হঠাৎ তুমি এলে পর্ব-০৯

0
570

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_৯
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)

— “কি হয়েছে রে তোর?”
ইশুর প্রশ্নে চমকে উঠে সামু।নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করে বলে উঠে,
— “কিছু না রে।মনটা ভালো নেই!”
ইশু ভ্রু কুঁচকে বলতে লাগলো,
— “উহ! আমার তো মনে হচ্ছে তোর মুড সুয়িং হচ্ছে রাইট?”
সামু মাথা নাড়িয়ে “হ্যা”বোঝায়।ইশু সোজা হয়ে বসে সামুর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগে,
— “এটা কোনো বিষয় হলো।আমারো তো অনেক সময়ই হয়।চল তোকে পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখাই!তুই তো দেখিসনি।”
সামু মুচকি হেসে বলে উঠে,
— “চল!”
ইশু আর সামু পুরো বাড়ি ঘুরে দেখতে লাগলো‌।সামু আর ইশু গল্প করতে করতে উৎসর রুমের সামনে দিয়ে যখন যাচ্ছিল তখন ওরা শুনতে পেল উৎস কারো সাথে জোড়ে জোড়ে চিৎকার করে কথা বলছে।ইশু সামুকে বলে উঠে,
— “ভাইয়া কার সঙ্গে এভাবে কথা বলছে?ওকে কখনো ফোনে এরকম ভাবে চিৎকার করে কারো সাথে কথা বলতে দেখিনি!”
সামু কিছু বলতে যাবে তার আগেই উৎসর কিছু কথায় থমকে গেল। কথাগুলো এমন ছিল,
— “তুমি কেন বুঝতে পারছো না মিথিলা?আমরা জাস্ট ফ্রেন্ড!আমি তোমাকে ভালবাসি না। আজকে তুমি লিমিট ক্রস করেছো মিথিলা।পাগলামির একটা লিমিট থাকা দরকার।”
কথাগুলো শেষ করেই উৎস ভেতর থেকেই চিৎকার করে বলে উঠে,
— “কে ওখানে?”
ইশু ভয়ে কাঁপতে থাকে। আজকে উৎসর এক নতুন রুপ দেখছে সামু। উৎসর পায়ের আওয়াজ শুনে ওরা বুঝতে পারলো যে উৎস বাইরে আসছে তাই ইশু দেরি না করে সামুর হাত ধরে নিয়ে চলে যায় ওখান থেকে।রুম থেকে বেরিয়ে এসে উৎস দেখতে পেল সত্যিই কেউ নেই।উৎস আনমনে বলে উঠে,
— “কেউ তো ছিল!কে হতে পারে?”
উৎস পরমুহূর্তেই নিজের পায়ের কাছে কিছু একটা পরে থাকতে দেখতে পেয়ে হাতে তুলে নিল।আর একটা রহস্যময় হাসি হাসলো।
____________________________
ঘরে এসি থাকা সত্তেও ইশু আর সামু দুজনেই ঘামছে।ইশু দরজা লাগিয়ে এসে সামুর পাশে বসে পড়ে।ইশু সামুকে বলে উঠে,
— “জোড় বাঁচা বেঁচে গেছি রে সামু!”
সামু রাগী চোখে ইশুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
— “তোকে আজকে মিথিলার ব্যাপারটা খুলে বলতেই হবে।না বলা পর্যন্ত তোকে ছাড়ছি না।
ইশু আমতা আমতা করে বলে উঠে,
— “শোন আমার না প্রচুর পরিমাণে ঘুম পাচ্ছে। কালকে কলেজে যেতে হবে।সকাল সকাল উঠতে হবে তাই আমি যাই কেমন?”
সামু দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগে,
— “এখনো ডিনার টাইমই হয়নি আর তুই ঘুমোতে যাচ্ছিস?দ্বারা বলছি!তোকে সেদিনও জিজ্ঞেস করেছিলাম কিন্তু তুই ব্যাপারটা এড়িয়ে গেছিস আজকে তোকে ঐ মিথিলার ব্যাপারটা খুলে বলতেই হবে।
ইশু কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে বলতে শুরু করে,
— “তখন সময়টা ছিল যখন ভাইয়া নিউ ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিল।ভাইয়ার ভার্সিটি লাইফ অনেক ভালোই কাটছিল।ওর অনেক বন্ধু ও ছিল।আরিফ ভাইয়া,শিহাব ভাইয়া,প্রমা আপু আর মিথিলা আপু সবচেয়ে ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিল।ওনারা বাসায় এসেছিলেন একবার আমার বার্থডে পার্টিতে।তখন আমি লক্ষ্য করেছিলাম মিথিলা আপু ভাইয়াকে অন্য নজরে দেখতো।প্রমা আপুর থেকে যতটা শুনেছি মিথিলা আপু নাকি আগে একজনকে ভালোবাসতো তারপর কিভাবে যেনো তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এটুকুই জানি রে আমি সামু।সেদিন তোকে বলিনি কারন আমার মনে হয়েছিল তোর পেটে কথা থাকবেনা।তুই হয়তো ভাইয়াকে বলে দিবি।এরকম ভেবেছিলাম!সরি রে।
সামু কিছু একটা ভেবে বলতে লাগলো,
— “ওহ আচ্ছা।সরি বলতে হবে না ইটস ওকে।”
_____________________________
সকালে……….
— “ভাইয়া কোথায় আম্মু?
মিসেস সাহেরা চৌধুরী চুপ করে রইলেন। তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে উঠলেন,
— “সকাল সকালই ভার্সিটিতে চলে গিয়েছে।একবারো বলে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। ভার্সিটিতে পৌঁছে গিয়ে তারপর কল দিয়ে বলেছে‌‌।
এখন তো সামুকে একা একাই যেতে হবে।কী এমন
জরুরি কাজ যে এতো সকালে চলে গেল।সামুকে নিয়েও যায়নি।”
তখনি সামু মুচকি হেসে বলে উঠে,
— “আমি একা যেতে পারবো মামণি!ডোন্ট ওয়ারি।”
মিসেস সাহেরা চৌধুরী আর কিছু বললেন না। কিছুক্ষণ পর ইশু সামুকে বলতে থাকে,
— “সামু তোর বা পাশের কানের দুলটা কোথায়?”
একটা আছে আরেকটা নেই।”
তখনি সামু কানে হাত দিয়ে দেখলো সত্যিই দুলটা নেই।সামু আনমনে বলে উঠে,
–“হয়তো কোথাও পড়ে গিয়েছে।”
কেউ আর কিছু বললো না। নাস্তা করা শেষ হলে সামু রুমে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার সামু চলে আসে ব্যাগ হাতে নিয়ে। মিসেস সাহেরা চৌধুরী সামুকে বলে উঠে,
— “কিরে এখনি ভার্সিটিতে চলে যাচ্ছিস?”
সামু পানি খেয়ে তারপর বলে উঠে,
— “হুম মামণি।”
____________________________
ভার্সিটিতে এসেই সামু সোজা চলে যাচ্ছিল তার ক্লাসে। আশেপাশে বেশি স্টুডেন্ট ছিল না।আর যারা ছিল তারা ওকে অন্যের সাথে কথা বলায় ব্যাস্ত ছিল‌।সামু কিছুটা এগোতেই ওকে হেঁচকা টান দিয়ে কেউ একটা ফাঁকা ক্লাসরুমে ঢুকিয়ে নেয়। অনেক ঘামছে সামু।ওর চোখে লোকটা হাত দিয়ে ঢেকে রেখেছে।কিছুতেই সামু লোকটার হাত সরাতে পারলো না।তারপর লোকটার যে কথাটা শুনলো তাতে সামু ভয়ে কাঁপতে লাগলো।
চলবে….