হঠাৎ তুমি এলে পর্ব-১৯

0
508

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_১৯
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)

ইশুর কথায় আর কিছু বলে না উৎস।খেয়ে রুমে চলে যায়।তখন সামু ইশুকে বলতে থাকে,
— “লজ্জা পেয়েছে নাকি রে?”(সামু)
— “হয়তো।”(ইশু)
— “আচ্ছা শোন আমার অনেক পড়া আছে এখন যাই।টাটা!”(সামু)
— “টাটা।”(ইশু)
_________________________
সকালে…….
সকালে একপ্রকার তাড়াহুড়ো করেই ভার্সিটিতে এসেছে উৎস আর সামু।উৎস সামুকে নামিয়ে দিয়ে কোথাও একটা চলে গেছে।সামু ধীর পায়ে এগিয়ে গেল নিজ ক্লাসের দিকে। ক্লাসে গিয়ে মিহুর পাশে বসে পড়লো।রুহি এখনো আসেনি!মিহু খুব চিন্তিত ভঙ্গিতে গালে হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখা গেলো।সামু মিহুকে বলে উঠে,
— “কিরে তোকে এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?”(সামু)
মিহুর কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না।বরং ও আগের মতোই বসে আছে।এবার সামু মিহুকে ছোট করে ধাক্কা দিল।এতে করে মিহুর হুশ এলো।মিহু জোড়ে শ্বাস ফেলে সামুকে বলতে থাকে,
— “কিরে ধাক্কা মারলি কেন?আরেকটু হলেই তো পরে যাচ্ছিলাম।একটুকের জন্য বেঁচে গেছি।আর কখনই বা এলি?”(মিহু)
— “তোর কি হুশ আছে নাকি?হুশ থাকলে তো জানি আমি কখন এসেছি।তুই কি এমন ভাবনায় মত্ত ছিলি যে আমি পাশে বসেছি এমনকি ডেকেছি পর্যন্ত সেটাই টের পাসনি!”(সামু)
মিহু ভ্রু কুঁচকে সামুকে বললো,
— “ডেকেছিলিস নাকি?”(মিহু)
— “হুম।”(সামু)
— “রুহি কোথায়?ওকি এখনো আসে নি বা আজকে কি আসবেনা?”(মিহু)
— “এটা তো জানি না।ওর সঙ্গে কথা হয়নি কালকে!”(সামু)
মিহু অস্পষ্ট সুরে বলে উঠে,
— “ওহ।”(মিহু)
_____________________________
ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে উৎস।উৎস আর ওর পাশেই আছে ওর বন্ধুরা। বেশ কিছুক্ষন নিরবতা পালন করার পর নিরবতা ভেঙ্গে শিহাব বললো,
— “ওফ আজকের ওয়েদার টা পুরাই জোস।ঐ তোরা কথা বলিস না কেন?”(শিহাব)
— “কি বলবো?”(উৎস)
— “আচ্ছা উৎস তোর কি হয়েছে বল তো?তোকে এরকম চিন্তিত দেখাচ্ছ কেন?”(প্রমা)
— “সত্যি বলবো?”(উৎস)
তখনি শিহাব দাঁত কেলিয়ে উৎসকে বলে উঠে,
— “না মিথ্যাই বল।”(শিহাব)
প্রমা কপট রাগ দেখিয়ে শিহাবকে বললো,
— “তুই চুপ থাক বলদ!”
— “হেই স্টপ গাইস!কি শুরু করেছিস তোরা?থাম এখন।”(উৎস)
— “ঝগড়া আমি নই শিহাব শুরু করেছে। আচ্ছা এখন এসব অফ।উৎস তুই বল!”(প্রমা)
উৎস গলা খাঁকারি দিয়ে বলতে শুরু করলো,
— “কেন জানিনা ভালো লাগছেনা। কিছু একটা মিসিং মনে হচ্ছে।”
প্রমা মুচকি হেসে বলে,
— “আই থিংক আমি বুঝতে পেরেছি বিষয়টা!”
শিহাব ভ্রু কুঁচকে প্রমাকে বলে,
— “কি জানোস কো আমারে?”
প্রমা ভেংচি কেটে বলে,
— “বলবো না তোকে!”
উৎস প্রমাকে বলে,
— “তা বল কি বুঝতে পেরেছিস?”
প্রমা চ
মুচকি হেসে বলতে থাকে,
— “তুই কি সামুকে মিস করছিস?না মানে আজকে ওকে জাস্ট ভার্সিটিতে ড্রপ করে আমাদেরকে নিয়ে এখানে মানে মিথিলার বাড়িতে এলি।”
উৎস হাত ক্ষানিকবার চুলগুলো ঝেড়ে বাঁকা হেসে বলতে থাকে,
— “আই ডোন্ট নো!বাট হলেও হতে পারে।”
প্রমা দাঁত কেলিয়ে হাসি দেয়।তখনি শিহাব উৎসর দিকে তাকিয়ে বলে,
— “তলে তলে টেম্পু চালাও মামা আর আমরা কিছু জানিনা।বাহ!”
উৎস ভ্রু কুঁচকে শিহাবের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
— “মানে?”
— “মানে এইটাই মামা।তোমাদের দুইজনের মধ্যে কিছু তো চলছেই!”(শিহাব)
উৎস বিরক্তিকর সুরে শিহাবকে বলে উঠে,
— “এইটাই তোদের সমস্যা। কিছু বললেই সেটাকে পুরো উল্টো ভাবিস। আচ্ছা এসব এখন বাদ দেই আগে আমরা যেটা করবার জন্য এসেছি সেটা করি।”
— “হুম উৎস একদম ঠিক বলেছে। মিথিলাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দেওয়া হয়েছে রাইট?”(প্রমা)
উৎস মাথা নাড়িয়ে “হ্যা”বোঝায়।প্রমা পুনরায় বলতে শুরু করে,
— “তাহলে এইটাই সঠিক সময়।এখন রিহা আপুর থেকে মিথিলার অতীত সম্পর্কে জানতেই হবে।যে করেই হোক!তাহলে চল সবাই নিচে যাওয়া যাক।আমরা আজকে ক্লাস মিস দিয়ে এখানে একটা মিশনে এসেছি।তাই এখন মিশনটা কমপ্লিট করতেই হবে।আন কমপ্লিট কিছুতেই রাখা যাবে না।চল!”
তারপর তিনজন ছাদ থেকে নিচে নেমে চলে গেল তাদের উদ্দেশ্য পূরনের লক্ষ্যে।
___________________________
— “আজকে কিন্তু আমি ফুচকা খাবো হু!”
বেশ হাসিমুখেই বললো রুহি।এইদিকে মিহু এখনো নিজ ভাবনায় ডুবে আছে।মিহুর বাইরে কি হচ্ছে তার কোনো জ্ঞান নেই।এতে মিহুর ওপর প্রচুর বিরক্ত সামু।সামু মিহুকে বলে,
— “তা তুই কি খাবি বল?”
মিহুর হুশ আসে।মিহু বলতে থাকে,
— “আমি জাস্ট কোলড্রিংকস খাবো।আর কিছু না!”
ভার্সিটির ক্লাস শেষেই ক্যান্টিনে চলে আসে তিনজন। হঠাৎ করেই সামু একটা শয়তানি হাসি হাসে।তা দেখে রুহি ভ্রু কুঁচকে সামুকে জিজ্ঞেস করে,
— “কিরে এভাবে হাসছিস কেন?”
— “এমনেই! আচ্ছা শোন আমরা এখানে খাবো না খাবার প্যাক করে নিয়ে যাবো।।(সামু)
সামুর কথা শুনে মিহু বলে,
— “একটু আগেই তো বলেছিলিস যে তুই ট্রিট দিবি। এখানে বসে খেতে।তোর মতলবটা কি বলতো?”
সামু দাঁত কেলিয়ে হেঁসে বললো,
— “দেখতেই পাবি একটু পর।তার আগে মুখটা ওরনা দিয়ে ঢেকে নে।নাও বলো মি!”
সামুর কথামতো রুহি আর মিতু মুখকে ওরনা দিয়ে ঢেকে নিল।সামু মুখটাকে ওরনায় ঢেকে তারপর হেঁটে গিয়ে অনেক খাবার কিনলো।তবে খাবারগুলো দেখে রুহি আর মিহু তো অবাক হয়ে যায়।মিহু সামুকে ফিসফিসিয়ে বলে,
— “কিরে এতো খাবার কার জন্য প্যাক করেছিস? এ আমরা নিশ্চয়ই এতোকিছু খাবো না।এগুলোর তো বিল অনেক হবে।বিল কি তুই পে করবি?”
— “আমি কেন বিল পে করতে যাবো?বিল পে করবে তো আমার স্বামী।”(সামু)
সামু ফোন হাতে নিয়ে লোকটাকে একটি ছবি দেখিয়ে বলে উঠে,
— “এইযে ইনি হলেন আমার প্রাণপ্রিয় স্বামী।এনার থেকে খাবারগুলোর বিল নিয়ে নিবেন।”
লোকটি ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
— “আরে আপনি উৎস ভাইয়ের বউ।আগে বলবেন না?আর ভাই বিয়ে করলো কবে?”
লোকটি অনেক বোকা বিধায় সামুর কথায় সহজে বিশ্বাস করে। এদিকে এসব দেখে মিহু আর রুহি হেসে কুটিকুটি।সামু মুখ ঢাকা অবস্থাতেই বলে,
— “এইতো ৬ মাস। ভালবেসে লুকিয়ে বিয়ে করেছি তো তাই কেউ জানে না।এখন আমি যাই কেমন।বাই!”
লোকটি সামুকে অনেক করে বললো যে কোনো টাকা লাগবেনা যেহেতু সে উৎস ভাইয়ের বউ তাই। কিন্তু সামু অনেক বুঝিয়ে তারপর চলে আসে রুহি আর মিহুকে নিয়ে।সামু খাবার ভাগ করে নেয়।রুহি হাসতে হাসতেই বলে,
— “উৎসর ভাইয়ের কি হবে কালকে এটাই ভাবছি।এখন নিশ্চয়ই এই ফেক নিউজ ভাইরাল হবেই।”
তারপর সামু ভার্সিটির বাইরে কিছুদূর এগিয়ে গিয়েই ফুটপাতে থাকা কয়েকটা বাচ্চাকে খাবারের প্যাকেটগুলো দিয়ে দেয়।তা দেখে মিহুর আর রুহির সামুর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বেড়ে গেল।
চলবে…….