স্মৃতির দেয়াল পর্ব-২০+২১

0
2698

স্মৃতির দেয়াল🍁
#পর্ব_২০
Writer -Afnan Lara
.
কি ওমন করে চেয়ে আছেন কেন?ঐ দেখেন হিয়া কোমড়ে হাত দিয়ে চেয়ে আছে
.
নীল পিছনে তাকালো সাথে সাথে
.
মুন আরও রেগে গেছে,নিজ থেকে নেমে গেলো সঙ্গে সঙ্গে,তারপর হনহনিয়ে বাসার দিকে চলে গেলো
নীল মাথার চুলগুলো নাড়াতে নাড়াতে সেও আসছে
মুন সোজা নিপার রুমে গিয়ে বসে আছে,নিপা আজ কয়েকদিন বাসায় নেই,তার দাদুর বাড়িতে গেছে ওখানে কিসের যেন কাজকর্ম আছে ওর জমির দলিল নিয়ে যেখানে ওকে দরকার ছিলো তাই সে এখন সেখানে,আর তার রুম ফাঁকা
নীল বাসায় ঢুকতেই মায়ের সামনে পড়লো,মা রান্নাঘর থেকে এদিকে আসছেন এদিকে
.
কিরে নীল?মুন কোথায়!
.
ভেতরে গেছে মনে হয়,এনেছি ওকে
.
এত সহজে মেনে গেলো?
.
নীল হাত দুটো চাপছে,মুনকে এতদূর থেকে কোলে করে এনেছে বলে হাত ব্যাথা করছে,হাত চেপে চেপে বললো”হুম খুব সহজে মেনেছে”
.
আচ্ছা যা এখন,,মুনকে আর রাগাবি না,আমি যেন আর কিছু না শুনি
.
মুন অনেকক্ষণ নিপার রুমে থেকে রাগে ফুলে আবারও রুম থেকে বের হতে যেতেই করিডোরে নীলের সাথে এক ধাক্কা খেয়ে গেলো
নীল দেয়ালের সাথে লেগে গেছে মুনকে ধরতে গিয়ে
এমন করে ধরেছে যেন চোর পালাচ্ছিলো আর এই চোরকে ধরা অনেক জরুরি ছিলো
মুন হাতে ব্যাথা পেয়ে এক চিৎকার করলো
.
এত জোরে চেঁচাও কেন,আমি কি তোমার গলা টিপে ধরেছি??সবাই সবার রুমে,কি ভাববে তারা?
.
আমার হাত এত জোরে ধরলেন কেন?
আমি চোর না ডাকাত,মেয়ে মানুষকে এত শক্ত করে কেউ ধরে?আমার লাগলো!
.
লাগলো কেন,আমি ওতো জোরে ধরিনি
.
নীল মুনের হাতটা টেনে ধরে দেখলো দাগ হয়ে গেছে,পরে নিজের আঙ্গুল চেক করে বুঝতে পারলো হাতের আংটির কারণে এমন দাগ হয়েছে আর তাই ব্যাথাও পেয়েছে
.
আচ্ছা সরি
.
মুন মুখ ঘুরিয়ে নীলের রুমের দিকে যেতে যেতে বিড়বিড় করে বললো”হিয়া হলে আদর করে দিতো এখন”
.
কিছু বললে?
.
না বললাম আমার কপালের দোষ
.
নীল পিছু পিছু আসতে আসতে বললো”তোমার কপালের দোষ কেন?”
.
তা আপনাকে আবার বুঝাতে হবে?নিজেই বুঝে নিন না
.
মুন আলমারি থেকে তোয়ালে নিয়ে আবারও ছুটলো
.
আবার কই যাচ্ছো?
.
নিপা আপু আসা অবদি আমি নিপা আপুর রুমে থাকবো
.
মা দেখলে আবারও উল্টা সিধা ভাববে,এরকম কেন করছো?
.
মাকে কে জানাবে?করিডোরে তো নিপা আপু আর আপনার রুম,মা তো এদিকে তেমন আসে না,আর এখন ভাইয়া ভাবী সবাইকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত
আমি আপনার সাথে থাকবো না
.
মুন আরেকদিকে ফিরে চলে যেতে নিতেই নীল দরজা আটকে ফেললো হাত সামনে এনে
.
কি?এমন করছেন কেন??আপনার থেকে দূরে দূরে থাকলে তো আপনার আর হিয়ারই লাভ,এক বাসায় আছি এটা অনেক না?
.
নীল দুহাত বাড়িয়ে মুনের মুখ ধরে শান্ত গলায় বললো”তাহা!প্লিস বাচ্চামো করবা না,তোমাকে আমি সেই সব অধিকার দেবো যেটা তোমার প্রাপ্য ”
.
মুন তার গাল থেকে নীলের হাত সরিয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো”ভালোবাসা?”
.
নীল আবারও হাত বাড়িয়ে মুনের মুখ ধরে বললো”তুমি বাসো?”
.
আমি বাসলে আপনি বাসবেন?
.
নীল কিছু বলতে যাওয়ার আগেই হিয়ার ফোন আসলো
মুন এখনও একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে,এভাবে সিরিয়াস হয়ে নীল কখনও কথা বলেনি,ওর মুখ তো জীবনে এই প্রথমবার ধরলো
নীল ফোন ধরে হ্যালো বলতেই হিয়ার ভয়েস শুনতে পেয়ে বারান্দার দিকে চলে আসলো,নতুন নাম্বার থেকে কল করেছে
মুন ও পিছু পিছু আসলো
হিয়া নীলকে কি বললো মুন বুঝতে পারলো না,বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে নীল একটাই কথা বললো আর সেটা হলো”কেঁদো না,আমি কারোর হবো না”
.
মুন কথাটা স্পষ্ট শুনলো,মনটা আরও খারাপ হয়ে গেলো তার
নীল পিছনে তাকাতেই মুনকে দেখে লাইন কেটে দিলো,,মুন স্বাভাবিক ভাবে বললো”জানতে চেয়েছিলেন না??আমি বাসি কিনা?
আমি আপনাকে কখনও ভালোবাসবো না,কারন সেইদিনটা না আপনি আসতে দেবেন!!!
না হিয়া আসতে দেবে!!!
মাঝখান দিয়ে আপনারা দুজন আমার জীবনটাকে তছনছ করে দিলেন,শুধু আমার না,সাকিবের ও
কেন করলেন??এত নাটক করার কি দরকার ছিলো??
আমাকে বিয়ে না করে রাস্তায় ফেলে আসতেন অন্ততপক্ষে আমার আজকে এই দিন দেখতে হতো না
আমার আর সহ্য হয়না এসব,আমি আপনার সাথে একসাথে এই রুমে কিছুতেই থাকতে পারবো না,হয় আমাকে নিজের হাতে মেরে ফেলুন নয়ত আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিন
আপনি আপনার হিয়ার স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকুন,কেউ কিছু বলবে না
.
নীল একটু এগিয়ে এসে বললো”শুধু স্ত্রীর অধিকার পাবে না বলে এই কথাটা বললে?তোমার কাছে বিয়ে মানে এটাই??”
.
হ্যাঁ এটাই,,তবে আমার এখন আর তার প্রয়োজন নেই,আমি আপনার আর হিয়ার মাঝে আসব না,আমি ডিভোর্সের ব্যবস্থা করবো যত জলদি পারি
.
মুন হনহনিয়ে চলে গেলো রুম থেকে,নীল মাথার চুলগুলো মুঠো করে ধরে বিছানায় বসে পড়েছে
.
আমি বিয়ে করলে হিয়া এমন ভেঙ্গে পড়বে জানলে বিয়ে করতাম না
মুন বিয়ের পরপরই এমনটা করবে জানলে আমি এই বিয়েটা করতাম না
সব কিছু আমাকে ঝাপটে ধরেছে,আমার কি করা উচিত
.
মুন নিপার রুমে বসে কাঁদছে,,জীবনে প্রেম করেনি সে,ইচ্ছে ছিল একজন আদর্শবান পুরুষের স্ত্রী হয়ে তার সাথে প্রেম করবে,তা আর হলো কই,এমন একটা লোককে বিয়ে করলাম যার চোখে আমি আমার জন্য বিন্দুমাত্র প্রেম দেখিনি
তার পুরোটা মন জুড়ে একটাই নাম আর সেটা হলো হিয়া
আমার কোনো স্থান নেই তার লাইফে,শুধু একটা পদবি আর তা হলো স্ত্রী
আমাকে এত বিষাদময় জীবন কেন দিলেন উনি
আমি তো এমনটা চাইনি
ভালো না বাসেন অন্তত আমাকে কেয়ার তো করেন
সারাদিন হিয়াকে নিয়ে ভাবা,ওর সাথে কথা বলা কার সহ্য হবে??
ভালোবাসা তো পরে চাইতাম,এখন কেয়ার টুকু চেয়েও মনে হচ্ছে বড় ভুল করেছি
খুব ভুল হয়েছে আমার, এমন একটা পরিস্থিতিতে আছি
না পারছি বাপের বাড়ি গিয়ে থাকতে না এখানে থাকতে
মরে গেলেই ভালো হতো
অনাথরা কেন বেঁচে থাককে,কিসের তাগিদে??
তাদের দুনিয়া শূন্য হয়ে থাকে সবসময়
নিজের বাবা থেকেও আজ আমার বাবা নেই,,এত একাকিত্ব আমার আর সয় না
.
মুন চোখের পানি হাতের কুনুই দিয়ে মুছলো,সেই আবারও চোখ ভর্তি পানি এসে গেলো ওর
সন্ধ্যা গিয়ে রাত হয়েছে,সবাই যে যার রুমে
নীল চুপচাপ বিছানায় বসে আছে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে
মুন নিপার বিছানায় বালিশে মাথা রেখে বাহিরে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে,চাঁদ নেই,সম্পূর্ণ অন্ধকার,তাও সে তাকিয়ে আছে
ডিনারের সময় সবাই একজন আরেকজনকে ডাকবে
মুনের ভালো লাগছে না বলে সে উঠে বাসার বাহিরে বাগানের চেয়ারে এসে বসেছে এখন,বাগানের আলোতে বাগানটা স্পষ্ট তবে দূরে অন্ধকারময়
মশার আক্রমণ শুরু
মুনের এত বিরক্ত লাগছে তা বলার বাহিরে
সে এখন চেয়ারে পা তুলে বসেছে,,খুব রাগ হচ্ছে নিজের উপর
কেন সে সেদিন জীবন দিয়ে হলেও বিয়েটা আটকালো না??কেন কেন কেন!
.
নীল বারান্দায় এসে মদ এক গ্লাস খাচ্ছিলো,মুনকে যখন দেখেছে ও বাগানের দিকে যাচ্ছে তখন থেকে তার চোখ ওদিকেই ছিলো,এমনকি এখনও চেয়ে আছে সে
মুন এখনও নীলকে দেখেনি
ঠাস ঠুস করে এবার সে গায়ে থাপ্পড় মারছে
মশার আর নীলের উপরের রাগ সে এখন নিজের গায়ের উপর দিয়ে ঝাড়ছে
হঠাৎ সামনে কাউকে দেখতে পেয়ে তার ঠাস ঠুস বন্ধ হলো
নীল দাঁড়িয়ে আছে পকেটে হাত ঢুকিয়ে
মুন আরেকদিকে ফিরে গেলো সাথে সাথে
নীল মুনের চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে বললো”আঁচড়ে দেবো?”
.
হিয়াকে দেন,কোলে বসিয়ে ওর চুলে বেনি করে দেন
.
কেন?ওকে কেন দেবো?বউকে দেওয়া যায় না?
.
যায়,তবে আমি চাই না আপনার মতন লোক এমন করুক,আপনি ফালতু লোক একটা
.
আসলেই,আমি ফালতু,তাই তো যাকে খুব ভালোবাসতাম তাও তার বাবা আমার হাতে তাকে তুলে দেয়নি,মৃত্যুর আগ পর্যন্ত না
.
হ্যাঁ,আর ঐ ফালতু জিনিস এখন আমার কপালে জুটেছে
.
ফালতুকে ভালো বানাতে পারবে না?
.
পারতাম যদি সে তার মাথা থেকে ভূত নামানোর সামান্য টুকু চেষ্টা করতো
.
আমি তোমার হাসবেন্ড তাহা
.
তো?
.
তোমার যা যা দরকার তার সবই আমি দেবো
.
এসব শুনতে শুনতে কান পেকে গেছে.আপনি তো!!…..
.
নীল নিচু হয়ে মুনকে চেয়ার থেকে কোলে তুলে নিয়ে বললো”তো আর কোনো কথা না”
.
ভাবছেন কোলে নিলে আমি আপনাকে মাফ করে দেবো?
.
মাফ চাইনি
.
নীল মুনকে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো,ওকে বিছানায় রেখে ওর একদম কাছে মুখ এগিয়ে এনে বললো”আই এম সরি”
.
তো?
এখন কি করবেন যদি সরিতে মাফ না করি?
.
নীল চাদর টেনে মুনকে জোর করে শুইয়ে দিয়ে বললো”তোমার কেয়ার করবো,খুব কেয়ার করবো,সব ভুলে যাবে”
.
ভুলে যাওয়া আপনার উচিত,ঐ হিয়াকে
.
তাহা তুমি কেমনে পারো এত??আমি হিয়াকে ততটা মনে আনিনা যতটা তুমি হিয়াকে মাথায় আনো,আমার মনে হচ্ছে আমার চেয়ে তুমি হিয়াকে বেশি মিস করো
.
মুন কাঁথা সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে গিয়ে বললো”ডেইলি কোলে তুলে এনে ঢং করতে হবে না আর,আপনার হিয়া জানলে হার্ট এ্যাটাক হবে তার,আমি হেঁটে চলাচল করতে পারি
আর আপনার থেকে আর কোনো আশা নেই আমার,সুতরাং আমাকে আর এমন ধরে এনে বিছানায় শোয়াবেন না,আপনি আসলেই ফালতু লোক…..
.
নীল মুনের মুখ চেপে ধরে ওয়ালের সাথে লাগিয়ে ধরে ফেলেছে ততক্ষণে,আর কিছু বলতে দিলো না
মুন চোখ বড় করে নীলের দিকে তাকিয়ে আছে
নীল দাঁতে দাঁত চেপে বললো”ফের যদি হিয়ার নাম নিছো কিংবা আমাকে ফালতু বলছো তো তোমাকে লিচু গাছে উঠিয়ে সেখান থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেবো নিচে”
.
মুন ব্রু কুঁচকে চেয়ে আছে,নীল মুনের পিঠে হাত রেখে বললো”বারবার ছুঁতে চাই না,তুমি কেন বাধ্য করো আমাকে?”
.
মুনের মুখ থেকে নীল হাত সরাতেই মুন বললো”পিঠে হাত দিয়ে কি বোঝা চান?হিয়া তো এই সিন দেখলে মরে যাবে”
.
নীল রেগে গিয়ে এক টান দিতেই ফিতা খুলো গেলো,মুন চোখ বড় করে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ফেলেছে সাথে সাথে
.
আবার বলো ঐ নাম
.
আআআআআপপপনি এমন কেন করলেন
.
বলো শুনি,তোমার মুখ থেকে আবারও সেই নাম শুনতে চাই,বলো না
.
মুন ঢোক গিলে হাত নিয়ে ফিতা লাগিয়ে নিয়ে ঠিকঠাক হয়ে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে পিঠ ঢেকে বললো”বললাম,হিয়া!! হিয়া!!! হিয়া, এবার কি করবেন?”
.
নীল এগিয়ে আসতেই দরজায় নক হলো,মিশু ভাবী এসেছেন ওদের ডাকতে,তিনি হালকা কেশে বললেন”মুন???নীলকে নিয়ে আসো,,ডিনারের সময় হয়ে গেছে”
.
নীল সরে দাঁড়ালো,সাথে মুন ও
.
মুন দাঁত কেলিয়ে ভাবলো হিয়ার নাম নেওয়ায় এত পল্টি
!!!
এখন থেকে তাহলে হিয়ার নাম নিয়ে এই নীলের রঙ নীল থেকে লালে আনতে হবে,হুম যা বুঝলাম,তবে যেটা করলেন ঠিক করেননি,আমার তো লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছিলো,হুট করে এমন করবে ভাবতেই পারিনি আমি
অসভ্য লোক একটা কোথাকার!
.
কি গো মুন কাকে গালি দিচ্ছো?
.
মিশু ভাবী ভাত বাড়তে বাড়তে উর্মি ভাবীকে বললেন”হয়ত আমি ভুল সময়ে গেছি বলে নীলকে গালি দিচ্ছে”
চলবে♥

স্মৃতির দেয়াল🍁
#পর্ব_২১
Writer -Afnan Lara
.
সবাই একসাথে ডিনার করতে এসেছে,,নীল ভাবীদের সাথে চোখ মেলাতে পারছে না কিছুতেই
ভুলে একবার তাকিয়ে ছিলো,চেয়েই দেখেছিলো তারা হাসাহাসি করছে সবাই
মুন বোকার মতন এক কোণে বসে আছে আরাফকে কোলে নিয়ে
আরাফ হলো পপি ভাবীর ছোট ছেলে,সে মুনকে অনেক পছন্দ করে ফেলেছে যার কারণ মুনের কোল থেকে নামতে চাচ্ছে না
যে যার মতন ডিনার সেরে রাজ্যের গল্প করে চলে গেছে ঘুমাতে
মুন রান্নাঘরে এসে গ্লাসে গরুর দুধ ঢালছে বোতল থেকে,,এই বাসার সবাই নাকি রাতে শোয়ার আগে ভাত না খেলেও এক গ্লাস খাঁটি গরুর দুধ খায়
এই দায়িত্ব আজ মুনের ঘাড়ে পড়েছে আর তাই সে এখন তাই করছে,নাহার কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে
মুন চিনি দিয়ে গুলে দিলে সে সবার রুমে রুমে গিয়ে দিয়ে আসবে
মুন নাহারকে সবটা বুঝিয়ে দিয়ে চলে যেতে নিতেই নাহার বললো নীল ও নাকি খায়
মুন তাই হাতে করে এক গ্লাস নিয়ে গেলো,নীল বারান্দায় এসে চুপ করে বাগানের দিকে তাকিয়ে ছিলো এতক্ষণ
মুন দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে বললো”নিন!!আপনার দুধ!”
.
নীল কপাল কুঁচকে পিছন ফিরে তাকালো,মেয়েটা এত শয়তান তা আগে জানা ছিলো না,আমার দুধ মানে?
.
মুন ভাবছে মাত্র সে কি বললো,কথাটার মানে বুঝে নিজেই বেক্কল হয়ে গেছে,মাথা চুলকিয়ে পিছন ফিরে ছুটলো নিপার রুমের দিকে,নীলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে ও এই কথা বলার শাস্তিস্বরুপ না জানি কি করে বসে
.
নীল গ্লাসটা হাতে নিয়ে মুনের পিছু পিছু করিডোর পর্যন্ত এসে বললো”কোথায় যাচ্ছো??”
.
মুন থেমে গিয়ে পিছনে না তাকিয়েই বললো”নিপা আপুর রুমে,,বলেছিলাম না?”
.
এখনও জেদ??আমার জেদ তোমাকে দেখাই না বলে তুমি একের পর এক জেদ দেখিয়েই চলেছো,ফাইন,আমি আর কোনো কিছুতেই তোমাকে আটকাবো না,যাও নিপার রুমেই ঘুমাও
.
নীল চলে গেলো তার রুমের ভেতর,মুনের রাগ হচ্ছে,আবার নিজেই নিজেকে ঠাটিয়ে এক চড় মারতে ইচ্ছে করছে
সে ভেবেছিলো নিপার রুমে রাগ করে ঘুমাতে আসলে নীল হয়ত ওকে মানিয়ে বুঝিয়ে শুনিয়ে ফেরত নিয়ে যাবে,কিন্তু তা আর হলো কই,এই ব্যাটা আমাকে নিপা আপুর রুমে ঘুমানোর সোজাসাপ্টা পারমিশনই দিয়ে দিছে
ধুর ধুর!

নীল হাতের গ্লাসের দুধ শেষ করে টেবিলে সেটা রেখে দিলো,,আয়নার কাছে এসে বড় করে একটা শ্বাস নিলো সে
অনেকদিন জিমে যাওয়া হয় না,জিমে না গেলে যেই বডি আগে ছিল তেমনটা হয়ে যায়,ফিটনেস গায়েব
নিয়মিত জিমে যেতে হবে,বিয়ের চক্করে অনেক হেভিট আমার এতদিন অফ হয়ে ছিলো
এই মেয়েটা সারাক্ষণ আমাকে ব্যস্ত রাখে,শান্তিতে একটু জিরোতেও দেয় না,কিছু ভাবতে দেয় না,মনে হয় একটা দিন আসবে যেদিন আমি হিয়ার নামটা মনে করার সময় ও পাবো না
সেই দিন যেন না আসে,মেয়েটাকে লাই দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলে ফেলেছি
.
এএএএএএই
!
নীল মুনের হাত ধরে ফেললো,মুন দরজা খুলে চরকার মতন ঘুরতে ঘুরতে বিছানায় পড়ে যাচ্ছিলো,ঠিক সময়ে নীল ধরে ফেলেছে
.
কি হয়েছে তোমার?মাত্রই তো খুব রাগ আর জেদ দেখিয়ে নিপার রুমে গেছিলে তা আবার ফেরত এলে কেন?তাও দেখে মাতাল মাতাল মনে হচ্ছে তোমায়
.
আমি মোটেও মাতাল নই বুঝছো পুলিশ?
.
তাহলে এমন হেলেদুলে হাঁটছো কেন?
.
ঐ মিষ্টিপান খাওয়ার শখ জাগছিলো বলে খেয়েছি,আপনার কোনো সমস্যা?? আর আমি আপনার রুমে এমনি এমনি আসি নাই
নিপা আপুর বালিশ শক্ত অনেক,আমার বালিশ নিতে এসেছি
আপনার সাথে এক রুমে থাকার শখ নেই আমার
.
নাও ধরো বালিশ,যাও এখন
.
মুন ঠোঁটে লেগে থাকা পান হাতের কুনুই দিয়ে মুছে নীলের দিকে চেয়ে থাকলো
নীল ব্রু কুঁচকে বললো”সেই আশা করো না!! ভুলেও না”
.
আমার বয়ে গেছে,হিয়াকে কিস করা ছেলের ঠোঁট থেকে আবার কিস আশা করার
পান লেগেছে বলে মুচেছি,অন্য কোনো হাসবেন্ড হলে সুন্দর করে মুছে দিতো
হুহ!
.
মুন চলে গেলো বালিশ নিয়ে
নীল মুন চলে যেতেই লাইট অফ করে সেও বিছানায় ধপ করে শুয়ে পড়েছে
.
মুন বলািশ নিয়ে নিপার রুমে যাওয়ার সময় উর্মি ভাবী দেখলেন ওকে,তিনি সোজা গেলেন মায়ের রুমে
মা হাতে ভেসলিন লাগাচ্ছিলেন তখন
বারো মাসই তার হাত উসকোখুশকো থাকে
.
মা আসবো?
.
আরে উর্মি যে,আসো
.
বাবা কোথায়?
.
উনি তো বাথরুমে, কেন কি হয়েছে?
.
মা আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে,আমি মাত্র মুনতাহা কে দেখলাম বালিশ নিয়ে নিপার রুমের দিকে যেতে
ওরা কি আলাদা শোয়??এন্ড আই এম সিউর নীল ওকে বলেছে আলাদা শুতে
.
হুম,নীলেরই কাজ এটা,আমি কি করবো বলো,আমার মাথায় ধরে না,মেয়েটাকে মানতে যদি তোর এতই প্রব্লেম তাহলে ওকে জোর করে বিয়ে করার কি দরকার ছিলো
.
আমার মনে হয় আমাদের সবার মিলে ওকে বুঝানো উচিত
.
তোমার কি মনে হয় আমি ওকে বুঝাই না,আজ ৩টা বছর ধরে বুঝাচ্ছি কিন্তু সে তো হিয়াকে ছাড়া আর কিছুই বুঝে না
.
মুনের উচিত হালটা আরও ঘাড়ো করে ধরার,মেয়ে মানুষই পারে একটা পুরুষকে বদলাতে
.
হুমম,কিন্তু মুন তো উল্টা,নীল ওকেনকিছু বললে ও রেগে যায়
.
দাঁড়ান আমি কিছু করছি
.
উর্মি ভাবী হনহনিয়ে নীলের রুমের কাছে আসলেন,দরজায় কয়েকবার নক করতেই নীল এসে দরজা খুললো
.
নীল??মুন তো মনে হয় তোমার রুমে নেই,জলদি করে ওকে তোমার রুমে নিয়ে আসো,তোমার ভাইয়া এদিকেই আসছে
.
কিহ!ভাইয়া এদিকে আসছে কেন?
.
কি জানি,বললো তোমার আর মুনের সাথে কিসের কথা আছে
.
আচ্ছা!
.
নীল গেলো নিপার রুমে,মুন গাল ফুলিয়ে খাটের এক কোণায় বসে আছে
.
চলো আমার রুমে
.
আমি আপনার রুমে যাব না
.
ভাইয়া আমার রুমে আসতেছে,এভাবে তোমাকে আমাকে আলাদা রুমে দেখলে নির্ঘাত সন্দেহ করবে
.
আমার কি?
.
নীল রেগে মুনের কানে টেনে ধরে বললো”সোজা কথায় ঘি না উঠলে আঙ্গুল ব্যাকাতে হয়,আমি সেটা আজ বুঝলাম”
.
লাগছে,ছাড়ুন আমার কান
.
নীল মুনের কান টেনে ওকে রুমে নিয়ে আসলো,উর্মি ভাবী হাসছেন লুকিয়ে থেকে
নীল আর মুন রুমে ঢুকতেই তিনি বাহিরে দিয়ে দরজা লাগিয়ে ফেললেন
.
একি দরজা লাগালো কে?
.
কই আপনার ভাইয়া?মিথ্যা কথার জায়গা পান না?
.
ভাবী এসে বলেছিলো,নিশ্চয় ভাবী দরজা লাগিয়ে চলে গেছেন
সবাইকে তোমার সাইডে করে নিছো তাই না?
.
ভালো মানুষের পক্ষে সবাই থাকে
.
তার মানে আমি খারাপ?
.
আপনি অনেক অনেক খারাপ
.
নীল মুনের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে থাকলো,মুন চুপচাপ বিছানায় বসে বললো”নিপা আপুর রুমে ঠিক ছিলাম,আমাকে কি শান্তিতে ঘুমোতেও দিবেন না?”
.
আমার এত বড় খাট,১৪জন একসাথে শুলেও কেউ কারোর গায়ের সাথে লাগবে না,এখানে ঘুমালে তোমার কি প্রব্লেম?
.
হিয়া আপনাকে কিছু বলে না?এই যে আমরা একি বিছানায় শুই,কবে জানি বাচ্চার মা হয়ে যাই
.
নীল হাতের কব্জি ডলে বললো”আবার হিয়া?”
.
মুন একটু পিছিয়ে বললো”আচ্ছা মনে পড়েছে তখন কি করছিলেন,,আর নাম নিব না ঐ খালার”
.
নীল এক পাশে বসে নিজের রাগটাকে সামলিয়ে শুয়ে পড়লো চুপচাপ
মুন উঁকি দিয়ে নীলকে দেখছে ঘুমিয়েছে কিনা,,নীল চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে শুধু
মুন এপাশ ওপাশ করে নিজেও শুয়ে পড়লো,,ভেবেছিলো একরাত নীলের সাথে না ঘুমিয়ে ওকে টাইট দিবে,কিন্তু তা আর হলো কই
যাই ভাবি তাতেই কে জানি আসি পানি ঢেলে চলে যায়,ধুর ভাল্লাগে না
.
এত জোরে মনে মনে কথা বলছো কেন?
.
মুন মুখটা তুলে বললো”আমার মনের কথা বুঝেন?আমি তাহলে ধন্য!!ধন্য!!
.
নীল মুনের দিকে ফিরে হাত ভাঁজ করে বললো”তুমি ঝগড়া ছাড়া আর কিছু পারো না?”
.
অনেক কিছু পারি,তবে আপনার সাথে দেখানো জরুরি মনে করি না,কারণ আপনার তো হি…..
.
হি?
.
থাক বললাম না,ঘুমান,সকালে উঠে ওর কথা মনে করে অফিসে যাইয়েন,দিনটা খরমুজের মতন যাবে
.
মুন আরেকদিকে ফিরে গেলো,নীল ভাবলো মুনের রাগ ভাঙ্গাবে তা আর হলো না,মুন এখন এমন অবস্থায় আছে যে ওকে কিছু বুঝালেও ও বুঝতে চাইবে না
ওর মাথায় সুঁই সুতো দিয়ে গেঁথে গেছে নীল হিয়াকে ভালোবাসে,আর কাউকে কখনও বাসবে না
.
পরেরদিন সকাল সকাল মুন গেছে গোসল করতে
এরা জানে আমরা একে অপরকে সহ্য করতে পারি না
তাও প্রতিদিন গোসল করেছি কিনা সেটা নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করে,মন চায় দেখাতে যে দেখো আমরা সারাদিন একটা আরেকটার মাথার চুল ছিঁড়ি,আমাদের মাঝে মিল মোহাব্বত নাই,তাইলে গোসল করবো কেন??দুজন সুখী স্বামী স্ত্রী ফরজ গোসল করে,সেটা তাদের উপর ফরজ
.
মুন মনে মনে এসব ভাবতে ভাবতে গোসল করে বের হলো
নীল এখনও বেঘোর ঘুমে
মুন নীলের এমন সুখ দেখে তেলেবেগুনে জ্বলছে
নীলকে তো আর কেউ গোসল নিয়ে কিছু বলে না,বলে তো শুধু আমাকে
আরে তোমরা দেখো না,এই নীলের জন্য আমাকে দিনের বেশিরভাগ সময়ে নিপা আপুর রুমে থাকতে হয়
তাহলে আমাদের মাঝে প্রেম পিরিতি আছে সেটা তোমরা সিউর কেমনে??
.
মুন চুলগুলো হাতের মুঠোয় এনে নীলের গায়ের দিকে এক ঝাড়া দিয়ে উধাও হয়ে গেলো নিমিষেই
নীল হাত আর পিঠ মুছতে মুছতে উঠে বসলো
এটা যে মুনের কাজ তা উঠার সাথে সাথেই টের পেয়েছে সে
কারণ মুন যে শাওয়ার জেল ইউজ করে তার স্মেলের সাথে নীল পরিচিত
বিছানা থেকে নেমে সে এদিক ওদিক তাকালো
মুন করিডোরে লুকিয়ে ছিলো এতক্ষণ ধরে
নীল দরজার ফাঁকে মুনোর হাত দেখতে পেয়ে সেদিকে গিয়ে মুনের হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে এনে বললো”শান্তিতে ঘুমাচ্ছিলাম তা তোমার হজম হচ্ছিলো না?”
.
মুন হাত মুচড়াতে মুচড়াতে বললো”হজম না হওয়ার কি আছে,চুল ভিজা বলে ঝেড়েছি,আপনার গায়ে পড়লে আমি কি করবো?”
.
পানি আমার গায়ে পড়েছে তা কি আমি তোমায় বলেছি?তাহলে তুমি জানলে কি করে?
.
মুন হালকা কেশে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে
নীলের ফোন বাজছে ক্রমাগত
ওয়ারড্রবের উপর থেকে ফোন নিয়ে মুনের দিকে তাকিয়েই কানে ধরলো সে
ঠিক সেসময়ো মুন নীলের হাতে কামড় বসিয়ে এক দৌড় মেরেছে
নীল ফোনটা ফেলে মুনকে ভালোমতন ধরে আটকে ফেললো
.
আমার থেকে পালাবে??কে বাঁচাবে তোমায়?এত দুষ্টুমি কে শিখিয়েছে তোমাকে,আজ তোমার একদিন কি আমার যতদিন লাগে
একটা বাচ্চা মেয়ে হয়ে কিনা পুলিশ অফিসারকে জ্বালাতন করো,, তোমাকে এর শাস্তি আজ দেবোই
.
কি করবেন আপনি,হাত ছাড়ুন নাহলে চেঁচাবো
.
হিয়া সবটা শুনছে,কলটা ওরই ছিলো,নীল মুনের হাত ধরে টেনে এনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললো”আমার ১০টা শার্ট আইরন করে দিবা,এটা তোমার শাস্তি”
.
আমি পারবো না আপনার ঐ হিয়াকে বলেন
.
নীল মুনের মুখ চেপে ধরে বললো”আবারও বলো ঐ নাম,তোমাকে ঐ নাম নিতে মানা করি নাই?”
.
হযবরললললএবিসিডি
.
অক্ষর উচ্চারণ করছো কেন?কথা বলা ভুলে গেছো নাকি?
.
এভাবে মুখ টিপে ধরলে কথা বলবো কি করে?আপনি আমাকে এমন টর্চার করেন কেন,আমাকে কি জেলখানার চোর ডাকাত পেয়েছেন?
.
তুমি তো তাদের ও হার মানাবে,আমাকে পানি দিয়ে ভিজিয়ে ঘুম ভাঙ্গিয়েছিলা না?দাঁড়াও,,দেখাচ্ছি খরমুজের মতন দিন কাটানো কাকে বলে
চলবে♥