স্মৃতির দেয়াল পর্ব-১৩

0
2415

স্মৃতির দেয়াল🍁
#পর্ব_১৩
Writer -Afnan Lara
.
আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন
যাক আমার নীলটার জন্য একটা লক্ষী বউ আনতে পারলাম,হিয়াকেও আমার অনেক পছন্দ ছিল কারণ সে আমার নীলকে পাগলের মতন ভালোবাসতো কিন্তু আফসোস ওদের জীবনসাথী অন্য কেউ ছিলো, কপালে যা আছে আর কি
তবে মুন ঠিক একদিন নীলকে নিজের করে নেবে, মুনের মাঝে সেই ক্ষমতা আমি দেখেছি
হিয়াকে হারানোর পর নীলকে আমি কত শতে শতে মেয়ের ছবি দেখিয়েছি, কত মেয়েকে তার জীবনে এনেছি কিন্তু কেউ ওর মন কাড়ে নিই
আর মুন আসার কয়েকদিনেই আজ ওর স্ত্রী হয়ে গেলো সে
ভাগ্যের চাকা কখন ঘুরে তা কেউ জানে না
নিপা এক কাজ কর নীলের রুমটা সাজিয়ে ফেল,,
.
মুন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে নীলের মুখের দিকে চেয়ে আছে এখনও,একদিনে এভাবে ওর জীবন পাল্টে গেলো খালি এই ভাবনা ওকে খোঁচাচ্ছে
.
আমি অনেক খুশি যে তুই নিজের জীবনটা গুছিয়ে নিলি শেষমেষ
.
নীল মুচকি হাসলো তারপর পাঞ্জাবিটা টেনে ঠিক করে বললো”বাধ্য হলাম”
.
মিলন মুখটা ছোট করে বললো”হিয়া এমন খুশি আছে কি করে রে??”
.
এটাই তো চেয়েছিলাম,আমার হিয়া তার স্বামীকে জলদি জলদি মেনে নিতে পেরেছে এটাই তো স্বাভাবিক
.
তুই পারবি মুনকে ভালোবাসতে?
.
নীল তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো”ভালোবাসাটা বাদে বাকি সব পাবে সে”
.
মিলন নীলের বাহু ধরে হালকা ঝাঁকিয়ে বললো”মেয়ে মানুষ ভালোবাসার পোকা,তোকে পাগল করে দেবে ভালোবাসার জন্য”
.
আমি ওকে সব সত্যি জানিয়ে দেবো,আশা করি ও আমার থেকে জীবনেও ভালোবাসা চাইবে না
.
কথা শেষ করে নীল মুনের দিকে তাকিয়ে ওর কাছে এসে হাতটা ধরে টান দিয়ে নিয়ে আসলো সবার সাথে ছবি তুলার জন্য
মুন ও বোকার মতন নীল ওকে যেদিকে নিচ্ছে সেদিকে চলছে
.
রাত ১০টার দিকে নীলের সব বন্ধুরা চলে গেছে
নিপা মুনকে এনে নীলের রুমে বসিয়েছে ও দিয়েছে তখন
মুন রোবটের মন বসে আছে বিছানার ঠিক মাঝখানে
মা অনেক করে বললো তাও সে রাতের খাবার খেলো না
সকালের এই বিয়ের কথা শুনার পর থেকে তার গলা দিয়ে একটু পানি ও নামেনি,নীল কেন ওকে জোর করে বিয়ে করলো এর কারণ সে আজই নীল থেকে জানতে চাইবে
.
মুন রাগ করবে না কি করবে বুঝছে না,,ওদের বাসর ঘরটা তেমন গরজিয়াস করে সাজানো না হলেও গোলাপের ঘাটতি নেই রুমে,নিপা বেশ দক্ষ হাতে সাজিয়েছে বোঝা যাচ্ছে
কদিন পর যারা বিয়ের পিড়িতে বসতে চলেছে তাদের বিয়ের সম্পর্কে মোটামুটি সব ধারনা থাকে,তাই তারা অন্যদের বিয়ের সব কাজ পটু হাতে করে
হুট করে হয়ে যাওয়া বিয়ের চিন্তা ভাবা শেষে মুন মাথা থেকে ঘোমটা টা ফেলে পাশে তাকাতেই দেখলো নীল ভিতরে ঢুকে দরজা লাগাচ্ছে

মুন উঠে গিয়ে এগিয়ে এসে বললো”আপনি এমন কেন করলেন??আমার মত একবারও নিলেন না??আমার এই বিয়েতে কোনো মতই ছিল না”

তাহলে পালাও নি কেন?

আমি পালানোর চেষ্টাও করেছি,তাও বিয়ের আগে!!
বাইরে ২জন পুলিশ রেখেছেন আমি পালাতাম কি করে?,তারা আমাকে বের হতেই দেয়নি?এসবের মানে কি??

রাত হইছে শুয়ে পড়ো,ও হ্যাঁ তুমি নাকি খাবার খাওনি,এই খাবারগুলো খেয়ে নাও,নিপা পাঠিয়েছে

না আমাকে আমার প্রশ্নের জবাব দিন আগে

কিসের জবাব??আমার মন চাইছে তাই আমি তোমাকে বিয়ে করেছি

আবার মন চাইলে ছুড়ে ফেলে দিবেন,তাই না?

নীল আর কিছু বললো না,,চুপচাপ বারান্দায় গিয়ে চেয়ার টেনে বসে পড়লো,,হাতে একটা মদের বোতল নিয়ে
.
মুন এগিয়ে আসলো কথা বলার জন্য তখনই নীল ভেতর থেকে বারান্দার গ্লাস টেনে দিলো
.
মুন নীলের দিকে তাকিয়ে হনহনিয়ে গিয়ে খাটে দুম করে বসে পড়েছে,রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে ওর,রাগের কারণ গুলো নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখ লেগে গেলো মুনের,,হিয়াকে নিয়ে কোনো কথাই বলা হলো না
.
মুন পরেরদিন সকালে চোখ খুলে হঠাৎই একটা ছেলের উদম পিঠ থেকে ভয়ে চিৎকার করে খাট থেকেই পড়ে গেলো,একেবারে টাইলসের উপর
নীল ঘুম থেকে উঠে তাকিয়ে দেখলো মুন নিচে হাত ধরে বসে তাকিয়ে আছে ওর দিকে

কি?আগে কখনও জামা ছাড়া ছেলে দেখো নি?
.
মুন কথার উত্তর না দিয়ে উঠে নীলকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই নীল কাঁথা টেনে শুয়ে পড়লো আরেকদিকে মুখ করপ
মুন রেগে মেগে নীলের হাত ধরে টানতে টানতে বললো”আমার প্রশ্নের জবাব আপনাকে দিতেই হবে”
.
ঘুমাতে দাও,ডিস্টার্ব করবা না
.
কি করবেন??মারবেন??কাল এভাবে পালিয়ে বারান্দায় গিয়ে উঠেছিলেন কেন আপনি??
.
তোমার এরকম ভ্যালুলেস প্রশ্নের জবাব দেওয়ার মুড ছিল না আমার
.
আপনাকে জবাব দিতে হবে
.
নীল শোয়া থেকে উঠে বসলো,,মুখটা ভার করে রেখেছে সে
মুন তোতলাতে তোতলাতে বললো”বলুন,কেন জোর করে বিয়ে করেছেন?”
.
নীল কপাল কুঁচকে মুনের হাতের কব্জি শক্ত করে ধরে ওকে টেনে রুমের বাহিরে নিয়ে আসলো তারপর মুখের উপর দরজাটা লাগিয়ে ফেললো
.
দরজা খুলুন,এবার আমি অচেনা কেউ না,আপনার বিয়ে করা বউ,আমাকে আপনি এভাবে বের করে দিতে পারেন না
.
মুন যখন দেখলো ওর কথাতে কোনো রিয়েকশান হচ্ছে না তখন সে চলে যাওয়ার জন্য পিছন ফিরতেই দেখলো নীলের মা আসছেন এদিকে
উনি সামনে এসে মুনের হাতে একটা শাড়ী ধরিয়ে দিয়ে বললেন এটা পরতে কিছু মেহমানকে আজ ডেকেছেন উনি
মুন শাড়ীটার দিকে চেয়ে আছে,নীলের মা চলেও গেছেন,,একটু ব্যস্ত তিনি তাই
মুন ফেরত এসে আবারও দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বললো”দেখুন ভালো হচ্ছে না কিন্তু,আপনি আমাকে এরকম টর্চার করার জন্য বিয়ে করেছেন?”
.
প্রশ্ন করা অফ করলে নীল তার রুমের দরজা খুলবে,বুঝেছো?
.
মুনের এখন ফ্রেশ হওয়া জরুরি তার উপর এই বেনারসি পাল্টিয়ে শাড়ী পরতে হবে যেটা নীলের মা দিয়ে গেছে,ভেজাল না করে বরং রাজি হয়ে যাই
.
আচ্ছা খুলেন দরজা,আমি কিছু জিজ্ঞেস করবো না
.
দরজা খুলে গেলো….

ওমা নীল দেখি খাটে নেই,,তাহলে দরজা খুললো কে?
মুন ভেতরে ঢুকে পাশে তাকাতেই দেখলো নীল আলমারি হাতিয়ে অফিসের পোশাক বের করছে
.
মুন শাড়ীটা খাটের উপর রেখে নীলের পুরো রুমটা এক নজর দেখে নিলো
গরুর ঘর আরও সুন্দর, এরকম বিচ্ছিরি রুম মুন জীবনে দেখেনি,,সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা,এটা নাকি একজন পুলিশের রুম
.
মুন বিছানার চাদর টেনে ঠিক করলো,,এরপর শাড়ীটা পরার জন্য আবার হাতে নিতেই নীল বাথরুম থেকে বের হলো তখন
মুন ঘর গুছাতে গুছাতে নীল ফ্রেশ হয়েও এসেছে ততক্ষণে
.
তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে নিজের ইউনিফর্ম পরতে লাগলো আয়নার সামনে এসে
মুন নামক একটা মেয়ে যে দাঁড়িয়ে আছে তার দিকে তাকিয়ে সে ব্যাপারে কোনো খোঁজ নেই নীলের,,চুপচাপ রেডি হয়ে বেরিয়ে ও গেলো সে
মুন নীলের চলে যাওয়া দেখছে,বিয়ে হয়েছে নাকি অচেনা একটা লোকের সাথে লিভিংয়ে সাইন করলাম সেটা মাথায় ঢুকছে না আমার

মা আমি যাই তাড়াতাড়ি খাবার দাও

মানে??মেহমান আসবে কিছুক্ষণ পর,, আজকে তুই কই যাস,কোথাও যাবি না

আমার অনেক কাজ হুদাই বাসায় থেকে লাভ নাই,
.
নীল ব্রেডে জ্যাম লাগিয়ে খেতে খেতে চলে গেলো
মুন এখনও শাড়ী নিয়ে বসে আছে খাটে,সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে,উনি আমার সাথে এমন কেন করলো??তাও হঠাৎ করে,আর হিয়াকে যদি ভালোই বেসে থাকে তাহলে আমাকে বিয়ে করলো কেন,সব প্রশ্ন ঝট পাকাচ্ছে
আমার জীবনটাকে জোক বানিয়ে দিয়েছেন উনি,এখন মনে হচ্ছে বিয়েটা আটকালে হয়ত এত কষ্ট হতো না
অবশ্য আমি কি আটকাবো,উনি তো জোর করে আমাকে বিয়ে করেছেন,ঠিক আছে,কত পালাবে আর???আমি তো আমার সব জবাব উনার থেকে আদায় করেই ছাড়বো,আজ আসুক

নীল অফিসে বসে ভাবছে হিয়ার কথা

এতই যখন হিয়াকে ভালোবাসোস তাহলে মুনকে বিয়ে করলি কেন??তাও জোর করে,আর আমাকে ডাকলি না কেন?আমি তো রীতিমত শকড সবটা মিলনের থেকে শুনে,তোর আর হিয়ার জীবনটা পুরো উল্টে গেলো কটা বছরে আর আমি আজ শুনলাম??

আমি এতদিন অপেক্ষা করেছি হিয়া কেমন আছে তা জানার জন্য আসিফ!,,কাল দেখলাম হিয়া বেশ ভালো আছে,,আর তাই আমিও ভালো থাকার কারনটা পাকাপোক্ত করে নিলাম

মুনকে নিয়ে তুই সুখী হবি??নাকি ওকে সুখী করতে পারবি??তোর তো পুরা শরীরের শিরায় শিরায় হিয়ার নাম হিয়ার ছবি,হিয়াকে নিয়ে অনুভূতি,,
আর মুনের মধ্যে কি দেখে বিয়ে করলি তুই?পুলিশ চোরকে বিয়ে করতে এই প্রথম শুনেছি
আচ্ছা!এসব বাদ,একটা কথা বল তুই মুনকে ভালোবাসতে পারবি?

ভালোবাসা??হাসাইলি আসিফ,ভালোবাসা জিনিসটা জীবনে একবার আসে,আমার জীবনে এসেছিল কোনো এক বর্ষায়,,সেই ভালোবাসার ভাগিদার শুধু হিয়া ছিল,,এখন হিয়া অন্য কারোর হয়ে গেছে তার মানে কি সেই ভালোবাসা আর নেই,বিলীন হয়ে গেছে?কিছুতেই নাহহহ
আমি শুধু হিয়াকেই ভালোবাসি,এখনও,,আর কাউকে কখনও ভালোবাসতে পারবো না

তাহলে মুনের জীবন নষ্ট করলি কেন?

নষ্ট?নাহ,আমি ওর জীবন বাঁচিয়েছি,,ওর এভাবে আমার বাসায় থাকা বা অন্য কোথাও থাকা একদম সেফ ছিল না,তাই একটা সম্পর্কের স্বীকৃতি দিয়েছি আমি,আর সে যেহেতু এখন আমার ওয়াইফ ওর সব দায়িত্ব আমি পালন করবো,,ওর কোনো কিছুতে কমতি আমি হতে দিব না

ভালোবাসা?

আসিফ প্লিস,ভালোবাসা ভালোবাসা বলে বলে মাথা খাইস না,,মুন কখনও আমার থেকে ভালোবাসা চাইবে না ওকে আমি আজই হিয়ার কথা বলে দিব

তোর মাথা পুরা গেছে,যা ভালো মনে করস কর তুই

নীল সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরে আসলো

আরেকটু আগে এলে কি হতো তোর?কিছুক্ষন আগেই সব মেহমানরা চলে গেলেন,,মুনকে খুব পছন্দ করেছে সবাই শুধু একটা কথা নিয়ে খোঁটা দিছে,আমরা অনুষ্ঠান করিনি যে তাই

লাগবে না এতসবের,তুমি তো জানো আমি ঝাঁকজমক পছন্দ করি না
.
যা এখন,ডিনার রুমে পাঠিয়ে দেবো,এখানে আসতে হবে না,তুই আর মুন একসাথে ডিনার করিস,আর শুন কাল তোর সব ভাইয়েরা আসবে,খুব মজা হবে,অনেকদিন পর পুরে বাসাটা গরম হয়ে যাবে,হইচই হবে,অফিসে ছুটি নিস
.
ভালো
নীল নিজের রুমে আসলো,,ভাইয়েরা সব আসছে শুনে নীলের মনে আনন্দ হলো আবার খারাপ লাগলো এই ভেবে যে ভাইয়ারা আবার চলেও যাবে,কেউ চলে আসে না একেবারে,ভাইয়ারা আসলে এত ভালো লাগে আবার তারা চলে যাওয়ার সময় খুব কষ্ট হয়
তাই তাদের আসার কথা শুনলে চলে যাওয়ার চিন্তা মাথায় এসে মন খারাপ হয়
.
মুন বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে লিচু গাছটা ধরে দেখছিলো হঠাৎ নীল রুমে ঢুকেছে টের পেয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো হাতের কাজ ফেলে
তারপর কাল রাতের কথা মনে পড়তেই এগিয়ে আসলো মুন

আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে

আমার ও তোমার সাথে কিছু কথা আছে

আগে আমি বলবো,,আমাকে বলেন আপনি আমার সাথে এমন কেন করেছেন??আপনি যখন অন্য কাউকে ভালোবাসেন তখন আমাকে বিয়ে করার মানে টা কি???আমি কি আপনার জন্য এতই বোঝা ছিলাম যে এভাবে সব সমাধান করলেন,,আমার মত একবারও নেওয়ার প্রয়োজন মনে করলেন না আপনি?
চলবে♥