মেঘে ঢাকা আকাশ পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

0
642

#মেঘে_ঢাকা_আকাশ
#পর্ব-১৬(সমাপ্ত)
#আমিনুর রহমান

আমি স্পৃহাকে বললাম।
“এতদিন যখন আপনার প্রয়োজনে এসেছি শেষবেলায় এসেও আপনাকে সাহায্য করব। আমি আপনার মতো না। আর হ্যাঁ টাকার কথা বললেন তো? যতটা ছোট মনের মানুষ ভাবেন আসলে ততটা ছোট মনের মানুষ আমি না। আমার যদি আপনার কাছ থেকে টাকাগুলো ফেরত নেওয়ার ইচ্ছা থাকত তাহলে কখন খরচই করতাম না।”

কথাগুলো বলে আমি আমার রুমে চলে যাই। সারারাত মন খারাপ করে শুয়ে থাকি। কালকে স্পৃহা আমাকে ছেড়ে চলে যাবে এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে। কাল থেকে আবার আমি একা হয়ে যাব। স্পৃহাকে হাসানের কাছে রেখে আমি আমার বাবা মায়ের কাছে চলে যাব। স্পৃহারও কি আমার মতো মন খারাপ? কারণ সেও তো আমার সাথে অনেকদিন ছিল। তাঁর কিছুটা মন খারাপ তো আমি দাবি করতেই পারি?

রাতে ভালো করে ঘুম হয়নি যার কারণে অনেকটা বেলা করে ঘুম ভাঙলো। ঘুম থেকে উঠে দেখলাম স্পৃহা সবকিছু রেডি করে ফেলেছে। বুঝলাম হাসানের কাছে যাওয়ার জন্য ওর খুব তাড়া। আমি স্পৃহার দিকে তাকাতেই জাস্ট স্তব্ধ হয়ে গেলাম। আজকে জীবনে সবচেয়ে সুন্দর করে সেজেছে সে। এর আগে কখনো আমি তাকে এত সুন্দর করে সাজতে দেখিনি। এত সুন্দর করে সাজার কারণ কি হাসান? অথচ আমার জন্য কখনো এভাবে সাজেনি সে। তারপরেও আমি নির্লজ্জের মতো তাকে ভালোবাসতে চেয়েছি। না আর না অনেক হয়েছে। আমি তাকে কখনোও আর নিজের করে নিব না। সে যদি হাসানের কাছ থেকে চলে আসে তবুও আমি তাকে ফিরিয়ে দিব। সে আমার ভিতরটাকে অনেক জ্বালিয়েছে। আমি তো এত জ্বলতে চাইনি,আমি শুধু একটু ভালোবাসতে চেয়েছিলাম কিন্তু সে আমাকে জ্বালিয়েছে।

সকাল দশটার সময় আমি আর স্পৃহা রেলস্টেশনের উদ্দেশ্য রওনা হলাম। হাসান নাকি বারোটার সময় আসবে। স্টেশনটা আমাদের এখান থেকে কিছুটা দূরেই। স্পৃহা একটু আগেই রওনা দিয়েছে। আমি স্পৃহার দিকে তাকাচ্ছি না। ওই চেহারাটা আমাকে ভুলে যেতে হবে,কখনো চাইলেও আমি আর দেখতে পারব না। রাস্তায় অনেক জ্যাম থাকার কারণে আমাদের যেতে অনেক সময় লাগল। বারোটার ওপরে বেজে গেল। আমি হাসানের সাথে দেখা করলাম না। দূর থেকেই স্পৃহাকে রেখে চলে আসলাম। স্পৃহা হাসানকে গিয়ে জড়িয়ে ধরবে এটা আমি সহ্য করতে পারব না। এমন দৃশ্য আমার চোখের জন্য ক্ষতিকর৷ তাই স্পৃহাকে স্টেশনে পৌছে দিয়েই আমি বাসায় চলে আসব বলে ঠিক করি। আমি বাসায় চলে আসলাম। স্পৃহা নামের মানুষটাকে ভুলে সব গোছগাছ করতে শুরু করলাম। বাবা মাকে বলেছিলাম আমার কাজ শেষ হলে তাদের কাছে চলে আসব। সত্যি বলতে ওইদিন না গিয়ে ভুল করেছি কারণ এখানে আমার কোন কাজ ছিল না। দুঃখ পাওয়ার জন্য শুধু শুধু এতদিন এখানে ছিলাম আমি এর বেশি কিছু না।

বিকেল চারটা বাজে। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি,আজও আকাশটা মেঘে ঢাকা। অনেকটা খারাপ লাগছিল। মন হচ্ছিল কিছু একটা আমি হারিয়েছি। তবে সান্ত্বনার বানি এটাই যাকে হারিয়েছি সে কখনো আমার ছিল না। আমি যখন প্রচন্ড মন খারাপ করে ওই মেঘ জমা আকাশের দিকে অনেক অভিমান নিয়ে তাকিয়ে অাছি। ঠিক তখন অনুভব করলাম কেউ একজন পেছন থেকে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে৷ পেছন ঘুরেই সেই চিরপরিচিত মানুষটাকে দেখতে পেলাম। হ্যাঁ স্পৃহা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারলাম না।

স্পৃহা যখন কাঁদতে কাঁদতে বলল।

“আমি তোমার ভালোবাসাটা বুঝতে পারিনি। হাসান ছেলেটা অনেক খারাপ। আমি বাদেও সে অন্য মেয়েকে ভালোবাসে,অন্য কারো সাথে রিলেশন করে। আমি তোমার কাছেই থাকতে চাই। আমার ভুল হয়ে গিয়েছে আমি তোমার বিশুদ্ধ ভালোবাসাটা বুঝতে পারিনি। তুমি একটাবার আমাকে বুঝাতে পারতে,আমাকে জোর করতে পারতে। যাকে ভালোবাসো তাকে চিরতরে আপন করে পাওয়ার জন্য একটু জোর করতে পারো না? আমি আর তোমাকে হারাতে চাই না,ভুল বুঝতে চাই না কষ্ট দিতে চাই না। যতদিন বাঁচব তোমার জন্য শুধু তোমার জন্য তোমার ভালোবাসার মানুষ হয়ে বাঁচব। এতটা ভালোবাসব যার বেশি আর ভালোবাসা যায় না। বল আমাকে ক্ষমা করেছ?”

স্পৃহার কান্নাটা সত্য,তাঁর চোখের পানিটা বিশুদ্ধ। আমার খুব ইচ্ছে করছিল নিজ হাতে তাঁর চোখের পানিটা মুছে দিয়ে তাঁর কপালে একটা চুমু খাই। তাকে বলে দেই আমিও এই দিনটির জন্য অপেক্ষায় ছিলাম কিন্তু আমি তেমন করলাম না। যে মানুষটা আমাকে জ্বালিয়েছে আমিও তাকে জ্বালাতে চাই। আমি তাকে দেখাতে চাই আমিও তাকে ছাড়া বাঁচতে পারব,হয়তো ভাল থাকতে পারব না তবে বাঁচতে পারব। আমি স্পৃহাকে আমার কাছ থেকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেই আর বলি।

“ক্ষমা কি এতই সহজ? আমার তো তোমার ভালোবাসার এখন দরকার নেই। তুমি তোমার বয়ফ্রেন্ডকে অন্য একটা মেয়ের সাথে দেখছো আর তখন তোমার মনে হয়েছে তুমি তাঁর কাছে যাবে না। বাহ স্বার্থপর মেয়ে বাহ। তা কি দেখলে তুমি। মেয়েটা কি দাবি করছে? মেয়েটার বাচ্চা পেটে নাকি ধোঁকা দিয়ছে তোমার গুনধর বয়ফ্রেন্ড?”

স্পৃহা তখন বলল।

“হাসান মেয়েটাকে টাকা দিচ্ছিল সবকিছু ভুলে যাওয়ার জন্য। যাতে করে সে তাঁর জীবন থেকে সরে যায়। সে এটাও বলছিল আমার সাথে বিয়ে হলে টাকা পয়সার কোন অভাব থাকবে না। দরকার হলে সে তাকে আরও টাকা পয়সা দেবে তবুও যেন তাঁর জীবন থেকে সরে যায়। আমার ভাগ্যটা ভালো আমি সব শুনে ফেলি। তখনই আমি ওখান থেকে চলে আসি।”

আমি তখন স্পৃহার দিকে চোখ করে বললাম।

“দেখ তুমি এখানে নিজেকে সেলফিস হিসেবে প্রমাণ করেছো। তোমার বয়ফ্রেন্ডের খারাপ সময়ে তাঁর পাশে থাকা উচিত ছিল কিন্তু তুমি থাকো নি। আমার সাথে থাকতে চাইছো হাসানের খারাপ রুপটা তোমার সামনে প্রকাশ পেয়েছে বলে। না হলে তো আমার কাছে আসতে না। এটাকে ভালোবাসা বলে না,এটাকে নিজের ভালো বলে। তুমি সবসময় নিজের ভালো থাকাটাকেই বড় করে দেখেছ। অন্যের ভালো থাকাটার গুরুত্ব তোমার কাছে কখনো ছিলই না। আমাকে ক্ষমা কর আমি তোমার সাথে থাকতে পারব না। আমি জানি এটা মেনে নিতে আমার অনেক কষ্ট হবে। তবুও আমি মেনে নিব।”

আমার মুখ থেকে সরাসরি এমন না শব্দটা শুনে স্পৃহা হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। আমার খুব কাছে এসে আমার দুই গালে দুইহাত রেখে বলতে থাকে।

“না তুমি এমন করতে পারো না। আমার একটা ভুলের জন্য তুমি আমাকে এত বড় শাস্তি দিতে পারো না। বল তুমি কি চাও আমি তাই করব তবুও তোমাকে আমার চাই। তুমি আমার স্বামী। যাকে ভালোবাসো তাঁর একটা ভুল তুমি ক্ষমা করতে পারবে না? আমি তোমার জন্য সবকিছু করতে রাজী আছি। একটবার বল আমাকে কি করতে হবে? আমি সবকিছুর জন্য প্রস্তুত আছি।”

আমি আমার গাল থেকে স্পৃহার হাত দুটো সরিয়ে দিয়ে বলি।

“অনেক দেরি করে ফেলেছে তুমি। এই কথাগুলো যদি তুমি আর একটা দিন আগে বলতে পুরো পৃথিবী সমতুল্য ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে বরণ করে নিতাম আমি কিন্তু তুমি সেটা করনি। তুমি অনেকটা দেরি করে ফেলেছ। আমাদের মতো ছেলেরা অন্ধকারে জোনাক পোকার মত ঘুরে বেড়ায়। যারা ভালোবেসে ধরে রাখতে পারে তারা ভাগ্যবান, যারা ভালোবাসার পরেও বুঝতে পারে না তারা কপাল পোড়া। যারা হারিয়ে আবার ফিরে পেতে চায় তারা দূর্ভাগা। কারণ আমরা ফিরি না,আমরা মহাকালের অন্তঃপুরে হারিয়ে যাই। অন্ধাকারের মধ্যে আলো ছড়াতে ছড়াতে জোনাক পোকার মতোই একসময় অন্ধকারে বিলিন হয়ে যাই আমরা। তোমাদের মত মেয়েরা আমাদেরকে ধরে রাখার ক্ষমতা রাখো না। আমাদের মতো ছেলেদেরকে তোমার ডিজার্ভ করো না। কারণ আমরা সত্যিই অনেক অনেক ভালো ছেলে যেটা তোমরা কখনো বুঝতে পারো না,পারলেও দেরিতে। আমাকে না পাওয়ার আফসোস নিয়ে তিলে তিলে মরবে তুমি এটাই হবে তোমার জন্য আমার ভালোবাসার শাস্তি। আমি কাল চলে যাব। তুমিও চলে যেও তোমার বাবা মায়ের কাছে। বাবা মাকে জীবনে অনেক ধোঁকা দিয়েছ। তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে দেখে তারা ক্ষমা করে দিবে। তাদের পছন্দেই বিয়ে করে নিও সুখী হবে৷ না হলে এখানে থেকেই নতুন কাউকে খুঁজে নিও ঠিক হাসানের মত।”

কথাগুলো বলার পর স্পৃহার দুচোখ বেয়ে অঝোর ধারায় বর্ষণ হতে থাকে৷ আমি বুঝতে পারি আমার কথাগুলো তাঁর ভিতরটাকে অনেক আঘাত করেছে, সে ভীষণ কষ্ট পেয়েছে। স্পৃহা আর কোন কথা বলতে পারে না কারণ আমি তাঁর সব কথা কেড়ে নিয়েছি।

সকাল হলে আমি আমার নিজের বাসায় চলে যাই। স্পৃহা অনেক অনুরোধ করে থেকে যাওয়ার জন্য কিন্তু আমি থাকি না। সে বুঝুক ভালোবাসার মানুষকে না পেলে কেমন লাগে। চলে আসার আগে আমি বিয়ের কাবিন নামাটা সাথে করে নিয়ে আসি আর বলি।

“তুমি যদি কখনো বিয়ে করতে চাও আমাকে বলবে আমি তোমাকে ডিভোর্স পেপারটা পাঠিয়ে দিব। পবিত্র কাবিননামাটা তোমার মতো মেয়ের কাছে থাকতে পারে না। এটার মূল্য তুমি বুঝবে না।”

যারা স্যাড এন্ডিং পছন্দ করেন তাদের জন্য সমাপ্ত। যারা হ্যাপি এন্ডিং পছন্দ করেন তারা বাকিটুকু পড়বেন।

বাসায় আসার পর ম্পৃহা আমাকে অনেক ফোন দেয় আমি তাঁর ফোন ধরি না। আমি তাকে ছেড়ে বাঁচা শুরু করি। শুধুমাত্র আমার জন্য বাঁচা শুরু করি আমি। আমি জানি স্পৃহা আমার জন্য এখনও কাঁদে। কারণ সেদিন আমি তাঁর চোখে আমার জন্য সত্যি ভালোবাসা দেখেছিলাম। আমি চাই আমাকে না পাওয়ার অাফসোসটা সে সারাজীবন করুক। ছয়মাস পরের কথা।

এই ছয়মাস আমি স্পৃহার সাথে একটিবারও কথা বলিনি,দেখা করিনি। ছয়মাস পর বাবা মাকে সব বলি আমি। একদিন বাবা মা বোন আর আমার বোন জামাইকে নিয়ে স্পৃহাদের বাসায় যাই আমি। বাসাটা চিনতে কষ্ট হলেও ঠিকই চিনে নিলাম। আমাকে বাসায় দেখে স্পৃহার বাবা এগিয়ে আসলেন কারণ তিনি সব জানতেন আমি তাকে সব বলেছি। আমি স্পৃহার কথা জানতে চাইতেই একটা বন্ধ ঘর দেখিয়ে দিল আমাকে। আমি ঘরের দরজা খুলে যখন ভিতরে ঢুকলাম তখন ঘরটাতে নিকষকালো অন্ধকার অনুভব করলাম। আলো জালাতেই দেখতে পেলাম পাগলের মতো কেউ একজন বিছানায় শুয়ে অাছে। আমাকে দেখেই বিছানা থেকে উঠে একটা কথা বলল কে কে?

আমি তাঁর দিকে এগিয়ে গিয়ে তাঁর মুখটা দেখতেই নিজের ভিতরটাতে অনেক খারাপ লাগা কাজ করল। কি ছিল আর কি হয়েছে এই ছয় মাসে। স্পৃহাকে চিনতে অনেক কষ্ট হচ্ছিল আমার। কাঁদতে কাঁদতে চোখের নিচে দাগ পড়ে গিয়েছে। চোখ মুখ ফুলে গিয়েছে। আমি তাঁর খুব কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললাম।

“এখনও কাঁদো আমার জন্য?”

তখন স্পৃহা বলল।

“তুমি তো বলেছিলে কাঁদতে। আমাকে কাঁদাতে খুব ভালো লাগে তোমার তাই না?”

আমি তাঁর চোখের পানিটা মুছে দিয়ে বললাম।

“কখনো না,তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তুমি এখনো বিয়ে করোনি কেন? তুমি কি জানতে তোমার কাছে আসব আমি?”

তখন স্পৃহা বলল।

“হ্যাঁ জানতাম কারণ তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে সুখী হতে পারবে না। সুখী হওয়ার জন্য আমাকে তোমার কোন একদিন হলেও দরকার হবে। তাই আমি অপেক্ষা করেছিলাম এই দমবন্ধ হওয়ার মত অন্ধকার ঘরে। তুমি আমাকে এত ভালোবাসার পরেও কেন হাসান নামক নরপিশাচটার হাতে আমাকে ছেড়ে দিয়েছিলে? আমি যদি সত্যি সত্যি চলে যেতাম তখন কি হত?”

তখন আমি স্পৃহাকে নিজের সর্বোচ্চ কাছে টেনে নিয়ে এসে বলি।

“এমনটা কখনোই হত না। তুমি কি মনে কর আমি তোমাকে হাসান সম্পর্কে সব জানার পরেও তাঁর কাছে চলে যেতে দিব? এমনটা ভাবলে তুমি অনেক বোকা। তুমি কি জানো স্টেশনে যে মেয়েটার সাথে হাসানকে তুমি দেখেছিল সেই মেয়েটাকে তোমার হাসানের কাছে যাওয়ার আগের রাতে আমিই সব বলেছিলাম। কারণ সেই মেয়েটাকে আমি চিনি। তাকে সে হাসান ধোঁকা দিয়েছিল। তোমার সাথে স্টেশনে এজন্যই আমি যাইনি। তুমি যখনি হাসানের কাছে গিয়েছো তাঁর ঠিক কিছু সময় আগেই মেয়েটা হাসানের ওখানে পৌছে গিয়েছে হাসানের অজান্তেই। খোঁজ নিয়ে দেখো হাসান ওই মেয়েটাকেই বিয়ে করেছে। কারণ সে বিয়ে করতে বাঁধ্য ছিল। এক্ষেত্রে তোমার বোন অবনির হাসবেন্ড রাশেদ অনেক সাহায্য করেছে। কারণ সে হাসান আর ওই মেয়ে সম্পর্কে সব জানত। তোমার বাবাকেও আমি ফোন করে বলছিলাম তোমাকে নিয়ে আসতে তাকে বোঝাতে অনেক কষ্ট হয়েছিল তবে বুঝাতে পেরেছিলাম। আমি চেয়েছিলাম তোমাকে একটা শিক্ষা দিতে। জানো তোমার প্রতি আমার অনেক অভিমান। এখন তুমি আমাকে হারানোর ভয়ে সবসময় ভালোবাসবে।”

স্পৃহা আমার কথা শুনে অনেকটা বোকা বনে গেল। সে আস্তে করে বলল।

“এত বড় ধোঁকা আমার সাথে? যাকে এত ভালোবাসো তাকে কষ্ট দিতে পারলে?”

আমি তখন স্পৃহার গালে হাত দিয়ে বললাম।

“কষ্ট দিয়েছি আরও বেশি ভালোবাসা পাওয়ার আশায়। তবে তোমাকে এমন অবস্থায় দেখে অনেক কষ্ট পেয়েছি।”

তখন স্পৃহা বলল।

“কেন? আমি অনেক কেঁদেছি সেজন্যে?”

আমি তখন হেসে বললাম।

“আরে নাহ কি যে বল তুমি এটা কোন কারণ না। আমি ভেবেছিলাম তোমাকে দেখার পর তোমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাব। কিন্তু তুমি এই ছয়মাসে নিজের কোন যত্ন নাও নাই। তোমার ঠোঁটের কি অবস্থা, চড়চড় হয়ে গেছে। চুমু খাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল কিন্তু তুমি তোমার ঠোঁটের একটুও যত্ন নাওনি এটা দেখে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। নিজের যত্ন নাও আর না নাও ঠোঁটের যত্নটা অন্তত নেওয়া উচিত ছিল তোমার।”

তখন স্পৃহা রাগ দেখিয়ে অনেক ভালোবেসে বলল।

“অসভ্য! তুমি এত খারাপ হলে কবে থেকে?”

আমি কিছু বলতে যাব তাঁর আগেই স্পৃহা আমার ঠোঁটটাকে নিজের করে নিল।

আজ আমাদের জন্য নতুন করে বাসর সাজানো হয়েছে। স্পৃহা বাসর ঘরে বউ সেজে বসে আছে। আমি রুমে ঢুকেই দরজটা লাগিয়ে দিয়ে স্পৃহার পাশে গিয়ে বসলাম। বিছানায় কোলবালিশ দেখিয়ে স্পৃহাকে বললাম।

“তোমার থেকে মনে হয় ওটার সাথে বাসর করলেই বেটার হবে। তুমিই একদিন বলেছিলে কোলবালিশের সাথে বাসর করতে।”

আমার এমন কথা শুনে স্পৃহা প্রচন্ড রেগে গেল। সে বিছানার ওপরে থাকা কোলবালিশটা নিয়ে জানালা দিয়ে বাহিরে ফেলে দিল।

আমি তাকে যখন বললাম।

“কি করলে তুমি। ওটা অনেক দাম দিয়ে কিনেছিলাম আমি। বিয়ের আগে ওটাই আমার একমাত্র ভালোবাসার মানুষ ছিল। আর তুমি কিনা ওটা ফেলে দিলে?”

তখন স্পৃহা আমার পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে বলল।

“আমি ছিলাম না তখন তোমার এটার দরকার ছিল। এখন তো আমি আছি তাহলে ওটা দিয়ে কি ঘাস কাটবে তুমি? যতদিন বাঁচবো আমাকেই না হয় কোলবালিশ হিসেবে ব্যবহার করো। দুজন দুজনের কোলবালিশ হয়ে আজীবন বেঁচে থাকব। আর ভুলেও যেন ওটার কথা না শুনি।”

আমি স্পৃহাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি স্পৃহা আমার সামনে দুইটা টিকিট হাতে বসে আছে।

আমি জিজ্ঞেস করতেই স্পৃহা বলল।

“হানিমুনের টিকিট,বাবা আমাদের বিয়ের গিফট হিসেবে দিয়েছে। ”

“আমি বললাম হানিমুনে কোথায় যেতে হবে কক্সবাজার নাসি জাফলং?”

তখন স্পৃহা বলল।
“কক্সবাজারও না জাফলংও না সোজা সুইজারল্যান্ড।”

আমি রাগ করে বলি।

“এত টাকা খরচ না করলেও পারতে। বাংলাদেশেই তো সুন্দর হানিমুন করা যেত।”

তখন স্পৃহা আমার হাতে হাত রেখে বলল।

“আমার বাবা এত এত টাকা পয়সা দিয়ে কি করবে বল? ওসব তো আমারই। আর আমি তোমার। টাকাগুলোও তোমার। আমার সবকিছুই তো তোমার।”

আমি কিছু বলি না শুধু স্পৃহার হাত শক্ত করে চেপে ধরে এগিয়ে গিয়ে বলি।

“এত ভালোবাসা কই রাখব আমি?”

তখন স্পৃহা বলে
“কোথাও রাখতে হবে না৷ আমাকে ফেরত দিও।”

সমাপ্ত।