#সাইকো লাভার❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ
#পর্ব- ৯
শুভ্রকে এভাবে দেখে রোজ ভয়ে। বিছানার এক কোনে গুটিশুটি মেরে বসে আছে। শুভ্র দাতে দাত চেপে বললো।”
—-” এখন এভাবে বসে আছিস কেন? এখন থেকে আমি যা বলবো তুই সেটাই করবি,
রোজ ভয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। সেটা দেখে শুভ্রর হুশ এলো। যে ও এতক্ষণ কি করছিলো। এটা ভেবে নিজের উপর নিজের রাগ লাগছে। শুভ্র নিজেকে সামলে দৌড়ে রোজের কাছে এলো। এসেই একটানে রোজকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে বললো!”
—-” আই এম সরি রেড রোজ। আসলে আমি বুঝতে পারিনি। প্লিজ তুমি এভাবে কেঁদো না। আমার রাগটা বেশী তাই নিজেকে সামলাতে পারিনি। প্লিজ কান্না বন্ধ করো প্লিজ,
রোজ তবুও কেঁদে যাচ্ছে। শুভ্র এবার শান্ত গলায় বললো।”
—-” রোজ কান্না থামাও প্লিজ। আমি বললাম তো আমি এমন করতে চাইনি। রাগটা একটু বেশী হয়ে গিয়েছিলো,
রোজ এখনো কাঁদছে। এবার শুভ্র আবার রেগে ধমক দিয়ে বললো!”
—-” ওই তোকে কি বললাম? বললাম না কান্না থামাতে? তবুও কেন কান্না করছিস? আমার সামনে তুই কান্না করবি না ওকে? আই হেট টেয়ারস, সো স্টপ ক্রাই ড্যাম ইট,
ধমক খেয়ে রোজ চুপ হয়ে গেলো। শুভ্র রাগে ফোস, ফোস করছে। কেন ওর এত রাগ লাগছে ও জানেনা? হঠাৎ করেই বিছানার পাশে থাকা ল্যাম্পপোস্টটা আছাড় মেরে ফেলে দিলো। এরপর হনহন করে বেরিয়ে গেলো। শুভ্র যেতেই রোজ বলে উঠলো।”
—-” ওনার মাথায় কি প্রবলেম আছে? কেমন পাগলের মতো বিহেভিয়ার,
রোজ বিছানা থেকে নেমে। ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। এরপর এসে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। শুভ্র ফিরলো কি ফিরলো না। এটা নিয়ে রোজ মাথা ঘামালো না। রাত প্রায় ২টার দিকে শুভ্র ফিরে এলো। চুলগুলো উস্কো, খুস্কো। শার্টে রক্ত লেগে আছে। রোজকে এভাবে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে দেখে। শুভ্র অনেক কষ্ট পেলো। তবুও রোজ ঘুমাচ্ছে দেখে মুচকি হেসে নিজে ফ্রেশ হয়ে এসে। বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো!”
সকালে রোজের ঘুম ভাঙতে। রোজ কোনদিকে খেয়াল না দিয়ে। ফ্রেশ হয়ে একটা চুরিদার পড়ে নিচে গেলো। গিয়ে দেখলো শুভ্র আগেই বসে আছে। রোজকে চুরিদার পড়া দেখে রাগ লাগলো। তবুও রাগটা সাইডে রেখে হেসেই বললো,
—-” শাড়ি পড়োনি যে?”
রোজ এক বস্তা বিরক্তি নিয়ে বললো।”
—-” ভার্সিটিতে কি আমি শাড়ি পড়ে যাবো?”
শুভ্র হতাশ কন্ঠে বললো,
—-” সেটা এমনি বললেও পারো!”
_______________________
রোজ রাগী সুরে বললো,
—-” আপনার সাথে কথা বলতেও আমার বিরক্ত লাগে।”
বলে হাটা দিতেই শুভ্র বললো,
—-” আরে ব্রেকফাস্ট করবে না?”
রোজ পিছন ফিরে বললো!”
—-” ক্যান্টিন থেকে খেয়ে নেবো,
শুভ্র উঠে গিয়ে রোজকে এনে টেবিলে বসিয়ে দিলো। এরপর এক প্রকার জোড় করে খাওয়ালো। আর খাওয়াতে, খাওয়াতে বললো।”
—-” কোন কথা সহজ ভাবে বোঝোনা তাই না জান?”
রোজ শুভ্রর এমন শীতল ভয়েজ শুনে। চুপচাপ খেয়ে নিলো কথা বাড়ালো না। খাওয়া শেষে শুভ্র বললো,
—-” গাড়িতে গিয়ে বসো, আমি আসছি!”
রোজ মুখ ফসকে বললো,
—-” আমি একা যেতে পারবো।”
শুভ্র হাত দিয়ে টেবিলে বাড়ি দিয়ে বললো,
—-” গাড়িতে বসতে বলেছি!”
রোজ দৌড়ে গিয়ে গাড়িতে বসলো। শুভ্র সবকিছু ঠিক করে রেখে। গাড়ির চাবি নিয়ে এসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। এরপর রোজকে ভার্সিটিতে পৌছে দিলো। রোজ নেমে যেতে গেলেই শুভ্র বললো,
—-” আমার গার্ডরা তোমার উপর নজর রাখবে। তাই কোন ছেলের সাথে কথা বলতে যেয়ো না। তাহলে আমি কি করবো নিজেও জানিনা।”
বলে রোজের কপালে চুমু দিয়ে চলে গেলো। আর রোজ বোকার মতো দাড়িয়ে আছে। রোজকে দেখে মিম দৌড়ে এলো। দুজনে মিলে অনেক গল্প করলো। এরপর ক্লাস টাইমে ক্লাসে গেলো। ক্লাস শেষ করে বাইরে আসতেই দেখলো শুভ্র। গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। আর সব মেয়েরা শুভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। রোজ ধাপধুপ পা ফেলে এগিয়ে এসে বললো,
—-” আপনি এখানে কেন?”
শুভ্র গাড়ির দরজা খুলে বললো!”
—-” তোমাকে নিতে এসেছি,
রোজ চুপচাপ উঠে বসলো। শুভ্র গাড়ি স্টার্ট দিলো। দুজনে বাড়ি গিয়ে পৌছাতেই শুভ্র বললো।”
—-” রুমে গিয়ে রেডি হয়ে নাও,
রোজ অবাক হয়ে বললো!”
—-” কেন?”
শুভ্র সুট খুলে বললো,
—-” আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি।”
রোজ ব্যাগটা রেখে রাগী ভাবে বললো,
—-” আমি আপনার সাথে হানিমুনে যাবো না!”
শুভ্র শকড হয়ে বলে উঠলো,
—-” তোমাকে এটা কে বললো? যে আমরা হানিমুনে যাচ্ছি?”
রোজ আমতা, আমতা করে বললো।”
—-” তাহলে কেন যাবো?”
শুভ্র হেসে বললো,
—-” আমার মিটিং আছে তাই। আর আমি তোমাকে রেখে যেতে চাই না!”
রোজ এবার লজ্জায় পড়ে গেলো। শুভ্র সেটা বুঝতে পেরে ঠোট চেপে হেসে বললো,
—-” তবে তুমি চাইলে হানিমুন হতে পারে।”
রোজ রেগে উপরে চলে গেলো। গিয়ে শুভ্রকে বকতে, বকতে রেডি হলো। শুভ্রও রেডি হয়ে নিলো। দুজনেই নেভি ব্লু কালার ড্রেস পড়েছে। তবে শুভ্র নেভি ব্লুর সাথে হোয়াইট প্যান্ট পড়েছে। দুজনে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো। রোজ বাইরে এসে বললো,
—-” ড্রেস নেবো না?”
শুভ্র তাচ্ছিল্য হেসে বললো!”
—-” আমরা হানিমুনে যাচ্ছি না। তুমি তো আমাকে স্বামী বলে মানো না। আগামীকাল মিটিং শেষ করে চলে আসবো,
রোজ চুপ করে রইলো। শুভ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। দেখতে, দেখতে ওরা কক্সবাজার গিয়ে পৌছালো। আর সত্যিই মিটিং শেষ করে পরেরদিন চলে এলো। এভাবে ১মাস কেটে গিয়েছে। রোজ এখনো শুভ্রকে মেনে নেয়নি। এতে শুভ্রর অনেক কষ্ট হয়। কিন্তুু কখনো রোজকে জোড় করে না। কিন্তুু আজকে কোন কারনে খুব রেগে আছে।”
_______________________
এক গাদা রাগ নিয়ে শুভ্র বাড়ি এলো। বাড়ি এসে রুমে বসে ভাবতে লাগলো অফিসের কথা। অফিসে শুভ্র কেবিনে বসে ফাইল দেখছে। এরমাঝে সেখানে সাফিয়া এসে হাজির হলো। সাফিয়াকে দেখে শুভ্র অবাক হয়ে বললো,
—-” সাফিয়া তুমি?”
সাফিয়া হুট করে এসে। শুভ্রর কোলে বসে পড়লো। শুভ্র এক ঝটকায় ওকে সরিয়ে বললো!”
—-” হোয়াট দ্যা হেল সাফিয়া? এসব কি করছো তুমি?”
সাফিয়া শুভ্রর সামনে গিয়ে বললো,
—-” কামঅন শুভ্র এত রেগে যাচ্ছো কেন? তোমার তো আরো খুশি হওয়ার কথা তাই না? রোজ আজ পর্যন্ত তোমাকে কি দিয়েছে?”
শুভ্র অবাক হয়ে বললো।”
—-” মানে?”
সাফিয়া শয়তানি হেসে বললো,
—-” আমি সব জানি শুভ্র। রোজ আমাকে সব বলেছে!”
ব্যাস শুভ্র রেগে বেরিয়ে এলো। এদিকে রোজ শুভ্রকে দেখে বললো,
—-” আজ এত তাড়াতাড়ি এলেন?”
শুভ্র কিছু না বলেই। রোজকে হ্যাচকা টান মেরে নিজের কাছে এনে। রোজের ঠোটে ঠোট ছুয়ে দিলো। আর রোজের কোমরও চেপে ধরলো। রোজ ভীষণ রেগে শুভ্রকে ছাড়িয়ে। শুভ্রর গালে ঠাস করে থাপ্পর মেরে বললো।”
—-” জানোয়ার কতবার বলবো? তুই আমাকে টাচ করবি না। তোকে আমার অসহ্য লাগে। মেয়েদের সম্মান করতে শিখিসনি? নাকি তোর মা তোকে শেখায়নি?”
শুভ্র চিৎকার করে বললো,
—-” রোজজজ!”
রোজ কেঁপে উঠলো। শুভ্র হনহন করে ছাদে চলে গেলো। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। যেই মানুষটা কান্না ঘৃনা করে আজ সে কাঁদছে। শুভ্র ছাদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। রোজও এখনো একবার আসেনি। আকাশে বিশাল বড় চাঁদ উঠেছে। আর চাঁদকে ঘিরে হাজারও তারার মেলা। শুভ্র খালি গলায় গাইতে শুরু করলো,
?আয়রে খোকন আয়, আয়রে সোনা?
?আয়রে জাদু আয়, আয়রে মনা?
?এমন আদর আর কেউ করে না?
?এমন মধুর সুরে আর কেউ ডাকে না?
রোজ ছাদে এসেছিলো। শুভ্র কি করে সেটা দেখতে। এসে শুভ্রর গান শুনতে পেলো। যে গানে লুকিয়ে আছে হাজারও যর্ন্তনা।”
?মা শুধু মা?
?তোমার তুলনা এই পৃথিবীতে জানি আর হবে না?
?মা শুধু মা?
?তোমার তুলনা এই পৃথিবীতে জানি আর হবে না?
শুভ্র এতটুকু গেয়ে। হাটু ভেঙে বসে পড়ে। মা বলে একটা চিৎকার করলো। রোজের এখন গিলটি ফিল হচ্ছে। তবে সেটা প্রকাশ করলো না। শুভ্র নিজেই নিচে চলে গেলো। আরো কিছুদিন পর রাতে। শুভ্র মদ খেয়ে রুমে এলো। রোজ বিছানায় শুয়ে ছিলো। রোজকে দেখে শুভ্র এগিয়ে এলো। আসলে শুভ্রর নিজের উপর কন্ট্রোল নেই। শুভ্রকে এগিয়ে আসতে দেখেই। রোজ চট করে বিছানা থেকে নেমে বললো,
—-” একি আপনি এগিয়ে আসছেন কেন?”
শুভ্র ঢুলতে, ঢুলতে বললো!”
—-” আমি আমার অধিকার চাই,
রোজ ঢোক গিলে বললো।”
—-” মানে?”
শুভ্র রোজের আরেকটু কাছে এসে বললো,
—-” আমি আজই তোমাকে চাই!”
রোজ অবস্থা বেগতিক দেখে। টি টেবিল থেকে ফল কাটা ছুড়ি হাতে নিয়ে বললো,
—-” আমার থেকে দুরে থাকুন। নয়তো এটা আপনার পেটে ঢুকিয়ে দেবো।”
শুভ্র এগিয়ে আসতে, আসতে বললো,
—-” নো বেইব তুমি পারবে না!”
রোজ সিরিয়াস মুডে বললো,
—-” আমি কিন্তুু সত্যি বলছি শুভ্র।”
শুভ্র হুট করে এগিয়ে এসে। রোজের পেটে হাত রাখলো। রোজও কিছু না ভেবেই। ছুড়িটা শুভ্রর পেটে ঢুকিয়ে দিতে চাইলো। কিন্তুু রোজ ভাবতে পারেনি। ছুড়িটাতে এতটা ধার ছিলো। সাথে, সাথে ছুড়ি শুভ্রর পেটে ঢুকে গেলো,
—-” আহহহহহ!”
বলে শুভ্র পেটে হাত দিলো। পেটে এখনো ছুড়িটা বিধে আছে। রোজ রোবট হয়ে মুখে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। শুভ্র নিজেই ছুড়িটা টেনে বের করলো। বের করার সময়ও চিৎকার করে উঠলো। এরপর ঠাস করে নিচে পড়ে গেলো। পেট থেকে গলগল করে রক্ত পড়ছে। আজও শুভ্রর মুখে হাসি। হাসতে, হাসতেই বললো,
—-” আই লাভ ইউ রেড রোজ।”
রোজের গাল বেয়ে পানি পড়ছে। শুভ্র কতক্ষণ পর চোখ বন্ধ করে নিলো। রোজ ধপ করে বসে পড়ে চেঁচিয়ে বললো,
—-” শুভ্রওওওওও!”
#চলবে…
[রি-চেইক করিনি তাই ভুল এুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]