স্মৃতির দেয়াল পর্ব-৩৭

0
2491

স্মৃতির দেয়াল🍁
#পর্ব_৩৭
Writer -Afnan Lara
.
কেন?
.
কেন??তোমার রুম কি এটা?তোমার রুম হলো আমার রুম,,তাহলে তুমি এখানে কি করতেছো?আবার বলছো “কেন?”
.
ওহ হ্যাঁ
না না,আমি আজ এখানেই ঘুমাবো,আপনি যান
.
না তুমি আমার রুমে ঘুমাবে,সোজাসুজি যাবা নাকি টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাব?
.
মুন ঢোক গিলে নীলের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে,একটা কিস মানুষকে কতটা বদলে দিতে পারে তার জলজ্যান্ত প্রমাণ হলো নীল নিজেই
এমন জানলে বিয়েতে কবুল বলেই চুম্মা দিয়ে দিতাম এতদিন ধরে তাহলে এত কাঠখড় পোড়াতে হতো না আমাকে
.
এসব ভাবতে ভাবতে মুন খেয়াল করলো নীল ওর হাত শক্ত করে ধরে রেখে ওকে নিয়ে যাচ্ছে রুমের দিকে
মুন ও চুপচাপ হেঁটে চলেছে,,রুমে নিয়ে এসে নীল হাতটা ছেড়ে দিলো মুনের
মুন চুপচাপ গিয়ে বিছানায় বসে বললো”হঠাৎ আমাকে…”
.
এমন ভাবে কথা বলতেছো যেন তোমার আর আমার বিয়ে হয়নি এখনও
.
না সেটা না,,নিপা আপুর রুমে তো আমি অনেকবারই ঘুমাতে যেতাম,আপনি তো ওভাবে জোর করে নিয়ে আসতেন না, তাই একটু অবাক হলাম এই আর কি
.
এবার থেকে শুধু অবাকই হবে

সাকিবের জ্ঞান ফিরেছে রাত ১টার দিকে
চোখ খুলে পাশেই বড় বোন তিশাকে দেখতে পেলো সে
ওপাশে সোফায় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে হিয়া
সামির শোয়া থেকে উঠে বসলো,তিশা আপু তার বাচ্চাকে সেরেলাক খাওয়াচ্ছিলেন,কিসের যেন শব্দে বাবুটা জেগে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিলো,থামাথামি নাই,তাই সেরেলাক গুলে সেটা খাওয়ানোই শ্রেয় মনে করলেন তিনি,সামিরকে উঠতে দেখে বললেন”উঠিস না”
ততক্ষণে সামির উঠে বসেও গেছে
হিয়া মাথা তুলে সামিরকে দেখে এক ছুটে কাছে এসে দাঁড়ালো
.
সামির হিয়াকে দেখে চমকে উঠেছে,হিয়ার মুখের অবস্থা নাজেহাল
কেঁদে কেঁদে ভাসিয়ে দিয়েছে মনে হয়
তিশা আপু হঠাৎ বাবুকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন,সাকিব কিছু বলতে যায়ার আগেই হিয়া ওকে ঝাপটে ধরে আবারও কেঁদে ফেললো
কেঁদে কেঁদে বললো”আর কখনও ফুলের তোড়া চাইবো না আমি”
.
কেন চাইবে না?অবশ্যই চাইবে,,
.
আপনার আজ কিছু হয়ে গেলে আমি আমাকে কখনও ক্ষমা করতে পারতাম না
.
এত কেয়ার?এতদিন ধরে লুকিয়ে রেখেছিলে?
থ্যাংক গড! আজ আমার এক্সিডেন্টটা হলো, তা নাহলে আমি তো জানতামই না হিয়া আমার জন্য এতটা সিরিয়াস
.
চুপ!আর একটা কথা ও নয়,তিনটা বছরে যে সম্পর্কটা আমাদের মাঝে গড়ে উঠেছে সেটাকে তো আর এভাবে ফেলে দেওয়া যায় না,হ্যাঁ ঠিক আমি আপনাকে ছুঁয়েও দেখিনি
ছোঁয়া মানেই তো আর ভালোবাসা না,একসাথে একই ছাদের নিচে ছিলাম আমরা
.
ওকে ফাইন,মানলাম,কান্না থামাও,,আগে বলো ডিনার করেছো?
.
হিয়া ব্রু কুঁচকে তাকালো
.
তার মানে করোনি,হ্যাঁ করবে কি করে,পুরো সময়টাতে তো মনে হয় খালি কেঁদে ভাসিয়েছো তুমি,আচ্ছা আমরা এখন একসাথে খাব,আমারও বড্ড খিধে পেয়েছে
.
আপনি বসুন,,আমি খাবার আনছি,আপু আসার সময় নিয়ে এসেছিলো

নীল ঠিক দুটোর দিকে উঠে বসে গায়ের টিশার্টটা খুলতে গিয়ে দেখলো মুন ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে
নীল ওর দিকে চেয়ে আছে দেখে সে বললো”আজ দেখেই ছাড়লাম ঠিক কখন আপনি উদম গায়ে শোন”
.
বাহ,,কত বড় কাজ করে ফেললে,তোমাকে তো এওয়ার্ড দেওয়া উচিত
.
তো দিন
.
নীল মুনকে জোর করে শুইয়ে দিয়ে বললো”ঘুমাও”
.
মুন হাত ভাঁজ করে রেখেছে,নীল দুষ্টুমি করে একটু এগোতে যেতেই মুন মুখে কাঁথা টেনে ফেলে বললো”গুড নাইট”
.
পরেরদিন সকাল হতে না হতেই নীল রেডি হয়ে অফিসের দিকে দৌড় মেরেছে,কিসের নাকি স্পেশাল ডিউটি আজ অন্য জায়গায়
মুন এখনও ঘুম ঘুম চোখে কাঁথার ভেতরে,,কেউই উঠেনি কারণ সকালটা এখনও শুরু হয়নি,নীল জলদি করেই গিয়েছে,মর্নিং ডিউটি আজ
পুলিশদের যখন তখন ডিউটিতে আসতে হয়,টাইম টেবিল নাই কোনো
মুন ঘুম থেকে উঠেই শুনলো এক খারাপ সংবাদ
আর তা হলো বাবার শরীর খারাপ,,বুকে ব্যাথা,তবে হার্ট এটাক না
মুন তড়িগড়ি করে ছুটেছে বাসার দিকে,,
নীল ডিউটি সেরে ফিরলো সকাল এগারোটার দিকে,মুনকে সারা বাসায় দেখতে না পেয়ে তার ভীষণ চিন্তা হলো,কারণ তুষার যে মুনকে একা পেলে ক্ষতি করার চেষ্টা করবে তা সে ভালো করেই জানে
মা জানালো তারা গিয়ে মুনের বাবাকে দেখে এসেছে,মুনের বাবা অনেক অসুস্থ,মুন সেখানেই আছে এখন
নীল তাই অফিসের পোশাক পাল্টে সেও গেলো,ভাবলো আসার সময় মুনকে সাথে নিয়ে আসবে
কিন্তু তা আর হলো না,মুন একা হাতে বাবার সেবা করছে,মুনকে ছাড়াই ফিরতে হলো ওকে
আজ মুনকে ছাড়া তার পুরো রুমটা ফাঁকা লাগছে,মুন থাকলে হিয়াকে নিয়ে ঝগড়া শুরু করে দিতো,এখন সে নেই,ঝগড়াও নেই
সেই কখন দেখলাম বিকাল চারটা বাজে,এখন মাত্র চারটা দুই বাজলো,সময় এত ধীরে যাচ্ছে কেন
কাল সকালটা কখন হবে?
কিছুক্ষণ টিভি দেখলো নীল,তারপর অফিসের কিছু ফাইল ও ঘেঁটেঘুটে নিলো,ওমা সবেমাত্র সন্ধ্যা ৬টা বাজে
মুনকে একটা ফোন দেবো?
আচ্ছা দিই,তাও তো একটু সময় যাবে
.
অনেক ভেবে নীল মুনকে একটা ফোন করলো,,প্রথমবার না ধরলেও পরেরবার ধরলো মুনতাহা
হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে একরাশ অভিমান নিয়ে নীল বললো”নিজে কল করতে পারো না?”
.
আমি কি করে,,অনেক ব্যস্ত যে
.
হ্যাঁ,ব্যস্ত মানুষ,এতই ব্যস্ত যে তার যে একটা স্বামী আছে তাও ভুলে গেলেন আপনি,তাই না?
.
এভাবে কেন বলেন??বাবা অসুস্থ, আসার পর থেকে তার পাশ থেকে নড়িনি
.
নীল রাগ করে লাইন কেটে দিলো,,একটু রাগ দেখালো
তবে রাগটা যুক্তি সংযত না
ঠিকই তো,ওর বাবা অসুস্থ ওর তো ব্যস্ত থাকারই কথা,
রাগ করা উচিত হয়নি একদম
.
মুন রাতে ঘুমাতে এসে নীলকে ফোন করলো আবার
নীল তখন ভিডিও গেমস খেলছিলো,মুনের কল দেখে সে তো খুশিতে আটখানা,তাও একটু ভাব দেখিয়ে শুরুতেই কলটা রিসিভ করলো না,একটু দেরি করেই রিসিভ করলো
মুন জানালো সে কালকে আসতে পারবে কিনা তার ঠিক নেই
নীলের মেজাজ এবার চরম শিখরে,মুনকে ছাড়া মনে হচ্ছে দুনিয়াতে সে অসহায়,আর মুন বলে কিনা কাল ও আসবে না,এটা কিছুতেই হতে পারে না
.
কি হলো?কিছু বলছেন না যে
.
থাকো না,আজীবনের জন্য থেকে যাও,আমি তো আর বলিনি আসতে
.
আমাকে নিতে আসবেন না?
.
তুমি তো বললে কাল আসবে না
.
বিকালে আসবো,এসে নিয়ে যাইয়েন
.
আচ্ছা
.
আচ্ছা
.
আর কিছু বলবে?
.
নাহহ,ঘুমান
.
আমাকে মিস করো??
.
করলে বা কি,সে কি আমাকে মিস করে??
.
হুম করে,পুরো রুমটা যেন ভূতের রুম হয়ে গেছে,প্লিস যত জলদি পারো আসার চেষ্টা করো,আমার আর ভাল্লাগছে না
.
এখন তো সময় হিয়ার কথা ভাববার,সেটা না করে আমাকে নিয়ে ভাবছেন?
.
তোমাকে নিয়ে ভাবতে তোমার থেকে পারমিশন নিতে হবে আমায়?
.
ভাবেন,আমার কি,,একবার একজনের কথা ভাবেন,আপনার যা খুশি তাই ভাবেন
.
ঘুমাও তো,ঝগড়া করা ছাড়া আর কোনো কাজ নাই তার
.
নীল লাইনটা কেটে দিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো,,মুনের সাথে কথা বলে বেশ ভাল্লাগছে তার
ঘুমটাও হলো ভালো,সকালে ঘুম ঘুম চোখে নীল বললো”মুন!বারান্দার পর্দা সরালে ক্যান,আরেকটু ঘুমোতে দেও,কাল আমি ভোরে উঠেছিলাম সেই খেয়াল আছে তোমার?”
.
হুম মনে আছে নীল ভাইয়া
.
নীল চমকে উঠে বসলো,নিপা পর্দা সরিয়েছে,মনে পড়লো মুন তাদের বাসায়,এখানে নেই
নীল মাথা চুলকিয়ে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই নিপা বললো”খুব মিস করছো বুঝি?”
.
একটু
.
তো যাও,শশুড়বাড়িতে কিছু ক্ষন থাকলে তো আর মানুষ কথা শুনাবে না
আসার সময় নাহয় ওকে নিয়ে এসো
.
হুম,ডিউটি শেষ করে যাব ওকে আনতে

আজ বেশ জলদিতেই নীল তার কাজ টা শেষ করলো,,সোজা যাবে মুনদের বাসায়
ওর প্রতি এত টান তা কাল বিকাল থেকে টের পাচ্ছি,যেন দম বন্ধ হয়ে ছিলো আমার
পথ শেষ হচ্ছে না,সময় যাচ্ছে না,কিসব হচ্ছে আমার সাথে বুঝছি না
.
২০মিনিট লাগে মুনদের বাসায় যেতে আর আজ মনে হলো ১ঘন্টা লেগেছে,,মুন উঠানে এসে বাবার গামছা রোদে দিচ্ছে,নীলকে দেখে মুচকি হাসলো সে,তারপর কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”আর থাকতে পারলেন না বুঝি?”
.
হুম,পারলাম না
.
এমন করে বদলানেন কেন বলুনতো?
.
জানি না ঠিক,তবে কিছুই ভাল্লাগছিলো না
.
হিয়াকে কল করতেন,তাহলে আর আমার কথা দ্বিতীয়বার মনে আসতো না আপনার
.
সারাক্ষণ তোমার নামের চরকা ঘুরছিলো,ওর কথা মাথাতেই আসেনি,
.
ভেতরে আসুন,নুডুলস খাওয়াবো,বাবাকে দেখে আসুন গিয়ে
.
ঠিক আছে
.
মুন নুডুলস রাঁধতে রাঁধতে ওকারণেই হাসছে
বিয়ের আজ এতটা দিনপর তার মনে হলো সে সুখী
অথচ নীল নিজ থেকে ওকে এখনও ছুঁয়েও দেখেনি তাও নীলের এভাবে আনচান ভাবটা অনেক ভাল্লাগলো মুনের
দূরে গেলেই বুঝি মানুষ আপন জনের কদর বোঝে
নীল তো একদম বেপরোয়া হয়ে গেছে দেখছি
.
কি গো মেয়ে, ওমন করে হাসছিস কেন?
.
হাসবে না দাদি?নীল দুলাভাই এসেছে বলে কথা
.
তাই নাকি,তাহলে শরবত বানা,আমি দেখা করে আসি
.
রুশা এগিয়ে এসে হাতের কুনুই দিয়ে মুনকে একটু খোঁচা মেরে বললো”তা এত হাসির কারণ কি?ভাইয়ার হাতে তো চকলেট চিপস দেখলাম না কিংবা কাঁচা আম ও না,তাহলে?”
.
ও তুই বুঝবি না,বিয়ে হলে বুঝবি,নে ধর এই শরবত তোর দুলাভাইকে দিয়ে আয় তো দেখি,
.
যাচ্ছি,বলে দেবো তুমি মিটমিট করে হাসতেছো
.
একটা চড় মারবো,খুব শয়তান হয়েছিস একলা ঘরে থেকে
.
মিসেস সেলিনা বাসায় নেই,,তিনি তার মায়ের বাসায়,নাহলে মুন বাসায় এসেছে দেখলে তুলকালাম বাঁধাতেন
তার উপর নীল এসেছে দেখলে তো মহাযুদ্ধ শুরু করতেন
তার মমায়ের বাড়ি বেশ দূরে বলে আসতে দেরি হচ্ছে তার
.
হালকা নাস্তা সেরে মুনের বাবার সাথে একটা দুটো কথা বলে নীল মুনকে চেপে ধরলো বাসায় ফেরত আসার জন্য
মুন বললো বিকাল ছাড়া যাবে না
নীলের এবার প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে,বিকাল পর্যন্ত থাকা পসিবল না,বাসায় ফিরে কিছু ফাইল চেক করতে হবে,সে এসেছিলো মুনকে নিয়ে যাবে বলে
শেষে মুন বললো সে একা একা বিকালে বাসায় ফিরতে পারবে
.
না দরকার নাই,আমি গেলে তোমায় নিয়েই যাব,আর তা নাহলে যাব না,এখন গেলে কি হবে?
তোমার বাবা তো সুস্থ হয়ে গেছেন
.
রান্নাটা সেরে দিতাম,রুশা ভালোমতন রাঁধতে জানে না
স্বাদহীন তরকারি খেলে বাবা আবার অসুস্থ হয়ে যাবেন
মা বিকালেই ফিরবে
আর দাদি তো হাঁটু ব্যাথার জন্য এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না
.
আচ্ছা রেঁধে নাও,রান্না শেষ হলেই আমরা চলে যাব,ওকে?
.
আচ্ছা
.
মুন রান্না সেরে নিলো দেড় ঘন্টার ভেতরে
নীল সেই কখন থেকে জিপের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো
মুনকে আসতে দেখে তার এতক্ষণের অপেক্ষার যেন মিষ্টি ফলাফল পেলো
মুখে হাসি ফুটিয়ে দরজা খুলে দিলো নীল,,মুন বসতে বসতে বললো”সত্যি!আপনার সব কাজ কর্মে অবাক হচ্ছি রীতিমত
চলবে♥