ভূল করেছি পর্ব-০১

0
738

#ভূল_করেছি
#Imran_khan
#প্রথম_পর্ব

ইদানিং আমার বউ তিতলি নাকি , ফেসবুকে তার বাজে পিক পোস্ট করতেছে ! এটা আমার চোখে সাধানত কখনো পড়ে নি ,কারন অফিসের কাজে চাপে ফেসবুকে অনেক দিন থেকে ঢুকায় হয় না । বহুদিন পরে হঠাৎ করে আমার এক বন্ধু দেখা হয়ে যায় ,সে আমাকে বলে তিতলির কথা , কিন্তু আমি প্রথমে বিশ্বাস করিনি !
বন্ধু তুই এগুলো কি বলতেছিস ? তিতলি এটা কখনো করতে পারে না, বন্ধু তোর কোথাও ভূল হচ্ছে মনে হয় !

আমি জানতাম তোর বিশ্বাস হবে না! কারন তুই ভাবিকে অন্ধের মত ভালবাসিস ! আচ্ছা দাঁড়া আমি তোর ভুল ভেঙে দিচ্ছি !

তারপর আমার বন্ধু তার পকেট থেকে ফোনটা বাহির করে আমার দুচোখের সামনে ধরে । আমি ফোনের স্ক্রিনে দেখি আমার বউয়ের অন্তরঙ্গ পিক ভেসে উঠতেছে ।ছোট ছোট কাপড় পড়ে পিক আপলোড করেছে ফেসবুকের ।এই দৃশ্য দেখে আমি প্রায় অবাক হয়ে যাই!এটা কিভাবে সম্ভব ? আমি এগুলো দেখে একদম নিশ্চুপ হয়ে যায় , কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি ।(যাকে এত ভালোবাসি ,সে এটা করবে ভাবতেই অবাক লাগতেছে )

বন্ধু এবার বিশ্বাস হলো তোর ! তুই মনে হয় এটা কখনো লক্ষ করিস নি । ভাবি প্রায় অনেকদিন ধরে তার এইরকম পিক আপলোড করতেছে ফেসবুকে । আমি এগুলো দেখে ভাবিকে কিছু বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু পরে ভাবলাম তোকে আগে জানাই , তারপর না হয় তোকে জানাবো এটা ভেবে আমিও ভাবিকে কিছু বলি নি ।

আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে রয়েছি !

কি হল ,তুই এভাবে চুপ করে আছিস কেন ? আমি জানি তো ভাবিকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি । এটা মনে হয় তুই মেনে নিতে পারতেছি না । তুই টেনশন করিস না , সব ঠিক হয়ে যাবে। বাসায় গীয়ে ভাবিকে একটু বুঝিয়ে বলবি তাহলে বুঝবে মনে হয় ? একবারে ভেঙ্গে পরিস না । আচ্ছা শোন আমার একটু কাজ আছে পরে কথা হবে তোর সঙ্গে তুই বাসায় যা । তুই আবার বাসায় গিয়ে ঝগড়া লাগাস না , ভাবির সঙ্গে । কারন মানুষ মাত্রই ভুল হতে পারে । ভালো করে বুঝিয়ে বলবি তাহলেই হবে মনে হয় ।

আমি শুধু মাথা নেড়ে তাকে জানালাম যে ,তুই তোর কাজে যা । তারপর সে চলে গেলো । আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না, যে তিতলি এটা করতে পারে । এগুলো ভাবতেই মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবী ঘুরতেছে আমার চারপাশে । রাস্তার এক সাইড দিয়ে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছি।আজকে তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে ইচ্ছায় করতেছে না ।অন্যদিন হলে তো আমি অফিস থেকে বাহির হয়ে সঙ্গে সঙ্গে বাসায় যেথাম এটা ভেবে ,যে যত তাড়াতাড়ি বাসায় যাব তত তাড়াতাড়ি আমার সুন্দরী বউ কে দেখতে পাবো । কেমন যেন তার উপর মায়া কাজ করে সারাদিনের শরীরের ক্লান্তি তাকে দেখতে মনে হয় সব দূর হয়ে যায়। কিন্তু আজকে তার উল্টে মনে হচ্ছে। প্রতিদিন রিকশায় করে বাসায় যাই কিন্তু আজকে রিকশা নিতে ইচ্ছা করতেছে না ।তাই রাস্তা দিয়ে একাই একাই হেটে যাচ্ছি । একটু পর পর বড় বড় গাড়িগুলো রাস্তা দিয়ে শো শো করে চলে যাচ্ছে। প্রায় ৩0 মিনিট পরে বাসায় চলে আসলাম। বাসার সামনে এসে কলিং বেলে চাপ না দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি , ভাবতেছি বাসায় ভিতরে ঢুকবো কিনা , আর দাঁড়িয়ে না থেকে কলিংবেলে চাপ না দিয়ে আমার কাছে থাকা চাবি দিয়ে রুমে ভিতরে ঢুকে গেলাম।ভিতরে ঢুকে দেখি প্রতিদিনের মতো এক ই ভাবে বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় মাথা নিজ করে ফোন চাপতেই আছে ।আমি যে রুমের ভিতরে আসছি সেটা তার কোন খেয়ালেই নেই । সে তার ফোন টিপা নিয়ে ব্যস্ত । আমি কোনো কথা না বলে সোজা রুমের ভেতরে ঢুকে আমার ঘাড় থেকে অফিসের ব্যাক টা এক সাইডে রেখে দিলাম।

তুমি কখন আসলে !

কি বলবো আর কথা বলার ভাষায় খুঁজে পাচ্ছিনা ? রুমে আসার প্রায় আমার তিন থেকে চার মিনিট হচ্ছে তারপর বলতেছি আমি কখন আসলাম ! এখন মনে হচ্ছে যদি একটা থাপ্পর তার গালে মারতে পারতাম তাহলে ঠিক হবে মনে হচ্ছে ।(মেয়েরা কিছু পারুক বা না পারুক কিন্তু এই নেকামি করতে এদিক দিয়ে এক্সপার্ট )

কি হলো কথা বলতেছ না ,কেন ?

কি আর বলবো? তুমি যখন ফোন চালা নিয়ে ব্যস্ত তখন আমি এসেছি ।

ঠিক আছে, তুমি তাহলে ফ্রেশ হয়ে এসো আমি খাবার বেড়ে দিচ্ছি ।

আমি কোনো কথা না বলে ,সোজা ফ্রেশ হতে বাথরুমে চলে গেলাম। তিতলির মুখটা দেখতেই এখন আমার ঘিন্না হচ্ছে।একটা কথা সত্য যে, যাকে তুমি অন্ধের মত বিশ্বাস করবে সে একদিন তোমার পেট ছুরি ভরে দেবে।
আমি ফ্রেশ হয়ে সোজা আগে মার রুমে গেলাম । কারণ মা প্রায় দুই বছর ধরে অসুস্থ নিজে নিজে হাঁটাচলা করতে পারে না । দু’বছর ধরে বিছানায় পড়ে রয়েছে। মাঝে মাঝে মার কষ্ট দেখলে সহ্য হয় না , কারণ তিনি একসময় অনেক কষ্ট করে আমাকে লালন পালন করে বড় করে তুলেছে। কিন্তু আজকে টাকার অভাবে মা বিছানায় পড়ে রয়েছে দু’বছর ধরে । এগুলো কথা ভাবলেই চোখ দিয়ে পানি টপটপ করে পড়তে শুরু করে । কেমন ছেলে আমি মার চিকিৎসা করাতে পারতেছি না টাকার অভাবে । ওগুলো কথা ভাবতে ভাবতে মার রুমের ভেতরে ঢুকে গেলাম । মা রুমে ঢোকে আরো মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল কারণ সকালে যেভাবে রেখে গেছিলাম মাকে ঠিক সেভাবে রয়েছে ।
এই তিতলি কই তুমি এদিকে আসো তাড়াতাড়ি ?

কি হয়েছে, এভাবে চিল্লাচিল্লি করছো কেন ?

চিল্লাচিল্লি করতেছি মানে, সকালে যেভাবে রেখে গেছি মাকে আমি আবার অফিস থেকে এসেও দেখতেছি সেভাবে রয়েছে মা।

তো , আমাকে কি করতে বলতেছো ?

কি করতে বলতেছো মানে , আমার মার উপর তোমার কোনো দায়িত্ব নেই ? যে কিনা অসুস্থ হয়ে পড়ে রয়েছে বিছানায় ।

আমি পারবো না , এই বুড়িকে সেবাযত্ন করতে ! দুই বছর ধরে অনেক সেবা যত্ন করেছি আমি আর পারবো না , তুমি হয় এই বুড়িকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখো , না হলে অন্য একটা কাজের মেয়ে রাখ দেখাশোনা করার জন্য ।

তিতলির কথা শুনে আমি তো অবাক আজকে শেষ কি বলতেছে ! কি বলতেছো আমার মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখতে?তোকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখবো তবুও আমার মাকে আমি কখনো বৃদ্ধাশ্রমে রাখবো না! (রেগে গিয়ে তিতলি কে এভাবে বলতেছি )
ছোট থাকতেই আমার বাবা মাকে আর আমাকে ছেড়ে ওপারে চলে গেছে । আমি জানি , মা একা আমাকে কিভাবে লালন পালন করেছে কত কষ্টে ? আর আজকে মাকে এ অবস্থায় বৃদ্ধাশ্রমে রাখতে বলতেছে আমার বউ ।কোন মেয়েকে বউ করে এনেছি ঘরে।

তুমি তাহলে তোমার মাকে নিয়ে থাকো আমি আমার বাবা বাসায় চলে যাব !

জা না, তোকে কে আটকে রেখেছে ।সংসারে কিছু হলে তোরা শুধু ওই বাবার বাসায় যাওয়ার ভয় দেখাস ।

তুমি আমার সঙ্গে তুই তোকারি করে কথা বলতেছো কেনো ?

এর চেয়ে আর ভালো ভাষায় বাহির হবে না , এখন আমার মুখ থেকে !

ওকে তুমি তোমার মাকে নিয়ে পড়ে থাকো আমি গেলাম ।

(আমি জানি ও কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না । এরকম অনেক ঝগড়াও হয়েছে আমাদের কিন্তু কখনো কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতে পারিনা ।)

এই কথা বলে তিতলি মার রুম থেকে বাইরে চলে গেল। আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি মার চোখ দিয়ে পানি বাহির হচ্ছে । আমি মার পাশে বসে চোখের পানি দুই হাত দিয়ে মুছে দিচ্ছি আর বলতেছি যে মা তুমি কষ্ট পেও না আমি তো আছি । মা তুমি একটু থাকো আমি আসতেছি । এই কথা বলে আমি মার রুম থেকে বাইর হয়ে রান্না ঘরের দিকে যাচ্ছি । তিতলির যেভাবে কথা বলতেছে মনে হচ্ছে সারা দিন মাকে কোন কিছু খাওয়ায় নি তাই আমি রান্নাঘর থেকে কিছু খাবার এনে মাকে খাওয়াবো। রান্নাঘরে গিয়ে আরো মাথা গরম হয়ে গেল। কোন কিছু রান্না করেনি তিতলি। অল্প একটু ভাত আর তরকারি ছিল ওগুলো একটা প্লেটে করে মার রুমে চলে গেলাম । তারপর মার পাশে বসে অল্প অল্প করে খাওয়াচ্ছি । মা তো অসুস্থ বেশি খাইতে পারেন একটু কষ্ট করে খাওয়ালে কি সমস্যা যে তিতলির ? মেয়েরা কেন যে বিয়ের পরে স্বামীর মাকে নিজের মা মনে করতে পারে না এটা বুঝিনা । স্বামীর বাসায় তার মা বৃদ্ধ হলে স্ত্রী বলে তোমার মাকে হয় বৃদ্ধাশ্রমে রাখবো না হলে আমি বাবার বাসায় চলে যাব । মা-বাবা একটা সংসারের কত যে বরকত সেটা ওরা বুঝতে চায় না । তিতলি এরকম ব্যবহার করছে ওর উপর ঘৃন্না বেড়ে যাচ্ছে । ভাবতে ঘৃণা হচ্ছে কাকে অন্ধের মত বিশ্বাস করেছিলাম , কাকে এতদিন মনপ্রাণ দিয়ে ভালবেসেছি। আগের তিতলি আর এখনকার তিতলি আসমান জমিন তফাৎ । এগুলো ভাবতেই মাকে খাওয়ানো শেষ । তারপর আমি প্লেটে হাত ধুয়ে মাকে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে মা র হাতটা শক্ত করে ধরে তার পাশে চুপ করে বসে আছি । আজকে কেনো যেনো মার মুখটা অনেক উজ্জ্বল দেখতে পাচ্ছি । মার মুখে দিকে তাকিয়ে থাকতে মন প্রাণ উজাড় হয়ে যাচ্ছে । একটু পরেই দেখেছি মার ঘুমিয়ে পড়েছে । আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে সারা দিনে অফিসের ক্লান্তি । তাই আমি মারুম থেকে বাইরে এসে দরজাটা হাল্কা আটকে দিলাম ।

পরিচয়টা দিয়েই দেই , আমি হচ্ছি ঈমরান খান ।বাবা মার একটি মাত্র সন্তান ভালোবেসে বিয়ে করেছি তাকে।আমাদের বিয়ে হওয়া প্রায় দুই বছর পার হতে চলেছে ।প্রতিদিন দেখতেছি কেমন আমার সঙ্গে বাজে ব্যবহার করতে শুরু করেছে ।ঠিক মতো কথা বলে না ,আমার সাথে। সবসময় ফোন নিয়ে পড়ে থাকে, ফোনে কি যে করে বুঝতে পারিনা।
আমি একটা বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করি ।

#চলবে,,,?