হঠাৎ তুমি এলে পর্ব-২০

0
522

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_২০
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)

সোফায় বসে নখ কামরাচ্ছে সামু।পাশেই বসে আছে ইশু। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সামুকে।ইশু এবার সামুর কান্ডকারখানা দেখে অতীষ্ট হয়ে যায়।ইশু রেগে সামুকে বলতে থাকে,
— “তোর সমস্যা কি? সেই কখন থেকে তোকে জিজ্ঞেস করছি কি হয়েছে কিন্তু তুই তো কিছুই বলিস নি উল্টো নখ কামড়ে যাচ্ছিস। প্লিজ বল কি হয়েছে?”
এদিকে সামুর কোনো হুশ নেই।সামু তো আছে অন্য ভাবনার জগৎ এ।সামু আনমনে বলে উঠলো,
— “আমার স্বামী হয়েছে।”
ইশু সামুর কথা শুনে চিৎকার দিয়ে বলে উঠে,
— “হোয়াট!”
ইশুর চিৎকারে সামুর ধ্যান ভাঙ্গে।সামু দুই কানে হাত দিয়ে রেগে ইশুকে বলে,
— “দিলি তো আমার কানের বারোটা বাজিয়ে।আর হঠাৎ করেই চিৎকার দিয়েছিস কেন?”
ইশু কোমড়ে দুই হাত রেখে সামুকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “এইযে এইমাত্র বললি তোর স্বামী হয়েছে।”
মানে কি রে?তুই আমাকে না জানিয়ে বিয়ে কবে করেছিস?ঐ!”
সামু বিরক্তিকর সুরে বলে উঠে,
— “ওহ শিট!”
ইশু এবার সামুর কাছে বসে গলা খাঁকারি দিয়ে সামুকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “এই সত্যি করে বল তো ছেলেটা কে?”
সামু এবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে ইশুকে বলে,
— “সত্যি করে বলবো?”
ইশু মাথা নাড়িয়ে”হ্যা”বোঝায়।এবার সামু গলা খাঁকারি দিয়ে লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো,
— “না মানে সেই স্বামী হলো তোর ভাই!”
সামুর কথা শুনে ইশু ৪৪০ ভোল্টের শক খায়।সামুর এই কথা শোনার পর ইশু কাঁশতে থাকে।সামু ইশুকে পানি এনে দেয়।ইশু পানি খেয়ে নিজেকে শান্ত করে তাড়াহুড়ো করে বলতে থাকে,
— “মানে তোরা বিয়ে করেছিস কবে?কোথায়, কখন? দ্বারা আমি আম্মুকে ফোন করে এই খুশির খবরটা দিয়ে আসি।”
ইশু উঠে ফোন করতে উঠে চলে যাচ্ছিল,তখনি সামু উঠে গিয়ে ইশুকে আটকায়।ইশুর হাত ধরে এনে সোফায় বসায়। তারপর সামু নিজেও ইশুর মুখোমুখি বসে পড়ে।সামু রাগমিশ্রিত কন্ঠে ইশুকে বলে,
— “এখনি সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছিল।আর তুই পুরো ঘটনা না জেনেই মামণির কাছে উল্টো পাল্টা নিউজ দিতে গিয়ে ছিলিস!আরে এগুলো আমি এমনেই মজা করে বলেছিলাম।পুরো ব্যাপারটা না শুনেই তো তুই মামণিকে ফেক নিউজ দিতে চলে গেছিলিস!আমি যদি তোকে না আটকাতাম? কি যে হতো এতক্ষনে।”
ইশু মুখ গোমড়া করে সামুকে বলে,
— “ধ্যাৎ!আমি তো ভেবেছিলাম সত্যিই! আচ্ছা পুরো ঘটনা টা বল তো?”
সামু গলা খাঁকারি দিয়ে ইশুকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব বললো‌।ইশুর সামুর বাচ্চাদেরকে খাবার দেওয়ার কথাটা শুনে অনেক ভালো লাগলো। কিন্তু উৎসর ফেক বউ হওয়ার ঘটনা শুনে ইশু হেসে কুটিকুটি।ইশু হাসতে হাসতেই বলতে থাকে,
— “সিরিয়াসলি তুই এসব করেছিস?যাই হোক এখন ভাইয়ার কি হবে রে।আমার তো ভেবেই হাঁসি পাচ্ছে।সেটা তো কালই জানা যাবে।বাই দ্যা ওয়ে উনি কোথায় রে?”
ইশু মুচকি হেসে সামুকে বলে,
— “এই উনিটা আবার কে?”
সামু ভেংচি কেটে উত্তর দেয়,
— “জেনেও না জানার ভান কেন করেছিস?”
— “হুম নিজের রুমে আছে হয়তো।”(ইশু)
— “ওহ!”(সামু)
— “তাহলে এখন কি করবি?”(ইশু)
— “পড়তে বসবো!যাইগা টাটা।”(সামু)
— “টাটা।”(ইশু)
____________________________
সকালে………
— “কি হলো রেডি তো তুমি?চলো ভার্সিটিতে!তারপর লেট হয়ে গেলে প্রবলেম আছে। ক্লাস মিস হয়ে যেতে পারে।”(উৎস)
উৎসর কথায় সামুর হাঁটু কাঁপতে থাকে।এই ভেবে যে উৎসর সাথে ভার্সিটিতে গেলে যদি ধরা পড়ে যায়!সামু একটা ঢোক গিলে বলতে থাকে,
— “না মানে আজকে আমার খুব পেট ব্যাথা করছে।আমি আজকে যাবো না।আপনিই বরং চলে যান কেমন?”
উৎস সোজা হয়ে বসে সামুর চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,
— “পেট ব্যাথাই যখন করছে তাহলে এতো শান্ত ভাবে বসে আছো কেন?আর পেট ব্যাথার মধ্যে এতো শান্ত ভাবে সবকিছু সামলানো কিভাবে সম্ভব!হাউ?”
সামু আমতা আমতা করে বলতে থাকে,
— “আসলে এখন ব্যাথাটা একটু কম আছে তো তাই।যাবোনা প্লিজ!”
— “আমি তো তোমাকে একবারো জোড় করিনি।তুমিই তো বলেছো যাবেনা!বাই দ্যা ওয়ে তোমার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।সেটা কেন?”(উৎস)
সামু উৎসর কথা শুনে কাঁশতে থাকে।উৎস সামুর কাছে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়।সামু পানি খেয়ে তারপর বলতে থাকে,
— “না না আমি কিছু করিনি কিন্তু! আপনি সবসময় এসে আমাকে দোষ দেন হু!”
উৎস বাঁকা হাসি দিয়ে বলে উঠে,
— “আমি কখন দোষ দিলাম?আর হ্যা আমি তো তোমাকে কিছুই বলিনি যে তুমি কিছু করেছো!”
সামু কিছু না বলে উঠে চলে যায় ডায়নিং টেবিল থেকে।উৎস মুচকি হেসে নিজেও উঠে চলে যায় নিজের গন্তব্যে।
__________________________
এদিকে ওপর থেকে এসব দেখে মুচকি হাসছে ইশু।সামু যখন নিজের রুমে যাচ্ছিল তখন ইশু গিয়ে সামুর পথ আটকায়।ইশু সামুকে বলতে থাকে,
— “তোর সত্যিই পেটে ব্যাথা করছে?কই আমিতো এমন কিছুই জানিনা!আমাকে তো কিছুই বলিস নি।আবার ভাইয়াকে তো ঠিকই বলেছিস!ব্যাপার কি হুম?”
সামু আমতা আমতা করে বলতে থাকে,
— “ব্যাপার আবার কি?ব্যাপার কিছুই না!আর পেটে ব্যাথা শুরু হওয়ার পর তোকে বলতে ভুলে গেছিলাম। আচ্ছা এখন যাই!”
সামু আর ইশুকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।আর ইশু সামুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে।
____________________________
গাড়ি পার্কিংয়ে রেখে চোখে সানগ্লাস দিয়ে নিজ এটিটিউড এর সাথে ভার্সিটিতে প্রবেশ করে উৎস।ওর সঙ্গে শিহাব,প্রমা আর আরিফ ও আছে। কিন্তু একটু পরেই কোথা থেকে একদল স্টুডেন্ট হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে এগিয়ে আসে উৎসর দিকে। এরমধ্যেই একটা মেয়ে উৎসর দিকে ফুলের তোড়া এগিয়ে দিয়ে বলে উঠে,
— “কনগ্রাচুলেশন উৎস ভাইয়া! আপনার বিবাহিত জীবন সুখের ও আনন্দময় হোক।তাই এগুলো আমাদের পক্ষ থেকে।বাই দ্যা ওয়ে ভাইয়া ভাবীকে একদিন নিয়ে আসবেন কেমন। আমরা কিন্তু সেই লাকি গার্লকে দেখতে চাই।”
কথাগুলো আহাম্মকের মতো শ্রবণ করলো উৎস,প্রমা, শিহাব আর আরিফ।উৎস অবাক হয়ে বলে উঠে,
— “হোয়াট!এসবের মানে কি?”
চলবে…….