মেঘপিওনের চুপকথা পর্ব-১০

0
383

#মেঘপিওনের চুপকথা
#লেখিকা_আলো_ইসলাম

“১০ম পর্ব”

–“রাশি ঘরে এসে রিংটা ছুড়ে মারে। রাশির পেছন পেছন রাই’ও এসেছিলো রাশির ঘরে। রাশিকে এমন করতে দেখে রাই ভীষণ অবাক হয়।
– এরপর হাতের চুড়ি গুলো খুলেও রাশি বিসানার উপর ছুড়ে মারে। তখনই শান্তা ইসলাম রাশি বলে মৃদু চিৎকারে ডেকে উঠে। মায়ের ডাকে রাশি সাড়া দেয় না। উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করতে থাকে।
– এইসব কি হচ্ছে? তুই ওইখানে বেয়াদবি করেছিস সবার সামনে কিছু বলেনি৷ ঘরে এসে জিনিস গুলো ছুড়ে ফেলছিস কেনো? সমস্যা কোথায় তোর বিয়ে করতে?

– আমি এই বিয়ে করতে পারবো না মা। কেনো বুঝতে পারছো না। কেনো জোর করছো আমাকে। আচ্ছা তোমরা কি আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে দেবে? কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করে রাশি।
– দরকার হলে তাই দেবো। কারণ তোর বাবা ওদের কথা দিয়েছে। তাছাড়া বিয়ের দিন ঠিক হয়ে গেছে তোর । আর চারদিন পর তোর বিয়ে। আনভীর এক সপ্তাহের জন্য দেশে এসেছে। তাই ওরা সব কিছু তাড়াতাড়ি করতে চাই। তোর বাবাও মত দিয়েছে। এখন আর কিছু করার নেই। তাই তোর জন্য ভালো হবে বিয়ের জন্য প্রিপারেশন নেওয়া।

– মা আমি বিয়ে করতে চাই না। কেনো বুঝতে চাইছো না। আমি পারবো না এই বিয়ে করতে কথাটা বলে কেঁদে দেয় রাশি।
– রাই বিষ্ময় হয়ে সব দেখছে।

-‘ কেনো পারবি না? কি সমস্যা বল আমায়।
– শান্তা ইসলামের কথায় রাশি করুণ চাহনিতে তাকায়। রাশি মনস্থীর করে তার মাকে সত্যি টা বলে দেবে। সম্রাটের কথা বলে দেবে যে, সে সম্রাট কে ভালোবাসে আর সম্রাটও তাকে ভালোবাসে।
– কি হলো বল? কেনো বিয়ে করতে পারবি না?
– কারণ আমি..কথাটা বলার আগেই শান্তা ইসলামের হাতের মুঠোয় থাকা ফোন টা বেজে উঠে। স্ক্রিনে রিনা খানের নাম দেখে শান্তার ভ্রু কুচকে আসে প্রথমে। এরপর মৃদু হাসি নিয়ে এসে ফোন রিসিভ করে।

– শান্তা তোর সাথে আমার জরুরি কথা আছে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে রিনা খান। রিনা খানকে এমন অস্থির হতে দেখে শান্তা খান উত্তেজিত কন্ঠে বলে, কি হয়েছে রিনা? তোকে এতো অস্থির লাগছে কেনো?

– শান্তা প্লিজ তুই রাশির বিয়ে অন্য জায়গায় দিস না। অনুনয় করে বলে রিনা খান। কিন্তু শান্তা ইসলাম রিনা খানের কথায় ভীষণ অবাক হয়ে বলে মানে?
– মানে রাশি আর সমু দুজন দুজনকে ভালোবাসে। ওরা রিলেশনে জড়িয়ে গেছে খুব অল্প সময়ে। আর আমিও চাই রাশি আমার ঘরে বউ হয়ে আসুক। দেখ আমার কোনো কিছুর অভাব নেই জানিস৷ একটা মাত্র ছেলে। রাশি অনেক সুখে থাকবে। ভালো থাকবে।

– শান্তা ইসলামের মুখটা থমথমে হয়ে যায়। শান্তা ইসলাম এতখনে বুঝতে পারে রাশির বিয়ে না করতে চাওয়ার কারণ। রাশি, রাই মায়ের মুখের দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
– এইসব কি যা-তা বলছিস রিনা। রাশির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এখন চাইলেও কিছু করা সম্ভব না। তাছাড়া রাশির বাবা এক কথার মানুষ। একবার যাকে কথা দেয় সেটা পালন করে ছাড়ে। জীবন গেলেও সে কথার নড়চড় হয়না। এটা কোনো ভাবে সম্ভব নয় নুয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে শান্তা ইসলাম।

– কিন্তু! দুটো জীবন নষ্ট হয়ে যাবে এটা কি ভেবে দেখেছিস একবারো। রাশি কিন্তু সম্রাটকে ছাড়া অন্য কাউকে মানতে পারবে না। আমার সমুও কিন্তু রাশিকে অনেক ভালোবাসে। রাশির বিয়ের কথা শুনে অনেক ভেঙে পরেছে। কিছু একটা কর শান্তা প্লিজ। রিয়াদ ভাইকে বোঝা দরকারে। দেখ একটা ভুল সিদ্ধান্ত বা জেদের বসে কিছু করলে ভালো হবে না কিছু বরং সব কিছু খারাপই হবে। রাশি সারাজীবন কষ্ট পাবে। সমু কষ্ট পাবে। আর সন্তানরা যদি সুখে না থাকে! কষ্টে থাকে তাহলে কোনো বাবা মা’ই ভালো থাকে না।

— আমি তো সবটা বুঝতে পারছি। তোর কাছে যদি আমার রাশিকে দিতে পারতাম তাহলে সব থেকে বেশি খুশি আমি হতাম! নিস্বচিন্তে থাকতাম। রাশি যে তোর কাছে খুব আদরে থাকবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু রাশির বাবা কি বুঝবে এইসব। রাশির বিয়ে অনেক আগে থেকেই উনি ঠিক করে রেখেছিলেন উনার বন্ধুর ছেলের সাথে৷ আজই তারা এসে বিয়ের দিন পাকা করে গেছে। আর চারদিন পর রাশির বিয়ে আনভীরের সাথে। এই কথাটা শুনে রিনা খান চমকে উঠে। তটস্থ ভঙ্গিতে বলে প্লিজ শান্তা একবার বোঝার চেষ্টা কর আর রিয়াদ ভাইকেও বোঝা। এইটা হতে পারে না। আমরা কালই আসছি তোর ওইখানে। আমি নিজে রিয়াদ ভাইয়ের সাথে কথা বলব। রাশিকে ভিক্ষা চাইবো আমার সমুর জন্য।

-শান্তা ইসলাম কি বলবে বুঝে উঠে না। কিছুখন চুপ করে থাকার পর বলে, ওকে আয় তবে। চেষ্টা করে দেখ যদি কিছু হয়। তবে আমার মনে হয়না উনি উনার সিদ্ধান্ত থেকে একচুল পরিমাণ সরবে। তবু চেষ্টা করতে দোষ কোথায়। রিনা খান যেনো কিছুটা হলেও স্বস্তি পায় শান্তা ইসলামের কথায়৷ এরপর ফোন রেখে দেয়।। রাশি কৌতুহল নিয়ে এখনো তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে।

– সম্রাট কে ভালোবাসিস তুই? গম্ভীর কন্ঠে বলে শান্তা ইসলাম। মায়ের কথা শুনে রাশি মাথা নিচু করে হ্যাঁ বলে,।
– এখন কি করবি বল? তোর বাবা কিন্তু তোর বিয়ে আনভীরের সাথেই দেবে৷ তুই খুব ভালো করে জানিস আর চিনিস তোর বাবাকে। আমার থেকে কোনো ভাবে সাহায্য আশা করিস না এখানে। আমি কিছু করতে পারবো না তোর জন্য। তোর বাবার বিরুদ্ধে যাওয়ার সাহস আমার নেই। তাছাড়া উনার মানসম্মান যাবে এমন কোনো কাজ আমি অন্তত করতে পারবো না। মায়ের কথায় রাশি তার মায়ের পায়ে পড়ে যায়। শান্তা ইসলাম ঘাবড়ে যায় চমকানো চোখে তাকায় রাশির দিকে।

– কিছু একটা করো মা। আমি সম্রাট কে ছাড়া বাঁচবো না। ওকে ছাড়া কাউকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতেও পারবো না। ভীষণ ভালোবাসি আমি সম্রাটকে। তোমার পায়ে পড়ি প্লিজ বাবাকে বোঝাও৷ বাবা যেনো এই বিয়ে ভেঙে দেয়। আমি এই বিয়ে করতে চাইনা। আমি অন্য কাউকে কখনো বিয়ে করতে পারবো না। প্লিজ বোঝাও মা৷ শান্তা ইসলামের পা জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে রাশি। রাই বোনের এমন অবস্থা দেখে অঝোরে কান্না করতে থাকে। শান্তা ইসলামেরও চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। নিজের মেয়ের এমন করুণ পরিনতি তিনি দেখতে পারছেন না। কিন্তু তিনি বা কি করবেন। তার তো কিছু করার নেই এখানে। শান্তা ইসলাম রাশির দুইবাহু ধরে দাঁড় করায়। ।

– যদি আল্লাহ সহায় থাকে। তোর স্বামী হিসেবে সম্রাটই লেখা থাকে তাহলে নিশ্চয় তোদের বিয়ে হবে। তোরা এক হবি। আর যদি তোদের বিচ্ছেদ থাকে। তোদের এক না হওয়া হয় তাহলে সেটাই মেনে নিতে হবে রাশি। কথাটা বলে শান্তা ইসলাম বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। রাশি কান্না করতে করতে ওইখানে বসে পড়ে। রাই ছুটে এসে বোনকে আগলে নেয় নিজের মধ্যে।

– কাঁদিস না আপু৷ দেখিস সবটা ঠিক হয়ে যাবে। তোকে অন্য কাউকে বিয়ে করতে হবে না। সম্রাট ভাইয়ের সাথেই তোর বিয়ে হবে দেখিস। এর জন্য যদি আমার কোনো সাহায্য লাগে আমি করবো। আমি চাই তুই ভালো থাক আপু৷ তুই খুশি থাক। রাই’য়ের কথায় রাশি রাইকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে।

–” পরের দিন..

– রাহাত, হাসিব আরো বন্ধুরা মিলে ভার্সিটির মাঠে তাদের যথাযথ স্থানে বসে আড্ডা দিচ্ছে। সম্রাট এখনো আসেনি। তারই অপেক্ষা করছে তারা। রাহাত কাল রাতে বেশ কয়েকবার কল দিয়েছিলো সম্রাট কে। সম্রাট রিসিভ করেনি।
– রনি এসে দাঁড়ায় রাহাত’দের সামনে। রনিকে দেখে রাহাতসহ সবাই চমকানো চোখে তাকায় রনির দিকে। চোখ মুখ জুড়ে বিষ্ময়ের উপচে পড়া ভীড় সবার।

– রনির চোখ মুখ অনেক শুকিয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। দেখে অনেকটা দুর্বল লাগছে রনিকে। মনে হয় কতকাল ঘুমাইনি রনি। বিরহের ছাপ প্রতিটি ধাপে ধাপে প্রকাশ পাচ্ছে তার মধ্যে। না পাওয়ার যন্ত্রণা তার সরল চোখের চাহনি বলে দিচ্ছে।

– একি অবস্থা হয়েছে তোর রনি? কি হয়েছে তোর? কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করে রাহাত।
– রাহাতের কথায় রনি মুচকি হাসি দেয় শুধু একটা। রনির পাশে শান মন খারাপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
– সমু আসেনি? কাঁপা কাঁপা গলায় বলে রনি। রনির কথায় হাসিব মাথা ঝাকিয়ে না বলে।
– রনি একটা চিরকুট এগিয়ে দেয় রাহাতের দিকে। এটা দেখে রাহাত বিষ্ময় ভরা চোখে তাকায়।
– এই চিরকুট ‘টা রাশিকে দিবি প্লিজ। আমার প্রথম এবং শেষ অনুরোধ তোর কাছে রাহাত। এটা প্লিজ রাশিকে দিস। রাহাত তার বন্ধুদের দিকে তাকায়। সবাই ইশারা করলে রাহাত ওইটা ধরে এপাশ ওপাশ দেখে পকেটে রাখে।
– তোদের সাথে অনেক ঝামেলা করেছি। সব সময় বিরোধিতা করে এসেছি। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে এসেছি। পারলে ক্ষমা করে দিস আমাকে। আমি চলে যাচ্ছি তোদের সবাইকে ছেড়ে অনেক দূরে।
– রনির কথায় সবাই অবাক হয়ে বলে মানে? কোথায় যাচ্ছিস তুই রনি? কি হয়েছে তোর?

– আমি বিদেশ চলে যাচ্ছি। এখানে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। এখানে থাকলে রাশি আর সমুকে একসাথে দেখতে হবে। তাদের মেলামেশা, গভীর সম্পর্ক এইসব দেখার সাহস আমার নেই। আমি পারবো না রাশিকে অন্য কারো সাথে সহ্য করতে। তাই আমি দূরে চলে যাচ্ছি। যেখান থেকে আমি রাশিকে শুধু অনুভব করতে পারবো৷ আমার অনুভূতিতে রাখতে পারবো। কিন্তু কখনো ছুঁয়ে দেখতে পারবো না। দুই চোখ ভরে দেখতে পারবো না। রনির কথায় সবার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। পরিবেশটা থমথমে হয়ে আসে।

–” কিন্তু রনি। তুই চাইলে তো এখান থেকেও সবটা করতে পারিস। দেখ রনি! সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না। সব ভালোবাসায় কিন্তু সুখ থাকে না। ভালোবাসার মানুষটা পাশে থাকে না। কিন্তু তাও আমাদের মানিয়ে নিতে হবে। দূর থেকে ভালোবেসে জীবনে ভালো থাকাটা নিয়ে আসতে হয়। এইভাবে চলে যাওয়াটা কোনো সমাধান হতে পারে না। প্লিজ তুই থেকে যা আমাদের মধ্যে। আমরা সবাই এক হয়ে থাকি এবার থেকে। রাশি সমুর সাথে ভালো আছে, থাকবে এটা ভেবে নাহয় তুইও ভালো থাকিস।

– সম্ভব না রে রাহাত। আমি পারবো না। নিজের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছি। আমি বড্ড ক্লান্ত নিজেকে বোঝাতে বোঝাতে। আমি আর পারছি না এখানে থাকতে। আমাকে চলে যেতেই হবে। সমুকে বলিস ও যেনো আমাকে মাফ করে দেয়। ওর পথের কাটা হয়ে আর কখনো সামনে দাঁড়াবো না। কখনো ওর প্রিয় জিনিসে বাধা হবো না। ভালো থাকিস বলে রনি দ্রুত পায়ে চলে যায় সেখান থেকে।

–” রনি যেতেই সবাই একটা তপ্ত দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। মনটা ভারী হয়ে আসে সবার দুঃখে।
– হায়রে ভালোবাসা! এই একটা শব্দ পারে নতুন করে বাঁচতে শেখাতে আবার এই একটা শব্দই একটা হাসিখুশি মানুষ কে জিন্দা লাশে পরিনত করে তোলে। কথাটা বলে হাসিব আরো একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। তখনই রাহাত দেখে যে সামিরা চিন্তিত চেহারায় তার দিকে এগিয়ে আসছে। সামিরাকে দেখে রাহাত এগিয়ে গিয়ে বলে, কি হয়েছে সামিরা? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?
– রাশির বিয়ে রাহাত। সামিরার কথায় রাহাত অবাক হয়ে বলে, কিহ! কার সাথে বিয়ে আর হঠাৎ বিয়ে মানে কি? সামিরা সবটা খুলে বলে রাহাতকে। সামিরার সকালেই কথা হয়েছে রাশির সাথে। আর রাশি সামিরাকে সব বলে তখন।

– সমু কোথায়? ও জানে সবটা।
– হুম সমু ভাইয়া সব জানে৷ তাই আন্টি আর ভাইয়া আজ রাশির বাড়িতে যাচ্ছে রাশির বাবার সাথে কথা বলার জন্য। আমার ভীষণ ভয় করছে রাহাত। কি হবে এখন? শুনেছি রাশির বাবা ভীষণ রাগী আর একরোখা স্বভাবের মানুষ।
– কিছু হবে না সামু। চিন্তা করো না। সমু ছাড়া রাশি কারো হতে পারে না। দেখা যাক কি হয়। কথাটা বলে রাহাত তার চুল গুলো পেছনে ঠেলে ধরে। রাহাতের মধ্যে এখন অন্য ভয় কাজ করছে৷ সত্যি সব কিছু ঠিক হবে তো। তার বন্ধু ভালো থাক এটাই চাই রাহাত।

-‘ রিয়াদ ইসলামের সামনে বসে আছেন সম্রাট, রিনা খান, আর সাজ্জাদ খান। সবার মুখ থমথমে হয়ে আছে। রিনা খান সবটা জানিয়ে দিয়েছেন রিয়াদ ইসলামকে।
রিয়াদ ইসলাম ভীষণ বিরক্ত সাথে মুখটা অনেক গম্ভীর করে রেখেছেন। সম্রাট, রিনা খান, শান্তা ইসলাম, সাজ্জাদ খান সবাই আগ্রহ পূর্ণ চাহনিতে রিয়াদ ইসলামের দিকে তাকিয়ে আছে। উনি কি বলেন এইটা জানার জন্য।

– দেখুন রিনা আপা! আমার হাতে আর কিছু নেই। রাশির বিয়ে অনেক আগেই ঠিক করা ছিলো আমার বন্ধুর ছেলের সাথে৷ সেটা রাশিকে বলিনি ওর পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে ভেবে। তবে মনে হচ্ছে আমি ভুল করেছি ওকে না জানিয়ে। যদি ওর জানা থাকতো এই বিষয়টা। তাহলে এত বড় ভুল করতো না৷ সম্রাটকে ভালোবাসতো না। তাছাড়া আমি এটা ভেবেও অবাক হচ্ছি রাশি পড়াশোনা বাদ দিয়ে এইসব করে বেরিয়েছে ওইখানে। আমার তো আফসোস হচ্ছে নিজের কাজের জন্য যে, ওকে বিশ্বাস করে ওইখানে পাঠিয়েছিলাম।

– এইসব কি বলছেন আপনি ভাইয়া। দেখুন যা হওয়ার তো হয়ে গেছে। এখন বলে লাভ নেই সেটা। কিন্তু এরপরও যদি আপনি রাশির বিয়ে অন্য জায়গা দেন তাহলে রাশি ভালো থাকবে না। আর না আমার ছেলে ভালো থাকবে। বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করুন একবার উত্তেজিত কন্ঠে বলে রিনা খান।

– আপনি বোঝার চেষ্টা করুন আমার কথাটা৷ আমি আমার বন্ধুকে কথা দিয়েছি আমার মেয়ে তার বাড়ির বউ হয়ে যাবে৷ আর বিয়ের দিন ফিক্সড করাও হয়ে গেছে। আমি আমার কথায় অটুট থাকতে পছন্দ করি সব সময়। একবার যেটা বলি সেটাই করি। সবাই আমাকে এই জন্য অনেক সম্মান করে বিশ্বাস করে। আমি আমার মান-সম্মান খোয়া দিতে পারবো না৷ আমার দিকে কেউ আঙ্গুল তুলুক আমি চাই না।

– – কিন্তু রিয়াদ ভাই! আপনি কি একবার রাশির ভালো মন্দটা ভাববেন না। ওর সুখের কথা ভাববেন না?
– সাজ্জাদ খানের কথায় রিয়াদ ইসলাম মুখটা থমথমে করে বলে, আমার মেয়ের ভালোর জন্য আমি সব করছি। রাশি আনভীরের কাছে ভালো থাকবে। হ্যাঁ মানছি ও একটা ভুল করে ফেলেছে সম্রাটকে ভালোবেসে৷ সময়ের সাথে আবার সেটা ঠিক হয়েও যাবে। সম্রাটের থেকে দূরে গেলে সব কিছু ভুলে যাবে।

– রিয়াদ ইসলামের কথায় সম্রাট অসহায় চোখে তাকায় রিয়াদ ইসলামের দিকে। রাশি দরজার আড়াল থেকে সবটা শুনছে৷ বাবার কথায় তার ভীষণ কান্না আসছে। হাত-পা ছড়িয়ে কান্না করতে ইচ্ছে করছে৷ এত কষ্ট আর সহ্য করতে পারছে না সে। রাশির সাথে রাই ও দাঁড়িয়ে আছে। বোনের কষ্ট দেখে রাই ও ভালো নেই।
-‘ তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন রাশির বিয়ে আপনি দেবেন। আপনার জেদ, ইগো আপনার কাছে বড় আপনার সন্তানের থেকে। কিছুটা রেগে বলে রিনা খান।
– আমার মেয়ের কিসে ভালোমন্দ হবে সেটা নাহয় আমাকেই বুঝতে দিন৷ আপনারা এসেছেন আমি খুশি হয়েছি। এমনিতেও আমি আপনাদের ইনভাইট করতাম রাশির বিয়েতে। কাল থেকে সব এরেঞ্জমেন্ট শুরু হয়ে যাবে বিয়ের৷ আপনারা আমার আত্মীয় তাই আমি চাইনা আপনাদের সাথে কোনো রকম বাজে বিহেভ করতে বা কোনো চওড়া কথা শোনাতে। আশা করি বিয়েটা শেষ করে তবেই যাবেন। সাথে আমার মেয়েকে দোয়া করেও যাবেন যাতে করে ও এইসব কিছু খুব তাড়াতাড়ি ভুলে সংসারে মন দিতে পারে।।
এরপর রিয়াদ ইসলাম দাঁড়িয়ে শান্তা ইসলামকে ডেকে বলে, উনাদের থাকার জন্য ঘর দেখিয়ে দাও৷ আর আপ্যায়নের ব্যবস্থা করো। কোনো রকম অযত্ন যেনো না হয় উনাদের। কথাটা বলে রিয়াদ ইসলাম তার ঘরে চলে যায় বড় বড় ধাপে।
– শান্তা ইসলাম করুণ দৃষ্টিতে তাকায় রিনা খানের দিকে। বড় অসহায় লাগছে তার এই মুহূর্তে। রাশি দুই হাতে মুখ চেপে ধরে ফুঁপিয়ে কান্না করতে থাকে। রিনা খান মলিন চেহারায় সম্রাটের দিকে তাকায়। সাজ্জাদ খান মাথা নিচু করে কপালে হাত ঠেকিয়ে বসে থাকে। তিনি কখনো কারো কাছে কিছুর জন্য মাথা নত করেননি৷ আজ শুধু মাত্র তার সন্তানের কথা ভেবে তার ভালোর জন্য ছুটে এসেছে। কিন্তু তিনি নিরাশ হলেন তাই ভেঙে পড়ে ভেতরে। বিশেষ করে সম্রাটের জন্য অনেক খারাপ লাগছে সাজ্জাদ খানের। ছেলেকে বড্ড ভালোবাসেন তিনি।

-‘ চল সমু আমরা ফিরে যায়। উনি উনার কথা থেকে কখনো নড়বে না। আমি তোর জন্য কিছু করতে পারলাম না বাবা। আমাকে মাফ করে দিস। আমার বিশ্বাস ছিলো উনি আমাকে ফেরাতে পারবেন না৷ কিন্তু আমার ধারণা ভুল ছিলো। তোকে মনে হয় সুখী করতে পারলাম না আমি অপরাধী কন্ঠে বলে রিনা খান।
– আমরা যাবো না মা। আমিও দেখতে চাই উনি কি করে রাশির বিয়ে দেন। রাশি আমার আর কারো নয়। রাশি আমার সামনে অন্যজনকে কিভাবে বিয়ে করে আমিও সেটা দেখতে চাই। উনার জেদ, উনার ইগো কতখন বজায় রাখতে পারে আমি সেটা দেখতে চাই।
– রেগে বলে সম্রাট কথা গুলো। রাশিকে যে তার চাই-এ চাই। তাই রাশিকে না নিয়ে সম্রাট কোনো ভাবে ফিরবে না মনে মনে পণ করে।

–‘ চলবে…