#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_08
ইশরা ক্লাশরুমে লাষ্টবেঞ্চে বসে উদাস মনে জানালার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।কলেজে আসার পর থেকে সবার মুখে ইশরা এক গানই শুনছে।নতুন টিচার আসবে,নতুন টিচার আসবে।সবাই এই এক বিষয় নিয়েই মাতামাতি করছে।সবার মুখে একি কথা, কলেজে নাকি নতুন টিচার আসবে।নতুন টিচার দেখতে কেমন হবে?সুন্দর হ্যান্ডস্যাম হবে নাকি মোটা পেটওয়ালা হবে?মেরিড না আনমেরিড হবে?রাগি হবে না কি নম্রভদ্র হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
ইশরার এই সব বিষয়গুলো বিরক্ত লাগে।তাই সে নিজের মত চুপচাপ করে বসে রয়েছে।
ইশরার ফ্রেন্ড লিপি এসে ইশরার পাশে বসে বলল….
—কিরে কি হয়েছে?এমন উদাস মনে বসে বসে কার কথা ভাবছিস?
—কারো কথাই ভাবছি না।আমার সবার আলোচলার টপিক গুলো যাস্ট বিরক্ত লাগছে।তাই চুপ করে এখানে বসে রয়েছি।
লিপি ইশরার কপালে,গলায় হাত ছুইয়ে বলল……
—কিরে তোর কি শরীর টরীর খারাপ নাকি?জ্বরটর এসেছে? ডাক্তার ডাকবো?
ইশরা কপালে ভাজ ফেলে বলল……
—শরীর খারাপ হইতে যাইবো কেন?দেখোস না ভালো মানুষ তোর সামনে বইসা রইছি।ডাক্তার আমারে না দেখাইয়া তুই যা ডাক্তার এর কাছে।
—তয় তুই এমনে কথা কইতাছোস কেন?
—কেমনে কথা কইতাছি।ভালোমত কথা কইলে কি তোর ভালো লাগে না?
লিপি দাত কেলিয়ে হেসে বলল…..
—না।তোর ভালো কথা আমার ভালো লাগে না।তোরে চুপচাপ থাকতে দেখতে তো আরো ভালো লাগে না।
ইশরা কিছু না বলে আবার জানালার দিকে তাকিয়ে উদাস মনে বলল……
—ভালো লাগছেনারে।মা আর ইফুর সাথে আবার ঝগড়া হয়েছে।
—কেন?কালকের বিষয়টা কি আন্টি আচ করতে পেরেছে?
—হুম ইফু যে কাল আবার ঝামেলা করেছে সেটা মা কিভাবে যেন জেনে গেছে।তাই ইফুকে অনেক বকেছে।
লিপি সান্তনা দিয়ে বলল……
—থাক মন খারাপ করিস না।ঠিক হয়ে যাবে।জানিস তো আন্টি কেমন।এসব ঝামেলা সে পছন্দ করে না।তাই ইফু আপুকে বকেকে।
—সব আমার জন্য হল।আমারি সব দোষ ।
—শুধু শুধু নিজের দোষ কেন দিচ্ছিস।আপু যা করেছে বেশ করেছে।ঐ রবিন অনেক বার বেরেছিল।আপু দু বার ঐ রবিনকে ওয়ার্নিং দিয়েছে যাতে তোর সাথে মিসবিহেব না করে।তারপরেও শুনেনি।আর কাল তো সব সিমা পার করে তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করল।কত বড় সাহস ওর খারাপ ব্যবহার করেও শান্তি মিলেনি সাথে তোর হাত ধরে হাত সিগারেটে দিয়ে পুড়ে দিল।আপু যা করেছে বেশ করেছে।আপু ঐ রবিন্নারে আরো কয়েকটা লাগালে খুশি হতাম।(রেগে)
ইশরা কিছু না বলে একি ভাবে বসে রইল।কেন যেন তার এই বিষয়ে কথা বলতেই ইচ্ছে করছে না।
💦💦💦💦💦💦
জিদান ইশফাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বসে আসে।ইশফা এখনো নাক টেনে কান্না করেই যাচ্ছে।সামনে রিধি আর তুশি অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।রিধির মুখে আশ্চর্যের ছাপ এর থেকে ভয়ের ছাপ বেশি ফুটে উঠেছে।রিধি ইশফা আর জিদানকে দেখার সাথে সাথে বার বার আশেপাশে তাকিয়ে কিছু একটা খোজ করছে।
জিদান ইশফার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল…..
—থাম এবার।আমি কি মরে গেছি।এমন মরা কান্না জুড়ে দিলি কেন?
জিদানের কথা শুনে ইশফা নাক টেনে রাগি গলায় বলল….
—একদম উল্টাপাল্টা কথা বলবে না।বলে দিলাম।
জিদান মুচকি হেসে বলল…..
—ঠিক আছে আর বলবো না।এবার কান্না বন্ধ কর।তোর এই নাক টেনে কান্নার কারনে তোর বোচা নাক কিন্তু আরো বোচা হয়ে যাবে।
ইশফা জিদানের থেকে সরে কপট রাগ দেখিয়ে বলল…..
—তুমি আবার আমার নাক নিয়ে কথা শুনাচ্ছো।একদম আমার নাক নিয়ে কোন কথা বলবে না।আমার নাক যথেষ্ট খাড়া আছে।
জিদান ইশফার নাক টেনে দিয়ে মুচকি হেসে বলল……
—এই তো আমার বুচি তার রুপে ফিরে এসেছে।আসলে আমার বুচি বোনটাকে এই রাগি রুপেই মানায়। এমন ছিদ কাদুনে রুপে নয়।
জিদানের কথা শুনে ইশফা কান্নামাখা মুখে হাসি ফুটে উঠল।
তুশি অবাক হয়ে বলল……
—ইফু ইনিই কি জিদ ভাইয়া।
ইশফা চোখের পানি মুছে বলল….
—হুম ইনিই আমার রাগি ভাইয়া মানে আমার জিদান ভাইয়া।
রিধি অবাক হয়ে বলল……
—ইনি তোর ভাই!না মানে তুই না বলেছিলি তোর কোন ভাই নেই?
ইশফাঃহুম আমি আপন ভাইয়ের কথা বলেছিলাম।ভাইয়া তো আমার চাচাতো ভাই।
রিধি একটা বড় করে নিশ্বাস ফেলে বিরবির করে বলল…..
—tnx আল্লাহ্ বাচালে।তা না হলে সিডর, ঘূর্ণিঝড় সব শুরু হয়ে যেত।মনে মনে তো ঘূর্ণিঝড়ের অভাস পাচ্ছি।নাকি শুরু হয়ে গেছে কে জানে।
ইশফাঃ ঐ রিধি একা একা কি এমন বিরবির করছিস?
রিধি ইশফার ডাকে থতমত খেয়ে বলল…..
—কিছু না।বলছি কি তোর ভাইয়া দেখতে কিন্তু অনেক হ্যান্ডস্যাম।(লাজুক হেসে)
ইশফা গর্ববোধ করে বলল…..
—আমি জানি আমার ভাই দেখতে হ্যান্ডস্যাম।জানিস আমার ভাইয়ের পিছে মেয়েদের লাইন লেগে থাকে।কিন্তু আমার বেচারা ভাই কারো দিকেই নজর দেয় না।
জিদান ইশফার মাথায় গাট্টা মেরে বলল……
—আর তেল মাখতে হবে না।আমার পরিচয় তো ওদের দিলি।আমাকেও একটু ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দে।
ইশফাঃওরা দুজন আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।ও তুশি(তুশিকে দেখিয়ে)ও রিধি (রিধিকে দেখিয়ে)।তুশির সাথে আমার বন্ধুত্ব ক্লাশ নাইন থেকে।আর রিধির সাথে এখানে এসে বন্ধুত্ব হয়েছে।
💦💦💦💦💦💦
সবাই মিলে কিছুক্ষন আড্ডা দেওয়ার পর জিদান বলল….
—আজ উঠি।আমি জানি তোর মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে সবগুলোর উওর পাবি।রাতে সময় করে ফোন দিস।
ইশফা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল।
জিদান দাড়িয়ে বলল…..
—আজ আসি।ভালো থাকিস।এই যে ছোট্ট বোনরা তোমরা আবার এই ভাইকে ভুলে যেও না।(রিধি,তুশিকে উদ্দেশ্য করে)
রিধি কাদো কাদো মুখ করে বলল….
—ভাইয়া জানি আমরা দেখতে বেশি সুন্দর না।তাই বলে এভাবে ছোট বোন বলে আমাদের হৃদয় চুরমার করে দেওয়া কি ঠিক?
রিধির কথা সুনে ইশফা,তুশি মিটমিট করে হাসতে লাগলো।জিদান কিছুক্ষন অবাক হয়ে রিধির দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে বলল…..
—কে বলেছে তোমরা দেখতে সুন্দর না।আমার এই ছোট্ট বোনগুলো দেখতে মাশাল্লাহ্ অনেক সুন্দর।
রিধি বাচ্চাদের মত ঠোট ফুলিয়ে বলল…..
—আবার বোন।দিল টুট গেয়া।
এবার আর কেউ নিজেদের হাসি আটকিয়ে রাখতে পারলো না।সবাই দম ফাটিয়ে হাসতে লাগলো।
💦💦💦💦💦💦
সান বেডের এক কোনে এক হাতে মাথা চেপে বসে রয়েছে।অপর হাত দিয়ে যে টপটপ করে রক্ত পরছে সেদিকে তার খেয়াল নেই।
সিনথিয়া দোয়া-দুরুদ পরে গুটিগুটি পায়ে সানের রুমের দরজার সামনে এসে দাড়ালো।কিছুক্ষন দরজায় দাড়িয়ে থেকে আল্লাহর নাম নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।
সিনথিয়া সানের রুমে এসে পুরো রুমে একবার চোখ বুলিয়ে নিল।রুমের কোন জিনিস তার জায়গা মত নেই।সব কিছুই এলোমেলো হয়ে আছে।ফ্লোরে মধ্যে কাচের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
(সানের রুমের এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণ হল ইশফা।একে তো সান কালকের থেকে ইশফার উপর রেগে ছিল।আর আজ যখন দূর থেকে ইশফাকে অন্য একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে দেখলো।তখন সান নিজের মনেই খেয়ালি পোলাও পাকিয়ে রাগ করে বাড়িতে এসে নিজের রাগ কমাতে রুমের জিনিসের উপর অত্যাচার চালিয়েছে)
সিনথিয়া বড় করে একটা নিশ্বাস নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে পা ফেলে সানের কাছে গিয়ে বসল।
সান সিনথিয়ার উপস্থিতি বুঝতে পেরে রাগি গলায় বলল……
—সিনথি চলে যা এখান থেকে।আমাকে একা থাকতে দে।
সিনথিয়া কোন কথা না বলে সানের হাত জড়িয়ে ধরে ওর কাধে মাথা রেখে বলল…….
—ভাই আমি যে তোকে এভাবে ধরেছি,আবার মাঝে মাঝে জড়িয়ে ধরি তাতে কি আমার বর আমাকে খারাপ ভাববে?সে কি রাগ করবে আমার উপর?
সান কপাল থেকে হাত সরিয়ে রাগি গলায় বলল….
—কি সব কথা বলছিস?তোর বর আসলো কোথার থেকে?গাজা টাজা খাসনি তো আবার।দেখ আমি এখন একটুও ফাজলামোর মুডে নাই।যা ভাগ এখান থেকে।
—আরে ভাই ধর না আমার বর আছে।ধরতে অসুবিধে কোথায়?
সান জানে এই মেয়ে তার মুখের কথা না সুনে তাকে ছাড়বে না।যতোই সে রাগ দেখাক না কেন।তাই সে কথা না বাড়িয়ে রাগি গলায় বলল…..
—রাগ করার কি আছে।তুই আমার বোন। তুই আমাকে আমি তোকে জড়িয়ে ধরতেই পারি।এখানে তো রাগের কিছু দেখছি না।
—তাহলে তুই রাগ করে ঘরে সিডর, ঘূর্ণিঝড় বইয়ে বসে রয়েছিস কেন?
সান কপালে ভাজ ফেলে বলল…..
—মানে?
সিনথিয়া মুচকি হেসে বলল……
—মানে তোর জাসুস ফোন করেছিল।ভাবীর সাথে যাকে দেখে জেলাসিতে নিজেকে দেবদাস বানিয়ে ঘরে বসে রয়েছিস সে ভাবীর ভাইয়া।
#চলবে,
(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ)