শহর জুড়ে আলোর মেলা পর্ব-১৭

0
377

#শহর_জুড়ে_আলোর_মেলা
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:১৭

সামাজিক রীতিনীতি সেগুলো যুগের পর যুগ মানুষ বহন করে আসছে। বিয়ে বাড়িতে নানারকম মানুষের আনাগোনা। এক পাশে মেয়েরা রঙ খেলা করছে অন্যপাশে বউরা গীত গাইছে। গ্রামাঞ্চলের বিয়ের অনুষ্ঠান সাধারণত দিনের বেলা হয়ে থাকে। ছেলেকে উন্মুক্ত স্থানে বাড়ির বউয়েরা মিলে গোসল করানোর বিষয়টা বেশ অস্বস্তিকর। আলো মেয়েকে নিয়ে চুপচাপ বসে আছে। অন্যরা বরের গোসলের ভিডিও করছে নয়তো গান শুনছে। শ্রাবণ বরের পরিবারের সঙ্গে কিছু একটা নিয়ে বাড়ির ভেতরে আলোচনা করছে। আলিম সিকদার গ্রামের নামকরা ব্যক্তি। অনেক বছর আগে একবার চেয়ারম্যান হয়েছিলেন তারপর থেকে উনাকে সকলে আলিম চেয়ারম্যান বলে একনামে চিনে। উনার দ্বিতীয় ছেলে রাফি সিকদার ইন্জিনিয়ারিং পাশ করে দেশের বাইরে থাকে। ওর সঙ্গেই সোনিয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে। বিয়েটা পরিবারিক ভাবে ঠিক হলেও ছেলেমেয়েদের মধ্যে রসায়নটা বেশ মাখোমাখো। মাস তিনেক হচ্ছে দুজনে চুটিয়ে প্রেম করছে। দেনমোহর নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছিল শ্রাবণ সেটা নিয়েই আলোচনা করছে। আলো একাকী বসে ছিল হঠাৎ একটা অচেনা ছেলে এসে ওর পাশের সিটে বসে পড়লো। ছেলেটার মুখে কালো মাস্ক গায়ে সাদা রঙের শার্ট। ইশা ছেলেটার দিকে ঝুঁকে পড়ছে বারবার। পিচ্চি বড় হচ্ছে আর মিশুক হচ্ছে। যেকারো কোলে অনায়াসে চলে যায়। কিভাবে ভালোবাসা কুড়িয়ে নিতে হয় জানে। আলো বিরক্ত হয়ে ইশার হাতটা ধরে রাখলো। ছেলেটা এবার মুখ খুঁললো,

> ওকে আমার কাছে দিন। বাচ্চাদের আমার ভালো লাগে। কি নাম ওর?

আলো মৃদু হাসলো। শ্রাবণ বারবার নিষেধ করেছে ইশাকে কোল থেকে না নামাতে। তাই ইতস্তত করে বলল,
> আমার মেয়ের নাম ইশিতা মাহমুদ ইশা। ভাইয়া আপনি বসুন। আসলে ও যাকে দেখে তার কোলে যাবার জন্য এমন করে। কিছুক্ষণ পর দেখবেন কান্নাকাটি করছে।

ছেলেটা নাছোড়বান্দা হলো। আলো কি করবে বুঝতে পারছে না। সোজাসুজি কাউকে না বলা কেমন জানি হয়ে যায়। লোকটা এতোকরে বলছে দেখে ইশাকে উনার দিকে এগিয়ে দিতে গেলো তখনই শ্রাবণের আগমন। ও দূর থেকে ডাকলো,

> আলো এদিকে একটু আসবে? তাড়াতাড়ি আসো।

আলো পাশ ফিরে সেই ছেলেটাকে আর পেলোনা। কিছুটা দূরে চলে যেতে দেখলো। আলো পাত্তা দিলোনা। শ্রাবণের নিকট যেতেই ইশাকে ও নিজের কোলে টেনে নিয়ে মিসেস শিকদারকে বলল,

> আন্টি ও হচ্ছে আলো।আপনাদের বউমা। কোলের কিউট জন আমার মেয়ে ইশা।

শ্রাবণের নতুন করে একটা বদ অভ্যাস হয়েছে। কথায় কথায় ইশার গালে চুমু দেওয়া। অভ্যাস অনুযায়ী ইশাকে চুমু দিয়ে ভদ্রমহিলার নিকট দিয়ে দিলো। খানিকটা ঝুঁকে আলোকে ফিসফিস করে বলল,

> ছেলেটা কে ছিল?

আলো পেছনে তাঁকিয়ে উত্তর দিলো,

> চিনি না। ইশা ওর নিকট যেতে চাইছিলো। আপনি ডাকলেন তখন উঠে গেলো। অদ্ভুত লোকজন সব। আলাপ হলো অথচ না বলে কেমন চলে গেলো।

শ্রাবণ গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

> আফসোস হচ্ছে? বলেছিলাম না অচেনা কাউকে বিশ্বাস করবে না? ইশাকে আপাতত কারো কাছে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। বাড়িতে রেখে আসতাম কিন্তু ভরসা পাচ্ছি না।

আলো অবাক হলো। চিন্তিত হয়ে বলল,

> মানে কি? কোনো সমস্যা হচ্ছে?

শ্রাবণ মাথা নাড়িয়ে বলল,

> কোনো সমস্যা নেই। আপাতত নিজের দায়িত্ব মনোযোগ দিয়ে পালন করো। একটা বাচ্চা পালন করতে পারলে বিশ্বাস করবো তুমি মা হওয়ার যোগ্য।

আলো ভাব নিয়ে উত্তর দিলো,

> যদি পারি তাহলে কি দিবেন?

> আরো চারটা বাচ্চার মা হওয়ার দায়িত্ব দিব। পাঁচ পাঁচটা বাচ্চার মা হবে। ভেবে দেখো কি সুযোগ তুমি পাচ্ছো? বাচ্চা কাচ্চা পালবে এটা ছাড়া তোমার মধ্যে আর কোনো বিশেষ গুণ আমি দেখতে পাচ্ছি না।

আলো ভীষণ রেগে গেলো। খচ্চর লোক। একটা বাচ্চা পালতে গিয়ে মানুষ নাস্তানাবুদ হয়ে যাচ্ছে। উনি আরও চার বাচ্চার দায়িত্ব ওকে দিবে কেমন লাগে? আলো ঠোঁট চেপে বলল,

> প্রয়োজন নেই আপনার বাচ্চার। দিনদিন আপনি খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছেন।আমি ঠিক সময়ে আমার গুণ আপনাকে দেখিয়ে দিবো। তখন বুঝবেন আলোর গুণ।

> অপেক্ষায় রইলাম। তাছাড়া আমি ভালো ছিলাম কবে? বখাটে বললে এলাকার সকলে একনামে চিনে।

দুজনের তর্কবিতর্কের মধ্যেই রাহিন টেক্সট করলো। শ্রাবণ সেদিকে চেয়ে ভ্রু কুচকে ফেললো। কপালে ভাজ পড়লো কয়েকটা। মুখটা কঠিন করে বলল,
> আলো ভেতরে আসো।

আলোকে উত্তর করার সুযোগ দিলোনা। শ্রাবণ সামনে হাটতে শুরু করলো। রাকা নতুন আত্মীয়দের সঙ্গে আলাপ জমিয়েছে। মেয়েদের বিশেষ গুণ আছে কোথাও গেলে বন্ধু বান্ধবীর অভাব হয়না। ঠিক জুটিয়ে ফেলেছে কয়েকটা। রতন আসবে না বলেও আসতে বাধ্য হয়েছে। ছেলের হাত ধরে প্যান্ডেলে ঘুরছে। রাকার সঙ্গে ঝামেলার পর থেকে দুজনের কথা বলা বন্ধ। রতন সুযোগের অপেক্ষা আছে। ও ঠিক সময়ে পাখির ডানা কেটে নিতে জানে । অনুষ্ঠানের মাঝামাঝিতে শ্রাবণ আলোকে নিয়ে বাড়িতে ফিরলো। সকলে মানা করেছিল কিন্তু শ্রাবণ পাত্তা দেয়নি। স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে সারারাস্তা কথা বলেছে। আলোর মন খারাপ। সবাইকে রেখে আসতে কষ্ট হয়েছিল ভীষণ। তুলি পযর্ন্ত রয়ে গেছে। লোকটার মাথায় মাঝে মাঝে ভুত চাপে বলে ও মনে হয়।
*******
গভীর রাত, চাপা কান্নাকাটির আওয়াজে বাড়ির মানুষদের ঘুম ভাঙলো। অনুষ্ঠান থেকে ফিরে এসে ক্লান্ত ছিল বিধায় আজ সকলে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিলো। রতনের ঘরে বাচ্চাদের কান্নাকাটি হচ্ছে দেখে সকলে দৌঁড়ে গেলো। ভেতর থেকে দরজা বন্ধ। বারবার দরজা ধাক্কা দেওয়ার খানিকটা পর দরজা খুঁলে দিলো। রতনের হাতে মোটা একটা লাঠি। রাকার জ্ঞান নেই ফ্লরে পড়ে আছে। আলো দৌঁড়ে গিয়ে ধরলো। রতনের শরীর বেয়ে ঘাম ঝরছে। বোঝা যাচ্ছে বউ পি*টাতে তার বেশ কসরত করতে হয়েছে। শ্রাবণে বড় মা সোজাসুজি গিয়ে রতনের গালে থা*প্প*ড় দিয়ে হুঙ্কার ছাড়লেন,

> রাত দুপুরে কি হচ্ছে এসব? বাড়িতে মেহমান আছে ঝামেলা করতে নিষেধ করেছিলাম না? আমার চোখের সামনে থেকে যা।

রতন আজ ভয় পেলোনা। বরং পাল্টা উত্তর দিলো,

> কু*ত্তা*র বাচ্চা মুখে মুখে তর্ক করা শিখেছে। কার থেকে এসব শিখছে বুঝতে পারছো না? ওর সাহস হয় কিভাবে আমার মুখের উপরে কথা বলার? ছোট লোকের বাচ্চাদের সঙ্গে মিশে দিনদিন রাস্তায় নামছে। ভদ্রলোকের বাড়ির বউ ও ভুলে গিয়েছে। ওর বাপকে আসতে বলো। মেয়েকে শাসন করে যেনো রেখে যায়।

শ্রাবণ বাইরে ছিল হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে আসলো। ইকবাল মাহমুদ বাড়িতে ছিলেন।উনি আসলেন তার কিছুটা পরে।রাকার কপালের কিছুটা জায়গা কেঁ*টে গেছে।ওয়ালের সঙ্গে মাথা ঠু*কে দিয়েছিলো হয়তো। উনি অবাক হয়ে ভাইয়ের ছেলেকে দেখছেন। ভেবেছিলেন শুধুমাত্র নিজের ছেলেটাই বিগড়ে গেছে কিন্তু তেমনটা না। বরং শ্রাবণ অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। তর্ক মা*রা*মারি কারণ ছাড়া করেনা। কিন্তু রতন সম্পূর্ণ ভিন্ন। বউ পি*টিয়ে সামান্যতম অনুশোচনা নেই বরং গলাবাজি করছে। উনি শান্ত কণ্ঠে উত্তর দিলেন,

> ছোট*লোক তুমি কাকে বলছো? ভদ্রতা সভ্যতা তোমার মধ্যে ছিটেফোঁটা অবশিষ্ট নেই। থাকলে মাঝ রাতে বউ পি*টিয়ে গলাবাজি করতে না। এই শিক্ষা দিয়েছি তোমাকে? মেয়েদের সম্মান করতে জানোনা আবার অন্যদের দোষারোপ করছো? নিজের ছেলেমেয়েদুটোকে দেখো। ওদের উপরে কেমন প্রভাব পড়বে ভাবতে পারছো? বেয়াই সাহেবকে আমি ফোন করে কি বলবো? বলবো আমাদের ছেলে আপনার মেয়েকে মে*রে বিছানায় ফেলে রেখেছে? তোমার কি মনে হয় তারা মেয়ের এই অবস্থা দেখলে শান্ত থাকবে?

রতন গলার আওয়াজ কম করলো কিন্তু উত্তর দিতে ছাড়লোনা,

> শান্ত না থাকারতো কিছু নেই। তাদের মেয়ের আমি কিসের অভাব রেখেছি? ভাত,কাপড় নিত্য প্রয়োজনীয় যখন যা দরকার সবটা দিচ্ছি। এখানে আমার এক বিন্দু দোষ নেই। আমি পুরুষ মানুষ। ও জানে না আমার রাগ হলে মাথা ঠান্ডা থাকে না? তবুও কেনো তর্ক করতে আসে? সময় মতো কাজকর্ম করবে বাচ্চাদের দেখাশোনা করবে সেটা ফেলে বাইরের বিষয় নিয়ে আমার সঙ্গে ঝামেলা করছে।

> ওর বাবার ভাত কাপড়ের কি খুব অভাব পড়ে গিয়েছিল যে তোমার মতো কু*লঙ্গা*রের সঙ্গে বিয়ে দিতে হলো? মেয়েদের তুমি কি ভাবো? তোমার মা চাচিদের সঙ্গে কি আমরা এমন ব্যবহার করি? কখনও দেখেছো তোমার চাচিকে আমি মেরেছি? বা তোমার বাবা কি কখনও তোমার মায়ের গায়ে হাত উঠিয়েছে? রতন বউকে কেউ এভাবে মে*রে শাসন করেনা। কোনো বিষয়ে মতের অমিল হলে ওকে বুঝিয়ে বলতে। এটা তোমার থেকে আশা করিনি বাবা।

ইকবাল মাহমুদ কথা শেষ করে চুপচাপ কাটা জায়গা পরিস্কার করে ইনজেকশন দিয়ে দিলেন। শ্রাবণ পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এর মধ্যে রাকার জ্ঞান ফিরলো। মেয়েটা কান্না ভুলে গেছে। ভয়ে আলোর বুকের সঙ্গে লেপ্টে আছে। এলোমেলো পোশাক আগেই আলো ঠিকঠাক করে দিয়েছিলো। বাইরে গাড়ির আওয়াজ হলো সেই সঙ্গে তুলিও ভেতরে প্রবেশ করলো। উত্তেজিত হয়ে বলল,

> ভাবির ভাই এসেছে। কি হবে এখন?

সকলে বেশ লজ্জিত। কিন্তু রতন মনে মনে সাজিয়ে নিয়েছে কিভাবে বাঁচতে হবে। ওর মনে হয় দোষ যা সব রাকা করেছে। কয়েকটা থা*প্পড় দেওয়ার পরপরই রাকা ওর ভাইকে ফোন করেছিল। দুই গ্রাম পরে ওদের বাড়ি। গাড়িতে করে আসতে সর্বোচ্চ বিশ মিনিট লাগবে। ফোন নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে গিয়ে দেয়ালে মাথা ঠু*কে গেছে। তুলি বাইরে যেতে পারলোনা তখনই রাকার ভাই রাসেল ভেতরে আসলো। বোনের এমন অবস্থা দেখে কোন ভাই চুপ থাকতে পারে? সোজাসুজি রতনের কলার চেপে ধরে বেশ ধস্তা*ধস্তি হলো। রতন সমানে চিৎকার করে যাচ্ছে দেখে ওকে বাইরে বের করে দেওয়া হলো। ভাইকে পেয়ে রাকা বহুদিনের কষ্ট চেপে রাখতে পারলোনা।চোখের পানিতে উগরে দিলো। রাসেল বোনকে ধমক দিলো,

> তুই এসব আমাদের থেকে লুকিয়ে রেখেছিস? আমাদের দুই ভাইয়ের একটা মাত্র বোন তুই। কিসের অভাব আছে আমাদের? যে তুই এখানে পড়ে পড়ে মা*র খাস? কোনো কথা বলবি না এখুনি গাড়িতে গিয়ে উঠ। এখানে তোকে আমি রাখবো না।

রাকা ভাইয়ের আশকারা পেয়ে ফুপিয়ে উঠলো। বারবার মনে হয়েছে বিয়ের পর বাবার বাড়িতে পড়ে থাকলে যদি লোকে খারাপ বলে? ডিভোর্সী মেয়েদের সমাজে খারাপ চোখে দেখা হয়। লোকেরা ছেলেদের দোষ দেখে না। বারবার ভাবে সব দোষ মেয়েটার। স্বামী শাশুড়ির সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারেনি বিধায় ডিভোর্স হয়েছে। রাসেল ওদেরকে নিয়ে এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করলোনা। গাড়িতে উঠলো। বাড়ির অন্যরা বারবার অনুরোধ করেও থামাতে পারলোনা। রাকা বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়েছে। রতন হেরে যেতে দেখে রাসেলকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল,

> বোনকে নিয়ে গিয়ে কি ঘরের খুটি করবা? কোথায় শাসন করে রেখে যাবা তানা আরও আশকারা দিচ্ছো? আমার বাড়িতে কি আর ফিরতে হবে না? দুদিন পরে আবার এই রতনকে খোঁজ করতে হবে তখন? আমার পায়ে ধরলেও আমি গিয়ে আনবো না। যেমন নিয়ে যাচ্ছো তেমন রেখে যেতে হবে।

রাসেল ঠান্ডা মাথার মানুষ। এমনিতেই ধস্তাধস্তির পর ভেবেছে আর উত্তর করবে না তবুও বলতে হলো,

> ভাত ছড়ালে কাকের অভাব হবে না। তোর চেয়ে ভালো ছেলে আর ভালো ঘরে যদি আমি আমার বোনকে বিয়ে দিতে না পেরেছি তুই আমার নাম বদলে ফেলিস। আমার বোনের জীবনটা তুই শেষ করে ছেড়েছিস। কি ভেবেছিস দুই বাচ্চা আছে বলে আমার বোনের বিয়ে হবে না? এখান থেকে গিয়ে তোকে আগে ও ডিভোর্স করবে। আসছে তিন মাসের মধ্যে আমি ছেলে দেখব। বাচ্চাদের সময় মতো তোর কাছে পাঠিয়ে দিব। তোর বাচ্চা তুই পালন করিস।

রাসেল উত্তরের আশা করলোনা। গাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। রাজনীতিতে রাসেলের বেশ নাম আছে। রতনের ব্যবস্থা ও ঠিক অন্যভাবে করে ফেলবে। শ্রাবণ নির্বাকভাবে সবটা দেখলো। এখানে ওর কিছু বলার নেই। রতনের শাস্তি এখন সময়ের অপেক্ষা।
*******
কয়েকদিন ধরে অনবরত অচেনা নাম্বার থেকে শ্রাবণের ফোনে হুমকিমূলক টেক্সট আসছিলো। অনেক ঘাটাঘাটি করে যে নামটা সামনে আসলো দেখে শ্রাবণ মহা বিরক্ত। হাবিব এখনো পিছু ছাড়েনি। ছ্যাঁচড়ামি শুরু করেছে। খালি কলস বাজে বেশি ওর অবস্থা সেম। বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর থেকে পাগলা কু*ত্তার মতো চারদিকে ঘুরছে। শ্রাবণ পুলিশকে বিস্তারিত জানিয়েছিলো গতকাল অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে। একজন রিপোর্টার আর নামকরা চ্যানেলের মালিকের থেকে ফোন পেয়ে পুলিশ বেশ কাজ করেছে। একদিনে তদন্ত শেষ করে হাবিবকে ধরে এনেছে। শ্রাবণ বেশ খুশি। এসব লোকদের ছেড়ে রাখা উচিত না। বাচ্চা কি*ডন্যা*প সঙ্গে নীরার মা*র্ডার কেসের সুন্দর করে চার্চশিট তৈরী করতে বলে দিলো। ঝামেলার শেষ রাখতে নেই। এই কেসে কমপক্ষে চৌদ্দ বছর জেল অনায়াসে হয়ে যাবে। ততদিনে যদি একটু শিক্ষা হয়। রাহিনের সঙ্গে কথাগুলো আলোচনা করছিলো তখনই মিতু আসলো। আজ দুদিন পর মেয়েটা ঘর থেকে বের হয়েছে। সোজাসুজি শ্রাবণের সম্মুখে গিয়ে ছলছল চোখে বলল,

> বাবা আমাকে নিতে অস্বীকার করেছে তাইনা? আমি মানছি কিছু বিষয়ে আমার ভুল ছিল। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি এতোটাও খারাপ না যে নিজের বাচ্চাটাকে মে*রে ফেলবো। মাহিদ অর্ধেক সত্যি আর অর্ধেক মিথ্যা বলেছে। ও নিজে থেকে আমাকে কয়েকদিন ডিনারে নিয়ে গিয়েছিল। তারপর রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসতে বলে চলে যেতো আসতো অনেক সময় পর। সেসময়ে ওর বন্ধুরা থাকতো সঙ্গে। সারাদিন বাড়িতে একা থাকতাম। কাজের জন্য কেউ ছিল না। রান্না,কাপড় পরিস্কার,পুরো ঘর মোছা সব আমাকে করতে হতো। যখন আমার চার মাস চলছে। ফ্লর পরিস্কার করতে গিয়ে পড়ে যায়। অর্ধেক বেলা আমি ফ্লরে পড়ে ছিলাম। সঙ্গে কেউ ছিল না। সারা ফ্লর জুড়ে আমার র*ক্তে ভেসে গিয়েছিল। মাহিদ এসেছিল সন্ধ্যায়। তারপর হাসপাতালে নিয়েছি। ততক্ষণে যা হওয়ার ছিল হয়ে গিয়েছে। এতে আমার কি দোষ বলতে পারো? মাহিদ আমার চোখে ক্ষণিকের মোহ ছিল কিন্তু তুমি ছিলে আমার ভালোবাসা। সেটা বুঝতে আমার অনেকটা দেরি হয়ে গেলো। কি করবো কিছু মাথায় আসছিলো না। আলোকে দেখে আমার নিজেকে বড় অসহায় লাগে। ওষুধটা আমি ওর ক্ষতির জন্য না বরং শুনতে চেয়েছিলাম তুমি ঠিক কতটা ওকে ভালোবাসো। যতটা আমার জন্য পাগল ছিলে ঠিক ততটা ওর জন্যও কিনা।

মিতুর দিকে দুইজোড়া চোখ তাকিয়ে আছে। রাহিনের চোখ বড়বড় হয়ে আছে। এই মিতুর আর শ্রাবণের প্রেম সবটা ওর প্রথম থেকেই জানা আছে। শ্রাবণ ল্যাপটপ বন্ধ করে উত্তর দিলো,

> তুই সামান্য গার্লফ্রেন্ড ছিলি তাই তোর জন্য কতটা পাগল ছিলাম,তাহলে ভাব আমার বউয়ের জন্য আমি ঠিক কতটা পাগল? তবে একটা কথা সত্যি হারাম জিনিসে মজা নেই যতটা হালালের মধ্যে আছে। তোর সঙ্গে অন্যায় হয়েছে আমি ন্যায় পেতে সাহায্য করবো কিন্তু দয়াকরে আমার থেকে কিছু আশা করিস না। নিজের দুর্বলতা দেখিয়ে আমাকে ঘায়েল করা তোর জন্য কঠিন। আমি কারো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে সেদিকে আর তাকাতে পারিনা।

শ্রাবণের ছু*রির মতো মুখ চলে। কথাগুলো শুনে মিতু কষ্ট পেলো। ভেবেছিল সত্যিটা বললে হয়তো কিছুটা হলেও ক্ষমা পাবে। আলো ভেতরে এসে মিতুকে দেখে অবাক হলো। এই বাড়ির ছেলেমেয়েগুলোর লজ্জা সজ্জা কমকম নাকি বুঝলো না। ওকে দেখে শ্রাবণ মৃদু হেসে বলল,

> আলো এখানে থাকা ভীষণ রিস্ক বুঝলে? যা কিছু আছে গুছিয়ে নাও আমরা আজ ফিরে যাচ্ছি।
আলো অবাক হয়ে বলল,

> বিয়ের কি হবে?
> সোনিয়ার বিয়ে শেষ হতে হতে মনে হচ্ছে তোমার কপালে সতীন জুটে যাবে। এখন ভেবে দেখো কি করবে?
আলো চোখ রাঙালো। বাড়িতে ঝামেলার শেষ নেই। একটা শেষ হচ্ছে তো অন্যটা শুরু। কবে সবটা স্বাভাবিক হবে? রাকা বাড়িতে ফিরবে নাকি ফিরবেনা?

চলবে