স্মৃতির শহর পর্ব-০৯

0
459

#স্মৃতির শহর
#পর্বঃ৯
#তানিশা সুলতানা

এক দৃষ্টিতে রাই তাকিয়ে আছে সামনে থাকা কবর টার দিকে। ইট সিমেন্ট দিয়ে বাঁধাই করা কবরটা। তারওপর বড় করে লেখা “মা” কাচা হাতের লেখা। মনে হচ্ছে কোনো দশ বারো বছরের বাচ্চা লিখেছে। কিভাবে লিখলো?
নিশ্চয় এখানে যখন সিমেন্ট দিয়ে বাঁধাই করা হচ্ছিলো তখন লিখেছে।
চোখ দুটো টলমল করে ওঠে রাইয়ের। এতোগুলো দিন তো এই বাড়িতেই ছিলো কই কখনো তো কেউ বলে নি এটাই ওর মায়ের কবর। রাইয়েরই বা কখনো কেনো মনে হলো না এই কবরটা কার?
আদি শক্ত করে ধরে আছে রাইয়ের হাত।
“তোমার কি কিছুই মনে নেই রাই? কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে এখানে তোমার। তোমার ছোট বেলা। মায়ের আদর, মায়ের কবর জড়িয়ে কান্না করা। কিছুই না?
নির্বিক ভাবে প্রশ্ন করে আদি।
” নাহহহ
ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে বলে রাই।
“আচ্ছা বেপার না। এটা তোমার মায়ের কবর। এখানেই ঘুমিয়ে আছে তোমার মা। তোমার যখন দশ বছর বয়স তখন তোমার মা (তানিশা সুলতানা) ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। প্রতিদিন কবর জড়িয়ে কাঁদতে তুমি। আর তোমায় সামলে নিতাম আ…
বাকিটা বলে না আদি থেমে যায়। কি দরকার পুরোনো কথা তুলে।
রাই চোখ মুছে নেয়।
” মায়ের কবর ছুঁয়ে দেখবে না?
“আমি বাড়ি যাবো
চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে বলে রাই।
” কেনো?
“পুরোনো কিছু মনে করতে গেলেই আমার মাথায় যন্ত্রণা হয়।
আদি বুঝতে পারে রাইয়ের মাথা ব্যাথা করছে।
” আচ্ছা চলো।
কিন্তু মায়ের কবরটা ছুঁলে কি হয়?
আদি আবারও বলে।
“ভালো লাগছে না আমার।
রাইয়ের হাত ধরে উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করে।
“রাই মা
সামনের মানুষটিকে দেখে আদি বেশ বিরক্ত হয়। রাইও খুশি হয় না। লোকটা রাইয়ের বাবা ভাবতেই তাচ্ছিল্য হাসে রাই। আচ্ছা আজ যদি মা বেঁচে থাকতো তাহলে নিশ্চয় রাইয়ের জীবনটা এমন হতো না। খুব সুন্দর হতো।
” কখন এসেছো?
এক গাল হেসে ওদের দিকে এগিয়ে এসে বলে রাইয়ের বাবা।
“একটু আগেই।
আদি উওর দেয়।
” ভেতরে চলো
“থাক। আমাদের সময় নেই।
বলেই আদি হাঁটা শুরু করে। রাই একবার পেছন ফিরে কবরের দিকে তাকায়।
রাইয়ের বাবা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ওদের যাওয়ার দিকে।

রাই এখন ভীষণ খুশি কারণ আদি বলেছে আজকের রাতটা আদিদের বাড়িতেই থাকবে। রাই খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। আদি চোখ পাকিয়ে তাকায়। রাই চুপসে যায়।
এক মনে ডাইভ করছে আদি।
“একটা কথা বলার ছিলো।
রাই আমতাআমতা করে বলে।
” হুমম বলো।
“আমার প্রেগন্যান্সির কথা কি সবাইকে বলে দিছেন?
আদির দিকে তাকিয়ে বলে রাই।
” কেনো?
কপালে ভাজ ফেলে বলে আদি।
“না এমনিই
মাথা নিচু করে বলে রাই।
আদি বিরক্ত হয়।
” কথায় কথায় নিচু কেনো করো তুমি? চুরি করেছো তুমি? না আমি তোমাকে বকা দেই মারি? কোনটা?
লিসেন আমার সাথে কথা বলতে আসলে মাথা উঁচু করে কথা বলবা।
শুধু আমার সাথে কেনো সব সময় মাথা উঁচু করে রাখবা তুমি। ওকে?
বেশ রেগে বলে আদি।
রাই তাচ্ছিল্য হাসে।
“মাথা উঁচু করার মতো মুখ আছে না কি আমার?
ধরে আসা গলায় বলল রাই।
” কেনো মুখ নেই কেনো? তুমি বিবাহিত। তোমার বর আছে। তুমি প্রেগন্যান্ট হতেই পারো। আর সব থেকে বড় কথা আমার যদি এতে কোনো পবলেম না থাকে তাহলে বাকি সবার কেনো পবলেম থাকবে?
তোমার গর্ভে আমার সন্তান। তুমি আমার বেবির মা হতে চলেছে। এটাই সত্যি কথা। আর এটাই মানবে তুমি। গোটা দুনিয়াও এটাই জানবে। অতীতে তুমি কি করেছো না করেছে এসব ভুলে যাও। ওকে
হাত এগিয়ে দিয়ে রাইয়ের মাথাটা নিজের কাঁধে রাখে। রাই ফুঁপিয়ে ওঠে।
“আপনি খুব ভালো মানুষ তাই আমার ওপর দয়া করছেন। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি দয়া নিয়ে বাঁচতে চায় না। আমি পারবো আমার সন্তানকে একা মানুষ করতে।
কাঁদতে কাঁদতে বলে রাই।
আদির মাথা গরম হয়ে যায়। কেনো সব সময় দয়া কথাটা তোলে? একবারও কি ভালোবাসাটা দেখতে পায় না, না কি?
দাঁতে দাঁত চেপে রাগটা হজম করে।
” জানেন আপনাকে বিশ্বাস করতে খুব ইচ্ছে হয়। মন চায় ভরসা করে দেখিই না নাহয় দ্বিতীয় বার ঠকবো। কিন্তু মস্তিষ্ক বলে দ্বিতীয়বার কারো ব্যবহারের বস্তু হস না।
আমি তো এখন একা না। আমার সাথে আরও কেউ আছে। আমার ছোট্ট একটা ভুল আমার সন্তানের ভবিষ্যত নষ্ট করে দেবে। যেটা আমি হতে দিতে পারি না।
মনে মনে বলে রাই। আদির শার্টটা খামচে ধরে। আদি মুচকি হেসে ডাইভ করতে শুরু করে।
খুব বেশি দুরে না হওয়াতে তারাতাড়িই চলে আসে ওরা।
রাই ততক্ষণে ঘুমিয়ে গেছে। আদি গাড়ি থামিয়ে বসে থাকে। নরাচরা করলেই রাইয়ের ঘুমটা ভেঙে যাবে তাই নির্বাক হয়ে বসে থাকে।
জীবনের মোর ঘুরে যেতে খুব বেশি সময় লাগে না। আজকে থেকে এক সপ্তাহ আগে আদি পাগলের মতো ছুটে এসেছিলো বাংলাদেশে রাইকে নিজের করে পাবে না। কিন্তু যখন জানতে পারলো রাই বিহানের সাথে রিলেশনশিপ এ আছে দুনিয়াটা থমকে গেছিলো। পাগলের মতো ছুটে ছিলো

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আদি।
“মন থেকে কিছু চাইলে আল্লাহ কখনোই তাকে ফেরায় না।
তুমি আমার ছিলে আমার আছো আমারই থাকবে। কেউ কখনোই আমাদের আলাদা করতে পারবে না।

সন্ধা হয়ে গেছে। চারদিকে মাগরিবের আজান পরে গেছে। এখন এখানে থাকাটা ঠিক হবে না।
তাই আদি আস্তে করে রাইয়ের মাথাটা হাতের তালুর ওপর নেয়। অন্য হাতটা রাইয়ের গালে রাখে।
” এই রাই ওঠো
এসে গেছি তো আমরা।
বরাবরই রাইয়ের ঘুম হালকা। একবার ডাকাতেই চোখ পিটপিট করে তাকায়।আদি মুচকি হাসে।
“এসে গেছি
রাই সোজা হয়ে বসে। হাত দিয়ে চুল গুলো ঠিক করে আড়মোরা ভেঙে হাই তোলে।
” ওহহহ
ছোট করে বলে।
“চলো
রাইয়ের ছিট বেল খুলে দেয়।তারপর নিজে আগে নেমে তারপর রাইকে নামায়।
রাইয়ের হাত ধরে বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করে।
বেশ লাগছে রাইয়ের এভাবে কখনো হাঁটা হয় নি। খুব ইচ্ছে ছিলো বিহানের সাথে এভাবে হাঁটার কিন্তু বিহান তো কখনো সময়ই পেতো না।
” একটা কথা বলি?
রাই আদির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে।
“হুমম বলো
আদি এক পলক রাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে।
” আমরা এখানেই থেকে যাই না প্লিজ?
ওই বাড়িতে একা একা আমার ভালো লাগে না।
মুখ ভার করে বলে রাই।
“বিহানের থেকে পালাতে চাইছো?
রাইয়ের পা থেমে যায়। শক্ত করে ধরে থাকা আদির হাতটা আলগা হয়ে যায়। চোখ বন্ধ করে শ্বাস নেয় রাই।
” আমি ওই লোকটার মুখোমুখি হতে চাই না। খারাপ লোকটা এখন পৃথিবীর আলো না দেখা আমার সন্তানকে ব্যবহার করতে চাইছে।
শক্ত গলায় বলে রাই।
“এটাই তোমাকে ফেস করতে হবে। কখনো পালিয়ে যেতে হয় না। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি সামলাতে হয়। আমরা কাল সকালেই ওই বাড়িতে যাবো।
বলেইআদি হাঁটা শুরু করে। রাই রাগে ফুসতে থাকে। একটু আগেই লোকটাকে ভালো ভেবেছিলো। কিন্তু এই লোকটা একদম ভালো না। বদের হাড্ডি একটা।
আদি রাইকে ফেলে একা একাই বাড়িতে ঢুকে যায়। রাই ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে এটা দেখার জন্য আদি আসে কি না?
কিন্তু দশ মিনিট হয়ে যায় এখনো আদি আসছে না।
তাই একটু একটু করে পা ফেলে এগিয়ে যায়।

চলবে
বানান ভুল থাকতে পারে।