মেঘপিওনের চুপকথা পর্ব-০৯

0
288

#মেঘপিওনের চুপকথা
#লেখিকা_আলো_ইসলাম

“৯ম পর্ব”

–“রাশি ঘরে এসে ফুঁপিয়ে কান্না করে। সম্রাটকে ছেড়ে যেতে একদম ইচ্ছে করছে না রাশির। রাশি বিসানায় বসে মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলছে। তখনই সম্রাট আসে রাশির রুমে। রাশিকে এইভাবে দেখে সম্রাটের অনেক খারাপ লাগে। তারও তো কষ্ট হচ্ছে রাশি চলে যাবে ভেবে। কিন্তু ভেঙে পড়লে চলবে না। তাই নিজেকে শক্ত রাখার অনবরত চেষ্টা করছে সম্রাট।
– রাশি সম্রাট দেখে অসহায় চোখে তাকায়! চোখের মধ্যে পানিতে ভরপুর। সম্রাট এগিয়ে আসলে রাশি ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে সম্রাট কে। সম্রাট আগলে নেয় একহাতে।
– আমি যাবো না বাড়িতে৷ আপনি বাবাকে বলুন প্লিজ। বাড়িতে গেস্ট আসবে ঠিক আছে। কিন্তু সেখানে আমার কি কাজ? আমি পারবো না আপনাকে ছেড়ে থাকতে। আন্টিকে ছাড়া থাকতে পারবো না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে ভাবতেই যে, আমি আপনাকে ছাড়া থাকবো৷ আপনাকে দেখতে পাবো না। আমি পারবো না সমু। প্লিজ কিছু একটা করুন কথা গুলো বলে রাশি ডুকরে কেঁদে উঠে সম্রাট কে শক্ত করে চেপে ধরে।
– সম্রাট কি বলবে বুঝতে পারছে না। রাশির চোখের পানি সম্রাটের একদম ভালো লাগছে না। রাশির মাথাটা উঁচু করে, চোখের পানি মুছিয়ে দেয় সম্রাট। এরপর দুই গালে আলতো করে হাত রেখে সম্রাট তার ওষ্ঠাদ্বয় রাশির কপালে ছোঁয়ায়। সম্রাটের স্পর্শে চোখ বন্ধ হয়ে আসে রাশির। সাথে গড়িয়ে আসে আরেক ফোটা পানি৷

–‘ তুমি তো একবারে চলে যাচ্ছো না আমাকে ছেড়ে। আবার তো আসবে কিছুদিন পর। আঙ্কেল কি বলল শুনলে না। এতদুর থেকে গেস্ট আসছে! বাড়ির বড় মেয়ে হিসেবে তোমার থাকাটা দরকার তাই আঙ্কেল নিয়ে যাচ্ছে তোমাকে৷ ওরা চলে গেলে আবার ফিরে আসবে৷ মন খারাপ করো না রাশি৷ তোমার মন খারাপ আমার একদম ভালো লাগে না।
– সম্রাটের কথায় রাশির আরো বেশি কান্না আসে।
– আমার কেমন জানি লাগছে আপনাকে ছেড়ে যেতে। মনে হচ্ছে আমি আর ফিরতে পারবো না। আমার কেনো জানি খুব ভয় হচ্ছে সমু । বারবার মনে হচ্ছে আমি আপনাকে হারিয়ে ফেলবো। আমি পারবো না আপনাকে হারাতে। রাশির কথায় সম্রাটের বুকের বা পাশে চিনচিন ব্যথা করে উঠে। সম্রাটেরও যে এমনই লাগছে। কেনো জানি তারও মনে হচ্ছে সব কিছু শেষ হয়ে যাবে৷ সব কিছু এত কাছে এসেও আবার হারিয়ে যাবে। কিন্তু সম্রাট তার মনের কথায় পাত্তা দেয় না৷ এমন কিছুই হবে না এটাই বোঝায় নিজেকে।
-‘ তুমি বেশি ভাবছো রাশি। এমন কোনো কিছুই হবে না। আমাদের কেউ আলাদা করতে পারবে না কখনো একমাত্র মৃত্যু ছাড়া। আমি ঠিক তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো আবার দেখো। আঙ্কেল এখনই চলে আসবে। তুমি রেডি হয়ে নাও৷ আর একদম কান্নাকাটি নয় ওকে। আমরা রোজ ভিডিও কলে কথা বলব। তাছাড়া কথা তো আমাদের হতেই থাকবে। তখন দেখবে তোমার একদম মনে হবে না তুমি আমার থেকে দূরে আছো। ওরা চলে গেলে আমি নিজে গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসবো প্রমিস রাশির হাত ধরে বলে সম্রাট। সম্রাটের কথায় রাশি ভরসা পাই।

– সত্যি আমাকে নিয়ে আসবেন তো। আমাকে ছেড়ে যাবেন না৷ হারাতে দিবেন না কখনো? রাশির কথায় সম্রাট মুচকি হেসে বলে, প্রাণ ছাড়া দেহের অস্তিত্ব আছে? এমনটা দেখেছো কখনো? তুমি আমার সেই প্রাণ যেটা ছাড়া এই দেহের কোনো মূল্যই নেই। রাশি মৃদু হাসে সম্রাটের কথায়।
– অনেক হয়েছে কান্নাকাটি। চোখ মুছো আর রেডি হও ওকে। রাশি মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বললে সম্রাট মুচকি হেসে বেরিয়ে আসে। সম্রাট ঘর থেকে বেরিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। ভেতরটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তার।
–” রাশি সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়৷ রিনা খানের মনের মধ্যে খচখচ করছে। রাশিকে ছাড়তে একদম ইচ্ছে করছিলো না তার। সম্রাট রাশিদের ট্রেনে তুলে দিতে যায় সাথে। সাজ্জাদ খানেরও মনটা খারাপ হয় একটু রাশি চলে যাওয়াতে। রাশিকে তো তিনি মেয়ের মতোই ভাবতেন।

–‘ ট্রেন চলে আসলে রাশি আগে উঠে যায়। রিয়াদ ইসলাম সম্রাটের হাত থেকে রাশির ব্যাগটা নিয়ে সম্রাটের কাধে হাত রেখে চলে, খুব শীগ্রই আবার দেখা হবে আমাদের আশা করি। ভালো থেকো। রিয়াদ ইসলামের কথায় সম্রাট মুচকি হেসে জ্বি আঙ্কেল নিশ্চয় বলে রাশির দিকে তাকায়। রাশি ছলছল চোখে সম্রাটের দিকে তাকিয়ে আছে৷ সম্রাট মুচকি একটা হাসি দেয় রাশির দিকে তাকিয়ে। বিপরীতে রাশিও হাসার চেষ্টা করে। সম্রাট ইশারা করে বলে চোখের পানি না ফেলতে। সম্রাটের এমন কান্ডে রাশি চোখের মধ্যে পানি নিয়েও হেসে উঠে এবার। রিয়াদ ইসলাম গিয়ে বসলে রাশি অন্যদিকে ঘুরে বসে।

– ট্রেন সম্রাটের দৃষ্টির আড়াল হয়ে চলে গেলে সম্রাটের চোখ দিয়েও একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। সম্রাট নিজেকে এতখন সামলে রাখলেও এখন আর পারে না৷ সবার অগোচরে সেই পানি আবার মুছেও ফেলে সম্রাট। পাশে থাকা কাঠের বেঞ্চে গিয়ে বসে। যেখানে সম্রাট আগে বসেছিলো রাশিকে নিতে এসে৷ এখানেই তো প্রথম রাশিকে দেখে সম্রাটের দৃষ্টি আঁটকে গিয়েছিলো রাশির মাঝে। সব কিছু ভেবে সম্রাট হতাশার দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

– — রাশি তার বাড়ির সামনে আসতেই রাই ছুটে এসে রাশিকে জড়িয়ে ধরে। রাইকে দেখে রাশির মুখে হাসি ফুটে উঠে।
– কেমন আছিস বনু? হাসি মুখে বলে রাশি। রাশির কথায় রাই রাশিকে ছেড়ে দিয়ে বলে তোকে ছাড়া অনেক ভালো। রাইয়ের কথায় রাশি ভ্রু কুচকে বলে তার মানে আমাকে দেখে খুশি হোস নাই তুই? রাই মুখটা গম্ভীর করে বলে একদম না।
– ওহ আচ্ছা তাহলে চলে যায় বলে রাশি ঘুরতে গেলে রাই রাশিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে অনেক মিস করেছি আপু তোকে। একা একা একদম ভালো লাগছিলো না তোকে ছাড়া। রাই’য়ের কথায় রাশির মুখের হাসিটা গাঢ় হয়৷

– দুই বোনের কথা শেষ হলে ভেতরে আয় এবার৷ বাইরে থেকে কি সব কথা শেষ করবি নাকি তোরা? রাশির মা শান্তা ইসলাম বলেন কথাটা। মায়ের কথায় রাশি রাই’কে ছেড়ে দিয়ে মায়ের কাছে যায়।
– কেমন আছো মা তুমি? শান্তা ইসলাম রাশির গালে হাত রেখে বলে, ভালো আছি। তোকে দেখে আরো ভালো আছি এখন। যা ফ্রেস হয়ে আয়৷ আমি নাস্তা দিচ্ছি তোদের। খেয়ে রেস্ট কর।

– রাশি মায়ের কথা মতো ঘরে যায়। পিছু পিছু রাই’ও আসে।
–” আচ্ছা লন্ডন থেকে বাবার কোন বন্ধুর পরিবার আসছে জানিস? ব্যাগ থেকে রাশি তার ড্রেস বের করতে করতে বলে রাই’কে উদ্দেশ্য করে। রাশির কথায় রাই ঠোঁট উল্টিয়ে বলে, আমিও জানি না রে আপু। তবে শুনেছি বাবার খুব ভালো বন্ধু। অনেক আগে বিদেশ চলে গেছেন তারা। অনেক বড়লোকও। বাবাকে আমি মাঝে মাঝে কথা বলতেও শুনেছি উনার সাথে।

– রাই’এর কথায় রাশি ওহ বলে ওয়াসরুমে যেতে যায় তখন রাই বলে, ওরা কেনো আসছে জানিস আপু? রাশি ওয়াসরুমের দরজার কাছে থেমে বলে কেনো আবার বেড়াতে।
– শুধু বেড়াতে নয় রে আপু! তোকে দেখতে আসছে সহ। উনার নাকি একটা সুন্দর হ্যান্ডসাম ছেলে আছে। মুচকি হেসে বলে রাই। কিন্তু রাশির মুখটা মলিন হয়ে যায়। মুখে যেটুকু হাসি ছিলো সেটা কালো মেঘে ঢেকে যায়। রাই’য়ের কথায় হতভম্ব হয়ে যায় যেনো রাশি।

– মানে? মৃদু চিৎকার করে বলে রাশি।
– মানে বাবা তোর বিয়ে ঠিক করেছে। মা তো তাই বলল। অনেক আগে থেকে নাকি তোর বিয়ে ঠিক আছে উনার ছেলের সাথে৷ এখন উনারা দেশে আসছেনই তো তোর জন্য। তোকে মনে হয় বিয়ে করে নিয়ে যাবে ওরা। আচ্ছা আপু তুইও ওদের সাথে লন্ডন চলে যাবি তাই না। তখন তোকে চাইলেও আমি আর দেখতে পাবো না। কাছে যেতে পারবো না। মন খারাপ করে বলে রাই। কিন্তু রাশির যেনো পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায়। রাশি মনে মনে যে ভয়টা পাচ্ছিলো সেটাই হলো। রাশির মাথা ভনভন করে উঠে। আর কিছু শুনতে পারছে না। সম্রাট কে হারানোর ভয় জেঁকে বসেছে তার মধ্যে। রাশির চোখ দিয়ে আবার পানি পড়তে শুরু করে।

– একি আপু তুই কান্না করছিস নাকি? রাইয়ের কথায় রাশি চোখ মুছে নেয় তাড়াতাড়ি। এরপর রাই’কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়।

-” রাশি ফ্রেস হয়ে ওর মায়ের কাছে যায়। মায়ের সাথে কথা বলে সবটা ক্লিয়ার হবে।
– রাশির মা নাস্তা রেডি করছে সবার জন্য। রাশি ওর মায়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় নিরবে। রাশিকে দেখে শান্তা ইসলাম মুচকি হেসে বলে রিনা রা সবাই কেমন আছে রে? মায়ের কথায় রাশি ভালো বলে চুপ হয়ে যায়।
– শান্তা ইসলাম লক্ষ্য করে রাশি কেমন উসখুস করছে কিছু বলার জন্য হয়তো। মুখটাও থমথমে হয়ে আছে।

– রাশি! মায়ের ডাকে রাশি চমকে হ্যাঁ বলে উঠে।
— কি হয়েছে। মুখটা এমন করে রেখেছিস কেনো? কিছু বলবি? মায়ের কথায় রাশি যেনো সুযোগ পাই। তাই দেরিনা করে বলে, আচ্ছা মা কারা আসছে আমাদের বাড়িতে?
– রাশির কথায় শান্তা ইসলাম আবার কাজে মন দিয়ে বলে, তোর বাবার বন্ধু শেখর মল্লিক। খুব ভালো বন্ধুত্ব তোর বাবার সাথে৷ তারাই আসছে আমাদের বাড়িতে।
– ওহ! বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কিছুখন চুপ থাকে রাশি।

– আচ্ছা মা। ওরা এমনি বেড়াতেই আসছে আপনাদের এখানে তাই না? রাশির কথায় কৌতুহল নিয়ে তাকায় শান্তা ইসলাম। রাশি কিছুটা ঘাবড়ে যায় তার মায়ের তাকানো দেখে৷
– ওরা বেড়াতে আসছে সাথে দেখতেও আসছে তোকে। দেখতে আসছে বললে ভুল হবে৷ অনেক আগেই দেখেছে তোকে৷ এবার বিয়ের দিন পাকা করে একদম বিয়ে দিয়ে নিয়ে যাবে তাদের বাড়ি। শান্তা ইসলামের কথায় রাশি পিছিয়ে যায় একটু। আহত চোখে মায়ের দিকে তাকায়। রাশির বুকের মধ্যে তীব্র ব্যথা অনুভব। প্রিয় কিছু হারানোর ব্যথা৷
– কিন্তু মা!আমার পড়াশোনার কি হবে। আমি সবে ভার্সিটি ভর্তি হলাম আর এখনই বিয়ে৷ আমার স্বপ্ন পূরণ করতে দাও আগে। আমি এখন বিয়ে করবো না মা কথাটা বলতেই কেঁদে দেয় রাশি।
– পড়াশোনা তো বিয়ের পরেও হবে রাশি। তাছাড়া এটা তোর বাবার সিদ্ধান্ত আমার কিছু করার নেই। জানিসই তো তোর বাবা এক কথার মানুষ। আর আমরা তো তোর খারাপ চাইনা। বিয়ের পরও তোকে পড়াশোনা করাবে ওরা তোর বাবা কথা বলেছে৷ লন্ডনে গিয়ে তুই তোর পড়া শেষ করবি। রাশি আর কিছু না শুনে ছুটে বেরিয়ে যায় রান্নাঘর থেকে। ঘরের মধ্যে ঢুকে দরজা বন্ধ করে ইচ্ছে মতো কান্না করতে থাকে। রাশি ফোন টা হাতে নেয় সম্রাটকে ফোন দেওয়ার জন্য । সম্রাট কে সবটা জানাতে হবে নাহলে সব হাতের বাইরে চলে যাবে৷ এমনটা ভেবে রাশি ফোন দেই সম্রাটকে।
– একবার রিং হওয়াতেই সম্রাট ফোন রিসিভ করে। রাশির ফোনের অপেক্ষাতেই ছিলো যেনো সে।
– ফোন রিসিভ করতেই রাশির কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই সম্রাট। এতে চমকে উঠে ভয়ার্ত কন্ঠে হ্যালো হ্যালো করে সম্রাট। এইদিকে রাশি কান্নার জন্য ঠিক মতো কথা বলতেও পারছে না।

– রাশি কি হয়েছে? কান্না করছো কেনো। কারো কিছু হয়েছে কি? প্লিজ কিছু বলো রাশি। সম্রাট চিৎকার করে বলে। সম্রাটের চিৎকার শুনে রিনা খান ছুটে আসে সম্রাটের ঘরে। সম্রাট তার ঘরেই ছিলো।

– রাশি নিজেকে সামলে নিয়ে কান্নারত কন্ঠে বলে, এরা আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য নিয়ে এসে সমু। আমি অন্য কাউকে বিয়ে করবো না৷ আমাকে প্লিজ এখান থেকে নিয়ে যান। আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচবো না কথাটা বলে রাশি আবারো কান্নায় ভেঙে পড়ে। রাশির কথা শুনে সম্রাটের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ে। অবাক হয়ে বলে কিহ! কই আঙ্কেল তো তেমন কিছু বলল না। আর হঠাৎ বিয়ে। কার সাথে বিয়ে?
– সম্রাটের কথায় রিনা খান ভয়ার্ত চেহারায় তাকায় সম্রাটের দিকে।
– কি হয়েছে সমু? কার বিয়ের কথা বলছিস আর কে ফোন করেছে?
– রাশি সবটা খুলে বলে সম্রাট কে। সব শুনে সম্রাট খাটের উপর বসে যায়। রিনা খান চিন্তিত কন্ঠে বলে কি হলো কথা বলছিস না কেনো? কার বিয়ের কথা বলছিস?

– রাশির বিয়ে মা! কাতর স্বরে বলে সম্রাট। রিনা খান আঁতকে উঠে রাশির বিয়ে শুনে।
– মানে কি? রিয়াদ ভাই তো তেমন কিছু বলল না আমাদের। আর হঠাৎ রাশির বিয়ে কেনো দিতে যাবে বুঝলাম না। উনারা না রাশিকে পাঠালেন আমাদের এখানে পড়াশোনার জন্য।
অনেক আগে থেকে ঠিক ছিলো সব। রাশি জানতো না। ছেলের পরিবার দেশে আসছে রাশিকে বিয়ে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সাবলীল ভাবে বলে সম্রাট। রাশি ফোনের ওপারে থেকে সবটা শুনছে আর কান্না করছে। তখনই তার ঘরের দরজায় কেউ ঠকঠক করে। রাশি তাড়াতাড়ি করে ফোন কেটে চোখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।

– দেখি ফোন টা দে আমাকে৷ আমি কথা বলছি রাশির সাথে বলে ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে কেটে দিয়েছে রাশি। সম্রাট নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে।

– কিছু হবে না বাবা। আমি কথা বলবো রাশির বাবার সাথে। রাশির বিয়ে তোর সাথে হবে দেখিস। আমাদের কোনো কিছুর কমতি নেই যে রিয়াদ ইসলাম রাশিকে দিতে নারাজ থাকবেন। তাছাড়া তোরা দুজন দুজনকে ভালোবাসিস৷ তাই উনাকে রাশির সাথে তোর বিয়ে দিতেই হবে। আমি শান্তার সাথে আজই কথা বলব ফোনে। এরপর কাল আমরা রওয়ানা দেবো৷ তুই একদম চিন্তা করবি না। একদম ভেঙে পড়বি না। রিনা খানের কথা শেষ হতেই সম্রাট রিনা খানের কোমর জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠে।
– আমি সত্যি রাশিকে হারাতে চাইনা মা। তুমি কিছু একটা করো। রাশির অন্য কোথাও বিয়ে হলে আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো। রাশি আমাকে ছাড়া বাঁচবে না। ও যেতে চাইলো না। অনেক ভয় করছিলো। আমি ওকে বুঝিয়ে পাঠায়। এখন সত্যি ওকে হারাতে হচ্ছে আমায়। আমি পারবো না মা৷ কোনো ভাবে পারবো না ওকে হারাতে। প্লিজ তুমি কিছু একটা করো। সম্রাট রাশির বিয়ের কথা শুনে বেশ ইমোশনাল হয়ে যায়। হঠাৎ এমন একটা খবর মেনে নিতে পারে না৷ তাই প্রিয়জনকে হারানোর ভয়ে বাচ্চাদের মতো বিহেভ করে।

— রাশি দরজা খুলে দেখে রাই হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। রাশি রাইকে দেখে ভেতর চলে আসে আবার।
– আপু তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। উনারা চলে এসেছেন তো। বসার ঘরে দেখলাম বাবার সাথে বসে গল্প করছে। তবে তোর বরটা দেখতে হেব্বি মাইরি। একদম সাহেব সাহেব ভাব।
– রাইয়ের কথা রাশির কাছে বিরক্ত লাগে খুব৷ তাই রাগী কন্ঠে বলে, তুই এখন এইখান থেকে যা রাই। আমার ভালো লাগছে না।
– কিন্তু মা যে আমাকে পাঠালো তোকে রেডি করার জন্য। রাইয়ের কথায় রাশি চোখ পাকিয়ে তাকায় রাইয়ের দিকে। এতে রাই চুপসে গিয়ে নিরবে চলে যায়। তবে রাশির এমন ব্যবহারে রাইয়ের সন্দেহ হয়।রাশি এর আগে কখনো এমন করেনি তার সাথে। তাহলে আজ হঠাৎ। তার মানে কি আপু রাজী নয় বিয়েতে? এইসব ভাবতে ভাবতে রাই তার মায়ের কাছে যায়।

–‘ পাত্রপক্ষের সামনে বসে আছে রাশি। মুখটা ফ্যাকাসে করে রেখেছে৷ একটু আগে তার মা জোর করে সাঁজিয়ে গুছিয়ে পাত্রপক্ষের সামনে হাজির করেছে। রাশিকে দেখে সবাই বেশ খুশি। শেখর মল্লিক বেশ হাস্যমুখে বলে, মেয়ে একটা হয়েছে তোর রিয়াদ মাশা-আল্লাহ। আমার আনভীরের সাথে বেশ মানাবে রাশি মা’কে। ( রাশির যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তার নাম আনভীর মল্লিক)
– রাশি কি শুধু আমারই মেয়ে শেখর? রাশি তো তোরও মেয়ে। মুচকি হেসে বলে রিয়াদ ইসলাম। রাশির এদের কথপোকথন খুব বিরক্ত লাগছে। আনভীর পলকহীন ভাবে রাশির দিকে তাকিয়ে আছে। যেনো হুরপরী দেখছে সামনে থেকে । রাশি একবারও তাকায়নি আনভীরের দিকে। মাথা নিচু করে বসে আছে। রাশির পাশে রাই বসে আছে মুখে হাসি ঝুলিয়ে।
– আপু দেখ জিজু কেমন ড্যাবডেবে চোখে তাকিয়ে আছে তোর দিকে। জীবনে যেনো মেয়েমানুষ দেখেনি মুখ বাকিয়ে বলে রাই। রাইয়ের কথায় রাশি কোনো রিয়াকশন দেয় না।

-‘ আচ্ছা এবার আমরা বাকি কাজটা সেরে নিই এরপর নাহয় একটা দিন ঠিক করবো। কথাটা শোনা মাত্র রাশির বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠে। সম্রাট কে হারানোর ভয় তীব্র থেকে তীব্রকর হতে থাকে৷ রাশি ঘামতে শুরু করে।
– আনভীর রাশির হাতে এই রিংটা পড়িয়ে দাও। একটা রিং আনভীরের সামনে ধরে বলে শেখর মল্লিক। আনভীরের মা দুইটা ভারী স্বর্ণের চুড়ি বের করে রাশির হাতে পড়িয়ে দেয় আগে। এটা নাকি তাদের বংশের নিয়ম। বিয়ের দিক পাকা করতে আসলে এটা মেয়েকে পড়িয়ে দেওয়া হয়৷ রাশি চুড়িটা পড়তে চাইনা। তাই বারবার হাত সরিয়ে নিচ্ছিলো। কিন্তু শান্তা ইসলাম এর জন্য সফল হয়না। তাই বাধ্য হয়ে পড়ে নিতে হয় রাশিকে। কিন্তু রাশি এখন রিংটা কোনো ভাবেই পড়তে চাই আনভীরের হাত থেকে। অসহায় চোখে মায়ের দিকে তাকায় এরপর বাবার দিকে। রিয়াদ ইসলাম বেশ সাবলীল ভাবেই আছেন মুখে একটা হাসি ধরে।
— আনভীর উঠে আসে রাশিকে রিংটা পড়ানোর জন্য। আনভীরকে এগিয়ে আসতে দেখে রাশি চমকানো চোখে তাকায় আনভীরের দিকে। এই প্রথম তাকায় রাশি আনভীরের দিকে। আনভীর দেখতে বেশ সুঠাম দেহি। লম্বা চওড়া একজন পুরুষ। তবে গায়ের রঙটা একদম বিদেশীদের মতো। রাশির সন্দেহ আনভীর কি আদো বাংলাদেশের ছেলে?
– আনভীর রাশির হাতে রিংটা পড়ানোর জন্য রাশির সামনে ধরে কিন্তু রাশি হাত উঠায় না।
– শান্তা ইসলাম ইশারা করে হাত দেওয়ার জন্য কিন্তু রাশি তাও হাত উঠায় না। রিয়াদ ইসলামের মুখটা এবার থমথমে হয়ে আসে। দৃঢ় কন্ঠে বলে হাতটা বাড়িয়ে দাও রাশি। বাবার কথায় রাশি হাতটা এগিয়ে দেয় আর কোনো উপায় না পেয়ে। আনভীর যেইনা রিংটা পড়াতে যাবে তখনই রাশি হাতটা হাল্কা সরিয়ে নেয়। এতে রিংটা শব্দ করে নিচে পড়ে যায়। রাশি যেনো স্বস্তি পায় এতে। উপস্থিত সবার মুখশ্রী মলিন হয়ে আসে৷

– আনভীর রিংটা পড়লো কীভাবে? গম্ভীর কন্ঠে বলে শেখর মল্লিক। তার কথা শেষ হতেই শান্তা ইসলাম বলে, এটা একটা এক্সিডেন্ট। কিছু মনে করবেন না৷ আনভীর বাবার দোষ নেই এতে৷ রিংটা তুলে আবার পড়িয়ে দিলেই হবে৷ মায়ের কথায় রাশির মধ্যে আবার ভয়টা বৃদ্ধি পায়।
– রাই রিংটা কোথায় পড়লো দেখ। শান্তা ইসলাম মুচকি হেসে বলে। মায়ের কথায় রাই রিংটা খুঁজে বের করে রাশির হাতে দেয়৷ রাশি তাড়াতাড়ি করে আঙ্গুলে পড়ে নেয়। সবাই বেশ অবাক হয়।
– রিয়াদ ইসলাম কিছুটা রেগে যায় রাশির উপর।
– এটা কি করলে রাশি? রিংটা তুমি নিজে পড়লে কেনো?
– থাকনা ভাইয়া। ওইটা তো ওর জন্যই নিয়ে আসা৷ আমি খুশি হয়েছি যে রিংটা রাশি মায়ের পছন্দ হয়েছে৷ তাই তো নিজে নিজে পড়ে নিয়েছে তাই না রাশি মা? আনভীরের মা হাসি মুখে বলে রাশির দিকে তাকিয়ে। রাশিও হাসার চেষ্টা করে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।

-” চলবে..