সবটা অন্যরকম পর্ব-৫২ এবং শেষ পর্ব

0
5790

সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_৫২(শেষ পর্ব)
Writer-Afnan Lara
.
-মিশকা আপু আপনাকে একটা কথা বলতে চাই।আর সেটা হলো নাহিদ আপনাকে অনেক ভালোবাসে।হয়ত তার সাথে আপনার স্টেটাস মেলে না তার পরেও ভালোবাসাকে উঁচু করে দেখলেই বুঝতে পারবেন নাহিদের প্রয়োজনীয়তা আপনার জীবনে ঠিক কিরকম।
.
মিশকা চোখের কোণায় জমে থাকা পানি মুছে আহনাফের হাত ধরে বললো”তুমি আসলেই অন্যরকম একজন”
.
আহনাফ হেসে বললো”দিবা আমার সবটা জুড়ে আর তাই তো আমি অন্যরকম।ভালো থাকবেন।আমাকে আর এই বারে পাবেন না আপনি।তবে আমার বাসায় আপনার আর নাহিদের দাওয়াত থাকবে।দুজনে কিন্তু একসাথেই আসবেন। আজ আসি।”
.
আহনাফ বাসায় ফিরে এসেছে।রাত তখন নয়টা বাজে।আরিফ ব্যস্ত ডেকোরেশনের আলাপ নিয়ে।আর তিনদিন বাদেই আহনাফ দিবার বিয়ে।বিয়েটা পাকাপোক্ত করেছেন সাদাত স্যার।খোঁজ খবর নিয়ে যখন দেখলেন আহনাফ তার মেয়ের জন্য পারফেক্ট তখন নিজেই হ্যাঁ বলে দিয়েছেন।আহনাফ রুমে এসে গায়ের জ্যাকেটটা খুলে দিবাকে ফোন করলো। দিবা তখন খেতে বসেছিল।ফোন কানে ধরতেই আহনাফ বলে উঠলো”মেয়ে তুমি আমার কবে হবে?”
.
-“ঠিক তিনদিন পর ভাইয়া”
.
-ভাইয়া বলবা না একদম।বুকের ভেতর ধুক করে ওঠে আমার।মিনি কেমন আছে আর চিনি?
.
-“সকাল থেকে ভালোই ছিল হঠাৎ মারামারি শুরু করেছে।যাই হোক।খেয়েছেন?
.
-“হুম খাবো এখন।খালামণি তো বিয়েতে আসছেন না।ভিডিও কলে বিয়ে দেখবে। হাজার বলার পরেও রাজি করাতে পারলাম না আমরা।
.
-থাক।কিছু নেই আমাদের হাতে।বাদ দিন।আচ্ছা বাই!! বাবা আসছে এদিকে টাটা।
মিনি বললো”মিঁয়াও”
.
আহনাফ মুচকি হেসে ফোনটা রেখে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
বাকি তিনদিনে দুজনে এত ব্যস্ত ছিল যে তাদের দিনে এক মিনিটের বেশি কথা হয়নি আর।বিয়ের দিনটা এসেই গেলো।দিবাকে লাল শাড়ী পরিয়ে মাথায় লাল ঘোমটা দিয়ে রুমের এক কোণায় বসিয়ে রেখেছে ওর চাচিরা।দিবা ফোনটাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে।মা কখন ভিডিও কল দিবে সেটার অপেক্ষা এখন।দিবার চাচাতো বোন ছুটে এসে বললো”দুলাভাই এসে গেছে।চলো সবাই”
.
দিবা দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি মারলো।দূরে অনেকজনকে দেখা যায়।আহনাফের মুখ স্পষ্ট দেখছে না সে।শরবতের পর্ব শেষ করে আহনাফ গিয়ে স্টেজে বসেছে এবার
দিবা ফোন টিপে মাকে ভিডিও কল দিলো কিন্তু মা ধরলেন না। কেটে দিলেন।দিবা মন খারাপ করে বসে আছে তাই
একজন মহিলা ঢুকলেন ওর রুমে।পরনে কালো বোরকা
দিবার পাশে এসে বসলেন তিনি।দিবা তাকে দেখে চিনতে পারলো না
চুপচাপ মাকে আবারও ফোন করতে ব্যস্ত হয়ে গেলো সে।বাহিরে মানুষের সমাগম।এর ভেতর মা ফোন তুলছে না দিবার এক প্রকার অস্বস্তি লাগছে।টেনসন লাগছে।এসময়ে একটা মেয়ের পাশে তার মাকে থাকাটা জরুরি।বাস্তবে না থাকুক অন্তত কলেও তো কথা বলা উচিত মায়ের
মহিলাটি দিবার মাথায় হাত রাখলেন।দিবা চমকে তাকালো।সামনে বসে থাকা মহিলাটা এবার তার বোরকার নিকাব উঠালেন।তাকে দেখে দিবা অনেক খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরলো।তিনি ফিসফিস করে বললেন”সাউন্ড করবি না
তোর বাবা জানতে পারলে আমাকে আর খুলনায় ফিরতে দেবে না”
.
-বাবার জানা উচিত মা!
.
-না উচিত না।আমি চাই না সাদাত আমাকে দেখুক।
.
সেসময়ে সাদাত স্যার রুমে এসে বললেন”দিবা কিছু খাবে??তোমার কিন্তু অফিসিয়ালি খাওয়ার দেরি আছে।খেতে খেতে বিকাল হয়ে যাবে।এখনই কিছু খেয়ে নাও।আর উনি কে?”
.
মৌসুমী নিকাব টেনে চুপ করে থাকলেন।দিবা মিথ্যা বলার সাহস পাচ্ছে না শুধু তোতলাচ্ছে।বাবা আরেক কাজে চলে গেলেন ততক্ষণে।মৌসুমী চোখ বন্ধ করে রেখেছিল এতক্ষণ
দিবা তার ঘাঁড়ে হাত রেখে বললো”বাবার সাথে একবার দেখা করো মা।ভালো লাগবে”
.
-পারবো না।যাই আহনাফকে দেখে আসি।মৌ আপা,
আরিফ সবার সাথেও তো দেখা করতে হবে আমায়।”
.
মা ছুটে চলে গেলেন
দিবা খুশিতে শেষ হয়ে যাচ্ছে।মিনির ছোট থেকে অভ্যাস মায়ের শাড়ী,ওড়নার কোণা মুখে পুরে তার পিছু পিছু সবখানে যাওয়ার তো এখন সে ঠিক চিনেছে এটা দিবার মা তাই সে বোরকার কোণা মুখে পুরে তার পিছু পিছু গেলো
চিনিও তার দেখা দেখি গেলো।দিবা একা বসে আছে।আহনাফ ফোন বের করে দিবাকে মেসেজে পাপ্পি ইমুজি পাঠাচ্ছে শুধু।দিবা রাগের ইমুজি দিয়ে বললো”সমস্যা কি হ্যাঁ?চুপচাপ জামাইর মতন বসে থাকুন।শাশুড়ি আসছে আপনার”
.
-হোয়াট??!!
.
আহনাফ মুখ তুলে দেখলো বেরকা পরা একজন এসে ওকে মিষ্টি খাওয়ানোর জন্য চামচ এগিয়ে ধরে রেখেছেন।আহনাফ মুচকি হেসে তাকে জড়িয়ে ধরলো।সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।আহনাফ বললো”খালামণি আই মিসড্ ইউ সো মাচ”
.
-আরে গাধা আস্তে কথা বল।আমারে ডুবাবি নাকি?
.
-ওহ আচ্ছা ঠিক আছে।
.
আহনাফ ঠিক হয়ে বসে চামচের মিষ্টিটা খেয়ে নিলো চুপচাপ।
.
খালামণি ব্রু কুঁচকে বললেন”তোর আম্মু কই?”
.
-সোফার রুমে হয়ত।গিয়ে দেখো।
.
খালামণি মাথা নাড়িয়ে চলে গেলেন।সোফায় মৌ আপা বসে একজনের সাথে কথা বলছিল।মৌসুমী ছুটে এসে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো
গায়ের গন্ধতেই চিনে ফেলেছে মৌ আপা।তিনিও আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে বললেন”আমার মৌসু রে!!!”
.
সাদাত স্যার দূর থেকে সবটা দেখছেন
মৌসুমী নিকাব সরিয়ে মুখ দেখালো আপাকে।সাদাত চশমা ঠিক করে মুচকি হাসলো।
মৌসুমী বোনের হাতই ছাড়ছে না।এতগুলো বছর পর সে তার বোনকে দেখেছে।এর চেয়ে খুশির আর কিছু হতে পারে না।
মৌসুমী আবার নিকাব নামিয়ে বললো”আচ্ছা আমি গিয়ে দিবাকে দেখে আসি।ও নাকি সকাল থেকে কিছু খায়নি”
.
-ঠিক আছে যা
.
মৌসুমী সোজা হাঁটা ধরলো দিবার রুমের দিকে
ওর রুমের যাওয়ার আগেই সাদাত হাত ধরে ফেললো ওর।টেনে নিয়ে গেলো নিজের রুমে।
.
-“ছাড়ো!!”
.
-ছাড়বো না।এতগুলো বছর পর এসেছো আগে আমার সামনে না দাঁড়িয়ে দুনিয়ার সব মানুষের সাথে পরিচিত হচ্ছো।
.
-তুমি আমার কেউ না।তোমাকে ঘৃনা করি
.
-তাহলে মুখের দিকে তাকিয়ে বলছো না কেন?আমার দিকে তাকাও
.
-না
.
সাদাত স্যার মুখটা মলিন করে হাঁটু ভেঙ্গে মৌসুমীর সামনে বসে গেলেন।উনার হাতদুটো ধরে সেটাতে মাথা ঠেকিয়ে বললেন”মাফ করা যায় না??আমাকে একবার মাফ করে দাও। আমি তোমায় সে সব ফিরিয়ে দেবো যা তোমায় অনেকবছর আগে দেওয়া উচিত ছিল।”মা নিজে তোমার থেকে ক্ষমা চাইবে বলছে”
.
মৌসুমী চোখ মুছে বললো”ক্ষমা চাইছো!!করে দিবো কিন্তু আমার এতবছরের আঘাতে কি সেটা মলমের কাজ করবে?ঐ আঘাত শুকিয়ে ঝরে গেছে।এখন শুধু দাগ আছে।এই দাগ কোনোদিন যাবে না।আমার আলাদা সংসার আছে। বৈধ সংসার।তোমাকে আমার যেদিন সব চেয়ে বেশি দরকার ছিল সেদিন তুমি আমায় বের করে দিয়েছিলে বাসা থেকে ঐরকম জঘন্য কাজের ক্ষমা আমি দিয়েও দিতে পারবো না তোমায়।
আমি চাই না তুমি আমার সাথে কথা বলো।
আসি!!!
.
মৌসুমী বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
মিনি আহনাফের সাথে স্টেজে বসে আছে চুপচাপ।আহনাফ হাঁচি দিয়ে নাক মুছে বললো”মিনি যাও চিনিকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা করো। ভালো বেড়াল আমার
আমার বিয়ের দিন আমায় অসুস্থ করে দিও না।ভুলে ঔষুধ খাইনি। যাও তোমার বইনের কাছে যাও নয়তো তোমার আম্মার কাছে যাও”
—–
সাদাত স্যারের ফোন বাজছে। উনাকে এক লোক জানালো আহনাফ আগে বারে চাকরি করতো। তার কাছে প্রুভ আছে
সাদাত স্যার খবরটা শুনে উঠে সোজা গেলেন দিবার রুমে সেখানে মৌসুমী ও ছিল। সাদাত স্যার এগিয়ে এসে বললেন” আহনাফ বারে চাকরি করতো এটা জানতে তুমি।?”
দিবা ঘোমটা পিছিয়ে নিয়ে বললো” হ্যাঁ ”
.
-বারে চাকরি করা একটা অনৈতিক কাজ।সেখানের পরিবেশ অশ্লীল তাহলে সেখানে চাকরি করা মানে কি বুঝছো তুমি??”
.
দিবা বিছানা থেকে নেমে বললো’ দা-বটি সবার ঘরেই আছে তার মানে কি সবাই ডাকাত???কে ভালো আর কে খারাপ তা নির্ভর করে নিজের পার্সোনালিটি নিয়ে কে কতটা লয়াল!!!
আহনাফ সেই পুরুষ সে আমাকে পাওয়ার জন্য মোটা অঙ্কের বেতনের ওই জবটা ছেড়ে এখন এমন একটা জব নিয়েছে যেটাতে কিনা তাকে হিসেব করে চলতে হবে প্রতি পদে পদে
সে যদি এতই খারাপ হতো তাহলে সে কেন বারের চাকরি ছাড়লো???
সে যদি এতই খারাপ হয় তাহলে তার পাশের রুমে এতদিন একটা মেয়ে থাকার পরও কেন সে তার ফায়দা লুটলো না। আমি চাইনা আপনার অতীতকে টেনে এনে আহনাফকে ভালো প্রমাণ করতে।আহনাফ কেমন সেটা আর কেউ না জানুক আমি ভালো জানি।
.
সাদাত স্যার দিবার পাশে এসে বসলেন চুপচাপ।দিবার হাত ধরে বললেন”আরেকজনের কথা শুনে আমি আমার জীবন নষ্ট করেছিলাম অনেক আগে এখন আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করতে চাই না। যে তাকে ভালোবাসে তার সাথেই আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দেবো
রইলো কথা অতীতের। সেবার একদিকে আমার মা ছিল আর অন্যদিকে মৌসুমী ছিল। দুজনকে অনেক ভালোবাসি আমি আর তাই সেদিন মায়ের কথা রাখতে মৌসুমিকে চলে যেতে বলেছিলাম ঠিক কিন্তু এরপর আমি প্রতিজ্ঞা নিয়েছিলাম আমি আর বিয়ে করব না।
যদি মা জানতো দিবার কথা তাহলে হয়তো মত পাল্টাতেন মৌসুমী কিছুই জানায়নি আমায়। এর কারণে ওকে দোষ দিয়েছিলাম কিন্তু এখন মনে হয় ওর জায়গায় ও ঠিক ছিল। কোন মেয়েকে তার ভালোবাসার মানুষ ধোকা দিলে তার মনে কি চলে আমি বুঝতে পারি
আমার প্রতি মৌসুমীর যে অভিমান জমা আছে সেটা সঠিক
আই এপ্রিসিয়েট দ্যাট।
ওকে ভালোবাসতাম। এখনো বাসি। আমার জীবনে আর কেউ আসবে কখনো
আসলে কি জানো দিবা!!কিছু কিছু মানুষ আমাদের লাইফে আসে চিরজীবনের জন্য”
——–
নিরিবিলিতে বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়ে গেল। দিবা তার জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দিনে মা-বাবাকে কাছে পেলো
তাদের একত্রে পাশে পেয়ে আরও সুন্দর হয়েছে দিনটা।
গাড়ীতে মিনি আর চিনিকে কোলে নিয়ে আরিফ বসেছে দিবার পাশে
দিবার বাম পাশে আহনাফ বসেছে। দিবার হাতে হাত রেখে সে বললো” কান্না না করে মিটমিট করে হাসছো কেন??”
.
-“কারণ জন্মের পর এই প্রথম আমি আমার মা বাবা দুজনকেই একসাথে দেখলাম”
——
বাসায় আসার পর দিবা আর আহনাফকে আলাদা করে দিয়েছে সবাই
দুজন দুই রুমে। আরিফ মনিতা আর আরিশা মিলে বাসর ঘর সাজাচ্ছে
দিবা তার আগে রুমের বারান্দায় এসে ফুলগুলোকে দেখছে
মা খালামণির রুমে নানা-নানিকে ধরে কান্নাকাটি করছেন অনেকদিন পর দেখা হয়েছে তাই
রাত নয়টার দিকে মণিতা এসে দিবাকে আহনাফের রুমে নিয়ে গেলো। আহনাফ সোফায় বসে ছিল তখন
দিবা বিছানায় বসে পুরো রুমটাতে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়েছে। লাল গোলাপ আর কিছু বেলীফুল দিয়ে সাজানো সিম্পল এর মধ্যে গর্জিয়াস ডেকোরেশন করা হয়েছে মনিতা দিবাকে ফিসফিস করে বলে কত কি শিখিয়ে দিচ্ছে
আরিশা কান পেতে শুনছিল সব। মনিতা ওর কান টেনে ধরে বাইরে নিয়ে গিয়ে বললো”তোমার এই বাড়িতে বউ হয়ে আসতে অনেক দেরি। আগে ভাই আমার বড় হোক তারপর তোমায় বউ করে আনবো
তা তোমার কোন বোন- টোন আছে? আমার বড় ভাই আদনানের জন্য।”
.
-“নীল রঙের পাঞ্জাবি পরা লোকটা??”
.
-“চেনো ওকে?”
.
-” উনি তো আমার বেস্টফ্রেন্ডকে রিকুয়েস্ট দিয়েছিল হাই-হ্যালো চলছে।তার ব্যাপারে আমার বান্ধবী আমায় সব বলছে রীতিমতো।
.
-“তাই নাকি?? তলে তলে এতো চলে?
——
নাহিদ আহনাফকে রুমে ঢুকিয়ে বাইরে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে।দিবা ফুল ছুঁয়ে দেখছিলো হঠাৎ আহনাফকে দেখে চমকে উঠে নড়েচড়ে বসলো সে
আহনাফ ওর দিকে না তাকিয়ে দরজাটা ভেতর থেকে আটকালো।
দিবা মাথা উঁচু করে বললো” বাহিরে দিয়ে তো আটকে দিয়েছে ভাইয়া”
.
– “আরে না ওদের কোন বিশ্বাস নাই। আবার দরজা খুলে দিলে আমার মান-ইজ্জতের একটা অক্ষর ও আর অবশিষ্ট থাকবে না।”
.
দিবা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলেছে।উপর থেকে ঝুলানো বেলি ফুলের মালা ছিঁড়ে সেটা হাতে নিয়ে আহনাফ এগিয়ে আসলো
দিবার সামনে বসে ওর মাথা থেকে ঘোমটা সরিয়ে খোঁপায় ঘুরিয়ে মালাটা আটকে দিল সে।
দিবা এখনো নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।আহনাফ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো এক দৃষ্টিতে তারপর মুখটা এগিয়ে এনে ওর ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াতে নিতেই হাঁচি এসে গেলো তার।নাক ডলে বললো”মিনি কোথায়?হাইচ্ছু!”
.
দিবা কপাল কুঁচকে এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো”এখানে তো নেই”
.
-হা হা হাইচ্ছু!না ও এখানেই আছে।আই এম সিউর
.
দিবা একটু সরে বসলো। ওর পিছনেও নেই মিনি
আহনাফ নাক ডলতে ডলতে হঠাৎ দিবাকে জড়িয়ে ধরে বললো”বাদ দাও।এখন আমাদের ভালোবাসার প্রহর শুরু হোক।”
.
আহনাফ দিবাকে শুইয়ে দিয়ে ওর থুতনি ধরে ঠোঁট ছোঁয়াতে নিতেই ওমনি উপর থেকে মিনি ধপাস করে আহনাফের মাথায় গিয়ে পড়লো।আহনাফ আর দিবা দুজনেই চমকে উঠে বসে পড়েছে।মিনি অসহায়ের মতন তাকিয়ে আছে
.
-“মিঁয়াও”
.
বাসর ঘরে শিক ঝুলিয়ে তার উপর ফুল দিয়ে গোল করে সাজানো হয়েছিল।ঐ গোলাকার আকৃতির শিকের মূল বিন্দুতে যে গোল করে ছোট জায়গা থাকে মিনি তাতে উঠে বসে ছিল এতক্ষণ। পা পিছলে হঠাৎ সঠিক সময়ে ভুল জায়গায় ধপাস করে পড়লো সে।আহনাফ নাক ডলে উঠে দাঁড়িয়ে বললো”মিনি আমার বাসর ঘরে থাকবে না তা মানতে পারছিলাম না।সন্দেহ সত্যি হয়ে দাঁড়ালো
ওর জন্য বউ এনেছিলাম কি জন্যে??ওর আর চিনির বিয়ে দিয়েছিলাম কি জন্য? আমায় বাসরঘরে এসে ডিস্টার্ব করার জন্যে??”
.
দিবা কোমড়ে হাত দিয়ে বললো” আপনি আপনার আজাইরা বিড়ালের জন্য মেয়ে নয় বরং ছেলে বিড়াল ধরে এনেছিলেন। ”
.
আহনাফ মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে বললো “তার মানে মিনির সাথে চিনি না বরং অন্য একটা ছেলে বেড়ালের বিয়ে হয়েছিল?”
.
-জ্বি!! বেচারা তাই তো বিয়ের পরদিন থেকে চিনি নামক ছেলে বিড়ালটাকে দেখলেই উষ্টা দিতো।
.
-“আহারে মিনির জীবন কাহিনী অসমাপ্ত হইয়া গেল রে কিন্তু আমাদের গল্প শেষ হইয়া গেলো। ”
.
-মিঁয়াও
.
-হা হা হা হাইচ্চু!!!
———————সমাপ্ত—————–