহিরে শিফ্ট হতে… এখানে থাকবেনা?
কাকন : নট অ্যাট অল মাম্মি … আমার তো অনেকদিনের শখ দহনের সাথে ইউরোপ বা ইউ.এস.এ তে শিফ্ট হবো। চরম ১টা ফিউচার হবে আমাদের। এখানে থাকলে তো স্বাভাবিকভাবেই কোন প্রাইভেসি পাবোনা।

তখন কাকন পিছে ঘুরে দেখে নিশা-মনি দারিয়ে আছে।
কাকন : আরে আন্টি… মনি… কাম কাম কাম…

ওরা ২জন কাকনের সব কথা শুনেছে।
কাকন : ভালো আছো তোমরা?
নিশা : হামম।
.

চলবে…