#গল্পঃ_ভিলেন
লেখিকাঃ আদিবা ইসলাম আঁখি
পর্বঃ ২৫/ শেষ পর্ব
———————★★———————–
★★ পরের দিন সন্ধায় বাসায় চলে আসলাম…. বিছানায় হেলান দিয়ে সুয়ে আনমনে বাইরে দিকে তাকিয়ে আছি তখনি রুমে শুভ আসলো…..
শুভ: এখন কেমন আছে…
আমি: নিশ্চপ….
শুভ: আদিবা……
শুভ আমার হাতে হাত রাখতেই শুভর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম….
হঠাৎ শুভ আমার কথা শুনে চমকে উঠলাে..!
আমি: আর কখন আমি হাঁটতে পারবো না তাই না…?
শুভ: কি বলছো যাতা…
আমি: আম্মু আমায় সব বলেছে…..
শুভ: কিহহ… কি বলছে?
আমি: এই যে আমি কোন দিন হাঁটতে পারবো কিনা সন্দেহ…!
শুভ: পাগল মেয়ে কেনো হাঁটতে পারবে না নিশ্চয় পারবে একটু নিজেকে সময় দাও নিজের মনকে দূর্বল করো না…. তুমি এভাবে হার মেনে নিলে কি করে চলবে বলো,,,,
আমি: হুমমম ( মাথা নিচু করে)….
শুভ: আচ্ছা রেস্ট নাও কেমন…
শুভ চলে যেতে পিছন থেকে ডাক দিতেই থেমে গেলো….
আমি: সরি….
শুভ: কি জন্য….?
আমি: সেই দিন ভুল বোঝার জন্য…. নদী তো তুষারকে লাভ করতো কিন্তুু আমি ভাবতাম আপনাকে ভালোবাসতো…!
___শুভ আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার পাশে বসলো….
শুভ: বরাবরি এই পাগলিটাই ভালোবেসে গেছি আর কাউকে নয়…!
তোমার মনে আছে সেই কলেজ লাইফে গেটের সামনে হঠাৎ ধাক্কা হয়তো তোমার মনে নেই কারন তুমি তো আমায় দেখার আগেই সিনহা তোমায় টেনে নিয়ে চলে গেছিলো বাট সেইদিন আমার মনের কোনে তোমার মুখটা গেঁধে গেছিলো আর কোন দিন ভুলতে পারনি তারপর তো ……..!
হঠাৎ শুভ বসা থেকে উঠে জানালার কাছে দাড়ালো…..
শুভ: জানো মন থেকেই আমি তোমায় বিয়েটা করেছিলাম…. তোমার এই মায়া মাখা মুখ খান দেখে বার বার প্রেমে পড়ে যেতাম….! তোমার মনে আছে আমাদের বাসর রাতে কিছু ভিডিও তোমায় দিছিলাম পরের দিন সকালে….
আমি: হুমম বাট….
শুভ: সেইদিন তোমার বদঅভ্যসটা তোমায় আমার কতটা কাছে এনেছিলো আমি নিজেকে কন্টল করতে পারিনি সেই বিশ্বাস করো অনেক চেষ্টা করেছিলাম বাট পারিনি যেনো এক নেশা বার বার তোমার কাছে ঠেলে দিচ্ছিলো….বুঝতে পারিনি কি করে তোমায় বিষয়টা বলবো তাই আগে কিছু ঘটনা ভিডিও করে তোমায় দেখাই যাতে বিষয়টা ক্লিয়ার হয়…….
আমি: তার মানে…. ( হা করে তাকিয়ে)
শুভ: হুম…. খুব ভালোবাসি তোমায় কখন চাইনি হারাতে বাট আমাদের বউভাতে সেইদিন তুষার আসলো তুষার কে দেখে তোমার কৃত্তিকলা গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠলো…চোখ থেকে ভালোবাসার পর্দা সরে গিয়ে ঘৃনার পর্দা জন্মালো বাট তোমার প্রতি একটা টান থেকেই যেতে নিজেকে খুব কন্টল করে তোমার উপর অত্যাচার করতাম পরে কিন্তুু ঠিকি কষ্ট পেতাম তবুও বন্ধুর জন্য এটুকু করতেই হতো…..
সেইদিনের কথা মনে আছে সাদে হঠাৎ বৃষ্টি
আমি: হুম….
শুভ: আমি জানতাম তোমার বৃষ্টি অনেক প্রিয়…. সেইদিন আমি তোমায় বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলছিলাম তাই তোমার মনটা ভালো করার জন্য ছোট একটা আয়োজন সেইদিন তুমি যদি নিচে দিকে তাকাতে সবটা বুঝতে বাট তুমি এত খুশি ছিলে যে সবটা এড়িয়ে গেছে তাতে অবশ্যই ভালোই হয়েছে…..! কিন্তুু সমস্যা হলো তুমি যখন হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরলে আমি তোমার মুখটা দেখেই বুঝেছিলাম কিছু একটা হয়েছে তখনি লুকিয়ে তোমার টেস্ট পেপার দেখে জানতে পারলাম সেই রাতের ভালোবাসার চিহৃ হিসেবে তোমার পেটে আমারদের ভালোবাসা বেড়ে উঠছে,,,, বিয়েটা ভেঙ্গে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিবো ঠিক তখনি আংকেল কল দিলো তারপর সেখানে ছুটে গেলাম সেখানে গিয়ে সবটা শুনে বিশ্বাসস করতে পারছিলাম না তারপর তো সবটা তোমার নিজের চোখে দেখা…….!
___শুভ কথা গুলো শেষ করে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বিছানায় বসে পড়লো…..
আমি: এত কিছু একবার বলার প্রয়োজন বোধ করেন নি…
শুভ: বলার চেষ্টা করছিলাম তুমি শুনার প্রয়োজন বোধ করো নি….
___কষ্ট করে আসতে করে হাঁটু গেরে বসে শুভকে জোরিয়ে ধরে কেঁদে দিলাম…..
শুভ: আরে পাগলি কাঁদছো কেনো…
আমি: আই এম সরি….
শুভ: ইটিস ওকে…!
আমি: আই লাভ ইউ শুভ…
শুভ: আই লাভ ইউ টু আদিবা…!
দেখে এই আর কান্না নয়….
আমি: বুঝতে পারিনি আপনাকে ক্ষমা করে দেন….
শুভ: তুমি তো কোন ভুল করোনি সব ভুল আমি করেছি ওই দুই বন্ধু নামে শয়তান ভিলেনদের বিশ্বাস করে….
আমি: হুমম..! ওরা দুটো তো একটা শয়তান খুনি ছিলো… কিন্তুু আসল ভিলেন তো আপনি সব তো আপনি খেলেছেন শয়তান লোক বাঁজে লোক অনেক কষ্ট দিয়েছেন….
শুভ:এএএএ আরে আরে….
___ শুভকে কিল ঘুষি মারতে শুভ হাসতে হাসতে আমার হাতটা ধরে বুকে জোরিয়ে নিয়ে আমার গালে হাত দিয়ে ঠোঁট এগিয়ে আনতেই ….
আমি: কি করছেন…
___শুভ আমার ঠোঁটের কাছে আসতেই চিল্লানি দিলাম….
আমি: আহহহহ…
শুভ: কিহ হলো ( ভয় পেয়ে)
আমি: পায়ে লাগছে তো…
শুভ: তাই না পা তো সোঁজায় আছে…
আমি: হি হি হি…..
___ হঠাৎ শুভ আমার ঠোঁটের মাঝে তার ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো….ভালোবাসার এক উষনো ছোয়া পেয়ে দুজনে হারিয়ে গেলাম…..!
★★ প্রায় বছর খানিক পর….
আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকী… বাসায় ছোট করে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে…..!
শুভ: আদিবা কই তুমি…
আমি: যায়…( চিল্লিয়ে)
নিধি: মাম্মা তোমার সাহত তো কম না…( কোমড়ে হাত দিয়ে)
আমি: কি করছি আমি…?
নিধি: ৭ দিন হনি অর্পরেশন হয়েচে তুমার আর তুমি হাঁতচো ( চোখ কপালে তুলে)
মা: আমার ছোট গিন্নি ঠিক বলেছে…! বউমা এটা কিন্তুু ঠিক নয়…
আমি: মা তুমিও এই পিচ্চির কথায় নাচচ্ছো আমি একটু ঠিক আছি…
নিধি: মাম্মা তুমি পঁতা… কতা তুনো না….( অভিমান করে)
___নিধি অনেকটাই ছোট তাই কথা গুলো তুতঁলিয়ে আসে….!
শুভ: কি হয়ছে আমার মামুনি মুখ বাঁকা করেছে কেনো…
নিধি: তুমার বৌ পঁতা কতা তুনে না….!
___নিধির কথা শুনে তিনজন হেসে দিতেই নিধি ধমক দিলো…
নিধি: তুপপপপ…. তবাই বাঁজে পঁতা পঁতা পঁতা…
শুভ: আরে আরে আমার মেয়েটা কই যায় রাগ করে আরে দাড়া…
____ নিধি দৌড় দিলো শুভ পিছন পিছন দৌড় দিলো….
মা: পাগল দুটো…
আমি: হুম মা..
মা: এসো আমি হেল্প করি…
আমি: মা পারবো তুমি যাও
মা: এসো বলছি…
আমি: আচ্ছা বা বা চলো…
____ আমি মা নিচে চলে আসলাম সবার সাথে আড্ডা দিতে লাগলাম….
শুভ: এই দাড়া আর পারছি না মামুনি শোন..
নিধি: হি হি হি পাপা তুমি বুইড়া হয়ে গেচে( মুখে হাত দিয়ে)
শুভ: আমি বুইড়া( হা করে)
আশা: ভাইয়া তুমি বুইড়া ( হাসতে হাসতে)
শুভ: তুই চুপ কর….. আর মামুনি তুই এদিকে আয় চকলেট আছে অনেক…
নিধি: সত্ত্যি…
শুভ: হুমমম আয়…
নিধি: তুমি অনেক ভাল…
শুভ: তাই বুঝি…
___ শুভ নিধিকে কোলে নিয়ে নিচে আসলো…..
একটু পর সবাই চলে আসলো….
আমি আর শুভ কেক কাঁটলাম সবাইকে খাইয়ে দিলাম….
হঠাৎ বাইরে থেকে একটা লোক এসে বলতে লাগলো…
লোক: এখানে মিঃ শুভ আহাম্মেদ তাজ আর মিসেস আদিবা ইসলাম কে…
শুভ: জ্বি আমি কেনো?
লোক: একটা পার্সেল আছে এই নিন..
শুভ: পার্সেল আমাদের…
___ শুভ পার্সেলটা নিতেই লোকটা চলে গেলো…
আমি: কত বড় বক্সটা…! খোলো না একটু…
শুভ: হুম….
___ শুভ বক্সটা খুলতেই অবাক হলাম আমার আর শুভ একটা ছবি বড় এলবামে সাথে নিচে সুন্দর করে লেখা “শুভ বিবাহ বার্ষিকী”…. সাথে কিছু খেলনা আর ফুল…
শুভ: চিঠি…
আমি: দাও তো দেখি…!
___ চিঠিটা হাতে নিয়ে পড়তে লাগলাম…..
তোমাদের বিবাহ বার্ষিকী তে অনেক অনেক শুভেচ্ছা এভাবে বাকীটা দিন গুলো দুজনে ভালো থেকে সব সময় এটায় প্রার্থনা আর তোমাদের মেয়ে নিধির কে তো এখন দেখা হলো না তবুও নিধির জন্য অনেক ভালোবাসা ও আদর রয়লো কিছু খেলনা পাঠিয়েছি সদরে গ্রহন করো…..! ভেবেছিলাম তোমাদের বিবাহ বার্ষিকীতে গিয়ে উইশ করবো বাট কোন মুখে গিয়ে দাড়াবো বুঝতে পারছিলাম না তাই আর যাওয়া হলো না প্লিজ আমাদের ক্ষমা করো….
আমরা দুজনীই পরশুদিন জেল থেকে ছাড়া পেয়েছি কাল বিয়ে করে ফেলছি তোমরা সব ভুলে আমাদের জন্য দোয়া করো আর হ্যাঁ আগামী কাল আমরা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি …!
তোমরা দুজন ঠিক এভাবে এক সাথে থেকো ভালো থেকো আর নিধিকে আগলে রেখো…
ইতি,
তুষার & নদী
চিঠিটা পড়ে শুভর দিকে তাকালাম শুভ আমার কাঁধে হাত রাখলো…
মা: যাক অবশেষে সব ঠিক হলো…
আম্মু: যা বলেছেন…শান্তিতে এখন নিশ্বাস নিতে পারবো….
বাবা: কিন্তুু ওদের জন্য খারাপও লাগছে….
আমি: হুমম বাবা সহমত..!
শুভ: সবারি লাগছে বাট ওরা ওদের মতো ভালো থাক আর আমাদের মতো…
আমি: হুমম….!
হঠাৎ নিধি বলে উঠলো….
নিধি: তবাই তুপ তুপ…( হাত তুলে)
আব্বু: গিন্নি কিছু বলবে…
নিধি: হ্যাঁয়…
আমি: কি বলবি সোনা…
নিধি: মাম্মা আর পাপা তুনো এবার আমার এত্তা গিফট চাই…
শুভ: কি গিফট..?
নিধি: বলো দিবা..?
শুভ: হুমমম দিবো….
নিধি: আমাল এত্তা ভাই চাই…
___ আমি শুভর দিকে হা করে তাকালাম… এদিকে সবাই মিটি মিটি হাসছে…!
শুভ: এইই তোরে এই পাকা পাকা কথা কথা কে শুকালো…
নিধি: ছোট মনি…( আগুল দিয়ে দেখালো)
আশা: এমা না না আমি কিছু বলিনি…
শুভ: আশা তুই এসব…
নিধি: মিচা মিচা….ছোট মনি মিচা বলছে…
আশা: আমি কিছু বলিনি …
নিধি: মিচা মেয়ে..! পাকা মেয়ে…
আশা: তাই না দাড়া তোকে দেখাচ্ছি…
__ নিধি দৌড়াচ্ছে আশা পিছন পিছন…. সবাই যার যার মতো গিয়ে বসে পড়লো…
আমি: অবশেষে সব বিপদ কাঁটিয়ে একটা সুন্দর মূহুত দেখা পেলাম…তুমি এভাবে আমার পাশে থেকো সারাটা জীবন…!
শুভ: হুমম কথা দিচ্ছি সব সময় থাকবো…
___ আমি শুভকে জোরিয়ে ধরলাম শুভ আমায় শক্ত করে বুকের সাথে মিশে নিলো…!
সমাপ্ত
{ ভুল এুটি গুলো ক্ষমা করবেন আর আশা করি গল্পটা সবার ভালো লেগেছে যদি ভালো লেগে থাকে কমেন্ট করে জানাবেন…!