#গল্পঃ_ভিলেন
লেখিকাঃ আদিবা ইসলাম আঁখি
পর্বঃ ২০
———————-★★———————-
★★ পরের দিন সকালে বেডে সুয়ে আনমনে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি “গাল বয়ে পানি পড়ছে” হঠাৎ কেউ একজন এসে চোখেন পানি মুছে দিতেই নড়ে উঠলাম….!
আমি: তুমি এখানে..
নদী: হুমম
আমি: বসো না…!
নদী আমার পাশে বসে হাতের উপর হাত রাখলো,,,,
নদী: জানি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে। একটা মা ই জানে সন্তান হারানোর কতটা কষ্ট…তোমার সাথে যা হয়েছে খুব খারাপ হয়েছে কিন্তুু এবার তো নিজেকে সত্যিটার সাথে মানিয়ে নিতে হবে তাই না বলো,,,,
আমি: হুমম
মাথা নিচু করে নাক টানতে লাগলাম….
নদী: আদিবা নিজেকে একটু সামলাও নিজের দিকে তাকাও দেখো তোমার শরীর কি হাল একটু বুঝার চেষ্টা করো..! তুমি ভালো নেই বলে কেউ ভালো নেই বিষেশ করে শুভ খুব কষ্ট পাচ্ছে তুমি যদি জানতে ও তোমার জন্য এই কইদিন কি কি করেছে…
আমি: ওয়েট ওয়েট তুমি কি এখানে আমাকে দেখতে আসছো নাকি তোমার বন্ধু উফসস সরি প্রমিকের সুনাম গাইতে…
নদী: আদিবা কি বলছো এসব শুভ তোমার হাসবেন্ড হয়।
আমি: হাসবেন্ড ( হেসে দিয়ে) আচ্ছা বলো না কোন দিক দিয়ে হাসবেন্ড মনে হয়…. তোমার বন্ধু উফসস সরি বার বার ভুল করি প্রেমিক সে না কখন হাসবেন্ডের দায়িত্ব পালন করেছে না একটা বাচ্চার বাবার দায়িত্ব যে ছেলে বিয়ের দুদিন পর থেকেই বউয়ের উপর অত্যাচার করতে পারে তাহলে উনি কি করে হাসবেন্ড হয় একটু বলবা…
নদী: আদিবা দেখো মানুষ মাএই ভুল কিন্তুু সেই ভুল থেকে কিন্তুু মানুষ শিক্ষা পাই যেমনটা শুভ পেয়েছে,,,আর তুমি সবটা জানো না প্লিজজ তুমি সবটা শুনো তারপর শুভকে দোষি করো আর হ্যাঁ কি বার বার বলছো প্রমিক শোন শুভ আমার যাস্ট ভালো বন্ধু…!
আমি: হা হা হা…! কি শুনবো আর কিছু শোনান নাই আর রয়লো বন্ধু উনি নিজে আমায় বলেছে সে তোমাকে ভালোবাসে হ্যাঁ শুধু তোমাকে
নদী: ওটা যাস্ট একটা নাটক ছিলো শুভ তো শুধু তোমায় ভালোবাসতো
আমি : ব্যসসস আমি শুভ নামও শুনতো চাই না…! তোমাদের কাছে ভালোবাসা কি এতটাই ইজি যখন ইচ্ছে যার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করতে পারো বাহহ.. শোন যাস্ট আমি আর নিতে পারছি না প্লিজ স্টপপ এন্ড লিভ প্লিজ ( উচ্চস্বরে)
নদী: আদিবা একটু বোঝার চেষ্টা করো আমার কথাটা
সিনহা: কি হচ্ছে এখানে আদিবা এমন করছিস কেনো…
আমি: প্লিজজ তুই ওরে বের হতে বল আমি যাস্ট নিতে পারছি না,,,
সিনহা: নদী আপু দেখতে তো পারছো প্লিজজ একটু ,, ( অনুরোধ সুরে)
নদী: হুমমম বুঝতে পারছি,,,,
____ নদী চলে গেলো আমি বালিশে মাথা গুজে দিয়ে কাঁদতে লাগলাম সিনহা এসে মাথায় হাত রাখলো সিনহাকে জোরিয়ে ধরলাম…
আমি: আর নিতে পারছি না…! বার বার কেনো আমার বিশ্বাসে আঘাত লাগে প্রথম শুভ আমার বিশ্বাস ভাঙ্গলো তারপর তুষার ….! জানি না আমার গর্ভে বেবিটা কেমনে আসলো যখন আমি সবটা মেনে নিয়ে বেবিটাকে আকড়ে ধরলাম ঠিক তখনি সেটাও আমার থেকে কেড়ে নেওয়া হলো কেনো এমন হচ্ছে আমার সাথে কিছের শাস্তি খুদায় আমায় দিচ্ছে। ( কেঁদে কেঁদে)
সিনহা: দেখি দেখি
সিনহা আমার চোখের পানি দিয়ে বলতে লাগলো…!
সিনহা: কিছু হয়নি কুল ওকে কুও আল্লাহ উপর ভরসা রাখ সব ঠিক হবে,,,,,,ভুলে যাস না তোর পক্ষে এখন কোন ভাবে উওেজিত হওয়া ঠিক না
আমি: হুমমম কিন্তুু ,,,,,
সিনহা: চুপপপ চুপপ কোন কিন্তুু নয়,,,, চুপটি করে সুয়ে পড়তো দেখি
___ সিনহা আমায় জোর করে সুয়ে দিয়ে কিছু মেডিসিন দিয়ে কেবিন থেকে চলে গেলো একটু পর আমিও ঘুমিয়ে গেলাম,,,
★★সন্ধার দিকে…..
আব্বু: আদিবাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবো তো
সিনহা: হ্যাঁ তবে কাকু খেয়াল রাখবেন আদিবা যদি কোন ভাবে উওেজিত হয়ে না পড়ে তাহলে আমাদের পক্ষে অনেক রিক্স হয়ে পড়বে ওরে বাঁচানো আমাদের এখন ওরে একটা সুস্থ পরিবেশে রাখতে হবে,,,, কোন প্রকার চাপ সৃষ্টি করা যাবে না,,,,
আম্মু: হুমম সম্পূর্ন ভাবে খেয়াল রাখবো
আব্বু: একদম,,,,
মা: ভাবি বলছিলাম বউমাকে যদি আমাদের বাসায় নিয়ে যেতাম যদি আপনাদের আপত্তি না থাকতো
সিনহা: কিন্তুু আন্টি শুভ ভাইয়াকে দেখে তো আদিবা উওেজিত হচ্ছে উনার নাম পর্যন্ত নিতে পারছে না এই অবস্থায় আপনাদের বাসায় নেওয়াটা ঠিক হবে না আমার মনে হয়
বাবা: আচ্ছা আগে বউমা সুস্থ হক পড়ে না হয় ভেবে দেখা যাবে
মা: হুমম আমরা না হয় বউমাকে গিয়ে দেখে আসবো,,,,
বাবা: হুমম সেটাই করো,,,,
আব্বু: আদিবা তো শুধু আমার মেয়ে নয় আপনাদেরও যখন খুশি চলে আসবেন
আম্মু: হুমম যাবো,,,
সিনহা: ওকে কাকু কাকিমা কিন্তুু সম্পূর্ন ভাবে ওর খেয়াল রাখবে
আব্বু: একদম..! তুমি টেনশন করো না,,,,
সিনহা: ওকে,,,,
____রাতে দিকে বাসায় চলে আসলাম,,,,রুমে এক কোনে বসে আছি হঠাৎ আব্বু আম্মু রুমে আসলো,,,,
আব্বু: আদিবা
আমি: হুমম বলো আব্বু,,,,
আব্বু: আমি আর আম্মু ভেবেছি আমরা কোথাও গিয়ে কইদিনের জন্য ঘুরে আসবো
আমি: না আব্বু আমার ইচ্ছে করছে না তোমরা যাও,,,
আম্মু: এ কেমন কথা আমরা যাবো তোকে রেখে
আমি: তাহলে যেনো না,,,,
আম্মু: এমন করছিস কেনো চল না কোথাও গেলে তোর ভালোলাগবে,,,
আমি: কত বার বলবো যাবো না যাবো না বার বার এক কথা বলে মাথা খেও না। কি ভাবছো বুঝিনি দোয়া দেখাচ্ছ সবাই শুধু আমাকে ভালো রাখার জন্য রাখতে হবে না ভালো প্লিজজজ একা থাকতে দাও আমায় ( চিল্লিয়ে)
আস্মু: সোনা রাগ করছিস কেনো তোর জন্য তো
আমি: অনেক তো করেছো আমার জন্য দোহায় আর কিছু করো না,,,,( অনুরোধ করে)
আব্বু: আচ্ছা আচ্ছা চলে যাচ্ছি আমরা তুই শান্ত হ
আমি: হুমমম যাও,,,,,
__আব্বু আম্মুরকে নিয়ে চলে গেলো,,,,,, পাশে টেবিলে রাখা ফুলদানিটা হাতে নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে মেরে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলাম,,,,,
আমি: আজকের পর থেকে আমার রুমে কেউ আসবে না কেউ না…আমার কাউকে চাই না কাউকে না…!
কাঁদতে কাঁদতে সুয়ে পড়লাম….
★★এভাবে কেঁটে গেলো ৪/৫ দিন,,,,এই কইদিনো নিজেকে ঘর বন্ধ করে রেখেছি কারো সাথে কথা বলিনা ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করিনা,,,,,,
বিকাল দিকে বেলকুনিতে দাড়িয়ে আছি তখনি সিনহা আসলো,,,,
সিনহা : এগুলো কি অবস্থা আদিবা কি করছিস এসব এটা রুম নাকি ডাস্টবিন…..পুরো রুম অগোছানো ওখান কার জিনিস ওখানে এখানে পড়ে আছে,,,,
আমি: নিশ্চপ,,,
সিনহা: আদিবা…! শোন এদিকে আয়,,,,,বস এখানে
আমি: হুমমম,,,,
সিনহা: কি করছিস এসব,,,,আয়নায় নিজেকে দেখেছিস কি হাল চেহারা আর এসব কি আসার সময় কাকিমা বললো কাউকে রুমে আসতেও দিস না কেনো এমন করছিস এভাবে তো ডিপ্রেশনে চলে যাবি
আমি: নিশ্চপ
সিনহা: আদিবা,,,,আমার দিকে তাকা,,,,,কেনো এমন বাচ্চামু করছিস
আমি: তো কি করবো আজ কাল নিজেকেই অসয্য লাগে আমার পারছি না নিজেকে নিজেই বহন করতে ( বসা থেকে উঠে দাড়ালাম)
সিনহা: কুল,,,,,, আচ্ছা শোন
আমি: কি শুনবো তুই বল কি শুনবো,,,,,
সিনহা: কেনো করছিস বুঝার চেষ্টা কর দেখ তুই কি চাস না তুই ঠিক হয়ে আবার নিজের সংসারে ফিরে যেতে
আমি: আমার সংসার ( হাসতে হাসতে)
সিনহা: কেনো তোর সংসার নেই এটাই বুঝাতে চাচ্ছিস
আমি: কখন সংসার ছিলোই না যা ছিলো লোক দেখানো,,,
সিনহা: এদিকে তুই এসব পাগলামু করছিস আর শুভ ভাইয়া তোকে পাওয়া অপেক্ষায় দিন গুনছে বুঝার চেষ্টা কর..!
আমি: আমাকে পাওয়ার দিন হাহা দেখ গিয়ে প্রমিকের সাথে কোথাও গিয়ে পড়ে আছে
সিনহা: আদিবা উনি তোর হাসবেন্ড হয় কি বাঁজে বকছিস ভুলে যাস না তোদের মাঝে ও সম্পর্ক আসে
আমি: সম্পর্ক কোন দিনও ছিলো না আর কোন দিন হবে না আমি উনারে ঘৃনা করি ঘৃনা,,,,,
সিনহা: তাহলে আমার প্রশ্নের উওর দে সম্পর্ক না থাকলে বেবি আসলো কোথায় থেকে দেখ উড়ে উড়ে তো আর আসবে না তাই না,,,,
___সিনহার কথা শুনে নিজের মাঝে প্রশ্নটা ঘুরপাক খেতে লাগলো,,,
সিনহা:বল এখন চুপ যে,,,,
আমি ভাবতে ভাবতে জানালার পাশে এসে দাড়ালাম
আমি: ঠিকি তো বলছে তাহলে বেবি আমার তো কিছু মাথায় ডুকছে না কেমনো সম্ভব শুভ সাথে আমার জানা মতে কোন সম্পর্ক হয়নি তাহলে কেমনে কি..? ( বিড় বিড় করে)
সিনহা: কি হলো বল এড়িয়ে যাচ্ছিস কেনো
আমি: জানি না জানি না জানি না ( চিল্লিয়ে) ভাবতে পারছি না মাথা যন্ত্রনায় ফেঁটে যাচ্ছে । তুই যাবি এখান থেকে ( রেগে)
সিনহা: ওকে ওকে বলতে হবে না,,যাচ্ছি আমি বাট একটু বুঝার চেষ্টা কর তোর জন্য কেউ একজন অপেক্ষা করছে হুম
___ কথাটা বলে সিনহা চলে গেলো,,,,,আমি গিয়ে বিছানায় বসে পড়লাম…..!
রাত প্রায় ১১:৩০ বাঁজে ঘুম আসছে না বার বার মাথা সিনহার প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে,,,,, মাথাও যন্ত্রনা করছে না আর ভালোলাগছে না বিছানা থেকে উঠে এসে বারান্দায় দাড়ালাম….
আজ আকাশ ভরা তারার মেলা সাথে চাঁদের আলো চারপাশে ঝগঝগে লাগছে সাথে হালকা বাতাস নিমেশে মনটা ভালো হয়ে গেলো,,,,
কিছুক্ষন বারান্দায় দাড়িয়ে পরিবেশটা উপভোগ করে রুমের দিকে হাঁটা দিবো ঠিক তখনি চোখ পড়লো নিচে
আমি: ওখানে এতো আলো কেনো,,,,
বারান্দা থেকে নেমে নিচে এসে গেইট খুলে একপা দুপা করে রাস্তার মাঝখানে এসে দাড়ালাম রাস্তার চারপাশে মোমবাতি সহ গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সাঁজানো ঠিক মাঝ খানে লেখা….!
আমি: হ্যাপি বার্ডে আদিবা….!আমার বার্ডে ও নো ভুলেই গেছিলাম বাট এসব এখানে কে করেছে,,,
___চারপাশে তাকাতে লাগলাম সাথে ডাকাডাকি করতে লাগলাম।
আমি: কই কাউকে তো দেখতে পাচ্ছি না…!
সামনের দিকে এক পা করে এগিয়ে যেতে লাগলাম। আচমকা বাতাস বয়তে লাগলো চারপাশে মোমবাতি গুলো নিভিয়ে যেতে লাগলো,,,,
আমি: এমা সব মোমবাতি তো নিভে যাচ্ছে…
__নিভিয়ে যাচ্ছে যেতে দাও এই চাদঁনি আলোতেই না হয় তোমার মিষ্টি মুখ-খানা দেখবো…!
হঠাৎ পিছন থেকে কথাটা ভেসে আসলো পিছনে তাকাতেই দেখি একটা মোমবাতি হাতে নিয়ে এগিয়ে এসে হাঁটু গেরে বসলো….
আমি: আপনি…! তার মানে এসব …
শুভ: Many Many Happy Returns off the day My princess….
অনেক গুলো ফুল আমার দিকে ধরলো…!
শুভ: তোমার বার্ডে ছোট একটা আয়োজন,,,,, নাও ( ফুল গুলো এগিয়ে দিয়ে)
ফুল গুলো হাতে নিতেই শুভ খুশি আত্নহারা হয়ে গাল ভরতি হাসি নিয়ে বসা থেকে উঠে দাড়ালো।
আমি ফুল গুলো উচুঁ করে ধরে ছেড়ে দিলাম সব গুলো ফুল মাটিতে পড়ে গেলো।
দাঁতে দাঁত চেপে ফুলগুলো পায়ের নিচে পিশতে লাগলাম…
আমার এমন কান্ড দেখে শুভর
মুখটা নিমেশো কালো হয়ে গেলো!…
আমিঃ……….
( চলবে)