ভুলিনি তোমায় পর্ব-২৬

0
3127

#ভুলিনি_তোমায়?
#Nishat_Tasnim
#পর্ব :২৬
.
উনি হটাৎ আমার কানে ফিসফিস করে কিছু বলতেই লজ্জায় আমার কানের লতি লাল হতে লাগলো।আমি হাত দিয়ে শক্ত করে চাদর খামছে ধরলাম।লজ্জামাখা কন্ঠে উনাকে কিছু বলতে নিচ্ছিলাম তার আগেই উনি আমাকে উষ্ণ পরশে থামিয়ে দিলেন।নিমিষেই এক ফালি স্বর্গীয় সুখ প্রবাহিত হতে লাগলো পুরো ঘরময়।আমি চেয়েও উনাকে বাধা দিতে পারলাম না,উনি যেনো আজ বাধা মানতে নারাজ।কয়েকবার বাধা দিয়ে পারলাম না, একটা সময় আমিও উনার স্পর্শে সাড়া দিতে লাগলাম।

.

নিস্তব্ধ রাত,চারদিকে ঘন অন্ধকার নেমেছে রাতের শহরটিতে।সাথে জনমানবশূন্য পরিবেশ। বাহিরে ঝিরিঝিরি করে অবিরাম বৃষ্টি পড়ছে,প্রকৃতি আজ তার মনোভাব বিদুৎ চমকানোর মাধ্যমে পরিবেশকে জানিয়ে দিচ্ছে। হালকা বাতাসের সাথে বৃষ্টির ফোটা ঘরের ভেতর এসে শরীরটাকে কেমন শীতল স্পর্শ করছে। বাতাসের এই স্পর্শ শরীর স্পর্শ করতেই আমাদের ভেতরের দূরত্ব কমে আরো ঘনিষ্ঠ হতে লাগলো। হারিকেনের আলো নিভু নিভু করছে, অনেকটা ঘোরের মধ্যেই কেটে গেলো বর্ষনের রাতটি।
.

সকালের স্নিগ্ধ ভোরের আলো ঘরের টিনের দেওয়ালের ফুটো দিয়ে রুমে প্রবেশ করতেই ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে লাগলো দুজনের।কপাল কুচকে আসলো আমার,চোখ টিরিবিরি করে ধীরে ধীরে মেলতেই আবিষ্কার করলাম,উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছেন, দুজনই এক চাদরের ভেতর..!!” সাথে সাথে আমার চোখ চানাবড়া হয়ে গেলো,আমি নড়ে চড়ে উঠতে নিলাম,তখনই টের পেলাম,শরীরে কোনো বস্ত্রই নেই।এবার যেনো আমার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম,আমি দ্রুত নিজেকে চাদরের ভেতর ঢেকে ফেললাম।মাথাটা কেমন ধরে আছে,মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করতেই সব মনে পড়ে গেলো।আমি দ্রুত চোখ খুলে উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম। আচমকা এমন হওয়াতে উনি হকচকিয়ে গেলেন,আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন? আমি সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।

উনি অবাক হয়ে নড়তেই বুঝলেন যে উনি স্বাভাবিক অবস্থাতে নেই,সাথে সাথে মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে লাগলেন। কয়েক মুহূর্ত পর চোখ খুললেন,উনার চোখ স্পষ্ট অনুতপ্ততার রেশ ফুটে ওঠেছে।

–“না্ নায়লা,বিশ্বাস করো,আমি ওসব ইচ্ছে করে করি নি,আমি তো তোমাকে সময় দিতে চেয়েছিলাম।তোমার এক্সামের আগে আমি তো কখনই না ।আমি জানি না, কীভাবে যেনো,,”

এটুকু বলেই উনি মাথায় হাত দিয়ে, মাথা নিচু করে ফেললেন।কয়েক সেকেন্ড পর ক্ষীন কন্ঠে নিজেই নিজেকে বললেন,,”আমি বুঝতেছি না,আমার কী হয়েছে?বারবার কেনো ভুল করে ফেলতেছি?ড্যাম ইট..!!” কথাটা শেষ করেই উনি নিজের কপাল চাপড়াতে লাগলেন।
.

সারারাত বৃষ্টি হওয়াই রাস্তাটা কেমন পিচ্ছিল পিচ্ছিল দেখাচ্ছে। আমি উনার থেকে নিরাপদ দূরত্ব রেখেই হাটতেছি। কিছুক্ষণ আগেই রওনা দিয়েছি বাড়ীর উদ্দেশ্য। উনার সাথে এ পর্যন্ত আমার একটা কথাও হয় নি,উনি অনেক কথাই বলেছেন আমি চুপ করে ছিলাম।আমার এখনও বিষ্ময়ের রেশ কাটেনি। ভেতরে ভেতরে গুমড়ে মরছি,মনের ভেতর কেমন অশান্তি বিরাজ করছে। মষ্তিষ্কে শুধু একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে,”যা হয়েছে,তা ঠিক হয় নি।”
কেনো যেনো মনের ভেতর এক অজানা ভয় হচ্ছে,,মনে হচ্ছে উনিও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। নিজের সম্পর্কে যতটুকু বুঝেছি তা হলো আমি উনার প্রতি দূর্বল, ভীষণ দূর্বল,উনি যদি সৌরভের মতো আমাকে ছেড়ে দেন তাহলে কিন্তু আমি শেষ হয়ে যাবো। কিছু পুরুষ তো চাহিদা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে,একবার চাহিদা মিটিয়ে নিলে শেষ উনারা সাথে সাথে রুপ বদলে ফেলে। এহসানকে যতটুকু বুঝি , চিনি উনি এমন নয়।আবার সৌরভও তো এমন ছিলো না পরে তো ঠিকই বদলে গিয়েছে।উনি যে বদলাবেন না তার কী নিশ্চয়তা আছে? খুব বেশি ভয় হচ্ছে, উনিও কী সবার মতো হবেন?

.

চারদিকে পিনপিন নিরবতা,কারো মুখে কোনো কথা নেই,মাঝে মাঝে দুএকটা সাইকেলের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। রাস্তার একপাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছি আমরা দুজন,,দুজনের মনটা ভীষণ খারাপ। ওখান থেকে সব ঠিকঠাক করে বের হয়ে, তখনকার নদীর পাড়ে গিয়েছিলাম।আসলে কাল তো বৃষ্টির জন্য আমরা দৌড়ে চলে গিয়েছিলাম,আর তখন তো আর উনি বাইক টা নিতে পারেন নি,তাই ওখানে গিয়েছিলাম বাইক নিতে। কিন্তুু গিয়ে দেখলাম ওকানে কিছুই নেই,উনি আশপাশ খুজেও কোথাও উনার বাইক পেলেন না। হতাশ কন্ঠে বলেছিলেন, বাইক টা চুরি হয়ে গিয়েছে,শখ করেই কিনেছিলেন। বিশেষ করে আমাকে কলেজে পোঁছে দেওয়ার জন্য। আহত হয়ে ফিরে আসলাম। পকেট থেকে ফোনটা বের করেছিলেন রেদোয়ান ভাইয়াকে ফোন দিবেন বলে,কিন্তুু ফোন বের করতেই দেখলেন ব্যাটারি ডেড। মোটকথা সব মিলিয়ে উনার মন-মেজাজ খুব একটা ভালো না। চুপচাপ দুজনই হেটে চলছি, উদ্দেশ্য স্ট্যান্ড থেকে একটা গাড়ী নিয়ে বাড়ী যাবো।
.
বারান্দায় দাড়িয়ে আছি, দৃষ্টি আমার আকাশপানে।ভেজা চুল নিঃসৃত টুপ টুপ পানি আধভেজা করে তুলেছে আমার পিঠের অর্ধাংশ। টাওয়াল না থাকায় চুলের পানি ঠিকমতো নিতে পারি নি,তাই জামাসহ পিঠের অর্ধাংশ ভিজে টুইটুম্বুর হয়ে আছে। নিয়তি খুব অদ্ভুদ তাই না? আমি কোনোদিন কল্পনাও করি নি যে সৌরভের সাথে আমার মিল হবে না, আবার না কখনও ভেবেছি আমার লাইফে উনার মতো একটা মানুষ আসবে। একটা সময় সৃষ্টিকর্তার কাছে সবসময় অভিযোগ করতাম যে আমার জীবনে কেনো এমন করেছে?এত ট্রেজেডি কেনো?সব কিছু কেড়ে নিয়েছিলো,, আমি ভাবতাম হয়তো সৃষ্টিকর্তা আমাকে পছন্দ করে না তাই এমন করেছে।কিন্তুু আমার ধারনা ভুল,সবার জন্মের কোনো না কোনো উদ্দেশ্য থাকে,সবার লাইফ যদি এক হতো তাহলে তো হতোই।কারো কাছ থেকে যদি সবকিছু কেড়ে নেওয়া হয় তাহলে নিশ্চয় তার জন্য আরো ভালো কিছু অপেক্ষা করে। আজ আমি খুশি,আমি পরিপূর্ণ বলে।যদিও মনের ভেতর উনাকে নিয়ে ভয় আছে তাও কেনো যেনো খুশি খুশি লাগছে। আজ যদি বাবা আমাকে দেখতো তাহলে হয়তো অনেক খুশি হতো।কথাটা ভাবতেই চোখ দিয়ে এক ফোটা অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়লো। গাল বেয়ে নিচে নামার আগেই কেউ মুছে দিলো।আমি অবাক হয়ে চোখ তুলে তাকাতেই দেখলাম উনি অপরাধী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। নিজের ভাবনায় এতটা মশগুল ছিলাম যে টেরই পাই নি যে উনি কখন এসেছেন।

—” তুমি কান্না করছো?”

আমি কিছু বললাম না।উনি কয়েকমুহূর্ত চুপ থেকে আবারো বললেন যে,, “আমার সাথে কী কথা বলবে না?আচ্ছা আমার অপরাধ কী এত বড় হয়েছে যে আমার সাথে কথাও বলবে না।আমি মানছি, আমি ভুল করে ফেলেছি। আই সুইয়ার,আমি আর কখনও তোমার পারমিশন ছাড়া তোমাকে স্পর্শ করবো না। প্লিজ তাও কান্না করো না,আমার নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে।আমি বলেছিলাম কখনও তোমাকে আমার জন্য কাঁদতে দিবো না অথচ আজ দেখো আমার জন্যই তুমি কাঁদতেছো।আমার কষ্ট হচ্ছে,খুব কষ্ট হচ্ছে,আমার সাথে কথা বলো,প্লিজ। তুমি তো কেঁদে নিজের কষ্ট প্রকাশ করতে পারতেছো, অথচ আমি তো সেটাও করতে পারতেছি না।আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে,প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেও। ”

কথা বলার সময় বারবার উনার কন্ঠ ধরে আসছিলো।উনি আরো কিছু বলতে নিচ্ছিলেন তার আগেই আমি উনার বুকে হামলা দেই।এতক্ষন আটকে রাখা চোখের পানি সবগুলো নদীর স্রোতের বইতে লাগলো।উনি প্রচন্ড অবাক হয়ে স্ট্যাচু হয়ে আছেন,এদিকে আমি উনার বুকে কান্না করে নালা-নদী ভাসিয়ে দিচ্ছি। উনি একবার আমার পিঠে হাত দিচ্ছেন তো আরেকবার সরিয়ে নিচ্ছেন।আমি হাত উল্টো করে উনার দুইহাত দিয়ে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে দিলাম। এতে যেনো উনি আরো এক ধাপ অবাক হয়ে যান। ডান হাত দিয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।

উনি কাপা কাপা গলায় বললেন,,
–” কান্না করছো কেনো?”

আমি নাক টেনে বললাম,,”বাবার কথা মনে পড়েছে।”

কথাটা শুনতেই উনি ইয়া বড় নিশ্বাস ছাড়লেন।মনে হচ্ছে যেনো বুকের উপর থেকে দশ কেজি ওজনের বস্তু নামিয়ে ফেলেছেন।উনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন।কতক্ষণ যে এভাবে ছিলাম জানি না। বুঝতে পারলাম উনার ভেতরের অনুতপ্ততা অনেক টা কমে গিয়েছে।
.

সময় খুব অদ্ভুদ,চোখের পলক ফেলতেই দিনগুলো চলে যায়।টেরই পাওয়া যায় না।সেদিনের ঘটনার পর অনেকগুলো দিন কেটে গিয়েছে।দেখতে দেখতে এক্সামের লাস্ট দিনও চলে এসেছে। এই কয়েকটা দিনে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।এহসান আর আগের মতো নেই,উনি খুব বদলে গিয়েছেন। সেদিনের পর থেকে আমার সাথে উনি অনেক দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছেন। এখন আর উনাকে আগের মতো লাগে না। কেমন যেনো হয়ে গিয়েছেন।এমনিতে সব ঠিকঠাক,,আমাকে খাওয়ানো , পড়ানো সব ঠিক থাকে। শুধু কথাবার্তা টা কমিয়ে দিয়েছেন,এখন আর আগের মতো আমার সাথে দুষ্টুমি করে না,আমার আশেপাশেও আসেন না।আমিও উনার সাথে দরকার ছাড়া কথা বলি না, কেমন যেনো আমাদের সম্পর্কটা হয়ে গিয়েছে। আমি জানি উনি ইচ্ছে করেই সেদিনের জন্য আমার থেকে দূরে থাকছেন। কিন্তুু আমি তো উনাকে কিছু বলি নি,উনার একার দোষ নেই।আমি তো ইচ্ছে করলেই বাধা দিতে পারতাম, আমারও তো দোষ আছে। উনার ধারনা হলো এই যে, উনি যদি আমার সাথে বেশি থাকেন তাহলে উনি হয়তো আবার কোনো ভুল করে ফেলবেন।কতায় আছে না, যা হয় ভালোর জন্যই হয়,,একদম ঠিক।উনার দূরত্ব আমাকে খুব পোড়ায়।উনার ছোট ছোট ভালোবাসাগুলো খুব মিস করি,উনি আর আগের মতো আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায় না।প্রথম কয়েকদিন তো নিঃশব্দে কেঁদেছিলাম।আচ্ছা আমি কী উনাকে ভালোবেসে ফেলেছি? হুমায়ূন আহমেদ একবার একটা কথা বলেছিলেন যার অর্থ হয় এমন যে,একটা মেয়ে আর একটা ছেলে বন্ধু হতে পারে তবে তাদের মধ্যে প্রেম অবশ্যই হবে।সেটা ক্ষনিকেরই হোক না কেনো,প্রেমে তো পড়বেই।আমিও উনার প্রেমে পড়েছি তবে সেটা ক্ষনিকের কী না তা জানি না!
.

রাত নয়টা আটাশ বাজে,আমি টেবিলে বসে বসে পড়ছি আর উনি বিছানায় বসে ল্যাপটপ ঘাটছেন। অনলাইন জব স্টার্ট করার পর থেকে এই ল্যাপটপ এর সাথে উনার সম্পর্ক খুব গভীর হয়ে গিয়েছে।মাঝে মাঝে মনে হয় ইলেকট্রিক যন্ত্রই উনার বউ আমি কিছুই না। হিংসাই জ্বলে যাচ্ছি, আমি মুখ ফুলিয়ে পড়া রেখে বসে রইলাম। কালকে আইসিটি এক্সাম,উফ এত কঠিন। দশম শ্রেণিতে কত সহজ ছিলো,আর এখন! অনেক্ষণ থেকে একটা টপিক নিয়ে বসে আছি,কিছুই বুঝতেছি না। আমি বই টা নিয়ে উনার সামনে গেলাম।উনি উনার মতো ল্যাপটপে মুখ গুজে আছেন।আমি ঠাস করে বিটা ল্যাপটপের সামনে রাখলাম।উনি চমকে উঠলেন,সাথে সাথে বুকে থু থু দিলেন।উনার কান্ড দেখে আমার কপাল কুচকে এলো। উনি আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই আমি মুখ কালো করে বিটা উনাকে দেখিয়ে বললাম,,”আমি এটা বুঝতেছি না।”

উনি কয়েক মুহূর্ত হতভম্ভ হয়ে রইলেন।আমাকে ইশারায় বিছানাতে বসতে বললেন,আমিও ভদ্র মেয়ের মতো বসে পড়লাম। উনি ল্যাপটপ টা সরিয়ে আমাকে বুঝাতে লাগলেন।আমিও মনোযোগ দিয়ে বুঝতেছি। বাহ,আমার জামাই টা সব পারে।কী সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলেন। উনি বুঝানো শেষে আমাকে প্রশ্ন করলেন,,”বুঝেছো?”

আমি মাথা নাড়ালাম,তারপরেই উনাকে উদ্ভট কথা বলে ফেললাম।

—“আপনার মাথা থুক্কু ব্রেইন টা আমাকে দিবেন।আমি পরীক্ষার পর আবার আপনাকে দিয়ে দিবো।”

আমার কথা শুনতেই উনি কয়েক মুহূর্ত হা করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।নিজেকে কোনোরকম সামলিয়ে কপাল কুচকে বললেন,,”কী যা তা বলছো?তোমার মাথা ঠিক আছে তো?”

আমি আফসোসের সুরে ঠোট উল্টে বলে উঠলাম,,”তা নয় তো কী?আপনি তো সব পারেন আর আমি কিছুই পারি না।আপনার বুদ্ধিতে যদি পরীক্ষা দেই তাহলে তো আমি ফার্স্ট ক্লাস পাবো।আমার বুদ্ধি কেনো আপনার মতো নয়?”

আমার কথা শুনে উনি আমার দিকে বোকার মতো তাকালেন। আমাকে জোরে এক ধমক দিয়ে পড়তে বসিয়ে দিলেন। আমিও ঠোঁট উল্টে মুখ ঘুরিয়ে চলে গেলাম। কিছুক্ষন পর আয়নায় চোখ পড়তেই দেখলাম,উনি মুচকি হাসছেন।উনার হাসি দেখে আপনাআপনি আমার ঠোঁটেও হাসির রেখা ফুটে ওঠলো।
.
শেষ এক্সাম দিয়ে মাত্র বের হলাম।মোটামুটি ভালোই হয়েছে। প্রায় ৮০% কমন পড়েছে,,উনি আমাকে সব ই পড়িয়েছেন। প্রায় সবগুলোর উত্তরই দিয়েছি।কলেজে আসার পর আমার দু/তিনটে বান্ধবীও হয়েছে।ওদের সাথে টুকটাক কথা বলে বিদায় নিলাম।

প্রায় ঘন্টাখানেক সময় থেকে উনার জন্য অপেক্ষা করছি।প্রতিদিন তো সময়মতোই চলে আসে অথচ আজ এখনও আসে নি।ইতোমধ্যে, পুরো কলেজের সবাই চলে গিয়েছে।আমার খুব কান্না পাচ্ছে। নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে নিজের ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকাচ্ছি।আমি জানি যে কোনো সময় চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে পারে।

আশেপাশে কিছু বখাটে ছেলেরা বারবার বাজে কথা বলে আমাকে হ্যারাস করছে।চারদিকে প্রায় অন্ধকার হয়ে আসছে অথচ উনি এখনও আসছে না। আশেপাশের অবস্থা বেগতিক দেখে আমি একটা রিক্সায় উঠে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।পুরোটা পথ আমি ফুফিয়ে ফুফিয়ে কান্না করেছি,খুব কষ্ট হচ্ছে সাথে উনার উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে।

রিক্সাওয়ালার ভাড়াটা কোনোরকম দিয়ে দৌড়ে বাসায় ডুকে পড়লাম। কান্না করতে করতে নাক-মুখ সব ফুলে গিয়েছে। আমি পুরো ঘরে রাগে গিজগিজ করতে করতে উনাকে খুজতে লাগলাম,উদ্দেশ্য উনার আজ ক্লাস নিবো। পুরো ফ্ল্যাটের কোথাও উনাকে পেলাম না। এবার আমার আবারো কান্না পাচ্ছে। আমার ভয় হতে লাগলো উনার কিছু হলো না তো।পুরো ঘরের সব কিছুই ঠিকঠাক আছে,শুধু আলমারিতে দেখলাম উনার কয়েকটা পোশাক নেই।উনার জরুরী কয়েকটা জিনিস ছাড়া বাকি সব কিছুই ঠিকঠাক আছে।আমার বুকটা ধক করে উঠলো,উনি কী তাহলে কোথাও চলে গিয়েছেন?আমার বুক ফেটে কান্না আসতে লাগলো।হঠাৎ কিছুর টুং টাং শব্দ হলো।
.
.
.
চলবে??