#মিথ্যা_অপবাদ
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_১৫
পরের দিন ইতি আর সোনালী কেউ কলেজ যেতে পারলো না। ইতির জ্বর আর সোনালীর মামাতো বোনের এক মাত্র মেয়ের প্রথম জন্ম বার্ষিকী।
সোনালী ওর মামার বাড়ি চলে গেলো। কোমরে আঁচল গুজে সোনালীর মামাতো বোন কাজ করছে। এক মাত্র মেয়ের জন্মদিন। বাড়ির সবাই হাসি খুশি থাকা সত্বেও সোনালীর মামাতো বোনের মুখে কোনো হাঁসি নেই। সবাই তার কারণ জানে কিন্তু বলতে চায় না। সোনালী ওর মামাতো বোনকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো…..
—” আপুউউউউউউউউ কেমন আছো তুমি?”
—” ভালো তুই?”
—” তোমাকে দেখে ভালো মনে হচ্ছে না আমার।”
—” আমার আবার কি হলো?”
—” তুমি ওই শয়তান লোকের কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছো তাই না?”
–” ওর কথা আর মুখে আনবি না । আজ আমার মেয়ের ভালো একটা দিন ওর নাম বলে খারাপ করিস না।”
—” মানহাপু প্লিজ রাগ করো না। তোমার মুখে হাঁসি নেই বলে ওই বাজে লোকের নাম বলতে হচ্ছে।”
—” হুম বুঝছি এখন যা মাওয়া মার কাছে।”
—” যাচ্ছি আমার কিউটি পাইকে দেখতে।”
মানহা হলো সোনালীর মামাতো বোন। ছয় বছরের বড় মানহা। কিন্তু সোনালীর সাথে তার বেশ জমে। তিন বছর আগে বিয়ে হয়েছিলো মানহার পারিবারিক ভাবে কিন্তু দুই বছর সংসার করার পর ওদের সম্পর্কের সমাধি ঘটে।
—” আমার বাবুটার আজ বার্থডে কি সুন্দর লাগছে তোকে। তুই একদম তোর মায়ের মত হয়েছিস । বেশ হয়েছে তোর ওই শয়তান বাবার মত হলি না। আমার একটা ছেলে থাকলে তোকে ছেলের বউ করে নিয়ে যেতাম। দেখ এখনো তোর আন্টির বিয়ে হলো না।”
সোনালী এইসব কথা বলছে আর হাসছে । এক বছরের মাওয়া কি বুঝলো কে জানে সেও মিটমিট করে হাসতে লাগলো।
।।
।।
।।
।।
ইতির জ্বর খুব বেড়েছে। ডক্টর এসে মেডিসিন দিয়ে গেলো। নাহিদকে বার বার ফোন দিচ্ছে কিন্তু ও বিজি বলে রেখে দিচ্ছে। ইতির খুব রাগ হলো নাহিদের উপর।
—” এই লোকটা কি আধো আমায় ভালোবাসে? সারাদিন কি এত ব্যস্ত সে? আমার অসুস্থতার কথা শুনেও আসলো না আমায় দেখতে। এই লোকের সাথে কি আমার বিয়ে হলে আমি সুখী হতে পারবো?”
ইতি দরজা বন্ধ করে শুয়ে ছিল। জানালা দিয়ে কিছু পড়ার শব্দে ইতি তাকিয়ে দেখলো হৃদয় দাঁড়িয়ে আছে ক্যাবলা কান্তের মতো হাসছে……
—” আপনি আপনি এইখানে কিভাবে আসলেন?”
—” কেনো পাইপ বেয়ে।”
—-” মাথা খারাপ আপনার আজব?”
হৃদয় ইতির কাছে এসে বসলো। ইতির কপালে হাত দিয়ে বললো……
—” আমার জন্য তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না?”
—” আপনি জানলেন কিভাবে আমার জ্বর এসেছে?”
—” ভাবী বললো। গতকাল তোমার সাথে একটু বেশীই করেছি আমি। ”
হৃদয় কান্না কান্না ভাব নিয়ে বললো। ইতির খুব কষ্ট হচ্ছে হৃদয়ের মুখ দেখে। নাহিদকে বার বার ফোন দিচ্ছে কিন্তু ও ব্যাস্ত আর হৃদয়কে কিছু না বলা সত্বেও হৃদয় কত কষ্ট করে এসেছে।
—” সরি আর এমন করবো না তোমার সাথে।”
ইতির মাথা হৃদয় তার বুকে নিয়ে বললো। ইতির ভালোই লাগছে হৃদয়ের বুকে মাথা রাখতে কিন্তু কিছু একটা সংকোচ হওয়ায় মাথা সরিয়ে নিয়ে বললো…..
—” আপনি প্লিজ চলে যান। আমি এখন অন্য জনের হবু বউ। আমার পক্ষে আপনার সাথে রিলেশন করা সম্ভব না।”
—” এইসব কথা পরে ভাবা যাবে তুমি এখন বিশ্রাম করো। ওয়েট !”
হৃদয় আবারো জানালার পাশে ছোট বারান্দায় দাঁড়িয়ে কিছু একটা তুলতে লাগলো…..
—” কি তুলছেন?”
—-” সসসসস ।”
হৃদয় এক দড়ি টেনে তুলছে। দড়ির শেষ মাথায় একটা ঝুড়ি দেখেই বুঝা যাচ্ছে ফলের ঝুড়ি…..
—” এত ফল কে খাবে?”
—” তুমি। আর শুনো অনেক চকোলেট এনেছি খেয়ে নিও। বায়?”
—” কিভাবে যাবেন আপনি এখন?”
—” যেভাবে এসেছিলাম সেইভাবেই।”
—” পরে হাত পা ভাঙলে বলবেন ইতির জন্য ভেঙেছে।”
ইতি মুখ ফুলিয়ে বললো। হৃদয় ইতির নাক চেপে ধরে বললো….
—” তোমাকে না জ্বালিয়ে কিচ্ছু হবে না। আসছি নিজের যত্ন নিও।”
—” হুহহহ।”
হৃদয় পাইপ বেয়ে আবারো নিচে চলে গেলো। ইতি হৃদয়ের এমন কাণ্ড দেখে হাসলো। ওর মনে এখন হৃদয়ের জন্য আলাদা কিছু অনুভব করতে লাগলো…….
।।
।।
।।
।।
।।
—” সোনালী তোর হবু বর কে তো দেখালি না এখনো?”
মাওয়া কে নিয়ে খেলায় ব্যাস্ত ছিল সোনালী। মানহার কথা শুনে পিছনে তাকিয়ে বললো…..
—” ওই সাদা ভাল্লুককে দেখতে চাও তুমি?”
—” হাহাহা সাদা ভাল্লুক কি কিউট নাম রে।”
—” কিউট না ছাই আস্ত একটা অসভ্য ছেলে।”
—” হিহিহিহি দেখেই বুঝা যাচ্ছে তোদের প্রেম জমে ক্ষীর হয়ে গেছে।”
—” ওই আনরোমান্টিক মানুষের সাথে প্রেম তাও আবার আমি জীবনে ভাবা যায়।”
মানহা সোনালীর কথা শুনে হাসছে…..
—” ওকে দেখি তোর ওই আনরোমান্টিক মানুষটাকে।”
—” এই নেও দেখো।”
সোনালী ফোন দিলো মানহার হাতে। মানহা ফোনের স্কিনে তাকিয়ে আরিয়ানকে দেখে চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
—” আপু কান্না করছিস কেনো কি হয়েছে?”
—” ও তোর হবু বর?”
—” হুম চিনিস নাকি?”
—-” নাহ আমি চিনবো কিভাবে?
—” কান্না করছিস কেনো?”
মানহা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। সোনালী বার বার জিজ্ঞাসা করার পর বললো….
—-” নাহিদ মাওয়ার জন্য কিছু গিফট পাঠিয়েছে।”
—-” ওই বাজে লোক তোমাকে আর বাবুকে মানতে নারাজ আবার গিফট দিয়েছে কেনো? আপু তুমি চুপ করে আর থেকো না পুলিশের কাছে গিয়ে মামলা করো।”
—” কিছু করতে হবে না। আমি ওর জিনিস ফিরিয়ে দিয়েছি আর খবরদার বাসায় এই কথা কাওকে বলবি না ওকে।”
—” হুম।”
—” এই তো আমার গুড বোন। আমি এখন আসি কাজ আছে তুই মাওয়াকে দেখ।”
—” আচ্ছা।”
মানহা তাড়াতাড়ি করে সোনালীর কাছ থেকে চলে আসলো। অন্য একটি রুমে দরজা বন্ধ করে কাঁদতে লাগলো মানহা। যাকে সে এতটা ভালোবাসতো আজ সেই লোকটাই তার বোনের হবু স্বামী।
—” নাহিদ সে তো খুব বিজি তার কি আমাদের কথা মনে আছে যে গিফট পাঠাবে। নিজের বোনকে কিভাবে বলবো যে তোর হবু বর আমার প্রাত্তন ছিলো। খুব ভালোবাসতাম তাকে কিন্তু সে আমার সাথে বিশ্বাঘাতকতা করেছে। আমি চাই না এইসব বলে তোকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। তোর চোখে আমি ওর জন্য ভালোবাসা দেখেছি। ”
।।
।।
।।
।।
সোনালী মাওয়ার জন্মদিন পালন করে নিজের বাসায় চলে আসে। এইভাবে আরো পাঁচদিন কেটে যায়। ইতি এখন সুস্থ্য। হৃদয় আর ইতির এখন প্রচুর কথা হয়। ইতি বুঝতে পারে ও নাহিদকে না হৃদয়কে ভালোবাসে। কথাটা ও আব্বু আম্মুকে বলতে হবে……
—” আব্বু তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো?”
ইতি ভয়ে ভয়ে বললো……
—” হুম বলো?”
—” আমি এই বিয়ে করতে ইচ্ছুক না আব্বু।”
—” হটাৎ এমন কেনো মনে হলো তোমার?”
—-” আব্বু নাহিদের সাথে আমার মিল হয় না। ও সারাদিন ব্যাস্ত থাকে আমাকে সময় দিতে পারে না।এখন এক প্রকার বিরক্ত লাগে ওকে।”
—” কথাটা তোমার আরো আগে বলা দরকার ছিল আমাকে।”
—” সরি আব্বু। প্লিজ আব্বু বিয়ে তো এখনও অনেক দেরি আছে । প্লিজ আব্বু ওদের বারণ করে দাও।”
—” তুমি যাও দেখছি আমি।”
—” ওকে আব্বু।”
ইতি চলে যায়। ইতির আব্বু কিছুক্ষণ ভেবে নাহিদের বাসায় বারণ করে দেয় এই বিয়ে হবে না।
নাহিদ এই কথা শুনে রেগে বোম হয়ে আছে। ওকে রিজেক্ট করা ও মানতে পারলো না। ইতিকে ফোন দিলো……
—” আসসালামু আলাইকুম।”
—” বিয়ে কেন্সেল করার কারণ কি?”
—” সালামের উত্তর দিয়া ওয়াজিব। সালামের জবাব দিন।”
—” তোমার ওই ঘ্যানঘ্যান শেষ হলে আমার উত্তর দেও । আমার হাতে এত বেশি সময় নেই।”
—” আপনার ব্যাবহারের জন্য।”
—” তুমি আমার ব্যাবহার নিয়ে কথা বলছো সাহস তো খুব বেশি হয়ে গেছে তোমার। নাকি এখন অন্য কেউ আসছে তোমার লাইফে?”
—” ঠিকই বলেছেন আপনি। আমার লাইফে এখন অন্যজন এসেছে তাকে আমি খুব ভালোবাসি।”
—” ভালোবাসা মাই ফুট। আমাকে রিজেক্ট করার জন্য তোমাকে সুখে থাকতে দিবো না। শুধু অপেক্ষা করো।”
—” দেখা যাবে। আপনার সময় শেষ এখন। খুব বিজি মানুষ পাঁচ মিনিট কথা বলার জন্য হয়তো খুব বেশি লস হয়ে যাচ্ছে তাই রাখছি ভালো থাকবেন ভাইয়া।”
ইতি ভাইয়া বলে ফোন কেটে দিলো। নাহিদ এখন রাগে গজগজ করতে লাগলো। ইতিকে খুন করতে মন চাচ্ছে ওর।
—-” আমাকে আজ পর্যন্ত দুইটা মেয়ে ছাড়া আর কেউ রিজেক্ট করতে পারে নাই। মানহা ওকে তো স্কুল লাইফ থেকেই পছন্দ করতাম কিন্তু ও রিজেক্ট করলো। শুনলাম ভার্সিটি লাইফে গিয়ে কাওকে পছন্দ করেছে তাই তো যে ছেলেকে পছন্দ করেছে তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে হাত মিলিয়ে ওদের আলাদা করলাম। মানহা কে বিয়ে করলাম প্রেগনেট অবস্থায় ওকে ওর বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম আজ পর্যন্ত যোগাযোগ করলাম না। এই নাহিদকে কেউ রিজেক্ট করলে নাহিদ তাকে ছেড়ে দেয় না তুমিও ছার পাবে না ইতি।”
।।
।।
।।
।।
ইতি সোনালী কলেজ থেকে বাসায় ফিরছিল তখন…….
চলবে ……
বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন।