সাইকো লাভার পর্ব- ১৬ (অতিরিক্ত)

0
3334

#সাইকো লাভার❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ১৬ (অতিরিক্ত)

রোজ হনহন করে গাড়ি থেকে নেমে এলো। আবিরের গাড়ির গ্লাস কালো হওয়ায় আবিরকে দেখেনি। তাই এসেই জোড়ে, জোড়ে গ্লাসে বারি দিলো। আবিরের কানের পর্দা মনে হচ্ছে ফেটে যাবে। আবির তাড়াতাড়ি গাড়ির গ্লাস নামালো। চোখে কালো সাইন গ্লাস আর মুখে কালো মাস্ক। রোজ রাতে ড্রিংক করে থাকায়। এখন আবিরকে দেখে ওর আবছা, আবছা মনে পড়লো। আবির গাড়ি থেকে নেমে বললো।”

—-” কি প্রবলেম হ্যা?”

রোজ ভ্রু কুঁচকে বললো,

—-” প্রবলেম আমার নাকি তোমার? এই তুমি ক্লাবের সেই ছেলেটা না?”

আবির কপাল কুঁচকে বললো!”

—-” অপরিচিত কাউকে তুমি বলতে নেই জানো না?

রোজ তাচ্ছিল্য হেসে বললো,

—-” সবাই জানে আমি বেয়াদব। তাই বেয়াদবিটা আমি করে থাকি। বাট তুমিও তো তুমি করেই বলছো?”

আবির মিনমিন করে বললো।”

—-” আমি তোমার বড় তাই,

রোজ ভেংচি কেটে বললো!”

—-” হু হ্যা বুড়ো আপনি,

আবির তেড়ে গিয়ে বললো!”

—-” কি বললে তুমি?”

রোজ রেগে বলে উঠলো।”

—-” আপনার এই খাটারা গাড়ি সরান আমি যাবো,

আবির চোখ ছোট, ছোট করে বললো!”

—-” এই মেয়ে খাটারা বলছো কেন? তুমি জানো এই গাড়ির দাম কত?”

রোজ মুখ বাঁকিয়ে বললো,

—-” জানতেও চাই না।”

এভাবে বেশ কিছু সময় ঝগড়া করলো দুজন। রোজের হঠাৎ মনে হলো আবিরের ভয়েজ চেনা। আবির ততক্ষণে গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দিলো। রোজ আর আবিরকে পেলো না। রোজও গাড়ি নিয়ে চলে গেলো,

২দিন পর, শান্ত গ্রাম থেকে শহরে যাচ্ছে। তখনি বিজলি শান্তর সামনে এসে বললো!”

—-” কই যাইবার লাগছোস?”

শান্ত বিরক্ত নিয়ে বললো,

—-” শহরে যাচ্ছি কেন?”

বিজলি শান্তকে ঘুরে, ঘুরে দেখে বললো।”

—-” ওমা এডি কোন ভাষা কস?”

শান্ত বিজলির দিকে রাগী ভাবে তাকিয়ে বললো,

—-” সেটা জেনে তুই কি করবি?”

বিজলি খেয়াল করলো শান্তর শার্টের বোতাম সামনের দুটো খোলা। আর শান্তর বুকে একটা দাগ। সেটা দেখে বিজলি ভ্রু কুঁচকে বললো!”

—-” এইডা কিসের দাগ?”

শান্ত শার্টের বোতাম লাগিয়ে বললো,

—-” এটা বিশ্বাসঘাতকের দেয়া দাগ। আর তাকে শাস্তি দিতেই আমি যাচ্ছি। কারন তার অনেক শাস্তি পাওনা আছে।”

বলে হনহন করে চলে গেলো। বিজলি বোকার মতো দাড়িয়ে আছে। ওর মাথায় কিছুই ঢুকছে না। বিজলি নিজেই বিরবির করে বললো,

—-” ওর লগে কেডা বেইমানি করছে? এগুলা কি কইয়া গেলো? আর আইজকা কেমন শহরের মানুষগো মত কতা কইলো। এডা কোন শান্তরে দেখলাম মই?”

__________________

রোজ বসে টিভি দেখছে। আজকে ওর বাইরে যেতে ইচ্ছে করছে না। কেন ইচ্ছে করছে না সেটা ও নিজেও জানে না। এরমাঝে মেঘ রোজের কাছে এলো। এসে রোজের শার্ট ধরে টানছে। রোজ বুঝলো মেঘ কোলে উঠতে চাইছে। তাই মেঘকে কোলে নিয়েই টিভি দেখছে। সবাই রোজকে বাড়ি দেখে খুশি হলো। চ্যানেল পাল্টাতে, পাল্টাতে একটা চ্যানেলে চোখ আটকে গেলো। আর সেটা হচ্ছে নিউজ চ্যানেল। নিউজে দেখাচ্ছে ৪জন ছেলে খুন হয়েছে। আর ৪জনকে দেখে রোজ আরো চমকে গেলো। এক প্রকার শকড হয়ে গেলো রোজ। এরা সেই ছেলেগুলো যারা রোজকে টাচ করেছিলো। আর তার জন্য রোজ ওদের মেরেছিলোও। কিন্তুু রোজের বোধগম্য হচ্ছে না। যে ওদের এত বাজে ভাবে কে মারতে পারে? নিউজে এটাও বললো যে ২বছর আগে। ঠিক এভাবেই মাঝে, মাঝে মৃত লাশ পাওয়া যেতো। এদের মারার স্টাইল আর ২বছর আগের লাশগুলোর মারার স্টাইল সেম। তাহলে কি সেই অজানা মাফিয়া ফিরে এসেছে? রোজের হাত থেকে রিমোট পড়ে গেলো। মেঘকে সোফায় বসিয়ে রোজ দাড়িয়ে গেলো। রোজ মাফিয়া বলতে শুধু শুভ্রকেই চেনে। তাহলে কি শুভ্র ফিরে এসেছে? না, না এটা কি করে হতে পারে? ২বছর পর শুভ্র কোথাথেকে আসবে? কিন্তুু আমিও তো জানি যে এভাবে শুভ্র খুন করে। শুভ্র তো জানতোও না যে আমিও জেনে গিয়েছিলাম ও মাফিয়া। আমি নিজের চোখে ওকে খুন করতে দেখেছিলাম। যেদিন ও মরলো তার আগের দিন রাতে আমি সবটা জেনেছিলাম। বাট ও কি করে ফিরবে? আর যদি এটা শুভ্র না হয় তো কে? এসব ভেবে রোজ পাগল হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। রোজ দৌড়ে রুমে চলে গেলো!”

রাত ১১টা বাজে আবির বের হচ্ছে। তখন আবিরের বাবা বললো,

—-” কোথায় যাচ্ছিস?”

আবির পিছনে তাকালো। আবিরের বাবা আবিরকে দেখে বললো।”

—-” অফিস থেকে এসে তো তোকে দেখিইনি সেভ করলি কখন?” আর চুল কালো করলি কখন?”

আবির মুচকি হেসে বললো,

—-” ওসব বুঝবে না ড্যাড। আমি পুরোটাই একটা রহস্য!”

বলে বাঁকা হেসে চলে গেলো,

?এক হাসিনা থি, এক দিওয়ানা থা?
?কেয়া উমার কেয়া জামা, কেয়া জামানা থা?

সেই ব্রিজটার উপর দাড়িয়ে কেউ একজন গাইছে সেই গান। পুরো গানটা গেয়ে মাস্কটা একটানে খুলে ফেললো। এরপর সাইন গ্লাসটা খুললো। মোবাইলটা বের করে ফ্লাশ অন করে ছবি তুললো। কারন এখন রাত ১২টা বাজে। নিজের ছবি নিজে দেখে হাসলো। এরপর হঠাৎই রেগে গেলো। এত পরিমাণ রেগে গিয়েছে যে। কপাল আর ঘাড়ের রগ ফুলে গিয়েছে। এক আঙুল কপালে ঘষতে, ঘষতে বললো।”

—-” আমি ফিরে এসেছি জান। নিজের প্রতিশোধ নিতে ফিরে এসেছি। জানিনা তোমাকে কতটা শাস্তি আমি দিতে পারবো। কারন আজও তো তোমাকেই ভালবাসি। তাইতো তোমাকে যারা টাচ করেছে। তাদের আমি উপরে পাঠিয়ে দিয়েছি। সে তুমি আমাকে যতই মারতে চাও। তোমার জন্য আমি আমার অস্তিত্ব হারাতে বসেছি। নিজেকে আজকাল চিনতে পারিনা। যে আমি আসলে কে? শান্ত মাহমুদ নাকি আবির রায়জাদা, নাকি শুভ্র চৌধুরী? বাট নোপ বেইব নিজেকে হারাইনি। বিকজ আই এম শুভ্র চৌধুরী। তোমার জন্য আমি ১বছর ৬মাস জীবন থেকে হারিয়েছি। গ্রামের গরীব মানুষগুলো আমাকে বাঁচিয়ে তো নিয়েছে। বাট আমার সঠিক চিকিৎসা করতে পারেনি। আর তুমি আমার ভালবাসা হয়ে আমাকে মারতে চেয়েছো। আমি তোমাকে ক্ষমা করতে পারবো না কি না জানিনা। বাট ইয়েস শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে মাই রেড রোজ। এবার আর শান্ত বা আবির না শুভ্র হয়েই তোমার সামনে আসবো। অনেক হিসেব মেলানোর আছে। অনেক সত্যি আমাকে জানতে হবে। রোদ যে বেঁচে আছে সেটা আমি জানি। আর মেঘ হচ্ছে রোদ আর তামান্নার ছেলে। আর নিরবের সাথেও তোমার কোন রিলেশন নেই। আমাকে মারতেও চাইলে তুমি। আবার এভাবে পাল্টেও গেলে হোয়াই? আর আমি ব্রিজ থেকে পড়ে যাওয়ার পর। সবাই যখন এটা জানলো যে আমি মৃত। তার ৩দিন পর রোদ কোথা থেকে ফিরলো? বাট সবার আগে তুমি শাস্তি পাবে। তোমার ধারনারও বাইরে থাকবে। যে যেই শুভ্র তোমাকে পাগলের মতো ভালবাসতো। ইনফ্যাক্ট এখনো ভালবাসে, সে এমন কিছু করবে। এবার তুমি তড়পাবে, তড়পাতে তোমাকে হবেই। এই আমাকে কাছে পাবার জন্য। সামনে তো আমি তোমার আসবো। বাট একদম ঠিক টাইমে বেবি। এবার খেলার গুটি পাল্টে যাবে। আর এবার এই খেলা চলবে আমার নিয়মে। সো গেট রেডি রেড রোজ,

#চলবে…