সবটা অন্যরকম পর্ব-৩৭+৩৮

0
3942

সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_৩৭
Writer-Afnan Lara
.
দিবা আর কিছুই বললো না।চুপচাপ সব শুনে গেলো
আহনাফ ও বারতি কিছু আর না বলে সেও যেন চুপচাপ হয়ে গেছে
এত বড় জার্নি।প্রায়ই দেড় ঘন্টার পথ ওরা পাড়ি দিয়েছে কোনো কথা না বলেই
আদনানদের বাসার সামনে বাইক থামাতেই ভেতর থেকে কটা ছেলে তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে বললো”আর আসলি কেন?চলে যা”
.
আহনাফ কানে হাত দিয়ে বললো”সরি!”
.
ওরা আহনাফকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।দেখে মনে হয় কত চেনে।তবে এরা কারা হতে পারে?
দিবা ভাবতে ভাবতেই একা একা সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো
মিনিকে সবার আগে দেখা জরুরি
বেশ দ্রুত গতিতেই সে আদনানদের বাসা পর্যন্ত এসে দরজা খোলা পেয়েই ভিতরে চলে গেলো মিনিকে খুঁজতে।সোফার রুমে কতজন মুরব্বী বসে আছেন।এদের কাউকেই দিবা চেনে না।তাও সালামটা দিয়ে সে মণিতার রুমের দিকে ছুটলো।মণিতার আম্মু কিসব ডালা সাজাচ্ছেন
দিবাকে দেখে মুচকি হেসে বললেন”এসে গেছো তাহলে”
.
-বাকিরা কোথায় আন্টি?
.
-সবাই ছাদে।মেহেদি অনুষ্ঠান সেখানেই হচ্ছে
.
দিবা কপালের ঘাম মুছে বললো”আমার মিনিকে কোথাও দেখেছেন?”
.
-তোমার সেই বেড়ালটা আমার ছোট ছেলেটাকে জ্বালিয়ে মারলো।গিয়ে দেখো ছাদে দৌড়ানি দিচ্ছে হয়ত
.
দিবা মুচকি হেসে ছুটে গেলো ওদিকে
দরজা দিয়ে বাহিরে বের হতেই আহনাফের সাথে ধাক্কা লাগলো ওর
আহনাফ শান্ত গলায় বললো”এরকম তাড়াহুড়ো করছো কেন?কোথায় যাও আবার?”
.
-ছাদে।সবাই ওখানেই
.
-মিনি কোথায়?ওকে দেখছি না
.
-ও সেখানে।তাই তো ছুটে যাচ্ছি
.
কথাটা বলেই দিবা গেলো সেদিকে।আহনাফ ও সোজা ওদিকেই গেছে
মিনিকে সারাটা দিন আর দেখেনি ওরা দুজন তাই দুজনেরই অনেক চিন্তা হচ্ছে
ছাদে আসতেই দুজন থেমে গেলো।খালামণি,খালু,আরিফ,আদনান,আনাফ,মণিতা তার বন্ধু বান্ধুব যেন এক এলাহি কান্ড এখানে
এত মানুষের ভীড়ে দিবা শুধু মিনিকেই খুঁজছে
পরে ওর নজর গেলো খাবারের ব্যবস্থা করা জায়গায় মিনি বসে বসে চিকেনের পাতিল দেখছে মাথা উঁচু করে
বেচারার নিশ্চয় খিধে পেয়েছে।না জানি কখন থেকে না খেয়ে আছে
দিবা সবার আগে ওর কাছে গেলো।মিনি দিবার কোলে বসে করুণ চোখে তাকিয়ে আছে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে ওর খুব খিধে পেয়েছে।দিবা নিজের জন্য প্লেটে পোলাও মাংস নিয়ে সেই মাংসের পিসটা মিনিকে খাইয়ে দিলো।মিনি পেট ভরিয়ে নাচতে নাচতে ছুটে গেলো আনাফকে জ্বালাবে বলে
দিবা প্লেটটা রেখে এবার মণিতার কাছে আসলো।মণিতা রাগী রাগী লুক নিয়ে বললো”এই বুঝি আসার সময় হয়েছে?”
.
-আসলে আহনাফ ভাইয়ার অফিসে কাজ পড়ে যাওয়ায় আমারও দেরি হলো।নাহলে আরও আগেই আসতাম আমরা
.
-যাই হোক।আমার পাশে এসে বসো দেখি
ওরা তোমার হাতেও মেহেদি লাগিয়ে দেবে
.
দিবা মুচকি হেসে মণিতার পাশেই বসে পড়লো।মণিতার চাচাতো বোন একটা দিবার হাত ধরে মেহেদি লাগানো শুরু করে দিয়েছে মণিতার কথায়
আহনাফ এখন আদনানের সাথে কাজে হাত লাগিয়েছে।কাল হলুদের জন্য রঙির কাপড়ের ডেকোরেশন করছে এখন তারা।
মিনি আনাফকে শুধু জ্বালাচ্ছে
আনাফ যেখানেই বসে ও সেখানে গিয়ে বসে থাকে
এতক্ষণ খিধে পেয়েছিলো বলে আনাফকে জ্বালাতে পারেনি।গিয়ে খাবারের টেবিলের নিচে বসে ছিলো এতক্ষণ।এখন পেট ভর্তি।তাই অনায়াসেই আনাফকে জ্বালানো য়ায়
আনাফ ও বলিহারি!এতবড় একটা দামড়া ছেলে হয়ে কিনা ওকে ভয় পাচ্ছে।এরকম ভীতুর ডিমকে জ্বালাতে হেব্বি লাগে,মিনি তাই করছে আপাতত
.
এক হাত ভর্তি মেহেদি লাগিয়ে ছাদের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে দিবা
বাতাসে তার চুলগুলো ক্ষণে ক্ষণে উড়ছে।দোল খাচ্ছে বাতাসে
মেহেদি বিশ মিনিট হাতে রাখতে বলেছে সবাই।মেহেদি দেওয়া অভ্যাস নাহ।তাই বিরক্তি লাগছে খুব
মিনি আনাফকে জ্বালানো শেষে দিবার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে আবার
আহনাফ কাজের ফাঁকে ফাঁকে মিনিকে আর দিবাকে দেখছে
খালামণি নিজেও মেহেদী লাগাতে ব্যস্ত আছেন
আদনান দিবার পাশে দাঁড়িয়ে বললো”কাজে কাজে হাঁপিয়ে গেলাম আমি”
.
দিবা ওর দিকে ফিরে বললো”শরবত খাবেন?ওখানে শরবত দেখলাম”
.
-এনে দিতে পারো
.
দিবা ওর কথামতন এগিয়ে গেলো সেদিকে
শরবতের গ্লাস হাতে নিতেই দেখলো আহনাফ এসে দাঁড়িয়েছে
তার সাদা পাঞ্জাবিটা ভিজে গেছে ঘামে
দিবা তার দিকে শরবতের গ্লাসটা এগিয়ে ধরে বললো”এটা খান”
.
-তুমি খাও।আমি আরেকটা নিচ্ছি
.
-এটা আদনান ভাইয়ার জন্য নিয়েছিলাম
.
আহনাফ দিবার হাত থেকে ছোঁ মেরে গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে পুরোটা খেয়ে বললো”কেউ আমাকে কিছু সাধলে মানা করি না”
.
গ্লাসটা রেখে হাতের ওপিঠ দিয়ে মুখ মুছে আবার চলে গেলো সে কাজে
দিবা বোকার মতন দাঁড়িয়ে আছে।তারপর আদনানের কথা মাথায় আসতেই আরেকটা গ্লাস নিয়ে ওদিকে গেলো সে
আদনানকে গ্লাসটা দিয়ে আহনাফের দিকে পুনরায় তাকালো
আহনাফ ব্রু কুঁচকে লাল- নীল ফিতা লাগাচ্ছে ছাদের কোণায় কোণায়
আরিফ চেয়ার ধরে রেখেছে নিচে দাঁড়িয়ে
দিবা হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো পুরোটা শুকিয়ে গেছে তাই সে ছাদ থেকে নেমে বাসার দিকে গেছে।সাথে সাথে মিনিও চলেছে
দিবা হাত ধুয়ে ওড়না দিয়ে মুছতে মুছতে আবারও ছাদের দিকে যেতে নিতেই দেখলো আহনাফ পেস্ট কালারের ওড়না গলায় পেঁচিয়ে এদিকে আসছে।দিবাকে দেখেও না দেখার ভান করে সে ফুফুর কাছে গিয়ে বললো তার গলার মতন এমন ওড়না যে কয়টা ওয়ারড্রবে আছে ওগুলো দিতে।মণিতার স্টেজে টাঙাবে সবগুলো
ফুফু তাই ওগুলো দিচ্ছে এখন
দিবা ছাদে চলে এসেছে।খালামণি ওর হাতটা ধরে মেহেদি দেখছেন।ওর হাতে করা ডিজাইনটা আর খালামণির হাতে করা ডিজাইনটা একদম সেম
তাই দুজন মিলে হেসে ফেললেন সে কারণে।মিউজিক প্লেয়ারে গান চালালো আরিফ।এক হাতে আরিশার সাথে হ্যালো হ্যালো করছে আর আরেক হাতে মেহেদির গানটা বের করছে ফোন থেকে
আরিশা রেগে আগুন।কারণ আরিফ এখানে কাজে হেল্প করতে আসায় ওকে ভালো মত টাইম দিতে পারেনি যার কারণে ওদের দিনে একবারের বেশি কথাই হয়নি।যা হতো তা দুই মিনিটেই সীমাবদ্ধ ছিল
আরিফ আদনানকে ডেকে বসিয়ে একটু দূরে গিয়ে বেশ কয়েকবার সরি বলা শেষে বললো এখন আর কথা বলা পসিবল না
ঘাঁড়ে আরও কাজ আছে।শেষবার আবারও সরি বলে সে লাইন কেটে দিয়েছে
আরিশাকে কিছু বলার সুযোগই দিল না
আহনাফ ওড়না সব এনে স্টেজের পাশে রেখে দিবাকে ডাক দিলো।কারণ দিবা হুদাই দাঁড়িয়ে ছিলো ওখানে
.
-কি চাই?
.
-আমরা ছেলেরা কাজ করতে করতে শেষ হয়ে যাচ্ছি।তোমার কি দিলে দয়া হয় না যে একটু হেল্প করি ওদের
.
দিবা দুষ্টুমি করে বললো”আদনান ভাইয়া সেই কখন থেকে একটা গান খুঁজে পাচ্ছেন না।তাহলে যাই আমি”
.
-না না।তোমাকে ডেকেছি আমি।সুতরাং আমায় হেল্প করবে এখন
.
-তো বলুন কি করতে পারি?
.
-এই ওড়না গুলো মেলে ধরবা। আমি চেয়ারে উঠে উপরে লাগাবো তার পর ঝুলিয়ে দেবো
.
-ওকে
.
আদনানের ফুফু খালামণির পাশে এসে বললেন”ঐমেয়েটা কে আহনাফের সাথে?”
.
-ও আমার ছোট বোনের মেয়ে।এখানে থেকে পড়াশুনা করে তো তাই সাথে করে নিয়ে এসেছি
.
-কিসে পড়ে?বাসা কোথায়?
.
-খুলনায় থাকে।এবার অনার্সে ভর্তি হয়েছে
.
-ওহ!আমার ছেলেটা তো চাকরি পেয়েছে গতবছর
এখন ভালো দেখে সুন্দর একটা বউয়ের কমতি ওর জন্য তারপর আমার ঘরটা পরিপূর্ণ হয়ে যেতো
তা ওর বাবা কি এখন মেয়ে বিয়ে দেবেন নাকি আরও পড়াবেন?
.
খালামণি মুচকি হেসে বললেন”দিবার এখন বিয়ে করার ইচ্ছে নেই।পড়াশুনা শেষে বিয়ের কথা নিয়ে আমরা সবাই ভাববো”
.
-অনেক ফ্যামিলি তো বিয়ের পরেও পড়ায়।আমরাও নাহয় ছোট বউকে পড়াবো
.
-না সেটা না।দিবা এখনও ছোট।ওর ও তো ইচ্ছার একটা ব্যাপার আছে নাকি?
.
-দেখিয়েন আবার আপনার ছেলে ওর প্রেমে যেন না পড়ে বসে
.
-পড়লে পড়বে।মন্দ কিছু দেখছি না
আমার ছেলেকে যতদূর জানি ছেলে হিসেবে ও অনেক ভালো
দিবা ও ভালো।
এখন তারা যদি একজন আরেকজনকে পছন্দ করে বসে তাহলে আমার কাজ ওদের চারহাত এক করে দেওয়া।এটা তো ভালো কথা বললেন
নিন!সেই খুশিতে মিষ্টি খান
.
খালামণি আদনানের ফুফুর সাথে কথা শেষ করে উঠে চলে গেলেন বাসার দিকে।সেখানে ফুফু একা ডালা সাজাচ্ছেন
আহনাফ সবগুলো ওড়না সাজিয়ে নিচে নামলো সবে
দিবা বললো”এবার আমি যাই?”
.
আহনাফ চেয়ারটা সরাতে সরাতে বললো”কেন?আদনানের আবার কিসের প্রয়োজন হয়েছে?”
.
-কিছুর না।খালামণির কাছে যেতাম।তাদের ও তো কাজে হেল্প লাগতে পারে।মণি আপুর চাচাতো বোনেরা আপুকে নিয়ে রুমে ফেরত গেছে
.
-টিক আছে যাও আর তোমার ঐ আজাইরা বিড়ালটাকেও নিয়ে যাও।ছাদের ঐ কোণাতে রেলিং নেই।পড়ে গেলে ওর একটা পশম ও খুঁজে পাওয়া যাবে না
.
-ওটা বলতে হবে না
ও এমনিতেই আমার সাথে সাথে যাবে
.
দিবা চলে গেলো কথাটা বলেই।আহনাফ খেয়াল করলো মিনি কোথা থেকে ছুটে গেলো দিবার পিছু পিছু
.
-এই আহনাফ এদিকে আয়,ছবি তুলবো আমরা
.
-হুম আসছি
.
দিবা মণিতার কাছে গেছে কারণ খালামণি বললেন ওর জন্য কোনো কাজ নেই আপাতত
মণিতাকে নিয়ে ওর চাচাতো বোনেরা হাসাহাসি করছে।কারণ জন্টু কিছুক্ষন আগে ভয়েস পাঠিয়েছিলো ওকে
দিবা ওদের পাশে এসে বসতেউ ওরা এবার দিবাকে চেপে ধরে বললো আদনানের সাথে ওর কিছু আছে নাকি
এ কথা শুনে দিবা যেন আকাশ থেকে পড়েছে
চমকে উত্তরে সে বললো”আরে না।হঠাৎ এসব কেন বলছো?”
.
রাইসা চোখ মেরে বললো”তখন আদনান ভাইয়া দেখলাম একান্তে ছাদের কিণারায় তোমার সাথে কথা বলতে গেছে।তুমি আবার শরবত এনে দিলে”
.
-আরে ওসব কিছু না।উনি চাইলেন বলেই দিলাম আমি।
.
মণিতা দিবার হাত ধরে বললো”দিবা আমার ভাইয়ের বউ হলে বেশ হতো”
.
খালামণি চায়ের কাপের ট্রে নিয়ে এসে বললেন”হইছে আর না
আমার বোনের মেয়েকে তোমরা কতজনের বউ বানাবা শুনি?
একবার একজন এসে তার বাড়ির বউ করতে চায়”
.
-তো কি করবো বলো মামি।চেহারা খান তো মাশাল্লাহ পাইছে।তোমার ছেলেরা কেন যে এখনও চুপ আছে তাই বুঝলাম না
.
খালামনি ফিক করে হেসে দিয়ে বললেন”আমার ছোট ছেলের তো বুক করা আছে।বড়টার আবার পছন্দের লিস্ট অনেক বড়
সে পছন্দ করে কিনা তা তো জানি না”
.
-একদমই করে না খালামণি
আমাকে নাকি বলদের সাথে বিয়ে দিবেন উনি
.
সবাই হেসে দিয়ে বললো”হায় হায়! এত কাছে থেকেও কিনা প্রেমে পড়ছে না?”
.
-সবাই চুপচাপ চা খাও দেখি
যার বিয়া তার খবর নাই,পাড়াপড়শির ঘুম নাই।
ওরা দুজন দুজনকে দেখতে পারে না আর বাকি সবাই ওদের বিয়ে দিয়ে বাচ্চার নাম নিয়ে গল্প শুরু করেছে
.
আহনাফ কাজ সব শেষ করে ছাদের রেলিং ধরে দূর আকাশের চাঁদটা দেখছে।ভীষণ সুন্দর
একাকিত্ব ভাল্লাগে ঠিক এসময়টাতেই
চাঁদ দেখাকালীন একা থাকাটা অনেক প্রিয় তার।রাতের ঠাণ্ডা আবহাওয়া সাথে একটা রোমান্টিক গান যেটা আদনান চালু করে গেছে বাসার দিকে
আরিফ ফ্রি হয়েছে বলে আরিশাকে ফোন করেছে।সম্ভবত ভিডিও কল।ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে লাল -নীল ঝিলিক বাতি দেখাচ্ছে সে আরিশাকে
চলবে♥

সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_৩৮
Writer-Afnan Lara
.
আরিফ বড় ভাইয়াকে সামনে রেখে কথা বলতে ইতস্তত বোধ করছে।আহনাফ সেটা বুঝতে পেরে চলে এসেছে ছাদ থেকে বাসায়
দিবা চায়ের কাপ নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে মিনিকে কয়েকবার ডাকলো।ঐ রুম থেকে আনাফের চিৎকার চেঁচামেচি শুনা যায়।
-নিশ্চয় ওকে জ্বালাচ্ছে আবার।এই মিনিটাকে নিয়ে আর পারি না আমি
নিজেও বাচ্চা,জ্বালাচ্ছেও একটা বাচ্চাকে
মিনি!!অনেক হয়েছে দুষ্টুমি।আর একবার যদি আনাফকে জ্বালিয়েছিস তো তোর খবর আছে
.
মিনি শান্ত হয়ে দিবার কাছে এসে দাঁড়ালো।আনাফ জানালার গ্রিল ধরে ঝুলে ছিল এতক্ষণ।শান্তির নিশ্বাস ফেলে সে নামতে নামতে বললো”থ্যাংক ইউ আপু।”
.
-আনাফ শুনো।মিনি যখন দেখে ওকে কেউ ভয় পাচ্ছে তখন ও আরও বেশি করে ভয় দেখায়।তুমি এমন ভাব করবা যেন তুমি ওকে ভয় পেলে না
.
-আচ্ছা
.
-দিবা?
.
দিবা পিছন ফিরে দেখলো আহনাফ এসেছে
চেহারায় ক্লান্তি ভাব।এগিয়ে এসে বললো”এক কাপ চা হবে?”
.
-একটু দাঁড়ান
আমি এনে দিচ্ছি।সবার জন্য বানানো হয়েছে মনে হয়
.
দিবা চলে যেতেই আহনাফ মিনিকে খপ করে ধরলো ফ্লোর থেকে নিয়ে।মিনি তো অবাক!
আহনাফ মিনিকে আবার ছেড়ে দিয়ে হাঁচি দিতে দিতে দূরে গিয়ে বললো”মন চাইলো এই তুলোর মতন বিড়ালটাকে আদর করি কিন্তু নাহ আমার শরীরে সইলো না”
.
মিনির তো বিশ্বাস হচ্ছে না আহনাফ তাকে কোলে নিয়েছে সে এবার আহনাফের কাছে এসে বসলো
আহনাফ বিছানায় হেলান দিয়ে বললো”আনাফ যাও তোমার ভাইয়াকে বলো এদিকে আসতে”
.
-ঠিক আছে
.
আনাফ চলে গেলো।আহনাফ ফ্যানের ভলিউম বাড়িয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।দিবা মিনিট দুয়েক পর এসে চায়ের কাপটা ওর পাশে রেখে চলে গেলো
ওর আসার আওয়াজ পেলো আহনাফ তাও চোখ খুললো না
আদনানের কথা শুনে চোখ মেলে নিজের কাপটা হাতে নিয়ে নিলো সে
আদনান আবার খালি খাওয়ার জিনিস দেখলে কাউকে জিজ্ঞেস না করেই ছোঁ মেরে নিয়ে নেয়
.
-আয় বস।চা খাবি?আনাফকে বলতাম?
.
-না।সবেই খেলাম।তা কি ভেবে ডাকা হলো শুনি?
.
-আমার বন্ধু জিসান।ওর ছোট বোন হলো জুঁই।ওর জন্য ছেলে দেখা হচ্ছে। মেয়েটা বেশ ভালো।তুই চাইলে তোকে ছবি দেখাতে পারি
.
-এতই ভালো যখন তুই বিয়ে করছিস না কেন?
.
-কারণ আমার কল্পনার প্রেয়সীর মতন না সে। যার রুপ পানি পড়ার পর ঝলক দিয়ে উঠবে
.
-বাহ!দারুণ।তবে আমার পছন্দ আছে।
.
আহনাফের যেন চা গলায় আটকে গেছে।চোখ বড় করে সে বললো”কে সে?”
.
-উহু!সিক্রেট।বলা যাবে না।যখন প্রস্তাব দিয়ে সব ঠিক করবো তখনই জানাবো তোকে বুঝলি
.
-তার নাম কি “দ” দিয়ে শুরু হয়?
.
আদনান কপাল কুঁচকে বললো”কোনোরকম ক্লু পাবি না তুই।মনে কর সারপ্রাইজ।”
.
আহনাফ চুপচাপ চা শেষ করে থ হয়ে বসে থাকলো।
-দিবা নাকি অন্য কেউ।অবশ্য দিবা হলেও কি?
ভালোই তো।দিবা একটা ভালো পরিবারে আসবে।
আদনান ভালো চাকরি করে।আর কি লাগে!
.
দিবা খালামণির সাথে বসে বসে হলুদ বেছে নিচ্ছে।কাল গায়ে হলুদের জন্য কাঁচা হলুদ বাটা হবে তাই ভালো দেখে সব কালেক্ট করছে তারা দুজন।
.
কাজ সেরে রুমে এসে এখন খালামণি আদনানের আম্মুর সাথে মজা করছেন একটা বিষয়ে।বিষয়টা হলো আদনানের ফুফুকে নিয়ে
উনি উঠে পড়ে লেগেছেন দিবাকে তার বাড়ির বউ করতে
আদনানের আম্মু ও হেসে ফেললেন কথাটা শুনে।উনার নাকি এমন স্বভাব আছে যেখানেই সুন্দর ঠিকঠাক একটা মেয়ে দেখবে ওকে নিজের বাড়ির বউ করার স্বপ্ন দেখার তবে অনেকে রাজি হলেও পরে কথাটা ঠিক এগোয় না।
দুপক্ষের হানাহানি শুরু হয়ে যায় ঠিক কি কারণে সেটা খোলসা করে আদনানের আম্মু বলতে পারলেন না
দিবা ওদের কথা শুনছে আর একটা ঘাড়ো পেস্ট কালারের শাড়ী ভাঁজ করছে।শাড়ীটা জন্টুর মায়ের জন্য পাঠানো হবে।বেশ দেখতে।মধ্য বয়স্ক নারীদের এরকম শাড়ীতে দারুণ মানায়
শাড়ীটা চয়েস করে এনেছে আদনান নিজেই।অবশ্য সঙ্গে করে মণিতাকেও নিয়েছিলো
শাড়ীটা ভাঁজ করে রাখতেই ডাক পড়লো দিবার
আহনাফ ডাকছে ওকে।কারণটা হলো মিনি নাকি ওর কাছ থেকে নড়ছে না
তবে মিনিকে সরাতে ডাকছে না, ডাকছে টিসু বক্সটা খুঁজে এনে দিতে।হাঁচি দিতে দিতে সে কাহিল হয়ে যাচ্ছে
মিনিকে কাছে ধরে না রাখলে সে আবার গিয়ে আনাফকে ডিস্টার্ব করবে।আনাফকে আদনান কাজ দিয়েছে ডালা সবগুলোর একটা ভিডিও বানাতে।এখন ওকে ডিস্টার্ব করলে কাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে
দিবা সবগুলো রুম খুঁজে টিসুর বক্সটা বের করতে লেগে পড়েছে।দূরে দাঁড়িয়ে আছেন আদনানের ফুফু আর তার ছেলে
ফুফু ইশারা করে ওকে বলছে দিবাকে দেখতে
পছন্দ হয় কিনা!।ছেলেটার মুখে হাসি দেখে বোঝায় যাচ্ছে যে দিবাকে তার বেশ পছন্দ হয়েছে।তার মা তার হাসি দেখে এক ছুটে গেলেন আহনাফের মায়ের কাছে
দিবা টিসু বক্সটা খুঁজে পেয়ে দিতে গেলো আহনাফকে
আহনাফ আর আদনান কি একটা কথা নিয়ে হাসতে হাসতে বিছানায় লুটোপুটি খাচ্ছে
দিবা চুপচাপ টিসু বক্সটা রেখে চলে আসলো।এবার মণিতার কাছে যাবে ঠিক করেছে
সেখানে মণিতার চাচাতো বোনেরা সব বিছানায় শুয়ে ফোন টিপছে। দূরে বারান্দায় মণিতা জন্টুর সাথে কথা বলায় ব্যস্ত
-কি এক বোরিং ব্যাপার।সবাই সবাইকে নিয়ে ব্যস্ত
আমি কি করি এখন?আচ্ছা মিনিকে নিয়ে ছাদে যাব
.
দিবা মিনির কাছে এসে ফিসফিস করে ওকে ডাকলো
মিনি ওর কাছে আসতেই ওকে ফ্লোর থেকে তুলে নিলো সে
আহনাফ বললো”ওকে নিয়ে কই যাও তুমি?”
.
-ঐ আসলে এখানে ভাল্লাগছে না তাই ছাদ থেকে ঘুরে আসবো একটু
.
-একা একা বাহিরে যাওয়ার দরকার নাই কোনো।মণুর যত চাচাতো বোন আছে সবগুলোকে নিয়ে মজা করো যাও
.
-আরে ভাই যাইতে চাইছে যখন যেতে দে।ছাদেই তো যাচ্ছে
আর ওখানে তো আরিফ ও আছে।কোনো সমস্যা নাই
.
-ঠিক আছে যাও তবে মিনিকে চোখে চোখে রাখবা।ছাদের রেলিং কিন্তু এক জায়গায় ফাঁকা
.
হুম
.
দিবা মিনিকে নিয়ে ছাদে চলে এসেছে
কোণায় বসে আরিফ ফোনে কথা বলছে বলে দিবা ওদিকে না গিয়ে আরেক দিকে গেলো।মেহেদি অনুষ্ঠান হয়েছিলো বলে কিছু গাঁদা ফুল আর গোলাপ ফুল এখনও আছে স্টেজে
ফুল দিবাকে আকর্ষণ করে বেশি
আর সেই ফুল দিয়ে মিনিকে সাজানো দিবার শখ
যেমন ভাবা তেমন কাজ।কয়েকটা ফুল নিয়ে মিনিকে সামনে বসিয়ে ওর মাথায় ফুল গুঁজে দিলো সে
মিনি বোর হয়ে বসে আছে দিবার দিকে চেয়ে।দিবা তার মনমত মিনিকে সাজিয়ে দাঁত কেলিয়ে বললো”তুই যদি মেয়ে বিড়াল হতি তাইলে শাড়ী পরিয়ে দেখতাম কেমন লাগে।যেহেতু তুই ছেলে তাই ফুল মাথা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রাখলাম”
.
দিবা মিনিকে ধরে কোলে নিয়ে আকাশের চাঁদটার দিকে তাকিয়ে থাকলো এবার
আরিফ কথা বলা শেষ করে পুরো ডেকোরেশনের কিছু ছবি তুলে চলে গেলো বাসার দিকে।দিবাকে সে খেয়াল করেনি
বাসায় এসে আহনাফ আর আদনানের মাঝ বরাবর বসে ছবিগুলো ওদের দেখাচ্ছে সে এখন
সবার শেষ ছবিটাতে দিবার এক দারুণ ছবি দেখলো ওরা তিনজন
আরিফ নিজের অজান্তেই দিবার একটা ছবি তুলে এনেছিলো
দিবার কোলে মিনি।মিনির মাথায় ফুল আর দিবার চোখ চাঁদের দিকে।ছবিটায় চাঁদ ও উঠেছিলো। কি সুন্দর উঠেছে ছবিটা!
আহনাফ আরিফের থেকে ফোন নিয়ে ছবিটা বেশ মনযোগ দিয়ে দেখে বললো”বাহ!তুই তো ভালো ছবি তুলিস!”
.
-দিবা ওখানে নাকি?আমি তো একদম দেখতে পাইনি
.
-তা পাবি কি করে?
তোর তো মাথায় খালি আরিশা ঘুরে।যাই হোক ছবিটা আমাকে সেন্ড কর তো।দিবার জন্মদিনে ওকে গিফট করবো ছবিটা ফ্রেম আকারে বাঁধায় করে
.
আরিফ আর আদনান গালে হাত দিয়ে আহনাফের দিকে চেয়ে আছে
আহনাফ কপালটা কুঁচকে বললো”কি?ভূত টুত দেখলি নাকি তোরা?”
.
-তোর শরীর ঠিক আছে তো?নিজের কল্পনার প্রেয়সীর ছবি ফেলে এবার দিবার ছবি টাঙাবি?
.
-আদনান তোরে মেরে সত্যিকারের ভূত বানিয়ে দেব।আমি কি একবারও বলেছি যে ছবিটা আমি আমার কাছে রেখে দিব?ছবিটা তো আমি দিবাকে দেবো
ওর এত সুন্দর একটা ছবি। ও দেখলে খুশি হয়ে যাবে
.
আরিফ বিছানায় হেলান দিয়ে একটা ভাব নিয়ে বললো”এতদিন তো একজনের চুল আরেকজন ছিঁড়তা ইদানিং হঠাৎ করে আবহাওয়া বদলে গেলো কেন?”
.
আদনান আরিফকে খোঁচা দিয়ে বললো”সুবিধা টিকছে না।
নজরে রাখিস
আহনাফ এতদিন ঢাকঢোল পিটিয়ে এখন সব গোপন করছে”
.
-তোদের দুটোকে মারবো অনেক
এত ফিসফিস কিসের হু?
.
-না ও কিছু না।দিবা তো ছাদে একা
ওকে যদি ভূতে বা অন্য কিছু ধরে নিয়ে যায়?
.
-তোরা চাস আমি ওখানে যাই?
.
-একদমই না।তবে তোর মন চাইলে যেতে পারিস।আমরা ফিসফিস করবো না সত্যি
.
আহনাফ পায়ের উপর পা রেখে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে বললো”যাব না।বাসার ছাদেই তো আছে।ওকে আবার কে নেবে।আর ওর সাথে ওর সেই মহাদুষ্টু বেড়ালটা আছে
সুতরাং টেক ইট ইজি গাইস।এখন আমাকে একটু রেস্ট নিতে দাও”
.
আদনান আহনাফের বুকে কিল বসিয়ে দিয়ে বললো”সত্য কথা স্বীকার করবি নাকি খালামণিকে জানাইতাম তুই আজকাল দিবার ছবি রিসিভ করস ”
.
-যা বল।আমার মা জানে তার ছেলের পছন্দ কেমন
আহা!!মুখে পানি পড়লে ঝলকাই ওঠে এমন বালিকা কোন হানে পাওয়া যায় ভৎস?
.
-আদনান ভাইয়া চলো যাই আমরা।ভাইয়ার মুখ দিয়ে কথা বের করা আর পুকুরে খালি হাতে পুঁটি মাছ খোঁজা একই জিনিস
.
-ঠিক বলেছিস।চল আমরা যাই
.
-আহনাফ??
.
-কি মা?
.
-দিবা নাকি ছাদে গেছে।ওকে ডেকে আন তো
আদনান আর আরিফ বাসার নিচে নাহলে ওদের বলতাম
.
-আনাফকে বলো
.
-সে তো বাথরুমে
.
-ঠিক আছে আমি যাচ্ছি
.
আহনাফ বাসা থেকে বেরিয়ে ছাদের দিকে গেলো।দিবা মিনির সাথে দৌড়াদৌড়ি খেলছে।যে দিকটায় ফাঁকা রেলিং সেদিকে যায়নি।সেফ জায়গায়তেই দৌড়াচ্ছে দুজন
আহনাফ ছাদে এসেছে পাঁচ মিনিট হলো
চুপচাপ সেখানে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে ওদের মজা করা দেখছে
দিবা একসময়ে থেমে গিয়ে বললো”অনেক হলো।চল এবার আমরা যাই”
.
মিনিকে আবারও কোলে তুলে দিবা পিছন ফিরতেই আহনাফকে দেখতে পেলো।আহনাফ হালকা কেশে বললো”ঐ আসলে মা ডেকেছিলো তোমায়!”
.
-হুম, আসছি
.
আহনাফ নেমে গেলো।পিছু পিছু দিবাও আসছে
দুজনে একসাথে বাসায় ঢুকার সময় আদনান আর আরিফের সামনে পড়েছে
আদনান আর আরিফ চোখ ছোট করে আহনাফের দিকে তাকিয়ে বললো”তাহলে এই ব্যাপার?”
.
-কি ব্যাপার?
.
-না কিছু না
কিছুক্ষন আগে একজন বিশিষ্ট ব্যাক্তি বলেছিলেন তিনি নাকি দিবার ব্যাপারে অজ্ঞাত
.
দিবা আগামাথা কিছুই না বুঝে মিনিকে নিয়ে ভেতরের দিকে চলে গেছে
আহনাফ ওদের দুজনকে ধরে বললো”মা পাঠিয়েছিল আমায়।বিশ্বাস না হলে মাকে জিজ্ঞেস কর যা!পেয়েছে একটা।এখন সারাদিন এটা নিয়েই পড়ে থাকবে”
.
-অবশ্যই!তোর সাথে আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের নাম জড়ালো না তাহলে কদিন ধরে হুট করে এমন জড়াচ্ছে কেন বলতো?
.
-আরিফ যা মায়ের কাছে।আমি আসছি একটু পর
.
আরিফ চলে যেতেই আহনাফ আদনানের গলা চেপে ধরে বললো”ও আমার খালাতো বোন হয়!”
.
-হুম।খালাতো বোন হয়!
.
কি?শুধু বোনই তো হয়
.
হুম!!শুধু বোনই তো হয়
চলবে♥