স্বপ্নময় ভালোবাসা পর্ব-২৩

0
7105

স্বপ্নময় ভালোবাসা
রোকসানা আক্তার
পর্ব-২৩

সকালে ঘুম থেকে উঠার পর আকাশের মাঝে কিছুটা পরিবর্তন দেখি।সে আমার সাথে ঠিকমতো কথা বলে না।আর বলতে চাইলেও ধীরস্থির দাড়িয়ে কথার ফোঁড়ন কাঁটে না।কিছু জিজ্ঞেস করলে এর উত্তর বিরবির করে দিয়ে নিজেকে পাশ কাঁটার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে।আজ নাস্তাটা করতে বসলেও আমাকে তারসাথে নাস্তা করতে একটি বারও ডাকে না!নিজেই কোনোমতে নাস্তাটা সেরে হাসপাতালে চলে যায়!তার এসব ভাবভঙ্গিতে মনে হলো সে যেন আমার থেকে নিজেকে লুকাতে চাইছে!

বিকেলে ক্লান্তিমাখা শরীর নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে!আবারো সেই একই কান্ড করে!আমার সাথে দেখা না করে সোঁজা অন্য একটা রুমে গিয়ে ঢুকে পড়ে।তার এহেন কান্ডে আমি এবার বরাবরই অবাক হলাম!কাল রাতে ত সবই স্বাভাবিক ছিল আর দিনের আলো ফুটতে বিহেভিয়ারে এমন পরিবর্তন! কেন এমন করছে ও?এমন করার কারণ কী?জিজ্ঞেস করতে হবে আকাশকে!

ভেবেই ওর রুমের দিকে এগিয়ে যাই!দরজা ভেতর থেকে খোলা ছিল তাই ঢুকতে সমস্যা হয়নি।ঢুকার সাথে সাথেই আকাশ আমাকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়!কিছুটা সংকোচ এবং অপরাধ বোধ গলায় বললো,
“আই’ম স্যরি,সানা!”

আমি ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকাই।আকাশ পিটপিট চোখ করে আবার বললো,
“কাল রাতে আসলে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি নি!কী থেকে কী হয়ে গেল উফস! নিজেই জানি না!”

এবার আমার কুঁচকানো ভাবটা মসৃণ হয়।আর মাথা নুইয়ে করে মিটিমিটি হাসতে থাকি।ব্যাপার তাহলে ওটা?তাইতো বলি সেই সকাল থেকে কেন ও আমার সাথে ওমন বিহেভিয়ার করলো! ছেলেটার এখনো বিশ্বাস হয়না আমি ওকে আমার স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছি!ও এত অবুঝ কেন!?
আমি এক সপাটে ওর একদম কাছাকাছি এসে দাঁড়াই!এতটাই কাছাকাছি ওর নাকের নিঃশ্বাসটা আমার কপালে এসে বিঁধছে!আমি জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিঁজে নিয়ে বললাম,

“এখনো সেই অবুঝ রয়ে থাকলি?

আকাশ আমার চোখের দিকে ফের তাঁকায়।কিছু বলতে ঠোঁট নাড়বে ওমনি আমি ওর ঠোঁটের উপর আমার তর্জনী আঙ্গুলটা রাখি!উষ্ণতা জড়ানো গলায় বললাম,
“আমি তোর বান্ধবী নয়,আমি তোর স্ত্রী!এখন থেকে আমাকে বউ মনে করবি!সংকোচ বোধ করবি না।যত ইচ্ছে আদর দিবি!ইচ্ছে হলো তুমি বলবি!এতে ভালোবাসাটা আমাদের আরো গভীর হবে।”

বলেই ছোট ছোট চোখ করে ওর মুখের দিকে তাকাই।আকাশও তার ধীরস্থির চাহনি গেঁথে রাখে আমার চোখের উপর।তারপর বার দুয়েক চোখবুঁজে দৃঢ় নিঃশ্বাস টেনে নিয়ে বললো,
“সত্যি সানা আমাকে মন থেকে মেনে নিয়েছিস ত?”
“এখনো সন্দেহ হয়?”
আকাশ এ’কথার পিঠে আর কিছু না বলে আমাকে টেনে এনে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।বললো,
“এতটাই ভালোবাসা দিব যে ভালোবাসার আজও পৃথিবীতে জন্ম হয়নি!!”
বলেই আরো শক্ত করে চেপে ধরে!আমি কিঞ্চিৎ ব্যথা বোধ করি সাথে খানিকটা লজ্জা!এভাবে আরো খানিকটা জড়িয়ে রাখলে আমার একদম মাটির সাথেই মিশে যেতে হবে!তাই ছাড়িয়ে নিতে প্রসঙ্গ পাল্টাই!বললাম,

“আকাশ?টোয়াকে কল করেছিস?”
আকাশ ছাড়ে নি!ঘোরের মাঝে ভালোবাসা মাখছে!এবার গলার স্বরে কিছুটা জোড় আনি।বললাম,
“কী শুনতে পারছিস আমার কথা?”

এবার আকাশের টনক নড়ে।তরহর আমাকে ছাড়িয়ে এনে নাকের ঢগা থেকে চশমটা ঠিক করে আবার চোখে এঁটে নেয়।বললো,
“কী বললি বুঝি নি।প্লিজ আবার বল!”
আমি কুটিল হাসলাম।তারপর বললাম,
“টোয়াকে সকাল থেকেই ট্রাই করতেছি কিন্তু কিছুতেই ওকে ফোনে পাচ্ছি না।”
“ফোন বন্ধ?”
“হ্যাঁ।”
“হয়তো ফোনে চার্জ নেই অথবা ফোনে কোনো প্রবলেম হয়েছে তাই।”
“জানি না!এমন একটা মুহূর্ত যাচ্ছে ওকে গুড নিউজটা জানাতে পাচ্ছি না।কেমন যে লাগছে!”

আকাশ আমার মাথাটা তার বুকের দিকে আলতো টেনে ম হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
“টেনশন নিস না।ফোন অন করলে ও নিজেই তোকে কল করবে।”
আমি কিছু বলি হি,শুধু নৈঃশব্দ্যে একটা শ্বাস ছাড়ি।

তার পাঁচদিন পর আমাকে নিরীক্ষা ও হিসাব কেডারে সিলেক্ট করে।ওখানে আল্লাহর নাম নিয়ে সহকারী হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক পদে কাজ শুরু করি।বেড়ে যায় ব্যস্ততা।সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন,ট্রেনিং বিল,পেনশন,জ্বালানি খরচ, ক্রয়বিল সহ আরো নানান কাজের সূত্রে প্রতিনিয়ত নানান অফিসে যাতায়াত শুরু হয়!তবে সবগুলো অফিস ঢাকার ভেতরে হওয়ায় আমার পোস্টিং ঢাকায়ই থাকে!আমি খুব মনোযোগ এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে কাজগুলো সম্পাদন করার চেষ্টা করি।এভাবে দিনেক দিন আমার কাজের গতি বাড়ে সাথে সাথে দক্ষতা বৃদ্ধি পায়!আমার কাজের দক্ষতা দেখে আমার বিভিন্ন স্থানে যেতে অসুবিধে যাতে না হয় খুশি হয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আমাকে একটা দামী গাড়ি গ্রিফট করা হয়।আকাশের সামনে গাড়ি নিয়ে হাজির হলে আকাশ তামাশা করে ঠ্যাঁটম দেখিয়ে বললো,

“আমার বিসিএস বউ!আজ আমার থেকেও উপরে চলে গেল!দুইবছর ধরে ডাক্তারি করে আসছি অথচ আজ পর্যন্ত কপালে একটা গাড়ি জুটাতে পারি নি আর আমার বিসিএস বউ সবে সাত মাসের মাথায় একটা গাড়ি এচিভ করে ফেললো!হায়রে এত দুঃখ কই রাখি!এই তোমরা লেডিসরা এত ফার্স্ট হও কীভাবে?একটা নিঞ্জা টেকনিক কও ত!আমি দেখিয়ে দিতে চাই যে লেডিস ফার্স্ট নয়,জেন্টলম্যান ইজ ফার্স্ট!”

আকাশের কথা শুনে খিলখিল হেসে দিই।বললাম,
“লেডি ফার্স্ট ঠিক আছে!কিন্তু আমি মোটেও ফার্স্ট হই নি।জানো কেন?”
“কেন?”
“যোগ্যবান হওয়ার পেছনে যার অবদান সেই ত ফার্স্ট ম্যান।”
“আমিতো মাত্র উছিলা।কিন্তু কষ্টটা ত করেছ তুমি!”
“হয়েছো রাখো এত্ত ন্যাঁকা!এবার আমি গ্রামে যেতে চাই!কবে যাবা বলো?”
“এ সপ্তাহ পর ছুটি পাবো।তখন তোমাকে নিয়ে গো ব্যাক আমাদের কুমিল্লা।ঠিক আছে?”

সপ্তাহ খানেক পর আমি এবং আকাশ কুমিল্লায় রওনা করি।সাথে করে কিছু জামাকাপড় এবং খাবার পানীয় নিয়ে আসি গ্রামের গরীব মানুষদের এবং এতিমখানায় দান করার জন্যে।গাড়ি বাড়ির ত্রিসীমানায় এসে থামতেই আকাশ বললো,
“তুমি বাড়ির ভেতরে যেয়ে একটা লিস্ট করো কাকে কাকে সার্ভ করবা।আর আমি এদিকটায় দেখছি কোনো কুলি খুঁজে পাওয়া যায় কি না মালপত্র ভেতরে নেওয়ার।”

বলেই আকাশ ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

আমি আকাশের কথায় সায় দিয়ে গুঁটি গুঁটি পায়ে বাড়ির ভেতরের আসি ।উঠোন বরাবর বরাবর পা রাখতেই আমার ভেতরে একটা অন্যরকম টান অনুভব হয় ।চারপাশটায় খুব মায়াময় চোখে তাকাতেই হঠাৎ আমার চোখজোড়া বসে আছে!কত্ত স্মৃতি এখানে আমার!আমার শৈশব,কৈশোর,যৌবনের অর্ধাংশ !এখানের প্রতিটি মানুষ,প্রতিটি বাড়ি,প্রতিটি গাছ এবং প্রতিটি সব আমার মুখস্ত আর ক’টা মাসের ব্যবধানেই আজ হঠাৎ মনে হলো-কতটা বছর যেন এই জায়গাটাকে দেখি নি!
আচ্ছা,এখানের সব মানুষ কি ঠিক সেই আগের মতোই রয়ে গেল?নাকি পরিবর্তন হয়ে গেছে!

ভাবতে ভাবতে চোখের কার্ণিশ ঘেঁষে দু’ফোঁটা অশ্রু বেরিয়ে আসে।
“আরেহ,এ সানা বু যে!কতদিন পর!”
কারো কথার শব্দে ভাবনা গোচর কাঁটে।সামনে তাকিয়ে দেখি প্রিয়া!প্রিয়া আমাদের পাশের বাসার মমতাজ মামীর মেয়ে।বয়স বেশি নয়।এই দশ/এগারো বৈ-কি।ওকে দেখে তাড়াতাড়ি চোখের কোণে লেগে থাকা পানিটুকু মুছে নিই।তারপর নিজেকে স্বাভাবিক মুখে হাসি টেনে বললাম,

“কেমন আছিস প্রিয়া?”
প্রিয়া দু’পাশে মাথা নেড়ে ইঙ্গিত করে “খুব ভালো”।
” তোর মা কেমন আছে রে?”
“মা ভালা না সানা বু!মার শরীর ক’দিন ধরে খুব খারাপ যাচ্ছে!”
“ঠিকমতো ওষুধ খাওয়াচ্ছিস?”
“খাওয়াই!আর খাওয়াইও কী লাভ রে বু! পুরো ডোজ ওষুধ খাওয়াতে পারলেই মা ভালো হত!”
“পুরো ডোজ খাওয়াস না?”
প্রিয়া দু’পাশে মাথা নেড়ে “না” ইঙ্গিত করে।
“কেন?মামা কাজে যায় না?”
“কাজ যায়!কিন্তু কাজ পায় না।সংসারে ক’দিন ধরে আমাদের অভাব যাচ্ছে বু।”

আমি দৃঢ় শ্বাস ছাড়ি।ওর গালে আলতো হাত রেখে বললাম,
“ওষুধের টাকা আমি দিয়ে দিব পুরো ডোজ কিনে নিস!আর তোরজন্যে কিছু জামাকাপড় এবং খাবারও এনেছি।”
“সত্যি,বু?”
“হু।”
“কই দেখি?”

এরমাঝে আকাশ চলে আসে।সঙ্গে দুজন কুলি।আকাশ তাদের মালপত্রগুলো নিচে রাখতে বলে।তারা তা রাখে।তারপর আকাশ তােদর কিছু টাকা দিয়ে বিদেয় করে।আমি ওখান থেকে প্রিয়ার জন্যে একটা ড্রেস আর একটা খাবারের প্যাকেট নিয়ে তা ওর হাতে তুলে দিই।মুহূর্তে প্রিয়ার দু’চোখ খুশিতে ছলছল করে উঠে।খুশির তোজ ধরে রাখতে আর না পেরে জোর গলায় চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলতে থাকে,
“ও মা তুমি কই?এসে দেখে যাও সানা বু আমার জন্যে কী নিয়ে আসছে!।মাগো মা তাড়াতাড়ি বাইরে আসো না!”

প্রিয়ার চিৎকারের আওয়াজে মমতাজ মামী ঘর থেকে বেরিয়ে আসে এবং আশপাশে থাকা অন্যান্যরাও।সবাই আমাকে দেখামাত্রই চমকে যায়। সাথে আকাশ আছে,আবার একগাদা মালপত্রও!একজন উৎসুক এবং প্রশ্নমুখরা হয়ে বললো,
“সানা?এগুলা কী?
“চাচা, কিছু খাবার আর জামাকাপড়।আর এসব আপনাদের জন্যেই নিয়ে এসেছি।”

কথাটি শুনে একে-অপরের দিকে অবাক চোখে চাওয়াচাওয়ি করে।আমি হেসে দিই।বললাম,
“আরেহ অবাক হওয়ার কিছু নেই।আমি এখন চাকরি করছি তাই সেই বেতন থেকে আপনাদের জন্যে কিছু টুকটাক নিয়ে আসলাম আর কি।”

হাজেরা দাদী বলে উঠলেন,
“কী চাকরি?”
“সহকারী হিসাব নিরীক্ষক এবং নিয়ন্ত্রক কেডারে।”
পাশ থেকে শিক্ষিত একজন বলে উঠেন,
“এটা ত বিসিএস কেডার হলে হওয়া যায়!”
“জ্বী,আঙ্কেল বিসিএস কেডার হয়েই এই চাকরিতে সিলেক্ট হয়েছি!”
“তুমি বিসিএস কেডার হয়েছো?!

সবাই আমার ওমন এ্যাচিভমেন্টে বরাবরই প্রশংসায় পঞ্চমুখ!মুহূর্তের জন্যে সবাই ভুলেই যায় একদিন তারা আমাদের নিয়ে কুৎসা কথা রটিয়ে ছিল।তারপরও আমি কথাটা চাপা রাখি নি।কথাটা সবার সামনে তুলি। আর সত্যটা বলি।সবাই এক নিমিষে মনের অচিন্তে বিশ্বাস করে ফেলে,অথচ সেদিন তারা আমাদের কথা বলার সুযোগই দিলো না!তারপর কিছুক্ষণ সময় সবার সাথে এভাবে কাঁটানোর পর এতিম খানার দিকে রওনা করি।সেখানে সব ছেলে-মেয়েদের হাতে জিনিসগুলো তুলে দিয়ে টোয়ার বাসায় যেতে মনস্থির করি।আকাশকে টোয়ার বাসায় যাওয়ার কথা বলতেই আকাশ অদম্য রাগে ফুঁসে উঠে।বললো,

” ওকে যেয়ে আগে কয়েক দফ মার দিবি!তারপর জিজ্ঞেস করবি ফোন অফ রেখেছিল কেন!টোঁটকা কোথাকার!যোগাযোগ করার ওয়েই রাখলে না!”

আমি ছলছল মুখ করে আকাশের দিকপ তাকিয়ে থাকি।টোয়ার উপর আমার যে শুধু রাগ তা নয়। মনে মনে আকাশেরও যে এর কমতি ছিলনা এখন তার বেশ বুঝতে পারলাম।সেই ফোন অফ,আজও ওর সাথে আমার যোগাযোগ হয়নি!আজও সে জানতে পারে নি তার সেই হতভাগী বান্ধবীটা আজ বিসিএস ক্যাডার!”

টোয়াদের বাসায় আসার পর তাদের কাউকে এখানে দেখতে পাইনি।গত আটমাস আগে তারা এখান থেকে কোথায় নাকি চলে যায়।এখন তাদের বাসায় অন্য ভাড়াটিয়ারা থাকে।কোথায় গেছে তার সন্ধান পার্শ্বস্ত অনেকের থেকে জানতে জিজ্ঞেস করি তারা কেউই কিছু বলতে পারে নি।আমি খুবই আশাহত হয়ে যাই।টোয়া যে শব্দটার সাথে জড়িয়ে আছে আমার কতশত অপ্রাপ্তির প্রাপ্তরেখা!সুখ-দুঃখ, বেদনা ভরা জীবনে পাশে এসে দাঁড়িয়ে অদম্য মনে সাহস যোগানোর অনুপ্রেরণা!কষ্টের মুহূর্তগুলোকে হাসিতে উড়িয়ে দিয়ে স্বপ্ন দেখানোর শক্তি কণা! সে আজ কোথায়?আজ কেন তাকে পাচ্ছি না!আজ কেন তাকে মুখ খুলে বলতে পারছি না “টোয়ারে বোন আমার আমি আজ তোদের দোয়ায় বিসিএস ক্যাডার হয়েছি”!

কিন্তু আজ নাই টোয়া!সারাটা পথ মন খারাপ থাকে আমার।আকাশ এটাওটা বলেও আমাকে স্বাভাবিক করতে পারে নি!

চলবে…