লাভ গেম পর্ব-২৪+২৫

0
661

#লাভ_গেম
#ফাবিহা_নওশীন

২৪.

দুই ঘন্টা যাবৎ হাসপাতালের ওয়েটিং রুমে বসে আছে রুশা। পা ঝিম ধরে গেছে। প্রেগন্যান্সির সময় এক জায়গায় এভাবে বসে থাকা যায়? কিন্তু আদ্রিশ ওকে জোর করে বসিয়ে রেখেছে৷ ওর থেকে কিছুটা দূরে একটা চেয়ারে আদ্রিশ বসে আছে। সেজান রুশার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিশ রুশার প্রেগন্যান্সি কনফার্ম করতে এসেছে। নতুন করে রুশার কোনো নাটকে জড়াতে চায় না। প্রেগ্ন্যাসির রেজাল্ট নিয়েই যাবে। যতক্ষণ রেজাল্ট না আসছে রুশাকেও নড়তে দিবে না। চোখের সামনে রাখবে। ও যাতে আর কোনো গরবর করতে না পারে। রুশার প্রেগ্ন্যাসির রিপোর্ট নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। আদ্রিশের জানা না জানাতে কিছু আসে যায় না। এছাড়া ওকে দেখতে যে কেউ অনুমান করতে পারবে ও প্রেগন্যান্ট। পাঁচ মাসের পেটটা কারো কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা সম্ভব না। রুশা উসখুস করছে। আর কতক্ষণ বসে থাকতে হবে কে জানে। দুই ঘন্টা আগে টেস্ট শেষ হয়েছে। প্রায় চার ঘন্টা ধরে না খেয়ে আছে। পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে। রুশা বাড়িতে থাকলে এতক্ষণে কমপক্ষে চারবার খেয়ে ফেলত। ক্ষুধায় রুশা মোচড়ামুচড়ি করছে। রুশা আদ্রিশের দিকে আড়চোখে তাকাল। ও মোবাইলে ব্যস্ত।

রুশা জড়তা কাটিয়ে বলল,
“সেজান ভাই, আমার ক্ষুধা পেয়েছে।”

আদ্রিশ, রুশার কথা শুনে চোখ তুলে তাকাল। সেজান, আদ্রিশের অর্ডারের অপেক্ষায় চেয়ে আছে।
“চুপচাপ বসে থাকো। কাজ শেষ হোক তারপর যত ইচ্ছে হবে খাবে।”

রুশা মিনমিন করে বলল,
“চুপ করে থাকলে কি পেট চুপ করে থাকবে? আমার বাচ্চাটার নিশ্চয়ই ক্ষুধা পেয়েছে খুব। হয়তো ক্ষুধায় কাঁদছে।”

আদ্রিশ ওর কথা শুনে সেজানকে ইশারা করল। সেজান খাবার আনতে চলে গেল। রুশা বসে বসে হাই তুলছে। হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করল। কিছুক্ষণ পরে সেজান ওর জন্য খাবার নিয়ে এলো। রুশা পানির বোতল খুলে পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে নিল। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে দুহাতে হাঁটু স্পর্শ করল। কয়েক পা এদিক সেদিক হেঁটে আবারও বসে পড়ল। আদ্রিশ আর সেজান ওর কাহিনি দেখছে।
রুশা তারপর খেতে শুরু করল। ক্ষুধার্তের মতো গপগপ করে খাচ্ছে। খাওয়া শেষ করে আবারও হাই তুলল।

রুশা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমি এখানে আর বসে থাকতে পারব না। এভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা যায়? আমি চললাম।”

আদ্রিশ বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল,
“এক পা আগাবে না। এক পা আগালে তোমার পা ভেঙে দেব৷ চুপচাপ বসে থাকো।”

রুশা অগত্যা বসে পড়ল। কপালে বিরক্তি নিয়ে বসে আছে। আদ্রিশ গিয়ে আবারও কথা বলে এসেছে। আর কিছুক্ষণ সময় লাগবে৷ একজন গাইনি ডাক্তার রুশাকে চেকাপ করে প্রেগন্যান্ট বলাতেও আদ্রিশের শান্তি হয়নি। ও প্রমাণ চায়।
রুশা ঘনঘন হাই তুলছে। ওর এখন ঘুম পাচ্ছে। চোখ মেলে রাখতে পারছে না। রাতে ঘুম হয়নি। দুপুর বেলায় বেকার বসে থাকায় আরো ঘুম পাচ্ছে।
রুশা হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করল।

আদ্রিশের বিরক্ত লাগছে। যতই রুশাকে ধমকাচ্ছে, ওর নিজেরও বিরক্ত লাগছে। এভাবে কতক্ষণ বসে থাকা যায়। অস্থির লাগছে রেজাল্ট হাতে পাওয়ার জন্য। সেজান বেচারা বাধ্য হয়ে ওদের সাথে বসে আছে।
আদ্রিশ আবারো মোবাইল বের করল। মোবাইলে কিছুক্ষণ টাইম পাস করে রুশার দিকে তাকাল। রুশা ঘুমিয়ে গেছে। ওর ঘাড় কাত হয়ে আছে। আদ্রিশ রুশার ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে আছে। একদম প্রথম দিনের মতো লাগছে। অবুঝ, সহজ,সরল,নরম একটা মানুষ। যার ভেতরে কোনো প্যাচ নেই। এই মুখটা দেখেই তো আজীবনের জন্য চেয়েছিল। আদ্রিশ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। যদি রুশা পিউ না হতো, যদি রুশা প্রথম দিনের মতো থাকত, যদি ওদের মধ্যে ঘৃণা না থেকে ভালোবাসা থাকত তাহলে আজ দিনটা অন্যরকম হতো। রুশার পেটে যদি ওদের বাচ্চা থাকে তাহলে দুজন মিলে তার কত যত্ন করত, তার পৃথিবীতে আসার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করত। রুশা এতটা হেলে গেছে যে আরেকটু হলে পড়ে যাবে৷ আদ্রিশ একবার চাইছে ওকে সোজা করে দিতে। আবার ইতস্তত করছে। কিন্তু আরেকটু হেলে গেলেই রুশা পড়ে যাবে। পড়ে গেলে খুব ব্যথা পাবে।
আদ্রিশ রুশার ঘাড় ধরে সোজা করে দিতেই রুশা জেগে গেল। আদ্রিশকে দেখে হকচকিয়ে গেল। চোখ ডলে আশেপাশে দেখে পরিবেশ, পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে। তারপর একে একে সব মনে পড়ল।

“এটা তোমার ঘুমানোর জায়গায় নয়। এখুনি পড়ে যেতে।”

রুশা হাই তুলে বলল,
“পড়ে গেলে নিজেই উঠে যেতাম, তোমার হেল্প চাইনি আমি।”
রুশা পাশে রাখা বোতল থেকে পানি খেল। কেমন বমি বমি পাচ্ছে। কিছুক্ষণ স্থির থেকে মুখ চেপে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। বমি করে মাথায়, চোখে মুখে পানি দিল। তারপর ক্লান্ত হয়ে বের হয়ে এলো। মনে মনে ভাবছে হঠাৎ করে বমি এলো কেন। রুশা চেয়ারে গিয়ে বসতেই একজন এসে বলল,
“মেম চেম্বারে ডাকছেন। আপনাদের রিপোর্ট রেডি। রিপোর্ট এনে মেমের সাথে দেখা করুন।”

সেজান রিপোর্ট আনতে চলে গেল। আদ্রিশ রুশাকে ওর সাথে যেতে ইশারা করল। রুশা আদ্রিশকে অনুসরণ করল। চেম্বারে ঢুকে চেয়ারে গিয়ে বসে পড়ল। কিছুক্ষণ পরে সেজান রিপোর্ট নিয়ে হাজির হলো। আদ্রিশের বুক ঢিপঢিপ করছে। রুশা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে আছে।
ওদের বরাবর অপর পাশে বসা ড. আছিয়া চোখে চশমা পরল। আদ্রিশ সেজানের হাত থেকে রিপোর্ট নিয়ে খুলে পড়তে শুরু করল। রেজাল্ট পজিটিভ।
আদ্রিশ মুখে হাসি ফুটিয়ে সেজানকে বলল,
“পজিটিভ।”

রুশা রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে বলল,
“আগেই বলেছিলাম। এই কথাটা জানার জন্য সারাটা দিন আমাকে হাসপাতালে বসিয়ে রাখল। কোনো মানুষ একজন প্রেগন্যান্ট মেয়ের সাথে এমন করতে পারে না। একটা ছোট বাচ্চাও আমাকে দেখলে বলতে পারবে আমি প্রেগন্যান্ট। আর ওরা কি খায় আল্লাহ মালুম।”

ড. অদ্ভুত ভাবে ওদের দেখছে। আদ্রিশ দাঁতে দাঁত চেপে আস্তে করে বলল,
“শাট আপ!”

আদ্রিশ রিপোর্ট ডক্তরকে এগিয়ে দিলেন। তিনি কিছুক্ষণ দেখে বলল,
“পাঁচ মাস চলছে। এখন থেকে আরো কেয়ারফুল থাকতে হবে। একদম স্ট্রেস ফ্রি থাকতে হবে। বাড়তি চিন্তাভাবনা করা যাবে না। নিজের খেয়াল রাখবেন। আপনার কোনো সমস্যা আছে মেডাম? তাহলে আমাকে এখন বলতে পারেন।”

রুশা টেবিলের দিকে ঝুঁকে বলল,
“সমস্যা মানে, অনেক সমস্যা! এই অসভ্য লোকটা আমাকে সারাদিন এখানে বসিয়ে রেখেছে। সারা শরীর ব্যথা করছে। উফফ! কিছু মেডিদিন দিয়ে দিন।”

ডাক্তার ওর কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আদ্রিশের দিকে তাকাল। তারপর মুচকি হেসে বলল,
“এখন একটু এমন করবেই। প্রেগ্ন্যাসির সময় মুড সুইং হয়। সবকিছু উনার হাতে থাকবে না। তাই আপনাকে একটু বুঝে চলতে হবে। উনার মুড বুঝে রিয়েক্ট করবেন।”

আদ্রিশ মাথা নাড়িয়ে জি বললেও ও জানে রুশা ওকে অসভ্য লোক মুড সুইং এর জন্য না ইচ্ছে করেই বলেছে৷ রুশা ডাক্তারের সাথে আর কিছুক্ষণ কথা বলে আগে আগে বের হয়ে গেছে। আদ্রিশ আর সেজান ওর পেছনে।

হাসপাতাল থেকে বের হয়ে রুশা দাঁড়িয়ে আছে। ওর সাথে পার্স নেই। টাকা, মোবাইল কিছু নেই। বাসায় যাবে কি করে। আদ্রিশ ওর সামনে এসে বলল,
“গাড়িতে ওঠ।”

“আপনার কাজ শেষ। আপনি আপনার পথে আর আমি আমার পথে।”

“পথ শেষ না শুরু হয়েছে পিউ চৌধুরী।”
আদ্রিশ তাচ্ছিল্য হেসে বলল।

আদ্রিশের মুখে পিউ নামটা কেমন জানি লাগে। রুশার ভালো লাগে না। রুশা বিস্ময় নিয়ে চেয়ে আছে আর তখনই আদ্রিশ এক প্রকার জোর করে গাড়িতে তুলল।
আদ্রিশ গাড়িতে ওঠে বসে। রুশা নামার জন্য ছটফট করছে। আদ্রিশ ওর হাত চেপে ধরে বলল,
“তুই যা করেছিস তাতে তোকে এতক্ষণে কেটে টুকরো টুকরো করে মাটি চাপা দিয়ে দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু বাচ্চাটার জন্য বেঁচে গেলি। এখন বেশি বাড়াবাড়ি না করে চুপচাপ বস।”

“আমি যাব না তোমার সাথে। গাড়ি থামাতে বলো।”
সেজান গাড়ি চালু দিয়ে দিয়েছে।

“মাত্র পাঁচ মাস। পাঁচ মাস আমার কাছে থাকবে। বাচ্চা আমাকে দিয়ে দেবে তারপর তুমি মুক্ত।”

“বাচ্চা দেব মানে? আমার বাচ্চা আমি তোমাকে কেন দেব? আমার বাচ্চা আমি কাউকে দেব না।”

“তোমার কীসের বাচ্চা? তুমি তো বাচ্চা চাওনি। এখন এত দরদ কেন দেখাচ্ছো?”

“না চাইলে পাঁচ মাস আমার শরীরে স্থান পেত না। তাহলে আমাকে এত লড়াই করতে হতো না। এত কাহিনি করতে হতো না। আমার বাচ্চার দিকে চোখ তুলে তাকালে আমি তোমাকে ছাড়ব না।”

“ওর উপর আমার পূর্ণ অধিকার আছে। তুমি দশ মাসের দায়িত্ব নেও। আমি ওর সারাজীবনের দায়িত্ব নেব। মাত্র দশ মাস। তারপর তুমি তোমার লাইফ অন্য কোথাও সেট করে নিও। যেমন লন্ডন। লন্ডনে চলে যেতে চাইছিলে তো তাই না?”

রুশা থতমত খেয়ে গেল কিন্তু দশ মাসকে তাচ্ছিল্য করায় ওর প্রচন্ড রাগ হলো।
“দশ মাস কি মুখের কথা? দশ মাস দশ দিন কত কষ্ট করতে হয় তা শুধু একজন মা’ই জানে। একটা শরীর অন্য আরেকটা শরীর বয়ে বেড়ায়। বাবারা শুধু তাচ্ছিল্য করতে পারে। আমি পাঁচ মাস পেটে রেখেছি বাকি পাঁচ মাস তোমার পেটে নিয়ে রাখো তাহলে এই চটাং চটাং কথা ভুলে যাবে।”
রুশার রাগের ঠেলায় যা মুখে এসেছে বলে দিল। আদ্রিশ ওর কথা শুনে তাজ্জব বনে গেল। সেজান মুখ চেপে হাসছে।

“বিরক্তিকর!”

রুশা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসল। কি করবে তাই ভাবছে।

আদ্রিশের বাড়ির সামনে গাড়ি থামল। আদ্রিশ নিজে নেমে রুশাকে নামতে বলল। রুশার সারাদিন অনেক ধকল গেছে। শরীর খুব ক্লান্ত। তাই আদ্রিশের সাথে কোনো প্রকার তর্কে যেতে চাইছে না। গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির দিকে তাকাল। কতদিন পরে এই বাড়িতে আবার এসেছে। আদ্রিশ ওর হাত ধরে ঘরে নিয়ে গেল। ঘরে নিয়ে ওর হাত ছেড়ে বলল,
“এখানে চুপ করে থাকবে। এই ঘর থেকে বের হবে না। যদি পালানোর চেষ্টা করো তবে মারব না, দুটো পা কেটে বসিয়ে রাখব। বাচ্চা আমার চাই। জাস্ট পাঁচ মাস তোমাকে এখানে সহ্য করব। আর হ্যা আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই এই বাচ্চার ইস্যু ছাড়া।”

“আমার ভাইয়ের খুনির সাথে সম্পর্ক রাখতে আমিও চাইনা। চাইলে ফিরে আসতাম, চলে যেতাম না।”

আদ্রিশ রুশাকে দেয়ালে চেপে ধরে বলল,
“অকারণে আমি কাউকে মারি না। আমি ভাড়া খাটা খুনি নই। আর না আমার কোনো গ্যাং আছে আর না তোমার ভাইয়ের মতো
রাজনীতি করি। একজন ব্যবসায়ী আমি। মুনাফা অর্জনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করাই আমার কাজ।”

রুশা আদ্রিশকে ধাক্কা মেরে বলল,
“তোমার এসব কথায় আমার মন ভুলবে না।”

“তোমার মন আমি ভুলাতেও চাই না। ওসব তো তোমার কাজ। একবার বোকা বানিয়েছো বলে ভেবো না বারবার পারবে।”

“তোমাকে নিয়ে আমার আর কোনো ইচ্ছাই নেই।”

“গুড! দ্যাটস বেটার ফর ইউ।”
আদ্রিশ ঘর থেকে বের হয়ে গেল। রুশা বিছানায় বসে পড়ল। ওর ভাইয়ের খুনির সাথে থাকতে ইচ্ছে করছে না আর না নতুন করে সম্পর্কের মেরামত করতে চাইছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। আদ্রিশ বাচ্চা নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু করে দিয়েছে। রুশা চিন্তায় পড়ে গেল।

ভোর বেলায় ঘুম ভেঙে নিজেকে একাই বিছানায় আবিষ্কার করল। এর মানে আদ্রিশ আর আসেনি। আদ্রিশ তো বলেই দিয়েছে ওর সাথে সম্পর্ক নেই। এর মানে রুশা এই ঘরে নিজের মতো থাকবে। আদ্রিশ নিজের ঘরে থাকবে।

রুশা ফ্লাট থেকে নিজের সবকিছু আনিয়ে নিয়েছে। মোবাইল, ল্যাপটপ এসব ব্যবহারে আদ্রিশ আপত্তি জানায়নি। তবে সব সময় ওকে নজরে নজরে রাখে। বাড়ির সার্ভেন্ট থেকে শুরু করে গার্ডরা ওকে নজরে রাখে। বারান্দায় গেলেও চেয়ে থাকে। আদ্রিশ ওর ঘর তো দূরের কথা আশেপাশেও আসে না। ওদের তেমন দেখা সাক্ষাত হয় না। রুশা বসার ঘরে সোফায় পা তুলে মুভি দেখছে আর খাচ্ছে। পাশে রাখা মোবাইল বেজে উঠল। রুশা টিভির দিকে চেয়ে হাতরে নেওয়ার আগেই আদ্রিশ ছু মেরে নিয়ে গেল। কল রিসিভ করে কানে দিল। রুশা আতংকিত হয়ে উঠে দাঁড়াল। রকি কল করেছে।

“বাহ,রুশা! ভালো খেল দেখালে। আমার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, বললে ভাইয়ের প্রতিশোধ নিবে, বিয়ে করবে না। প্রতিশোধ নিতে সাহায্য করব বলি যাতে তোমাকে তাড়াতাড়ি পাই। তারপর তুমি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আদ্রিশকে বিয়ে করতে চাইলে
প্রথমে না করলেও পরে তোমার জেদের কাছে হেরে গিয়ে সম্মতি দিলাম। কারণ তোমার উপর আমার বিশ্বাস ছিল। কিন্তু সে বিশ্বাসের মর্যাদা রাখলে না। তুমি কাকে ধোকা দিলে আদ্রিশকে না তোমার ভাই আর আমাকে? এতদিন ধরে নিঃস্বার্থভাবে সহযোগিতা করে এসেছি। এর বিনিময়ে কি পেলাম? আমি আজো বুঝতে পারলাম না। ওকে বাঁচিয়ে দিলে আবার ওর কাছে চলে গেলে? সব ঠিক থাকতে এতদিনে আমাদের বিয়ে হয়ে যেত। এভাবে আমাকে ঠকালে? আমাকেও ব্যবহার করলে আবার আদ্রিশকেও হাসিল করলে। দু’দিকই পেলে। কি কপাল তোমার! আদ্রিশ আর রকি দু’জনই দিওয়ানা তোমার জন্য। তুমি কার জন্য দিওয়ানা? নিজেকে একবার প্রশ্ন করো প্লিজ! আমি এত সহজে তোমাকে ছাড়ছি না। আমার আবেগ অনুভূতি নিয়ে খেলতে দেব না আর। এখন যা হবে সরাসরি।”
আদ্রিশ নিজেই কল কেটে দিল। রকির এসব কথা শুনতে ইচ্ছে করছে না। মাথায় আগুন জ্বলে উঠছে। তারপর রুশার দিকে তাকাল। ওর দৃষ্টিতে রুশার পিলে চমকে গেল।

চলবে….

#লাভ_গেম
#ফাবিহা_নওশীন

২৫.

আদ্রিশ রুশার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে জিজ্ঞেস করল,
“রকির সাথে তোমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল?”

রুশা বুঝতে পারছে না এসব কেন জিজ্ঞেস করছে। রুশা থমথমে মুখে বলল,
“হ্যা, বড় ভাইয়া চেয়েছিল।”

আদ্রিশ তাচ্ছিল্য করে বলল,
“এই জন্যই ওর আমাকে মারার এত তাড়া ছিল।”
রুশা চুপ করে আছে।
আদ্রিশ তারপর রুশার চুল টেনে ধরে বলল,
“তোর তো দ্বিগুণ শাস্তি হওয়া উচিত। একজনকে ঠকিয়ে আরেকজনকে বিয়ে করেছিস। তোকে যে কি করতে ইচ্ছে করছে কি বলব। তোর মতো মেয়েরা নিজের স্বার্থের জন্য অনেক নিচে নামতে পারে। একজন পুরুষ রেখে অন্য পুরুষকে বিয়ে করতে পারে। মিথ্যা ভালোবাসার অভিনয় করতে পারে, শরীর বিলিয়ে কাবু করে রাখতে পারে। ছিহ! তোর স্থান আমি তোকে বুঝিয়ে দিতাম। বেঁচে গেলি শুধু বাচ্চার জন্য।”

রুশা নিজেকে ছাড়িয়ে চারদিকে তাকাল। মাথা জ্বলে যাচ্ছে। আশেপাশের সার্ভেন্টরা চেয়ে আছে। ভয়ে ওরা দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে আড়ালে চলে গেল। আদ্রিশ সেটা বুঝতে পেরে বলল,
“সবাই জানুক তুই কতটা নিচ, কি তোর চরিত্র।”

রুশা রেগে গিয়ে বলল,
“কি চরিত্র আমার হ্যা? রকি শান ভাইয়ার বন্ধু। বড় ভাইয়া ওকে আমার জন্য পছন্দ করেছিল। বলেছিল দেশে ফেরার পর যেন রকির সাথে মিট করি। যদি ওকে আমার ভালো লাগে তবেই কথা আগাবে। আমার কথাই ফাইনাল কথা হবে। কিন্তু দেশে ফেরার পর পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল। ওর সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করার সময় কিংবা প্রয়োজন কোনটাই ছিল না। ও নিজে থেকে এসেছিল। তখন আমি আমার পরিস্থিতি জানিয়েছি। বিয়ে আমার দ্বারা সম্ভব না তাও জানিয়েছি। কিন্তু ও বন্ধুদের হাত বাড়িয়ে দেয়। আমাকে সাহায্য করবে জানায়। জাস্ট এটুকুই।”

আদ্রিশের কেন জানি খুব খারাপ লাগছে। রুশাকে ঘৃণা করার পরেও ওর কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে।
“একজন ছেলে আর মেয়ে কখনো বন্ধু হতে পারে না।”

“সেটা তোমার মতো নিচ মনের মানুষের চিন্তাভাবনা।”

“আমি তো নিচই। উঁচু মানের হচ্ছে রকি। বাচ্চাটা হয়ে যাক তারপর তুই চলে যাস ওই রকির সাথে।”

“আমি চলে যাব তবে একা না বাচ্চা নিয়েই যাব। একটা খুনিকে আমার বাচ্চার দায়িত্ব দেব না। আমি প্রতারক হতে পারি কিন্তু খুনি নয়। নিজেকে বাঁচাতে, পরিস্থিতির কারণে কাউকে আঘাত করেছি, গুরুতর আঘাত করেছি কিন্তু মারি নি। তোমার মতো পশু নই আমি। শখের বশে, আনন্দ পেতে কাউকে মারি না।”

“হ্যা আমি খুনি। আমি খুন করি। বেশ করেছি। যারা আমার ক্ষতি করবে, আমার জিনিসে লোভ করবে, আমাকে ধোঁকা দিবে আমি তাদেরকে শাস্তি দিয়েই যাব। আর ওদের শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদন্ড।”

রুশা ছলছল নয়নে প্রশ্ন করল,
“আমার ভাই কি করেছিল?”

আদ্রিশ এক প্রকার বিরক্তি নিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
“আর কতবার বলব আমি ওদের মারিনি। আমি সাজ্জাদ চৌধুরীকে কেন মারব? উনি আমার বিজনেস পার্টনার ছিল। খুবই ভালো মনের মানুষ ছিল। সততার সঙ্গে ব্যবসায় করেছেন। উনার সাথে আমার কি নিয়ে ঝামেলা হবে? কার এক্সিডেন্টে মারা গেছেন। আমি কেন উনাকে কেউ মারতে পারে না। আমি এত মানুষ মেরেছি কখনো অস্বীকার করিনি তবে কেন উনার ব্যাপার নিয়ে মিথ্যা বলব? আমার কিসের ভয়? আমি তোমাকে, তোমার ভাই, তোমার প্রেমিক কাউকে ভয় পাই না। আর এমনও নয় তোমার সাথে আমার সুসম্পর্ক যে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার ভয়ে মিথ্যা বলব। তাহলে কেন? এতকিছুর পরেও যদি মনে হয় আমি মেরেছি তবে তাই ভেবে খুশি থাকো। বিরক্তিকর!”

আদ্রিশ ওর মোবাইল এক প্রকার ছুড়ে টেবিলের উপরে রেখে চলে গেল।

রুশা কিছুই বুঝতে পারছে না। আদ্রিশ কি সত্যি বলছে না মিথ্যা। আদ্রিশ পুরো ব্যবসায় নিজের আয়ত্তে নেওয়ার জন্য ওর ভাইকে সরিয়েছে। সেদিন তো একজনকে মাত্র পঞ্চাশ লক্ষ টাকার জন্য মেরে ফেলতে বলল। মাত্র পঞ্চাশ লক্ষ টাকার জন্য যে এত নিচে নামতে পারে সে সব পারে। কোটি কোটি টাকার ব্যবসায়ের একচ্ছত্র আধিপত্যের জন্য সব পারে৷

অপরদিকে রকি পাগল হয়ে যাচ্ছে রুশা আদ্রিশের কাছে আছে জানার পর। ওর সহ্য হচ্ছে না। অপরদিকে রুশা চিন্তায় পড়ে গেছে বাচ্চাকে নিয়ে। কোনো ভাবে যদি লন্ডন চলে যেতে পারত তাহলে চিন্তা থাকত না। আদ্রিশের আচরণ বলছে বাচ্চা জন্মের পর আদ্রিশ বাচ্চা রেখে ওকে মেরেই দেবে। ওর প্রতি আদ্রিশের অনেক ক্ষোভ, রাগ যা আদ্রিশ বাচ্চার কথা ভেবে দমিয়ে রেখেছে।এসব চিন্তাভাবনার মধ্যেই দিনগুলো কেটে যাচ্ছে। রকি অনেকবার কল করেছে রুশাকে। কিন্তু রুশা রিসিভ করে নি।

.

রুশার নাম্বারে একদিন একটা কল আসে। কল কেটে ও চিন্তিত হয়ে বসে থাকে। তারপর আদ্রিশকে কল করে। আদ্রিশ কল রিসিভ করছে না। রুশা অস্থিরতা নিয়ে বারবার ওর নাম্বারে কল করে। কিন্তু ও কল রিসিভ করছে না। রুশা তারপর সেজানের নাম্বারে কল করে। সেজান একবার কল বাজতেই কল রিসিভ করে।
“সেজান ভাই! আদ্রিশ কোথায়?”

“ভাই তো বাড়িতে যাচ্ছেন।”

”একা?”

“হ্যা। কেন? কোনো সমস্যা?”

“হ্যা, শান ভাইয়া আমার উপর রেগে আছেন। এখন তিনিই প্রতিশোধ নিতে চাইছেন। আদ্রিশকে বাঁচান প্লিজ। ওর পিছু নিয়েছে ওরা।”

সেজানের বুক ধুক করে উঠল। তাড়াতাড়ি কল কেটে দিল। রুশা হ্যালো হ্যালো করছে। কি করবে বুঝতে না পেরে রুশা পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল। সাথে রিভলবার নিয়ে গেল। প্রয়োজনে ব্যবহার করবে। রুশা একটা ট্যাক্সি নিয়ে অফিসের রাস্তার দিকে যায়। কারণ ও জানে কোথায় এটাক করার পরিকল্পনা করেছে। রুশা সে জায়গায় পৌছে গেলেও কিছুই পেল না। দিনের বেলায় যেমন এই জায়গাটা শান্ত থাকে ঠিক তেমনই শান্ত।

আদ্রিশ অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করছে একটা গাড়ি ওদের ফলো করছে। আদ্রিশ গাড়ি থামাতে বলল ড্রাইভারকে। গাড়ি থামিয়ে চুপ করে রইল। ওই গাড়িটাও থেমে গেল। আদ্রিশের বুঝতে বাকি নেই ওরা আসলেই ওকে ফলো করছে। কিছু একটা হতে চলেছে। আদ্রিশ রিভলবার প্রস্তুত করে নিল। সাথে দুজন বডিগার্ড। ওরাও প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছে। গাড়িটা অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিশ বুঝতে পারছে না ওরা কি চাইছে। পকেট থেকে মোবাইল বের করতেই সেজানের নাম্বার আর রুশার নাম্বার থেকে অনেকগুলো মিসড কল দেখতে পেল। দুইজনের এক সাথে কিসের ইমারজেন্সি? সেজানের সাথে কথা বলেই বের হয়েছে আর রুশা ওকে কল কেন দেবে? ওর সাথে রুশার কোনো প্রয়োজন থাকতে পারে না। আদ্রিশ প্রথমে সেজানকে কল ব্যাক করল।
সেজান কল রিসিভ করে অস্থিরতা নিয়ে বলল,
“ভাই, আপনি কোথায়? কল রিসিভ করছিলেন না কেন? ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি।”

“সেজান, আর ইউ ওকে?”

“ভাবি কল করেছিল। আপনি উনার কল রিসিভ করছিলেন না তাই আমাকে কল করেছিল।”

আদ্রিশের পিলে চমকে উঠে। ওর মনে হচ্ছে রুশার কোনো বিপদ হয়েছে। বিচলিত কন্ঠে বলল,
“রুশা! ওর কিছু হয়েছে?”

“ভাবি ঠিক আছেন। উনি বললেন যে শান আজ কিছু করতে চলেছে।”

আদ্রিশ পেছনে থেমে থাকা গাড়িটা দেখে বলল,
“হয়তো! কিন্তু ও বলে দিলো কেন?”

“হয়তো সাবধান করতে।”

“সেজান, এটাও রুশার একটা চাল। কিন্তু কি চাল চালছে বুঝতে পারছি না।”
সেজান বুঝতে পারছে না রুশা সত্যিই ওদের হেল্প করছে না আদ্রিশের কথামতো এটা কোনো চাল।
“ভাই আপনি যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন। আমি আসছি। আমাদের লোকদের খবর দিচ্ছি।”

“আমি ওদের অপেক্ষায় আছি। কিন্তু ওরা গাড়িতে বসে আছে। একবার আসুক পিষে মেরে ফেলব। অনেক নাটক করছে ভাইবোন মিলে। এক বিন্দু ছাড় দেব না এইবার।”

“ভাই, মাথা ঠান্ডা রাখুন।”
আদ্রিশের শরীর রাগে রি রি করছে। গাড়ির দরজা খুলে বের হয়ে গেল। রুশার ভাইয়ের লোক আর রুশা জানিয়েছে শুনে ওর রাগটা বেড়ে গেল। গাড়ি থেকে বের হয়ে ওদের গাড়ির দিকে যাচ্ছে। ওর গার্ড দু’জন ওর পেছনে। সেজান গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিল। আদ্রিশ রাগের মাথায় ভুল স্টেপ নিবে সেটা বুঝতে পারছে।
আদ্রিশ ওদের গাড়ির সামনে যেতেই হুড়মুড়িয়ে কতগুলো লোক বের হয়ে গেল। আদ্রিশের গার্ডদের উপর প্রথম হামলা হলো। আদ্রিশ রিভলবার বের করে হাতে পায়ে গুলি করেছে তিনজনের। ওরা এখন আদ্রিশের দিকে গুলি ছুড়ছে। আদ্রিশ ওদের আহত করার জন্য হাতে পায়ে গুলি করছে। ওর রিভলবারের ছয়টা বুলেট শেষ। সেজানের গাড়ি চলে এসেছে। আদ্রিশের দিকে একটা গুলি আসতেই আদ্রিশ সরে গেল। তারপর লোকটা আবার গুলি ছুড়বে সে সময় অন্যদিক থেকে একটা গুলি এসে সেই লোকটার হাতে লাগল। হাত থেকে রিভলবার পড়ে গেল। আদ্রিশ পেছনে ঘুরল, আশেপাশে দেখল। কাউকে দেখতে পাচ্ছে না। সেজান এসে রিভলবার ছুড়ে দিল আদ্রিশকে। আদ্রিশ একে একে ছয়টা বুলেট ব্যবহার করে ফেলল ছয়জনের উপর। ময়দান পুরো ফাঁকা। আদ্রিশ অন্ধকারেই এদিক সেদিক কাউকে খুঁজছে। কিন্তু কাউকে পেল না। কেউ একজন আড়ালে ছিল কিন্তু সে কে?

রুশা বসার ঘরে বসে আছে। আদ্রিশ তখন বাড়িতে ঢুকল। ওর হাতে কোর্ট। চুল এলোমেলো। কলার থেকে টাই খুলতে খুলতে আসছে। গভীর ভাবে কিছু ভাবছে। রুশা উঠে দাঁড়াল। আদ্রিশ রুশাকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল।
কয়েক পলক ফেলে অন্তত শীতল কণ্ঠে প্রশ্ন করল,
“কে ছিল সে?”

রুশা না বুঝতে পেরে বলল,
“কে?”

“যে আমাকে বাঁচাল।”
আদ্রিশ রুশার চোখের দিকে চেয়ে আছে। এই কয়েক দিনে এই দৃষ্টিটা চিনে নিয়েছে।
রুশার দিকে এগিয়ে গেলে রুশা কয়েক পা পিছিয়ে বলল,
“আমি জানি না কে ছিল।”

আদ্রিশ আগাতে আগাতে রুশার হাত চেপে ধরে বলল,
“আমি জানি। আমি জানি সে কে ছিল।”

রুশা ঘাবড়ে যাওয়া মুখে আদ্রিশের দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
আদ্রিশ চোখ মুখ শক্ত করে বলল,
“তুমি ছিলে। সে তুমি ছিলে। বের হয়েছিলে কেন? তোমাকে এতবার বলার পরেও কেন বের হয়েছো? আমাকে বাঁচিয়ে রাখার প্রবল ইচ্ছের কারণটা আমি জানতে চাই। নাকি আবার কোনো নাটক করছো? একবার বোকা বানিয়েছো তাই বলে বারবার নয়। এর পরে যদি আবারও বের হওয়ার চেষ্টা করো ভালো হবে না। মাইন্ড ইট।”

“আমি বের হতে চাইলে আমাকে কেউ আঁটকে রাখতে পারবে না। কারো শক্তি নেই আমাকে আঁটকে রাখার।”
আদ্রিশও জানে ও চাইলে কেউ ওকে আঁটকে রাখতে পারবে না।
“রুশা, তোমার এসব কাজের জন্য যদি বাচ্চার কোনো ক্ষতি..

” বাচ্চার ক্ষতি হবে এমন কিছু আমি ভুলেও করব না। বাচ্চাটা যাতে অনাথ না হয় তাই এই চেষ্টা।”
রুশা আদ্রিশের দিকে একবার চেয়ে নিজের ঘরে চলে গেল।

কিছুদিন পর। রুশা বাগানে হাঁটছিল। ওর পেট আগে থেকে বেড়েছে। শরীরটা ভারী হয়ে গেছে। শুয়ে বসে থাকতে পারে না। হাঁটতে হাঁটতে বিকেলের পরিবেশ উপভোগ করছে। হঠাৎ দেয়াল টপকে রকি বাড়িতে ঢুকে যায়। ওকে দেখে রুশার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়। এদিক ওদিক চেয়ে ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,
“তুমি এখানে এসেছো কেন? আদ্রিশ জানলে আমার সাথে সাথে তুমিও বিপদে পড়বে। চলে যাও।”

“তুমি আমাকে এভাবে আসতে বাধ্য করেছো। আমার কল রিসিভ করছিলে না তাই চলে এলাম জবাব নিতে।”

“কিসের জবাব?”

“আমাকে ব্যবহার কেন করলে? তুমি না বলেছিলে আদ্রিশকে ভালোবাসো না? মিথ্যে কেন বলেছিলে?”

রুশা ওর প্রশ্নে থমকে গেল। বিমূঢ় কন্ঠে বলল,
“আমি ওকে ভালোবাসি না।”

রকি ওর হাত ধরে বলল,
“চলো আমার সঙ্গে। তুমি এখানে অযথা কেন থাকবে?”

রুশা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“চলে যাও। তোমার সাথে আমি যাব না। এখানেই থাকব আমি।”

“কেন? কেন থাকবে তুমি এখানে?”

“আমাদের বাচ্চার জন্য।”

“বাচ্চার জন্য তো? আমি নেব ওর দায়িত্ব। ওর বাবা হব। তুমি শুরু আমার হয়ে যাও। তোমার বাচ্চার আমি কোনো অযত্ন করব না। নিজের সন্তানের পরিচয়ে লালন-পালন করব।”

রুশা কটাক্ষ করে বলল,
“ওর বাবা এখনো বেঁচে আছে ওর দায়িত্ব নেবার। রকি আমার আশা ছেড়ে দেও। আমাকে আমার মতো থাকতে দেও। তুমি তোমার মতো জীবন গুছিয়ে নেও।”

রকি চেঁচিয়ে বলল,
“বিয়ে হয়েছে বলে? মানি না আমি এসব…। বিয়ে হয়েছে তো কী হয়েছে? তুমি শুধু আমার। তুমি এখন আমার সাথে এখান থেকে চলে যাবে। চলো।”
রকি ওর হাত ধরতে গিয়ে থেমে গেল। ওর দৃষ্টি রুশার পেছনের দিকে। রুশা রকির দিকে চেয়ে ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে পেছনে ঘুরে চমকে গেল। আদ্রিশ হিংস্র দৃষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর চোখের দিকে চেয়ে রুশা ঝলসে যাচ্ছে।

চলবে……