ভুলিনি তোমায় পর্ব-২৩

0
3418

#ভুলিনি_তোমায়?
#Nishat_Tasnim
#পর্ব :২৩

আমি নাক ফুলিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনি হেসেই চলছেন,থামার কোনো নাম নেই।একটুপর উনার দিকে তাকাতেই আমি থমকে গেলাম,উনি হাসার সাথে সাথে উনার গাল ফুলে যাচ্ছে,ওয়াও কি কিউট..!!আমি একদৃষ্টিতে উনার গালের দিকে তাকিয়ে রইলাম,উনি বিষয়টা খেয়াল করতেই হাসি থামিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললেন,”কী?”

আমি উনার একদম কাছে গিয়ে উনার গাল ছুঁয়ে দিতেই উনি হাত ধরে ফেললেন।

—“আরেকবার হাসেন তো?”

—“কেনো?”

—“আরে আপনি হাসলে আপনার গাল টা না কী সুন্দর করে ফুলে যায়।”

উনি গম্ভীর হয়ে বললেন,,”যাও।”

আমি অবাক সুরে বললাম,,”কী হয়েছে?আপনি আবার এমন গম্ভীর হয়ে গেলেন কেনো?”

উনি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বললো,,”আমি কিন্তুু কিছু ভুলিনি।”

আমি কপাল কুচকে বললাম,,”মানে?কী ভুলেন নি?”

—“এত দ্রুত ভুলে গেলে?কাল রাতে কী হয়েছিলো ভুলে গিয়েছো?যাও এখান থেকে।”

আমি অবাক হয়ে বললাম,,”একটু আগেই তো আপনি আমার সাথে,,”

—হ্যা, কী তোমার সাথে?বলো,তোমার সাথে কী?দু,চারটা হেসে কথা বলেছি বলে আমি সব ভুলে গিয়েছি?তোমার কী মনে হয় আমি ভুলে যাবো?ভুলেও না,,আমি তো শুধু আমার বন্ধুদের জন্য তোমার সাথে আগের মতো বিহেভ করেছি।আমি চাই নি যে আমার ফ্রেন্ড সার্কেলের কেউ আমাদের এসব জানুক।তুমি চলে যাও আমার সামনে থেকে, তোমাকে দেখে আমার রাগ লাগতেছে।”

কথাগুলো উনি রেগে কিছুটা আওয়াজ করে বললেন।আমি কিছু বলতে নিতেই উনি হাত দিয়ে থামিয়ে দিলেন।নিমিষেই আমার মন টা ভেঙ্গে হাজার খন্ডে পরিনত হয়ে গেলো।ভাঙ্গা মন নিয়ে দৌড়ে ছাদে চলে আসলাম।

চারদিকে শো শো করে বাতাস বইছে,আকাশ টা কালো অন্ধকার হয়ে আছে।আকাশেরও মনে হয় আমার মতো মন খারাপ। আমার চোখে পানি টলমল করছে,যে কোনো সময় পরে যেতে পারে। আকাশের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলাম যে,যে কোনো সময় বৃষ্টি হতে পারে।

আমার এখন খুব কান্না পাচ্ছে,ইচ্ছে করছে,খোলা আকাশের নিচে গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিয়ে কান্না করি।হাটুগেড়ে নিচে বসতেই শরীরে গুড়িগুড়ি বৃষ্টির ফোটা পড়তে লাগলো।ধীরে ধীরে বৃষ্টির পরিমান বাড়তে লাগলো।জোরে জোরে বৃষ্টি পড়তেই, আমার মনের ইচ্ছেটা কে ধমিয়ে রাখতে ইচ্ছে করলো না।আমিও হাটুতে মুখ গুজে কান্না করতে লাগলাম।বৃষ্টির সাথে সাথে আমার চোখের পানিগুলো মিশে যেতে লাগলো। আওয়াজ করে কান্না করাটা ভুলে গিয়েছি,তাই তো আর গলা ফাটিয়ে কান্না করতে পারতেছি না। প্রায় ২০ মিনিটের মতো বৃষ্টিতে ভিজতেছি,এদিকে জামা টা ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে গিয়েছে। আজ আমার নিয়তির উপর খুব রাগ হচ্ছে।

হঠাৎ করে কেউ আমাকে জোরে টান দিয়ে দাড় করিয়ে গাল একটা চড় বসিয়ে দিলো।বিষয়টা এত দ্রুত হয়ে গেলো যে আমার বুঝতে অনেকটা সময় লেগে গেলো।আমি গালে হাত দিয়ে সামনের ব্যক্তির দিকে চোখ তুলে তাকালাম।ব্যক্তিটিকে দেখেই আমি অবাক হয়ে গেলাম।আমার সামনে আর কেউ নয়,স্বয়ং এহসান দাড়িয়ে আছেন।

উনি রক্তিম চোখে চেঁচিয়ে বলে উঠলেন,,”তুমি এখানে!আর আমি তোমায় কোথায় না খুজেছি।এখানে, কী করছো?বৃষ্টি চোখে পড়ছে না,তাও কেনো বসে আছো?আন্সার মি, ড্যাম ইট..!!”

উনাকে এমন চেঁচাতে দেখে আমি ঠোঁট ফুলিয়ে জোরে জোরে কান্না করে দিলাম।আমাকে কান্না করতে দেখে উনি চোখ বন্ধ করে কপালে হাত দিয়ে কিছু একটা ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লেন।

—“কান্না থামাও,একদম চুপ করো।এন্ড
ঠোঁটে আঙ্গুল দেও।”

আমি উনার কথামতো ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে দিলাম।উনি আমার হাত ধরে টেনে সিড়িঘরে নিয়ে আসলেন।আমি তখনও কেঁদেই চলছি,খুব কষ্ট লাগলো এহসান আমাকে মেরেছে বলে।এত দিন আমাকে একটা ধমক পর্যন্ত দেয় নি,অথচ সৌরভের কথা বলতেই আমার গায়ে হাত পর্যন্ত তুলে ফেললো।

আমি উনার হাত থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে নিতেই উনি শান্ত কন্ঠে বললেন,,”তুমি জানো, তোমাকে ঘরে না দেখে আমার অবস্থা কেমন হয়েছিলো?আমি পাগলের মতো তোমাকে খুঁজতেছিলাম।ইভেন, মেইন রোড পর্যন্ত গিয়ে খুঁজে এসেছি।আমি ভেবেছিলাম আমি তোমাকে বকেছি বলে তুমি হয়তো চলে গিয়েছো।তোমাকে খুঁজে না পেয়ে আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো।শুধু একটা কথাই ভাবতে লাগলাম,এ বৃষ্টির মধ্যে তুমি কই আছো,ঠিক আছো তো?পাগলের মতো তোমাকে খুঁজতে ছিলাম। হঠাৎ ছাঁদের কথা মনে পড়তেই দৌড়ে এসেছি,এসে দেখি তুমি ছাঁদে বসে বৃষ্টিতে ভিজতেছো।এটা দেখে মেজাজ টাই খারাপ হয়ে যায়।নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি নি,তাই তোমার গায়ে হাত তুলে ফেলি।জানো আজ একটুর জন্য আমি এক্সিডেন্টের হাত থেকে বেঁচে যাই।”

শেষের কথা শুনে আমার বুক ধক করে উঠলো।নিজেকে অপরাধী মনে হতে লাগলো,আজ আমার জন্য যদি উনার কিছু হয়ে যেতো?আর কিছু ভাবলাম না আমি দৌড়ে উনাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কান্না করতে লাগলাম। উনি কিছু বললেন না।
আমাকে সহ উনি নিচে চলে আসলেন।

উনি তোয়ালে দিয়ে আমার মাথা মুছতেছে আর আমি কান্না করতেছি।উনি এ পর্যন্ত আমার বহুবার চুপ করতে বলেছেন। উনি এবার জোরে ধমক দিয়ে বললেন,,”চুপ,আরেকবার কান্না করলে আরো দুইটা দিবো।”

উনার ধমক শুনে আমি চুপ করলাম না উল্টো বাচ্চাদের মতো নাক টেনে টেনে অভিযোগ করে বললাম,,”আমি জানি তো এখন আপনি আমাকে আবার মারবেন।আপনি জানেন,আপনি একটা খারাপ মানুষ।আপনি জানেন আপনি কত পঁচা লোক?”

উনি মুচকি হেসে বললেন,,”না,জানি না।তুমি বললে তো জানবো।”

আমি ঠোঁট ফুলিয়ে বললাম,,”আমি আপনাকে সৌরভের কথা বলতেই আপনি আমাকে বকা দিয়েছেন আবার মেরেছেন।এখন আবারও মারবেন বলতেছেন।অথচ আগে আপনি আমার সাথে কত সুন্দর সুন্দর কথা বলতেন,আমাকে এটা শিখিয়ে দিতেন, ওটা শিকিয়ে দিতেন।ঘুম থেকে তুলে দিতেন আবার আমার সাথে নামাজও পড়তেন। অথচ সৌরভের জানতেই, আপনি বদলে গিয়েছেন, শুধু আমাকে বকেন,মারেন,,একটুও আদর করেন না।”

উনি তোয়ালে টা বিছানায় রেখে আমার সামনে বসে বললো,,”তাই?”

আমি মাথা নাড়িয়ে ঠোঁট উল্টে বললাম,,”তা নয় তো কী?”

উনি ঠোঁট কামড়ে নিঃশব্দে হাসলেন,,আমার দিকে ঝুঁকে বললো,,”আমি কী তোমাকে প্রথম দিন থেকেই বকতেছি,মারতেছি?”

আমি কপাল কুচকে বললাম,,”না তো,কেনো?”

উনি দাত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করলেন,,”তাহলে কেনো বললে যে আমি যেদিন থেকে সৌরভের কথা জেনেছি সেদিন থেকে তোমাকে বকাবকি/মারামারি করতেছি?”

আমি গোলগোল চোখ করে বললাম,,”মানে?প্রথমদিন মানে?”

উনি খাটের সাথে হেলান দিয়ে বললো,,”আমি প্রথম থেকেই তোমার ব্যাপারে সব জানতাম।তুমি আমার কাছে খোলা বইয়ের মতো।”

আমি অবাক হয়ে বললাম,,”কী?আপনি সব জানতেন?”

উনি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললেন,,”হ্যাঁ।”

আমি কৌতুহলী হয়ে বললাম,,”তাহলে কালকে ওমন রিয়েক্ট কেনো করেছিলেন?ওয়েট,, ওয়েট,,,আপনি কীভাবে জানলেন?”
.
.
.
চলবে???