#রাখিব_তোমায়_যতনে
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ১৪
সোফায় বসে আছে নীবদ্ধ আর জয়।আর তাদের মুখোমুখি হয়ে বসে আছে জুনায়িদ শেখ।জুনায়িদ শেখ’কে নীবদ্ধ ভেবেছিলো বয়স্ক একজন পুলিশ অফিসার হবে।যেহেতু তার বাবার সাথে কাজ করেছিলো সে।কিন্তু নীবদ্ধ তাকে দেখতেই তার ভাবনা সম্পূর্ণ মিথ্যে হয়ে যায়।জুনায়িদ শেখ নিত্যান্তই অতোটা বয়সের হবে না।ব্য়স নীবদ্ধ আন্তাজ করলো হয়তো চল্লিশের মতো হবে।। জুনায়িদ শেখ বেশ শান্তভাবেই বলে,
-‘ কিছু নিচ্ছেন না কেন আপনারা?’
নীবদ্ধ বলল,
-‘ ধন্যবাদ অফিসার।আমি চা খেয়েছি এতেই হবে।’
-‘ হুম! তা এবার বলুন আপনারা আমাকে খোঁজ করতে করতে যে এতো কষ্ট করে ওতোদূর আসলেন তা জানতে পারি?ফারুক স্যারের ছেলে যে আমায় এইভাবে খুঁজে বের করবে ভাবিনি।যেখানে স্যার নিজেই আমার ঠিকানা জানে কিনা কে জানে?আর আমাকে মনে রেখেছে কিনা? ‘
-‘ বাবা আপনাকে ভুলে নি অফিসার।একটুও না।ইনফেক্ট বাবা নিজেই আমাকে আপনার নাম বলেছে।তাই তো আমি আপনাকে খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছি।’
-‘ যাক শুনে খুশি হলাম।তা এইবার আসল কারন টা বলুন?’
নীবদ্ধ লম্বা দম নিলো।তারপর দারাজ কন্ঠে বলতে লাগল,
-‘ আপনি একটা কেস নিয়ে তদন্ত করেছিলেন মনে আছে?’
-‘ আমি তো কতো কেস নিয়েই তদন্ত করি মিঃ এহসান। এখন আপনি কোনটার কথা বলছেন আমি কিভাবে বলবো?’
নীবদ্ধ তার এমন কথা শুনে বিরক্ত হয়ে বলে,
-‘ আমাকে কথাটা শেষ তো করতে দিবেন?’
-‘ ওকে কান্টিনিউ!’
-‘ যেই কেসটা হলো ২০১৭ সালের।বাবা নিজেই আপনাকে কেসটা হ্যান্ডেল করতে দিয়েছিলো।শিশু আর মেয়ে পাচাঁর কেস।’
নীবদ্ধ’র কথায় একটু নড়েচড়ে বসলো জুনায়িদ শেখ।নীবদ্ধ বলছে,
-‘ আপনারা কেসটা সলভ করেছিলেন নিউজ জানালেও সেটা যে পুরোপুরি সত্য ছিলো বাবা বলেছে।আপনাদের সেখান থেকে যে পাঁচজন পালিয়ে গিয়েছিলো তাও বাবা বলেছে।’
জুনায়িদ শেখ ভ্রু-কুচকে নীবদ্ধ’কে দেখছে।এইটুকু ছেলে আবার সেই পুরনো আমলের কেস নিয়ে আবারও ঘাটাঘাটি করছে কেন সেটাই উনার মাথায় আসছে না।তিনি বলেন,
-‘ এতো বছর আগের কেস নিয়ে আপনি এতোদূর এসেছেন আলোচনা করতে?’
নীবদ্ধ গম্ভীর গলায় বলে,
-‘ আলোচনাও করতে এসেছি তবে আরো কারন আছে!’
-‘ কি কারন?’
-‘ ঢাকা আমাদের এলাকা থেকে একে একে অনেকজন শিশু গায়েব হয়ে গিয়েছে।আমার ছোট ভাইয়ের ফ্রেন্ডকে ওরই চোখের সামনে থেকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।আমি পুরো বিষয়টা ঘাটাঘাটি করলাম।এবং আমার সন্দেহ যে পাঁচজন পালিয়ে গিয়েছিলো তারা আবার ফিরে এসেছে।’
চমকে উঠলো জুনায়িদ শেখ নীবদ্ধ’র কথায়।অবাক হয়ে বলে,
-‘ হোয়াট এসব আপনি কি বলছেন? এতো বছর পর তারা আবার ফিরে কেন আসবে?’
নীবদ্ধ গাম্ভীর্যের সাথে বলে,
-‘ কারন তারা আবারও শিশু আর মেয়ে পাচার করার ব্যবসা শুরু করেছে নতুনভাবে।আর সাথে ড্রা*গস স্মা*গলিং এসবও শুরু করে দিয়েছে।তাদের গ্যাংটা এইবার বিশাল বড়। তারা তাদের লোকদের স্টুডেন্ট সাজিয়ে ভার্সিটিতে পাঠায়।যাতে তারা ড্রা*গস আর বিভিন্ন নে*শাজাতীয় দ্রব্য খুব সহজে ভার্সিটি স্টুডেন্টদের কাছে বিক্রি করতে পারে।আমি এই বিষয়ে তদন্ত করার জন্যে একটা ভার্সিটিতে আমার লোকদের পাঠিয়েছিলাম।এর ফলে ওরা আমার একজন লোককে খুব নির্মমভাবে হ*ত্যা করে।’
জুনায়িদ শেখকে বেশ চিন্তিত দেখালো।তিনি বলেন,
-‘ তোমার আন্দাজ যদি সঠিক হয় তাহলে মামলা খুবই জটিল।কারন আমার আন্ডারে যখন কেসটা ছিলো তখনও তারা খুব পাওয়ারফুল ছিলো।আর তাহলে আমার মন বলছে এবার ওরা তাদের খুটি আরো মজবুত করেই এসেছে।বেশ কঠিন পরিস্থিতি হবে।’
-‘ এইজন্যেই বলছিলাম আমার আপনার সাহায্যের প্রয়োজন!’
-‘ আমি কিভাবে সাহায্য করবো আপনাকে?আমি চট্টগ্রাম থানার পুলিশ এখন।এখান থেকে আর আমি ঢাকার কেস নিয়ে তদন্ত করতে পারবো না? এটার পার্মিশন আমার নেই। ‘
নীবদ্ধ কিছু একটা ভাবলো।অতঃপর বেশ ঠান্ডাভাবে বলে,
-‘ যদি আপনি ঢাকা ট্রান্সফার হয়ে যান।তবে কি পারবেন এই কেসটা নিজ দায়িত্বে নিতে?’
নীবদ্ধ’র প্রতিটি কথায় ক্ষনে ক্ষনে চমকাচ্ছে জুনায়িদ শেখ।আশ্চর্য হয়ে বলে,
-‘ কি বলছেন আপনি? আমি পাঁচ বছর ধরে এতো চেষ্টা করে যেটা পারলাম না।আর আপনি সেটা করে দিবেন।আপনি তো এখনো এমপিও হোননি।তাহলে?’
বাঁকা হাসলো নীবদ্ধ।বলে,
-‘ আমি করতে পারলেই তো হলো তাই নাহ? আপনি আমার কথা রাখবেন কি না সেটা বলেন।বাকিটা আমি বুঝে নিবো।’
জুনায়িদ শেখ নীবদ্ধ’র কথা শুনে বলে,
-‘ হ্যা অবশ্যই করবো।আপনি শুধু আমার ঢাকা ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করুন।’
-‘ তবে তাই কথা রইলো?আজ তাহলে আসি? ঢাকা ব্যাক করত হবে আমাদের আবার।’
-‘ সে কি? এসেছেন কিছু খেলেনও তা নাহ।আজ থেকে যান না এখানে!’
জুনায়িদ শেখের কথায় নীবদ্ধ মৃদ্যু হেসে বলে,
-‘ আপনি আমার বড় ভাইয়ের মতো।এভাবে বললে কথা ফেলতে পারবো না।কিন্তু আমি চাইলেও থাকতে পারছি না।সামনে ইলেকশন অনেক কাজ বুঝেনই তো?আসি তাহলে?’
জুনায়িদ শেখ নীবদ্ধ’র এমন কথা শুনে আর কথা বাড়ালেন না।নীবদ্ধ আর জয় বিদায় নিলো জুনায়িদ শেখের বাড়ি থেকে।তারপর গাড়িতে উঠে বসলো।এখন সোজা ঢাকা যাবে।
মূলত চট্টগ্রাম এসে পৌছেছে কাল নীবদ্ধ আর জয়।আর আজ এখানে এসে জুনায়িদ শেখের বাড়ির ঠিকানা জোগাড় করতে একটু সময় লেগেছে।জুনায়িদ শেখ লোকটাকে বেশ ভালো মানুষ মনে হয়েছে নীবদ্ধ’র।ওর বাবার পরিচয় দেওয়ার পরেই লোকটা হই হট্টগোল করে ওদের খাতির যত্নে কোন ত্রুটি রাখেননি। চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে রইলো নীবদ্ধ।তা দেখে জয় বলে,
-‘ বস খারাপ লাগছে আপনার?’
নীবদ্ধ সেই অবস্থাতেই জবাব দেয়,
-‘ উহু!’
-‘ তাহলে বস?মন খারাপ?’
নীবদ্ধ চোখ খুলে বাহিরে তাকালো।বাহিরের প্রকৃতির দিকে দৃষ্টি স্থির করে উত্তর দেয়,
-‘ তোমার ভাবির কথা মনে পরছে জয়।দুদিন ধরে তাকে দেখতে পাচ্ছি না আমি।বুকটা জ্বালাপোড়া করছে।’
হাসলো জয়। সে খুব ভালো করেই জানে।তার বস শুদ্ধতাকে ঠিক কতোটা ভালোবাসে।আলতো হেসে জয় বলে,
-‘ টেনশন নেই বস।ঢাকা ফিরেই তার সাথে দেখা করে নিবেন।’
নীবদ্ধ কিছুই বললো না।মূলত তার কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না।পকেট হতে ফোনটা বের করলো নীবদ্ধ।স্ক্রিনে শুদ্ধতার ছবি দেওয়া।ওদের বাগদানের ছবি এটা।শুদ্ধতার মুখশ্রীটা রাগে লাল হয়ে আছে।মূলত সে নীবদ্ধকে বিয়ে করবে না।সেখানে বাগদান কেন করবে? ঠিক এই কারনেই সে রাগে লাল টমেটো হয়ে আছে।হাসলো নীবদ্ধ।মেয়েটার এই রাগি চেহারা দেখেই তো প্রেমে পরেছিলো নীবদ্ধ।রাগে রণচন্ডী হয়ে ভার্সিটিতে এক ছেলেকে থা*প্পড় দিচ্ছিলো আর শাষাচ্ছিলো।সূর্যের প্রখর রোদের কারনে মুখটাতে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছিলো।লাল থ্রী-পিচ পরিহিতা শুদ্ধতাকে যেন আগ্নিরাজ্যের রানি লাগছিলো।রূপের যেমন তেজ তেমন রাগেরও তেজ ষোলো-আনা। নীবদ্ধ মুগ্ধ চোখে শুধু অনবরত শুদ্ধতাকেই দেখছিলো পুরোটা সময়।মোবাইলটা বুকে জড়িয়ে নিলো নীবদ্ধ।কবে যে মেয়েটাকে এইভাবে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারবে নীবদ্ধ।শুধু সঠিক সময়ের প্রহর গুনছে নীবদ্ধ।নীবদ্ধ যখন নিজের ভাবনায় ব্যস্ত ছিলো।তখন হঠাৎ জয়ের চিৎকারে চমকে উঠে নীবদ্ধ।জয় বলছে,
-‘ বস! পিছের থেকে একটা ট্রাক আমাদের গাড়িকে ধাওয়া করছে বস।’
জয়ের কথায় পিছনে ফিরে তাকালো নীবদ্ধ।ঠিক তাই একটা ধেয়ে আসছে ওদের গাড়ির দিকে।ঠোঁটে ঠোঁট চেপে নিজেকে স্থির রাখলো নীবদ্ধ।ঠান্ডা গলায় বলে,
-‘ নিজেকে স্থির রাখো জয়।রাস্তা ফাঁকা আছে গাড়ির স্পিড বাড়াও যতোটুকু পারো।’
জয় নীবদ্ধ’র কথামতো গাড়ির স্পীড বাড়িয়ে দিলো।নীবদ্ধ নিজের কোমড়ে গুজে রাখা রিভ*লবারটা বের করে জানালার কাঁচ নামিয়ে পিছনে আসা ট্রাকটার উদ্দেশ্যে গু*লি ছুরলো। গু*লিটা গিয়ে লাগলো গাড়ির বামপাশের প্রথম চাকাটায়।সাথে সাথে ট্রাকটা নিয়ন্ত্রন হারিয়ে রাস্তার কিনারায় গিয়ে থেমে গেলো।কিন্তু তারপরেও থেমে নেই। ট্রাকটার মধ্যে থেকে একটা।লোক দ্রুততার সাথে গু*লি ছুরতে লাগলো নীবদ্ধের উদ্দেশ্যে।একটা গুলি গাড়ির পিছনের কাচ ভেঙে একেবারে মাঝবারাবর দিয়ে গেলো।ভাজ্ঞিস নীবদ্ধ জয়কে ঝুকতে বলে নিজেও ঝুকে গিয়েছিলো।কিন্তু গু*লিটা নীবদ্ধ’র বাহু ঘেসে যায়ায় বেশ আঘাত পায় নীবদ্ধ ওর বাহুতে।চেচিয়ে উঠে জয়।নীবদ্ধ ওকে শান্ত হতে বলে গাড়ি চালানোতে মনোযোগ দিতে বললো। জয় গাড়ি মাথা উঠিয়ে যেই না গাড়ি ড্রাইভে মনোযোগ দিলো ঠিক তখন সামনে দিয়ে একটা ট্রাক এসে নীবদ্ধ’র গাড়ি সামনে দিক থেকে ধাক্কা মারে।প্রচন্ড ধাক্কা নীবদ্ধ’দের গাড়ি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে রাস্তার পাশের একটা গাছের সাথে সজোড়ে বাড়ি খায়।চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায় গাড়ি।গাড়ির মধ্যে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।শুধু ধোয়া আর ধোয়া।
#চলবে______________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।