সবটা অন্যরকম পর্ব-৩৯+৪০

0
3857

সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_৩৯
Writer-Afnan Lara
.
রাত দশটা বাজতেই এক এক করে সব মেহমান চলে গেলো
বাকি থাকলো আহনাফরা
ডিনার করা শেষ বলে এখন যে যার ঘুমানোর জায়গা নিয়ে ব্যস্ত
আরিফ আর আদনানের সাথে আজ আহনাফ সহ ঘুমাবে
মা বাবা এক রুমে আছেন
মণিতার সাথে দিবা ঘুমাবে।বাকি রইলো দিদুন
তার সাথে আনাফ ঘুমাবে
মণিতা বেশ দেরি করে ঘুমিয়েছে।দুনিয়ার যত কথা আছে জন্টুর সাথে সে বলছে
দিবা মিনির গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে সেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছে
মিনি আজ সুযোগ পেয়েছে আহনাফের সাথে ঘুমানোর
দিবা ঘুমিয়ে পড়তেই সে চুপিচুপি বিছানা থেকে নেমে দরজার ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে চললো আহনাফ যে রুমে আছে সে রুমের দিকে
সেই রুমটার দরজাও খোলা। ভেতরে ঢুকে কোনটা আহনাফ, কোনটা আরিফ আর কোনটা আদমান সেটা অন্ধকারে বুঝতে না পেরে সে বিছানার উপরে উঠে চুপ করে থাকলো
কিণারায় আহনাফ শুয়ে ছিলো
মিনি সেই জায়গায় বসে আহনাফকে খুঁজছে
হঠাৎ আহনাফ একটা হাঁচি দিয়ে নড়েচড়ে উঠতেই মিনি বুঝেছে ওটাই আহনাফ
সে গুটিগুটি পায়ে আহনাফের কাছে গিয়ে শুয়ে পড়লো
সারাটা রাত ধরে আহনাফ হাঁচি দিয়েছে
শেষে ভোররাতে উঠে পড়লো হাঁচির জ্বালায়
নিজের ফোনটা বের করে ফ্ল্যাশ অন করতেই নিজের পাশে মিনিকে সে দেখতে পেলো
মিনি আরামসে চোখ বুজে ঘুমায়।এত মেজাজ উঠলো আহনাফের তা বলার বাহিরে
পুরো রাতের ঘুম উঠায় দিসে বেড়ালটা।এমনি এমনি কি একে আজাইরা বলা হয়?
আহনাফ নাক ডলে মিনিকে মুঠো করে ধরে বিছানা থেকে নেমে গেলো
রুম থেকে বেরিয়ে মণিতার রুমের কাছে এসে দরজার ফাঁক দিয়ে মিনিকে ভেতরে ঢুকিয়ে দরজাটা টেনে দিলো সে
তারপর সোফায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো।এখানে যদি একটু শান্তি পাওয়া যায়
ওদিকে মিনি অসহায়ের মতন বন্ধ দরজাটার দিকে চেয়ে আছে
তার কি দোষ ছিল যে আহনাফ ওরে ভোররাতে বের করে দিলো।আবার দরজাটাও টেনে দিছে।দরজাটা তো খোলার সাধ্য তার নেই।কি করা যায় তাহলে?
.
সকালে সবার আগে ফুফু আর খালামণি উঠেছেন।আজ অনেক কাজ
গায়ে হলুদ বলে কথা।ওদের কাজের শব্দ কানে আসতেই দিবাও উঠে পড়েছে।কিন্তু মণিতা এখনও উঠেনি।সারারাত ননস্টপ কথা বলে এখন সে ঘুমায়
দিবা ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো মিনির দরজার কাছে বসে আছে।মনে হয় এখানেই ঘুমিয়েছিল
ওকে আর কিছু না বলে রুম থেকে বের হলো সে।সোফায় হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে আহনাফ
বিষয়টা গোলমেলে নাহ?আহনাফ যে কিনা ভোরবেলা উঠে পড়ে সে কিনা সকাল আটটা অবদি ঘুমাচ্ছে
ওকে দেখতে দেখতে দিবা খালামণির কাছে চলে গেলো
খালামণি বললেন হলুদের দিনে তিনি এবং অন্য মুরব্বীরা হাতে টাটকা মেহেদি লাগাবেন।পাশের বাসার ছাদে একটা মেহেদি গাছ আছে।তারা সবাই মিলে এখন সেটা থেকে মেহেদি আনতে যাবে। দিবাও যেন সাথে আসে
দিবার হাতে ডালা দিলেন ফুপু।সেটাতে চিনির বাটি।হলুদের বাটি আরও কত কি আছে।নিয়ম করে কিছু মেহেদি আবার নিয়ে হলুদের সাথে রাখতে হবে
দিবা ডালা নিয়ে তাদের পিছু পিছু গেছে।আহনাফ ঘুম থেকপ উঠে সারা বাসা খুঁজেও নিজের জামাকাপড়ের ব্যাগটা পেলে না
দিদুন বললেন মা আর ফুফু নাকি পাশের বাসার ছাদে গেছে
মাথার চুলগুলোকে এলিয়ে দিতে দিতে আহনাফ সেদিকেই ছুটলো
নিজের তোয়ালেটা পর্যন্ত ঐ ব্যাগে আছে
আরেকজনের তোয়ালে গামছা ব্যবহার করতে অভ্যস্ত না সে
মেহেদি পাতা ছিঁড়তে ছিঁড়তে সবাই একে অপরকে চিনি খাওয়াচ্ছে
দিবা একবার খালামণিকে খাওয়ালো আবার ফুফুকে।বাকি যারা ছিলো পাশের বাসার আন্টিরা তাদের ও এক এক করে খাওয়াচ্ছে সে
আহনাফ ছাদ পর্যন্ত এসে মা বলার জন্য হা করতেই দিবা কোথা থেকে এসে ওর মুখের ভেতরে চিনি ঢুকিয়ে চলে গেছে
পরে মাথায় আসলো ও কিছুক্ষন আগে আহনাফের মুখের ভেতর চিনি ঢুকিয়েছে
জিভে কামড় দিয়ে আবারও ওর সমানে এসে বললো” সরি”
.
-মা?
.
-কিরে?তুই এখানে কি করিস?চোখ মুখ ফুলে আছে কেন তোর।ফ্রেশ হোসনি?
.
-কি করে হবো।আমার তোয়ালে তো ব্যাগের ভেতর।আর সেই ব্যাগটাকে কোথায় রাখছো সেটা তো শুধু তুমিই জানো
.
-মনে পড়ছে না রে।খুঁজে দেখতে হবে।এখন কাজ করছি রে বাবা।আদনানের তোয়ালে দিয়ে কর না
.
-মা তুমি জানো আমি আরেকজনের জিনিস ইউজ করতে পারি না।
.
-আমার তোয়ালেটা আমরা যে রুমে ছিলাম ওখানে ঝুলিয়ে রেখেছি। আপাতত ওটাই নে যা
.
আহনাফ মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো।খালামনি দিবাকে বললেন আহনাফ কেন এসেছিলো।
তার রুমে ঝুলানো তোয়ালে তার ঠিক আছে তবে তার পাশের গোলাপি তোয়ালেটা দিবার।অন্য কেউ ইউজ করবে বলে সে খালামণির রুমে রেখে এসেছিলো
কি বিপদ!আহনাফ আবার ওটা না নিয়ে নেয়
দিবা ছুটে গেলো আহনাফের পিছু পিছু
আহনাফ ততক্ষণে ফোনে কথা বলতে বলতে মায়ের তোয়ালেটার জায়গায় দিবার তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেছে
দিবা অনেক দৌড়েও নাগাল পেলো না।যেমনটা ভেবে ছিলো তেমনটাই হলো
আহনাফ ভুল করে ওর তোয়ালেটাই নিয়েছে
দিবা গালে হাত দিয়ে চেয়ারে বসে আহনাফের অপেক্ষা করছে এখন
দশ মিনিট পর আহনাফ তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বের হতেই দিবা ওর হাত থেকে ছোঁ মেরে ওটা নিয়ে বললো”নিজের মায়ের তোয়ালে চিনেন না আপনি?”
.
-কেন চিনবো না।মায়ের তোয়ালে তো ইয়েলো
.
-তো এটা কি?
.
-এটা তো পিংক।!এক মিনিট।এটা কার?
.
-আমার!!দেখে নিবেন না??আজিব!
.
-ফোনে কথা বলছিলাম তো তাই খেয়াল করিনি
তাই তো বলি ওরকম পারফিউমের গন্ধ আসছিলো কেন
.
-পারফিউমের সুবাস হয়। গন্ধ হয় না
.
-যাই হোক। নাস্তা দাও।আমার খুব খিধে পেয়েছে।তোমার ঐ আজাইরা বেড়াল আমাকে সারারাত জ্বালিয়েছে
ও কি করছে জানো?ও আমার পাশে গিয়ে ঘুমাচ্ছিল
পরে আমি ওরে তোমাদের রুমে রেখে দরজা লাগিয়ে সোফায় এসে শুয়েছিলাম।ঠিক করে ঘুমাতেই পারলাম না
.
-সরি।আমি ওকে বকে দিব
.
আহনাফ গিয়ে সোফায় বসে টিভিটা অন করলো চুপচাপ
দিবা তোয়ালে রেখে রান্নাঘরে গেলো দেখার জন্য যে খাবারে কি আছে।ফিরনি বানানো
মনে হয় ফুফু বানিয়েছেন
দিবা ফিরনি এক বাটি এনে আহনাফের সামনে রেখে বললো”এটাই পেলাম।আর কিছু নেই।রুটি বানিয়ে দেবো?”
.
-না থাক।এটাতেই হবে।মিনি কি খাবে?
.
-ফুফুকে বলে ওরে আমি ফ্রিজ থেকে দুধ নিয়ে এক বাটি খাওয়াইছি
.
-বেশ ভালো।
.
দিবা আবারও খালামণির কাছে ফেরত চলে গিয়েছিলো
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানটা শুরু হয়েছে সেদিন সন্ধ্যা থেকে
মণিতাকে তার চাচাতো বোনেরা সাজাচ্ছে।দিবার আর কাজ না থাকায় সে নিজেই রেডি হয়ে নিচ্ছে এখন।আহনাফের দেওয়া হলুদ শাড়ীটা পরেছে সে
চুলগুলোকে খোঁপা করবে নাকি ছেড়ে দেবে তা নিয়ে বেশ অনেকক্ষণ ধরে কনফিউজড ছিল সে
পরে এক্সট্রা বেলি ফুলের মালা পেয়ে চুলে খোঁপাই করে নিলো শেষমেষ
হলুদ শাড়ী।লাল পার।মাথায় সাদা ফুল।হাতে লাল চুড়ি
ঠোঁটে হালকা লাল লিপস্টিক, কানে দুল।সব ফিনিস করে দিবা বিছানার এক কোণায় বসে বসে পা দুলাচ্ছে
বাকিরা মণিতাকে সাজিয়ে এবার তারা সাজছে
খালামণি দিবাকে ডাকলেন তার শাড়ীতে সেফটিপিন লাগিয়ে দিতে
দিবা সেদিকে গিয়ে দেখলো খালামণির কুচি গুলো সোজা হয়নি ঠিকঠাক
তাই সে নিচে বসলো কুচি ধরার জনন্য
একই সময়ে আহনাফ ও বসলো কুচি ধরতে
দুজনে এক জায়গায় একসাথে বসে একে অপরকে দেখছে
আহনাফের গায়ের পাঞ্জাবিটা সম্পূর্ন লাল রঙের ছিল
দিবা চোখ নামিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে খালামণির পিছনে চলে গেলো শাড়ীতে সেফটিপিন লাগাতে
চোখের পলকে দিবা সরে গেলো
আহনাফ কি দেখলো না দেখলো মনে করতেই পারছে না
মায়ের কুচিটা ধরে সে ও চলে গেছে।দ্বিতীয়বার আর তাকায় নিই
খালামণি কাজল একটু দিবার কানের পেছনে লাগিয়ে দিয়ে বললেন “নজর লাগতে পারে”
.
দিবা মুচকি হেসে চলে গেলো মণিতার কাছে।ওকে নিয়ে এবার ছাদে যাবে সবাই
ছাদে আসতে না আসতেই হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো
অবশ্য এতক্ষণ মেঘলা ছিলো।হালকা রোদ উঠত মাঝে মাঝে
তাই সবাই ধরেই নিয়েছিল বৃষ্টি হবে না
এরকম বৃষ্টিতে সবাই ভিজে একাকার হয়ে গেছে
দিবা সব চাইতে বেশি ভিজেছে কারণ সে সবার সামনে ছিল
সবাই আবারও বাসায় ফেরত চলে এসেছে
দিবা নিজের শাড়ী থেকে বৃষ্টির পানি ঝাড়তে ঝাড়তে বাসায় ঢুকতেই আহনাফের সামনে পড়লো
আহনাফের মনে হলো সে তার কল্পনার সেই প্রেয়সীকে দেখে ফেলেছে আজ
|সে খোঁপা করে রাখবে।খোঁপায় বেলি ফুলের মালা ঝুলাবে।ঠোঁটে লাল টুকটুকে লিপস্টিক থাকবে।নাকে ছোট সাদা পাথরের নাকফুল আর কানে ছোট দুল।তার গায়ের রঙ হবে আনকমন
সাদা ও না,কালো ও না।এমনকি শ্যামলাও না
জাস্ট এমন একটা রঙ যেটায় পানি পড়লে ঝলক মেরে ওঠে
তার কথাবার্তায় আমি দিন দিন তার প্রেমে পড়ে যাবো
আর সে মিশকা টাইপ মেয়ে হবে না।সে অনেক লজ্জাবতী হবে|
.
দিবা মাথা নিচু করে আহনাফের পাশ দিয়ে চলে গেছে
আহনাফ ওর চলে যাওয়া দেখছে।আজ সে ঐ মেয়েটাকে দেখলো যাকে সে এতদিন কল্পনা করত
দিবা নিজের তোয়ালেটা খুঁজে মুখ মুছে নিয়ে মিনিকে বললো”এত সুন্দর করে পরিপাটি হওয়া সাজটা নষ্ট করে দিলো এই বৃষ্টি।কেমন লাগে বল তো।তুই তো ছিলি না।নাহলে তুইও ভিজতি
ভাগ্যিস দৌড় দিয়েছিলাম।নাহলে এখন আমায় এই শাড়ীটা বদলাতে হতো”
.
-কিরে আহনাফ?এরকম সংয়ের মতন দাঁড়িয়ে আছিস যে?এদিকে আয় তোর সাথে কথা আছে আমার
.
আদনান আহনাফের হাত শক্ত করে ধরে ওর রুমের বারান্দায় নিয়ে আসলো
.
-কি হয়েছে?কিছু বলবি?
.
-হুম।খুবই জরুরি কথা।দিবাকে নিয়ে
.
-দিবাকে নিয়ে?
.
আদনান গ্রিলের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো”
হ্যাঁ।আসলে কাল আমি তোর সাথে ওরকম বিহেভ করছিলাম কারণ আমি জানতে চেয়েছিলাম তুই দিবাকে পছন্দ করিস কিনা।এরপর সিউর হলাম যে তুই আসলেই দিবাকে বোনের মতন দেখিস।
তো আমি তোকে একটা কথা বলি।তুই পরে মামিকে বলিস।
কথাটা হলো আমি দিবাকে পছন্দ করি।যদি মামি রাজি থাকেন তো আমি দিবাকে বিয়ে করতে চাই
যতদূর জানি দিবার জীবনে কেউ নেই।তো বলবি??”
.
আহনাফ চুপ করে থাকলো তার কিছুক্ষণ পর মুচকি হেসে বললো”হ্যাঁ।বলবো।
সব বুঝলাম।।তাহলে এই সে মেয়ে যার কথা না বলে আমাকে সারপ্রাইজ দিতে চাইছিলি?”
.
-হ্যাঁ।পরে চিন্তা করলাম তোর সাথে কিসের লুকোচুরি। মনের কথাটা তোকে বলেই দিলাম
এবার তুই দেখ আমাদের মিল করাতে পারিস কিনা।আমি এটাও জানি যে দিবা এখন বিয়ে করতে চায় না
এটা কোনো সমস্যা না।ও যখন চাইবে তখনই বিয়েটা হবে কিন্তু ওর সম্মতি আছে কিনা তাও তো আমায় জানতে হবে
.
আহনাফ আদনানের রুমের ভেতরের দিকে চোখ রেখে চুপ করে আছে
ওখানে মিনি বসে চোরের মতন ওকেই দেখছে।মিনিকে দেখে আহনাফ হেসে বললো”দিবাকে মা নিজেই জিজ্ঞেস করবে।আমি করার কে।”
.
দিবা মিনিকে খুঁজে পেলো আদনানের রুমে।তাই রুমে ঢুকে ঝুঁকে মিনিকে নিচ থেকে তুলতেই ওর চোখ গেলো বারান্দার দিকে।সেখানে আহনাফ দাঁড়িয়ে
মুখটা গম্ভীর করে সে এদিকেই তাকিয়ে আছে।দিবাকে দেখে গ্রিলটা শক্ত করে ধরলো। তার পাশেই আদনান নিজের মনের যত কথা আছে দিবাকে নিয়ে সেসব বলেই চলেছে
চলবে♥

সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_৪০
Writer-Afnan Lara
.
-আমার মনে হয় কথাটা তোর নিজে গিয়ে দিবাকে বলা উচিত!মাকে বলার আগে
.
-কই সে এখন?দেখেছিস?আজ তো শাড়ী পরেছে।খুব সুন্দর লাগছিলো ওকে
.
আহনাফ মুচকি হেসে বললো”যাই আমি।মা ডাকছে মনে হয়।তোর ও তো কাজ কম না।জলদি কাজে লেগে পড়”
.
আহনাফ চলে গেলো ওখান থেকে।দিবা মিনিকে নিয়ে মণিতার রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে।
বারান্দা এমন একটা জায়গা যেখানে বৃষ্টি হলে এক অন্যরকম ভালো লাগা অনুভব করা যায়।সাথে যদি থাকে গোটাকয়েক ফুল গাছ তাহলে অনুভূতিটা আরেকটু বেড়ে যায়
একটা চেয়ার হলে মন্দ হতো না।বসে দেখতে আরও ভাল্লাগবে
দিবা পিছনে তাকালো রুমে চেয়ার আছে কিনা দেখার জন্য ঠিক তখন আদনান একটা চেয়ার সমেত এদিকে এসে দাঁড়িয়েছে
দিবার দিকে চেয়ারেটা ঠেলে দিয়ে বললো”এই সুন্দর অনুভূতি চেয়ারে বসেও নেওয়া যায়”
.
দিবা বললো”না থাক।আপনি বসুন”
.
-তোমার জন্য আনলাম।বসার মুড আমার নাই
.
দিবা চেয়ারটা নিজের দিকে টেনে একটু দূরে গিয়ে বসলো।
.
আদনান কাঁচুমাচু করছে।কথাটা কি করে বলবে তাই ভেবে পাচ্ছে না।মেয়েদের প্রোপোজ করা বড়ই কঠিন জিনিস।আর সেই মেয়েটা যদি হয় গম্ভীর তাহলে তো কথাই নেই
হালকা কেশে গ্রিলে হাত রাখলো আদনান
আহনাফ মণিতার রুমের সামনে দিয়ে মায়ের রুমে যাওয়ার পথে ওদের দুজনকে বারান্দায় দেখে থেমে গেলো।রুমের খোলা জানালা দিয়ে সম্পূর্ন বারান্দাটা দেখা যায়
.
আদনান বড় করে শ্বাস নিলো।বুকটা ফুলিয়ে বললো”দিবা আমায় বিয়ে করবে?”
.
দিবা চমকে আদনানের দিকে তাকিয়ে আছে।
আদনান দিবার তাকানো দেখে চোখটা নামিয়ে ফেলে বললো”পছন্দ করি তোমাকে।”
.
দিবা মুখটা ঘুরিয়ে ফেললো।আদনান তার উত্তরের আশায় দাঁড়িয়ে আছে এখনও
.
দিবা বুঝেছে তার উত্তর না শুনে আদনান যাবে না এখান থেকে
সে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো”ভাইয়া আপনি ভালো মানুষ।কিন্তু আমি আপনার যোগ্য নই।তাছাড়া আমার জীবনটা যেরকম হয়ে আছে জন্মের পর থেকেই এরপরে আর আমি বিয়ে বিষয়টাকে প্রাধান্য দিতে চাচ্ছি না
সব মেয়ের মতন আমারও বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন ছিল।তবে মায়ের সাথে হয়ে যাওয়া ঘটনার শুনার পর থেকে আমার মন থেকে উঠে গেছে ঐ শব্দটা
একটা মেয়ের জীবনে বিয়েই সব কিছু হয়না
আমি পড়ালেখা করে নিজের একটা পরিচয় তৈরি করতে চাই।আপাতত আমি বিয়ে নিয়ে ভাবছি না।তাছাড়া আপনাকে নিয়ে এসব আমি ভাবিনি আগে।আমার কাছে আপনি খালামণির ননদের ছেলেই।এর বেশি কিছু না
আর আদৌ আমি বিয়ে করবো কিনা এবং সেটা কবে তা আমি নিজেও জানি না।সুতরাং আমায় মাফ করবেন
আমি এসবের মধ্যে নেই”
.
আদনান দিবার হাতটা ধরলো মুঠো করে তারপর বললো” অপেক্ষা করবো”
.
কথাটা বলেই হাত ছেড়ে সে চলো গেলো
আহনাফ দূর থেকে সবটা শুনেছে।
.
দিবা আবার চেয়ারে বসে মিনিকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো”আমার মা যাকে ভালোবেসেছিল সে তাকে ঠকিয়েছে
আর আমি কখনও কারোর ভালোবাসায় নিজেকে আকৃষ্ট করবো না
আমার লক্ষ্য আমি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তুলবো।ব্যস এই টুকুই।
ঠকানোর আগে আমার বাবা সাদাত ও মায়ের কাছে রাজকুমারই ছিলো।মা কি জানত তার সেই রাজকুমার তাকে ঠকাবে??।তাহলে আমি কি করে একটা মানুষকে বিশ্বাস করি”
.
বৃষ্টি থেমেছে সবেমাত্র।না থামলে হয়ত বাসাতেই স্বল্প পরিসরে হলুদের অনুষ্ঠান করতে হতো
এখন বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় সবাই ছাদে এসে পড়েছে
বিশ ত্রিশটার মতন চেয়ার সাজানো।যারা হলুদ লাগাবে তাদের রেখে বাকি সবাই চেয়ারে এসে বসেছে।তৃতীয় সারিতে দিবা একটা চেয়ার বেছে বসে থাকলো
মণিতার খালাতো বোনেরা ওকে হলুদ লাগাতে ব্যস্ত
বাকি মুরব্বীরা তৈরি হচ্ছেন লাগাবেন বলে
সন্ধ্যা সাতটা বাজে এখন।অন্ধকার নেমে এসেছে।ডেকোরেশনের আলোতেই যা দেখা যায় আর কি
তবে বৃষ্টি হয়ে যাওয়ার পর সেই লাইট গুলো ডিস্টার্ব করছে বারবার
একবার জ্বলছে তো একবার নিভছে
.
মিনি দিবার কোলে বসে আছে ভালো বেড়ালের মতন।তবে তার চোখ আনাফের দিকে।আনাফকে কি করে আবার জ্বালাবে সেটাই ভাবছে মিনি
দিবার মাথায় ঘুরঘুর করছে আদনানকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথাটা
হয়ত হ্যাঁ বলা উচিত ছিল কিন্তু তার যে আদনানের প্রতি কোনো ফিলিংসই তৈরি হয়নি।তাছাড়া এসবের ভয়েই তো সে খুলনা ছেড়ে এতদূর আসলো
.
স্টেজ খালি পেয়ে আহনাফ গেলো মণিতাকে হলুদ ছোঁয়াতে।বাটিতে চার আঙ্গুল দিয়ে হলুদ নিয়ে মনিতার গালে লাগিয়ে দিলো সে তারপর স্টেজ ছেড়ে চলে আসলো
দিবার পাশের সিটটা খালি দেখে ওখানে এসেই বসেছে সে
আরিফ কখন থেকে লাইট ঠিক করার কাজ করছে
ঠিক করতে গিয়ে আরও বেমিল করে ফেললো
এবার লাইট গেলে আবার আসতে অনেক দেরি হয়ে যায়
শেষে পাকনামো করে কিসের একটা তার টান দিতেই পুরো ছাদের লাইট এক্কেবারে অফই হয়ে গেলো
আহনাফ দিবার পাশে বসাই ওর কানের ঝুমকোর আওয়াজ,হাতের চুড়ির আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে
অন্ধকার বলে দিবা নড়াচড়া করছে তাই
আহনাফ তার হাতটা বাড়িয়ে দিবার গাল আন্দাজ করে হলুদ ছুঁয়ে চলে গেলো
দিবা ছোঁয়াটা টের পেয়েছে ঠিক! কিন্তু পরে ভেবে নিলো ভুল ধারনা
কারণ আহনাফ এমনটা করবে না সে জানে
আহনাফ উঠে চলে যাওয়ার পাঁচ মিনিট পর আলো জ্বললো
দিবা পাশে চেয়ে আহনাফকে দেখতে পেলো না
আলো আবারও জ্বলছে আর নিভছে
খালামণি ওকে ডাকছে এসে মণিতাকে হলুদ লাগিয়ে দেওয়ার জন্যে
দিবা মিনিকে চেয়ারে রেখে গেলো হলুদ লাগাবে বলে
মণিতার পাশে বসতেই মণিতা হেসে বললো”কিরে!আগে ভাগে হলুদ লাগালি।আবিয়াতি মেয়েরা কিন্তু নিজের গায়ে আরেকজনের বিয়ের হলুদ লাগাতে পারে না”
.
-হলুদ?আমার গালে হলুদ আসবে কই থেকে…..
(তখন তাহলে সত্যি সত্যি আহনাফ ভাইয়া আমার গালে হাত লাগিয়েছিলো?)
.
দিবা সোজা আহনাফের সামনে এসে দাঁড়ালো।আহনাফ ফোনে নাহিদের সাথে কথা বলছিল।ওকে দেখে ফোন রেখে দিলো
.
-কিছু বলবা?
.
-আপনি আমার গালে হলুদ লাগিয়েছেন?
.
-আহনাফ দিবার দিকে এক নজর তাকিয়ে মুখটা ঘুরিয়ে বললো”হ্যাঁ।”
.
-আমি জানতে চাই “কেন?”
.
-কারণ আমার মন চেয়েছে তাই।লাগাতে পারি না?
.
-না পারেন না।একটা অবিবাহিত মেয়ের গালে একজন পুরুষ হলুদ লাগাতে পারে না
.
-আমি তোমার রিলেটিভ হই।সো আমি লাগাতেই পারি।আদনান লাগালে খুশি হতে?
.
-এখানে আদনান ভাইয়া আসছে কই থেকে।আমি জানতে চাচ্ছি হুট করে আপনি কেন হলুদ লাগালেন?
.
আহনাফ আবারও দিবার দিকে তাকিয়ে মুখটা একটু নিচু করে ফিসফিস করে বললো”আমার মন চেয়েছে তাই আর কোনো অবজেকশান দেখালে এই অন্ধকারে আবারও হলুদ লাগাতে ভয় পাব না আমি”
.
দিবা কপাল কুচঁকে চলে আসলো ওখান থেকে
গালে হাত দিয়ে মুছতে মুছতে চেয়ারে বসে পড়েছে সে।আজ সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তার।আদনানের প্রোপোজ করা,আবার উনার এরকম ব্যবহার!!যেগুলো ভাবিনি ঠিক সেগুলোই হচ্ছে।
.
দিবা আঁচল দিয়ে মুখ ঘষে পাশে কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে চেয়ে দেখলো আহনাফ আবার এসে বসেছে
দিবা একটু নড়েচড়ে বসলো।আলো জ্বলছে এখন ঠিকঠাক
আহনাফ মিনির গাল টেনে দিয়ে চুপ করে থাকলো
আহনাফ ওর গাল টেনেছে বলে সে দিবার কোল থেকে আহনাফের কোলে চলে এসেছে।
আহনাফ আর কি করবে নাক ডলে ওর গাল আবারও টিপে দিলো
.
দিবা বিরক্তি নিয়ে উঠে খালামণির পাশে এসে বসতে যেতেই ওখানে ফুফু এসে বসে পড়লেন
দিবা উপায় না পেয়ে পিছন ফিরে তাকালো।আহনাফ মুচকি মুচকি হাসছে।
.
একটা সিট ও খালি নেই।আরিফ আর আদনান আর কিছু ছেলে সহ গানে নাচবে তাই যে যার জায়গা দখল করে বসেছে
দিবা তাই আবার আগের জায়গাতেই এসে বসলো
.
-আমি তোমায় হলুদ লাগালাম।প্রতিশোধ হিসেবে তুমি যদি আমায় হলুদ লাগাও আমি কিছু মনে করবো না
.
-আমার এত আজাইরা কাজ নাই।
.
-ভালো।আদনান তোমায় কি বলছিল তখন?
.
-আপনি নাহয় সেটা উনার থেকেই জেনে নিয়েন।আমার কিছু মনে নেই।ভুলে গেছি
.
-ওহ।ভুলে গেছো?তাহলে আমি যে হলুদ লাগালাম ওটাও ভুলে যাও
.
-হলুদ লাগানো আর…
.
-আর?
.
-কিছু না।বাদ দেন।ভুলে গেছি সব।
.
আহনাফ পকেট থেকে সানগ্লাস নিয়ে সেটা পরে মিনিকে দিবার কাছে দিয়ে গেলো নাচে জয়েন হতে
.
কাল রাতে তারা বাসায় ফিরে যাবে।বিয়ে শেষ হলেই
.
গায়ে হলুদটা শেষ হলো মণিতার চাচাতো বোনদের নাচের মাধ্যমে
দিবা কোনো কিছুতেই পার্টিসিপেট করেনি
বাসায় ফিরে শাড়ীটা পাল্টে একটা নীল রঙের থ্রি পিস পরে নিলো।মেহমানরা সব চলে গেছে
খালামণি ডিনারের জন্য ডাকছেন।তখন বিরিয়ানি মেহমানরা খেলেও বাসার কেউ খায়নি
এখন খেতে বসেছে সবাই।দিবা চেয়ারে টেনে বসতেই ওর পাশে আহনাফ এসে বসলো আজ
দিবা তো অবাক।আহনাফ জীবনেও ওর পাশে বসে না
হঠাৎ আজ বসলো।অথচ সামনের সবগুলো সিট খালি এখনও
দিবা চুপচাপ খাওয়াতে মন দিয়েছে
আহনাফ বাম হাতটা টেবিলের উপর রেখে বারবার দিবার হাতের সাথে লাগাচ্ছে
দিবা ভ্রু কুঁচকালো।এখনও বাকিরা খেতে আসেনি
দিবা বললো”কি সমস্যা বলুন তো।এরকম খোঁচাচ্ছেন কেন?”
.
-তাহলে পা দিয়ে খোঁচাবো?
.
দিবা চোখ কপালে তুলে ফেলো আহনাফের কথা শুনে।তারপর ঢোক গিলে হাতটা আরেকটু খিঁচিয়ে খাবার খাওয়া শুরু করলো
আহনাফ মুচকি হাসছে আর খাবার খাচ্ছে
দিবা জলদি জলদি খাবার শেষ করে ছুটে চলে গেলো রুমের দিকে
আসার সময় মিনির জন্য বিরিয়ানির মাংস বেছে নিয়ে আসলো
মিনিকে রুমেই খাওয়াবে।ওখানে আর যাবে না
-লোকটার হলোটা কি?এতদিন আমার দিকে চোখ তুলেও তাকাতো না
সারাদিন হবু হবু করত আর সন্ধ্যা থেকে কিনা তার সম্পূর্ন রুপটাই পাল্টে গেলো?
মিনি?তুই খেয়াল করেছিস?তোকেও তো আজ কোলে নিলো।জীবনে এই প্রথম!!!কিরকম ঘটকা লাগছে তাই না?
আমারও তাই মনে হয়
কিন্তু উনি এমন কেন করছেন?প্রেমে টেমে পড়ছেন নাকি?না তা কেন হবে।আমাকে তো উনি পছন্দই করেন না।পছন্দ করার প্রশ্নই উঠে না
তাহলে এসবের কারণ কি।আদনান ভাইয়াকে না করে দেওয়ায় উনি আবার আহনাফ ভাইয়াকে বলেননি তো আমার সাথে এই টাইপ মজা করার জন্যে?
কিন্তু আহনাফ ভাইয়া তো এমন করার মানুষ না।তাহলে কি নিজ থেকেই এসব করছেন?হলুদ লাগানো,ইচ্ছে করে হাতে হাত লাগানো,মিনিকে আদর করা, কোলে নেওয়া।আমার মাথা কাজ করছে না
.
-কিরে দিবা মাথা ধরে রেখেছিস কেন?চা খাবি?
.
-খাওয়া দরকার।কিন্তু এখন তো কাজ আর কাজ রান্নাঘরে
.
-এখন খালি দেখলাম।বানাবি?আমি অনেক টায়ার্ড। নাহলে আমি বানাতাম
.
-আচ্ছা বসো।আমি বানিয়ে আনছি
.
দিবা রান্নাঘরে গেলো চা বানাতে।ডাইনিংয়ে আদনান,আরিফ,খালামণি আর বাকিরা ডিনার করছে
দিবা তার আর মণিতার জন্য চা বসাচ্ছে
আহনাফ সোফায় বসা ছিলো।দূর থেকে দিবাকে দেখা যায় সে চায়ের পাতিলে কাপ মেপে পানি নিচ্ছে
আহনাফ বললো”আমার জন্য ও এক কাপ”
.
দিবা চমকে ঘাঁড় ঘুরিয়ে আহনাফকে দেখে আবারও মুখটা লুকিয়ে ফেললো।ভয় লাগে এখন,উনার এরকম হাবভাবের সাথে পরিচিত না বলে হয়ত
আগে আর কি কি করবেন কে জানে।এই নিয়ে খোলসা করে কথা বলতে হবে উনার সাথে
চলবে♥