#মুগ্ধতার_ভিরে
#পর্ব_______২৩+২৪
#লেখিকাঃ ফাতেমা জোহরা নাভিলা
চারপাশ গাঢ় কুটকুটে অন্ধকার।পরিবেশ কেমন নিশ্চুপ সুনসান নীরবতা । বাহিরে যানজটের তেমন ভারি শব্দ নেই বললেই চলে।দূর থেকে খালি ল্যাম্পপোস্ট আলোয় তে দুইটো কিংবা একটে রিকশা মিনিট দুই এক পর পর এই গলিটা দিয়ে শুধু যেতে দেখা যাচ্ছে। আজ আকাশে চাঁদের আর দেখা নেই।দূরে কয়েকটা শুধু তারা চিকমিক করছে।অনুমান দেওয়াল ঘড়িতে রাত দশটার মত হয়ত বা বাজছে । বা এর থেকে বেশি ও সময় হবে, তা ঠিক জানা নেই। জায়ান নিজ রুমে প্রতিদিনকার মত আজও ব্যালকনিতে বসে অফিসের টুকটাক কাজ গুলো করছে। বাসায় আপাতত তেমন কেউ নেই। তাই হয়ত নিঃশব্দ টা বেশিই গ্রাস করছে।অহনা আজ দুইদিন হল নিজ বাসায় উদ্দেশ্য চলে গেছে। সন্ধার দিকে বড় বাবা, বড় মা,এনি ও রওনা দিয়েছে মিরপুর ছয় নিজ বাসার জন্য।এত সময় তারা বোধহয় ঠিকঠাক ভাবে পৌঁছে ও গিয়েছে। সময়ত আর কম হল না!
জায়ান তার দুই হাতের দশ আঙুল দ্বারা কিবোর্ড এ চেপে চেপে খুব মনযোগ ভাবে ল্যাপটপে স্কিনে তাকিয়ে কিজানি টাইপিং করছে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য হাত থেমে কয়েক বার কুঞ্চিত কপাল ও চোখ গুরিয়ে ঘরের দিকে হাল্কা ঘাড় কাত করে তাকালো।কিন্তু ক্লান্তির চোখ জোড়া কাঙক্ষিত আর রুমে কাউকে দেখতে পেলনা।ভিতর থেকে লুকানো ভারি নিশ্বাস ছেড়ে আবার ও তার কাজে পূনরায় মন দিলো।
এর মধ্যে রুমে হেলেদুলে প্রবেশ করলো মুন্না বারান্দা এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,,
___ভাইজান রাইত বহুত হইসে আন্নেরে খাইতে দাদি আর খালুজান ডাহে।তাড়াতাড়ি আহেন তো।
___ তাদের গিয়ে বল আমি এখন খাবনা পরে সময় করে ঠিক খেয়ে নিবো।এখন আমার কাজ আছে অনেক তুই যাহ্ অফিসের কাজ শেষ হলে আবার ভার্সিটি প্রেজেন্টেশন ও নিয়ে বসতে হবে।
ল্যাপটপ এর স্কিনে তাকিয়েই ক্লান্তি স্বরেই জবাব দিলো,
___উহু এটা আর কিছুতেই হইবো না। ভাবিয়ে কইসে আন্নেরে লইয়াই এক্কেবারে নিচে আইতে তাই জলদি কইরা চলেন তো আমার লগে।
__তাই! তা তোর ভাবি আর কি বলসে তোকে আমিও শুনি!
জায়ান ল্যাপটপ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বাম ভ্রুটা উঁচু করে হাল্কা নাচালো মুন্নার দিকে তাকিয়ে,,
___কইসে মন চাইলে আহেন আর না চাইলে নাইক্কা কিন্তু অহন নিচে না গেলে ফরে আর কিছুই খাওন কপালে ভালো করে জুটবো নাহ্।
___অরে বাবা ব্যাল্কপ্যাপার (গোলমরিচ) এই বলেছে আমাকে!
__’হ’
__তাহলে তো একবার নিচে যেতেই হয় আমাকে।
আমিও দেখি কিহ করে আর জুটবে না ।তুই যাহ্ আমি ফাইল গুলো গুছিয়ে মিনিট পাচঁ এর মধ্যে নিচে আসছি।
__আইচ্ছা মই গেলাম তাইলে,
.
.
.
দাদি আর বাবা ডাইনিংয়ে আগেই এসে বসেছে।
জায়ান এসে ঠিক তার গোলমরিচ বউ এর পাশে চেয়ারটা টেনে বসলো।মুখে তার কৃতিম দুষ্টামি রেখা। যাহ্ তার চোখে মুখে প্রকাশ পাচ্ছে।নাভিলা জায়ানকে দেখে ও না দেখার ভান করে, নিজ হাতে সবায়কে এক এক করে উঠে, খাবার প্লেটে সার্ভ করে দিচ্ছে।দাদি তো আজ মহাখুশি পুরো পরিবার আজ রাতে অনেক দিন পর এইভাবে টেবিলে খেতে বসলো। সকালে এক সাথে নাস্তা করা হলে ও রাত্রের খারারটা আর এক সাথে করা হয়ে উঠেনা তাদের।জায়ান আপাতত গিলচ্ছে কম গালে হাত দিয়ে তার পাক্কা গিন্নী বউকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে দেখছে।এতে নাভিলার বেশ অসস্তিকর বোধ হচ্ছে।একে তো তার পাশে এসে গায়ের সাথে গা একদম ঘেঁষে বসেছে। দাদি বাবাই জন্য কিছু বলতে ও আর পাচ্ছে না।আবার এইভাবে কেউ মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলে কি আর ঠিক করে আদৌ খাওয়া যায়!
যাক কইতে তো পারমু বটে, নয়ণ ভাই হুট করে পালাইয়া আমার একটা হেল্প তো করলো ইহা জীবনে।
আর সেটা হলো আমার ব্যাল্কপ্যাপার কে এইই মিসেস নিহান্ত রহমান জায়ান করতে। ভাই বিহীন আমি আদৌ মিসেস জোহুকে নিজের করতে সক্ষম হতাম কিনা তা আমিই জানি না।সত্যি বলতে আমার দ্বারা কোনো দিন সম্ভব ও হত না।
তবে যাইহোক একের ভিতর এমন ওভার অল ফ্লেভারকে বউ হিসেবে পেয়ে আমি ধন্য।একে কাছ থেকে জ্বালা তে আর খোঁচাই তে আমার সেই লেভেল এর প্রচুর ভাল্লাগে।আহহহহ কি শান্তি। বউকে সারাদিন উঠতে বসতে জ্বালাইতে যে এত সুখ খুঁজে পামু আমিই তো আগে তা জানতামই না।
.
জায়ান টেবিলের নিচ দিয়ে নাভিলার পেটে হাল্কা করে কনুই দিয়ে এক খোঁচা দিলো। আচমকা এমন আচারনে নাভিলা হকচকিয়ে ভারি অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। মুখের সামনে ভাতের লোকমা এনে ও হাত থেমে গেলে।চোখ ফ্যালফ্যাল বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। জায়ান নাভিলা অব্যস্থা দেখে অনেক কষ্টে মুখের হাসি আটকে সাভাবিক স্বরে বলে উঠল,,,
___কি হলো বসে আছ যে! খাচ্ছো না কেনো! খাবার কি ভালো হয়ই নি।
জায়ানের কথায় বাবাই,দাদিমা নিজেদের খাওয়া রেখে আমার দিকে তাকাতেই আমি তাদের দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে বিপরীতে বললাম,,
__ক ক কইই আ আমি বসে আছি,, খাচ্ছি তো
_এই মা তোর প্লেটত দেখি খালি কিছুই তো নাই তাহলে খাচ্ছিস কি করে! জায়ান মাংসের বাটি থেকে নাভিলার প্লেট মাংস দে তো আর সাথে বোল থেকে দুই চামচ ভাত ও দে। এই মেয়ের প্লেট তো দেখি কিছুই নেই।
দাদি বলল,,
__নাহ্ নাহ্ নাহ্ আর কিছু লাগবে না একদম দিবেন না। দাদি আমার খাওয়া হয়ে গেছে তাই কিছুই নেই, আমি এখন উঠবো ।
__চুপ করে বস বড়রা কিছু বললে শুনতে হয়। তখন মুখের উপর কথা বলতে হয়না, লাগবে না কিহ্ তোকে কিছু জিগ্যেস করেছি আমি! আর তোকে দিতে বলছি তুই দে বসে আছিস কে,
দাদি আবার ও বলল জায়ানের উদ্দেশ্য,,
__হ্যাঁ হ্যাঁ দিচ্ছি আমিই
জায়ান খাবার দেওয়ার নামে এভার নাভিলার হাতের কব্জি জোড়াতে , আর বাহুতে হাতে হাত বার বার স্পর্শ করছে আর মুখ টিপে হাসছে। মেয়েটাকে থমথম হতে দেখে বেশ লাগছে তার কাছে।
নাভিলা ব্যাপারটা বুঝতে পেরেও দাঁতে দাঁত চেপে মুখ বুঝে সবটা সহ্য করে নির্বাক ভাবে খাচ্ছে আর দাদি, বাবাই সাথে টুকটাক কথা বলতেছে।
জায়ান যখন দেখলো এতে তার ব্যাল্ক প্যাপার ফ্লেভারে বউ বিন্দু মাত্র আর নড়চড় হলো না। তখন সে রাগে ক্ষপে নাভিলার দিকে তাকিয়ে চুপ চাপ খেতে লাগলো।
জায়ানের আগেই নাভিলার খাওয়া পর্ব শেষ হল সে এভার উঠতে গিয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে জায়ানের পায়ে সোজোরে এক পাড়া দিয়ে বসল। এতে জায়ান আৎকে ‘আহহহহ’ করে উঠল,,
__ কি হয়েছে জায়ান এভাবে চেঁচিয়ে উঠলে যে!
বাবাই বলল,,
__কিরে তুই ঠিক আছি হঠাৎ কি হলো আবার তোর? ভাত চিবাইতে গিয়া গালে কামড় বসাইয়া দিসোস !
দাদি বললেন,,,
“জায়ান দাঁতে দাঁত চেপে চিবিয়ে চিবিয়ে নাভিলার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,,
__তেমন কিছুনা দাদি পায়ে স্টুপিড একটা তেলাপোকা উড়ে এসে কামড় দিয়েছে।
“দাদি সন্দিহান স্বরে বললেন”
__সেই কিরে তেলাপোকা কাপড় দিলো তোকে তা জানলি কি করে!দেখেছিস!
__সেই তো জানলেন কি করে জায়ান ভাই? তেলাপোকার জায়গায় তো অন্য কিছু ও আপনাকে কামড় দিতে পারে ! তাই না দাদি!
আমি বললাম,,,
___ তা নিয়ে তোমাকে আর ভাবতে হবে না,,
চোখ দিয়ে শাসিয়ে বলে উঠল আর ইঙ্গিত দিয়ে বুঝাচ্ছে একবার শুধু তোমাকে হাতে কাছে পাই তার পর বুঝাবো প্যাংগা নেওয়ার মজা।নাভিলা জায়ানকে ভ্যাং করে দাদির সাথে তার রুমে চলে গেলো। আর মুখের ইশারা বিপরীতে জায়ানকে বলল ‘কচু’ বুঝাবেন ইত্তর ছেলে,,,
চলবে♥
আমি এখন আলহামদুলিল্লাহ অনেকটাই সুস্থ আছি।চোখের সমস্যা কিছুটা ঠিক হয়েছে। এখন থেকে রেগুলার গল্প লিখব আর দিবো ইনশাল্লাহ্🙂।আর গল্প আর একটু বড় হবে শেষাংশ চিন্তা থেকে আপাতত একটু বিরতি নিলাম। আপনাদের এত ভালবাসা দেখে আমি আসলেই অনেক অবাক🥰🥰🥰
#মুগ্ধতার__ভিরে🥀
#পর্ব_____২৪
#লেখিকাঃ ফাতেমা জোহরা নাভিলা
বিকেলের প্রহর পেড়িয়ে সন্ধ্যার দিকে পা ফেলছে । আকাশের হলদে ভাব কাটিয়ে ধীরে ধীরে চারদিকে আধার ঘনিয়ে আসছে।আমি রেডি হচ্ছি আর বার বার চোখ ফিরিয়ে ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি। আজ প্রায় তিনদিন পর নিজের বাসায় যাব। ভাবতেই এই মুহূর্তে নিজেকে সব থেকে বেশি আনন্দময় লাগছে। এটাইকে মনে হয় বলে ফিলিংস বাবা বাড়ি টু শশুড় বাড়ি।আজকের রাতটা নিজের বাসায় আম্মু আব্বুর সাথে কাটাবো। ভাইয়ার ভালবাসায় ভাগ বসাবো। হাহাহা,, আমি নেই বলে সব একদম নিজের রাজ্যত্ব করে ফেলেছে মহারাজা।তাইতো এই দুইদিনে মধ্যে তারা একদিন ও কেউই আমার সাথে দেখা করতে ও এই বাসায় আসেনি।খুব অভিমান হয়েছে তাদের উপর।খুব খুব খুব।আমাকে কি একটু ও তাদের দেখতে মন চায়নি!এভাবে হুট করে বিয়ে দিয়ে একদমই পর করে দিলো আমাকে।
আজকে ডিনারে আব্বু জায়ানের পুরো ফ্যামিলিকে ইনভাইটেশন করেছেন,আমাদের বাসায়।সময় আসলেই প্রহরবান কিভাবে কিভাবে যে চলে যায়, তা বুঝাই যায় না।যাদের ছাড়া আমি একদিন ও কোথাও গিয়ে ঠিক করে থাকতে পারতাম না।আজ তাদের ছাড়াই আমি তিনদিন পার করেছি। অজানা বাসায় অচেনা মানুষ এর মাঝে।ভাবতেই অবাক লাগছে।এইটাই বোধহয় বলে প্রতিটা মেয়ের জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় বিনে সুতার সূত্রাবলি।
__ভাবি তুমি রেডি তো!
এনি তড়িঘড়ি করে রুমে এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,,
__হ্যাঁ রেডি গো ননদিনী, এই দুলটা পরলেই শেষ।উহহহু,,দূর আর ভাল লাগছে না,
কানের হাত বুলিয়ে হতাশ স্বরে বলে উঠল,,
__কিহ ভাল লাগে না শুনি! দেখি এই দিকে ফিরো,
__আর বলিও না বড় কানের দুল পরতে না পরতে এখন কানে কোনো বড় দুল পরলেই ব্যাথা করে । কেমনডা লাগে বল,
“এনি হেসে দিলো নাভিলার কথায়, নাভিলাও এনির দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো”
__শুনো মেয়ে তোমারে আর কষ্ট করে অযথা এইসব বড় দুল পরা লাগবে না। তুমি এমনেই দেখতে ভারি সুন্দর। একদম চমচম এর মত ফোলা ফোলা সুইট আমার গুলুমুলু মিষ্টি ভাবি।
গাল টেনে বলল,,
___চমচম!আমি চমচম এর মত ফোলা ফোলা!🤦♀️
এটাই বাকি ছিলো আমার শুনার,
__কেন কেন কেন!!
-___ভাইয়া আমাকে বলে টুসটুসি, বেস্টু বলে ধানিলঙ্কা, আবির ভাই বলে আলু কারন আমি নাকি সব সম্পর্কের সাথে ভাল করেই মিশে যাই😑।আর তোমার ভাই মানে আমার কুমড়াপটাশ কথা কথাই ধমক এর স্বরে বলে ইডিয়েট, স্টুপিড , ননসেন্স, আর তুমি এখন বললা চমচম। নিজের এর নামের এত প্রতিক্রিয়া শুনে আমি আসলেই হতাশে সাগরে ডুবছি🥴।
তা ননদিনী কখন আসলে!এই তোমাদের আসার সময় হল,
__এইতো একটু আগেই, তা জায়ান ভাই কই দেখছিনা যে!
__জানি না গো,
__জানি না মানে, কোথায় গেছে কিছু বলে যায়ইনি,
__আসলে কাল দাদির সাথে গল্প করতে করতে দাদির রুমেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম আর সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি জায়ান বাসায় নেই।
__অহ্, তা ফোন করেছিলে! ভাইয়া কখন ফিরবে বাসায় কিছু বলেছে তোমায়!
“নাভিলা এমন প্রশ্নে বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পরলো, ইতদস্ত করতে লাগলো। এনিকে এখন কি বলবে!তার কাছে তো জায়ানের ফোন নাম্বারই নেই। তাহলে ফোন করবেই বা কি করে!” আমি আমতা আমতা করে যখন কিছু বলতে যাবো তখন অহনা ভাবি রুমে এসে তড়িৎ করে বলে উঠল,,
__এই এনি তোকে উপরে কি করতে আমি পাঠিয়েছি রে!নিশ্চয় গল্পের ঝুড়ি নিয়ে বসতে পাঠাইনি।
__আরে গল্প কই করলাম আপি, আমিত মিষ্টি ভাবিকে নিয়ে এখনই নিচে আসছিলাম তার আগেই তো তুমি এসে পরলা
__হইসে হইসে এখন আর মিথ্যে এক্সপেলেশন দেওয়া লাগবে না আমাকে, তোরা চলদি করে নিচে আয়, আবরার,আবির, জায়ান সেই কখন থেকে নিচে বসে আছে।
ভাবির মুখ থেকে উনার নাম শুনে আমি তাড়াতাড়ি করে বলে উঠলাম
__উনি এসেছেন ভাবি?কখন এসেছেন!
__ অহহহহহোয়য়য় উনিইইইইইই,,, , এই উনিটা আবার কে গো আমরা ও শুনি,,ইসসসসস,, এই উনিটার কি আদৌ টাদৌ কোনো নাম টাম আছে!
এনি শুর টেনে বলল,,
আমি বিপরীতে চোখ পাকিয়ে এনির দিকে তাকাতেই ওমনেই ভাবি ও যোগ হল,এভার তাদের কথায় আমাকে অযথা লজ্জা দিতে লাগলো, তাদের কথা আমি লাল,নীল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।কথায় আছে না ভাবি ,আর ননদ এর খোপর থেকে সাবধানে চলতে হয়। একবার এদের দুষ্ট ভরা খোপরে পরলেই আর রেহাই নেই।আমার ও এখন হয়েছে তাই।
নিচে এসে আগে বাবাই, দাদি,বড়মার সাথে টুকটাক কথা বলে নিলাম।তার নিচে বসার রুমেই তিনজন বসে ছিলেন।বিকেলের দিকে বাবাই প্রেশার অনেক হাই হয়েছে, ঠিক করে দাঁড়াতে ও পারছেন না, তাই উনি আমাদের সাথে আজ যেতে পারবেন না, আব্বুকে বুঝিয়ে বলতে বললেন আমাকে। তার সমস্যা কথা যাতে আব্বু রাগ না করে।আর দাদি অসুস্থ থাকায় তমন একটা কোথায় যেতে পারেন না।সব সময় বাসাই থাকেন।বড় মা ও আপাতত আমাদের সাথে যাবেন না। আজ রাত দাদির সাথে এই বাসায় থাকবেন,বাবাই আর দাদি দুইজনই অসুস্থ বলে। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে বাবাই বেশ ইতস্তত করতে করতে আবার বলে উঠলেন। কাল বিকালের মধ্যে বাসায় ফিরতে হবে আমাদের। কাল সন্ধার দিকে ঢাকা টু কুমিলায় আমাদের এই ছয়জনকে আবার ও রওনা দিতে হবে। জায়ানের নানুজানের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্য। নানুজান অসুস্থ উনি দূরের পথ জার্নি তেমন একটা করতে পারে না। তাই আমাদেরই তার কাছে যেতে হবে।আমি মাথা নাড়িয়ে সমত্ত জানিয়ে এভার বাসা থেকে আমরা তিনজন বের হলাম।
এনি সাথে কথা বলতে বলতে মেইন গেইট এর বাহিরে এসে দাঁড়ালাম । আবরার, আবির ভাইয়া আমাদের থেকে ঠিক রাস্তার অপর পাশে দাড়িয়ে আছে । জায়ান নেই।অহনা ভাবির থেকে শুনলাম জায়ান গ্রেরাজ থেকে গাড়ি বের করছেন।
____________________
প্রায় দশ মিনিটের উপর হবে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি আমরা । জায়ান যে গাড়ি বের করতে গেছেন।এখনো আসেনি। আমি বিরক্তি নিয়ে রাস্তার অপরপাশে আবির ভাইয়ার কাছে যেতেই এমন সময় খুব দ্রুত গতিতে পাশ দিকে এক গাড়ি যায় । আমি নিচে পরে যাই । আগেই সরে যাওয়ার খুব একটা লাগেনি । কিন্তু হাতে কনুইতে প্রচণ্ড লেগেছে।রক্ত ও বের হচ্ছে।
এনি আমার সামনে এসে ক্ষোপের স্বরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,
____কি আজিব মনুষত্ববোধ কি এদের মধ্যে বিন্দুমাত্র নেই। এতো বড় অন্যায় করে গাড়ি থামলো না । স্যরি বলার প্রয়োজনবোধ টুকুও করলেন না ।এদের শিক্ষাদীক্ষা বলতে কিছু নেই এরা হল মানুষ রুপি আস্তা এক একটা জানোয়ার রাজাকার এর দল।
আবির রাগিত হয়ে কিছু দূর দৌড়ে গাড়ির পিছে ফ্ললো করে গিয়ে যখন দেখলো সে আর ধরতেই পারবে না তখন রাস্তা থেকে ক্ষোপে গাড়ির মিররে ইট ছুড়ে চিল্লিয়ে বলল,,,,
__কু**ব** বুকে পাঠা থাকলে শুধু একবার তুই গাড়ি থামাইয়া দেখতি। তোগো আজ কি করতাম আমিই। রাস্তা কি তোগো বাবার সম্পদ পাইসোত যে উড়াধুরা চালাইবি!আমাগো মানুষ বলে গণ্য হয় না তোগো কাছে! গাড়ি রাস্তাই চালাস না আকাশে উড়াস । কি মনে করস তোরা নিজেদের,,,, কোথাকার কোন প্রেসিডেন্ট,,, শালা বাই***দ
আমি ভিতু হয়ে এনি আর ভাইয়ার কথা শুনছি, এমন সময় ঝড়ের গতিতে জায়ান আমার কাছে ছুটে আসে । আমার হাত পা নেড়েচেড়ে অস্থির হয়ে চেক করছে । হাতে সামান্য একটু কেটেছে । এই দেখেই সে খুব রেগে যায়। সাথে আবির ভাইয়া আর অহনা ভাবি ও আমার উপর রেগে বকাঝকা করতে থাকেন।আমার কেয়ারলেস নিয়ে। আমি কেন দেখে রোড পাড়াপাড় হতে গেলাম না। তাদের এত রাগারাগির চটে আমি বলতেই পারছিনা। আমার হাত খুব করে জ্বলছে।
জায়ান আমাকে অবাক করে দিয়ে আচমকা সবার সামনে হুট করে কোলে তুলে নিয়ে নেয়। আমি হতম্ভব হয়ে তখন তাকে কিছু বলতে যাবো। তখন ওমনেই তার রাগিত গরম চোখ দিয়ে আমার দিকে তাকায়।তার চাহনিতে আমি নিমিষেই দমে যাই। বিপরীতে কিছু বলার আর সাহস নেই আমার। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে,আমার তো হাতে লেগেছে পায়ে না। তাহলে এইভাবে কোলে নেওয়া মানে কিহ! ভাইয়া, ভাবি, এনি কি ভাববে এখন।
গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে, আমার সামনে হাটু গেড়ে এসে বসে আমার হাতে ধীরে ধীরে আস্তে ফু দিয়ে মেডিসিন লাগিয়ে দেয় জায়ান । তার মুখমণ্ডলি দেখে মনে হচ্ছে ব্যাথা আমার না তার হাতে খুব লেগেছে। খুব রেগে আছে জায়ান।ফর্সা চেহারা লালবর্ন ধারন করেছে। মনে হচ্ছে গাড়ি চালকে পেলে এখনি খুন করবে । জাস্ট খুন করে ফেলবে । হাবভাব এমনেই তার। আবরার ভাইয়াকে বার বার চিল্লিয়ে গাড়ির নাম্বার জিগ্যেস করেছে । আবরার ভাইয়া অপরাধ স্বরে বলেছে সে খেয়াল করিনি। অহনা ভাবি জায়ানের কাধে হাত রেখে শান্ত স্বরে বললেন,,,
___কি দরকার শুধু শুধু ঝামেলার পাকার ।জায়ান এই মুহূর্তে মাথা গরম না করে ঠান্ডা করে বস বলছি । আমাদের চোখের সামনে নাভিলা সুস্থসবল বসে আছে এটাই আমাদের কাছে যথেষ্ট না। এই ছাড়া তোর আর কি চাই বল।অযথা ঝামেলা সৃষ্টি করার কোনো মানে নেই।
জায়ান বিপরীতে কিছু না বলে গাল ফুলিয়ে গাড়ি তে উঠে । গাড়ি স্টার্ড দেয় । জায়ান গাড়ি ড্রাইভ করছে ।এখনো রাগে রুচির ন্যায় ফুলছে । এই গাড়িতে আপাতত শুধু আমি আর জায়ান, আর পিছনের সিটে এনি।পরে গাড়িতে অহনা ভাবি,আবরার,আবির।আমি জানালার দিকে তাকিয়ে বেশ কিছু সময় অতিক্রম করার পর এক বুক সাহস নিয়ে জায়ানের উদ্দেশ্য বললাম,,,
__আমার সাথে এত রাগ করছেন কেন ? আমি এমন কি করেছি ? আমার কি দোষ বলুন।
– আমি তোমার উপর রাগ করিনি। আমার জাস্ট নিজের উপর রাগ হচ্ছে । খুব করে হচ্ছে।
_কেন!
__আমার তোমার সাথে থাকা উচিত ছিলো । আজ আমার সামান্য কেয়ারলেসের কারনে এমনটা তোমার সাথে হয়েছে ।এর থেকে যদি বড় কোনো কিছু হয়ে যেত তখন
আমি কেন আগে থেকে গাড়ি বের করে রাখলাম নাহ্ তাহলে তোমার সাথে এমনটা হতই না।
গাড়ির স্টারিং এ বারি দিয়ে বলল জায়ান,,
– জায়ান শান্তহোন প্লিজ, আপনি শুধু শুধু কেন নিজেকে দোষারোপ করছেন । এটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট ছিলো । না এতে আপনার দোষ ছিলো আর না আমার।
জায়ান কোনো কথা জবাব দিলো না । আমি কিছুক্ষণ পর জায়ানের দিকে তাকিয়ে নরম স্বরে বলি,
– আমি একটা কথা জিগ্যেস করি জায়ান!
জায়ান ড্রাইভ করতে করতে মুখ ভার করেই উত্তর দেয় ,
– হুম করো
__আচ্ছা আপনিত আমায় ঠিক করে সহ্যই করতে পারেন না, তাহলে এত কিসের চিন্তা আপনার।পছন্দ ও তো করেন না, যাকে দুই চোখে চুল পরিমান সহ্যই করতে পারতেন না পছন্দ আর কি করে করবেন! আর ভালবাসাতো আমাদের মাঝে কোন দিন প্রশ্নই উঠে না।
যদি আজ আমার ব্যাই এনি চান্স কিছু হয়ে যেত । তাহলে কি আপনি আমাকে খুব করে মিস করতেন ? সামান্য হলেও কি কষ্ট পেতেন আমার জন্য?
জায়ান সাথে সাথেই ব্রেক কষে । খুব জোড়ে ঝাঁকুনি লেগে গাড়ি থেমে যায় । জায়ান স্টারিং এ হাত রেখে বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে । চোখে হারানোর তিব্বো ভয় ।
আমার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে ভাঙা জড়ানো গলায় বললেন,
– আর কখনো এসব কিছু মুখে আনবে না তুমি বলে দিলাম।আনলে আমি জাস্ট তোমাকেই শেষ করে দিবো ,,,, ।এই টপিকে দ্বিতীয় বার কোনো কথা উঠবে না ব্যাস।এমনটা ভাবতেই আমার ,,, আর মিস কি হ্যাঁ !মিস করার জন্য মানুষের বেঁচে থাকতে হয় ।তাকে সব সময় তার পাশে থাকতে হয়। তার উপস্থিতি তাকে অনুভব করাতে হয়।
তার জন্য কোথাও দৃষ্টির দূরে যেতে হয় না।দৃষ্টির শূন্যতা থেকে মনের শূন্যতাই তার কাছে অনেক
জায়ান কথাগুলো খুব সাধারণ মনে হলেও এই কথাগুলোর গভীরত্ব আমার কাছে আজ অনেক । এর ব্যাখ্যা টা সীমাহীন । জায়ানের চোখে মুখে আমার জন্য আজ স্পষ্ট হারানোর তিব্বো ভয় দেখা যাচ্ছে । এই ছলছল চোখ গুলো চিৎকার করে জেনো আজ আমাকে কিছু বলতে চাইছে,,,
চলবে …❤️
সবাই অবশ্যই কমেন্ট নিজেদের মতামত আমাকে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আসা করি।