হঠাৎ তুমি এলে পর্ব-২৬+২৭

0
594

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_২৬
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)

সকালে……
আজকে একটু তাড়াতাড়িই ভার্সিটি তে এসেছে সামু আর উৎস। আজকের দিনটা একটু অন্যরকম! হলরুমে শিহাব আর মিহুকে ঘিরে ধরেছে উৎস,সামু,প্রমা আর মিথিলা। শিহাব আর মিহুকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে মিথিলা। এসবের আগামাথা কিছু বুঝতে পারছে না মিহু আর শিহাব।মিহু সবার দিকে একপলক তাকিয়ে তারপর বলতে শুরু করলো,
— “এসব কি হচ্ছে? ক্লাস করতে যাবো আমি!এবার তো ছাড়ুন সবাই আমাকে!”
মিথিলা,মিহু আর শিহাবের থেকে চোখ সরিয়ে নেয়।উৎস আর বাকি সবার দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,
— “শিহাবের সাথে মিহুকে অনেক মানিয়েছে।শিহাবের পছন্দ আছে বলতে হবে!”
মিহু তো মিথিলার কথা শুনে অবাকের চরম পর্যায়ে পোঁছে গেছে।মিহু অবাক হয়ে সামুকে জিজ্ঞেস করে,
— “এসব কি হচ্ছে কি সামু?তুইতো তাহলে আগে থেকেই জানতিস এসব।নাহলে তো আমাকে এখানে নিয়ে আসতি না তাইনা?কেন এরকম করলি তুই?তোকে তো আমি……!”
সামু আমতা আমতা করে মিহুকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “দাম মেরি মা।আমাকে সবাই জোড় করলো দেখেই তো আমি তোকে নিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি।আমার কোনো দোষ নেই বিশ্বাস কর প্লিজ!”
মিহু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
— “তাহলে এখন আমাকে দেখা হয়েছে আপনাদের?আমি এখন আসছি কেমন?বাই!”
মিহু চলে যাচ্ছিলো এমন সময় পিছন থেকে প্রমা ডেকে ওঠে,
— “মিহু দাঁড়াও! আমাদের কথা এখনো শেষ হয়নি।”
মিহু ঘুরে প্রমার দিকে তাকিয়ে বলে,
— “কি কথা?”
এবার প্রমাকে কিছু বলতে না দিয়ে উৎস মিহুকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
— “একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?সঠিক উত্তর দিবে তো?”
মিহু উৎসর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে উঠে,
— “আচ্ছা।”
— “তোমার আর শিহাবের মধ্যে কি চলছে?”(উৎস)
— “কি চলবে?”(মিহু)
উৎসকে কিছু বলতে না দিয়ে প্রমা বলতে শুরু করলো,
— “আসলে কি হয়েছে তোমরা মনে হয় বুঝতে পারছো না মিহু আর শিহাব।তো আমিই ব্যাপারটাকে সোজা করে দিচ্ছি‌। আচ্ছা শোনো আমাদের মনে হয় তোমরা দুজন মানে তুমি আর শিহাব রিলেশনে আছো!এটাই আরকি।তাই আমরা তোমাদের দুজনকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে দেখছিলাম যে তোমাদের কেমন মানিয়েছে।”
মিহু সবকিছু শুনে ৪৪০ ভোল্টের শক খায়।মিহু শিহাবের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।এতে বেচারা শিহাব অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।মিহু শিহাবের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বাকি সবার দিকে তাকিয়ে বলে,
— “কে বলেছে আপনাদের এসব?যে আমরা দুজন রিলেশনে আছি!”
পাশ থেকে মিথিলা বলে উঠে,
— “কেউ বলেনি তো!আমরা বুঝি তোমাদেরকে দেখেই।”
মিহু ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
— “ওহ তাই?তাহলে আমাকে নিয়ে যখন সন্দেহ উঠেছে তাহলে বলেই দেই উৎস ভাইয়া আর সামুর মধ্যে যে কিছু চলছে না তার কি গ্যারান্টি আছে?”
মিহুর কথায় সবাই অবাক হলেও অবাক হলোনা প্রমা।প্রমা মুচকি মুচকি হাসছে। মিথিলা অবাক চোখে উৎস আর সামুর দিকে তাকিয়ে আছে। মিথিলা কপট রাগ দেখিয়ে সামু আর উৎসর দিকে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে প্রমার দিকে তাকায়।এদিকে প্রমা মিথিলার এমন তাকানো দেখে ভয়ে একটা ঢোক গিলে। মিথিলা প্রমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “ওদের মধ্যেও এসব চলছে।এতো ভালো খবরটা আমাকে কেউ জানালো না।বাহ!আমাকে তো কেউই কিছু বললো না।”
প্রমা আমতা আমতা করে বলে,
— “আরে এরকম কিছুই না।আর মিহুর কথায় ধরছিস কেন?ও ভুল বলছে।”
উৎস এবার মিথিলা আর প্রমার কথাকাটাকাটি দেখে জোড়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠে,
— “স্টপ!”
উৎসর জোড়ে চিৎকারের কারণ সামু ভয়ে কেঁপে উঠে। এরমধ্যে শিহাব এসে উৎসকে বলে,
— “তুই একটু ওদিকটায় আমার সাথে চল তো।তোর সাথে কথা আছে।”
মিথিলা ভ্রু কুঁচকিয়ে শিহাবকে বলে,
— “যা কথা বলার সবার সামনেই বল।কি এমন কথা যেটা উৎসকে আলাদা ডেকে নিয়ে বলতে হবে?”
উৎস মিথিলাকে বলে,
— “আচ্ছা আমি ব্যাপারটা দেখছি।”
উৎস আর শিহাব কিছুটা দূরে গিয়ে কথা বলতে থাকে।সামু ঘড়িতে টাইম দেখে তারপর বলে,
— “আমার এখন ক্লাসে যেতে হবে।বাই দা ওয়ে তোমরা কখন যাচ্ছো রক্তিম ভাইয়ার বাড়িতে?”
প্রমার মুখে খানিকটা চিন্তার ভাঁজ পড়লো। মিথিলা মাথা নিচু করে বলতে থাকে,
— “আমার মনে হয়না যে রক্তিমকে আবার খুঁজে পাবো।”
সামু মিথিলার হাতের ওপর হাত রেখে সম্পূর্ণ আস্থা সহকারে বলতে থাকে,
— “ডোন্ট ওয়ারি আমরা আছি তো।আর নেগেটিভ কিছু ভেবো না প্লিজ। পজিটিভ ভাবো!সব ভালোই হবে।”
মিথিলা বলে,
— “তাই যেনো হয়।”
চলবে……

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_২৭
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)

তখনি মিহু সামুকে গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,
— “তাহলে চল ক্লাসে যাই।”
সামু মাথা নাড়িয়ে “হ্যা”জানায়।মিহু আর সামু সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে আসে।সামু আর মিহু হেঁটে যাচ্ছে নিজেদের গন্তব্যে। এরমধ্যেই সামু মিহুকে জিজ্ঞেস করে,
— “ভালোবাসা খুব অদ্ভুত তাইনা রে মিহু?”
মিহু অবাক চোখে সামুর দিকে তাকায়। কিন্তু বলতে থাকে,
— “হঠাৎ এই কথা বলছিস যে?”
সামু আমতা আমতা করে বলে,
— “না মানে মিথিলা আপুর কাহিনী টা তো শুনেছিসই তাইনা?”
— “হুম শুনেছি তো।”(মিহু)
— “ওদের লাভ স্টোরিও টা অনেক অদ্ভুত তাইনা?”(সামু)
— “হ্যা এটা ঠিকই বলেছিস।বাট শেষ পর্যন্ত কি হয় তা দেখি।”(মিহু)
— “হুম!”(সামু)
— “তোর মন খারাপ তাইনা?”(মিহু)
— “তুই কিভাবে বুঝলি বলতো মিহু পাখি”?(সামু)
মিহু কিঞ্চিত ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে সামু কে বলে,
— “কিভাবে আর? বেস্ট ফ্রেন্ড আমরা!বোঝাটা স্বাভাবিক নয় কি”?(মিহু)
— “হ্যা স্বাভাবিকই। আচ্ছা চল ক্লাসে যাওয়া যাক।”(সামু)
— “হুম।এই ব্যাপারে পরে কথা বলবো এখন চল।”(মিহু)
_________________________
— “এই বাড়িটাই!গাড়ি থামাও!এসে গেছি আমরা।”
মিথিলার কথায় গাড়ি থামায় উৎস।বাইরের দৃশ্য কিছুক্ষণ দেখার পর গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।বেশ কয়েকবছর পর এখানে আসলেও বাড়িটা চিনতে বেশি সময় লাগেনি মিথিলার।বাড়িটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে উৎস, প্রমা আর শিহাব। কিন্তু মিথিলা সেই আগের যায়গাটিতেই দাঁড়িয়ে আছে। মিথিলার সাহস হচ্ছে না ভেতরে পা রাখার।প্রমা মিথিলাকে সঙ্গে না পেয়ে পিছনে তাকাতেই ওকে দেখতে পায়।প্রমা দেরি না করে মিথিলার হাত ধরে ওকে টেনে নিয়ে আসে। মিথিলা কেনো যেনো প্রমাকে আটকাতে চেয়েও আটকাতে পারেনি। পুরোনো যায়গায় এসে পুরোনো স্মৃতিগুলো আঁকড়ে ধরেছে মিথিলাকে। আর স্মৃতিগুলোর মধ্যে নিজের বাবা মা ও বাদ পড়েনি!বাবা মায়ের কথা মনে হতেই চোখের কোণে এসে জল জমা হচ্ছে মিথিলার। মিথিলা চোখের জল মুছে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এগিয়ে চলে সামনের দিকে।কেনো যেনো মিথিলার মন বলছে রক্তিম আর কোথাও যায়নি!এখানেই আছে।উৎস ডোরবেল বাজালো। প্রথমবারের মতো কেউ এসে দরজা খুলে দিল না। কিন্তু দ্বিতীয়বার ডোরবেল বাজানোর পর একজন বয়স্ক লোক এসে দরজা খুলে দিল।সবাই ওনার সাথে কুশলাদি বিনিময় করে। মিথিলা ওনাকে বলে,
— “আরমান আংকেল!”
আরমান সাহেব চশমাটা কিছুটা ঠিক করে মিথিলাকে ভালো ভাবে দেখে তারপর বলে,
— “আরে মিথিলা যে, কেমন আছিস?”
মিথিলা মুচকি হেসে বলতে থাকে,
— “আগে ভেতরে তো ঢুকতে দাও আমাদের।”
আরমান সাহেব হেসে বলতে থাকে,
— “ওহ হ্যা।এসো সবাই ভেতরে এসো।”
উৎস,প্রমা আর শিহাব একে‌ অপরের দিকে তাকিয়ে তারপর ভেতরে প্রবেশ করে।সবাই গিয়ে সোফায় বসে।উৎস মিথিলাকে চোখ দিয়ে কিছু একটা ইশারা করে বোঝায়‌।তারপর মিথিলা একটা মুচকি হাসি দিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
— “পরিচয় করিয়ে দেই।ইনি হলেন আরমান আংকেল। রক্তিমের বাবা!”
আরমান সাহেব গলা খাঁকারি দিয়ে মিথিলাকে বলে,
— “তা মিথিলা এরা কারা?এদের তো ঠিক চিনলাম না।”
— “আংকেল ওরা আমার ফ্রেন্ড।”(মিথিলা)
— “ওহ আচ্ছা।তোমরা কি খাবে বলো? তোমাদের না খায়িয়ে ছাড়ছি না।প্রমা এবার আমতা আমতা করে বলে,
— “আংকেল বলছিলাম কি আজকে আমাদের যেতে হবে।অন্য কোনো একদিন এসে খাবো কেমন!”
আরমান সাহেব কিঞ্চিত ভ্রু কুঁচকে প্রমার কথার বিপরীতে বলে,
— “তাতে কি হয়েছে?খেয়ে যাবে অবশ্যই।”
প্রমা জোড়পূর্বক হাসি দেয়। শিহাব প্রমার অবস্থা দেখে মিটমিটিয়ে হাসতে থাকে।এতে প্রমা রেগে শিহাবের দিকে তাকিয়েই থাকে।আর দাঁতে দাঁত চেপে জোড় পূর্বক হাসি দিয়ে আরমান সাহেব কে বলে,
— “আচ্ছা আংকেল ঠিক আছে।”
মিথিলা সেই কখন থেকেই এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আরমান সাহেব এটা ঠিকই খেয়াল করলেন। আরমান সাহেব মুচকি হেসে মিথিলাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “তা মিথিলা তুই বরং এদেরকে পুরো বাড়িটা ঘুরিয়ে দেখা।তোর দেখা বাড়িটা সেই আগের মতোই আছে,কিছুই পাল্টেনি।যা দেখিয়ে নিয়ে আয় ওদের।আমি বরং যাই গিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করি।”
আরমান সাহেব চলে গেলেন। মিথিলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সবাইকে ইশারা করে ওর সাথে যাওয়ার জন্য।
চলবে….