#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_৬
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)
দরজায় কড়াঘাতের শব্দ পেয়ে আতকে উঠে সামু।গিয়ে দরজা খুলে দেখলো ইশু দাঁড়িয়ে আছে।ইশুকে দেখা মাত্রই সামু মিষ্টি একটা হাসি দিল।ইশু ভেতরে এসে বসলো।সামু দরজা লাগিয়ে এসে ইশুর পাশে বসে পড়লো।ইশু সামুকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
— তোদের মাঝে কী কিছু হয়েছে?আই মিন তোর আর ভাইয়ার মধ্যে?
সামু স্মিত হেসে উত্তর দিল,
— না তো!আসলে আজকে মনটা একদমই ভালো নেই। ভার্সিটির ঐ ঘটনার পর থেকে তো….
ইশু সন্দিহান চোখে সামুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
— ভার্সিটির কোন ঘটনা?ওয়েট ওয়েট ভার্সিটিতে কী কোনো ঝামেলা হয়েছে নাকি রে?
সামু আমতা আমতা করে বলে উঠে,
— কই না তো! কিছু না।
ইশু ধমক দিয়ে সামুকে বলে উঠে,
— তুই বলবি নাকি আমি আম্মুকে গিয়ে ডেকে আনবো?
সামু শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব বলে ইশুকে। শুধু পুকুর পাড়ে ওদের আলাপনের কথা বাদে।ইশু অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে সামুর দিকে।ইশু একটা দাঁত কেলানো হাসি দিয়ে সামুকে বলে উঠে,
— তুই জাস্ট ফাটিয়ে দিয়েছিস সামু।খুব ভালো করেছিস।আই এম সো প্রাউড অফ উ।
সামু ভাব নিয়ে বলে উঠে,
— দেখতে হবে না আমি কে।
ইশু হেসে হেসে বলতে লাগলো,
— একটা কাহিনী শুনবি?আমার ব্যাপারেই!
সামু দাঁত কেলিয়ে বলে উঠে,
— বল!
ইশু গলা খাঁকারি দিয়ে বলতে শুরু করে,
— তখন আমি ক্লাস এইটে পড়তাম।তখন ভাইয়া রোজ আমাকে স্কুলে নিয়ে নিয়ে যেতো।তো একদিন স্কুল ছুটি হওয়ার পর ভাইয়ার আসতে দেরি হচ্ছিল।তখনি একটা ছেলে এসে আমাকে প্রপোজ করে।মানে হঠাৎ করেই এরকম কিছু যে ঘটবে আমি ভাবতেই পারিনি।তখনি ভাইয়া এলো!ভাইয়াকে দেখে আমার হাত-পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছিল।
ভাইয়া তো সোজা এসে ছেলেটাকে চড় মারলো।তারপর আমাকে বাসায় নিয়ে এলো।এখানেই ব্যাপারটা শেষ হলে পারতো কিন্তু এখানেই ব্যাপারটা শেষ হয়ে যায়নি।তারপরের দিন স্কুলে গিয়ে শুনেছিলাম যে ছেলেটা হাসপাতালে ভর্তি।আমি ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করার সাহস পায়নি
তবে ঐ ছেলেটা সুস্থ হয়ে এসে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছিল আর বলেছিল যে ভাইয়া আর ওর বন্ধুরা নাকি ওকে উত্তম মধ্যম দিয়েছে।এখন ভাবতে পারছিস যে ভাইয়ার ঠিক কতোটা রাগ?
সামু এতক্ষন মনযোগ সহকারে ইশুর কথা শুনছিল।শোনার পর সামু বাচ্চাদের মতো খিলখিলিয়ে হাসতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর সামু লক্ষ্য করলো ইশু ওর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।সামু ভ্রু কুঁচকে ইশুকে প্রশ্ন করে উঠলো,
— এভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস?
ইশু নিজের চশমাটা ঠিক করে বলে উঠে,
— মন খারাপ আছে কী এখনো?
সামু কিছুক্ষণ ভেবে তারপর বললো,
— সত্যিই তো! মন খারাপ এখন আর নেই।
ধন্যবাদ ইশু।
ইশু মেয়েটার মধ্যে সবাইকে হাসিখুশি রাখার এক অদ্ভুত ক্ষমতা আছে।এটাই ভাবছে সামু।
_______________________________
— কি হয়েছে সেটা তো বল আমাকে?
মিসেস সাহেরা চৌধুরীর কথায় উৎসর ধ্যান ভাঙল।উৎস মুখে জোড় পূর্বক হাসি ফুটিয়ে বলতে লাগলো,
— তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো আম্মু।আমার কিছুই হয়নি।
মিসেস সাহেরা চৌধুরীর মুখের চিন্তার ভাঁজ পড়লো।তিনি চিন্তিত শুরে বলে উঠলেন,
— তাহলে তোরা দুজন এসেই যে রুমে চলে গেছিস।তোদের মধ্যে কি কিছু হয়েছে?
উৎস স্মিত হেসে বলে উঠে,
— না তো আম্মু! কিছুই হয়নি।আর আমাদের কী সবসময় ঝগড়া করতেই দেখা যায় নাকি?
মিসেস সাহেরা চৌধুরী হেসে বলে উঠলেন,
— তা নয়তো কি?তোদের তো সাপ-নেউলের সম্পর্ক। আজকে তোদের কারো মুখেই কোনো কথা নেই।যা তোদেরকে মানাচ্ছে না।
উৎস আনমনে বলে উঠে,
— হয়তো!
______________________
–চলুন না ঝগড়া করি।?
সামুর এরকম অদ্ভুত আবদারের কথা শুনে না হেঁসে পারলোনা উৎস।কিছুক্ষন আগেই বাগানের দোলনায় এসে বসেছিল সামু।উৎস ভেবেছিল হয়তো সামু ওকে দেখবে না কারন সামু তখন চোখ
বন্ধ করে বাতাস উপভোগ করছিল।তখনি সামু চোখ বন্ধ করেই এই কথাটা বলে উঠে।উৎস সামুর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলে উঠে,
— কিহ!এটা আবার কী রকম কথা?আর তাছাড়া ও আমার এখন ঝগড়ার মুড নেই।বাই দ্যা ওয়ে তুমি বুঝলে কি করে যে আমি তোমার পাশে এসে বসেছি। তুমি তো চোখ বন্ধ করা অবস্থাতেই ছিলে তাইনা!
সামু উৎসর দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলে উঠে,
— অনুভব করেছি!
উৎস আরো বেশি অবাক হয় এই কথা শুনে।উৎস
বলে উঠে,
— আমাকে অনুভব করতে পারো তুমি?
সামু রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে উৎসকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
— আচ্ছা বলুন তো এই রাতের আকাশে কয়টা তাঁরা আছে?গুনে বলুন।
উৎস হেসে হেসে বলে উঠে,
— তাঁরা আবার গুনা যায় নাকি? তাঁরার তো অভাব নেই আকাশে।সেটা গুনা অসম্ভব।
সামু একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে উঠে,
— তাহলে একজনের প্রতি অপরজনের ভালোবাসা ও কি গুনা যায়?
উৎস এখন এই প্রশ্নে ঘাবড়ে যায়।বলে উঠে,
— না। কিন্তু আমাকে তুমি কিভাবে অনুভব করেছো সেটা তো বললে না।
সামু দোলনা থেকে উঠে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।
উৎস অবাক চোখে সামুর দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়েটাকে এখন ওর বড্ড রহস্যময়ী লাগছে।সামু যাওয়ার আগে উৎসকে চিৎকার করে বলে উঠে,
— উত্তরটা আপন সময় হলেই বুঝতে পারবেন।
_______________________________
— ইশু শোন।
ইশু বইয়ের দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে উঠে,
— হুম!
উৎস এবার ধমক দিয়ে ইশুকে বলে উঠে,
— আমি যে তোকে কিছু বলছি সেটা কি তুই আদৌ শুনতে পাচ্ছিস?
ইশু এবার সিরিয়াস হয়ে বললো,
— হে হে শুনছি বল।
উৎস বলে উঠে,
— কেউ কাওকে অনুভব কিভাবে করে?
ইশু এবার সন্দিহান চোখে উৎসর দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
— তুই কী কারো প্রেমে পড়েছিস নাকি?
উৎস দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,
— না।তোকে যে প্রশ্নটা আমি করেছি সেটার উত্তর দে?
ইশু দাঁত কেলানো হাসি দিয়ে বলে উঠে,
— সেটাই তো বলছি।এইসব তো আমি কিছুই জানিনা। কিন্তু তোর কথাগুলো শুনে মনে হলো যে তুই প্রেমে পড়েছিস।বাই দ্যা ওয়ে তোকে এসব কথাগুলো বলেছে কে রে?
চলবে…….