#স্মৃতির শহর
#পর্বঃ১০
#তানিশা সুলতানা
নিজেকে পৃথিবীর সব চেয়ে সুখী ব্যক্তি মনে হচ্ছে রাইয়ের। এতো ভালোবাসা আদর যত্ন আগে কখনোই পায় নি রাই। আদির মা আগেও রাইকে ভালোবাসতো। কিন্তু আজকের মতো এতো ভালো আগে কখনোই বাসে নি।
আদির বাবা নিজের পাশে বসিয়ে রাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
“বেশি বেশি খেতে হবে কিন্তু মামনি। গোলুমলু নাতনী চায় আমার।
রাই প্রতিউওরে মুচকি হাসে।
অহি রাইয়ের গা ঘেসে বসে আছে। এটা সে বলেই যাচ্ছে।
আদির মা হাতে এক প্লেট ফল এনে রাইয়ের সামনে রাখে
” চুপচাপ শেষ করো।
চোখ রাঙিয়ে বলে।
“আন্টি এতো খেতে পারবো না।
অসহায় মুখ করে বলে রাই।
” শুনছি না আমি। শেষ করবে তারপর রুমে যাবে। তার আগে নয়।
বলেই আবার রান্না ঘরে চলে যায় উনি। রাতের খাবার বানাচ্ছে। ওনাকে সাহায্য করছে দাদিমা।
“তারাতাড়ি খেয়ে নে
অহি রাইয়ের মুখে ফলে তুলে দেয়। রাই মুচকি হেসে খায়।
” তারাতাড়ি শেষ করে নাও। আমি যাই কিছু কাজ আছে।
শশুড় মশাই চলে যায়।
আধঘন্টা হবে এখানে এসেছে রাই। বাড়িতে ঢুকতেই অহি দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে রাইকে। সবাই ঘিরে ধরে। বাচ্চা হওয়ার কথা সবাইকে বলে দিয়েছে আদি। কিন্তু সবাই এতো খুশি কেনো? এতোখনে তো রাইকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার কথা?
ভাবছে রাই।
“এই কি ভাবছিস? তুই এখন এমন ভাবতে থাকে আমার পুচকোও তো পেটে থেকেই ভাবতে শুরু করবে।
অহি এক গাল হেসে বলে।
রাই অহির পিঠে থাপ্পড় দেয়।
” যাই বলিস রাই। আমার ভাই কিন্তু খুব এডভান্স। কয়েকদিনেই
চোখ টিপ দেয় অহি। রাই বড়বড় চোখ করে তাকায় অহির দিকে।
“বলবো এই কথা তোর ভাইকে?
কান মলে দিয়ে বলে রাই।
” প্লিজ বোইন বলিস না। আমাকে আস্ত চিবিয়ে খাবে।
কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে অহি।
সব গুলো ফলে শেষ করতে পারে না রাই। অহির কল আসাতে চলে যায় অহি। আর এই ফাঁকেই রাই চলে যায় রুমে।
বেশ ট্রায়ার্ড লাগছে। এখন একটা লম্বা ঘুম প্রয়োজন।
রাই হাই তুলতে তুলতে রুমে ঢুকে।
আদি উপুড় হয়ে শুয়ে ফোন দেখছে।
আদিকে দেখেই রাইয়ের রাগ হয়। হনুমান একটা
ওইভাবে রাইকে ফেলে চলে আসলো?
বজ্জাত লোক একটা।
রাইয়ের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপে। লোকটাকে একটু জ্বালানো যাক।
চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে রাই। পায়ে হাত দিয়ে ঝ
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে রুমে ঢুকে। এমন ভাব করে যেনো পায়ে ব্যাথা পেয়েছে।
ও মা কি ব্যাথা
জোরে জোরে বলতে থাকে রাই।
আদি দ্রুত ফোন রেখে ভ্রু কুচকে রাইয়ের দিকে তাকায়। রাইকে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখে কপালে ভাজ পরে।
“কি হয়েছে? আর ইউ ওকে?
রাই বিছানায় বসে। পায়ে হাত বুলাতে থাকে।
” আপনি চলে আসার পরে আপনার পেছনে দৌড় দিতে গিয়ে পড়ে গেছিলাম। ভীষণ ব্যাথা পেয়েছি পায়ে।
আদি রাইয়ের পায়ে হাত দেয়
“শুধু পায়ে? কোমর পা পেটে তো লাগে নি? ডাক্তার ডাকবো? এতোখন কই ছিলা তুমি? ডাকো নি কেনো আমাকে? পেটে ব্যাথা করছে?
চলো এখুনি হাসপাতালে যাবো আমরা।
আদি বিচলিত হয়ে বলে। বারবার রাইয়ের মুখে হাত দিচ্ছে। পেটের কাছে হাতটা নিয়ে আবার ফিরিয়ো আনছে।
রাই হা করে তাকিয়ে থাকে আদির মুখের দিকে। বাচ্চাটার জন্য কতো দরদ। কতো ভালোবাসা। অথচ যে ওর বাবা সে একবার খোঁজও নেয় না।
রাই আদির হাতটা ধরে পেটের ওপর রাখে। আদি শান্ত হয়ে যায়। হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে।
” একদম ঠিক আছে ও। আর আমারও কিছু হয় নি।
মুচকি হেসে বলে রাই।
আদি জোরে শ্বাস টানে। চোখ বুকে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে নিজেকে শান্ত করে।
“আপনি আমাকে রেখে চলে এসেছিলেন তার শাস্তি দিলাম এটা।
” এরকম শাস্তি আর কখনো দিও না।
শক্ত গলায় বলে আদি।
“খুব সাবধানে চলতে হবে তোমায়। কেমন
আরেকটা হাত রাইয়ের গালে দিয়ে বলে।
রাই মুচকি হাসে।
“আপনার যে বউ হবে সে খুব লাকী। এতো কেয়ারিং হাজবেন্ড পাবে।
বিরক্ত হয় আদি। রাইয়ের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
” বলছিলাম কি আমি চলে যাওয়ার আগেই খুঁজে নিয়েন বিয়েটা আমি দেখে
আর কিছু বলতে পারে না রাই। আদি নিজের ওষ্ঠদ্বয় দিয়ে রায়ের ওষ্ঠদ্বয় দখল করে নেয়। বড় বড় চোখ করে তাকায় রাই। এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
কয়েক সেকেন্ড পরেই আদি দুরুত্ব বজায় রেখে বসে। রাই মাথা নিচু করে বোঝার চেষ্টা করছে এটা কি হলো?
“নেক্সট টাইম বিয়ে চলে যাওয়া এসব নিয়ে কথা তুললে এর চেয়েও বেশি কিছু হবে।
আবার ফোন হাত নিয়ে বলে আদি।
রাই এখনো নির্বাক হয়ে বসে আছে।
” খেয়েছো?
আদি রাইয়ের দিকে না তাকিয়েই বলে।
রাই অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় আদির দিকে।
“এটা কি হলো?
আদি ফোনটা রাখে।
” প্রশ্নটা তো আমার করার কথা। তুমি আমার হাতটা তোমার পেটের ওপর রাখলে। আরে বাবা বেবির এখনো তিন সপ্তাহও হয় নি। এখনই ওকে ফিল করা যাবে না। আট নয় মাসে ঠাস ঠাস লাথি মারবে তোমায় তখন কান পেতে উপভোগ করবো আমি।
বুঝলে?
রাইয়ের নাক টেনে বলে আদি।
রাই দাঁত কটমট করে তাকায় আদির দিকে।
কতো নির্বিঘ্নে কথা ঘুরিয়ে নিলো।
আস্ত একটা হনুমান।
“এটা যেনো নেক্সট টাইম না হয়?
চোখ পাকিয়ে আঙুল তুলে বলে রাই।
” আমিও সেটাই বলতে চাইছি। এমনটা নেক্সট টাইম করবে না।
আদিও চোখ পাকিয়ে আঙুল তুলে বলে।
“হনুমান একটা
বলেই রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াশরুমে ঢুকে পরে রাই।
আদি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
” পাগলী একটা।
🥀🥀🥀🥀
ফলে খেয়েই পেট ভরে গেছে রাইয়ের। এখন আর কিছুই খাওয়ার অবস্থা নেই। তবুও শাশুড়ীর জোরাজুরিতে খেতে বসতে হয়েছে রাইয়ের। আদি মুচকি মুচকি হাসছে। ভালোই জব্দ হয়েছে মেয়েটা।
শাশুড়ী পালন শাক দিয়ে ভাত মেখে রাইয়ের মুখের সামনে নেয়। পালন শাক এমনিতেই রাই খায় না। দেখেই বমি পায় রাইয়ের।
মুখ চেপে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। আদি সবে ভাত মুখে পুর ছিলো রাইকে দৌড়ে যেতে দেখে ভাত রেখে রাইয়ের পেছন পেছন যায়।
বমি করে বেশ ক্লান্ত হয়ে গেছে রাই। পেট টাও খালি হয়ে গেছে। চোখে মুখে পানি দিয়ে হেলেদুলে বাইরে আসে।
“তুমি পলান শাক খাও না বলো নি কেনো? মুখ নেই তোমার সাথে?
আদি শক্ত গলায় বলে।
” মনে ছিলো না।
রাই আমতাআমতা করে বলে।
“ওকে চলো
আদি আবার রাইয়ের হাত ধরে নিয়ে যায়। টেবিলে বসিয়ে দেয়।
” বলো কি খাবে?
আদি জিজ্ঞেস করে।
“আলু ভর্তা আর ডাল
রাই মুখ বাঁকিয়ে বলে।
রাই জানে আজ এসব রান্না হয় নি। তবুও বলেছে আদিকে জ্বালানোর জন্য। কত বড় মুখ করে জিজ্ঞেস করলো ” বল কি খাবে? ” দেখি এবার কোথা থেকে আনে।
‘”একটু বসো আমি করে আনছি।
বলেই শাশুড়ী রান্না ঘরে চলে যায়।
রাইয়ের মন খারাপ হয়ে যায়।
“মা দাঁড়াও
রাই শাশুড়ীর কাছে যায়।
” আমি তো এটা এমনি বলেছি ওনাকে জ্বালানোর জন্য। আমি মুরগির পা দিয়ে ভাত খাবো।
“ঠিক তো
” হুমম পাক্কা
এখনো শাশুড়ী খাইয়ে দিচ্ছে রাইকে। রাই আদির দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁ কায়। আজকে একটু বেশি ফ্রী হয়ে গেছে আদির সাথে। খুব ভালো লাগছে রাইয়ের। এটাকেই নিজের বাড়ি মনে হচ্ছে। সারাজীবন এখানে থেকে যাওয়ার লোভ হচ্ছে। এদের এতো ভালোবাসা থেকে নিজের সন্তানকে বঞ্চিত করতে মন চাইছে না।
চলবে