?শুধু তোমায় ঘিরে?
#মেঘা আফরোজ…..?
#পর্ব-১৭…..?
?
তিশা অবাক চোখে একবার ওদিকে তাকাচ্ছে তো একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে। তিশাকে যে বললো তিশা আমার ছেলের সাথে বিয়ে হবে তোমার সে আর কেউ নয় আয়ান ভাইয়ার মা ছিলেন। আমি মামিকে বললাম
..মামি কি ভাবে কি হলো আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না!!
মামি মুচকি হেসে বললো
..তোরা যেদিন গ্রাম থেকে চলে এসেছিস আয়ান সেদিনি আমাকে বলেছিলো যে ও তিশাকে ভালোবাসে। ব্যাস তোর মায়ের সাথে কথা বলে তিশার বাবা মার সাথে যোগাযোগ করে ওদের বিয়েটাও একি দিনে ঠিক করে ফেললাম। কি তিশা মা আমার ছেলেকে এখন বিয়ে করতে কোনো আপত্তি নেই তো তোমার??
তিশা কিছু না বলে মুচকি হাসলো শুধু।
একটু আগেই আমাদের হলুদ দেওয়া শেষ হয়েছে। আমি আর তিশা দুজনেই আমার রুমে চলে এলাম চেন্জ করবো বলে। তিশার ফোন বেজে উঠলো। তিশা ফোনের দিকে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দিলো।
..কিরে তিশা কে ফোন দিচ্ছে ধরছিস না কেনো?
..কে আবার তোর ভাই দিচ্ছে।
..আমার ভাই তোর তো হবু বর। ফোনটা ধরে কথা বল।
..ধরবো না আমাকে সবটা আগে কেনো জানালো না।
আয়ান ভাইয়া এবার আমার ফোনে ফোন দিচ্ছে আমি রিসিভ করলাম
..হ্যা ভাইয়া বলো।
..মেঘ তিশা কোথায় ও ফোন ধরছে না কেনো?
..ও আমার পাশেই আছে তোমার ফোন ধরবে না বলছে।
আয়ান ভাইয়া আর কিছু না বলে ফোন কেটে দিলো। আমি ফোনটা হাতে থেকে রাখতে নিলে তাসিনের ফোন আসলো,হাসি মুখে রিসিভ করে বললাম
..হুম বলুন
..মেঘাপাখি বাগানে এসো ৫ মিনিটের মধ্যে।
..বাগানে কেনো?
..এসোই না তারপর বলবো।
..ঠিকআছে চেন্জ করে আসছি।
..এই না যেভাবে আছো সেভাবেই আসবে।
তাসিনের কথা মতো তিশাকে বলে ওভাবেই বাগানের দিকে গেলাম। বাগানে এসে তাসিনকে কোথাও না দেখে ফিরে আসতে নিলে কেউ আমাকে আচমকা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আমি মুচকি হেসে বললাম
..লুকিয়ে ছিলেন তাইনা?
..তুমি বুঝলে কি করে আমি ধরেছি তোমায়?
..আপনার ছোয়া চিনতে আমার ভুল হয় না।
উনি আমাকে সামনে ঘুড়িয়ে অপলক তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে।
..কি দেখছেন ওভাবে?
..আমার হলুদ পরীকে দেখছি। বলেই আমার দুগালে হলুদ মাখিয়ে দিলো।
..একি আপনার হাতে হলুদ ছিলো!!
..হুম ছিলো তো আমার বউকে আমি হলুদ মাখাবো না এটা কি করে হয় বলো,তাইতো চলে আসলাম হলুদ মাখাতে। তুমি আমাকে হলুদ মাখাবে না?
..আমি তো হলুদ আনি নি।
উনি কিছু না বলে মুচকি হেসে আমার গালের সাথে উনার গাল ঘষে বললো
..এইতো তোমার ছোয়া হলুদ আমাকেও ছুয়ে দিয়েছে।
আমি একটু হেসে বললাম
..হয়েছে এখন ছাড়ুন কেউ দেখলে কি ভাববে।
..দেখলে দেখুক আমার বউকে আমি ধরে রেখেছি তাতে কার কি হুম। বলেই আমার কোমড়টা জড়িয়ে আরো কাছে টেনে নিলো।
আমি কিছুটা কেঁপে উঠে বললাম
..ছাড়ুন না তিশাকে একা রুমে রেখে এসেছি ও পরে আমাকে পচাবে।
..তিশা একা নেই গো মেঘাপাখি। আয়ান আছে ওর কাছে ও তোমাকে কিছু বললে তুমিও বলতে পারবে।
আমি অবাক চোখে তাসিনের দিকে তাকিয়ে বললাম
..আয়ান ভাইয়াও এসেছে আপনার সাথে!!!
..হুম এসেছে। তিশা হয়তো রাগ করে আছে ওর ওপর আগে থেকে কিছু বলে নি তাই আয়ান তার পিচ্চির রাগ ভাঙাতে এসেছে।
..আর আপনি কি করতে এসেছেন? মাথা নিচু করে।
..আমি তো আমার বউকে হলুদ মাখাতে এসেছি আর…..
..আর??
উনি আলতো করে আমার ঠোঁটে একটা কিস দিয়ে হেসে বললো
..এটা দিতে এসেছি।
.?
তিশা গা থেকে ফুলের গহনা গুলো খুলছিলো মাথার ফুলগুলো চুলে পেচিয়ে যাওয়াতে খুলতে পারছিলো না। দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে তিশা ভেবেছে আমি এসেছি। তিশা পেছনে না তাকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়েই বললো
..মেঘা এসেছিস,আমার চুলের থেকে ফুলগুলো ছাড়িয়ে দেনা।
আয়ান ভাইয়া রুমে ঢুকে আস্তে করে দরজা আটকে দিয়ে তিশার পেছনে গিয়ে ওর মাথা থেকে যত্ন সহকারে ফুল খুলে দিলো।
..মেঘা তুই না তাসিন ভাইয়ার সাথে দেখা করতে গেলি তাহলে এত তাড়াতাড়ি ফিরে……
তিশা এটুকু বলতেই আয়নার দিকে তাকাতেই আয়ান ভাইয়াকে দেখে চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। পেছনে ঘুরে রেগে বললো
..আপনি এখানে কেনো??
আয়ান ভাইয়া মৃদু হেসে বললো
..আমার পিচ্চি বউটা রাগ করেছে তার রাগ ভাঙাতে এসেছি।
..এখানে আপনার বউ নেই যান এখান থেকে।
..আছে তো আমার বউটা এখানেই আছে। বলেই তিশার হাত টেনে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরলো।
..কি করছেন কি ছাড়ুন আমাকে,আর শুনুন আপনার বউ বলে কেউ নেই এখানে।
..আমার পিচ্চিটা দেখছি খুব রেগে আছে,রাগ করলে যে তোমায় আরো সুন্দর লাগে। আজ তো মারাত্মক সুন্দর লাগছে তোমার এই হলুদে রাঙানো মুখটি দেখতে। উফ কি বলবো জাস্ট অসাধারণ।
..একদম ঢং করবেন না,ছাড়ুন আমায়। বলেই ছুটার জন্য চেষ্টা করতে লাগলো তিশা।
..তিশা এমন কেনো করছো! আমি তো তোমার পর কেউ নয় যে তোমাকে ছুলে প্রবলেম আছে।
..বিয়ের কথাটা কি একবার আমাকে জানানোর দরকার মনে করেন নি আপনি?
..আমিই তো জানতাম না আজ দুপুরেই জানতে পেরেছি তাসিন আর মেঘার সাথে আমাদের বিয়েটাও ঠিক করা হয়েছে।
..যখন জেনেছেন তখন বললে কি হতো?
..এমনি বলিনি। কেনো তুমি কি চাও না আমাদের বিয়েটা হোক?
তিশা আয়ান ভাইয়ার দিকে তাকালো তারপর বললো
..চাই না এ কথা কখন বলেছি!
..বলো নি তো তাহলে এমন কেনে করছো?
..করবো না! নিজের বিয়ে তার শপিং টাও করতে পারলাম না আরো কত কি ভেবে রেখেছিলাম কিছুই হলো না। মুখ গোমড়া করে।
আয়ান ভাইয়া তিশার গাল টেনে বললো
..মেঘার জন্য যা যা কেনা হয়েছে তোমার জন্য সেম সেগুলোই কেনা হয়েছে আর এসব কিছু করেছে আমার মা তোমার মা আর তমা আপু মিলে। মেঘার জন্য যেগুলো কেনা হয়েছে শাড়ি গহনা কসমেটিকস ইত্যাদি সব তো তোমার আর মেঘ এর পছন্দের ছিলো তার জন্যই তমা আপু সাথে থেকে ওগুলোই ডাবল করে আনিয়েছে।
তিশা কিছুই বলছে না মাথা নিচু করে আছে। আয়ান ভাইয়া ওর মুখে হাত রেখে বললো
..আমার পিচ্চিটা কি এখনো রেগে থাকবে আমার ওপর?
..উহু একটুও রেগে নেই,শুধু অভিমান হয়েছিলো।
..তাই বুঝি তাহলে অভিমানটা আরো একটু ভাঙিয়ে দেই কি বলো? বাকা হেসে।
তিশা আয়ান ভাইয়ার এমন হাসি দেখে মুচকি হেসে ভাইয়ার বুকে মুখ লুকালো।
.?
আজ সকাল থেকেই সারা বাড়ি মেতে আছে বিয়ের আমেজে। বিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে হবে আমাকে আর তিশাকে পার্লার থেকে সাজিয়ে সেখানেই নিয়ে এসেছে। তিশা আর আমি দুজনেই পাশাপাশি বসে আছি। দুর থেকে কেউ দেখলে হয়তো বুঝতে পারবে না কোনটা কে দুজনেই একি রকম ভাবে সেজেছি।
চারিদিক থেকে একের পর এক ছবি তুলেই যাচ্ছে ব্যাপারটিতে আমি কিছুটা বিরক্ত হলেও তিশা খুন এনজয় করছে।
হঠাৎই তিশা বলে উঠলো
.. এই মেঘা আয়ান বললো আমাকেও নাকি তাসিন ভাইয়াদের বাড়িতেই তোলা হবে।
..হ্যা মা ও তাই বললো। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সব একি সাথে হবে।
..ওয়াও খুব ভালো হবে বুঝলি আমি তোকে কাছে পাবো আর তুই আমাকে।
আমরা দুজন পাশাপাশি বসে এমন নানা রকম গল্প করে চলেছি। আমি সত্যি এখনো ভাবতে পারছি না আমার আর আমার বেস্টির একসাথে বিয়ে হবে এমনকি একি বাড়িতে দুজনে বউয়ের সাজে ঢুকবো।
.?
একটু আগেই বরযাত্রী চলে এসেছে। অনেক লোকজন থাকায় তাসিনকে ভালো ভাবে দেখতে পাইনি। তমা আপু ইমরান ভাইয়া এসে কথা বলে গিয়েছে আমাদের সাথে। রোহান ভাইয়া কোনো একটা কাজে দেশের বাইরে আছে তাই আসতে পারে নি তবে রিশা আপু এসেছে বরযাত্রীর সাথে। রিশা আপু অরিনকে নিয়ে আমাদের কাছে আসলো। হাসি মুখে বললো
..বাহ মেঘা তিশা দারুন লাগছে তোমাদের। আজকে তাসিন ভাইয়া,আয়ান ভাইয়া দুজনেই হার্টআ্যটাক না করে দেখো।
আমি কিছুটা হেসে বললাম
..করলে করবে ওদেরকে একরুমে বন্দি করে আমি আর তিশা জমিয়ে আড্ডা দিবো,চাইলে তুমিও জয়েন করতে পারো কি বলিস তিশা?
..হুম রিশা আপু মেঘা একদম ঠিক কথা বলেছে।
রিশা আপু উচ্চস্বরে হেসে উঠে বললো
..দেখাই যাবে কে কোথায় থাকে সময় তো হোক।
কিছুক্ষণ আগে আমাদের বিয়ে পড়ানোর কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হলে তাসিন আয়ান ভাইয়ার পাশে নিয়ে আমাদের বসালো। তাসিন আড়চোখে আমাকে দেখছে এ নিয়ে ইমরান ভাইয়া তাসিনকে খুচিয়ে আস্তে করে বললো
..শালাবাবু বউটা তোমারি এত লোকের মাঝে এভাবে না দেখে বাসর ঘরে বসে দেখো।
ইমরান ভাইয়ার কথাটা আমার কানেও আসলো ইসস কি যে লজ্জার ব্যাপার এই তাসিনটাও না দেখার কি আছে এত!
.?
অবশেষে আসলো বিদায়ের পালা মনটা আপনা আপনি খারাপ হয়ে গেলো।আমার চোখের কোনে পানি জমে গিয়েছে মায়ের জলে ভেজা চোখে তাকিয়ে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলাম মা ও কাঁদছে। বাবা ও পাশে এসে আমার মাথায় হাত রাখলো বাবার দিকে তাকাতেই বাবা হাসি মুখে আমাকে বোঝালো। হাসি মুখে থাকলেও বাবার চোখেও পানি চিকচিক করছে সেটা আমার চোখ এড়ায় নি।
বাবা আমাকে তাসিনের হাতে তুলে দিলো আমি তখনো ফুপিয়ে কেঁদে চলেছি। আজ বুঝতে পারছি আপন মানুষদেরকে ছেড়ো যাওয়াটা কতটা কষ্টের। বাবা মায়ের আদর ভুল করলে বকা দেওয়া নানা রকম খুনশুটি সব আজ চোখে ভেসে উঠছে আমার।
তিশাও খুব কাঁন্না করেছে। সন্ধা ৭:৩০ এর পর আমাদেরকে গাড়িতে তুলে দিলো। কিছুক্ষণের মধ্য আমরা তাসিনদের বাড়িতে এসে পৌছোলাম। খালামনি আর মামি মিলে আমাকে আর তিশাকে হাসি মুখে বরণ করে ঘরে তুলে নিলো। আমাদের দুজনকেই নিয়ে সোফায় পাশাপাশি বসালো। এই বাড়িটা তো আমার কত চেনা কিন্তু আজ মনে হচ্ছে আজই প্রথম এলাম এ বাড়িতে। বিয়ে শশুর বাড়ি ব্যাপারটা আসলেই অদ্ভুত সবটাই কেমন যেনো এলোমেলো মনে হয়।
?
#চলবে. . . ?