#সাহেব_বিবি_গোলাম
#নুশরাত_জেরিন
#Extra_part
,
,
খাটের এককোনে গুটিসুটি দিয়ে শুয়ে আছি আমি।পাশে শুয়ে আছেন শুভর আপা।
নামটা কি আমি জানিনা।তবে এই মুহুর্তে আমার ঘুম আসছেনা।এতো এতো চিন্তা নিয়ে কারো ঘুম আসেনা।তাছাড়া পাশে শোয়ারত মহিলাটিকে কেনো যেনো আমার ভয় লাগছে।হয়তো শশুড়বাড়ির লোক সম্পর্কে সব মেয়েদের মনেই কিছু ভীতি থাকে।ভয় পেলে কারো ঘুম আসে নাকি?
আমি উশখুশ করতে থাকলাম।
খুব করে মায়ের কথা মনে পরছে আমার।ঘুম না আসলে মা আমায় মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন।যত্ন করে কোলে মাথা রেখে শোয়াতেন।
কি যে ভালো লাগতো আমার!
চোখের কোনে অজান্তেই পানি জমতে শুরু করলো।আমি আলগোছে চোখের পানি মুছলাম।
ওপাশ ফিরে শুয়ে থাকা মহিলাটি বলে উঠলেন,
—তোমার কি ঘুম আসছে না পিহু?
আমি মাথা নাড়লাম।পরক্ষনেই জিভে কামড় দিলাম।কি পরিমান বলদ আমি!এই অন্ধকার ঘরে মাথা নেড়ে উত্তর দেওয়ার কোন মানে আছে?তাছাড়া উনিও তো ওপাশ ফিরে শোয়া।
আমার কথার জবাব না পেয়ে আবার বললেন,
—পিহু?
—হ্যাঁ,জ্বী! জ্বী!
না মানে হ্যাঁ,মানে!
আমাকে আমতাআমতা করতে দেখে উনি উঠে বসলেন।পাশের সেন্টার টেবিলে হাত দিয়ে টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালালেন।
বললেন,
—কি হয়েছে?খারাপ লাগছে তোমার?
—না তো!
উনি কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন।বললেন,
—তুমি কি আমায় ভয় পাচ্ছো পিহু?
আমি মাথা নিচু করে চুপ থাকলাম।কিছু কথার সরাসরি উত্তর দেওয়া যায়না।মুখপর ওপর তো না ই।
আমার নিরবতায় উনি যা বোঝার বুঝলেন।মাথা নাড়লেন কিছুক্ষণ।
বললেন,
—ঘুম না আসলে আমার কাছে এসো,আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। দেখো ঠিক ঘুম আসবে।
আমি ইতস্তত করতে করতে এগোলাম।কোলে মাথা টেনে নিলেন তিনি।পরম যত্নে হাত বুলালেন।আবেশে আমার চোখ বুজে এলো।
মনে হলো আমি যেনো মায়ের কোলেই আছি।কি মমতামাখা ছোয়া!বড় বোনের মাঝে যে মায়ের ছায়া থাকে তা কি সবাই জানে?
আমি সাহস জুগিয়ে বললাম,
—আমি আপনাকে কি বলে ডাকবো?
আমার কথা শুনে তিনি হাত থামালেন।আমি সেদিকে তাকালাম না।কেনো যেনো হুট করে আমার সাহস বেড়ে গেছে।মহিলাটিকে এখন মোটেও ভয় করছেনা আমার।বরংচ নিজের মানুষ বলে মনে হচ্ছে।
কিন্তু কেনো?এভাবে মমতা ভরে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন বলে?নাকি ওনার বাইরের খোলসের ভেতরে একটা নরম মনের সন্ধান পেয়েছি বলে?
—আপা বলে ডাকি?
আপা মৃদু হেসে মাথায় হাত বুলানো পুনরায় শুরু করলেন।
বললেন,
—তাহলে আমিও কিন্তু তুই বলে ডাকবো,তুমি বললে কেমন পর পর লাগেরে।
আমি মুচকি হেসে সায় জানালাম।
আপা বললেন,
—আমার ভাইটা খুব ভালো জানিস পিহু।খুব খুব খুবই ভালো।তুই হয়তো এখন বুঝতে পারছিস না,কিন্তু একসময় ঠিকই বুঝবি।
তোকে ভালোও বাসে।
খুবই ভালবাসে।
প্রথম যেদিন তোকে দেখেছিলো সেদিন এসেই আগে আমার কাছে এসে তোর কথা বলেছিলো জানিস?
আমি চমকে উঠে বসলাম।
কে ভালবাসে?কাকে ভালবাসে?
আমি কি কানে ভুল শুনলাম?কানটা একবার হাত দিয়ে ঝাঁকিয়ে নিলাম আমি।
চোখ বড়বড় করে বললাম,
—কে ভালবাসে?
আপা চোখ গরম করে তাকালেন।বললেন,
—আমার কথ তুই কিচ্ছু শুনিসনি?যাহ আর বলবোই না তোকে!তুই ঘুমো আয়।
আমি কথা বাড়ালাম না।চুপচাপ শুয়ে পরলাম।মনে মনে কথাগুলো বারবার আউড়ালাম,শুভ ভালবাসে আমায়?
কিন্তু? নাহ কিছুতেই না,ভালবাসলে কেউ এমন ব্যবহার করে?এতোটা রাগায়?ভালবাসার মানুষকে কেউ কষ্ট দেয়?
আপা নিশ্চয় ভুল বলেছে।নয়তো ভুল জানে সে।
আমার প্রিতমও তো আমায় ভালবাসে।সে তো কক্ষনো আমায় কষ্ট দেয়না?কক্ষনো রাগায়ও না।
পরক্ষনেই একটা কথা মনে পরলো আমার।আমি শুভর ফোন দিয়ে এখন নিজের আইডিতে ঢুকে প্রিতমের সাথে যোগাযোগ করতে পারি।
মামা তো এখন আর বাধা দিতে পারবেনা।সে তো নেই এখানে।
খুশিতে ডগমগ করতে করতে আমি চোখ বুজলাম।
কাল সকালেই শুভর কাছে তার ফোনটা চাইবো আমি।
সে নিশ্চয় না করবেনা।
,
,
চলবে…..