ভালোবেসে ফেলেছি পর্ব-৩০+৩১

0
1916

#ভালোবেসে_ফেলেছি
part : 30
writer : Mohona

.

দহন : হ্যা নাটক। দেখোনি বাহিরে কাকন ছিলো… তাও রকির রুমের বাহিরে।
বহ্নি : হ্যা থাকতেই পারে … তুমি না বললে যে ওদের ডিভোর্স হয়নি…
দহনের রিয়্যাকশন : 😒😬😭।
বহ্নি : আজব তো তুমি দহন। এমন রিয়্যাকশনের মানে কি…
দহন : বহ্নি তুমি এতোটুকু বোঝোনা যে কাকন জানেনা যে আমি সব জানি… আর তুমি এই স্বাভাবিক বিষয়টাই বুঝলেনা…
বহ্নি : 😒। দেখি সরো ফ্রেশ হতে যাবো। মাথা ব্যাথা করছে… তুমি হলে ১নাম্বারের অ্যাবনরমাল মানুষ। কখন কি করো কি বলো নিজেই জানোনা। টপক্লাস ডাকাত।
বলেই বহ্নি ওয়াশরুমে চলে গেলো।

.

কিছুক্ষনপর …
দহন-বহ্নি রুম থেকে বের হলো। বেরিয়ে দেখে সামনে কাকন দারিয়ে আছে । দহন কাকনকে ইগনোর করে বহ্নির হাত ধরে হেটে যাচ্ছে ।
কাকন : দহন প্লিজ লেট মি এক্সপ্লেইন…
দহন : আরে ভাই তুমি আমাকে কেন কিছু এক্সপ্লেইন করবা? তুমি তোমার জীবনে যা খুশি তাই করো তা তুমি আমাকে এক্সপ্লেইন করবে কেন? হুয়াই?
কাকন জোরে বলে
উঠলো : কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি… খুব ভালোবাসি…
সবাই ওখানে উপস্থিত হলো। রকিও।
নিশা : এই মেয়েকে তো আমি…
দীপন নিশার হাত ধরে ফেলল।
দীপন : নিশা আজকে না। লেট দেম হ্যান্ডেল দিস প্লিজ…
নিশা : কিন্তু…
দীপন : প্লিজ …
নিশা চুপ করে দারিয়ে রইল।
দহন : কি? কি বললে তুমি? আরেকবার বলো … আমি শুনলাম তুমি বললে যে তুমি আমাকে ভালোবাসো… ইজ ইট?
কাকন : ভালোবাসি তোমাকে…
দহন : জাস্ট শাট আপ… তোমার মতো মেয়ে কখনো কাউকে ভালোবাসতে পারেনা। তোমরা কেবল নিজেকে ভালোবাসো। দ্যাটস ইট।
কাকন : দহন তুমি যা দেখেছো তার পেছনে ১টা সত্য আছে।
দহন : দেখো সত্য না মিথ্যা… তাতে আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। তোমার জীবনে তুমি যা খুশি করো। তাতে আমার কিছুনা। ইউ আর নাথিং টু মি… বাট প্লিজ আমাদের ২জনের লাইফ থেকে দূরে থাকো।
কাকন : তুমি আমাকে ভুল বুঝছো দহন । বি…
দহন : আবার ভুল বোঝার কথা বলছো কেন? তোমার কানে আমার কথা ঢোকেনি…
কাকন : দহন আমি তোমাকে ভালোবাসি দহন। খুব ভালোবাসি…
এতোক্ষন ড্রামা করলেও এখন দহনের মেজাজ সত্যিই গরম হয়ে গেলো। কতোবার ও বোঝাবে যে ওর কিছুই যায় আসেনা।
কাকন : আই জাস্ট লাভ ই…
দহন : চুপ একদম চুপ…
দহনের হুংকারে মনে হলো পুরো কটেজটা কেপে উঠলো। দহন এতোক্ষন চেয়েছিলো যে হালকাপাতলা রাগ করবে আর কাকন বলে দিবে যে রকি ওর স্বামী। কিন্তু কাকন একই কথার পেছনে পরে আছে।

দহন : আমি তোমাকে কিছু বলেছি? কোনো সাফাই চেয়েছি? তুমি রকির সাথে রাত কাটাও বা অন্যকারো সাথে রাত কাটাও তাতে আমার কিছুই না। তুমি আমার কেউই না। এই সিম্পল কথাটা কেন তোমার মাথায় ঢুকছেনা?
কাকন : দহন বিশ্বাস করো …
দহন : ১টা থাপ্পর দিবো তোমাকে। দেখো তোমাকে নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই… বাট প্লিজ… এই ভালোবাসি ভালোবাসি বলে আমার সামনে আসবেনা। কারন তোমার মতো মেয়েরা ভালোবাসতে জানেনা । ধোকা দিতে জানে। আর কি বলছিলা লেট মি এক্সপ্লেইন… কি এক্সপ্লেইন করবে তুমি? যে তুমি সারারাত রকি রুমে কি করছিলে অর হুয়াট? এমন কাজ করে ভুলবশত আমার মুখোমুখি পরে গিয়েছো তাই আবার নতুন নাটক করছো… যারা বিয়ের আগে অন্যপুরুষের সাথে রাত কাটায় তাদের কি বলে জানো…? ওয়ার্ডটা আমি মুখেও আনতে চাইছিনা। তোমার জন্য জাস্ট ১টা শব্দই মুখে আসছে। চরিত্রহীনা…
রকি : ইনাফ মিস্টার দহন আহমেদ।

রকির পক্ষে কোনোভাবেই কাকনের নামে এসব শোনা সম্ভব না। ওর সহ্যের বাহিরে।

দহন রকির দিকে ঘুরলো। রেগে তাকালো।

.

দহন : হাউ ডেয়ার ইউ? তোমার মতো ছোটলোকের সাহস কি করে হয় আমাকে ধমক দেয়ার?
রকি : তোমার মতো বড়লোক নাই হতে পারি বাট মেয়েদের সম্মান করতে জানি। তোমার মতো নিচু মনের মানুষ নই আমি।
দহন : চুপ।। ভুলে যেওনা আমিই তোমাকে হায়ার করে এনেছি…
রকি : না ভুলে যাইনি। অনেষ্টলি আমি মনে করেছিলাম যে তুমি আমার কাকনকে ওর ভুলটা বোঝানোর জন্য এখানে এনেছো… এসব করতে বলেছো। বাট আই ওয়াস রং।।। তুমি তো জাস্ট নিজের বদলা নেয়ার জন্য এই ছক কসেছো। নিজের ইগো স্যাটিসফাইড করার জন্য এসব করেছো।
দহন : হ্যা তো? তোমার সমস্যা ?
রকি : হ্যা আমার সমস্যা । কারন এই মেয়েটা আমার বউ…
কাকন অবাক চোখে রকিকে দেখছে।
দহন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে
বলল : বউ… লাইক রিয়েলি…
রকি : ইয়েস । ও আমার বউ। কোনো মেয়ে তার স্বামীর সাথে রাত কাটালে তাকে সেই স্বামীর স্ত্রীই বলে। অন্য কিছু বললে তোমার বউও সেটা…
দহন রকির কলার ধরে উচু করে ফেলল।
দহন : খবরদার আমার বউ সম্পর্কে কোনো কথা বলবা না। জানে মেরে দিবো…
রকি : তোমার বউ বউ… আর অন্যদের কিছুই না… দেখো কাকন কাকে ভালোবেসেছিলে…? এন্ড ইউ… আমার বউ আর যাইই হোক চরিত্রহীনা নয়। ও তোমাকে কেবল তোমাকেই সত্যিকারের ভালোবেসেছে। পাগলের মতো ভালোবেসেছে। তাই এসবকিছু করেছে। আর আমার কথা বলবে? আমার সাথে যখন ও পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করলো তখন ও কেবল ১জন টিনেজার ছিলো। দ্যাটস ইট। আর টিনেজারদের মনে কতোকিছুই চলে। আর তুমি … তুমিই ওর প্রকৃত ভালোবাসা। আমি দেখিছি ওর ভালোবাসা তোমার জন্য। সত্যিকারের ভালো না বাসলে ও নিজের সন্তানকে মেরে ফেলতো না। হ্যা এটা জঘন্য অপরাধ । হ্যা ও তোমাকে ধোকা দিয়েছে। কিন্তু তোমার জন্য ওর ভালোবাসা মিথ্যা না। এতোগুলো মিথ্যার মধ্যে এটাই ১টা সত্য । ভালোতো ও একা বাসেনি। তুমিও বেসেছিলে। কিন্তু পরিবারের থেকে ওকে ভালোবাসোনি… ওর মতো ওকে ভালোবাসোনি…. ওর মতো তুমি কখনো ভালোবাসতেই পারোনা। আর তাই তো সেদিন ওর হাত ছেরে দিয়েছিলে। আমাকে দেখো… ও আমার সন্তানকে মেরেছে… আমার পরিবারের ক্ষতি করার হুমকি দিয়েছে। তবুও আমি ওকে ভালোবাসি। ওর অপেক্ষায় আছি। ও চাইলে আমার জীবনে থেকেও তোমার সাথে সম্পর্ক রাখতে পারতো। কিন্তু ও তা করেনি। তাই আর যাই বলো আমার বউকে চরিত্রহীনা বলবেনা… আর হ্যা শেষ কথা… নিজের প্রাক্তন প্রেমিকা হিসেবে না হলে তোমার বন্ধু হিসেবে তাও না হলে ১টা মেয়ে হিসেবে ওর সম্মান রাখা তোমার উচিত ছিলো। এভাবে সবার সামনে ওকে অপমান না করলেই পারতে…

কাকন অবাক চোখে রকিকে দেখছে। চোখ দিয়ে পানি গরিয়ে পরছে। এতো অন্যায় করেছে লোকটার সাথে তবুও ওকে এই লোকটা এতো ভালোবাসে? রকি কাকনের সামনে গিয়ে দারালো।
রকি : তুমি চাইলেও আমি আর ১সেকেন্ডও তোমাকে এখানে থাকতে দিবোনা।
বলেই রকি কাকনকে কোলে তুলে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

.

দহন দেখে নিশা আর বহ্নি অদ্ভুদভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ও স্পষ্ট বুঝতে পারছে যে ওরা রেগে তাকিয়ে আছে। কারনটা বুঝতে পারছেনা।
নিশা : কাজটা ঠিক করিসনি রে… এই শিক্ষা আমি তোকে দেইনি…
বলেই নিশা চলে গেলো।
দহন : আজব তো আমি কি করলাম? বহ্নি তুমিও কি…
বহ্নি দহনের দিকে এগিয়ে গেলো।
বহ্নি : তুমি আসলেই কাজটা ঠিক করোনি। ও ১টা মেয়ে। আর কোনো মেয়েকে এমন করে সবার সামনে অপমান করতে নেই। চরিত্রহীনাও বলতে নেই। আর ও তো জোর করে তোমার জীবনে আসেনি তাইনা? তুমি আসতে দিয়েছিলে বলেই ও এসেছিলো। তুমি তোমার মনে জায়গা দিয়েছিলে বলেই ও জায়গা পেয়েছিলো। তাইনা? এতোটাও রাগ থাকা ভালোনা দহন… ইউ হার্ট মি টুডে…
বলেই বহ্নিও চলে গেলো। রনক-রবি দহনেরর কাধে হাত রাখলো।
২জন : আয় আমাদের সাথে।

.

কাকন রকির বুকে মাথা রেখে সমানে কেদে যাচ্ছে। কোনো কথা বলছেনা। রকি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
রকি : আম সরি। সব দোষ আমার। আমি যদি দহনের কথা না শুনতাম তবে আজকে তোমাকে এতো কথা শুনতে হতোনা।।। অপমানিত হতে হতোনা। ক্ষমা করে দাও আমাকে।।।
কাকন সত্যিই ভীষন অবাক হলো। ও আজকে বুঝতে পারলো রকির ভালোবাসা। রকিই ওকে সত্যিকারের ভালোবাসে…

ধীরে ধীরে কাকন স্বাভাবিক হলো। রকি কাকনকে হালকা পাতলা কিছু খাইয়ে দিলো।

রকি : ফিলিং বেটার?
কাকন : হামমম।
রকি : চলো তোমাকে ফ্লাইটে তুলে দিচ্ছি।। তোমার মা-বাবা ঢাকা এয়ারপোর্টে দারিয়ে থাকবে ।
কাকন : তুমি ঢাকা ফিরবেনা?
রকি : নাহ… তোমাকে কালকে রাতে বলেছিলাম না যে আর কখনো এই মুখ তোমাকে দেখাবোনা…
কাকন : ..
রকি : ভালো থেকো… চলো গাড়িতে বসো। আমি তোমাকে এয়ারপোর্ট পৌছে দিচ্ছি…

ওরা এয়ারপোর্ট পৌছালো। কাকন ভেতরে চলে গেলো। রকি দারিয়ে দারিয়ে কাদতে লাগলো। তখন কাকন ঝড়ের বেগে ছুটে এসে রকিকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো। রকি অবাক হয়ে গেলো।
কাকন : আম সরি। প্লিজ গিভ মি অ্যা লাস্ট চান্স । প্লিজ ফরগিভ মি…

.

দহন : ১টা জিনিস আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিনা… আমি তো জাস্ট সত্যি কথাটাই বলেছি। তারপরও সবাই আমার সাথে এমন আচরন কেন করছে বলতো তোরা।
রবি : দেখ এখন তুই মারাত্মক রেগে আছিস তাই আমরা যাই বলিনা কেন তুই আরো রেগে যাবি। তাই এরথেকে ভালো তুই ঠান্ডা হ। দেন উই টক।
দহন : কিভাবে আমি ঠান্ডা হবো? মামনি তো মামনি… বাট… বহ্নি … ও কেন আমার সাথে রাগ করলো বলতো…
রনক : দেখ আমরা সবাই জানি যে তুই রাগ কন্ট্রোল করতে পারিস না। আর তাই আজকেও পারিসনি। আর না তো ১কথা বারবার বলতে পছন্দ করিস। আজকে ২টা জিনিসই হয়েছে। তাই তুই এসব করলি।
দহন : তোরাই বল… আমি ঠিক করেছি না ভুল?
বহ্নি : অবশ্যই ভুল…

৩জন তাকিয়ে দেখে বহ্নি দারিয়ে আছে। হাতে খাবারের ট্রে নিয়ে।
রবি: ভাবি আসো।
বহ্নি : ভাইয়া সবাই ব্রেকফাস্ট করে নিয়েছে। তোমরা ৩জনই বাকি। খেয়ে নাও।
বলেই বহ্নি ট্রে টা রেখে রুমে চলে গেলো। দহনও বহ্নির পিছে পিছে গেলো।

দহন বহ্নিকে দেয়ালে ঠেকালো।
দহন : সমস্যাটা কি তোমার? রাগ দেখাচ্ছো কেন আমাকে? কি ভুল কি করেছি আমি? যা করেছি তা ঠিক করেছি… একদম ঠিক।
বহ্নি : মোটেও ঠিক করোনি।
দহন : তো কি করলে ঠিক করতাম… ওর সাথে আবার সম্পর্ক তৈরি করলে?
বহ্নি : দহন এখন তুমি ভীষন রেগে আছো। তাই পরে কথা বলবো।
দহন : না আমি এখনই কথা বলবো।
বহ্নি : আমি বলবোনা।
বলেই বহ্নি চলে গেলো। দহন রেগে গিয়ে দেয়ালে লাথি মারলো।

.

২দিনপর…
আজকে রবি আর লিপির হলুদসন্ধ্যা। কেবল অনুষ্ঠান শুরু হবে তখন দহন স্টেজে উঠে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো।
দহন : সবাই শোনো সবাই শোনো… আমি আজকে আমার ২জন বিশেষ অতিথিকে আসতে বলেছি। এখন সবার অনুমতি চাই। তাদেরকে কি ভেতরে ঢুকতে বলবো নাকি ওখান থেকেই চলে যেতে বলবো?
সবাই বলল ভেতরে আসতে বলল।
দহন : মাই ফ্রেন্ড কাম ইন।
রকি-কাকন হাত ধরে ভেতরে ঢুকলো।
দহন : ওয়েলকাম মাই ফ্রেন্ডস। আর আবারও সরি। যেহেতু সবার সামনে ভুল করেছিলাম … তাই সবার সামনেই ভুলটা স্বীকার করলাম। দহন আহমেদ সচরাচর সরি বলেনা। হাজার ভুল করলেও না… কিন্তু মিসেস বহ্নি আহমেদ দহন আহমেদকে সরি বলতে শিখিয়ে দিয়েছে… দহন আহমেদ আরো ১টা কিছু শিখেছে।

দহন স্টেজ থেকে নেমে বহ্নির সামনে গিয়ে দারালো।

দহন : দহন তার বহ্নিকে মানে তার বউকে ভালোবাসতে শিখেছে… তাই সবার রাগ মেনে নিতে পারলেও বউয়ের রাগ মেনে নিতে পারেনা। সরি আমার বউটা। এন্ড লাভ ইউ মাই কলিজাপাখি…

.

চলবে…

#ভালোবেসে_ফেলেছি
part : 31
writer : Mohona

.

দহন : এন্ড আই লাভ ইউ … প্লিজ ফরগিভ মি…
বহ্নি মুচকি ১টা হাসি দিয়ে
বলল : ইটস ওকে । এন্ড আই অ্যাম সরি … আমি বেশি বলে ফেলেছিলাম ।
রবি : ভাবিজান ভাবিজান ভাবিজান… আই লাভ ইউ টুও বলতে হবে । শুধু সরি বললে হবেনা…
রনক : হামমম হামমম ঠিক ঠিক । আই লাভ ইউ বলতে হবে।
বহ্নি : আল্লাহ বলে কি…
নিশা : হ্যা হ্যা আমিও রবি-রনকের পক্ষে। এই বহ্নি তোকে বলতেই হবে। বল বল…
বহ্নি তো আরো অবাক। বহ্নি শাশুড়িটাও পেয়েছে সবথেকে অদ্ভুদ প্রানী । সবাই বহ্নিকে পেয়ে বসলো। লজ্জায় শেষ বহ্নি । অসহায় দৃষ্টিতে দহনের দিকে তাকালো।

দহন : হেই স্টপ স্টপ স্টপ … অনেক হয়েছে… আমার বউ এখন নার্ভাসনেসে আর লজ্জার চোটে হার্ট অ্যাটাক করবে। এই টপিক বাদ। হলুন প্রোগ্যার শুরু কর।
নিশা : এটা কি হলো!!! নট ডান… দহন তুই…
দহন : মামনি…
নিশা : কি মামনি হ্যা কি মামনি…
দহন : বাপী প্লিজ হ্যান্ডেল হার…
নিশা : আরে আমি কোনো বস্তু নাকি যে আমাকে হ্যান্ডেল করবে? আজব তো…
দীপন : এই যে আজব প্রানী… দয় করে মুখ বন্ধ রাখেন।
নিশা : বহ্নিকে আই লাভ ইউ টু বলতেই হবে…
দহন : হ্যা হ্যা বলবে… আগে একে ভীতু থেকে সাহসী তো করি… এরপর দিন ভরে আই লাভ ইউ বলবে। তোমার কান ব্যাথা হয়ে গেলেও ওর মুখ ব্যাথা হবেনা। এই সবাই ধামাকা শুরু করো।

অনুষ্ঠান শুরু হলো। সবাই মজা করতে শুরু করলো। বেশ আনন্দ করতে লাগলো। পরদিন বিয়ে হলো। তারপরদিন বৌভাত হলো। ২দিনপর সবাই ঢাকা ফিরে এলো।
আর কাকনের সমস্যাও সমাধান হয়ে গিয়েছে । এখন বাকী কেবল অর্নব । এর সাথে কি করা যায়!!!

.

৭দিনপর…
রিদি : ফপ্পি ফপ্পি… তোমরা অনেক মজা করেছো ওখানে?
বহ্নি : হ্যা সোনাপাখি। তোমাদের তো বলেছিলাম ফুপ্পির সাথে। তোমরা তো গেলেনা।
দিনা : আমাদের ওখানে কি কাজ? তোর শ্বশুড়বাড়ি… ওখানে আমার গিয়ে কি লাভ? আর শ্বশুড়বাড়িও না । দহনের বন্ধুর বিয়ে ছিলো। তাও ডেসটিনেশন… ওখানে আমরা গিয়ে কি করতাম বলোতো…
বহ্নি : কি করতাম মানে কি ভাবি? রবি কতোবার তোমাদের কথা বলেছে জানো?
দিনা : তুই বুঝবিনা…
রিদি : জানো ফপ্পি আমাদের না ভীষন একা একা লাগে। কয়েকদিন তবুও অর্নব চাচ্চু থাকতো এখন না অর্নব চাচ্চুও এখানে থাকেনা।
বহ্নি : কোথায় থাকে?
দিনা : নতুন ফ্ল্যাট কিনেছে সেখানে থাকে। বলল যে এখানে যদি থাকে তবে হয়তো লোকে আমাকে নানাধরনের কথা বলতে পারে। আমিও ভাবলাম যে ঠিকই বলেছে। তাই আর না করিনি।
বহ্নি বুঝতে পারলো যে দহন জানতো যে অর্নব এখানে নেই। তাই একা আসতে দিয়েছে।
বহ্নি : ওহ। যাক ভালোই হয়েছে। অর্নব নিশ্চয়ই রেগে আছে আমার ওপর তাইনা?

অর্নব : সেটা কি জায়েজ না?
সবাই দরজার দিকে তাকালো। দেখলো চকোলেট বক্স হাতে অর্নব দারিয়ে আছে। রিদি চাচ্চু বলে লাফিয়ে অর্নবের কাছে গেলো।
রিদি : তুমি এই কদিন আসোনি কেন?
অর্নব : আজকেও আসতাম না। শুনলাম তোমার ফুপ্পি এসেছে তাই দেখা করতে এলাম। তোমার ফুপ্পি তো আর আমার সাথে দেখা করতে যাবেনা। তাই ভাবলাম আমিই আসি দেখা করতে… যাও গিয়ে চকোলেট খাও।
রিদি চলে গেলো।

অর্নব : আমার রাগ করাটা কি জায়েজ না বহ্নি? আর তারথেকেও বড় কথা… এটা রাগ না। এটা অভিমান। যেটা তুই বুঝবিনা। কারন তুই বড়লোক জামাই পেয়ে সব ভুলে গিয়েছিস।
কথাটা বহ্নির খুব খারাপ লাগলো। নিজের বেস্টফ্রেন্ডের কাছে এমন কথা কেউই আশা করেনা। বহ্নিও করেনি।
বহ্নি : তুই ইনডিরেক্টলি আমাকে লোভী বলছিস ?
অর্নব : সেটা কি জায়েজ নয়?
বহ্নি : না সেটা জায়েজ নয়। আর না তোর আমার ওপর রাগ করা জায়েজ। কারন তোর সাথে আমার কোনো ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলোনা। আর তুই এটাও জানিস যে কেবল বাবা বলেছিলো বলেই আমি তোকে বিয়ে করতে রাজী হয়েছিলাম। দ্যাটস ইট। তাছারা আর কিছুইনা। তোর সাথে বন্ধুত্ব ছারা আমার আর কোনো সম্পর্কই ছিলোনা সেটা তুই ভালোকরেই জানিস। এখন তুই আমাকে ভালোবেসে ফেললে সেটা নিশ্চয়ই আমার দোষ না।
অর্নব : তোরই দোষ। তুইই বাধ্য করেছিস তোকে ভালোবাসতে…তুই বাধ্য করেছিস। কারন তোর আশেপাশে থেকে কোনোক্রমেই তোকে ভালোনাবেসে থাকা সম্ভব না। আর আমি তো ছোটথেকে তোর সাথে আছি । তোর সব থেকে কাছাকাছি… তাই তোকে না ভালোবেসে উপায় ছিলোনা… আমি তোকে খুব খুব ভালোবাসিরে। দহনকে ছেরে চলে আয়না আমার কাছে।
দিনা : অর্নব … কি আবোল তাবোল বলছো? তুমি ভেবে দেখেছো যে তুমি কি বলছো ? পাগল হয়ে গিয়েছো তুমি।
অর্নব : হ্যা আমি পাগল হয়ে গিয়েছি… পাগল হয়ে গিয়েছি… ওকে অন্যকারো সাথে দেখে পাগল হয়ে গিয়েছি… ওর হাত অন্যকারো হাতে দেখে পাগল হয়ে গিয়েছি… এই বহ্নি দহনকে ছেরে চলে আয়না আমার কাছে। দেখ দহন তোকে কতো বকে… আমি তোকে কথা দিচ্ছি আমি তোকে কখনোই বকবোনা… এমন কি চোখ রাঙানিও দিবোনা তোকে। তুই চলে আয় আমার কাছে। দেখ দহন অতীতে অন্য কেউ আছে। আমার অতীতও তুই আর বর্তমানও তুই। কি গ্যারান্টি আছে যে দহন অতীতের ভালোবাসার কাছে আবার ফিরে যাবেনা।। যাকে অতীতে ভালোবেসেছে তাকে তো আবারও ভালোবাসতে পারে… তোকে ধোকাও দিতে পারে…
বহ্নি : অর্নব… খবরদার আমার দহনের নামে কোনো কথা বলবিনা। আমার দহনের মতো কেউ নেই। ও কখনোই আমাকে ধোকা দিবেনা। আর যেই কাকনের কথা বলছিস সে এখন তার স্বামীর সাথে সুখে আছে। আর তাও দহনের জন্যই। দহনের নামে কোনো কথা বলবিনা… আমি মেনে নিবোনা…. দহন খুব ভালোবাসে আমাকে। বুঝেছিস?
অর্নব : আচ্ছা বলবোনা। মানলাম দহন তোকে ভালোবাসো। কিন্তু আমি তোকে দহনের থেকেও বেশি ভালোবাসি। আমি দহনের থেকেও তোকে বেশি ভালোবাসবো…
বলেই অর্নব বহ্নির হাত ধরলো। অর্নব অসংখ্যবার ওর হাত ধরেছে। কিন্তু এমন অনুভূতি কখনো বহ্নির হয়নি … ও বুঝতে পারছে যে অর্নব নিজের মধ্যেই নেই। ও হাত ছারানোর চেষ্টা করলো।
অর্নব : হ্যা আমি দহনের থেকে তোকে বেশি ভালোবাসবো… বেশি আদর করবো…খুব করে আদর করবো…
বলেই অর্নব বহ্নির হাতে কিস করতে নিলে বহ্নি নিজের হাত কঠোরভাবে ছারিয়ে নিয়ে ঠাস করে থাপ্পর মারলো অর্নবকে।
বহ্নি : তুই আজকে আমার চোখে একদম নিচে নেমে গেলিরে। হয়তো তোদের মতো ছেলেদের জন্যই ১টা ছেলে আর ১টা মেয়ে কেবলমাত্র বন্ধু হয়ে থাকতে পারেনা। আর হলেও কেউ সেটা মেনে নেয়না। আমাকে স্পর্শ করার অধিকার কেবল আমার দহনের আছে। আর কারও না। তুই বন্ধুত্বকে অপমান করেছিস। ১টা মেয়ে হয়ে স্পর্শের মধ্যে তফাৎ টা বুঝি… তুই এখন আমার হাত ধরাতে বুঝে গিয়েছিলাম…. তোর এই হাত আমার ছোটবেলার সেই ভরসার হাত নয়। এতে বাজে উদ্দেশ্য আছে।
অর্নব : তুই আমার ভালোবাসাকে বাজে উদ্দেশ্য বলছিস?
বহ্নি : হ্যা বলছি । কারন আমি না তো তোর প্রেমিকা আর না তো তোর বউ। আমি দহন আহমেদের স্ত্রী। বহ্নি কেবল দহনের। তুই আর আমার সেই অর্নব নেই যে কেবল আর কেবল আমার বেস্টফ্রেন্ড ছিলো। আমার খেলারসাথী ছিলো। আমার খেলারসাথী , জীবনসাথী আর খেলারসাথীর মধ্যে পার্থক্য ভুলে গিয়েছে। আমার সামনে এখন আমার বেস্টফ্রেন্ড না… ১জন অপরিচিত মানুষ দারিয়ে আছে। তাই মিস্টার অর্নব আজকে থেকে তোমার আমার বন্ধুত্ব শেষ।
অর্নব : বহহহ্নিহ… 😥…
বহ্নি : এই মুহুর্ত থেকে তুমি শুধু আমার মরহুম বাবার বন্ধুর ছেলে। দ্যাটস ইট।
অর্নব : এমন ককককরিস না বহ্নি। আমি মরে যাবো। আমাদের বন্ধুত্ব ভাঙিস নারে। মরে যাবো আমি।
বহ্নি : আমাদের বন্ধুত্ব আমি না তুমি ভেঙেছো। তাই ইটস ওভার নাও। আসছি ভাবি…
বলেই বহ্নি বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে বসে ড্রাইভারকে গাড়ি ছারতে বলল। অর্নব ওর পিছু পিছু এলো। বহ্নিকে ডাকতে লাগলো। কিন্তু বহ্নি গাড়ি থামালো না।
অর্নব রাস্তার মাঝে হাটু গেরে বসে পরলো। আর চিৎকার করে বহ্নির নাম নিলো।

.

সন্ধ্যায় দহন আর দীপন অফিস থেকে ফিরলো। দহন বহ্নিকে দেখেই বুঝলো যে বহ্নির মন হয়তো ভালো নেই। বাসায় ফিরেই দীপনের সাথে অফিসের ১টা বিষয় নিয়ে কথা বলতে বলতে বহ্নির সাথে কথা বলার আর সময়ই পায়নি। অফিসের কাজ একটু বেশি জরুরী ছিলো বলে ডিনারের পরও কিছুক্ষন কাজ করতে হয়েছে।

কাজটাজ শেষে দহন রুমে গেলো । দেখলো বহ্নি বারান্দায় দারিয়ে আছে। দহন বারান্দায় গিয়ে বহ্নির কাধে হাত রাখলো।
দহন : বহ্নি…
বহ্নি পিছে ঘুরলো। দহন বহ্নির চিবুক ধরে ঠোটে ছোট্ট ১টা কিস করে
বলল : কি হয়েছে আমার কলিজা পাখিটার হামম?
বহ্নি চুপটি করে দহনের বুকে মাথা রাখলো। আসলে এতোদিনের বন্ধুত্বটা ভেঙে বহ্নির ভীষন খারাপ লাগছে।

দহন : কি হয়েছে কলিজাপাখি?
বহ্নি : …
দহন : দেখো যদি বলো যে কিছু হয়নি তাহলে কিন্তু মাইর দিবো। বলোতো কি হয়েছে?
বহ্নি : …
দহন : মা-বাবার কথা মনে পরেছে?
বহ্নি : নাহ।
দহন : তাহলে?
বহ্নি : …
দহন : বলো…
বহ্নি : …

নাহ এবার টেনশনের চোটে দহনের রাগ উঠে গেলো।
দহন : কিছু বলতে বলেছিতো নাকি? এমন করে চুপ থাকার মানে কি? ১টা ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিবো বলে দিচ্ছি… 😡…
বহ্নি বরাবরের মতো ভয়ে কেপে উঠলোনা। দহনও আর কিছু বললনা। কিছুক্ষন বুঝতে পারলো যে ওর টি-শার্টটা ভেজা ভেজা লাগছে।
দহন : আর ইউ ক্রাইং?
বহ্নি : …
দহন : বলো তো কি হয়েছে?
বহ্নি : তুমি রাগ করবেনা বলো.. বকবে না।
দহন : একদম রাগ করবোনা আমি তোমার ওপর। আর না বকবো। বলো কি হয়েছে?
বহ্নি সবটা বলল। সব শুনে তো দহনের মাথা গেলো গরম হয়ে। দহন বহ্নিকে সোজা করে দার করালো।
দহন : অর্নব আজকে এসব করেছে?
বহ্নি : হামমম।
দহন : ওকে তো আমি আজকে… 😡…
বলেই দহন যেতে নিলো। বহ্নি ওর হাত ধরে ফেলল।
বহ্নি : প্লিজ যেওনা।
দহন : হাতটা ছারো বহ্নি।
বহ্নি : না ছারবোনা। দেখো ওর সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিন্ন করে এসেছি। আর কখনো হয়তো ওর মুখোমুখি হবোনা। তাই তুমি আর রাগ করোনা। প্লিজ।
দহন : আমি বলেছি হাতটা ছারো।
বহ্নি : প্লিজ মাথা ঠান্ডা করো। আমি তো সবশেষ করে দিয়েই এসেছি…
দহন : বলেছি না হাতটা ছারো।
বলেই দহন ঝারা দিয়ে হাতটা ছারিয়ে নিলো। এরপর বহ্নির গাল চেপে ধরলো।
দহন : কেন মাথা ঠান্ডা করবো কেন আমি হ্যা ? বলো… টেল মি… ও আমার বউকে… আফসোস হচ্ছে বন্ধুত্ব ভেঙে আসায়? হ্যা? উত্তর দাও… আফসোস হলে ভাঙলে কেন বন্ধুত্ব? রাখতে… শুধু বন্ধুত্ব কেন… নতুন অবৈধ সম্পর্কও রাখতে… না হয় আমাকে ফেলে ওর কাছে চলে যেতে… না হয় ওখান থেকেই পালিয়ে যেতে… আমি তো আর ছিলাম না। আজকে ওর সাথে আমি কি করবো নিজেও জানিনা…

বলেই দহন বেরিয়ে গেলো। এরপর ইচ্ছা মতো অর্নবকে মেরে নিজেই হসপিটালে অ্যাডমিট করালো। রাতে আর বাসায় ফিরলোনা।

.

পরদিন…
দহনের রাগ কিছুটা ঠান্ডা হয়েছে। আর বুঝতেও পারলো যে শুধুশুধুই বহ্নিকে বকেছে। কেন যে রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকেনা সেটা দহন নিজেই বোঝেনা। তাই অফিস থেকে ফেরার পথে বহ্নির জন্য ফুলের তোরা নিয়ে গেলো। গিয়ে দেখে বহ্নি আর মনি টিভি দেখছে।
মনি : ওয়াও ভাইয়া দারুন তো…. তোরাটা বুঝি ভাবির জন্য ?
দহন : হামমম।
মনি : তাহলে আমি চোখ বন্ধ করছি তুমি রোমান্টিকভাবে দিয়ে দাও…
দহন : মারবো ধরে। টিভি দেখো আমি আসছি…
বলেই হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে গেলো। বহ্নিকে বসিয়ে। নিজে মেঝেতে বসলো।
দহন : প্লিজ ফরগিভ মি কলিজাপাখি। তুমি তো জানোই যে রেগে গেলো তোমার জামাইটার মাথা ঠিক থাকেনা। প্লিজ সরি…
বহ্নি : ইটস ওকে…

.

চলবে…