হঠাৎ তুমি এলে পর্ব-২৪+২৫

0
546

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_২৪
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)

সামু মিথিলার হাতে হাত রেখে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,
— “এককককককটা কথথথা জিজ্ঞেস করররররবো…?”
মিথিলা স্মিত হেসে উত্তর দিল,
— “হ্যা অবশ্যই!”
সামু অস্পষ্ট সুরে মিথিলাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো,
— “তুমি কি রক্তিম ভাইয়াকে এখনো ভালোবাসো?”
মিথিলা মাথা নিচু করে শান্ত কন্ঠে বলে,
— “হ্যা বাসি তো! কিন্তু রক্তিম অনেকবার ওর ভালোবাসার দাবি নিয়ে এসেছিল আমার কাছে।একবার শেষ বারের মতো এসেছিল!তখন আমি ওকে ফিরিয়ে দিয়েছি। আমার জানা মতে ও এখন লন্ডনে থাকে।হয়তো বিয়েও…..!”
মিথিলা কিছু বলবে তার আগেই সেখানে উপস্থিত হয় উৎস আর প্রমা।উৎস আর প্রমা বসে পড়ে।তারপর প্রমা মিথিলাকে শান্তনার কন্ঠে বলতে থাকে,
— “না আমি শিউর রক্তিম ভাইয়া বিয়ে করেনি।আর তুই এতো টেনশন করিস না তো।ছিল থাক!আমরা আছি তো।”
সামু উৎসকে বলে,
— “আপনি জানতেন যে আমি এখানে আছি?”
উৎস ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
— “হ্যা!তো?”
সামুর স্পষ্ট জবাব,
— “নাথিং!”
উৎস এবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে গলা খাঁকারি দিয়ে মিথিলাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “তোমার আর রক্তিমের ব্যাপারটা সেদিনেই জেনেছি, যেদিন তোমার বড় বোনের বাড়িতে গেছিলাম।আমার মনে হয়না যে রক্তিম লন্ডনে গেছে।কজ এক মাস আগে ওর মতোই সেম একটা লোককে শপিং মলে দেখেছিলাম।সো ডোন্ট ওয়ারি!এখন আমাদের মিশন হচ্ছে তোমাদের দুজনের সব ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে তোমাদের এক করা।”
খুশিতে মিথিলার চোখের কোণে জল চলে আসে। মিথিলা কৃতজ্ঞতার চাহনিতে বলে উঠে,
— “তোমাদের ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না।”
সামু উৎসকে ভেংচি কেটে বলতে থাকে,
— “বলছি যে আপনাদের মিশনে কি আমি থাকতে পারি?”
উৎস ভ্রু কুঁচকে সামুর কথার বিপরীতে বলে,
— “তুমি কেন থাকবে?”
সামু কিছু বলবে তার আগেই মিথিলা উৎসকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “উৎস ওকে বাঁধা দিচ্ছো কেন?সামু থাকবে অবশ্যই!”
উৎস আর কিছু বললো না।সামু একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
______________________
— “কি হয়েছে?এভাবে মুখ গোমড়া করে বসে আছো কেন?”
শিহাবের কথায় মিহুর ধ্যান ভাঙ্গে।মিহু ভার্সিটির পেছনে পুকুর পাড়ে বসে ছিল।এটা মিরপুর প্রিয় জায়গা!মিহুর মন খারাপ হলেই এখানে এসে বসে থাকে।মিহু শিহাবের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করে,
— “আচ্ছা সত্যি করে একটা কথা বলুন তো?”
শিহাব মুচকি হেসে বলে,
— “হুম বলো।”
মিহু সিরিয়াস ভঙ্গিতে শিহাবকে প্রশ্ন করে,
— “আপনি কি আমাকে ফলো করছেন?”
মিহুর কথা শুনে শিহাব কাশতে থাকে।কাশতে কাশতে বলে,
— “আমি তোমাকে ফলো করবো?এই সাহস অন্তত আমার নেই।”
— “কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে যে আপনি আমাকে ফলো করছেন।”(মিহু)
— “নো নো আমি তোমাকে ফলো করছি না হু!আব…তোমার ধারণা ভুল।”(শিহাব)
— “ওহ আচ্ছা!তা এখানে কি মনে করে এলেন শুনি?”(মিহু)
— “এইতো এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম তারপর তোমায় চোখে পড়লো তারপর…!”
শিহাব মুচকি হেসে মাথা চুলকিয়ে বলে,
— “আব..হ্যা!”
— “তাহলে এখন এই মুহূর্তে এখান থেকে বিদায় হোন।উঠুন উঠুন চলে যান এখান থেকে!”(মিহু)
শিহাবের মুখ অটোমেটিকলি “হা”হয়ে গেল।শিহাব ভেবেছিল মিহু হয়তো অন্য কোনো কথা বলবে।বাট যা ভাবলো তা তো আর হলো না! শিহাব মিহুর রাগ দেখে ভয়ে একটা ঢোক গিলে বলতে থাকে,
— “থাকি না এখানে একটু। তোমার তো কোনো সমস্যা হচ্ছে না তাইনা।”
মিহু অন্যদিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,
— “আচ্ছা ঠিক আছে।”
শিহাব খুশি হয়ে আবার মিহুর পাশে বসে পড়লো। শিহাব মুচকি হেসে মিহুকে বলতে থাকে,
— “তা মন খারাপ নাকি? এখানে বসে ছিলেন যে?না মানে তোমার যখন মন খারাপ থাকে তখনই তো তুমি এখানে আসো তাইনা?তাই জিজ্ঞেস করলাম আরকি!”
মিহুর স্পষ্ট জবাব,
— “হুম।১ মিনিট আপনি কি করে জানলেন যে আমার যখন মন খারাপ থাকে তখনই আমি এখানে এসে বসি?”
শিহাব আমতা আমতা করে বলে,
— “না মানে আসলে তোমাকে যখনি এখানে দেখেছি তখন তোমাকে মুখ গোমড়া করে বসে থাকতে দেখা যায় তাই আরকি বলেছিলাম।”
মিহু অস্পষ্ট সুরে বলে উঠলো,
— “ওহ!”
শিহাব কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর মিহুকে বলে উঠে,
— “আচ্ছা তুমি কি কাওকে ভালোবাসো?”
শিহাবের এরকম প্রশ্নে চমকে উঠে মিহু। নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে বলে,
— “হঠাৎ এরকম কথা জিজ্ঞেস করলেন যে?এর কারণ জানতে পারি…….?”
— “না মানে জানতে ইচ্ছে করলো তাই জিজ্ঞেস করলাম এই আরকি!”(শিহাব)
— “না!নেই এমন কোনো মানুষ।”(মিহু)
— “সত্যি.?”(শিহাব)
— “এখানে মিথ্যের কি আছে শুনি?”(মিহু)
— “না কই মিথ্যের কিছু নেই তো। মিথ্যের কিছুই নেই!”(শিহাব)
— “ওহ আচ্ছা!তা আপনার আছে কি?”(মিহু)
— “হুম।”(শিহাব)
শিহাবের প্রতিউত্তরে কেমন যেনো কোথাও খারাপ লাগা কাজ করছে মিহুর। কিন্তু সেটা কেন হচ্ছে মিহু বুঝতে পারছে না।মিহু যথাসম্ভব নিজেকে ঠিক করে শিহাবকে বলে উঠলো,
— “তা সে কে জানতে পারি…?”
শিহাব মিহুর কথায় মুচকি হাসে। শিহাব আঙুল দিয়ে পুকুরের পানির দিকে তাকাতে ইশারা করে মিহুকে।মিহু তাকিয়ে পানিতে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়।মিহু অবিশ্বাস্য চোখে শিহাবের দিকে তাকায়।এদিকে মিহুর তাকানো দেখে মুচকি হাসি দেয় শিহাব!
চলবে……

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_২৫
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)

এদিকে মিহুর তাকানো দেখে শিহাব বাঁকা হাসি দেয়।মিহু চোখ মুখ শক্ত করে শিহাবকে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
— “আপনি যদি আমার সাথে মজা করছেন?”
শিহাব মুচকি হেসে উত্তর দেয়,
— “হ্যা মজাই তো করছি।”
মিহু আরেকদফা অবাক হয় শিহাবের কথায়।হাতের আঙুল দিয়ে মুখের সামনে পড়ে থাকা চুলগুলোকে কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে বলে,
— “মানে.? এতক্ষণ ধরে আপনি আমার সঙ্গে মজা করেছিলেন?”
শিহাবের স্পষ্ট জবাব,
— “হ্যা!তুমি কি সত্যি ভেবে নিয়েছিলে নাকি?”
মিহু আমতা আমতা করে বলে,
— “কই না তো।আমার খেয়ে কি কোনো কাজ নেই যে আপনার এসব মজা সত্যি ভেবে নেবো?”
শিহাব দাঁত কেলানো হাঁসি দিয়ে মিহুকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “তোমার খেয়ে কাজ আছে নাকি নেই সেটা আমি কি করে জানবো হু।”(শিহাব)
মিহু শিহাবের কথায় ফুঁসে উঠে।বলতে থাকে,
— “আপনি….. আপনি একটা অসহ্য!”
শিহাব মিহুর রাগ দেখে হাসতে থাকে।মিহু এতে আরো রেগে যায়। শিহাব হেসে হেসেই মিহুকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “কিহ এখনো মন খারাপ আছে নাকি?”
মিহু শিহাবের কথায় উপলব্ধি করে এখন তার মেজাজ একদম ফুরফুরে আছে।মিহু আনমনে বলতে থাকে,
— “হ্যা সত্যিই তো।মন খারাপ দূর হয়ে গেছে।”
শিহাব মুচকি হাসে।মিহু গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,
— “থ্যাংক ইউ।”
শিহাবের স্পষ্ট জবাব,
— “মাই প্লেজার।”
শিহাব আর কিছু না বলে চলে যায়।মিহু একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বেরিয়ে পড়ে নিজের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
_________________
— “তুমি কি বাচ্চা নাকি?”
উৎসর কথায় চমকে উঠে সামু।উৎসকে দরজার কাছে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে নিজের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে সামু।সামু উৎসকে দেখার সাথে সাথে নিজের হাতের পুতুল দুটো আবার ব্যাগের ভিতর ঢুকিয়ে দেয়।উৎস এসব দেখে ভ্রু কুঁচকে সামুর পাশে একটি চেয়ারে এসে বসে।সামু নিজেকে ঠিক করে উৎসকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “আপনি কখন এলেন?”
উৎস মুচকি হেসে বলে,
— “তখনই এসেছি যখন তুমি পুতুলের সাথে কথা বলছিলে।বাই দা ওয়ে তুমি এখনো পুতুল খেলো মানে এই বয়সে?”
সামু ভ্রু কুঁচকে উৎসকে উত্তর দেয়,
— “কেন এই বয়সে বুঝি পুতুল খেলা যায় না? আপনি এমনভাবে বলছেন যেনো আমি বুড়ি হয়ে গিয়েছি।”
সামু এই কথাটা বলেই ভেংচি কাটে।উৎস দাঁত কেলিয়ে সামুকে বলতে থাকে,
— “না না আমি সেই কথা বলিনি।আসলে এটা দেখে অনেক অবাক হয়েছি আমি।আমার পুতুলগুলো অনেক পুরোনো দেখেই বুঝেছি।এতো পুরোনো পুতুল যত্ন করে রেখেছো। অনেক অবাক হলাম দেখে। নিশ্চয়ই এর সঙ্গে অনেক পুরোনো স্মৃতি জড়িয়ে আছে রাইট।”
সামু আমতা আমতা করে বলতে থাকে,
— “হ্যা হ্যা পুতুল দুটোর সাথে স্মৃতি অবশ্যই জড়িয়ে আছে। স্মৃতি না জড়িয়ে থাকলে তো আর আমি এগুলো এতো যত্ন করে রাখিনা তাইনা?”
উৎসর স্পষ্ট জবাব,
— “হ্যা সেটাই তো।”
সামু হঠাৎ করেই কিছু একটা ভেবে উৎসকে বলতে থাকে,
–“আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?”
উৎস ভ্রু কুঁচকে সামুকে বলে,
— “কি কথা?”
সামু বিরক্তিকর কন্ঠে বলে,
— “আগে কথাটা জিজ্ঞেস তো করতে দিন নাকি?”
উৎস ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
— “হ্যা তাইতো তাইতো।তা বলো কি কথা?”
সামু আমতা আমতা করে বলতে থাকে,
— “না মানে আসলে কথাটা হচ্ছে শিহাব ভাইয়া আর মিহুকে নিয়ে।আমার মনে হয় ওরা ওদের মধ্যে কিছু চলছে।কজ আমি ওদেরকে প্রায়ই একসাথে কথা বলতে দেখি।আমার মনে হলো তাই বললাম আরকি!”
উৎস কিছুক্ষণ ভাবনাচিন্তা করার পর বলে,
— “আমারো মনে হচ্ছে এরকম কিছু।তলে তলে এসব করে বেড়াচ্ছে আর ভেবেছে আমরা কিছুই বুঝতে পারবোনা।কালকেই ভার্সিটিতে গিয়ে ব্যাটাকে ধরবো!”
সামু দাঁত কেলিয়ে উৎসকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “আমি যে আপনাকে এসব বলেছিল ওদেরকে বলবেন না প্লিজ!”
উৎস শয়তানী হাঁসি দিয়ে সামুকে বলে,
— “কেন তুমি কি শিহাবকে ভয় পাও নাকি?এখন বললে যে,তুমি যে আমাকে এসব বলেছো সেটা যেনো আমি কাওকে না বলি। এজন্যই বললাম আরকি।*
সামু অস্পষ্ট সুরে বলে উঠে,
— “ওহ!”
— “তা আমি কিন্তু এখনো আমার উত্তর টা পাইনি!”(উৎস)
— “না শিহাব ভাইয়াকে ভয় পাইনা তবে মিহুর যা রাগ!এতে তো ভয় পাবারই কথা।তাই তো বলেছি।”(সামু)
উৎস বলে,
— “ওহ”
চলবে……