#শহর_জুড়ে_আলোর_মেলা
কলমে:লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:১৯
আলোর চিৎকার শুনে বাকিরা দৌঁড়ে আসলো। লিজা বাড়ির সকলের ভীষণ প্রিয়। অনেক আদরের। হয়তো অতিরিক্ত আদরে আদরে মেয়েটার বর্তমান অবস্থা। আলোর শরীর থরথর করে কাঁপছে। ঘরের দরজা খুঁলতে বিশেষ অসুবিধা হলোনা। লিজাকে নামানো হলো। বেশি সময় হয়নি বিধায় এই যাত্রাতে বাঁচানো গেলো। বাড়িতে ডাক্তার আছে তাদের সাহায্যে লিজা জ্ঞান ফেরার পর মেয়েটা একটা শব্দও বলেনি শুধু চোখের পানি ফেলেছে। সকলে ধরে নিলো লিজার সঙ্গে শ্রাবণ কথা বলছে না এবং ভুল বুঝে এহেন পদক্ষেপ নিয়েছে। শ্রাবণের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলো কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে। ছেলেটা এমনিই। মাঝেমাঝে হারিয়ে যায়। রাহিনকে ফোন করা হলো। বেচারা জানেনা শ্রাবণের খবর। শহরের বাইরে আছে এইটুকু বলতে পেরেছে। এখন ওকে পাওয়া কঠিন। আশা ছেড়ে লিজাকে খুশী রাখতে এটা ওটা বলে সান্ত্বনা দিচ্ছে। আলো কিছুটা অবাক হয়েছে। একবার অষ্টম শ্রেণিতে থাকতে মায়ের উপরে রাগ করে একটা ঘুমের ওষুধ নিয়েছিলো। আম্মা জানতে পেরে ওকে যেই মারটা দিয়েছিল সেটা ভাবলে এখনো ভয়ে বুক কাঁপে। দ্বিতীয়বার ওসব করার সাহস হয়নি ওর। রতন বউ পি*টিয়ে দিব্যি মনের সুখে সিঙ্গেল লাইফ কাঁটাচ্ছে অথচ কারো হেলদোল নেই। এই বাড়িতে ছেলেমেয়েদের অতিরিক্ত ভালোবাসা আর স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। বড় মায়ের সাহসে এরা বিগড়ে গেছে। টাকা পয়সা আর বংশমর্যাদা থাকলেই সন্তানদের স্বভাব চরিত্র ভালো হয়ে যায় না। ইকবাল মাহমুদের ভাইয়েরা যেমন মিশুক পরস্পরের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক উনাদের ছেলেমেয়েগুলো তেমন না। একেক জন একেক রকমের। কেউ ভালো তো কেউ খারাপ। বর্তমান যুগ বড়ই খারাপ। বাচ্চাদের কঠিন হাতে মানুষ করলেও ঘাপলা কিছু থেকে যায়। বাড়িতে যেমন পরিস্থিতি সোনিয়ার বিয়ে নিয়ে চিন্তিত সকলে। ড্রয়িং রুমে ভাইবোনেরা বসে ছিল সোনিয়া বলেই ফেললো,
> আমার বিয়েটা মনে হচ্ছে কুফা। প্রথম থেকে ঝামেলা লেগে আছে।ভাবি নেই মিতু আপু মুখ ভার করে ঘরে বসে থাকে। আজ লিজা কি করলো? আমার বিয়ের মধ্যেই কেনো এমন হচ্ছে ভাই?
সোনিয়ার কথা শুনে অভিক হেসে ফেললো। মাথায় হালকা চ*ড় দিয়ে বললো,
> তোর জন্মদিনে আমার দাদি মা*রা গিয়েছিল। পুরোপুরি কুফা তুই। তোর বিয়ে এবছরে আর হচ্ছে না। তোর বরকে মানা করে বলছি বিয়ে হবে না ভাই। এখন বিয়ের মৌসুম না।
সোনিয়া তেতে উঠলো। বিয়ে হচ্ছে না বললেই হবে নাকি? মুখ ফুলিয়ে বলল,
> তুই চুপ থাক। আমার বিয়ের থেকেও তোর মুখ অধিক কুফা। আমার বিয়ে নিয়ে কোনো মন্তব্য করবি না। এমনিতে টেনশনে আছি। বিয়ের পর তোদের যা ইচ্ছা করিস।
> তুই সত্যি স্বার্থপর। ভাইবোনেরা কতটা ঝামেলায় আছে আর তুই বিয়ের জন্য কান্নাকাটি করছিস। বিয়ে পাগলী একটা।
সোনিয়া আর অভিক আট মাসের ছোটবড়। দুজনের খুনসুটি চোখে লাগার মতো। আলো এখানে বসে থেকেও মনটা লিজা কাছে পড়ে আছে। মেয়েটা এখন ঘুমিয়ে আছে। মন বলছে অন্যকিছু হয়েছে। শ্রাবণ থাকলে হয়তো সমাধান পাওয়া যেতো। আলো কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কক্ষে ফিরে আসার জন্য পা বাড়ালো।সিঁড়ির কাছাকাছি এসে থমকে গেলো। রতন পাশ থেকে বলল,
> রাস্তার মেয়েলোক ঘরে তুলে এনে বাড়ির সম্মান নষ্ট করছে। কার প্ররোচনা থেকে মেয়েটা এরকম কাজটা করছে সেখবর কি আমি রাখিনা? যাদের চরিত্রের ঠিক নেই,সম্মানের ভয় নেই। মুখ দেখলে বমি আসে তাদের দেখতে হচ্ছে।
রতনের মন্তব্য পুরোপুরি কাকে নিয়ে আলোর বোঝা হয়ে গেছে। একজন মানুষ কতটা নিকৃষ্ট হলে এমন বলতে পারে? আলো শান্ত থাকতে পারলোনা। এই বাড়িতে এসে বড়দের কারো মুখেমুখে এখনো পযর্ন্ত তর্ক করেনি কিন্তু আজ ভেতর থেকে উত্তর আসলো,
> রাতবিরাতে বউ পি*টিয়ে বাবার বাড়িতে পাঠালে সম্মান বৃদ্ধি হয় সেতো জানা ছিল না।আরেকজনের কথা নাই বা বললাম। বাড়ির সম্মান এই বাড়ির লোকজন যে কিভাবে বৃদ্ধি করছে আল্লাহ মালুম। আমার চৌদ্দ পুরুষে এমন রেকর্ড নেই। যেই মুখ বমিতো আসবেই। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে এখানে আর আসা হবে না। কি থেকে কি শিখবে।
আলো নিজের মনে কথাগুলো বলতে বলতে উপরে চলে গেলো। রতন হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভাবতে পারেনি আলো ওর কথার উত্তর করবে। ছোট ভাইয়ের বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া করেছে জানলে বড়মা সত্যি থা*প্পড় দিবে। রতন রাগে ফুঁলতে ফুলতে নিচে নেমে আসলো। তারপর রাকার নাম্বারের ফোন করে অকথ্য ভাষায় গা*লিগা*লাজ করে নিজেকে ঠান্ডা করলো। অতিরিক্ত ভাব দেখাচ্ছে। বিয়ের পর রাকা দুই দিনের জন্যও বাবার বাড়িতে গিয়ে থাকেনি। বাবার বাড়িতে থাকলে বাড়ির কাজকর্ম কে করবে? কাজের মহিলা যতই থাকুক রান্নার কাজকর্ম সবটা ও নিজে করে। রাকার ফোন লাউড ছিলো রাসেল সবটা শুনে আর অপেক্ষা করেনি। উকিল ডেকেছে। যদিওবা ভেবেছিলো একটু ভেবে সিদ্ধান্ত নিবে রতনের ভাষা শুনে আর থামতে পারেনি।
*********
অনেকখানি ঝড়ঝঞ্ঝা পেরিয়ে সোনির বিয়েটা শেষমেশ সম্পূর্ণ হলো। মেয়েরা বুঝি এমনিই হয়। বিয়ের আগে শশুর বাড়ির যাওয়া নিয়ে কত স্বপ্ন অথচ বিদাইয়ের বেলা কান্নাকাটি করে ঘর মাথায় তুললো সোনিয়া। তবুও যেনো আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করছে। আলো খুব একটা অনুষ্ঠানে যোগদান করতে পারেনি। অভিক ছেলেটা বেশ চমৎকার কিন্তু ওর সমস্যা হচ্ছে অতিরিক্ত সোস্যাল মিডিয়ায় আসক্ত। বাড়ির প্রতিটা কাজকর্ম আচার অনুষ্ঠানের ভিডিও ওর আইডিতে সোভা পাচ্ছে। সেখানে মানুষের নানারকম কমেন্ট। আলো পুরোপুরি বুঝে নিয়েছে শ্রাবণ কেনো ওকে অভিকের থেকে দূরে থাকতে বলেছিলো। আলো বা শ্রাবণের শ*ত্রুর অভাব নেই। কখন কে সুযোগে থাকে বলা কঠিন। আলো বরং খুশী হয়েছে শ্রাবণের নিষেধ শুনে। তাই সারাদিন ও লিজার কক্ষে অবস্থান করছে। লিজার সঙ্গে মোটামুটি ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে। শেষমেশ আ*ত্ম*হত্যার কারণটা জানার পর ওর মুখে কথা নেই। অবাক হয়ে বলল,
> এরকম একটা ছেলের সঙ্গে তুমি কিভাবে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে? একটা ভুল থেকে আরেটা ভুল করতে বসেছিলে। ছেলেটাকে চিনতে আগে?
লিজা ছলছল চোখে উত্তর দিলো,
> উপরটা দেখে কি ভেতরের খবর জানা যায়? ওকে অনেক বিশ্বাস করেছি। এখনো কষ্ট হচ্ছে মানতে। অথচ দেখো ওই ছেলের জন্য আমি ম*রতে বসেছিলাম। ওকে কতভাবে অনুরোধ করেছি। আমার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানিয়েছি তবুও সেই এক কথা। টাকা না দিলে সত্যি ওগুলো আমার বাড়িতে পাঠাবে সঙ্গে সোস্যাল মিডিয়ায় আপলোড দিবে। কি করবো আমি? ম*রে যেতে ইচ্ছা করছে। কেনো বাঁচালে আমাকে?
লিজা চোখের পানি ফেলছে। আলো ওর হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলল,
> শান্ত থাকো। বেশি উত্তেজনা তোমার জন্য ঠিক না। তুমি ওর ফোন নাম্বার ফেসবুক আইডি আর ছবি দেখাও। ভরসা রাখো ইনশাআল্লাহ সবটা ঠিক করে ফেলবো।
লিজা ভরসা পেলো। আলোর সম্পর্কে ওর কিছুটা হলেও ধারণা আছে। আলো ইরিনাকে নক করে আরাফের ফোন নাম্বার সঙ্গে আইডি টেক্সট করে পাঠিয়ে দিলো। বন্ধুদের মধ্যে ইরিনা বেশ সুন্দরী সঙ্গে সাহসী। ছেলেদের পটাতে উস্তাদ বলা চলে। কাজটার জন্য ও উপযুক্ত চয়েজ। আলো লিজাকে শান্ত থাকতে বলে নিজের কক্ষে এসে দরজা বন্ধ করলো। শ্রাবণের ফোন বন্ধ বিধায় রাহিনকে ফোন করলো। রাহিন বিজি আছে পরে ওকে নক করবে জানালো। আলো স্থির থাকতে পারলোনা। বন্ধুদের সঙ্গে গ্রুপে ভিডিও কল দিলো। সবটা শোনার পর রবিন বলল,
> থানায় বললে হয়তো সমাধান পাওয়া যাবে কিন্তু বিষয়টা পরিবার পযর্ন্ত চলে আসবে। একটা কাজ করা যায়। ছেলেটাকে ডেকে ওর ফোন থেকে সবটা ডিলিট করা যায়। তবে বড্ড রিস্ক হয়ে যাবে।
আলো কিছু একটা ভেবে বললো,
> সিয়াম আগামীকাল সকালে ছেলের বিষয়ে বিস্তারিত জেনে আসবি। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি রুটিন মেপে কি করে কোথায় যায়। কার সঙ্গে থাকে পুরোপুরি জানা চাই। শুনেছি ছেলেদের এশিয়া ব্যাংকের নিচে গাড়ির শোরুম আছে। ওখানে নিয়মিত যাতায়াত করে। বঙ্গবন্ধু রোডের দক্ষিণে বালিকা বিদ্যালয়ের ডান দিকে রকমামি জিনিসের মেলা বসে। ওখানে সিসি ক্যামেরা নেই। ওখানে নিয়মিত কোনো দোকান বসে না। সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত বারোটা অবধি ও বাড়ির বাইরে থাকে। মাঝেমাঝে বন্ধুদের বাড়িতে রাত পার করে। ইরিনা ওকে এখানে ডাকবি।
সিয়াম আলোর কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে বলল,
> কিসের প্লান? তুই কি কি*ড*ন্যাপের পরিকল্পনা করেছিস? পুলিশ কেসে ফেঁসে যাবো বা*ল। এসব ছাড়। ইরিনা নিজের ফোন নাম্বার আর আইডি ব্যবহার করলে নির্ঘাত আগে ধরা পড়বে।
আলো বিরক্ত হলো। ধমক দিয়ে বলল,
> আমার কথা শেষ হয়নি। ইরনা ফেইক আইডি ব্যবহার করবে। নিজের বাসার ওয়াইফাই পযর্ন্ত ব্যবহার করবে না। শোন আরাফকে ওখান থেকে তুলে নিবি। সোজাসুজি ওকে দেশের মাটি চ্যানেলের অফিসের নিচে একটা কক্ষ আছে ওখানে আনবি। সেখানে আমরা থাকবো। বাকীটা সেখানে আলোচনা হবে। খেয়াল রাখবি ওর শরীরে একটা আঘাতের চিহ্ন পযর্ন্ত না থাকে। এইটুকু করে দে প্লিজ দোস্ত।
ইরিনা উত্তেজিত বেশ। কেমন সিনেমার মতো রোমাঞ্চকর হবে ভেবে লাফিয়ে উঠলো।
> এই আমি কিন্তু পুরোটা সময় থাকবো। দারুণ হবে।
আলো গম্ভীর হয়ে বলল,
> তোকে প্রয়োজন হবে। ছেলেটা ভাববে তুই ওর নতুন শিকার। অথচ ও নিজেই আমাদের শিকার। মেয়েদের সঙ্গে টাউটগিরি করা হাড়ে হাড়ে টের পাবে। ওর ইজ্জত আমি পুরো বাংলাদেশের মানুষের সামনে নিলাম করবো দেখে নিস। ভালোবাসার নামে নোংরামি করা বের করবো।
এর মধ্যেই ইরিনা চিৎকার করে বলে উঠলো,
> ও আমার রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করেছে। আমি আসছি। চিন্তা করিস না আগামীকাল সন্ধ্যার আগে বেচারা আমার ফাঁদে পড়ে যাবে। তোরা বাকীটা খেয়াল রাখ। গাড়ি ঠিক কর।
ইরিনা চলে গেলো। আলো বাকীদের থেকেও বিদায় নিলো। আজকের মধ্যে শহরে ফিরতে হবে। তুলির ছুটি শেষ। ইকবাল মাহমুদের হাসপাতালের কাজকর্ম আছে। এখানে থাকা সম্ভব না। তাই ওরা সকলে ফিরবে বলে ঠিক করলো।
***************
নির্জন কক্ষে চেয়ারের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে আরাফ। সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে স্টেডিয়াম মাঠে খেলতে গিয়েছিল কিন্তু সেখানে মন বসেনি। নতুন গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে চ্যাটিং করতে গিয়ে দিনটা পুরোপুরি অকেজো। মেয়েটা বেশ চমৎকার।ও না চাইতে কেমন যেচে পড়ে এডাল্ট বিষয়ে আলোচনা করছে। অনেক কথার পর শেষমেশ মেয়েটা দেখা করতে চাইলো তখন আর নিজের ধরে রাখতে পারেনি। বন্ধুর কাছে গাড়ি রেখে রিকশা নিয়ে মেয়েটার কাছাকাছি এসে বেশ খুশী হলো। বড়লোকের সুন্দরী মেয়ে সঙ্গে গাড়ি আছে দেখে আনন্দে লাফিয়ে উঠলো। ভাবলো নির্জন গাড়িতে কাছাকাছি আসার সুযোগ পাবে। মেয়েটার সঙ্গে কথা বলে গাড়িতে উঠার পর আর কিছু মনে নেই। সবটা অন্ধকার হয়ে উঠেছিলো। জ্ঞান ফিরে আরাফ ভড়কে গেলো। কয়েক জোড়া চোখ ওকে দেখছে। ওর ফোনটা সামনের টেবিলে অনবরত বেজে চলেছে। পাশ থেকে আলো রবিবনকে ইশারা করলো। রবিন গিয়ে ফোন রিসিভ না করে কেটে দিয়ে টেক্সট করলো,
“আমার গাড়িটা আজ তোর কাছে থাক। আমি একটু বিজি আছি পরে যোগাযোগ করবো”
আরাফ উত্তেজিত হয়ে বলল,
> তোমরা কারা? কি চাই আমার থেকে?
রাহিন মুখটা চুপসে দাঁড়িয়ে আছে। অনি নামের ছেলেটা ভিডিও করছে। ক্যামেরা পুরোপুরি আরাফের উপরে নিবদ্ধ। অন্ধকারে কারো মুখ দেখার উপায়ন্তর নেই। শুধুমাত্র আরাফ ছাড়া। আলো ফিসফিস করে রবিনের কানে কানে বলে দিলো প্রশ্ন করার জন্য। রবিন গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
> আপনার ফোনে একাধিক মেয়ের ছবি এবং হুমকি মূলক টেক্সট পেয়েছি। সেগুলোর বিষয় জানতে চাইছি। আপনি এগুলো কেনো করেন? ফোন ব্যতিত আপনি আর কোথায় এই ছবিগুলো সেভ রেখেছেন?
আরাফ ভয় পাচ্ছে তবুও অস্বীকার করলো,
> আমি কোনো মেয়েকে চিনি না। কারো সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই। সবটা মিথ্যা। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমার চাচাকে তোমরা চিনো না সবগুলোর হাড্ডি ভাঙবে। ছেড়ে দাও আমাকে। কি চাইছো আমার থেকে?
আরাফ নাছোড়বান্দা। গলাবাজি করছে। রবিন হতাশ হলো। সকলের চেষ্টা যখন পুরোপুরি ব্যার্থ আলো পাশ থেকে ওড়না দিয়ে মুখটা বেঁধে ফেললো। ঘরের কোনে ছোটছোট লাঠি ছিল একটা তুলে নিয়ে হাত পায়ে উদুম পি*টানি দিতে শুরু করলো। রাহিন হতভম্ভ হয়ে প্রচুর ঘাবড়ে গেছে। শ্রাবণ কিছুক্ষণের মধ্যে এখানে ফিরছে। ওকে বিস্তারিত বলা হয়নি। কিছুটা বলেছিলো। ও নিজেই বলেছে বাকীটা এসে শুনবে। ওর ভাবনার ছেদ পড়লো শ্রাবণের ফোন পেয়ে। বেচারা ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। রাহিন গিয়ে দরজা খুঁলে দিয়ে বলল,
> ভাই আমার দোষ নেই। তোর বউ কথা শুনছিলোনা। পরিকল্পনা করে কি*ড*ন্যাপ করেছে সেই সঙ্গে এখন উদুম পি*টানি দিচ্ছে। এমন পিচ জীবনেও দেখিনি
রাহিন এলোমেলো বকছে।শ্রাবণ পাত্তা দিলোনা।হন্তদন্ত হয়ে ছুঁটে গিয়ে আলোকে ছাড়িয়ে একপাশে নিয়ে আসলো। আলো হাপাচ্ছে। ওদিকে আরাফ একে একে বুলি ছাড়তে শুরু করেছে। একাধিক মেয়ের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্কে জড়িয়ে তাদের ভিডিও আর ছবি সংগ্রহ করে টাকা ইনকাম ওর আসল কাজ। বাড়ির পিসিতে আরও ছবি আর অসংখ্য ভিডিও আছে। এই পযর্ন্ত বিশটা মেয়ের সঙ্গে এমন করেছে। সাত আর দশ নাম্বার মেয়ে সুইসাইড করে মা*রা গেছে। বাকীগুলো সম্মান হারানোর ভয়ে চুপচাপ টাকা দিয়েছে তবুও পুরো ছাড়েনি বরং হাতে রেখেছে। যখন টাকার প্রয়োজন হয় একজনকে টার্গেট করে। আলোর শরীর কাঁপছে। শ্রাবণ ওকে পুরোপুরি বুকের সঙ্গে জড়িয়ে রেখে ফিসফিস করে বলল,
> শান্ত হও। আমাকে দেখি পুরোপুরি ডুবাবে তুমি। একটা দিন সহ্য হলোনা? মাথা ঠান্ডা করো।
আলো হুটকরে শান্ত হয়ে গেলো। শরীর তবুও মিদু মিদু কাঁপছে। কণ্ঠ চাপিয়ে উত্তর দিলো,
> লিজা ম*রতে বসেছিলো। গতকাল সুইসা*ইডের চেষ্টা করছে। কতবার আপনাকে খোঁজ করেছি কিন্তু পাইনি। দশদিনের পাঁচদিন চলে গিয়েছিলো। কি করতাম আমি? বাড়িতে বললে ঝামেলা হতো দ্বিগুণ।
> সবটা জানি আমি। তোমার কাজকর্ম দেখে আমার হার্ট দুর্বল হয়ে পড়েছে। বেচারা রাহিনের অবস্থা শোচনীয়। বন্ধুদের নিয়ে চুপচাপ পাশের কক্ষে গিয়ে বসো। তোমার বিচার পরে করবো। আমি বলা পযর্ন্ত কক্ষের বাইরে আসবে না। একটা শব্দও উচ্চারণ করবে না। ঠিক আছে?
আলো মাথা নাড়লো। শ্রাবণ দায়িত্ব নিয়েছে মানে সমস্যা সমাধান। শ্রাবণ ওর ঘোমটা আরেকটু টেনে দিয়ে মুখটা মুছিয়ে দিলো। শরীর বেয়ে ঘাম দিচ্ছে। অতিরিক্ত উত্তেজনা শরীরের জন্য ভালো না। মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পড়বে। শ্রাবণ ওর হাতটা ধরে বাকীদের চুপচাপ পাশের কক্ষে যাওয়ার জন্য ইশারা করলো। এখানে তিনজন উপস্থিত থাকলো। রাহিন থানায় ফোন করে আসতে বললো। শ্রাবণ পাশে গিয়ে বসলো। মা*র খুব একটা হয়নি। আরাফ অত্যধিক ভয়ে মুখ খুঁলেছে। কক্ষের লাইট জ্বলে উঠলো। ওকে বসতে আরাফ দেখে চমকে উঠে বলল,
> শ্রাবণ ভাইয়া আপনার সঙ্গে আমার কিসের শত্রুতা? সামান্য চ্যানেলের জন্য আপনি আমার পেছনে পড়েছেন? একটা ভিডিও থেকে আপনি কতটাকা ইনকাম করবেন? আমি আপনাকে দশ লক্ষ দিবো প্লিজ আমার ভিডিও ডিলিট করেন। সম্মানের প্রশ্ন আমার।
শ্রাবণ ঠোঁট কামড়ে নিজের স্বাভাবিক রাখলো তবুও মুখ থেকে ভয়ংকর একটা গালি বেরিয়ে আসলো,
> বে*জ*ন্মার বাচ্চা লিজার পরিচয় জানিস? তোর খুব সখ না নতুন নতুন মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক করে টাকা ইনকাম করার?।তোর বাপ আসলে শুনবো ছেলে পয়দা করে রাস্তায় খেপাটে কু*ত্তার মতো রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে রেখেছে কি মেয়েদের সম্মান নিয়ে টানাটানি করার জন্য? এসব করতে খুব মজা লাগে না?তোর বোন পূবালী না কি জানি নাম?এই রাহিন ওর বোন পূবালীর কিছু ছবি ফেসবুক থেকে ডাউনলোড করে এডাল্ট ভিডিও তৈরি কর। পুলিশ আসা পযর্ন্ত ওর সামনে সেই ভিডিও চালিয়ে রাখবি। ওর মা বোন কাউকে ছাড় দিবি না। লাল লিপস্টিক পরে ষোলো পাঁটি দাঁত বের করে দাঁড়িয়ে আছে ওইটা ওর মা। পরের টাকায় ফ্যামিলি বিজনেস করার সখ আজ জন্মের মতো মিটাবো আমি।
রাহিনের পায়ের নিচের জমিন থরথর করে কাঁপছে। শ্রাবণের মুখ থামছে না। গালিগালাজ শুনে কান পঁচে যাওয়ার অবস্থা। মাঝে মাঝে চড় থা*প্প*ড় আছেই। পুলিশ এসে ঝামেলা করবে সঙ্গে আইন ভাঙার জন্য কৈফিয়ত চাইবে। মড়ার উপরে খাড়ার ঘা। সবটা ওকে সামলাতে হবে। সামনে যে আরও কি কি অপেক্ষা করছে। আল্লাহ জানেন
চলবে