মেঘপিওনের চুপকথা পর্ব-১১

0
369

#মেঘপিওনের চুপকথা
#লেখিকা_আলো_ইসলাম

“১১তম পর্ব”

–” শান্তা ইসলাম সম্রাট’দের থাকার ঘর দেখিয়ে দেয়। সম্রাটকে একটা রুমে দেয় আর সম্রাটের বাবা-মায়ের জন্য আরেকটা রুমের ব্যবস্থা করে। জার্নি করে আসায় সবাই ভীষণ ক্লান্ত তার উপর আপসেট হয়ে আছে। রিনা খানের মনটা অত্যন্ত খারাপ সম্রাট আর রাশির কথা ভেবে। কি হবে শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারে না তিনি। রিনা খান রুমে আসতেই রাশি ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে রিনা খানকে। রাশি কান্নায় ভেঙে পড়ে তাকে ধরে। হঠাৎ এমন হওয়ায় রিনা খান একটু ঘাবড়ে যায় পরোক্ষে রাশিকে দেখে মনে শান্তি অনুভব করে ঠোঁটের কোণে একটু হাসির রেখাও দেখা দেয়।

– আন্টি প্লিজ আমাকে এখানে থেকে নিয়ে চলো। আমি এই বিয়ে করতে পারবো না। সমু ভাইয়াকে ছাড়া আমি কাউকে আমার জীবনে জায়গা দিতে পারবো না। আমার মন প্রাণ জুড়ে যে মানুষ টা আছে তাকে ছেড়ে অন্য কাউকে কিভাবে মেনে নিই বলো। বাবা কেনো বুঝতে চাইছে না। আমাকে প্লিজ এখান থেকে নিয়ে চলো আন্টি। নাহলে বাবা আমাকে ওই লোকটার সাথে বিয়ে দিয়ে দেবে।
– রাশির কথায় রিনা খানের নিশ্বাস ভারী হয়ে আসে। তারও কান্না পাচ্ছে অনেক রাশির অবস্থা দেখে। সাজ্জাদ খান অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে রাশির দিকে।

– এইভাবে কান্না করে না মা। আমার কথা শুন। কিছু হবে না দেখিস। তোর বিয়ে অন্য কোথাও হবে না। আমার সমু তোকে অন্য কারো হতেই দেবে না। কাঁদে না মা কথাটা বলে রাশির চোখের পানি মুছে দেয় তিনি।
– তুমি শুনলে না বাবা কি বলল। বাবা কোনো ভাবে এই বিয়ে বন্ধ করবে না। এখানে থাকলে আমাকে ওই লোকটাকেই বিয়ে করতে হবে। আন্টি চলো আমরা চলে যায়।
– রাশির কথায় রিনা খান চমকে উঠে বলে, এইসব কি ধরনের কথা রাশি। তোর বাবা কষ্ট পাবে তাহলে। হ্যাঁ মানছি উনি ভুল করছেন। কোনো কিছু বুঝতে চাইছে না। তাই বলে আমরাও ভুল করতে পারি না। এখনো তো সময় আছে হাতে। তুই এতো চিন্তা করছিস কেনো। ভরসা রাখ আমাদের উপর। দেখবি সবটা ঠিক হয়ে গেছে। ইসস কি অবস্থা করেছে কেঁদে কেটে। আর কান্না নয়। আমি আছি তো। ভরসা নেই আমার উপর? জিজ্ঞেস করেন রিনা খান। তার কথায় রাশি মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বলে।
– তাহলে এত ভাবছিস কেনো। আমরা যখন চলে এসেছি ঠিক একটা না একটা ব্যবস্থা করবো দেখিস। এখন ঘরে যা। একদম মন খারাপ করে থাকবি না। তোর মন খারাপ দেখতে একদম ভালো লাগে না। রিনা খানের কথায় রাশি কান্নার মাঝেও মুচকি হাসে।

– “” আপু উনারা এতদুর থেকে এসেছে একটু রেস্ট করুক। আয় তুই পরে আসবি আবার। রাই বলে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে। রাই’য়ের কথায় রিনা খান আর সাজ্জাদ খান তার দিকে তাকায়।
– রাই না তুমি? কৌতুহল নিয়ে বলে রিনা খান। তার কথায় রাই মুচকি হেসে হ্যাঁ বলে।

– কত বড় হয়ে গেছিস রে তুই। সেই ছোট্ট দেখেছিলাম তোকে। আয় ভেতরে আয়। বাইরে কেনো। রিনা খানের কথায় রাই মুখে হাসি রেখেই এগিয়ে আসে।

– কি মিষ্টি দেখতে হয়েছিস। একদম আমার রাশি মায়ের মতো। দোয়া করি ভালো থাক।
– আন্টি আপুর বিয়ে কি তাহলে ওই আনভীর ভাইয়ার সাথেই হবে? বাবা তো সম্রাট ভাইয়াকে আপুর সাথে মেনে নিচ্ছে না৷ মনটা খারাপ করে বলে রাই। রাইয়ের কথায় সবার মুখটা থমথমে হয়ে যায়।

– বোনের জন্য খারাপ লাগছে বুঝি? রিনা খানের কথায় রাই মুখটা মলিন করে বলে, আপু এসে পর্যন্ত কান্না করে যাচ্ছে। আমার একদম ভালো লাগছে না আপুকে এইভাবে দেখতে। আমিও চাই আপুর বিয়েটা যেনো সম্রাট ভাইয়ার সাথেই হয়। কিন্তু বাবা তো রাজী হলো না। তাহলে এখন কি হবে?

— মন খারাপ করো না রাই। তোমার আপুর বিয়ে আমার ছেলে সাথেই হবে। আমার মেয়েকে আমার বাড়ি নিয়ে যাবো দেখো। সাজ্জাদ খানের কথায় রাই মুচকি হেসে বলে তাই যেনো হয় আঙ্কেল। আচ্ছা তোমরা রেস্ট করো পরে কথা হবে আবার। চল আপু বলে রাই রাশিকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় তখনই সামনে সম্রাট কে দেখতে পাই। সম্রাট কে দেখে রাশির চোখ ভরে আসে আবারো। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে রাশি৷ গলা ধরে আসে যেনো তার।

*- রাশি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। ছুটে গিয়ে সম্রাট কে জড়িয়ে ধরে। সম্রাট রাশিকে কাছে পেয়ে আগলে নেয়। সাজ্জাদ খান অন্য দিকে ফিরে তাকায়। রিনা খান আর রাই মুখের হাসিটা গাঢ় করে তাকিয়ে থাকে।
– আমার খুব ভয় করছে। আমি সত্যি সত্যি আপনাকে হারিয়ে ফেলবো মনে হয়। আমি কিন্তু অন্য কাউকে মানতে পারবো না। মরে যাবো তাও কাউকে বিয়ে করবো না। আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলুন আপনি৷ রাশি সম্রাট কে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে।

– তোমাকে না কান্না করতে বারণ করেছি আমি। কান্না করে নিজের কি অবস্থা করেছো রাশি। আমি তো আছি নাকি৷ আমি ছাড়া আমার রাশিকে অন্য কারো নেওয়ার সাহস আছে? বাঁচলে একসাথে বাঁচব আর মরলে একসাথেই মরবো। তুমি ছাড়া আমার জীবনে কেউ আসবে না কখনো। আমি আবার কথা বলব আঙ্কেলের সাথে। উনাকে আবারও বোঝাবো দরকারে। তাও তোমাকে আমার চাই।

– আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে আমি আপনাকে হারিয়ে ফেলবো। রাশির কথায় সম্রাট বিরক্ত হয়ে বলে কি এক কথা বারবার বলছো। তুমি আমার আর আমারই থাকবে। একদম মন খারাপ করবে না। হাসো এবার রাশিকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে বলে সম্রাট।
* কিন্তু রাশির অনেক কান্না পাচ্ছে।
– হাসতে বলেছি আমি ধমকের স্বরে বলে সম্রাট। সম্রাটের কথায় রাশি আবারো ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। এতে সবাই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সাথে সম্রাট নিজেও।

–‘ পরের দিন..
– রিয়াদ ইসলামের বাড়ি সাঁজানো হচ্ছে। বাড়ির মেয়ের বিয়ে বলে কথা। তার উপর প্রভাবশালী মানুষ তিনি। তাই বেশ জমজমাট ভাবে রাশির বিয়ের আয়োজন করেছেন তিনি। অনেক অনেক মানুষের দাওয়াত, লোকজনে হৈচৈ দুইদিন আগে থেকেই।
– সকাল সকাল রাহাত আর সামিরা এসে হাজির হয় রাশির বাড়িতে। গতরাতে রাহাত সম্রাটের কাছে ফোন দিয়ে সবটা জানার পর ভীষণ আপসেট হয়ে পড়ে। কি হবে কি করবে ভেবে দম বন্ধকর অবস্থা সবার। রাশি সামিরাকে আসার জন্য বলে। যেহেতু সম্রাট রাহাতকে ডাকে সেখানে তাই সামিরাও চলে আসে সাথে।

– রাশির বাবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সামিরা আর রাহাত। তার ঠিক একটু দূরে সম্রাট, রাশি রাই দাঁড়িয়ে। রিনা খান ভেতরে আছে শান্তা ইসলামের সাথে। শান্তা ইসলাম রিনা খানের সামনে আসতেই কেমন ইতস্ততবোধ করছিলেন। পরে রিনা খানই সব ঠিক করে নেয়। এখানে তো তার কোনো দোষ বা হাত নেই৷ সবাই অসহায়। শান্তা ইসলামও চাই তার মেয়ে ভালো থাক তার ভালোবাসার মানুষটার সাথে। কিন্তু তার স্বামী তো বুঝছেন না। তাই নিজেকে অপরাধী মনে করছেন স্বামীর কারণে।

–‘ তোমাদের পরিচয়? গম্ভীর কন্ঠে বলে রিয়াদ ইসলাম। তার কথায় সামিরা আর রাহাত নড়েচড়ে উঠে দুজন দুজনের দিকে তাকায়।
– আসলে আঙ্কেল রাহাত কিছু বলার আগেই রাশি উত্তেজিত কণ্ঠে বলে, বাবা ও সামিরা। আমার বন্ধু৷ আমরা ভার্সিটিতে একসাথে পড়ি৷ রাশির কথায় রিয়াদ ইসলাম সামিরার দিকের কিছুখন সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ওহ বলে। সামিরা একটা মৃদু হাসি দেয় এতে শুধু। রাশির বাবাকে দেখে সামিরা ভয় লাগছে অনেক।

– কি জল্লাদ লুক রে বাবা। এমন একটা মিষ্টি মেয়ের বাবা নাকি এই জল্লাদ টাইপ লোক ভাবা যায়। আমার তো দেখেই ভয় করছে৷ কি গম্ভীর দেখতে৷ এই লোক যে প্রেমে বাধা হবে স্বাভাবিক। রাশিরে তোর ভাগ্যে কি আছে আল্লাহ জানে। মনে মনে বলে সামিরা৷
– আর ও আমার ফ্রেন্ড রাহাত! আঙ্কেল। আসলে রাশির সাথে এই কয়দিনে খুব ভালো একটা বন্ডিং হয়ে গেছে ওর। বোন ভাবে রাশিকে। তাই ভাবলাম রাশির বিয়ে ওকেও ডেকে নিই! ভালো করেছি না আঙ্কেল দাঁত বের করে হেসে বলে সম্রাট। রাহাত তো সম্রাটের এমন বিহেভে অবাক হয়। রাশি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে থাকে তার বাবার দিকে।
– রাশি ওদের ভেতরে নিয়ে যাও। কথাটা বলে রিয়াদ খান সোফায় বসেন৷ বাবার কথায় রাশি জ্বি বাবা বলে সামিরাকে নিয়ে চলে যায় তার রুমে৷ সম্রাট রাহাতকে নিয়ে যায়।

–‘ এটা রাশির বাবা? রাহাত প্রশ্ন করে ভ্রু কুচকে।
– কেন তোর সন্দেহ আছে। সাবলীল ভাবে বলে সম্রাট।
– কেমনে কি ভাই। দেখতে একদম ভিলেন টাইপ। ভাই এর কাছ থেকে রাশিকে তুই নিয়ে যাবি কি করে। দেখে মনে হলো অনেক রাগী আর গম্ভীর একটা মানুষ।
– রাহাতের কথায় সম্রাট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না৷ রাশির অবস্থাটা দেখেছিস। মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না৷ আমি রাশিকে ছাড়া থাকতে পারবো না। যত সময় যাচ্ছে রাশিকে হারানোর ভয় আমার মধ্যে জেঁকে বসছে৷ ভেবেই পাচ্ছি না সবটা মেনেজ করবো কি করে হতাশাগ্রস্ত হয়ে বলে সম্রাট।
– চিন্তা করিস না দোস্ত। কিছু একটা ব্যবস্থা তো নিশ্চয় হবে। সময় টা সত্যি খারাপ যাচ্ছে অনেক আহত কন্ঠে বলে রাহাত।

– তোর বাবাকে দেখেই আমার গায়ে কাটা দিচ্ছে। এমন গম্ভীর মানুষ কেন তোর বাবা। দেখে মনে হচ্ছে জীবনে হাসেনি। তার জন্য হাসি নিষিদ্ধ করা হয়েছে সংসদ থেকে। সামিরার কথায় রাশি মুচকি হেসে বলে আমার বাবা দেখতে এমন কিন্তু অনেক ভালো। মনটা অনেক ভালো আমার বাবার। আর আমাদের দুইবোন কে অনেক ভালোবাসে।

* তাহলে তোর সাথে সম্রাট ভাইয়ের রিলেশন টা মেনে নিচ্ছে না কেন? সামিরার কথায় রাশির মুখের হাসি সরে যায়৷ মুখটা মলিনতায় ভরে উঠে আবার।
– বাবা ভীষণ জেদি আর একরোখা স্বভাবের। তাই একবার যাকে কথা দেয় সেটা পালন করে ছাড়ে৷ কিন্তু বাবা তার কথা রাখতে গিয়ে যে আমার জীবন টা জাহান্নামে পরিণত করছে এটা বুঝতে পারছে না। আমি কি করবো জানি না৷ কিন্তু সম্রাট কে হারাতে পারবো না৷ দরকার হয় জীবন দেবো তাও অন্য কাউকে স্বামী হিসেবে মানবো না। রাশির চোখ দিয়ে আবারও পানি পড়তে থাকে।
– সব ঠিক হয়ে যাবে রে রাশি। এইসব কথা একদম মাথায় নিয়ে আসবি না৷ ভুলেও উল্টো পালটা কথা চিন্তা করবি না। সম্রাট ভাইয়া তোকে কখনো অন্য কারো হতে দেবে না। সে বিশ্বাস আমার আছে৷ তাই দেখতে থাক কি হয় রাশিকে আশা দিয়ে বলে সামিরা।

–‘ চারিদিকে আঁধারে ছেয়ে গেছে। ঝিঁঝিপোকার শব্দে চারিপাশ ভরে উঠেছে। গ্রামাঞ্চলে ঝিঁঝিপোকার ডাক বেশি শোনা যায়। রাশির বাড়িতে মানুষে থৈথৈ অবস্থা। বাচ্চারা বিয়ের আনন্দে ছোটাছুটি করে বেড়াচ্ছে। বড়রা ব্যস্ত বিয়েতে আসা মেহমানদের তদারকি করতে। গ্রামের বিয়েতে তিনদিন আগে থেকে আনন্দ মজা করা হয়। ছেলে বা মেয়ে মিষ্টি মুখ করে দুদিন ধরে। একদিন নিজের বাড়ি মিষ্টি খাই তো আরেকদিন পরের বাড়ির। মানে আত্মীয়স্বজন’রা নিয়ে আসে। রাশি আজ নিজের বাড়ির মিষ্টিমুখ করবে মানে ক্ষীর খাবে। এলাকার মহিলা রা আত্মীয়স্বজন এসে রাশির মুখে ক্ষীর দিয়ে যাচ্ছে।

–” রিনা খান চিন্তিত হয়ে বসে আছে তার রুমে। সাথে সম্রাট, রাহাত ও আছে। রিনা খান সম্রাট আবারো রাশির বাবার সাথে কথা বলে। কিন্তু তিনি তার সিদ্ধান্তে অটুট। কোনো ভাবে কোনো কথা বুঝতে চাননি তিনি। রাশির বিয়ে আনভীরের সাথেই দেবেন এটাই তার পণ।
– এবার আমরা কি করবো আন্টি? উনি তো কোনো ভাবেই রাজি হচ্ছেন না। এইভাবে চুপচাপ বসে থাকলে রাশির বিয়েটা সত্যি হয়ে যাবে। আর বিয়েটা হওয়া মানে তিনটা জীবন নষ্ট হয়ে যাওয়া। রাশি কখনো ওই ছেলে টা কে মানতে পারবে না। না নিজে সুখী হবে আর না তাকে ভালো রাখতে পারবে। আর সম্রাট বেঁচে থেকেও মরে যাবে চিন্তিত হয়ে বলে রাহাত।

– — আমি তো কম চেষ্টা করলাম না রাহাত। এখন কি করা উচিত এটাই বুঝে উঠছি না। আমি চাইছি না রাশির বাবার মান-সম্মান নষ্ট হোক। তার দিকে কেউ আঙ্গুল তুলুক তার মেয়ের জন্য। কিন্তু তিনি তো কিছু বুঝতে চাইছে না।

– আমি রাশিকে নিয়ে পালাবো মা৷ এছাড়া আর কোনো উপায় নেই আমার কাছে। আমি রাশিকে হারাতে চাইনা কোনো ভাবে। ফ্লোরের দিকে দৃষ্টি রেখে বলে সম্রাট।
– রিনা খান ঘাবড়ানো চোখে তাকায় সম্রাটের দিকে।
– ও একদম ঠিক বলেছে আন্টি৷ এই ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই। উনাকে এতবার করে বোঝানোর পরও যখন বুঝতে চাইছে না,। তখন উনার কথা ভাবার কোনো দায় নেই আমাদের৷

-; কিন্তু রাহাত। উনি যে কষ্ট পাবেন এমনটা করলে।
– দেখো আন্টি। উনার কথা ভেবে আমরা দুটো জীবন নষ্ট হতে দিতে পারিনা৷ রাশি কিন্তু আমাদের উপর ভরসা করে আছে৷ ওর বিশ্বাস সম্রাট ঠিক তার করে নিবে।
– আচ্ছা আমাকে একটু ভাবতে দে। দুইহাতে মাথা চেপে ধরে বলে রিনা খান।
– যা করবে জলদি আন্টি। হাতে আর একটা দিন আছে। এরপর সম্রাট কে নিয়ে বেরিয়ে যায়।

– রাশি আর সামিরা বসে আছে ক্ষীর খাওয়ার স্টেজে। রাশি আজ তেমন সাঁজে নি! যতটুকু না সাঁজলে নয় ততটুকুই করেছে। আর সামিরাই বলে রাশিকে একটু সাঁজার জন্য। নাহলে মানুষ তো নানান কথা বলবে। রাশির আরো কিছু বন্ধু আছে সাথে। গ্রামেরই তারা।

–‘ রাশি এদিক ওদিক তাকিয়ে সম্রাটকে খোঁজার চেষ্টা করছে।
– আচ্ছা রাহাত ভাইয়া আর উনি কোথায়?
– সামিরাও এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে কি জানি। আমি তো অনেকখন দেখি নাই।
– এর মধ্যে সম্রাট এসে উপস্থিত হয়৷ সম্রাট কে দেখতে পেয়ে রাশি যেনো স্বস্তি পায়। অসহায় ফেস করে তাকায় তার দিকে। সম্রাট সকল আঁধার, মলিনতা সাইডে রেখে একটা মুচকি হাসি দেয়।
– সামিরা রাহাতকে ইশারা করে কি হলো জানার জন্য। রাহাত একটা তপ্ত দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাথা ঝাকিয়ে না বলে। সামিরা হতাশ হয় এতে।

–‘ রাশি সম্রাটকে দেখে উঠে আসতে যায় তখনই আনভীর আর তার বাড়ি থেকে কিছু মানুষ আসে। এই সময় আনভীর কে একদম আশা করিনি রাশি।
– হেই বিউটিফুল! হোয়াটস আপ।
– আনভীরের কথায় রাশি ভ্রু কুচকে চোখ মুখ জোড়ো করে বলে আসছে সাদা বিলাই। শা’লা কচ্ছপ’টারে ইচ্ছে করছে উস্টা দিয়া উগান্ডা পাঠায়।
– রাশির কথায় সামিরা আর রাই ফিক করে হেসে দেয়।
– জ্বি ভালো। ছোট করে জবাব দেয় রাশি।
– ইউর লুকস সো বিউটিফুল।
– তাই নাকি জিজু। আপনার পছন্দ হয়েছে ব্যঙ্গ করে বলে সামিরা।
– হু আর ইউ? সামিরার দিকে তাকিয়ে বলে আনভীর।
– একি জিজু৷ আপনার একমাত্র থুক্কু দুইমাত্র শালিকা আমি আর আমাকে চিনতে পারছেন না৷ ভেরি ব্যাড আফসোসের সুরে বলে সামিরা। রাই শুধু সামিরার কান্ড দেখছে। রাহাত, সম্রাট দূরে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছে।

–‘ ওহ! সরি সরি৷ আসলে আগে দেখি নাই তো।
– ইটস ওকে। তবে আপনি হঠাৎ এই সময় এখান? বউকে খুব মিস করছিলেন বুঝি। সামিরার কথায় রাশি রাগী লুকে তাকায় ওর দিকে। আর আনভীর ব্লাশিং করতে থাকে।
– ইস জিজু দেখি লজ্জাও পায় ভীষণ। রাই মুচকি হেসে বলে।
– এর মধ্যে রিয়াদ ইসলাম উপস্থিত হয় সেখানে।
– আরে আনভীর বাবা তুমি হঠাৎ। এখানে দাঁড়িয়ে কেনো। ভেতরে চলো?
– নো নো আঙ্কেল আজ আর ভেতরে যাবো না। আসলে মা পাঠালেন রাশিকে এই নেকলেস টা দেওয়ার জন্য। একটা ডায়মন্ডের নেকলেস দেখিয়ে বলে। এটা পাঠাতে ভুলে গিয়েছিলো মা জিনিসপত্রের সাথে।
– এটা তো পরে দিতেও পারতে৷ এত তাড়াহুড়োর কিছু ছিলো না। আচ্ছা এসেছো যখন ভালো করেছো।।খেয়ে তবে যাবে।
– নো নো আঙ্কেল। আজ কোনো ভাবে রিকুয়েষ্ট করবেন না। আমি আসি বলে আনভীর রাশির দিকে একটু ঝুঁকে বলে, বাই! খুব শীগ্রই দেখা হবে আমাদের৷ আর সেদিন তুমি অবশ্যই বধুবেশে থাকবে আমার সামনে। আনভীরের কথায় রাশি চমকে উঠে বড় বড় চোখে তাকায়। সামিরা রাশির হাতে হাত রেখে আশ্বস্ত করে। এরপর আনভীর চলে যায়।

চলবে..