#মজিলো_প্রেম_সখার_সনে_১০
আজ শুক্রবার সবার ছুটির দিন। সিয়াম খান ঊষার সকালে উঠে বাগানে পানি দিচ্ছে ঝাঝরা দিয়ে। ফুয়াদ সিয়ামের সঙ্গে গল্প করছে আর চা খাচ্ছে। জেবা, মায়া, ফাতেমা কিচেন সামলাচ্ছে। কারণ এই সপ্তাহের এই দিনটায় সবাইকে একসঙ্গে বাড়িতে পাওয়া যায়। নানারকম খাবার বানাতে ব্যস্ত তিনজন। মায়া বেগম ট্রেতে দুই কাপ চা সাজিয়ে ফাতেমার হাতে দেয়। ফাতেমা এই চা দুই কাপ আব্বা – আম্মাকে দিয়ে আয়। ফাতেমা চা নিয়ে জাদেজা ও ফাহমিদুলের ঘরে যায়। জেবা বলে বড় আপা ছেলে মেয়ে ০৫ টাই এখনো ঘুমাচ্ছে। উঠবে কখন এই একটা দিন সবাইকে একসঙ্গে পাওয়া যায়। আমাকে তো কেউ ভয় খায়না তুমি একটু ওদের রুমে যেয়ে ওদেরকে তুলো। মায়া কাঠকাঠ গলায় গলায় জেবাকে বলে ওদের ঘুমাতে দে জেবা। ছেলে মেয়েগুলো তো ক্লান্ত হয়।
ফিরোজ ভার্সিটি সামলায়। শাফখাত বড় ভাইয়ের রাজনীতি। কিন্তু মেয়ে তিনটা করে কি? সারাজীবন স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি করলে হবে। শশুড়বাড়ি যেতে হবেনা। কাজতো শিখতে হবে,ছুটির দিন একটু কিচেনে আসলে ওদের শিখা হয় আর আমাদের হেল্প হয়।
এই কথা শুনে মায়া জেবাকে বলে, জেবা তোর শরীর খারাপ লাগছে আগে বলবিনা। যা তুই রেস্ট নে আমি আর ফাতেমা সবটা করছি। মায়ার কথা শুনে জেবার মুখমন্ডলে আধার নেমে আসে। এরপরে বলে এই তোমার জন্য মেয়েগুলো অকর্মন্যের ঢেকি হচ্ছে। শশুড়বাড়ি যেয়ে যখন ডালি ডালি কথা শুনতে হবে তখন বেশ লাগবে। আমাদের বাড়ির মান সম্মান থাকবে।
ফিহা আঙুল দিয়ে চোখ চুলকাতে চুলকাতে কিচেন রুমে আসে। কিচেনে মায়া, জেবাকে দেখে বলে তোমরা এতো সকালে উঠছো ক্যানো? মা তোমাদের কিছু বলে নাই?
ফিহার কথা শুনে মায়া বলে কি বলবে ফাতেমা? আর তুমি এতো তাড়াতাড়ি উঠছো কেনো? উঠছো যখন যাও পড়তে বসো। কিচেনে আসছো কোনো দরকার?
এমন সময় ফাতেমা এসে বলে আফা ও প্রতি শুক্রবারে বাড়িতে রান্না করতো। নিজ যত্ন সহকারে আমাদের রান্না করে খাওয়াতো। এখানে এসেছি তিনসপ্তাহ ও রান্না করতে পারছেনা বলে, কালরাতে বলে রাখছিলো আজকে ফিহা সবার জন্য রান্না করবে। ফাতেমার কথা শুনে মায়া বলে তোর মাথা নষ্ট হয়েছে ছোট্ট। এতটুকুনু মেয়ে আমাদের সবার জন্য রান্না করতে পারবে। ওইখানে তোরা তিনজন ছিলি তাই করেছে। এখানে এতো লোকের রান্না পারবেনা।
মায়ার কথা শুনে ফিহা বলে, বড়আম্মা তোমরা আমাকে ভরসা করো। অনেকতো করলে এই সংসারের জন্য আজকে আমাকে একটু করতে দাও। করতে না দিলে মন খারাপ করবো। ফিহার কথা শুনে মায়া ও জেবা অবাক হয়। মনে মনে বলে আজকে বাড়ির সবাই না খেয়ে না থাকলে হয়। এরপরেও বাড়ির মেয়ে বলে মায়া কিছু বললো না। ফিহাকে কিচেনের সবকিছু দেখিয়ে দিলো। এরপরে চলে আসলো।
ফাতেমা মেয়েটা নাহয় অবুঝ তুইতো বুঝদার। তুই মানা করবি না। এখন আমি যদি ওকে রান্না করতে না দিতাম। আমার সম্পর্কে ভূল ধারণা জন্ম নিতো। এরজন্য সব ছেড়ে দিয়ে আসলাম। মায়ার কথা শুনে ফাতেমা বললো আগে আগে দেখো হোতা হে ক্যায়া। আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে আমার মেয়ে পারবে।
সূর্যমামার তেজ বাড়িয়েই চলেছে। ফিরোজের রুমের জানালা টা খোলা। সূর্যমামার তেজ জানালা ভেদ করে ফিরোজের চোখেমুখে পড়ে। সূর্য মামার তেজে ফিরোজের ঘুম ভেঙ্গে যায়। বিছানা থেকে উঠে জানালার কাছে যায়। সকালের রোদ গায়ে লাগতেই ভালো লাগে ফিরোজের। ড্রয়ার থেকে সিগারেট বের করে জানালার কার্নিশ ধরে সিগারেট খায়। সিগারেটের ধোয়াগুলো জানালা দিয়ে বের করে দেয়। সেই ধোঁয়া আকাশে উবে যাচ্ছে। মনে মনে ভাবছে প্রেয়সী আবার কাব্যকে ভালোবাসে নাতো? নাহলে কাব্যর জন্য প্রেয়সীর এতো দরদ কেনো? মনে মনে বলে প্রেয়সী তুমি এতো সাহস পাও কি করে? আমিতো তাদের হুমকি দিতে বলেছিলাম। যদি জানতাম এতো বাড়াবাড়ি হবে তাহলে এসবে যেতাম না। আমিই কথা বলতাম কাব্যর সঙ্গে যদি তুমি আরেকটু বড় হতে। এখন যদি তোমাকে প্রপোজ করে বসি তাহলে ভার্সিটির ছাত্র ছাত্রীরা তোমার প্রিয়র নামে সমলোচনা করবে? সবাই বলবে স্যার হয়ে ছাত্রীর সঙ্গে এসব। টিচার স্টুডেন্টের পরিচয় টার সম্মান রাখার জন্য কাব্যর সঙ্গে কথা বলি নাই। কারণ কাব্যকে এই বিষয়ে হুমকি দিলে সবাই ভাবতো তুমি আমার প্রেয়সী। আর তোমাকে এখন ভালোবাসার কথা বললে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে। আমি চাই তুমি ভালো রেজাল্ট করো। ফিহা তুমি কি এখনো বুঝোনা তোমাকে আমি ভালোবাসি।
জানো সেইদিন থেকেই তুমি আমার হৃদপিণ্ডে বিরাজ করো। যখন তুমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ো। আমি পড়াশোনার জন্য বাইরের দেশে যাচ্ছিলাম। তাই চাচ্চুর সঙ্গে দেখা করতে যাই তোমাদের বাড়িতে। চাচ্চু আমাকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে তোমার দ্বারা চা দিয়ে পাটালো। তুমি খোলা চুল, চোখে কাজল, কপালে কালো টিপ, পড়নে ছেলেদের মতো গেঞ্জি পড়ে আমার সামনে এসে বললে ভাইয়া আপনার চা।
সেই কিশোরীকে দেখে আমার মধ্যে কেমন জানি অদ্ভুত ফিল আসলো। মূহুর্তের মধ্যে ঘামা শুরু করেছিলাম। বিশ্বাস করো তুমি যদি আর কিছুক্ষণ ওখানে ওইভাবে দাড়িয়ে থাকতে, তোমার কাজল কালো চোখ, কপালের টিপ, খোলা চুলের স্যাম্পুর গন্ধ আমাকে পাগল করে ফেলতো। এতো এসিতে ঘামছি বলে চাচ্চু আমাকে রোগী বানিয়ে ফেললো সেদিন। ডিরেক্ট হসপিটালে নিয়ে আসলো প্রেসার চেক করার জন্য। কিন্তু ডক্টর কিছুই ধরতে পারলো না। পরে চাচ্চুর কাছে জানলাম তুমি ফিহা। সেদিন থেকেই ধরে নিছিলাম তুমিই হবে আমার প্রেয়সী। তোমার কৈশোরত্ব কিভাবে আমাকে নাচাইছিলো। তুমি কি যেসব জানো। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে সিগারেট শেষ হয়ে যায়। ফিরোজ জানালা বন্ধ করে। কি একটা কাজের কথা মনে পড়তেই শাওয়ার নিতে যায়।
পারিজাত ঘুম থেকে উঠে কিচেনে হাতে হাতে হেল্প করতেছিলো ফিহাকে। ডিলনাসিন এখনো উঠে নাই দেখে ফিহা বললো পারিজাত তুই ডিলনাসিনকে ডাক দে। ফিহার কথা শুনে পারিজাত রুমে এসে ডিলনাসিনকে ডাক দেয়। কিন্তু ডিলনাসিন মরার মতো ঘুমুচ্ছিলো। পারিজাতের কোনো ডাক তার কান অব্দি পৌঁছাতে পারছে না। পারিজাত ডিলনাসিনকে ডাকতে ডাকতে হাপিয়ে যেয়ে বেডে বসে। একটুপর ডিলনাসিনের দেখে চোখ ফেলতেই অবাক হয়ে যায়। ডিলনাসিন ঘুমের ঘুরে হাসছে। পারিজাত তা দেখে গালের মধ্যে সজোরে থা’প্প’র দেয়। ডিলনাসিন লাফিয়ে উঠে বলে কি হয়েছে আমাকে মারলি কেনো? পারিজাত চোখজোড়া বড় বড় করে বলে কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাসনা। আর গালে মশা পড়েছিলো তাই হালকা থা’প্প’র দিয়ে মশাটা মারলাম। কিন্তু তুই ঘুমের মধ্যে হাসছিলি কেনো?
ডিলনাসিন গালে হাতের তালু দিয়ে বলে এতো জোড়ে কেউ মশা মারে। এলিয়েন একটা কত সুন্দর স্বপ্ন দেখতেছিলাম দিলিতো সবটা নষ্ট করে। পারিজাত ডিলনাসিনের মুখ ভাঙ্গিয়ে বলে তা ঘুমের মধ্যে কোন ভা’তা’রের সঙ্গে রোমান্স করা হচ্ছিলো শুনি। পারিজাতের কথা শুনে লজ্জা পায় ডিলনাসিন। দুই হাতের তালু দিয়ে মুখ ঢেকে বলে লিটন না আমাকে কি’স করতে চাইছিলো! পারিজাত এই কথা শুনে ঠোঁট চেপে বলে তা তুই কি করলি শুনি। ডিলনাসিন মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললো তুইতো এসে লিটনের চুমু পেতে দিলিনা। পারিজাত এবার বলে অনেক হয়েছে ডিলনাসিন। এবার কিচেনে আয়? কিচেনের নাম শুনতেই ডিলনাসিন বলে আমি কিচেনে যেয়ে কি করবো এলিয়েন। পারিজাত বললো তুই যদি বাঁচতে চাস তাহলে কিচেনে এসে ফিহা আপুকে হেল্প কর রান্নায়। নাহলে আজকে অনেক কথা শুনতে হবে। পারিজাতের কথা গোলমেলে লাগছিলো ডিলের কাছে। আঙুল দিয়ে চোখ কচলাতে কচলাতে বলে যা আমি আসছি।
সকাল দশ-টা বেজে গেছে । শাফখাত এখনো ঘুম থেকে উঠে নাই। জেবা তার ছেলেকে ঘুম থেকে জাগাতে যায়। শাফখাতের ঘুম আবার খুব নরম? রাজনীতিতে যখন থেকে গেছে তখন থেকেই শাফখাতের ঘুম উবে গেছে বলাই যায়। মায়ের ডাক কানে পড়তেই শাফখাত বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে। এরপরে লুঙ্গি ঠিক করে ফোনে দেখে দশটায় পাঁচ বেজেছে। একটা ফোন বা মেজেস তিহার আসে নাই। শাফখাতের তখন মনে পড়লো গতকাল রাতে তো তিহা বলে দিয়েছে। আজকে তাকে কল না করতে। কি জানি একটা জরুরি কাজে ব্যস্ত থাকবে তিহা। নাহলে প্রতিদিন সকালে তিহার ফোনকল বা মেজেসেই ঘুম ভেঙ্গে যায় শাফখাতের। আলাদা করে অ্যার্লাম রাখতে হয়না ফোনে। জেবার ডাক গুরুতর হলো। শাফখাত ফোন রেখে দরজা খুলে বলে কি হয়েছে মা ডাকছো কেনো? বড়আব্বুর কোনো দরকার?
ছেলের কথা শুনে জেবার মন খারাপ হয়ে যায়। শুধু কি বড়আব্বুর দরকার তোমার। আমি কি তোমাকে পেটে রাখিনাই। আমি তোমার কাছে আসতে পারিনা। মায়ের অভিমানের গলা শুনে শাফখাত আদুরে গলায় বলে কখন সেইটা বললাম। তুমি সচরাচর আমাকে তো ডাকতে আসোনা তাই বললাম। আর যখনি বা এসেছো বড় আব্বুর জরুরি তলব নিয়ে? এরজন্য বললাম। ছেলের কথা শুনে জেবা বলে,তুমিতো এতো দেরি করে উঠোনা শাফখাত। সবাই ডাইনিং এ অপেক্ষা করছে। তুমি নাই দেখে ডাকতে আসলাম। আর জানোতো শুক্রবার সবাই একসঙ্গে খায়। আচ্ছা মা আমি দাঁতটা ব্রাস করে আসতেছি তোমরা খাবার সার্ভ করো। জেবা চলে যায় তখনি। শাফখাত দাঁতটা ব্রাশ করে বেসিনে মুখ ধুতে যায়। এরপরে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে নিচে আসে খেতে।
ফাহিম খান মায়াকে বলে রান্নার গন্ধ টা আজকে অন্যরকম লাগছে। কি কি রান্না করছো মায়া? মায়া বলে আজকে আমরা কেউ রান্না করি নাই। আজকে রান্না করেছে খান বাড়ির বড় মেয়ে ফিহা খান। ফিহার নাম শুনতেই ফিরোজের হেচকি উঠে। ফিহা দ্রুত এক গ্লাস পানি সামনে দিয়ে বলে স্যার পানিটা খান। ফিরোজ খালিপেটে ঢকঢক করে পানি খায়। ফিহার মুখে ফিরোজকে স্যার বলা শুনেই বাড়ির সকলেই অট্রহাসিতে মেতে উঠে। ফিহা অদ্ভুত ভাবে সবার দিকে তাকায়। এরপরে সবাইকে বলে আপনারা এইভাবে হাসছেন কেনো?
ফাহিম খান তখন বলে এই পা’গ’লি ভার্সিটিতে ও তোমার স্যার হতে পারে বাড়িতে ভাই হয়৷ ফিরোজ পানির গ্লাস রেখে ফিহাকে বলে, এতো বয়স হলো বুদ্ধি কি হাটুর নিচেই থাকবে। খাবার টা দাও খেয়ে দেখি সবাই খেতে পারবে কিনা? ফিরোজের উচ্চস্বর শুনে কেপে উঠে ফিহা, এরপরে ফিরোজকে খাবার দিয়ে বলে নেন খেয়ে বলুন কেমন হয়েছে। সবসময় রক্ত চোষা বাঁদরের মতো তো খিটমিট করেন। আমার খাবার ভালো লাগবে না জানি। আপনার জন্য ওইসব গরুর রক্তই বেশ।
ফাহমিদুল, ফাহিম, সিয়াম,ফুয়াদ ও বাড়ির সকলেই ফিহা ও ফিরোজের আচরণে এন্টারটেইনমেন্ট নেওয়া শুরু করে। ফিরোজ খাবার টা মুখে তুলে বলে তোমার হাতের রান্না করা খাবার শাঁকচুন্নির মতোই হবে। কোনোসময় দেখলাম না আমাকে রেসপেক্ট করছো।
এই কথা শুনে বাড়ির সকলেই অবাক হয়ে যায়। কারণ একটু আগেই তো দেখলো মেয়েটা বাড়িতেও স্যার বলছে। তাহলে কিভাবে রেসপেক্ট করতে হবে। ফিহা মুখটা কালো করে বললো দেখলে বড় আব্বু তোমার ছেলের ব্যবহার। আমি নাকি ওনাকে রেসপেক্ট করিনা। ধলাবিলাই একটা। ধলাবিলাই নাম শুনে সবাই হাসিতে লুটিপাটি খায়। ফুয়াদ খান বলে, এদের ভাই বোনের পরিচয় হয়ে দেখছি বুনো ওল আর বাঘা তেতুলের মতো অবস্থা হয়েছে।
ফিরোজ মুখে খাবার তুলে বলে মা সবাইকে খাবার দাও। ফিহার মুখটা সহজেই হাস্যউজ্জ্বল হয়ে উঠে। এরপরে ফিরোজকে দেখে মনে মনে বলে ধলাবিলাই কারো হাতে প্রথম রান্না খেলে তার নামে প্রসংশা করতে হয়। অবশ্য আপনার মতো ধলাবিলাইতো প্রসংশা না হুমকি দিতে পারে। কাব্যর স্টেটমেন্ট টা নিই আগে তারপরে আপনার খবর আছে।
বাড়ির সকলেই ফিহার নামে অনেক প্রসংশা করে। খাবার অনেক স্বুসাদু লেগেছে সবার।
চলবে,,,,
®️রিয়া_জান্নাত
#মজিলো_প্রেম_সখার_সনে_১১
পারিজাত, ফিহা কই বেড়াচ্ছো তোমরা। হাতে ওইটা কিসের বাটি। ফিরোজের এমন প্রশ্ন শুনে দাড়িয়ে যায় ফিহা পারিজাত। এরপরে বলে কাব্য ভাইয়াকে দেখতে যাচ্ছি। পারিজাতের হাতে ওইটা খাবারের বাটি। কাব্য ভাইয়াকে খাওয়াবো। ফিহার মুখে কাব্যর নাম শুনবে কস্মিনকালেও ভাবে নাই ফিরোজ। আবার পীরিত দেখিয়ে খাবার নিয়ে যাবে। আর বাড়িতে দেখালো সবার জন্য রান্না করছে। আসল রণ তাহলে কাব্য। কাব্যর জন্য সকাল থেকে আয়োজন চলছে। স্যার আপনি চুপ কেনো? আমাদের কিসের জন্য দাঁড়াতে বললেন। বাড়ির সবার কাছে অনুমতি নিছি আমি।
ফিহাকে জিজ্ঞেস করে এতো দরদ কিসের জন্য? কি হয় কাব্য তোমার? ও তো তোমার ক্লাসমেট ও না। তাহলে একবছরের সিনিয়র ভাইয়ার জন্য এতকিছু কেনো?
সবাইতো আর আপনার মতো মনুষ্যত্বহীন লোক নয়। মানুষকে অযথা হুমকি দিবে। সম্পর্ক ছাড়া কোনো মানুষের জন্য কিছু করা যায় না। আজ প্রথম শুনলাম। শিক্ষক হয়ে আপনার মুখে এই কথা মানায় না। আসি স্যার। ফিহা আর পারিজাত ফিরোজকে পাত্তা না দিয়ে রিকশা নিয়ে কাব্যর সঙ্গে দেখা করার জন্য হসপিটালে যায়।
ফিরোজ নিজের রুমে যেয়ে ওয়ালে ঘুসি মারে। হাতের আঙুল ফেটে রক্ত বের হয়। ফিরোজ রক্ত দেখে বলে আমাকে কষ্ট দিচ্ছো না প্রেয়সী। এর সমান কষ্ট তুমিয়ো ভোগ করবে একদিন। আমি থাকতে কার সাহস আছে তোমাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার আমিয়ো দেখবো। এরপরে ফিরোজ নিজের হাতে ওয়ান টাইম টেপ লাগিয়ে পাঞ্জাবি পড়ে বাইরে চলে আসে। ভিতরে এসির হাওয়া থাকা সত্বেও দম বন্ধ লাগছিলো ফিরোজের।
(★)
কাব্যর জন্য খাবার নিয়ে হসপিটালে আসে ফিহা আর পারিজাত। কাব্যর কেবিনে ঢুকতেই দেখে কাব্য বেডের সাথে হেলান দিয়ে শুয়ে পা নাচাচ্ছে আর মোবাইলে টিপছে।একে দেখলে কেউ বলবে যে এর শরীরের এই অবস্থা;দিব্বি সে এখানে আরামে দিন কাটাচ্ছে।কথাগুলো ভেবে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে টেবিলের উপর টিফিন বক্সটা রেখে কাব্যর পাশে এসে বসে ফিহা। ফিহাকে একবার আড় চোখে দেখে আবার মোবাইল টিপাই মনোযোগ দেয় কাব্য । কাব্যর এমন না দেখা ভাবে তার দিকে ব্রু কুঁচকে তাকায় ফিহা। তারপর টিফিন বক্স থেকে খাবারটা বের করে কাব্যর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,,
” নেন আপনার জন্য নিজের হাতে রান্না করে এনেছি।খেয়ে নেন ;”
ফিহার কথা শুনে কাব্য মোবাইলটা পাশে রেখে একবার খাবারের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার ফিহার দিকে তাকাচ্ছে। কাব্যর এমন কর্মকান্ডে ফিহা বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,,
”কি হলো এমন ভাবে কি দেখছেন ?খাবেন না ?”
কাব্য তার দুহাত মাথার নিচে রেখে আরাম করে শুয়ে বলে ,,
” তুমি আমার জন্য রান্না করে এনেছো !এতো কেয়ার!”
ফিহা বিরক্ত ভরা চোখে কাব্যর দিকে তাকায়;তারপর পারিজাতের দিকে ঘুরে বলে,,
”এই জন্যই না পারিজাত কারো জন্য কিছু করতে নেয়;বিশেষ করে এই কাব্যর মতো স্ক্রু ঢিলাদের জন্য।এদের জন্য যায় করো না কেন এরা তাতেই খুত ধরবে। ”
কথাটা বলে কাব্যর দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে ,
” আপনি খাবেন না?”
ফিহার এমন চাহনি দেখে কাব্য দাঁতকেলিয়ে হেসে বলে ,,
”কে বলেছে খাবো না দেও এক্ষনি খাচ্ছি।”
ফিহাও মুচকি হেসে তার দিকে বক্সটা এগিয়ে দিলো। কাব্য খুশি মনে খাবারটা খেয়ে চলছে।ফিহা বানিয়েছে বলে কথা।খাবার খাওয়ার মাঝখানেই ফিহা কাব্যকে প্রশ্ন করে,,
”এই কাব্য ভাই পুলিশ আসবে কবে আপনার স্টেটমেন্ট নিতে?”
কাব্য মুখে একটা লোকমা নিতে নিতে বলে ,
”আমি খাওয়ার মাঝখানে কথা বলি না।”
কাব্যর কথায় ফিহা আর কোনো প্রশ্ন না করে কাব্যকে খাবারটা খেয়ে নিতে বলে।খাওয়া শেষ হলে ফিহা টিফিন বক্সটা গুছাতে গুছাতে বলে ,,
”এবার বলেন পুলিশ কখন আসবে?”
কাব্য একটা টাওয়াল দিয়ে হাত মুখ মুছে বলে ,,
”পুলিশের আর হসপিটালে আসার প্রয়োজন নেয়।ওনারা অপরাধীকে ধরে ফেলেছেন।”
কাব্যর কথায় ফিহা টিফিন বক্স রেখে অবাক হয়ে তার দিকে তাকায়।তারপর ওর পাশে এসে বসে কৌতুহলী দৃষ্টিতে কাব্যর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,,
”পুলিশ অপরাধীকে ধরে ফেলেছে!কিন্তু কিভাবে আর কারা ওরা?কেন এমন করেছে?কিছু বলেছে?”
কাব্য পা মেলে সোজা হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে বলে ,
”একটা একটা করে প্রশ্ন করো সব উত্তর দিবো।”
কাব্যর এমন দায়সারা ভাব দেখে ফিহার ভীষণ রাগ হচ্ছে।এই মুহূর্তে তার কাব্যর চুল গুলো ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।এই ছেলেটা কোনো কিছুকেই সিরিয়াসলি নেয় না অলওয়েজ এমন একটা ভাব যেন কিছুতেই ওর কিছু যায় আসে না।ফিহা চোখ মুখ কুঁচকে কাব্যকে বলে,,
” আপনি তাকান আমার দিকে।এমন মরার মতো শুয়ে পড়েছন কেন?অদ্ভুত ছেলে তো আপনি । আপনাকে যারা এভাবে মারলো আপনি তাদের ব্যাপারে একটুও সিরিয়াস না!ওরা কেন এসব করেছে;কার কোথায় করেছে এসব কিছু জানেন?”
কাব্য চোখ বন্ধ করা অবস্থায় ডানে বামে মাথা নাড়লো।তার মানে সে কিছু জানে না। ফিহার এবার রাগে শরীর রি রি করছে।পারলে এক্ষনি এই কাব্য নামের আপতটাকে মাথায় তুলে একটা আছাড় দিতো সে।ফিহা কোনোরকমে নিজেকে শান্ত করে কাব্যকে বলে ,
” প্রান্ত ভাইয়া কই?”
”থানায়”
ফিহা পার্স থেকে তার ফোনটা বের করে কাব্যকে বলে,
”ভাইয়ার ফোন নাম্বারটা বলেন ”
কাব্য এবার চোখ খুলে ব্রু কুঁচকে তাকায় ।তারপর কিছু একটা ভেবে ফিহাকে প্রান্তের নাম্বারটা দেয়।নাম্বার পেয়েই ফিহা প্রান্তের কাছে কল লাগায়।দুটো রিং বাজতেই প্রান্ত কলটা রিসিভ করে,
”হ্যালো কে?”
ফিহা সোফায় পারিজাতের পাশে বসতে বসতে বলে,
” ভাইয়া আমি ফিহা ”
”হুম ফিহা বলো।”
”ভাইয়া কাব্যর অপরাধীদের নাকি পুলিশ ধরে ফেলেছে?”
”হুম।আমিও এখন থানায় আছি;ওদের সামনেই।ওদের প্রত্যেকের নামে একটা একটা করে মামলা দিচ্ছি।”
”ওহ।আচ্ছা ওরা এখনো কিছু বলেনি?না মানে কেন ওরা কাব্যকে মারল?কার কথায় এসব করেছে এই ব্যাপারে কিছু বলেছে?”
”না পুলিশ এখনো জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেনি।জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করার পর সব কিছু জানা যাবে।”
প্রান্তের কথায় ফিহা ভাবে সে কি বলবে কালকের কথাটা। ফিরোজ স্যারই যে সব কিছু করেছে সেটা তো আর কেউ না জানলেও সে জানে।কিন্তু পুলিশ ফিরোজ স্যারের লোকগুলোকে ধরলো কি করে?ফিরোজ স্যার তো বলেছিলো ওদের বাঁচাবে!তাহলে?উনারা আবার ভুল কাউকে ধরে ফেলেননি তো?
কথাগুলো ভাবতেই ফিহার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ পরে;সে চিন্তিত হয়ে প্রান্তকে জিজ্ঞেস করে ,,,
”আচ্ছা ভাইয়া পুলিশ বুঝলো কিভাবে যে তারায় আসল অপরাধী?”
”আরে ওরা তো সবাই নিজে থেকে এসেই আজ সকালে সারেন্ডার করেছে।পরে পুলিশ ওদের নিয়ে হসপিটালে কাব্যর কাছে আসে যাতে কাব্য ওদের আইডেন্টিফাই করতে পারে।তখন কাব্যও বলে এরাই নাকি কাব্যকে মেরেছিলো। কাব্যর জবানবন্ধি পেয়েই তো সবাই সিউর হলাম।”
প্রান্তের কথা শুনে ফিহারর কাছে সবটা ক্লিয়ার হয়েছে। ফিহা বুঝছে যে সবটাই ফিরোজের প্লান। ফিরোজ তার লোকদের বাঁচানোর জন্য আগে থেকে তাদের সারেন্ডার করতে বলেছে পরে নিশ্চয় তিনিই আবার ওদেরকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসবেন।এমন ভাবে কাজটা করেছে যেন সাপও মরে আর লাঠিও না ভাঙ্গে।তবে ফিহাও মনে মনে ঠিক করে নেয় ঠিক সময় সেও মুখ খুলবে।
কথাগুলো ভেবে একটা তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে ফোনটা কেটে দেয় ফিহা।
(★)
দুপুর গড়িয়ে বিকাল নামে। শাফখাত ফোনটা হাতে নিয়ে তিহার মেজেস দেখে। এই একবছরের সম্পর্কে কখনো তো তিহা আগে এরকম করে নাই। কেনো সে আমাকে ফোন দিতে মানা করছে। কি এমন কাজ আছে যারজন্য কথা বলা যাবেনা। একবার তো বলতে পারতো। আজকের দিনটা এতো লম্বা লাগতেছে কেনো? কখন রাত হবে আর কখন তিহার ফোন পাবো। নিজের রুমে পায়চারি করতেছে আর কথাগুলো ভাবতেছে।
শাফখাত সোফায় হেলান দিয়ে টি টেবিলে রাখা ফলমূল গুলো খেতে থাকে। একটুআগে তার মা বিকালের নাস্তা দিয়ে গেছিলো। ফল যতই খাচ্ছে ভিতরের অস্থিরতা ততই বাড়ছে শাফখাতের। শাফখাত বামহাতে ফোনটা নিয়ে মনে মনে বলে ও তো ফোন দিতে মানা করছে। তাতে কি একবার ফোনটা দিয়ে দেখি ধরে কিনা। যদি ফোন ধরে বলবো অস্থিরতা থেকে কল করেছি। তিহার নম্বরে শাফখাত ডায়াল করে। ফোনে রিং হয়। ফোনটা রিসিভ ও হয়।
হ্যালো তিহা তুমি সারাদিন ফোন দিতে মানা করছো ক্যান? পুরুষালী কন্ঠস্বর শুনে তিহার মা বলে বাবা তুমি কে? আমি তিহা নই। আমি তিহার আম্মু। বলো তিহাকে কি বলবে?? শাফখাত জ্বিহ্বায় কামড় দেয়। এরপরে বলে আসসালামু আলাইকুম আন্টি আমি তিহার বন্ধু। আসলে এই সপ্তাহের অ্যাসাইমেন্ট তিহা করছে কিনা তা জানার জন্য কল করা। আন্টি তিহা কোথায়।
তিহাতো বাসায় নাই বাবা। ফোনটা রেখে গেছে। আজকে নাকি ইমপোর্টেন্স ক্লাস আছে। তাই বন্ধুদের সঙ্গে বেড়িয়েছে।
আন্টি কোন বন্ধুর সঙ্গে বেড়িয়েছে। আমি তো বাসায় তাহলে কার সঙ্গে?
আরে মোহনা, ফিহা আছে না ওদের সঙ্গেই বেড়িয়েছে।
নাম দুটো শুনামাত্রই শাফখাত ইতস্তত করে বলে আন্টি তিহা আসলে জানাবেন আমি কল করেছিলাম। আল্লাহ হাফেজ আন্টি। আসসালামু আলাইকুম। বলেই ফোন কেটে দেয় শাফখাত। তিহা বেড়িয়েছি ফিহা ও মোহনার সঙ্গে এই কথার আলে তিহা আসলে কোথায় গিয়েছে। কারণ ফিহা তো একটুআগে হসপিটাল থেকে আসলো। তিহার সঙ্গে দেখা হয়নাই বললো। তাহলে তিহা বাড়িতে মিথ্যা বলে কোন বন্ধুর সঙ্গে বেড়িয়েছে। শাফখাতের দম বন্ধ লাগছে। এরপরে ফিহার কাছে যেয়ে মোহনার নম্বর নেয়। মোহনার কাছে জানতে পারে তিহার সঙ্গে সকাল থেকে কোনো কথা হয় নাই মোহনার। শাফখাত মনে মনে বলা শুরু করলো __
❝ প্রিয়তমা আমার হৃদপিণ্ডের কম্পনের অনুভূতি তৈরি করে। তুমি চলছো দোলাচলে ❞
চলবে,,,
®️রিয়া জান্নাত
#মজিলো_প্রেম_সখার_সনে_১২
তোমাকে না বলেছিলাম আমাকে আজকে কল করবে না। তাহলে কল করছিলে কেনো? তিহার এমন প্রশ্নে রাগে শরীর রি রি করে শাফখাতের। এরপরে বলে কেনো কল করে কি তোমার অসুবিধে করে ফেলছি। কল না করলে কি জানতাম ইমপোর্টেন্স ক্লাসের কথা বলে বাইরে বের হয়েছো। তাও আবার কাদের সঙ্গে? ফিহা আর মোহনাকে সঙ্গে করে নিয়ে? কিন্তু আসল কথা হলো ফিহা আর মোহনার আজকে তোমার সঙ্গে দেখা হয় নাই। এমনকি ফোনেও কথা হয় নাই। তাহলে কার সঙ্গে ইমপোর্টেন্স ক্লাস করতে গেছো তিহা। আমি ছাড়া তোমার লাইফে আর কে আছে?
শাফখাতের এমন কথায় চোখ বুঝে ফেলে তিহা। ফোনটাকে নিচু করে মনে মনে বলে তাহলে শাফখাত আমাকে সন্দেহ করতেছে? এরপরে ফোনটা কানে নিয়ে বলে শাফখাত তুমি ছাড়া আমার লাইফে দ্বিতীয় ব্যাক্তি নাই। আই শোয়্যার আমাকে বিশ্বাস করো। তিহার এমন কথায় চোখ বুঝে । খুবই কষ্ট পায় শাফখাত। এরপরে বলে আমি ডিলনাসিনকে কলেজ পৌঁছে দিই বলে কত কথা শুনতে হয় তোমার কাছে। তোমাকে কতবার বুঝাই। বুঝাতে বুঝাতে ক্লান্ত করে ছাড়ো। আর তুমিই আজকে বলছো তোমাকে বিশ্বাস করতে। আচ্ছা ওয়েট ফোনটা হোল্ড করো আমি কিছু জিনিস পাটাচ্ছি। এরপরে শাফখাত সেই ছবিগুলো পাটিয়ে বলে তিহা হোয়াটসঅ্যাপ দেখো।
তিহা হোয়াটসঅ্যাপ ঢুকেই চোখ উপড়ে তুলে ফেলে। এরপরে বলে তু তু তুমি এই ছবিগুলো কোথায় পেলে? শাফখাত বলে এই ছবিগুলো আমার বন্ধু লিটন সরকার দিয়েছে। ও তোমাকে এই ছেলের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে কফি খেতে দেখেছে। তা তিহা কবে থেকে চলছে এসব? আমাকে তোমার ভালো লাগেনা একটিবার বলতে পারতে। আমি নিজ থেকে তোমার কাছ থেকে দূরে সরে আসতাম। এভাবে চিট করার মানে কি তিহা? জানো তিহা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, দম বন্ধ লাগছে। প্রিয়তমার এই রুপ সহ্য করতে পারতেছি না। ভালো থেকো তুমি আগুন জ্বলুক আমার বুকে। নম্বর টা ব্লক করতেছি। বিশ্বাসঘাতকের জায়গা মনে না রেখে ব্লকে রাখাই ভালো।
এই শাফখাত ফোন কাটবে না পুরো কথা তোমাকে শুনতে হবে। আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি। অন্য কাউকে ভালোবাসার আগে এই দেহের মরণ হবে। এই শাফখাত তুমি শুনছো। তিহা ফোনের স্ক্রিনে দেখে শাফখাত কল কেটে দিছে। তিহা ভেঙ্গে পড়ে। ফোনটা ফেলে দিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। রাহাত এসে বলে কি হয়েছে শাফখাত ভাই আসবে না। রাত বারোটা তো বাজতে চললো। রাহাতের কথায় প্রচন্ড রাগ উঠে তিহার। তিহা রাহাতকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বলে আমি চলে যাচ্ছি রাহাত। তিহার এমন উত্তরে তিহাকে প্রশ্ন পাওয়ার সাহস পেলোনা রাহাত।
শাফখাত প্রিয়তমার এইরুপ সহ্য করতে না পেরে ছাঁদে যেয়ে একমুঠো সিগারেট একটার পর একটা খেতেই থাকে। মনে মনে তিহাকে গা’লি দেয়। তোর ভালো হবেনা তিহা। আমার মনের ভিতর আগুন জ্বালিয়ে তুমি করবে অন্য ছেলের সঙ্গে প্রেম করবে। এই শাফখাত তোকে ছাড়বে না। সিগারেটের মতো তোর জীবন ও আমি পুড়াবো তৈরি থাকেক তিহা।
(★)
কোথায় যাচ্ছো ফিহা। তোমাকে ফাতেমা কিছু বলে নাই। আজকে তোমার ভার্সিটি যেতে হবেনা। কেনো বড়আব্বু? কোথায় ও যেতে হবে আমাকে?
ফাহিম খান মায়াকে ডাক দেয়। মায়া এসে বলে কি হইছে ডাকছো কেন? তোমরা ফিহাকে কিছু বলো নাই। ফিহাকে যে আজ পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে? সেতো বিকালে আসবে তাই কিছু বলি নাই আমরা। তাছাড়া ওদের ছেলের পছন্দ বলেই প্রস্তাব এসেছে। অযথা ভার্সিটি যাবেনা কেনো?
ফিহাকে দেখতে পাত্রপক্ষ আসবে। এই কথা কস্মিনকালেও শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলোনা ফিহা। অধর কামড়ে বলে বড়আব্বু আমি এখন বিয়ে করতে চাইনা। তাছাড়া আজকে সকালবেলা রুটিন দিছে। পরীক্ষা ১৭ দিন পর। তৃতীয় বর্ষ ও তো শেষ। ফাইনাল ইয়ার কমপ্লিট করে আমি বিয়ের কথা ভাববো। এখন এসব বিয়ে টিয়ে নিয়ে ভাবতে চাইনা।
ফিহার উত্তর শুনে ফিরোজ খুশিতে গদগদ হয়ে যায়। যদিও ফিরোজ কেবল জানলো ফিহার বিয়ের কথা। কথাটি শোনামাত্রই ফিরোজ স্থির করে নিছিলো আমি বাধা হয়ে দাঁড়াবো এই বিয়েতে। কিন্তু ফিহার উত্তর শুনে আর কোনো কষ্ট করতে হলোনা ফিরোজকে।
ফিহার মুখের উপর নাকচ করা কথাটি হজম হলোনা ফাহিম খানের। ফাতেমাকে ডেকে বললো ফিহা আমার মুখের উপর এভাবে না করবে কস্মিনকালেও ভাবিনি। ফাতেমা ফাহিমের কথাশুনে ফিহার গালে থা’প্প’র দেয়। নায়ক হয়ে গেছো। পড়ালেখা করিয়েছিলাম এই দিনগুলির জন্য। বড়দের সঙ্গে এভাবে কেউ কথা বলো। বড়দের সিদ্ধান্ত মানতে পারবানা ঠিক আছে। অন্যভাবে বুঝিয়ে বলতে হয়। এইটা কতটা অসম্মানজনক কথা। তোমার বড়আব্বু এই এলাকার এমপি। তার কাছে এসে কথা বলতে সবাই ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যায়। আর তুমি তার ভাইজি হয়ে অসম্মান করছো। সৌজন্যবোধ কই গেলো তোমার ফিহা।
ফিহা গালে হাত দিয়ে বলে মা তুমি আমাকে থা’প্প’র দিলে। আমিতো এমপির সামনে দাঁড়িয়ে নাই মা। আমি দাঁড়িয়ে আছি আমার বড় আব্বুর সামনে। ভাইজি হই বলে ফ্রি হয়ে কথাগুলো বলছি। এটাই কি আমার দোষ।
ফাতেমা তুমি এইটা কি করলে? বাচ্চারা বিয়ের কথা শুনলে এরকম করে। তুমি তাকে বুঝানো বাদ দিয়ে এতো বড় মেয়ের গায়ে হাত তুললে। আমি জানতাম এরকম কিছু হবে। মানুষের সামনে সম্মান যাওয়ার চাইয়ে বাড়িতে সবটা আগে থেকে বুঝেশুনে স্টেপ নেওয়া ভালো। তোমরাতো সবকয়টায় মাথামোটা মেয়েটাকে এখনো এই ব্যাপারে কিছু বলো নাই। এক্ষুণ কি আর আগের যুগ আছে। বিয়েটা হলো সামাজিক মেলবন্ধন। আর এই মেলবন্ধনে দুটির মানুষের মত থাকতে হয়। তোমাকে আমরা হুট করে মানুষের সামনে বসাতে পারিনা ফিহা। এরজন্য তোমাকে ভার্সিটি যেতে মানা করেছিলাম। যাতে তোমাকে এই সময়ে তৈরি করা যায় । ফিহা তুমি পড়াশোনার কথা বলছো না ওরা সব করাবে তোমাকে। সব ধরনের সুযোগ দিবে। তোমার বড়আব্বুকে যদি ভরসা করো তাহলে আজকে ছেলেটির সামনে আসো।
ফিহা ফাহিম খানের কথা শুনে চুপসে যায়। ফিহাকে চুপসে যেতে দেখে ফিরোজ কথা বলা শুরু করে। বাবা তুমি ছোটআব্বুকে ছাড়া কিভাবে ফিহার বিয়ে ঠিক করতে পারো। মেয়েটা তো ওনার। তাই এসব বিষয়ে অগ্রাধিকার ওনার বেশি। আর ফিহাও এখন বিয়ে করতে চাইছে না। তাহলে ছেলেপক্ষের সামনে বসে কি করবে? আর এভাবে ফিহার বিয়ে দিতে পারিনা। জানা নেই শোনা নেই একটা ছেলের হাতে আমরা ফিহাকে তুলে দিতে পারিনা।
ফিহা অবাক হয়ে যায়। ফিরোজের কথাশুনে মনে মনে বলে যাক ধলাবিলাই টা অত্যন্ত আমার পক্ষ নিলো। আমি এখন বিয়ে করতে চাইনা। আর হুট করে অপরিচিত কারো হাত ধরবো কিভাবে?
ফিরোজ তুমি ফিহার ভাই হও। এসব চিন্তা তোমার মাথায় আসবে স্বাভাবিক। কিন্তু ফিহাও যে আমাদের মেয়ে হয়। তাই এসব চিন্তা তোমার চেয়ে আমাদের বেশি। আর ফুয়াদের কথা বলছো। ফুয়াদের সম্মতি আছে এই বিয়েতে দুপুর বেলা ফুয়াদ, সিয়াম বাসায় চলে আসবে। শাফখাত দল নিয়ে মিটিং এ আছে ওকেও বলা আছে। ঠিক সময়ে বাড়িতে আসবে। তোমাকে জানিয়ে রাখলাম তুমি দুপুরবেলা আজকে চলে আসবা। ছেলেকে দেখে পরখ করে নিয়ো ছেলেটা ফিহার যোগ্য কিনা। বাবা হই তোমার আমার উপর ভরসা রাখো।
ফিরোজের হৃদপিণ্ড কেপে উঠে। মনে হয় হৃদপিণ্ড টা ধরাস ধরাস করে লাফাচ্ছে। চোখমুখ লাল হয়ে যায়। প্রচুর ঘামা শুরু করে। বুকের বা পাশে চিন চিন ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে। ফিরোজ এই অবস্থায় আর বেশিক্ষণ দাড়িয়ে থাকলে দম বন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার উপক্রম হবে। এসব কিছু এড়াতেই ফিহাকে বলে তুমি থাকো। অভিনন্দন নতুন পদে পা বাড়ানোর জন্য ।
(★)
মোহনা ভার্সিটিতে এসে তার বান্ধবী নামক ভূত দুইটার একটাকেও খুজে পাচ্ছেনা। মোহনা তিহাকে বাড়বাড় ফোন দেয় কিন্তু তিহার নম্বর দুঃখিত বলে। মোহনার চিন্তা হওয়া শুরু করে সকাল থেকে মেয়েটা ফেসবুকে নাই। কয়েকবার ডায়াল করলাম শুধুই দুঃখিত বলছে। তিহার আবার কিছু হলো নাকি? ভার্সিটিতে আসলে এতক্ষণে এসে যেতো। কারণ তিহা সবসময় ফার্স্ট টাইম ভার্সিটিতে আসে। আর একজন তো স্যারের বউ স্যার না আসা পযন্ত সেও আসবেনা স্বাভাবিক। তাও শাঁকচুন্নি টাকে ফোন দিই। কোথায় সে এখন? ফিহার নম্বরে ডায়াল করে মোহনা। ফোন রিং হয় কিন্তু ফোন কেউ তুলেনা। এভাবে তিনবার ডায়াল করার পর মোহনা বিরক্ত হয়ে যায়। মনে মনে বিড়বিড় করা শুরু করে এই ফিহার আবার কি হলো? কালকেও শুনলাম কাব্যর জন্য খাবার নিয়ে হসপিটালে গেছে। এই ফিহা আবার কাব্য ভাইয়ার প্রেমে মজিলো নাতো? কিন্তু এতদিন পাত্তা দিলোনা কাব্যকে। হুট করে কাব্যর জন্য এতো দরদ করছে ক্যান ফিহা। আর আমরা এতদিন ভাবলাম ফিহা বোধহয় তলে তলে ফিরোজ স্যারের সঙ্গে সা’ইকেল চালাচ্ছে। এসব কি ভাবছি ছ্যাহ্।
এমন সময় মেহেদী এসে বলে কি হলো সখী বান্ধবীরা আজকে আসে নাই। একাই একাই কি বিরবির করছো। তুমি চাইলে আমিয়ো তোমার সঙ্গে বীরবীর করতে পারি। আমাকে সঙ্গী করবে। মেহেদীর অভান্তর কথা শুনে মোহনার মুড খারাপ হয়ে যায়। মেহেদীকে বলে এই ছেলে তুমি বুঝোনা তোমাকে দেখলে আমার মেজাজ গরম হয়ে যায়। গতকাল শুক্রবার ছিলো শুধুমাত্র তোমার কারণে আমি ব্যালকনিতে আসতে পারি নাই। বখাটে ছেলেদের মতো আমার বাড়ির সামনে সারাদিন ওইভাবে দাড়িয়ে ছিলে। আবার ভার্সিটি যাওয়া আসার পথে তো আছেই ডিস্টার্ব। এখন আবার বান্ধবীরা নাই বলে ক্যাম্পাসে এসেও উক্তত্য করা শুরু করছো? জুনিয়র হয়ে সিনিয়রকে ডির্স্টাব, জানো আমি যদি চাই তোমাকে সবার সামনে শাস্তি দিতে পারি।
আমি তোমাকে ভালোবাসি মোহনা। তোমার কোকিলের মতো মধুর স্বর আমার হৃদয়ে বিরাজ করছে। তোমার দেওয়া শাস্তি আমার জন্য ভালোবাসা।
ভালোবাসা বের করছি তোর। তোকে শাস্তি না দিলে তুই মানুষ হবিনা। দ্বারা তোর ভালোবাসার আজকেই দফারফা করবো। মোহনা চিৎকার করে তৃতীয় বর্ষের বন্ধুদের ডাক দেয়। সবাই ক্যাম্পাসে ভীড় করে দ্বারায়। মাঝখানে মোহনা আর মেহেদী দাড়িয়ে থাকে। সবাই এসে বলে মোহনা কি হয়েছে? ডাকলি কেনো?
এই ছেলেটাকে তোরা দেখতে পারছিস না এর নাম মেহেদী। অর্নাস ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। একটা জুনিয়র ছেলে হয়ে আমাকে ডিস্টার্ব করে। সাহস করে বারবার বলে আই লাভ ইউ। এমনকি যাতায়াতের পথে আমার পিছনে পিছনে সাইকেল ধাওয়া করে। আবার বন্ধের দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমার বাড়ির সামনে আলুর চপস বেঁচে। মোটকথা আমি যেখানেই থাকি সেখানেই ওর উপস্থিতি। জুনিয়র হয়ে সিনিয়রকে অসম্মান করার জন্য একে কি শাস্তি দিবো বলোতো বন্ধুরা। কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে মোহনা। এরপরে তপ্ত শ্বাস ছাড়ে মোহনা।
মোহনার কথাগুলো শুনে মেহেদী ফিক করে হেসে দেয়। নিজের এলোমেলো চুলগুলো বামহাত দিয়ে ঠিক করে মেহেদী। এরপরে মোহনার বন্ধুদের বলে আপনারা কি শাস্তি দিবেন দেন। আমি মাথাপেতে নিবো। কারণ আমি মোহনাকে অনেক ভালোবাসি।
মোহনার বন্ধুগুলো বলে ভালোবাসা যখন সম্মানহানির কারণ হবে। তখন বুঝবে ভয়ংকর ভালোবাসা করা উচিত হয় নাই। জুনিয়র হয়ে সিনিয়রকে ডিস্টার্ব করার অপরাধে, এই রোদে তোমাকে কান ধরে থাকতে হবে দুপুর ২ টা পযন্ত। পারবে এই রোদে কান ধরে সবার সামনে থাকতে।
মোহনাকে ভালোবাসার কারণে দুপুর ২ টা কেনো সারাজীবন কান ধরে রাখতে পারবো? মোহনা বলে তাহলে দাড়িয়ে আছো কেনো? কান ধরো যাও।
এই আপনার সরেন আমি কান ধরবো। মেহেদী সবার সামনে কান ধরে দাড়িয়ে পড়ে। আর মোহনার বন্ধুগুলো হাসতে হাসতে সেখান থেকে চলে যায়। মোহনাও চলে যায় ওদের সঙ্গে।
ভার্সিটির সব স্টুডেন্টরা যাতায়াতের পথে মেহেদী কে জিজ্ঞেস করছে এই ছেলে তুমি কান ধরে আছো কেন? মেহেদি চিৎকার করে বলে আমি জুনিয়র হয়ে সিনিয়রকে ভালোবাসছি। তাই আমার ভালোবাসার মানুষের শাস্তি গ্রহণ করছি। সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে বলে আমি মোহনাকে ভালোবাসি। মোহনা ওর বাকি বন্ধুদের বলে কাজটা ঠিক হলো দোস্ত। এই ছেলে তো মাইক বাজিয়ে বলছে ও আমাকে ভালোবাসে । এতে তো আমার রেপুটেশন সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। সবাই জেনে যাচ্ছে।
আরে জানতে দে। তুইতো আর সেই ছেলেকে ভালোবাসিস না। এরপরেও যদি এই ছেলে ভালোবাসার কথা তোকে আরও বলে তাহলে লেকচারার ফিরোজ স্যারকে বিচার দিবো।
চলবে,,,,
®️রিয়া জান্নাত