মিষ্টিমধুর প্রতিশোধ পর্ব-৩৬

0
403

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ৩৬
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ইভানা ও ফাহিম আজ একসাথে ঈদের শপিং করার উদ্দেশ্যে বের হচ্ছে। গতকাল ফারহান কোরবানি দেওয়ার জন্য গরু কিনে এনেছে। এখন শুধু শপিং করাই বাকি৷ তাহলেই ঈদের সব প্রস্তুতি শেষ।

ফারজানা বেগমকেও সাথে নিতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু ফারজানা বেগমের এত ভিড়ভাট্টা ভালো লাগে না। সেই কারণে তিনি আসলেন না। বলে দিলেন, তার জন্য পছন্দমতো একটা শাড়ি কিনে নিতে। কেউ আর কথা বাড়ালো না।

ইভানা ও ফাহিম যমুনা ফিউচার পার্কে এলো শপিং করতে। ফাহিম ইভানার সাথে শপিং মলে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে গেল৷ ইভানার কোন ড্রেসই পছন্দ হয় না আবার পছন্দ হলেও সেটা নিয়ে দ্বিধাবোধ করে যার কারণে ঘন্টা খানেক লেগে গেল ড্রেস কিনতে। ইভানা দুটি গ্রাউন,একটি জামদানী শাড়ি সাথে মেকআপ ও কসমেটিকস নিয়ে নিলো। ফাহিমও নিজের জন্য শার্ট, প্যান্ট নিলো৷ অবশ্য তার বেশি সময় লাগল না।

ইভানার চোখ গেল একটি লাল পাঞ্জাবির দিকে। যেখানে অনেক সুন্দর কারুকাজ করা। ফাহিমকে অনেক ভালো মানাবে। তাই ইভানা ফাহিমকে পাঞ্জাবিটা দেখিয়ে বলল,
‘এটা নিতে পারেন৷ আপনাকে অনেক ভালো মানাবে।’

ফাহিম মৃদু হাসল। তারও পাঞ্জাবিটা বেশ লেগেছে। পাঞ্জাবিটা নেওয়ার জন্য দুজনে মিলে পছন্দ করে ফারজানা বেগমের জন্যেও কয়েকটা শাড়ি কিনলেন।

শপিং শেষ করে বাইরে এসে ইভানা বলল,
‘চলুন এখন কিছু খেতে যাই।’

‘হুম, পাশেই একটা ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে যাই চলো।’

‘ওসব রেস্টুরেন্টের খাবার আর ভালো লাগে না। চলুন না দুজনে মিলে ফুচকা যাই।’

‘ফুচকা তো অস্বাস্থ্যকর খাবার।’

‘আপনি কি বুয়েটের স্টুডেন্ট না মেডিকেল স্টুডেন্ট? এত স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবলে আর বাঁচতে হবে না। কতো মানুষ তো ফুচকা খায়, আমিও তো কত খেয়েছি কই আমার তো কিছু হয়নি। চলুন না ফুচকা খাই।’

ইভানা জোরাজোরি করতে শুরু করলে আর না করল না ফাহিম। রাজি হয়ে গেল। কিছুটা দূরে যেতে একটা ফুচকার দোকানের কাছে গেল৷ ইভানা তো আরামসে ফুচকা খেতে লাগল। কিন্তু ফাহিমের অবস্থা কাহিল। ফুচকা মুখে দিতেই ঝালে তার মুখ যেন জ্ব’লে গেল। ফাহিম ঝাল একদম সহ্য করতে পারে না। তার ফর্সা মুখশ্রী রক্তিম বর্ণ ধারণ করল। ইভানার নজর এড়ালো না সেটা। ইভানা জিজ্ঞেস করল,
‘কোন অসুবিধা হয়েছে আপনার?’

‘পানি…আমাকে এক্ষুনি পানি দাও ফাস্ট।’

ইভানা দ্রুত পাশের একটি দোকান থেকে মিনারেল ওয়াটার কিনে এনে ফাহিমকে দিলো।

ফাহিম পানি খেতেই স্বস্তি পেল যেন।

৭১.
আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে কালো মেঘ। সামনে ঈদ, আর আকাশ এখন থেকেই ঘন বর্ষন ঝড়াচ্ছে পৃথিবীর বুকে। যার ফলে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে ইভানার। সে কত প্ল্যানিং করে রেখেছিল ঈদে ঘোরার জন্য কিন্তু এখন মনে হচ্ছে না ঈদটা ভালো ভাবে উপভোগ করতে পারবে।

ইভানার উদাস মুখ থেকে ফাহিম বলল,
‘তুমি এরকম মন খারাপ করে আছ কেন?’

প্রতিত্তোরে ইভানা মুখ গোমড়া করে বলল,
‘আজ বাদে কাল ঈদ, আর আকাশের অবস্থা দেখেছেন!’

‘চিন্তা করো না। ঈদের দিন আকাশ পরিস্কারও থাকতে পারে।’

‘তাই যেন হয়।’

‘তো বলো এই ঈদে তুমি কোথায় ঘুরতে যেতে চাও?’

‘আমি অনেকদিন থেকে আমাদের বাসায় যাই না। ঈদের সময় সব কাজিনরা আসে আমাদের বাসায়। সবাই কত আনন্দ করি।’

‘ওকে, আমি তাহলে কাল তোমাকে তোমার বাড়িতে দিয়ে আসব। আমারও ভালো হবে, আমার কিছু বন্ধুদের সাথে কাল ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান আছে। ভাইয়াও তো কক্সবাজার যাবে।’

‘সবাই যাচ্ছি কিন্তু আম্মু কোথাও যাবে না? আমি বরং কাল আম্মুকে নিজের সাথে নিয়ে যাবো। এই শহরে তো আপনাদের কোন আত্মীয় নেই। আমাদের বাসায় গেলে আম্মুরও ভালো লাগবে।’

ফাহিম আপত্তি করলো না এই প্রস্তাবে। নিচে ড্রয়িং রুমে এসে বসতেই চমকে গেল ইভানা। ফারজানা বেগম ঘটকের সাথে কথা বলছেন। ইভানা এসেই শুনতে পেল তিনি বলছেন,
‘আপনে একডু দেহেন। ঈদের পরপরই আমি আমার বড় পোলার বিয়া দিতে চাই। আমার পোলা কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট, ওর জন্যে কিন্তু সর্বগুণে সম্পূর্ণা বউ চাই।’

‘আপনি চিন্তা করবেন না। আমি আপনার ছেলের জন্য সেরা মেয়ে বাছাই করে আনবো।’

ফারজানা বেগমের মুখে খুশি খুশি ভাব। ফারহানের বিয়ে দিতে পারলেই আপাতত তার সব চিন্তা শেষ। তারপর শুধু নাতি নাতনির আগমন ঘটলেই তার পরিবার পরিপূর্ণতা অর্জন করবে।

ঘটক বিদায় নিতেই ইভানা ফারজানা বেগমকে বলল,
‘আপনি কি ভাইয়ার জন্য মেয়ে খুঁজছেন?’

‘হ, ফারহানের তো বিয়া দেওন লাগবো। পোলাটা আর কতদিন অবিয়াত্তা থাকবো, বয়স তো কম হলো না। ওর বিয়া তো অনেক আগেই হওনের কথা ছিল। কিন্তু কি থেইকা কি হইয়া গেল।’

কথাটা বলে ইভানার মুখের দিকে তাকিয়ে ফারজানা বেগম লক্ষ্য করলেন ইভানা বেশ অস্বস্তিবোধ করছে। এভাবে বলা বোধহয় উচিৎ হয়নি। ইভানার পুরানো কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।

ইভানা প্রসঙ্গ বদলানোর জন্য বলল,
‘কালকে কিন্তু আমি আপনাকে সাথে নিয়ে আমাদের বাসায় যাব।’

‘সে কি কইরে হয়?’

‘কেন হয় না। আপনার ছেলেরা তো যে যার মতো ঈদ সেলিব্রেশন করবে। আপনি কি একা ঘরে বসে থাকবেন?’

ইভানার চিন্তাভাবনা অনেক ভালো লাগে ফারজানা বেগমের। এমন একটা মেয়েকে ছেলের বউ হিসেবে পেয়ে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করলেন।

৭২.
ইভানা ফোনে তোহার সাথে কথা বলছিল। কাল যে ঈদ উপলক্ষে সে বাসায় যাবে সেটাও জানায়। তবে তোহা প্রদত্ত সুখবরটা শুনে ইভানার অনেক ভালো লাগে। তোহা ইভানাকে ফোনে বলল,
‘তোর রাফিদের কথা মনে আছে?’

‘কোন রাফিদ আপাই?’

‘আব্বুর বন্ধু ছেলে। যিনি আমেরিকায় থাকেন। এবার নাকি উনি আমেরিকা থেকে ডাক্তারি পাশ করেছেন।’

‘ও হ্যাঁ, মনে আছে। ওনার কথা হঠাৎ তুললি যে?’

‘উনি দেশে ফিরেছেন। আব্বুর সাথে বন্ধুত্বর খাতিরে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন।’

‘তুই কি এই প্রস্তাবে রাজি?’

‘রাজি না হওয়ার কি আছে? রাফিদ আমেরিকার একটি নামকরা হাসপাতালের ডক্টর। তাছাড়া আমারও তো বিদেশে ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছা। তাই ভাবছি বিয়েটা করে নেব। আমেরিকায় যাওয়া তো আমার স্বপ্ন।’

‘তুই ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিস তো?’

‘একদম। ভেবেই নিয়েছি। কেন তুই খুশি হস নি খবরটা শুনে?’

‘খুশি না হওয়ার কি আছে? তোর বিয়ে হলে আমি অনেক খুশি হবো। কিন্তু ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিস আপাই। আমার কেন জানি তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে তুই রাফিদের জন্য না আমেরিকায় যাওয়ার জন্য প্রস্তাবে রাজি হয়েছিস। তুই যথেষ্ট বুঝদার একটা মেয়ে। তাই আমি আশা করছি তুই ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিবি। মানুষটা কেমন সেটাও তো যাচাই করে নিতে হবে।’

তোহা সম্মতি জানিয়ে বলল,
‘সেসব আমি ভেবেই রেখেছি। কাল রাফিদ সপরিবারে আমাদের বাসায় আসবে। তখন ওনার সাথে কথা বলে নেব।’

‘আচ্ছা। তাহলে খুব শীঘ্রই তোর বিয়ের দাওয়াত খেতে চলেছি?’

‘ইনশাল্লাহ, আচ্ছা তোর পড়াশোনার কি খবর রে? ভালো করে পড়ছি তো? এবার কিন্তু অনেক ভালো রেজাল্ট করতে হবে এইচএসসিতে। এদেশের কোন ভালো ভার্সিটিতে তোর চান্স হবে বলে মনে হয়না। কারণ তোর এসএসসির রেজাল্ট খা’রাপ। তুইও উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্ল্যান করে নে।’

‘আচ্ছা ভেবে দেখব। এখন রাখছি।’

‘ওকে, বায়।’

ফোন রেখে ইভানার নজর গেল সামনে। রুমে নেটওয়ার্কের সমস্যা ছিল।তাই সে রুম থেকে বাইরে বের হয়ে কথা বলছিল। ফারহান তার প্রায় সব কথাই দাঁড়িয়ে শুনেছে। ইভানাকে দিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে সে চলে গেলো। অনুভূতিকে তো এত সহজে মা’টি চা’পা দেওয়া যায় না। তাই ফারহানও ভুলতে পারে নি তোহাকে৷

ইভানা ফারহানকে চলে যেতে দেখে আনমনে বলে,
‘ভাইয়াকে দেখে দুঃখী, দুঃখী লাগল কেন? তাহলে কি উনি এখনো আপাইকে ভালোবাসেন?’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨